প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম সিজন :৪
পার্ট :২
সারা দেশ জুড়ে আতংক ছেয়ে গেছে ৷কেননা দুই দিনে চারশত মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে ৷ যে কোনো জায়গা থেকে মেয়ে ও শিশুদের তুলে নেওয়া হচ্ছে ৷ হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খোঁজে মা বাবা পাগল প্রায় ৷পুলিশ কিডন্যাপারকে ধরতে পারছে না ৷আর এই কেসের কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই ৷সব তথ্য প্রীতির কাছে ৷ কেননা সে এত দিন কেসটা হ্যান্ডেল করেছে ৷
অন্যদিকে অন্ধকার কারাগারে হাটু ভাজ করে প্রীতি বসে আছে ৷সকালে দিয়ে যাওয়া খাবার এখনো পড়ে আছে পাশে ৷দুই আগে জ্ঞান ফিরে আসার পর একটা কথাও সে বলে নি ৷ অনেক পুলিশ এসেছে ৷কিন্তু সে কথা বলে নি ৷
এসিপি প্রদীপ কারাগারে ভেতর প্রবেশ করলো ৷ প্রীতি মাথা তুলে তাকালো পায়ের আওয়াজ পেয়ে ৷এসিপি প্রদীপ প্রীতির সামনে বসে বলল
নারী পাচারের মামলাটা তুমি সামলেছো এত দিন ৷তোমার কাছে সব তথ্য আছে ৷আমরা তোমার বাড়ী তালাস করে কোনো তথ্য পাই নি ৷ যদি তথ্য গুলো আমাদের দিতে তাহলে খুব ভালো হতো ৷
প্রীতি আবারো মাথা নিচু করলো ৷তারপর বলল
আপনাদের তথ্য দিয়ে আমার কি লাভ স্যার ৷যেখানে আপনারা আমাকে ফাসিঁ দিবেন ৷সেখানে আমি কেন আপনাদের তথ্য দিব ৷
প্লিজ প্রীতি একটু বোঝার চেষ্টা করো ৷তোমার একটু সাহায্য মেয়ে গুলোর জীবন বাচাঁতে পারে ৷
প্রীতি মাথা নিচু করেই বলল আমি না কোনো তথ্য দেব ৷না ঐ মেয়েদের বাচাঁতে সাহায্য করবো ৷আপনি আসতে পারেন এখন ৷
এসিপি প্রদীপ এবার রেগে প্রীতির সামনে বসে বলল
তোমার মধ্যে কি এতটুকু মানুষের সত্তা নেই ৷নাকি পুরোটা জুড়ে জানোয়ার বাস করছে ৷তোমার একটু হেল্প যেখানে মেয়েদের বাচাঁতে পারে ৷সেখানেও তুমি এমন নির্দয় হবে ৷
আমি যে জানোয়ার তা তো বুঝেই গেছেন ৷তো মানুষের কাছে যান না স্যার ৷প্রীতিও কিছুটা চিৎকার করে কথা বললো ৷
এসিপি প্রদীপ উঠে দাড়িয়ে বলল
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল ৷যে তোমার মতো জানোয়ার কখনো মানুষের ভালো চাইতে পারে না ৷যে মানুষ মারতে এতটুকু দয়া করে না ৷সে আবার করবে সাহায্য ৷আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল ৷যার পরিবার নেই সে পরিবারের কদর কিভাবে করবে ৷এসিপি শরীফ দয়া করে ছিল বলে ৷নইলে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হতো ৷এসিপি চলে গেলেন রাগে গজগজ করতে করতে ৷প্রীতিলতা জবাবে কিছুই বলল না ৷ শুধু তাকিয়ে রইলো এসিপির যাওয়ার দিকে ৷
প্রীতির বালিশের নিচ থেকে পাওয়া ডায়রীটা প্রকাশ করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে ৷চারুর প্রতি আয়ানের ভালোবাসা সবাইকে যেমধ অবাক করছে ৷ ঠিক তেমনি তাদের আগুনে পুড়ে মৃত্যু সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে ৷কিন্তু প্রীতির খুনের সাথে কেসের কি সম্পর্ক তা বোঝা মুশকিল ৷অপর দিকে প্রীতির দাদা ও দূর্ঘটনায় মারা যাওয়া তার চাচা মিহান চৌধুরী নারী শিশু পাচার ও মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন ৷শুধু তাই নয় তারা মেয়েদের দিয়ে খারাপ কাজও করাতো ৷ ডিএনএ টেস্ট করানো হয়েছে ৷ এবং সাংবাদিক খবর দেওয়া হয়েছে ৷সবাই আসবে প্রীতির বিচারের দিন ৷
প্রীতিলতাকে আজ কোর্টে নেওয়া হয়েছে ৷ আজ আবারো তাকে নিয়ে বিচার সভা বসবে ৷প্রীতির হাতে এখনো হ্যান্ডকাফ ৷ পড়নে আগের রক্তমাখা জামা ৷ প্রীতি তাকিয়ে দেখলো আবেশ তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসে আছে ৷তার পাশেই দিহান বসে আছে নিজের মাকে নিয়ে ৷নির্ঝর বসে আছে ৷মিলাও বসে আছে তার দুইজন বন্ধু নিয়ে ৷তার পাশেই জামিল ৷তার পালিত বাবা এসিপি শরীফ আর তার পালিত মা ৷পাশে ভাইটা বসে আছে ৷মিডিয়ার লোকের লাইভ শুরু করেছে ৷ বিচার কার্য শুরু হলো ৷বিচারকের কাছে ডিএনএ টেস্ট গুলো পাঠানো হলো ৷বিচারক টেস্ট গুলো দেখে বললেন
এখানে আসামী প্রীতিলতা মৃত আয়ান চৌধুরীর মেয়ে ৷কিন্তু দিহান মৃত দ্বীপ চৌধুরীর ছেলে নয় ৷
দিহান সবার সামনে চিৎকার করে বলল এগুলো সব নাটক ৷এটা হতেই পারে না ৷আমার বাবাকে খুন করে ৷এখন নিজেকে বাচাঁনোর চেষ্টা করছে এই মেয়েটা ৷
বিচারক দিহানকে চিৎকার করতে নিষেধ করলো ৷অতঃপর প্রীতিলতার দিকে তাকিয়ে বলল
আমরা সবাই জানি তুমি এসিপি শরীফের মেয়ে নও ৷আমরা নিশ্চিত হতে তার সাথেও তোমার ডিএনএ টেস্ট করেছি ৷কিন্তু কোনো মিল পাই নি ৷আমরা এসিপি শরীফের বক্তব্য নিয়েছি ৷তার কথা অনুযায়ী সে তোমাকে একটা রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়ে ছিলেন ৷এবং আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগে ঠিক ঐ দিনেই তোমার মা বাবা আগুনে পুড়ে মারা যায় ৷
আমার মা বাবা চৌদ্দ বছর আগে আগুনে পুড়ে মারা যায় নি ৷ তাদের খুন করা হয়ে ছিল ৷ প্রীতি স্বাভাবিক ভাবে বললো ৷
উপস্থিত সকলে চমকে উঠলো ৷আবেশ নিজেও চমকে উঠলো ৷কেননা তার জানা মতে মা বাবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৷
বিচারক অবাক চোখে বলল কিন্তু তথ্য অনুযায়ী তারা পুড়ে মারা গেছে ৷
স্যার ডায়রীটা যেখানে শেষ হয়েছে ৷এবার তার পরবর্তী অংশ আমি মুখে বলছি আপনাকে ৷আর হ্যা আপনাকে আমি প্রমানও দিব ৷ যে আমার মা বাবা খুন হয়েছে ৷
ঐ দিন মা আমাকে আলমারীর ভেতর ঢুকিয়ে রেখে যায় ৷ কিন্তু যাওয়ার আগে মা আমার হাতে ছোট একটা কার্ড দিয়ে যায় ৷যেটাকে বলে মেমোরি কার্ড ৷ মা যাওয়ার আগে বলে ছিল ৷নিজের জীবন দিয়ে যেন আমি রক্ষা করি এই কার্ড ৷তারপর মা আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে যায় ৷আমি তখন বুঝি নি মা কোথায় গেল ৷আলমারীর দরজাটা একটু ফাকাঁ ছিল ৷ ভাইটা বিছানায় বসে খেলতে ছিল ৷ আমি আলমারীর ভেতর বসে ছিলাম ৷আমার হাতে বাবার দেওয়া একটা ক্যামেরা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম ৷হঠাৎ মায়ের চিৎকারে আমি বিছানার দিকে তাকাই ৷ঘরের ভেতর ছয় সাতটা আংকেল ছিল ৷এদের সবাইকে আমি চিনতাম না ৷তবে একজনকে খুব ভালো করে চিনতাম ৷সে আর কেউ না ৷আমার চাচা দ্বীপ চৌধুরী ৷একটা লোক আমার মায়ের চুল ধরে বিছানা ছুড়ে মারে ৷ছোট ভাইটা খেল ছিল বিছানায় ৷আরেকটা লোক এসে আমার ভাইটাকে ছুড়ে মারে দেওয়ালে ৷আমি তখন আলমারীর ভেতর ৷চাইলেও বের হতে পারছিলাম না ৷খুব ভয়ে আমার হাত পা কাপঁছিল ৷দুইজন লোক আমার বাবাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে ৷বাবার মাথা ফেটে অনেক রক্ত বের হচ্ছিলো ৷আমার বাবাকে তারা একটা চেয়ারে বেধেঁ ফেলে ৷বাবা জীবিত ছিল ৷একজন লোক মায়ের কাপড় খুলে ফেলে দেয়ে ৷তারা একের পর এক আমার মায়ের উপর ঝাপিঁয়ে পড়ে ৷মা তখন চিৎকার করছিল বাচাঁর জন্য ৷আর বাবা চিৎকার করছিল মাকে বাচাঁনোর জন্য ৷আমার মা সেই দিন চিৎকার করে বলেছিল তার ক্ষতি না করতে ৷কিন্তু ওরা শোনে নি ৷আমার চোখের সামনে ছয় জন মিলে নয় বার ধর্ষন করে আমার মা কে ৷ছোট ভাইটা গলা কাটা মুরগীর মতো ফ্লোরে পরে ছটফট করছিল ৷একজন এসে এমন জোড়ে ভাইটাকে দেওয়ালের সাথে বারি মারলো যে ৷আমার ভাইয়ের মস্তিষ্কটা মাথা ফেটে বেড়িয়ে গেল ৷একের পর এক আঘাতে আমার ভাইটার দেহ পুরো থেতলে দিল স্যার ৷আমার বাবা তখন হাউমাউ করে কাদঁছিল ৷আমার ভাইটাকে ওরা ছাড়ে নি স্যার ৷বাবা চিৎকার করছিল বলে ৷একজন মাকে রেখে বাবার মাথায় সাথে আনা লোহার রড দিয়ে এলোমেলো ভাবে মারতে লাগলো ৷এক সময় বাবা আমার চুপ হয়ে গেল ৷মা নিস্তেজ শরীরে যখন বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ৷তখন আরেকজন এসে আমার মায়ের গলায় একটা চিকন তার পেচিয়ে ধরলো ৷মা দুই হাতে নিজের গলা পেচিয়ে ধরে ৷শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারনে মায়ের জিহবা বের হয়ে গিয়ে ছিল ৷এক সময় মা ছটফট করতে করতে চোখের সামনে শেষ হয়ে যায় ৷
চলবে