প্রিয়_ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
3410

#প্রিয়_ভালোবাসা
#নিশাত_তাসনিম
#পর্ব:৯

—“তুমি তোমার বাবামার আপন সন্তান নও,তোমাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিলো।বিষয়টি আমি জানতে পারি ইশিকার মা মানে তোমার আপন মায়ের কাছে।ইশিকা যেদিন গ্রেফতার হয় সেদিন উনি কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন,, “এক মেয়েকে তো ছোটবেলায় বন্ধুত্বের উপকার জন্য দিয়ে দিয়েছে আর আজ আরেক মেয়ে বলেই উনি কেঁদে দিয়েছিলেন।তখন আমি উনার কাছ থেকে জানতে পারলাম তোমার বাবা আর ইশিকার মা ফ্রেন্ড ছিলো।তোমার বাবার কিছু সমস্যা আছে যার কারনে কোনোদিন বাবা হতে পারবে না, তাই তোমার বাবা তোমাকে দত্তক নিয়েছিলো,একবার তোমার বাবা ইশিকার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছিলো তাই ইশিকার মা উনার সমস্যা বুঝে উনাদের তোমাকে দত্তক দিয়েছিলো।তুমি আর ইশিকা ছিলে জমজ বোন। কিন্তুু তাও তোমার মা আর বাবার মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকতো এরপর একদিন তোমার মা তোমার বাবাকে ছেড়ে দেয়।এরপর তোমার দাদী আর চাচী খারাপ ব্যবহার করতো দেখে তোমার মামা তোমাকে নিয়ে যায়।”

আমি উনার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,,,”আমার আপন বাবা-মা কেনো খোজ খবর নেয় নি কেনো??”

–“তোমার বাবা, ইশিকার বাবা-মাকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিলো যে আর কোনোদিনও তোমার খবর না নেয় আর না তোমার সামনে দেখা দেয়।তাই ওনারা ঢাকা চলে আসেন এবং আর কোনোদিন তোমার খবর নেয় নি।”

—“ইশিকা আপু গ্রেফতার কেনো হয়েছিলো?”

—-“ভার্সিটিতে থাকাকালীন আমরা একটা ইলিগ্যাল ব্যবসায় যুক্ত হয়ে যাই, এতে আমরা অনেক টাকা রোজগার করে ফেলি, রাতারাতি আমাদের অবস্থা পরিবর্তন হতে থাকে।এতে অনেক রিস্ক ছিলো,ইশিকা অনেক বেশি রিস্ক নিতো।ও কাউকে খুন করলে তার রক্তের ফোটাও থাকতো না।আমাদের অবস্থা ভালোই চলছিল।কিন্তুু ইশিকা একদিন বড় মিস্টেক করে ফেলে।সব ওর বেশি চালাকির জন্য হয়েছে,কী দরকার ছিলো অফিসারকে খুন করার।অফিসারকে মারার কারনে ওর উপর কেস হয়ে যায় তাই ও জেলে আছে।আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাট ওর শাস্তি হয়েছে ৪বছরের জেল।ও এখন জেলে আছে বাট এখনও আমাদের সব বিজনেস ও ওখান থেকেই চালাচ্ছে।ওকে জেল থেকে বের করার জন্য তোমাকে প্রয়োজন ছিলো।৪দিন তোমার খোজ করার পর জানতে পেরেছিলাম তোমার খবর।যখন আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তখন আমি পুরো টাস্কি খেয়ে যাই,কারন তুমি আর ইশিকা হুবহু একই রকম দেখতে।আমি ভেবেছিলাম একটু আধতু মিল থাকবে কিন্তুু তুমি তো পুরোই কার্বন কপি।এটাই আমার জন্য বড় প্লাস পয়েন্ট ছিলো।

আসলে আমি চেয়েছিলাম তোমাকে মানসিক রোগী করতে।তোমাকে এর কজন্য ঔষদও দেওয়া হতো আর কয়েকদিন পর তুমি একদম মানসিক রোগী হয়ে যেতে।কারন তাহলে কোনো প্রবলেম হবে না, তোমাকে অনায়সে জেলে পাঠানো যেতো।কিন্তুু এর মধ্যেই তুমি,,,

আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকালাম,এই কয়দিন উনি আমাকে কত আদর-যত্ন করে ঔষদ খাওয়াতো।সারাদিন কী করতো না করতো সব ভুলে যেতাম শুধু মাএ এত যত্ন করে ঔষদ খাওয়াতো দেখে।উনার প্রতি ফিলিংস কাজ করতো।আর উনি আমাকে পাগল বানানোর জন্য এমন করতো।

একসাথে এতগুলো ধাক্কা নিতে পারতেছি না, মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।কোনো কিছুর বুঝার আগেই ঢলে পড়তে লাগলাম, আমাকে পড়ে যেতে দেখে উনি দৌড়ে এসে আমাকে ধরলেন।চোখ বন্ধ হওয়ার আগে উনার ভিলেনি হাসি মুখটা দেখেছিলাম।
___________________________

পিটপিট করে চোখদুটো খুলে দেখলাম উনি আমার পাশে বসে আছেন এবং উনার পাশে আরো দুজন বসে আছে।আমি উঠে বসতে চাইলে দেখলাম আমার হাত পা বাঁধা।আমি উনার দিকে তাকালাম যার মানে এসবের কারন কী?

উনি ভিলেনী হাসি দিয়ে বললো,,,”এখন তো তুমি সব জানো তাই কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”

আমি কিছু বলতেও চেয়ে বললাম না,ঘাড় ঘুরিয়ে উনাদের দিকে তাকিয়ে দেখালাম,যার মানে উনারা কে?

উনি হেসে হেসে বললেন,,”উনারা তোমার বাবা মা।তোমার সাথে প্রথম এবং শেষ বারের জন্য দেখা করতে এসেছেন।”

আমি উনাদের দিকে তাকাতেই উনারা আমাকে হাসি মুখে বললো আমি যেনো উনাদের মেয়েকে ছাড়িয়ে দেয়, বাবামা হিসেবে আবদার করেছেন।এ কথা শুনে আমার চোখের পানি বৃষ্টির মত ঝড়তে লাগলো।তাও কিছু বললাম না চুপচাও ছিলাম।উনারা চলে গিয়েছেন অথচ আমি উনাদের ভালো করে দেখিও নি।

রাত নয়টা বাজে উনি আমার জন্য খাবার আর ঔষদ নিয়ে আসতে গিয়েছেন।খাবার নিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন।মুখটা খুলে খাআার খাওয়াতে লাগলেন। আমি প্রথমে জোর করেছি খেতে চাই নি কিন্তুু উনি মুখ চেপে ধরে খাইয়ে দিলেন।

উনি ঔষদ নিয়ে আসতেই আমি শব্দ করে কেঁদে দিলাম।উনি ঔষদ হাতে নিয়ে আমার দিকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন।

আমি কান্না করতে করতে বললাম,,,”প্লিজ আমাকে পাগল করবেন না।আপনি যা বলবেন তাই করবো তবুও পাগল করবেন না প্লিজ।”

উনার হয়তো খারাপ লেগেছিলো তাই ঔষদ পাশে রেখে আমার পাশে এসে বসলেন।

আমি উনাকে আমার পাশে বসতে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,”আমি দুইদিন শান্তিতে থাকতে চাই এরপর আপনি যা বলবেন তাই করবো।ভুলেও পালানোর চেষ্টা করবো না, আমি সত্যি বলছি।শুধু দুইদিন এরপর আপনি আমাকে যা করতে বলবেন তাই করবো।”

উনি আমার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলেন এরপর বলতে লাগলেন,,”আচ্ছা শুধু দুইদিন আমি তোমাকে সেভাবে রাখবো যেভাবে তুমি চাও। ”

আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিতেই আমি সোজা হয়ে হাটু গেড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম।হঠাৎ আমি মাথা তুলে বললাম আমি একটু শান্তি চাই দিতে পারবেন?

উনি আমাকে বললেন ঘুমিয়ে যেতে, কিন্তুু এত কিছু শুনার পর চোখে ঘুম কীভাবে আসবে?আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকাতেই উনি লাইট নিভিয়ে দিয়ে এসে আমার পাশে শুয়ে আমার মাথায় হাত
বুলিয়ে দিয়ে গাইতে লাগলেন,,,

“””””””তোমার নেশায় পইড়া আমি হইলাম দিওয়ানা
তোমার জন্য হারায় গেলো আমার ঠিকানা
তোমার মতো থাকলা তুমি খবর নিলানা
তোমার কাজল রঙ্গে রাঙ্গুক
তুমি কার আঙ্গিনায়
আজ আমার ভেতর জুড়েই
শুধু নেশার বসবাস, নেশা হাসায়
নেশা কাদায় নেই আমি আমার।

…………….
……………………
………………..

উনার কন্ঠ এত সুন্দর যে পরম আবেশে আমার চোখ দুটি বুজে গেলো।

হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে উঠে বসি, আমার চিৎকার শুনে উনি ধরফরিয়ে উঠলেন,উনি আমাকে জিজ্ঞাস করতে লাগলেন কী হয়েছে?আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম,ও আমাকে মেরে ফেলবে,ও চলে আসছে।উনি আমাকে শান্ত করার জন্য আমার মাথাটা উনার বুকের সাথে লাগিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, কিছুই না, আমি স্বপ্ন দেখেছি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা তেত্রিশ বাজে।

কিন্তুু আমার মোটেও স্বপ্ন মনে হচ্ছে না।আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার সামনে কেউ একজন ছুরি দিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলো।আমি উনার কথা কিছুতেই মানতে চাইছিলাম না, আমি বারবার একই কথা বলতে লাগলাম।উনি এবার আমাকে জোরে এক ধমক দিলেন সাথে সাথে আমি ফুফিয়ে কেঁদে উঠলাম।কাঁদতে কাঁদতে উনার পরনের শার্ট ভিজিয়ে ফেললাম।উনি আমাকে থামাতে না পেরে আমাকে ছেড়ে উঠে গিয়ে ইনজেকশন নিয়ে এসে আমাকে জোর করে লাগিয়ে দিলেন,,,

চলবে,,,