প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ৪
writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু খেয়াল করে দেখে ছেলেটা ওদের দিকেই আসছে।
কুহু – এই রিহা.. এই ছেলে টা কে রে? এদিকে আসছে।
রিহা কুহুর ডাকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বেচারিও ক্রাশ খায়।
রিহা – ছেলেটা তো পুরাই জোস।
কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…
কুহু – অমনি না!! ছেলে দেখলি আর শুরু হয়ে গেলো তোর লুচুগিরি।
রিহা – আরেহহ কথা কম বল। ছেলেটা এদিকে কেনো আসছে সেটা ভাব।
এরি মাঝে ছেলেটা কুহুর কাছে এসে চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে কুহুকে চোখ মারে।
কুহু বেচারি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে….
কুহু – নাআআআ…….. এ আমি কাকে দেখছি!!
রিহা – তুই উনাকে চিনিস? (ভ্রু কুঁচকে)
কুহু কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠে….
— চিনবে না মানে! নিজের বর কে কেউ ভুলে যেতে পারে বলুন তো?
কুহু এবার ১০০০ বোল্ডের শক খায়।
কুহু – বররর!!!
রিহা – বর!! কুহু তুই বিয়ে করে ফেললি একবার জানালিও না? আমরা কি এতোই পর ছিলাম?
কুহু – আরে আমার কথা টা তো শুন! আমি এই অসভ্যকে বিয়ে করতে যাবো কেনো বল তো? এ তো ঐ অসভ্য ছেলেটা তোদের না কাল সব বললাম।
রিহা – ওওহহ!! উনি? তবে যাই বলিস ছেলেটা সত্যিই কিউট (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)
কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…
রেহান – তো মিস কোকিল পাখি কাল যেনো কি বলছিলে…?
কুহু – হোয়াট কোকিল পাখি? আমি কুহু ওকে।
রেহান – সে যাই হোক। কাল কি বলছিলে তুমি? আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে ভার্সিটি থেকে তাই তো? ঢুকতে দিয়েছে কে আমাকে তাই না? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
কুহু – হ্যা বলেছি। তো?
রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে যায়। কুহু ভয় পেয়ে পিছু ফিরে গাছের সাথে আটকে যায়।
কুহু আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদের দেখছে।
কুহু – আপনার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করার সাহস পান কোথায়? (রেগে)
রেহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশেপাশের সবাই সরে যায়।
কুহু অবাক হয়ে যায়। হচ্ছে টা কী? এই ছেলেকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে আজিব!
রেহান এবার রিহার দিকে তাকায়। রেহানের তাকানো দেখেই রিহার আত্না উড়ে যায়।
রেহান – আপনাকেও কি আলাদা করে বলতে হবে? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
রিহা – মা.. মানে?
রেহান – মানে বুঝতে পারো নি? এখান থেকে কেটে পরো। (ঝারি মেরে)
রেহানের ঝাড়ি শুনে রিহা সেখান থেকে সাথে সাথে কেটে পড়ে।
রিহা চলে যাওয়াতে কুহু ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
রেহান রেগে গিয়ে কুহুর গাল চেপে ধরে…
রেহান – এতো বড়বড় কথা বলার সাহস পাও কই তুমি? আর তোমাকে কিছু বলতে গেলে আমার সাহস লাগবে নাকি? কি মনে করো নিজেকে? দুইদিনের পুঁচকি মেয়ে আমাকে আসছে সাহস দেখাতে? আর কাল বলেছিলে না আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে কিন্তু তোমার ভাগ্য খারাপ জানো তো! আমি এই ভার্সিটির সিনিয়র। সো আমার উপর কারো কথা বলারও সাহস হয় না। আর সেখানে তুমি বলছো আমাকে দারোয়ান দিয়ে ঘাড় ধরে বার করে দিবে তাই না!!
কুহু রেহানের কথা শুনে বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
রেহান – আজকের পর থেকে আর আমার মুখে মুখে তর্ক করবা তো তোমার বারোটা বাজাবো আমি মাইন্ড ইট। (রেগে)
রেহান কুহুর গাল ছেড়ে দিয়ে কুহুর কপালে চুমু দিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে আসে।
কুহু রেহানের কাজে আরও রেগে যায়। বার বার কপাল মুছছে। ইচ্ছে করছে গাছের সাথে কপাল ঘষা দিতে যাতে করে ঐ অসভ্যর ছোঁয়া না থাকে!
কুহু রেগে ক্লাসরুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রিহা আর সানিয়া একসাথে বসে কথা বলছে।
কুহু – তোরা কখন আসলি?
সানিয়া – এই মাত্র আসলাম। তুই এতো লেট করলি কেনো?
কুহু – লেট কি সাধে করেছি? ঐ ছেলের জন্য মনে হই এই ভার্সিটিতে থাকা হবে না।
সানিয়া – ঐ ছেলে? ঐ হারামী টা আমার আসছে? ওরে বের করে দিলি না ক্যন? আমাদের ভার্সিটিতে বার বার আসার সাহস পায় কোথায় ও?
সানিয়া বক বক করেই যাচ্ছে কুহু আর রিহা ঢোক গিলছে কারন পিছনে যে রেহান রাগি লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে!
সানিয়া – তুই না আসলেই বোকা কিছু করতে পারলি না? আমি হলে তো সিরিয়াসলি ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে আসতাম।
রেহান – ওহ সিরিয়াসলি!!
সানিয়া – হ্যা….. এই কুহু এটা কার কন্ঠ রে?
কুহু ইশারা করে সানিয়াকে পেছন তাকাতে বলে। সানিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে রাগি লুক নিয়ে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সানিয়া বেশ ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু রেহানের কাছে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাইছে না।
সানিয়া – আপনার এতবড় সাহস? এখানে আসলেন কিভাবে?
রেহান – সিনিয়র দের সাহস লাগেনা। তারা যখন যেখানে ইচ্ছে থাকতে পারে। বুঝলে??
সানিয়া – সি..সি…সিনিয়র!!
রিহা – হ্যা রে উনি আমাদের সিনিয়র। তুই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস। এতো করে ইশারা করলাম থাম থাম তাও থামলি না। এবার মজা বুঝ।
রেহান – আমার বিষয়ে আর কারো কিছু জানার আছে? (ধমক দিয়ে)
সানিয়া – ন..না না.
রিহা – না ভাইয়া কিছু জানার নেই আর।
রেহান – ভাইয়া না দুলাভাই আমি তোমাদের। অবশ্য এখনকার দিনে দুলাভাই এর থেকে ভাইয়া ডাকা টাই ভালো মেবি।
সানিয়া – জ্বী দুলাভাই না মানে ভাই…. (ভয়ে ভয়ে)
রেহান সানিয়া আর রিহার অবস্থা দেখে হেসে দেয়। সাথে ক্লাসের কয়েক জনও বেশ ভয় পায়।
রেহান ইশারা করে যার যার কাজে মন দিতে বলে। সবাই রেহানের কথা মতো নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রেহান – কুহু আমার সাথে চলো!!
কুহু – নেভার!
রেহান কিছুটা রেগে যায়… তারও নিজের রাগ কনট্রোলে এনে বলে..
রেহান – কুহু চলো। এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না আমি।
কুহু – আপনি পছন্দ করেন বা না করেন তাতে আমার কি? আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না দ্যাটস ফাইনাল।
রেহান এবার প্রচন্ড রেগে কুহুকে কোলে তুলে নেয়। সানিয়া আর রিহা কিছু বলতে গিয়েও রেহানের ভয়ে বলেনি।
কুহু- ছাড়ুন আমায় কি হচ্ছে টা কি? ছাড়ুন….
কুহু নিজের মতো করে বলেই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। রেহান কুহুকে সোজা ছাঁদে নিয়ে আসে।
কুহু এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। ছাদে কেনো আনলো এই ছেলেটা? ছাদ থেকে ফেলে দেবে না তো?
রেহান কুহুকে ছাদের এক পাশে দাড় করায়।
কুহু – আমাকে এখানে আনার মানে কী?
রেহান – অনেক মানে আছে।
কুহু – ফাজলামি বাদ দিন। এখানে কেনো আনলেন আমায়? আর আপনি আমার পিছু কেনো পড়ে আছেন শুনি? (রেগে)
রেহান – জাস্ট সাট আপ ওকে। আমি তোমার পিছু পড়ে থাকবো কেনো? হোয়াই? রেহান ওয়াহিদ কখনো কারো পিছু ঘুরঘুর করে না। কোনো মেয়ের পিছু তো নয় ই। আর হ্যা… আমি তোমার পিছু নেই নি। তোমাকে ভালো লেগেছে তোমাকে আমার চাই ব্যাস আর কিছু না।
কুহু – তোমাকে আমার চাই!! হাসালেন! আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আমি কোনো দ্রব্য না যে চাইলেই পেয়ে যাবেন। আমি মানুষ। আমার নিজেরও পছন্দ অপছন্দ আছে।
আর আপনার মতো অসভ্য, বাজে লোক কে আমি কোনো দিনও একসেপ্ট করতে পারবো না বুঝতে পেরেছেন?
রেহান – তোমাকে একসেপ্ট করতে কে বললো?
আমি নিজেই নিজের টা আদায় করে নিবো বুঝছো? তোমাকে ভালোও বাসতে হবে না পছন্দও করতে হবেনা।
কুহু – আপনার এই গুন্ডামি টাইপ কথা গুলো অন্য মেয়েদের গিয়ে বলুন ওকে। আমি আপনার এইসব ফালতু কথায় কান দিবো না। আপনার যা ইচ্ছে করুন গিয়ে। আপনাকে আর আশেপাশে আসাও সহ্য করতে পারবো না। মনে রাখবেন কথাটা।
কুহু রেগে চলে যেতে নিলে রেহান কুহুর হাত ধরে ফেলে। কুহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান একটানে কুহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…
রেহান – অনেক বড়বড় কথা বলেছো! তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না তাইনা? সহ্য করতে হবেও না। আমার থেকে দূরে কোনো দিনও যেতে পারবে না। যতো কিছুই করো আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার।
কুহু রেহানের চাহনি দেখে ভয় পেয়ে যায়। রেহান মারাত্মক রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখতে কেমন হিংস্র লাগছে। কুহুর গলা শুকিয়ে যায়।
কুহু – ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আমায় যেতে দিন। (ভয়ে ভয়ে)
রেহান বুঝতে পারে কুহু বোধহয় রেহান কে ভয় পাচ্ছে।
রেহান কিছুনা শান্ত হয়ে বলে…
রেহান – ভার্সিটি ছুটির পর ওয়েট করো আমি বাসায় পৌঁছে দিবো ওকে।
কুহুর রাগে রেহান কে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে….
কুহু – ঠিক আছে।
রেহান কুহুর দু গালে হাত রেখে কুহুর কিছুটা কাছে যায়। রেহানের কাছে আসাতে কুহু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান মুচকি হেসে কুহুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে কুহুকে ছেড়ে দেয়।
রেহান – যাও। আর হ্যা কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা বলতে না দেখি ওকে।
কুহু রেগে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে এতোটাই রাগ হচ্ছে বেচারির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে টানতে।
কুহু – (যদি তোকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারতাম আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। মনে মনে)
রেহান – কি হলো? কি ভাবছো এতো? ক্লাসে যেতে বললাম না? আর হ্যা ছুটির পর দাড়িয়ে থাকবা যতো খন আমি না আসি।
কুহু রেহানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বরং চোখ গরম করে রেহানের দিকে তাকিয়ে চলে আসে ছাদ থেকে।
রেহান কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান – আই নৌ ডিয়ার… তুমি আমার উপর মারাত্মক রেগে গেছো বাট মুখে কিছুই বলতে পারো নি। বলতে পারবেও না। (বাঁকা হেসে)
কুহু রেগে ক্লাসরুমে গিয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। কুহু ভয়ে ভয়ে টিচারের পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢুকে।
রিহা – কিরে এতোখন কোথায় ছিলি? কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো তোকে? (ফিসফিসিয়ে)
কুহু – ছাদে!
সানিয়া – কিহহহ! ভাগ্যিস ছাদ দেখে ফেলে টেলে দেয় নি। না হলে তের বাবা মার কাছে কী জবাব দিতাম আমরা বল তো?
কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত সব ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো বড় সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা!
চলবে…