প্রেমনদীর মাঝি পর্ব-১২

0
417

#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_১২
#মুসফিরাত_জান্নাত

নীল আকাশে আজ হালকা মেঘ জমেছে। বিকেল গড়ানোর এ সময়টায় মিইয়ে যাওয়া রৌদ্দুরের দুরন্তপনা খেলা নেই।স্নিগ্ধ, শীতল বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার পরিবেশের গুমোট গরমের সমাপ্তির আভাস মিলছে এতে।হয়তো কিয়ৎক্ষন পরই মেঘরাজী বৃষ্টি হয়ে ঝরবে।টুপটাপ করে শহর ভিজাবে।অথবা এই বাতাসের টানে মেঘ উড়ে দূর আকাশে পাড়ি জমাবে।এই মুহুর্তে মেঘপুঞ্জের মতিগতি সঠিকভাবে আঁচ করা কঠিন হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মল এক পরিবেশ বিরাজ করছে।উনি ব্যস্ত রাস্তার জ্যাম মাড়িয়ে ঠিক এই জায়গায় কেনো নিয়ে আসলেন বুঝতে পারছি না আমি।কিন্তু কোনোরুপ প্রশ্ন করা ছাড়াই হেটে চলেছি ওনার পাশে।পরীক্ষার আগের দিন আজ। ভবনগুলোর ভিতরে প্রবেশাধিকার না থাকলেও ক্যামপাস পুরোদমে জমজমাট আছে।উনি আমাকে ঠিক সেই ভবনটার সামনে নিয়ে আসলেন যেখানে আমার পরীক্ষার সিট পড়েছে।এখানটায় এসে থামলেন উনি।তারপর ধাতস্থ কণ্ঠে আমাকে বললেন,

“কাল এখানটায়ই পরীক্ষা হবে তোমার।জায়গাটা ভালোভাবে ঘুরে দেখো।”

ওনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি।এতক্ষনে মনে চেপে রাখা প্রশ্নটা এবার অধর গলিয়ে বের করলাম,

“এটা তো পরীক্ষার কেন্দ্র মাত্র।এখানে ঘুরে দেখার কি হলো!”

আমার প্রশ্নে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন উনি।আমিও ওনার মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।কিছুটা সময় নিয়ে উনি গম্ভীর কণ্ঠে জবাবে বললেন,

“এখানটায় আজ এজন্য এনেছি যেনো জায়গাটা কাল তোমার একেবারে নতুন মনে না হয়।এর আগেও তুমি একবার জায়গাটায় এসেছো মানে পরীক্ষা দিতে এলে তোমার অনুভুতি কিছুটা হালকা হবে।অপরিচিত জায়গা বলে ভয় পাবে না।নার্ভাসও কম লাগবে।তাছাড়া কেন্দ্র খোঁজার ঝামেলাও পোহাতে হবে না।সেজা এখানে চলে আসতে পারবে, তাই সময় বাঁচবে।এটা একটা প্লাস পয়েন্ট।”

কথাটা বলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন উনি।আর আমি গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।খানিকটা দ্বিধান্বিতও হয়েছি বটে।এমন যুক্তি তো এর আগে কখনো শুনিনি।আমি সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“কেন্দ্র আগের দিন চিনে রাখলে সত্যি নার্ভাস কম লাগে?”

আমার প্রশ্ন শুনে উনি দৃষ্টি ওদিকেই রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,

“হুম।একটু ভাবলে তুমিও এটা বুঝতে পারবে।”

ওনার উত্তরে ভাবতে লাগলাম আমি।কোথায় আমার তো এমন মনে হচ্ছে না।আমি ভ্যাবলান্তের মতো তাকিয়ে রইলাম।আমার এহেন দৃষ্টি দেখে হয়তো কিছু বুঝে নিলেন উনি।তারপর স্মিত হেসে বললেন,

“জীবনে বোর্ড পরীক্ষায় তো বসেছো বেশ কয়েকবার।অভিজ্ঞতা তো থাকার কথা।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই ওনার দিকে।আমতা আমতা করে বলি,

“কোনো বোর্ড পরীক্ষায় তো আগের দিন গিয়ে হল দেখে আসিনি!”

কথাটা বলে বার কয়েক পলক ফেললাম আমি।উনি এবার বিরক্ত হয়ে বলেন,

“আমি সেটা বলিনি।বোর্ড পরীক্ষাগুলোয় প্রথম পরীক্ষার দিন যতটা নার্ভাস ও ভয় লাগে, তারপরের পরীক্ষা গুলোয় কি তেমন লাগে?”

ওনার প্রশ্নে ডানে বামে মাথা নাড়ালাম আমি।

“একদমই না।বরং রিল্যাক্সে পরীক্ষা দেওয়া যায়।”

এবার উনি বিবৃতি দিয়ে বললেন,

“এটার মূল কারণ প্রথম দিন নতুন জায়গা বলে নার্ভাস লাগে।কিন্তু পরেরদিন গিয়ে জায়গা, সিট সব পরিচিত হওয়ায় ভয়, নার্ভাসনেস কোনোটাই কাজ করে না।তাই রিল্যাক্সে পরীক্ষা দেওয়া যায়।এজন্য সবার উচিৎ পরীক্ষার আগে এটলিষ্ট তার কেন্দ্র পরিদর্শন করা।এতে প্রথম দিন থেকে রিল্যাক্স মাইন্ডে এক্সাম দেওয়া যায়।”

ওনার যুক্তি শুনে মানতে রাজি হলাম আমি।প্রত্যেকটা কথা আমার সঠিক মনে হলো।বোর্ড পরীক্ষাগুলোর প্রথম দিন কেমন নামহীন ভয় কাজ করতো।পরেরদিন গুলোতে স্বাভাবিকই কাটতো।অথচ নিজ স্কুল কলেজের পরীক্ষায় কখনো এমন হয় নি।তবে কোন যুক্তিতে না মানি যে, পরিচিত স্থান নার্ভাসনেস কমিয়ে দেয়।বরং মানার কারণটা স্পষ্ট।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। উনি এতো কিছু জানেন কেমনে?উনি কি গুগল নাকি যে সব তথ্য সংগ্রহ করে রাখেন?

আজ আমার অভিধানে ওনার নতুন নাম সংযুক্ত হলো।আমার ব্যক্তিগত গুগল উনি।না বলতেও সব সমস্যা বুঝে সলিউশন বের করার মানব।আমি ওনারদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।তা দেখে উনি জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকালেন।মুখে বললেন,

“কিছু বলবে?”

প্রশ্নটা কানে বাজতেই সম্বিত ফিরল আমার।তড়িৎ কিছুটা লজ্জা হানা দিলো আমার মাঝে।দৃষ্টি নত করে মাথা নাড়লাম আমি।তারপর কিছু না বলে উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম।
_______
এখানটায় এসে সত্যি বেশ অন্য এক অনুভুতির সাক্ষাৎ পেলাম আমি।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে আসলে এমন অনুভুতি হয় জানা ছিলো না আমার।এখানে পা রাখার পর এই স্থানটাকে নিজের ক্যাম্পাস করার অদম্য ইচ্ছা জাগলো মনে।যা আগের ইচ্ছার চেয়েও অনেক বেশি।অদৃশ্য চম্বুকের আকর্ষণের মতো।আমার কেনো যেনো মনে হলো এডমিশন কোচিং করার আগে এই ক্যাম্পাসগুলো কেও একবার ঘুরে দেখলে, সে একটা সিট দখলের জন্য ম’রিয়া হয়ে উঠবে।আপ্রান চেষ্টা চালাবে নিজের সবটা দিয়ে।যেমন আমার এমন আকর্ষন হচ্ছে এখন। এই আকর্ষনের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা ফুচকার স্টলের সামনে নজর আটকালো আমার৷স্ট্রিট ফুডের ভক্ত আমি বাচ্চাকাল থেকে।থমকে দাঁড়ালাম আমি।এত সময় ধরে উনি নিরবেই আমার পিছু পিছু আসছিলেন।এখন আমাকে হটাৎ দাঁড়াতে দেখে আশেপাশে নজর বুলিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

“খাবে?”

আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাই। তিনি এক প্লেট ফুচকার অর্ডার দিয়ে আমাকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসেন।আমি জিজ্ঞেস করলাম,

“এক প্লপট কেনো?আপনি আপনি খাবেন না?”

উনি মাথা দুলিয়ে বললেন,

“আমি এসব হাবিজাবি জিনিস খাই না।”

আমি আর দ্বিরুক্তি করলাম না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, এখানে এডমশন ক্যান্ডিডেটরা ছাড়াও প্রচুর কাপল ঘোরাঘুরি করছে।সাথে স্থানে স্থানে অনেক বখাটে ছেলেদেরও সমাগম রয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ চলে যেতেই পাশ থেকে ওদের মাঝে দুই-একটা ছেলে আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা শুরু করে দিলো। তারা কথাগুলো আমাদের শোনানোর উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বলতে থাকে।ফলে তাদের সকল কথা আমার আর ওনার কানে এসে স্পষ্টভাবে পৌঁছাচ্ছে। ওসব ভাষা শুনে আমি ক্রোধে ফে’টে পড়ি।নিজ এলাকা হলে এই ছেলেগুলোকে এখন চটকানা মা’রতাম নিশ্চিত।কিন্তু অপরিচিত নতুন স্থান জন্য কিছু বলতে পারছিলাম না। তাই আমি ওনার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছিলাম।ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে ফোন স্ক্রল করছেন।দেখে মনে হচ্ছে উনি এসব কিছু শোনেনই নি।তার মধ্যে এইসব কথার কোন ভাবাবেগ সৃষ্টি করছে না।যা দেখার সাথে সাথে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।আমি রাগান্বিত কণ্ঠে বলি,

“ওরা আমাকে নিয়ে আজেবাজে টোন দিচ্ছে আর আপনি বসে বসে আঙুল চুষছেন?”

উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে জবাবে বললেন,

“তো আমি কি করবো?”

আমি অবাক হয়ে বলি,

“কি করবেন মানে?এই আপনার পুরুষ সত্বা?ওরা আপনার সামনে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে বাজে টোন দিচ্ছে আর আপনি বলছেন কি করবেন?হাও ফানি!”

তিনি এইবার আমার দিকে তাকালেন। মোবাইল অফ করে নিজের প্যান্টের পকেটে তা ঢোকাতে ঢোকাতে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“ওদের কথা কানে নেওয়ার কি খুব প্রয়োজন তোমার?রাস্তার কুকুর ও তো মানুষ দেখলে ঘেউ ঘেউ করে। ওসব কি কানে নেও?”

আমি এবার বিষ্মিত হই।উনি কিসের সাথে কি মিলাচ্ছেন!সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,

“মানে!”

জবাবে উনি স্বাভাবিক থেকেই বললেন,

“মানে এইটাই যে, কুকুরের স্বভাব যেমন ঘেউ ঘেউ করা,ওদের স্বভাবও এমন মেয়ে দেখলে টিজ করা।ওদের এসব কথা বলার উদ্দেশ্য পাত্তা পাওয়া।আমরা প্রতিবাদ করবো, রাগ দেখাবো এসব জেনেই ওরা টোন দেয়। সাথে প্রতিবাদ করলে ওরা ঝামেলা করে মজা লুফে নেয়।এখন আমরা যদি প্রতিবাদ করি তবে ওদের উদ্দেশ্য সফল করে দেওয়া হবে।তুমি কি চাইছো আমি তাই করি?”

আমি শীতল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

“তাহলে কি করবো?এসব হজম করতে বলছেন আপনি?”

“ওসব কথা কানে তুলো না।এমনকি ওদের দিকে ফিরেও তাকিও না।যখন দেখবে আমরা ওদের রাস্তার কুকুর বিড়ালের মতো কিছু মনে করছি না,ওদের উদ্দেশ্য অসফল।তখন এমনি চুপ হয়ে যাবে।”

কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। কোন এক অদৃশ্য কপাট এসে যেন হানা দিলো আমার কানে।আমি কোনো কিছু কানে না নিয়ে ফুসকা খেতে লাগলাম।এক সময় সত্যি দেখলাম ছেলেগুলো নিজ থেকে চুপ হয়ে গিয়েছে।তা দেখে এক চিলতে হাসি ফুটলো অধরে।উনি নিরব বলে যতটা রাগ হয়েছিলো তা মিলিয়ে গেলো।সত্যি সবসময় হৈ হৈ করেই প্রতিবাদ করতে হয় না। মাঝে মাঝে নিরব উপেক্ষায়ও কঠোর প্রতিবাদ করা যায়।
_______
এক বিকেল এক সন্ধ্যা ঘুরে মাগরিব নামাযের সময় বাসায় ফিরলাম আমরা।ফ্রেশ হয়ে ওজু দিয়ে নামায আদায় শেষে আল্লাহর দরবারে দীর্ঘ একটা মোনাজাত করলাম।তারপর বসলাম বই নিয়ে।বিকেলটা বাইরের নির্মল পরিবেশে কাটিয়ে মনের ভয় ভীতি সব আচমকাই গায়েব হয়ে গিয়েছে।প্রশান্ত মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিকে চোখ বুলিয়ে ডিনার শেষে তড়িৎ বিছানায় গেলাম।এটা ওনারই আদেশ ছিল।দীর্ঘ সময় চুপচাপ শুয়ে থেকে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম খেয়াল নেই আমার।ঘুম থেকে উঠেছিলাম ঠিক ফজর নামাযের ওয়াক্তে।আমরা যত চেষ্টাই করি না কেনো, আমাদের উপর সৃষ্টিকর্তার রহমত নাজিল না হলে কখনো লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো না,এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।তাই আল্লাহর দরবারে রহমত ও সন্তুষ্টি চেয়ে দোয়া করলাম।তারপর আবারও কিছু শীট দেখতে লাগলাম।আজ মাথাটা কোনো বিশেষ কারনেই চিন্তা বাবাজিকে সুবিধা করতে দিচ্ছে না।তাই বেশ সুবিধাও হলো আমার।সকালের নাস্তা শেষে সময় হওয়ার অনেক পূর্বেই পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।কেননা আজ ঢাকার রাজপথে স্বাভাবিকের চেয়ে আরও জ্যাম পড়বে।সেই জ্যাম ওনার দেওয়া পরামর্শ শেষ হওয়ার আগেই কখন মাড়িয়ে ভার্সিটি পৌছালাম নিজেও খেয়াল করিনি।আমি ওনার প্রত্যেকটা উপদেশ মন দিয়ে শুনছিলাম।আগে বলা কথাগুলোই উনি রিপিট করছিলেন।আমার ম্যাথ সলভ করতে সময় লাগে, তাই অন্য বিষয়গুলো আগে টাচ করতে বললেন।যথা সম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই চলেছেন উনি।আমি মনোযোগ দিয়ে ওসব শুনছি।একটু পর আবিষ্কার করলাম ক্যাম্পাসের স্থানে স্থানে চেয়ার, টেবিল পেতে সঠিক ভবনের খোঁজ দেওয়ার জন্য অনেকগুলো অনুসন্ধান টিম কাজ করছে।অনেক স্টুডেন্ট হয়রান হয়ে নিজেদের বিল্ডিং খুঁজছে।এসব দেখে নিজেকে অনেকটা মুক্ত মনে হলো।আমার এতো প্যারা নেই।কিন্তু প্যারাটা আসলো অন্য দিকে।রিকশা থেকে নেমে ভীর ঠেলে সামনে এগোনোর আগে পরোখ করলাম এখানে ক্যান্ডিডেট গুলো সবাই সুবিধার নয়।সাধারনত তাদের একমাত্র পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা থাকার কথা থাকলেও আমি বুঝতে পারলাম অনেকে এমনি কোনো প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিতে এসেছে।ঠিক তাদের মাঝে বখাটে গুলো ও ক্যান্ডিডেটদের সাথে আসা বাজে কিছু লোক অকারণেই মেয়েদের ছুঁয়ে দেওয়ার বাহানা খুঁজছে।রিকশা থেকে নামার পূর্বে গুটি কয়েক মেয়ের এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে আঁতকে উঠলাম আমি।এই ভীর ঠেলে যেতে হলে আমারও এমন হবে ভাবতেই শিউরে উঠলাম।অথচ পরীক্ষার হল অবধি পৌছাতেই হবে।এমন অবস্থায় বেশ অবসন্ন অনুভুতি হচ্ছিলো আমার।এত এত মানুষের ভীরে কে গায়ে হাত লাগাচ্ছে বোঝাও দায়।আমি অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলাম।এই ভীর ঠেলে রিকশা আর এগোবে না তাই এখানেই নামতে হলো।উনি ভাড়া মিটিয়ে হুট করে ওনার এক হাতে আমার বাহু জড়িয়ে ধরে প্রায় নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমাকে।তারপর সামনে এগোতে লাগলেন।আচমকা এমন করায় ভড়কে গেলাম আমি।পরক্ষনেই বুঝলাম ওসব নোংরা হাতের স্পর্শ থেকে আড়াল করতে উনি এমনটা করেছেন।বেশ নিরাপদ মনে হলো নিজেকে।ওনার এমন আগলে নেওয়ায় ওনার প্রতি অজানা এক সম্মান কাজ করছিলো।ধীরে ধীরে ওনার শরীরের উষ্ণতা আমার পোশাক ভেদ করে গায়ে এসে ঠেকছে।যা আমার ভিতরে অন্যরকম শিহরন সৃষ্টি করলো।কিছুটা মুগ্ধতা,কিছুটা লজ্জা ও কিছুটা সংশয়ের সন্ধান মিললো আমার মাঝে।কেন না উনিই আমার জীবনের প্রথম কোনো পুরুষ যে কি-না আমাকে এতো কাছাকাছি এসে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। আমাকে আগলে নেওয়ার অনুমতি ছাড়াই ধরার অধিকার পেয়েছেন। তাই তো তার সাথে কাটানো সকল ঘটনা, অনুভূতি সবই আমার কাছে নতুন পৃষ্ঠার গল্প শোনায়।পুরোটা অন্যরকম, অপ্রত্যাশিত।

উনি আমাকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে যেতে থাকে আর আমিও ওনার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি।হঠাৎ আমার মনে হলো আমার সকল অস্বস্তি, ভয়,সংশয়সহ সব অসহায়ত্ব দৌড়ে পালিয়েছে। এখন আর আমার আতংক লাগছে না।বরং বেশ ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে এই মানুষটা যদি এইভাবেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চলতে থাকে, তাহলে আমি আজীবন সব ভীর ঠেলে সামনে এগোতে পারবো।কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারবে না।হটাৎ আমার কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে জানি না।কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারছি এটা না জানা মন্দ নয়।থাকুক না এসব অনুভূতি আমার জানার আড়ালে আবডালে।দূর থেকে হাত বাড়িয়ে আঁকরে নিক আমায়।ঠিক যেনো কোনো নিভৃতের অদৃশ্য চাদরে গা ঢেকে।

চলবে