প্রেমপিপাসা পর্ব – ১২

0
1363

প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ১২
writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহান – কী কথা বাবা?

রেহানের বাবা – আমরা তোমার বিয়ের কথা ভাবছিলাম। দেখতেই পারছো আমার শরীর টা বেশি ভালো যাচ্ছে না। তাই দেরি করতে চাইছি না।

রেহান – হোয়াট? বিয়ে?

রেহানের বাবা – হ্যা ঠিকই শুনেছো।

রেহান – কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। আর আমার পড়াশুনা ও শেষ হয়নি।

রেহানের বাবা – এটা কোনো সমস্যা না। কিছুদিন পর আমি আর অফিস যেতে পারবো না তোমাকেই সব সামলাতে হবে। আর হ্যা আমি যা বলেছি তাই হবে আমার কথার উপর কোনো কথা পছন্দ করি না।

রেহান কিছু না বলে উঠে চলে যায়।

রেহানের মা – দিলে তো ছেলেটাকে রাগিয়ে। কিছু খেতেও পারলো না।

রেহানের বাবা – যাই করোক। আমি রাতে হ্যা কথাটা শুনতে চাই।

রেহান ভার্সিটিতে চলে আসে। এসেই এদিক ওদিক খুঁজে কিন্তু কুহুকে কোথাও পায়নি।

রেহান – বোধহয় ক্লাসে চলে গেছে৷ ধুরর কতোটা দেরি করে ফেললাম আজ।

রেহান ও ক্লাসে চলে যায়।

ছুটির সময় রেহান ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে।
হটাৎ কুহুকে দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠে। কুহু কাছে আসতেই বলে…

রেহান – একটু ওয়েট ও করতে পারলে না?

কুহু – একটু? (ভ্রু কুঁচকে)

রেহান – তো? (মুখ গোমড়া করে)

কুহু – আপনার জন্য ১ ঘন্টা ওয়েট করেছি বুঝলেন?

রেহান – তার মানে তুমি আজ তারাতারি চলে এসেছো?

কুহু – জ্বী।

রেহান – শীটট আমিই আজ দেরি করলাম?
আগে আসলে তো কতো রোমান্স করতে পারতাম।

কুহু – কিহহহ?

রেহান – কিছুনা চলো বাসায় পৌঁছে দিই।

কুহু রেহানের কথা শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে রেহানের মন ভালো না।
কুহু কিছু জিগ্যেস করতে গিয়েও করে না। রেহান বাইকে বসে কুহুকেও ইশারা করে বসতে। কুহু চুপচাপ বসে পড়ে।

রেহান কুহুকে বাসার সামনে পৌঁছে দিয়ে নিজেও নামে। কুহু ভ্রু কুঁচকে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। উনিও নামছেন কেনো? আমার বাসায় যাবেন নাকি?

কুহুকে চমকে দিয়ে রেহান কুহুর কপালে কিস করে আবার বাইকে এসে বসে পড়ে। কুহু রেহানের দিকে তাকাতেই রেহান মুচকি হেসে চলে আসে।

বাসায় এসেই রেহান নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসে থাকে। রেহানের ভিতর ভিতর ওর বাবার বলা কথাটার জন্য খুব ভয় হচ্ছে। উনি যা বলে তাই করেন।
কুহুকে হারাতে হবে না তো!
হাজারো চিন্তা রেহানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

রেহানের মার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে।

রেহানের মা – খেতে যাবি না?

রেহান – না মা আমার ক্ষিদে নেয়।

রেহানের মা – সকালেও তো খাস নি। এখনও বলছিস ক্ষিদে নেয়।

রেহান – হ্যা। তোমরা খেয়ে নাও।

রেহানের মা – মন খারাপ করিস না তোর বাবা তো তোর ভালোর জন্যই বলছে। কোনো ক্ষতি তো করছে না তোর।

রেহান – মা তুমি যাও খেয়ে নাও। আমি ঘুমাবো কিছুক্ষণ।

রেহানের মা বেশ বুঝতে পারছে রেহান কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইছে। তাই কথা না বারিয়ে উনি চলে আসেন।

এদিকে কুহু বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ছাদে আসে। অনেক খন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু রেহান কে দেখতে পায় না। তার মানে রেহান আজ আসেনি?

কুহু মন খারাপ করে রুমে চলে আসে। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রেহান ফোন করেছে কি না। কিন্তু না!
রেহান ফোন ও দেয় নি। কুহুর মন টা আরও খারাপ হয়ে যায়। কুহুর এবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সারা দিন চলে গেলো একটা ফোনও দেয়নি দেখা ও করে নি।
অথচ ভার্সিটি ছুটির পরও রেহান কুহুকে বাসায় পৌঁছে দেয় কিন্তু বেচারির মনে হচ্ছে সারা দিন ধরেই রেহানের সাথো যোগাযোগ নেই।

এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে যায় তাও রেহানের কোনো খবর নেই।
রাতে কুহু না খেয়েই শুয়ে পড়ে। কুহুর মা অনেক বার ডাকার পরও খেতে যায়নি।

অনেকক্ষন রেহানের ফোনের জন্য ওয়েট করে রেহানের ফোন না পেয়ে কুহু নিজেই ফোন দেয় কিন্তু রেহানের ফোন বন্ধ।
এভাবে প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ কুহু রেহানের ফোনে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফেন বন্ধই।

কুহু এবার কেঁদে দেয়। অনেক অসহায় লাগছে ওর। এখন তো রেহানের বাসায় যাওয়া ও সম্ভব না। রেহানের বাসাও তো চিনে না। কাঁদতে কাঁদতেই বেচারি ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে রেহানের ফোন বন্ধ থাকারও কারন আছে।
রাতে রেহানের মা আর বাবা রেহানের রুমে আসে।

রেহানের বাবা – রেহান শোনো আমার একজন চেনা ক্লাইন্ট আছে উনার মেয়ের সাথে তোমার বিয়েটা ঠিক করতে চাই। বলতে পারো আমার বন্ধু। আমি ওর সাথে কথা বলেছি। কাল যাবো ওদের বাসায়। তুমি রেডি থেকো৷ আশা করি মেয়ে তোমার অপছন্দ হবে না।

রেহানের বাবা কথা গুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রেহান অসহায় ভাবে রেহানের মার দিকে তাকায়।

রেহান – মা এই সব কী?

রেহানের মা – দেখ তোর বাবা বুঝেই করছে। আর মেয়ে তোর পছন্দ হবেই। তুই গিয়ে দেখ।

রেহান – তাই বলে? মা আজই তোমরা আমাকে জানালে আর কালই মেয়ে দেখতে চলে যাবো? আমাকে কি মনে হই? কয়েকটা দিন সময় দেয়া যেতো না?

রেহানের মা – রেহান তোর বাবা শুনলে দুঃখ পাবে। তুই কোনো চিন্তা করিস না মেয়ে তোর পছন্দ হবেই দেখিস।

রেহানের মা ও চলে যায় রেহান ধুপ করে খাটে বসে থাকে। রাগে রেহানের সারা শরীর কাঁপছে। হাতের কাছের ফুলদানি টা আাছাড় মেরে ফেলে দেয়। আরেক হাতে মোবাইল ছিলো ওটাও আছাড় মারে। মোবাইল টাও কয়েকটা টুকরো হয়ে ভেঙে যায়।
রেহানের এবার আরও রাগ হচ্ছে এতো রাতে মোবাইল ম্যানেজ করবে কি ভাবে। কুহুর সাথে তো কথাও বলা হয়নি। রেহানের চোখে ঘুম আসে না। সারা রাত ছটফট করে কাটায়।

পরের দিন….

রেহান আজ ভার্সিটিতে যেতে পারবে না। ফোন টাও নেই যে কুহুকে জানিয়ে দিবে। মেয়েটা নিশ্চয় খুঁজবে!
অন্য কাউকে কুহুর জায়গা টা দিতে হবে ভাবতেই রেহানের বুকটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আজ রেহানের অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে। কাউকে ভালোবেসে তার জায়গা টা অন্য কাউকে দেয়া সত্যিই অনেক যন্ত্রনাদায়ক!
কুহু নিশ্চয় আমায় ভুল বুঝবে! ও হয়তো ভাববে আমি ওর সাথে প্রতারণা করেছি! কিন্তু ও তো জানেনা আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে! কোনো দিনও পারবো না ভুলতে। যা করতে হচ্ছে সবকিছুই বাবা মার ইচ্ছে তে। কুহুকে বোধহয় হারিয়ে ফেললাম আমি! ভাবতে ভাবতেই রেহানের গাল বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু ঝড়ে পরে।

আত্নহত্যা যে মহাপাপ! না হলে বোধহয় কাল রাতেই রেহান সব কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্তি দিয়ে দিতো।

দুপুরে….

রেহানের মা – রেহান… কই তুই?

রেহান বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলো। মায়ের ডাকটা আদৌ তার কানে পৌঁছালো কিনা কে জানে! সে আগের মতোই একদৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে।

রেহানের মা বুঝতে পারে ছেলের মন মরা হয়ে থাকার কারন। বেলকনিতে গিয়ে রেহানের কাঁধে হাত রাখতেই রেহান পেছনে ফিরে তাকায়।

রেহান – মা তুমি? কিছু বলবে?

রেহানের মা – রেডি হয়ে নে।

রেহান তার মাকে অনেক কিছু বলতে চাইছে বুঝাতে চাইছে কিন্তু মুখ ফুটে বলা হয়নি।
রেহানের মা চলে গেলে রেহান টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। অনেকক্ষন পর রেহান রেডি হয়ে নিচে আসে।
রেহান নিচে এসে দেখে রেহানের বড় কাকা আর কাকিমা ও এসেছে।

রেহান কে দেখা মাত্রই ওর কাকিমা বলে উঠে…

— একি রেহান তোর মুখটা এমন লাগছে কেনো?

রেহান – কিছুনা কাকিমা। আমি ঠিক আছি।

— দেখে তো মনে হচ্ছে না তুই ঠিক আছিস!

রেহান – ওসব কিছুনা বসো তোমরা।

— হুম বুঝলাম মন খারাপ নিশ্চয়! টেনশন করিস না ভাইয়ের (রেহানের বাবার) কাছে শুনলাম মেয়েটা দেখতে নাকি অনেক মিষ্টি। তোর ও পছন্দ হবে দেখে নিস।

রেহান অনিচ্ছা স্বত্তেও শুকনো হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

সবাই মেয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। রেহানের ইচ্ছে করছিলো সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসতে কিন্তু উপায় নেই। তার বাবার রাগের কাছে তাকে হার মানতেই হবে।
বেল বাজাতেই একজন লোক এসে দরজা খুলে দেয় রেহানের পরিবারের লোকদের দেখেই হাসি মুখে ভেতরে আসতে বলে। কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে কখন থেকেই মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে আছে। সিড়ি বেয়ে উঠার সময় কয়েকবার হোচট ও খেয়েছে। তা দেখে রেহানের বাবা রেগে গিয়ে বলে…

— মেয়েদের মতো মাথা নিচু করে হাটা ধরলে কেনো? তুমি কি নতুন বউ? আর হাটাচলার সময় মন কোথায় থাকে তোমার? এখনি তো পড়ে যেতে।

এতো কথা বলার পরও রেহানের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন নেই। কোনো কিছুই দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার।

রেহান একটা সোফায় বসে মাথা নিচু করে আছে। আর অপর পাশে রেহানের পরিবারের সবাই।

মেয়ের বাবা – ভাইজান পথে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?

রেহানের বাবা – একদম না।

মেয়ের বাবা – রেহান… বাবা তোমার কি অসুবিধে হচ্ছে?

রেহান মুখ তুলে একবার লোকটার দিকে তাকায়।
তারপর মাথা নাড়িয়ে ” না ” বুঝায়।

রেহানের বাবা – আসলে ওর সকাল থেকে মাথা ধরে আছে তাই। আপনি ব্যাস্ত হবেন না। ও ঠিক আছে।

সবাই কথা বলছে শুধু রেহান আনমনা হয়ে তার কুহুকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছে। হটাৎ করেই এমন একটা মূহুর্ত চলে আসবে সে ভাবতেও পারেনি।

কিছুক্ষণ পরই মেয়েকে নিয়ে এসে রেহানের পাশাপাশি বসায়। মেয়েকেও মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে রেহানের কাকিমা বলে উঠে…

মেয়েও দেখি আমাদের ছেলের মতো লজ্জা পাচ্ছে!
রেহানের মা মেয়ের মুখটা একটু উঁচু করে দেখে বলে…

” মাশআল্লাহ ”

চলবে…