প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন : ২
পার্ট ১
নিজের থেকে ছয় মাসের বড় একটা মেয়ের পেছনে ঘুড়ছেন ৷ দুই বছর ধরে কেন পরে আছেন আমার পিছু আয়ান ৷আপনি কি দিয়ে তৈরি বলুন তো ৷কথা গুলো বেশ রাগী কন্ঠে বলল চারুলতা ৷
আয়ান নামক শ্যামলা যুবকটা হাপাঁতে হাপাঁতে বলল আজ আপনার কলেজে অনুষ্ঠান চারু ৷আপনার জন্য বেলী ফুলের গাজরা নিয়ে এসেছি ৷এটা পড়লে আপনাকে একদম রাজকন্যার মতো লাগবে ৷আপনার জন্য গাজরা কিনতে সেই ভোরে বেড়িয়েছি ৷আরো আগে নিয়ে আসতাম ৷কিন্তু রিকশাটা মাঝ পথে খারাপ হয়ে গেছে ৷তাই দৌড়ে আসতে দেরি হয়েছে ৷
চারুলতা অবাক চোখে আয়ানকে দেখছে ৷এই ছেলেকে সে যত দেখে ততই অবাক হয় ৷দুই বছর ধরে এর পাগলামির শেষ নেই ৷
আয়ান চারুর কাছে এসে বলল আপনার খোপায় এই গাজরা টা দিন না চারু ৷অনেক কষ্ট করে এনেছি ৷
আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে একে বারে ঘামে ভেজা ৷সত্যি বড্ড কষ্ট করেছে সে ৷চারু আয়ানের হাত থেকে গাজরাটা নিল ৷তারও একটা গাজরা খুব দরকার ছিল৷কিন্তু কাল কোথাও পায় নি ৷
আয়ান চারুকে দেখছে ৷চারু আজ লাল পাড়ের সাদা শাড়ী পরেছে ৷ হাত লাল রেশমি চুড়ি ৷কপালে লাল টিপ ৷সামনে আসা চুল গুলো বারবার জালাচ্ছে তার চারু ৷ মায়া ভরা চোখে কাজলের ছোয়া ৷নেই কোনো কৃত্রিম সাজ ৷তার শ্যাম বর্না চারুলতা কোনো সাধারন কেউ নয় ৷আজ তাকে কোনো হুরের থেকে কম লাগছে ৷আয়ান তাকিয়ে রইলো ঐ রূপের দিকে ৷
চারু অনেক চেষ্টা করেও খোপায় গাজরাটা লাগাতে পারলো না ৷যার ফলে তার মুখে কিছুটা রাগের আভাস ফুটে উঠলো ৷আয়ান চারুলতার মুখ দেখে হাসলো ৷তারপর নিজেই চারুর হাত থেকে মালাটা নিয়ে বাধঁতে বাধঁতে বলল
বিয়ের পর রোজ আপনার জন্য আমি মালা নিয়ে আসবো চারু ৷তারপর আপনার খোপায় রোজ গাজরা গুজে দেব ৷আর আপনি আপনার শাড়ীর আচল দিয়ে আমার ঘাম মুছে দিবেন ৷আপনার আর আমার ছোট একটা সংসার হবে ৷ আপনাকে আমি একদম লাল টুকটুকে বউয়ের মতো সাজিয়ে রাখবো ৷যাকে দেখার স্বাদ এই জীবনে ফুরাবে না আমার ৷
চারু আয়ানের দিকে ঘুড়ে দাড়িয়ে বলল আপনার এই গাজরা আমার দরকার নেই ৷আমি এক্ষুনি খুলে ফেলবো ৷
না চারু এটা খুলবেন না ৷আমায় না হয় ভালোবাসেন না ৷কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার কষ্ট টা একবার বোঝার চেষ্টা করুন প্লিজ ৷
চারুলতা কিছু বলল না ৷আয়ান নামক শ্যামলা যুবককে পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলো ৷ ছেলেটা অদ্ভুত কথা বলে সব সময় ৷আজ তার কলেজে প্রোগ্রাম আছে ৷ তাই একটু সেজেছে ৷আর এই পিচ্চি ছেলে এখানেও তার পিছু নিয়েছে ৷
আয়ান পেছন থেকে চিৎকার করে বলল
করিও না অভিমান ৷
বঙ্গ নারী ,পড়ো শাড়ী
ভালোবেসে গাইবো গান ৷
চারু আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাগ দেখালো ৷তারপর আবার হাটা দিল ৷আয়ান তার চারুলতার রাগ দেখে হাসে ৷রাগলে তাকে একদম গিন্নি গিন্নি লাগে ৷তারপর সেও বাড়ীর দিকে হাটা দিল ৷অনুষ্ঠান শেষ হলে আবার চারুকে বাড়ী পর্যন্ত পৌছে দিতে হবে ৷যতই চারু বিরক্ত হোক তবুও ৷সে চায় না চারুর কখনো কোনো অসুবিধা হোক ৷
আয়ান বাড়ীতে যেয়ে দেখলো তার মা কাজ করছেয৷পেছন যেকে মাকে জরিয়ে ধরলো ৷আয়ানের মা মমতা বেগম মুচকি হাসলেন ৷তারপর ছেলের কপালে থাকা ঘাম মুছে বলল
আজও বুঝি চারুর কাছে গিয়ে ছিলি ৷আয়ান মুচকি হাসলো ৷তার বেশ লজ্জা লাগছে ৷
মমতা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন থাক আর লজ্জা পেতে হবে না ৷আমার ছেলে ঐ মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসে ৷আর সে সাড়া দেবে না ৷তা কি করে হয় হুমম ৷ আজ কোথায় গিয়ে ছিলি ৷ আর এত দেরি হলো কেন বাপ ৷
মায়ের সামনে মাথা নিচু করে আয়ান বলল চারু কাল বেলী ফুলের গাজরা খুজে পায় নি ৷তাই আজ তার জন্য গাজরা কিনতে গিয়ে ছিলাম ৷ আসার সময় রিকশা খারাপ হয়ে গিয়ে ছিল ৷তাই দৌড়ে আসতে দেরি হয়েছে মা ৷
মমতা বেগম ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বললেন বড্ড কষ্ট হয়েছে না ৷ঐ মেয়েকেই আমি তোর বউ করে আনবো ৷চিন্তা করবি না একদম ৷মেয়েটার খেয়াল রাখবি বাবা ৷যা এখন নাস্তা করে নে ৷টেবিলে খাবার আছে ৷অনেক বেলা হয়ে গেছে ৷
তুমি খেয়েছো মা ৷
না রে বাবা খাই নি ৷
চলো এক সাথে খাবো ৷বাবা আর ভাইয়েরা কোথায় ৷
তোর বাবার মিটিং আছে ৷তাই চলে গেছে সকালে ৷আর তোর ভাইয়েরা স্কুলে গেছে ৷চল খেয়ে নিবি এখন ৷
কাঠ ফাটা রোদ চারিদিকে ৷আয়ান একটা ছাতা নিয়ে কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে ৷হাতে এক বোতল পানি ৷ অনুষ্ঠান একটু পরেই শেষ হবে ৷আয়ান একটা গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে ৷
একটু পর দেখলো গার্লস কলেজের ভেতর থেকে সারি সারি মেয়েরা বেড়িয়ে আসছে ৷এত এত মেয়েদের মধ্যে আয়ান তার চারুলতাকে খুজে চলেছে ৷বেশ কিছু সময় পর সে তার চারুকে খুজেও পেল ৷আয়ান তার কাছে দৌড়ে গেল ৷চারুকে কিছু বলতে না দিয়ে পানির বোতল আর ছাতাটা ওর হাতে দিয়ে দিল ৷তারপর দৌড়ে চলে গেল ৷আর চারু সে অবাক চোখে আয়ানের চলে যাওয়া দেখতে লাগলো ৷ হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে চারুর কাছে এলো ৷আর হাতে একটা চিরকুট দিল ৷চারু ছোট বাচ্চাটাকে কিছু বলবে তা আগে সেও চলে গেল ৷ বোতল থেকে প্রায় অর্ধেক পানি সে খেয়ে নিল ৷ সত্যি বড্ড পানির তৃঞ্চা পেয়ে ছিল তার ৷চারু ছাতাটা খুলে বাড়ীর দিকে রওনা দিল ৷এই রোদে ছাতা ছাড়া তার সত্যি বড্ড কষ্ট হবে ৷
(গল্পের নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু কথা আছে ৷দয়া করে পড়বেন ৷)
রাত বারোটা ছুইছুই ৷চারুলতার পড়া শেষ ৷সে এখন ঘুমিয়ে পড়বে ৷হঠাৎ তার চিরকুট টার কথা মনে পড়লো ৷চারু চিরকুট টা খুললো ৷তারপর পড়তে শুরু করলো ৷
জানেন চারুলতা আপনি আমাকে যতই রাগ দেখান ৷যতই আপনার থেকে ছোট বলে অপমান করেন ৷তাতে আমার কখনো কষ্ট হয় না ৷আপনাকে আমার হৃদয়ের জমানো ভালোবাসা এই জীবনে দেখাতে পারবো কি না জানি না ৷তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসি ৷আপনাকে আমৃত্যু ভালোবাসি ৷যেই ভালোবাসা শেষ হওয়ার নয় ৷যেই ভালোবাসায় হাজার জনম কাম্য ৷আমার ছোট হৃদয়টাতে আপনাকে ছোয়ার ইচ্ছা জাগে না ৷আমার হৃদয়ে আপনাকে ভালো রাখার ইচ্ছা জাগে ৷আচ্ছা চারু এক জীবনে কি সত্যি ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে হৃদয় ভরে ৷আমার তো ভরবে না ৷আমি চাই আমার ভালোবাসার সূচনা যেমন রঙ্গিন ৷শেষটাও যেন রঙ্গিন হয় ৷আপনি ভালোবাসা হয়ে আমার হৃদয়ে থেকে যান চারু ৷আপনার প্রতি আমার অনুভূতি ঠিক রবীন্দ্রনাথের গানের মতো ৷শুনতে চান কেমন ৷
আমারও পরানও যাহা চায়
তুমি তাই ,তুমি তাই গো
আমারও পারানও যাহা চায়
তোমা ছাড়া এই জগতে
মোর কেহ নাই ,কিছু নাই গো
আমারও যাহা চায়
চারু চিরকুট না আবারো ভাজ করলো ৷তারপর ড্রয়ারে চিরকুট টা রেখে দিল ৷
চলবে…….