প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ৩
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু রেহানের পিক গুলো দেখছে…
হটাৎ করেই কালকের কথা মনে হতেই কুহু রেহানের টাইমলাইন থেকে বের হয়ে যায়।
কুহু – যত্তসব ফাজিল কোথাকার… এইটা তো আমার ক্রাশ হয়ে পারে না এইটা একটা বাঁশ!
এদিকে জেরিন বেচারি রেহানের আইডি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
বিকেলে….
কুহু – আম্মু….
কুহুর মা – হ্যা বল…
কুহু – আব্বু কোথায়?
কুহুর মা – তোর বাবা তো মনে হই বাহিরে গেছে। তোর টাকা দিয়ে গেছে আমার কাছে। নিয়ে যা আয়…..
কুহু টাকা নিয়ে জেরিনের কাছে যায়…
কুহু – মহারানি রেডি তো আপনি?
জেরিন – হ্যা আপি। চল…
কুহু জেরিন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
শপিং এ গিয়ে দু’জন সব কেনা কাটা করতে প্রায় সন্ধা হয়ে যায়।
জেরিন – আপি আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে। চলো না কিছু খেয়ে নিই।
কুহু – হ্যা খেতেই পারি। চল…
কুহু আর জেরিন একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নেয়।
কুহু – এইরে অনেক রাত হয়ে গেলো তো… ফোনের ও চার্জ শেষ বাসায় তো জানাতেও পারবো না নিশ্চয় আম্মু আব্বু টেনশন করছে। এবার কি করি…
জেরিন – আমারও তো একি প্রবলেম।
কুহু – দেখছিস একটা রিকশাও পাচ্ছি না। এতো রাতে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে অসহ্য লাগছে রে।
জেরিন – আকাশের অবস্থা ও তো ভালো না।
কুহু – এই আকাশ টা আবার কে রে? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – আরে আপি আবহাওয়া ভালো না যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।
কুহু – হ্যা সেটাই তো।
কুহু আর জেরিন অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকেও কোনো রিকশা পায় না তারপর বাধ্য হয়েই দু’জন হাটা ধরে…
কিছু দূর যেতেই শুরু হয় বৃষ্টি। কুহুর কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে কেনো যে এতো লেট করলো!
জেরিন – আপি চলো কোথাও গিয়ে দাড়াই।
কুহু – বাজে কথা কম বল। এখন গিয়ে দাড়িয়ে থাকলে কাল সকালে বাসায় ফিরতে হবে বুঝেছিস।
তার চেয়ে বরং হেটেই চল।
এমনিও ভিজতেই হবে।
কুহু আর জেরিন হেটেই যাচ্ছে হটাৎ ওদের সামনে একটা গাড়ি ব্রেক কষে….কুহু অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। সাথে জেরিন ও।
কুহু – এই কানা টা আবার কে রে? মরার আর জায়গা পায়না নাকি… যত্তসব!
গ্লাস সরিয়ে মুখটা বের করতেই কুহু আর জেরিন চমকে উঠে…
কুহু – আপনিইই!!!
কুহুর সাথে জেরিনও অবাক হয়ে বলে উঠে…
জেরিন – আমার হিরো…..!
জেরিন কথা শুনে রেহান ভ্রু কুঁচকে জেরিনের দিকে তাকায় সাথে কুহু ও।
রেহান – সরি! কে হিরো?
জেরিন – আপনি! (আনমনে)
রেহান জেরিনের কথা শুনে মুচকি হাসে।
রেহান – ওহো!! আমি যদি হিরোই হই তবে একজনের হিরোই হতে চাই। অন্য কারো না। (কুহুর দিকে তাকিয়ে)
জেরিন – মানে!,
রেহান – মানে তোমার না বুঝলেও চলবে। বাই দ্য ওয়ে এতো রাতে তোমরা বাহিরে কি করছো? সাথে কাউকে আনো নি কেনো?
কুহু – আপনাকে কৈফিয়ত দিতে আমরা নিশ্চয় বাধ্য নই।
রেহান – জাস্ট সাট আপ!
রেহানের ধমক শুনে কুহু জেরিন দু’জনই ভয় পেয়ে যায়।
রেহান – তোমাদের কোনো কমন সেন্স নেই? এতো রাতে দুইটা মেয়ে একটা রাস্থায় বের হয়েছো তাও বৃষ্টিতে। যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তো?
কুহু – আমরা নিজেদের সামলাতে পারবো ওকে। এই সব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে — বলেই জেরিনের হাত ধরে হাটতে নেয়…
রেহান – স্টপ… সোজা গাড়িতে এসে বসো। আমি ড্রপ করে দিবো।
কুহু – তার কোনো প্রয়োজন নেই। আর আপনাকে চিনি না জানি না আপনার গাড়িতে কেনো উঠবো বলুন তো?
জেরিন – আপি চল না প্লিজ না করিস না। দেখ আমার কাছে সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে! আমি আমার ক্রাশের গাড়িতে করে যাবো সত্যিই ভাবতেও পারছি না। (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)
কুহু জেরিনের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই জেরিন চুপ করে যায়।
রেহান – কি হলো কথা কানে ঢুকছে না? বসতে বলছি
কুহু মনে মনে ভাবছে এখন না বসেও উপায় নেই আর। কোনো রিকশা ও পাচ্ছে না তার চেয়ে বরং উঠেই যাক।
কুহু গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়ে আর জেরিন এসে সামনে রেহানের সাথে বসে।
জেরিন তো বেচারি মহা খুশি। আর এদিকে রেহান রাগে ফুলছে!
রেহান – এতোবড় সাহস তোমার? পিছনে বসছো তোমার এই লুচু বোন টাকে সামনে পাঠাই দিছো!!
রেহান রেগে কটমট করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণ পরই কুহুর বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করায়…
কুহু আর জেরিন দুজনই নেমে পড়ে…
জেরিন – আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে যে কি হতো আজ!! (ঢ্যং করে)
কুহু – কি হতো? তোকে কি গুন্ডা ধরছিলো যে উনি এসে বাঁচিয়েছে? (রেগে কটমট করে)
জেরিন – না মানে রিকশা তো পাচ্ছিলাম না তাই আরকি। (মাথা নিচু করে)
কুহু – এতো বকবক না করে চল।
রেহান – তুমি ভেতরে যাও। তোমার আপুর সাথে আমার একটা কথা আছে। ও আসছে তুমি যাও। (জেরিন কে উদ্দেশ্য করে)
জেরিন – কী কথা? (অবাক হয়ে)
রেহান – কি কথা সেটা না হয় তোমার বোনই শুনবে। তোমাকে যেতে বলেছি। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
জেরিন কিছু না বলে রেগে ভেতরে চলে আসে। কুহু অবাক হয়ে যায় রেহানের ব্যবহারে।
কুহু – আপনি ওকে ধমকানোর সাহস পেয়েছেন কোথায়?
রেহান – আমি তোমার ফালতু কথার উত্তর দিতে ওকে ভেতরে পাঠাইনি। তোমার সাথে কথা আছে আমার।
কুহু – আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই। সো আমি এখন আসছি। — বলেই কুহু বাড়ির ভেতরে চলে যেতে নেয়। রেহান কুহুর হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে….
কুহু – আহহহ আমার হাতে লাগছে। হাত ছাড়ুন।
রেহান – একটা কথা বলবে তো হাত টা মুচড়ে ভেঙে দিবো। বলছিলাম না কথা আছে৷ না শুনেই চলে যাচ্ছো কেনো?
আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পাও কোথায় তুমি? (রেগে)
কুহু – আপনাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সাহস লাগবে নাকি? আপনি কে?
রেহান কুহুর হাত টা আরও শক্ত করে মুচড়ে ধরে….
রেহান – আর কোনো দিন যদি রাতে বের হতে দেখি তাহলে আমি কে হারে হারে বুঝাবো তোমায়।
বলেই হনহন করে চলে আসে।
কুহুর ইচ্ছে করছিলো রেহান কে তুলে একটা আছাড় মারতে। কুহু রেগে বাসায় চলে আসে।
জেরিন – আপি ও কি বললো?
কুহু – আমার মুন্ডু। (বলেই রুমে চলে আসে)
কুহুর প্রচুর রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে ফেলতে।
এর মধ্যেই রিহা ফোন করে…
রিহা – কিরে সব রেডি তো?
কুহু – হ্যা।
রিহা – শাড়ি ম্যানেজ করেছিস?
কুহু – পাইনি শেষে শপিং থেকে এনেছি।
রিহা – দ্যাটস গুড৷ ওকে তাহলে রাখি কাল দেখা হচ্ছে।
কুহু – ওকে বাই।
পরের দিন সকালে….
কুহু শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নেয়। জেরিন কুহুকে দেখে অবাক হয়ে যায়…
জেরিন – আপি তুমি কি শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যাবে নাকি?
কুহু – ইয়েস বেপি। ভালো লাগছে না আমায়?
জেরিন – হ্যা। (এইরে আজ যদি আমার হিরোর সাথে আপুর দেখা হয় আমার হিরো তো পাগল হয়ে যাবে।)
কুহু সবাই কে বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। ভার্সিটিতে এসেও রেহান কে দেখে কুহুর মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়।)
কুহু সানিয়া আর রিহাকে সব বলে…
সানিয়া – ওহোহহ এই কথা! তবে যাই বলিস ছেলেটা কিন্তু অতটা ও খারাপ না। তোদের এতো রাতে বৃষ্টির মধ্যে বাসায় পৌঁছে দিলো কোনো অসভ্যতামি করেনি। আমার মনে হই ছেলেটা ভালোই।
রিহা – আমারও একি কথা। মনে হয়না ছেলেটা খারাপ।
কুহু ওদের কথা শুনে রেগে যায়….
কুহু – তোরা কি পাগল? ঐ ছেলেটা অসভ্য নয়? ও আমাকে টাচ করার অধিকার পেলো কোথায়? এটাকি অসভ্যতা না?
সানিয়া – যাই হোক বাদ দে তো এসব।
রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বাসায় চল।
তারপর তিনজনই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়৷
সানিয়া আর রিহা এক রিকশা করে চলে যায়। আর কুহু অন্য রিকশা করে বাসায় চলে আসে।
বাসায় আসতেই জেরিনের আগমন।
জেরিন – আপি? আজকে কি আমার হিরোর সাথে তোমার দেখা হয়েছিলো?
কুহু – হ্যা দেখা হয়ছে আমায় কোলে নিয়ে নাচছে ও তোর সমস্যা? (রেগে)
জেরিন – বলো কি!!
কুহু জেরিন কে ধমক দিয়ে হনহন করে রুমে চলে আসে।
রুমে এসে চেঞ্জ করে নেয়।
কুহুর মা এসে খেতে ডাকলেও কুহু যায়নি।
কুহু – মা খেয়ে এসেছি আমি এখন ঘুমাবো একটু। রাতে খেয়ে নিবো৷
কুহুর মা – ঠিক আছে ঘুমা তুই।
রাতে…
জেরিন নিজের রুমে বসে কেঁদে কেঁদে সাগর বানাচ্ছে।
কুহু জেরিনের রুমে গিয়ে খেতে ডাকে…
জেরিন – আমি খাবো না তুমি যাও।
কুহু – কী হয়েছে তোর? এই ভাবে কথা বলছিস যে?
জেরিন – কিছু হয়নি। যাও তুমি।
কুহু বুঝতে পারছে না মেয়েটার হলো কী?
কুহু আর কিছু না বলে চলে আসে জেরিনের রুম থেকে।
কুহু এসেই খেতে বসে যায়…
কুহুর মা – কিরে জেরিন কই? ও আসলো না কেনো খেতে?
কুহু – জানিনা আম্মু। ও আসছে না কেনো? ও বোধহয় রেগে আছে।
কুহুর মা – সেকি! মেয়েটা রাগলো কেনো আবার?
কুহুর বাবা – তুই কিছু বলেছিস ওকে?
কুহু – আমি তো কিছু বলিনি আব্বু।
কুহুর মা – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ওর রুমে খাবার দিয়ে আসবো নি। তোমরা খেয়ে নাও।
কুহু – হ্যা তাই করো। আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব।
খাওয়া শেষ করে কুহু নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অমনি সানিয়ার ফোন আসে…
কুহু – হ্যা বল…
সানিয়া – কী করছিস?
কুহু – শুয়ে আছি।
সানিয়া – কাল ভার্সিটি তে আসবি তো?
কুহু – হুম। তুই?
সানিয়া – হ্যা আসবো। আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ ঘুমিয়ে পড় তুই।
কুহু – ঠিক আছে।
সকালে….
কুহু ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ৮ টা বাজে।
উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
কুহুর মা – ভার্সিটিতে যাবি না?
কুহু – যাবো আম্মু। আমি রেডি হয়ে আসছি।
কুহুর মা চলে যায়। কুহু রেডি হয়ে নিচে আসে।
কুহুর বাবা – গুড মর্নিং মা।
কুহু – গুড মর্নিং আব্বু।
কুহুর বাবা – দুপুরে কিন্তু বাড়িতে এসে খাবে। বুঝেছো?
কুহু – ওকে।
কুহু খেয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ে। রিকশা করেই চলে আসে।
কুহু – সানিয়া কি আসেনি এখনো?
রিহা – এই কুহু দাড়া।
কুহু – তুই চলে এসেছিস সানিয়া কোথায়?
নিহা – আমিও তো খুঁজছিলাম। আসেনি এখনো। চল আমরা ওদিকে গিয়ে বসি। সানিয়া আসলে একসাথে ক্লাসে চলে যাবো।
কুহু – হ্যা চল।
কুহু আর নিহা গিয়ে একটা গাছের নিচে বসে গল্প করতে থাকে। হটাৎ ভার্সিটিতে একটা ছেলে আসে বাইকে করে।
কুহু তো হা করে ছেলেটার দিক তাকিয়ে আছে।
বাবাহ ব্লু কালার শার্ট সাথে ব্ল্যাক জিন্স, হাতে ঘড়ি, আবার চোখে সানগ্লাস ও। এ তো দেখি পুরাই ক্রাশ।
চলবে…