#প্রিয়_ভালোবাসা
#নিশাত_তাসনিম
#পর্ব:১০
আমি কী বিশ্বাস করবো?কাকে বিশ্বাস করবো?এখন যা বলেন তা মনে হয় সত্য, কিন্তুু একটুপর শুনি তা মিথ্যা।আমার নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে।আমাকে ওরা যখন যা ইচ্ছা তা বলে আমিও বিশ্বাস করি এরপর শুনি সেটা মিথ্যা।
–“আপনি আমার কাছে কী চান?আমাকে বারবার কনফিউসড কেনো করেন?আমার সাথে কেনো এমন করছেন?”
উনি কিছু বললেন না,উনার মত বসে রইলেন।এবার যেনো আমার রাগটা দ্বিগুন হয়ে গেলো,আমি উনার সামনে গিয়ে বলতে লাগলাম,,,”আপনি যদি কোনো কিছু বলেন তাহলে তার অর্ধেক কথাও সত্যি থাকে না।আপনি আমাকে মিথ্যা কেনো বললেন যে উনারা আমার বাবা-মা?”
উনি এবার একটু হকচকিয়ে গেলেন,তাও মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললেন,,”কি যা তা বলছো?উনারা তো তোমার বাবা-মা।”
আমি এবার দাত চেপে হেসে বললাম,,”ওহ,তাই?তাহলে উনাদের বিদায়ের সময় টাকা কেনো দিয়েছিলেন?আর এটা কেনো বলেছিলেন যে এখান থেকে যেনো অন্য কোথাও চলে যায়!”
উনি হতভম্ভ হয়ে বললেন,,”তুমি দেখেছো?ওহ্ তো যখন জেনেই গেছো তো আর লুকিয়ে কী লাভ।হ্যা উনারা তোমার আসল বাবা-মা নয় উনারা আমা ভাড়া করা ছিলো।”
—“এমন করার কারন কী?কখনও বলেন এটা তো কখনও বলেন ওটা।আমার ব্রেইনের সাথে এমন কেনো করছেন?আপনার কোনো কথাতেই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।এখন তো আমার মনে হচ্ছে আপনি যা বলেছেন সব মিথ্যা।”
উনি ভিলেনী হেসে বললেন,,,”তোমার যা মনে হয় ভাবতে পারো।শুধু নিজের মাথার গিলু টা ব্যবহার করতে যেও না নাহলে সেদিনের থেকেও খারাপ অবস্থা করবো।”
কী চাই উনি?কেনো করছেন উনি?উনি যেমনটা দেখাচ্ছেন উনি তেমন নয়।আল্লাহ আমাকে ক্ষমতা দেও এত কিছু সহ্য করার।এমন চুপ থাকলে হবে না উনি রুম থেকে বের হলেই খুঁজতে হবে।
প্রতিদিন উনি ঠিক বিকাল ৪ টার পর একটা ব্যাগ নিয়ে কই যেনো যায়।ব্যাগ টাতে কী এমন আছে,আমি দেখেই ছাড়বো।
উনি ওয়াসরুমে যেতেই আমি আস্তে করে চেইন খুললাম।ব্যাগের ভেতর যা দেখলাম তাতে যেনো আমার হুশ উড়ে গেলো।
অনুভব সিভিআই অফিসার???কিন্তুু কীভাবে??? কার্ড টা তে স্পষ্ট লেখা অনুভব cvi অফিসার।আমি বেহুশের মত ৫ মিনিট ধরে কার্ডের দিকে চেয়ে রইলাম,এর ভেতর যে উনি চলে এসেছেন তা আমার খেয়ালেও নাই।
আমি চোখ তুলে উনার দিকে চাইলাম,উনার মুখের দিকে তাকাতেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম ভয়ের ছাপ। উনি আমতা আমতা করে আমাকে কিছু বলতে নিলেন কিন্তুু তার আগেই আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম,,,”এবারো আমাকে নতুন কোনো কাহিনী শোনাবেন, তাই না?”
উনি এবার চুপ করে গেলেন।আমি কার্ডটা উনাকে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,, “আপনার যদি কখনও প্রয়োজন হয় আমাকে বলার তাহলে বলিয়েন।”বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।আজব সব কিছুর একটা লিমিট থাকে, এগুলো কী ধরনের ফাইজলামী?আমার সামনে প্রথমে নিজেকে নেশাখোর এরপর দেবদাস প্রমান করলেন এরপর ভিলেন এখন হিরো আই মিন অফিসার।
এখন আমার নিজের উপরই রাগ লাগছে,কেনো উনাকে বিয়ে করতে গেলাম?আমার মনে হয় কয়দিন পর আমি নিজেকেও সন্দেহ্ করবো।মাথাটা কেমন চক্কর দিতেছে।
সারাটাদিন নিজের মত ভাবলাম কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বুঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু ফলাফল জিরো। উনি আর রুম থেকে বের হন নি।রাত গাড় হতে লাগলো তাই আমি রুমে গেলাম,গিয়ে কোনো সাড়াশব্দ না করে শুতে লাগলাম।তার আগেই উনি আমাকে বারান্দা থেকে ডাক দিলেন সেঁজুতি বলে। আমি যাবো কী যাবো না ভাবতে ভাবতে কয়েক মিনিট চলে গেলো। উনি আবারো ডাক দিতেই আমি সাতপাঁচ না ভেবে চলে গেলাম।উনার দিকে তাকাতেই আমার কেমন যেনো লাগলো।মনে হচ্ছে খুব কেঁদেছে।
আমাদের ভেতর কয়েক মিনিট নিরবতা বিরাজ করলো।উনি অনেকসময় চুপ থেকে বললেন,,, “তোমার সাথে এতদিন আমি যা করেছি সব অন্যায় করেছি,ভুল ছিলো আমার।যা আমি আজকে জানতে পেরেছি।
ইশিকা আমার ভালোবাসা ছিলো শুধু ভালোবাসা নয় প্রিয় ভালোবাসা।
আমি বললাম,,ছিলো মানে?এখন নেই?উনি না জেলে?
অনুভব কান্না করতে করতে বললো,,
ও আর নেই, ওকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।ও চলে গেছে আমাকে ছেড়ে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,মানে?
—-“ওকে মেরে ফেলেছে ওই জানোয়ারগুলো, আমিও তাদের ছাড় দেয় নি আমিও তাদের মেরে ফেলেছি।”
—“কিন্তু কীভাবে?আর কেনো?”
অনুভব এবার বাহিরের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে বললো,,,”আমার ইশিকা না অনেক সুন্দর ছিলো।ওকে দেখতে রানীদের মত লাগতো,কিন্তু সেটা শুধু আমার কাছে নয় বাকিদের কাছেও লাগতো।
ওকে অনেক ছেলেরাই ডিস্টার্ভ করতো,বাজে বাজে কথা শুনাতো,টিজ করতো।কিন্তু আমি এসব জানতাম না।এমনই একদিন ও বাসা থেকে আসার সময় কিছু বখাটে ছেলে ওকে টিজ করে,একটা ছেলে ওর গায়ে হাত দিতেই ও তাকে ঠাসস করে এক থাপ্পর দিয়ে দেয়।এটাই ছিলো ওর সবচেয়ে বড় ভুল কারন যাকে মেরেছিলো সে সাধারন ছিলো না সে ওখানের নেতার ছেলে ছিলো।
রাস্তায় মানুষ থাকায় ওর সাথে তারা সেদিন কিছু করতে পারে নি।কিন্তু সেদিন ভার্সিটি থেকে যাওয়ার পথে ওরা ওকে ধরে নিয়ে যায়।টানা চার দিন আমার ইশিকার উপর ওরা পশুর মত নির্যাতন করে।আমার ইশিকা নিশ্চয় অনেক কেঁদেছিলো তাই না?খুব কষ্ট হয়েছিলো ওর তাই না?আমি পাগলের মত ওকে খুঁজেছিলাম কিন্তুু পাই নি।জানো জানোয়ারগুলো ওকে তিল তিল করে কষ্ট দিয়ে মেরেছিলো।আমার ইশিকা দেখতে একদম নাদুসনুদুস ছিলো,কিন্তুু যখন ওর লাশ দেখে ছিলাম তখন ওর শরীর দেখে মনে হয়েছিলো এটা কোনো কংকাল।বুঝতে পারো কতটা কষ্ট দিয়েছিলো?
আমার ইশিকা নিশ্চয় ওদের কাছে কেঁদে কেঁদে প্রান ভিক্ষা চেয়েছিলো,তাই না? জানো আজও ওর হাসিমাখা মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে,ভুলতে পারি না ওকে।
আমি সেদিন সিদ্ধান্ত নেই কঠিন সিদ্ধান্ত নেই যে আমি ওদের এমন মৃত্যু দিবো যে ওরা তা কল্পনাও করতে পারবে না।টানা ছয় মাস ধরে প্ল্যান করে ওদের একেকটাকে ধরতে পেরেছি,সবগুলোর শরীরের কিছু অংশ কেটে রেখে দিয়েছি।যখনই আমার এসব মনে পড়ে তখনই গিয়ে ওদের শরীরের অংশগুলোর উপর রাগ মিটাই।
শেষের কথাগুলো উনি চোখমুখ শক্ত করে বললেন।আমার খারাপ লাগতে লাগলো,তাও প্রশ্ন করলাম,, “কিন্তু আপনি এসব জানলেন কী করে?”
উনি চোখের পানি মুছে বললেন,,,”আমি একজন সিকরেট সিভি আই অফিসার তাই এসব জানা আমার জন্য খুব সহজ ছিলো।আমি ওদের চাইলে আইনের কাছে তুলে দিতে পারতাম,কিন্তুু দেয় নি কারন ওদের কয়দিন জেলে রেখে ঠিকই ছেড়ে দিত।আমি ন্যায় বিচার পেতাম না, তাই আমি ওদের নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছি।”
আমি এবার করুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বললাম,,,”তাহলে আমার সাথে কেনো এমন করেছেন?”
চলবে,,,