প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ৫
writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা।
সানিয়া – আচ্ছা বাবা হয়েছে। এবার ক্লাস কর মন দিয়ে।
ক্লাস শেষে..
সানিয়া – কুহু বাড়ি যাবি? নাকি থাকবি কিছুখন?
কুহু – একটু পরে যাই।
সানিয়া – ওকে।
রিহা – ফুচকা খেতে যাবি?
সানিয়া – হ্যা যাওয়াই যায়।
কুহু – চল।
তিন জন ভার্সিটির পাশেই ফুচকা খেতে চলে যায়।
এদিকে রেহান কুহুকে সারা ভার্সিটি খুঁজছে।
রেহান – গেলো কোথায় মেয়েটা? ওর সাহস আছে বটে। আমি এতো বার করে বলার পরও চলে গেলো!
রেহান প্রচন্ড রেগে যায়। রাতে রেহানের মুখ লাল বর্ণ ধারন করছে। রেহান কুহুকে এদিক সেদিক খুঁজে বেরাচ্ছে।
আর কুহু বেচারি মন মতো ফুচকা খেয়েই যাচ্ছে।
কুহু – মামা লাস্ট আরেক প্লেট বানান তবে হ্যা ঝাল দিবেন বেশি করে।
রেহান কুহুকে খুঁজতে খুঁজতে গেইটের বাহিরে চলে আসে।
বাহিরে আসতেই রেহান দেখে কুহু ওর বান্ধবী দের সাথে ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত। রেহানের রাগ টা আরও বেরে যায়। সারা ভার্সিটি খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আর এই মেয়ে এখানে ফুচকা খাচ্ছে! খাওয়াচ্ছি তোমার ফুচকা দাড়াও!!
রেহান রেগে কুহুর পাশে গিয়ে দাড়ায় সানিয়া আর রিহা রেহান কে দেখে অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু কুহুর কোনো খবরই নাই বেচারি ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত।
রেহান রেগে কুহুর হাত চেঁপে ধরে টানতে টানতে ভার্সিটির ভেতরে নিয়ে আসে। কুহু রেহানের কাজে ভয় পেলেও প্রকাশ করে না বরং কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে…
কুহু – আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? সব সময় আমার পিছন পড়ে থাকেন কেনো? আমার কি কোনো পার্সোনালিটি নেই নাকি? এভাবে রাস্থায় সবার সামনে হাত ধরে নিয়ে এলেন কেনো?
রেহান কুহুর কথায় কোনো জবাব দেয় নি বরং রাগি চোখে কুহুর দিকে একপলক তাকিয়ে আবার টানতে টানতে একটা ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
কুহু এবার খেয়াল করে অনেক খন আগেই ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে৷ এখন তো পুরো ভার্সিটি ফাঁকা।
কুহু – (এই ছেলে আমাকে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেনো? এমনিতেই তো ভার্সিটি ছুটি হয়েছে অনেক খন আগে। এখন নিশ্চয় কেউ নেই। তাহলে!!
আল্লাহ এই গুন্ডার হাত থেকে রক্ষা করো আমায়!! মনে মনে)
রেহান কুহুকে একটা ক্লাসরুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…
রেহান – বলেছিলাম না ছুটির পর থাকতে? আমি বাসায় পৌঁছে দিবো। বলেছিলাম কি না? (ধমক দিয়ে)
রেহানের ধমকে কুহু কেঁপে উঠে..
রেহান – কথা বলছো না কেনো? কে বলেছিলো রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? আমি বলেছিলাম? খুব সখ না ছেলেদের সামনে দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – আমি কি করবো না করবো সেটা কি আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে নাকি? এতো অধিকার খাটাচ্ছেন কেনো? আপনি কি আমার ভাই? নাকি আমার বর?
রেহান কুহুর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়….
রেহান – বর। কেনো সন্দেহ আছে নাকি?
কুহু – এইসব ফালতু কথা বলবেন না একদম! আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার মতো অসভ্য লোক কে বর বানাবো।
রেহান – তোমার বানাতে হবে না কোকিল পাখি। আমিই বানাবো।
কুহু রেগে রেহান কে ধাক্কা মারে কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। বেচারি রেহান কে এক ইঞ্চি ও সরাতে পারেনি৷
রেহান – আমার মতো বডি বিল্ডারের কাছে তোমার মতো পুঁচকি মেয়ের সামান্য শক্তি কিছুই না। বুঝলে? (বাঁকা হেসে)
কুহু – বডি বিল্ডার না বলুন হাতি হাতি!!
রেহান কুহুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায়….
রেহান – সিরিয়াসলি হাতি!!
কুহু – অবশ্যই!!
রেহান – হাতি বলো আর গন্ডার বলো তোমারই তো বর তাইনা। (মুচকি হেসে)
কুহু – বাজে কথা রাখুন আর আমাকে যেতে দিন।
রেহান – হুম চলো।
কুহু – আমি একাই যেতে পারবো।
রেহান – তুমি কি চাইছো তোমাকে আমি কোলে করে নিয়ে যাই।
কুহু রেহানের কথা শুনে রেগে যায়। তাও শান্ত ভাব নিয়ে বলে…
কুহু – না… চলুন যাচ্ছি।
রেহান মুচকি হেসে কুহুর হাত ধরে।
কুহু – হাত ধরলেন কেনো?
রেহান – পারমিশন নিতে হবে নাকি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – না ঠিক আছে৷ (অসভ্য ছেলে কোথাকার। ইচ্ছে করে দাঁত গুলো ভেঙে দিই)
রেহান কুহুকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে।
কুহু – এইভাবে যাবো নাকি?
রেহান – তো? উড়োজাহাজ ভাড়া করবো নাকি? (রেগে)
কুহু – না চলুন। (এই ছেলের মুখে কি মিষ্টি কথা নেই নাকি৷ মনে হয় জন্মের সময় মুখে মধু না দিয়ে নিমপাতার রস দিয়েছিলো…. মনে মনে)
রেহান বাইক স্টার্ট দেয়।
রেহান – ধরে বসো নয়তো পড়ে ব্যাথা পাবে।
কুহু – ঠিক আছি আমি। ( তোকে ধরতে যাবো কোন দুঃখে)
রেহান কুহুর কথায় কিছুটা রেগে যায়। তাও প্রকাশ করে না। রেহান ইচ্ছে করেই বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয়। কুহু কয়েক বার পড়ে যেতে নিলেও রেহান কে খামচে ধরে বাঁচে। তাই বাধ্য হয়ে রেহানকে ধরে বসে।
কুহু ধরা মাত্রই রেহান বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয়।
কুহু – (এ তো দেখি আস্ত একটা শয়তান!! ইচ্ছে করে এতোখন স্পিডে চালিয়েছে!! মনে মনে)
কিছুক্ষণের মধ্যেই রেহান কুহুকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।
কুহু সোজা বাড়িতে ঢুকতে গেলেই রেহান পেছন থেকে ডাক দেয়…
রেহান – কেউ হেল্প করলে যে তাকে থ্যাংকস্ বলতে হয় শিখোনি?
কুহু রেহানের কথা শুনে দাড়িয়ে যায়। কিছুটা রেগে রেহানের দিকে তাকায়…
কুহু – থ্যাংকস্। এবার শান্তি?
রেহান – ইয়াহ… (মুচকি হেসে)
কুহু রেগে হনহন করে বাসায় চলে যায়। রেহান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিজেও চলে আসে।
বিকেলে…
কুহু পড়ে ঘুমাচ্ছে এর মধ্যেই জেরিন রুমে আসে…
জেরিন – আপি…আর কতো ঘুমাবে? উঠো তো।
কুহু – ডাকছিস কেনো? (ঘুমের ঘোরে)
জেরিন – আরে আপি আরেকটু পরই সন্ধা হয়ে যাবে। এই টাইমে কেউ ঘুমায় নাকি! উঠো ছাদে যাই চলো ভালো লাগবে।
কুহু উঠে বসে।
কুহু – হ্যা ঠিকই বলেছিস। শোন না তুই দু কাপ কফি বানিয়ে ছাদে চলে যা। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।
জেরিন – ওকে আপি তারাতারি এসো।
জেরিন কফি বানিয়ে ছাদে যায়। কুহু ফ্রেশ হয়ে নেয়।
জেরিন কফি গুলো হাতে নিয়ে ছাদের এক কোণে গিয়ে দাড়াতেই চমকে উঠে..!
একি! এ আমি কাকে দেখছি??
আমার হিরো!!
জেরিনের ইচ্ছে করছিলো এক লাফে তার হিরোর কাছে পৌঁছে যেতে কিন্তু এটা তো সম্ভব না। বেচারি এক বালতি দুঃখ নিয়ে রেহান কে ইশারা করতে থাকে। কিন্তু রেহানের দৃষ্টি কুহুর ঘরের জানলার দিকেই স্থির।
এর মাঝেই কুহু ছাদে চলে আসে।
জেরিন – ( এই রে কেনো যে আপিকে আজ ছাদে আসতে বললাম কে জানে! ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় কফি টা ঢেলে দিই। এখন তো নিশ্চিত আপিকে দেখে ফেলবে আমার হিরো টা!)
কুহু – সরি রে অনেক খন ওয়েট করতে হলো তোকে।
জেরিন – আ…আপি চলো না ঘরেই চলে যাই। আমার এখানে ভালো লাগছে না।
কুহু – কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – এমনিই চলো। (জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে)
কুহু কিছু একটা ভেবে নিচে তাকায়।
কুহু – একি! এই গুন্ডা টা এখানে কি করছে? (রেগে)
জেরিন – এই যাহহ! দেখেই নিলো।
কুহু – এই ছেলের জন্য তুই ছাদ থেকে চলে যেতে চাইছিস তাই না। কেনো রে? ও কি ছাদে এসে উঁকি মেরে দেখবে আমাদের?
জেরিন – না। এমনিতেই। জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে।
রেহান – ধুর বাবা এতোখন ধরে দাড়িয়ে আছি একবারও আসার নাম নেই। ওর ঘরে যে জানলা আছে সেটা ও যানে তো!! আমার তো মনে হই জানেই না। না হলে এতোখনে একবার অন্তত আসার কথা ছিলো।
রেহান এদিক ওদিক তাকিয়ে হটাৎ ছাদে তাকাতেই চমকে উঠে।
রেহান – ছাদে এরা কে? মনে তো হচ্ছে কুহুর বোন। সাথের টা কে?
কুহু – জেরিন তুই কি উঁকি মেরেই থাকবি নাকি বসবি কোথাও? (রেগে)
জেরিন – এইতো আমার হিরো তাকিয়েছে। জেরিন বেচারি তো মহা খুশি। বার বার চুল ঠিক করছে। কত রকমের স্টাইল করছে। কিন্তু রেহান এসব দেখায় ব্যাস্ত না। জেরিনের সাথে কে আছে দেখার চেষ্টায় আছে সে।
কুহু – জেরিন চল তো। এই বাদর টাকে কি দেখছিস এতো। (কুহু নিচে তাকাতেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রেহান বুঝতে পারে জেরিনের সাথে কুহুই ছিলো)
রেহান কুহুকে ইশারা করে ফোন দেখায়।
কুহু – বজ্জাতের হাড্ডি টা কি দেখাচ্ছে রে?
জেরিন – আপি বোধহয় ফোন নাম্বার চাইছে!
কুহু জেরিনের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়!
এতো বড় সাহস আমার বাড়ির সামনে এসে আমারই ফোন নাম্বার চাইছে!!
কুহু কিছু না বলে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে।
জেরিন ও সাথে সাথে নামে।
কুহু বাসার সামনে যেতেই রেহান কুহুর কাছে আসে।
রেহান – ও বাবাহ! আমার বউ টার দেখি অনেক টান আমার জন্য! যেই দেখলো আমি দাড়িয়ে আছি অমনি নিচে নেমে এসেছে।
কুহু – বাজে কথা বন্ধ করুন। আর এখানে কেনো এসেছেন আপনি?
এসেছেন তাও আবার ছাদে ইশারা করছেন লোকে দেখলে কি ভাববে বলুন তো?
রেহান – কি ইশারা করছিলাম বুঝতে পারো নি?
ফোন নাম্বার দাও।
কুহু – হোয়াট? আপনাকে ফোন নাম্বার দিবো তাই না!
রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে আসতেই কুহু এক দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়।
রেহান – পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। কাল এসো ভার্সিটিতে পরে বুঝতে পারবা পালানোর মজা।
রেহান চলে যেতে নিলে কেউ পেছন থেকে ডাক দেয়। রেহান পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জেরিন।
জেরিন – হাই আমি জেরিন।
রেহান – তোমার সাথে হাই হ্যালো করার সময় নেই। যদি পারো তো কুহুর ফোন নাম্বার টা দাও।
রেহানের কথায় জেরিন মারাত্মক রেগে যায়। তার মতো এতো সুন্দরী মেয়েকে কতো কতো ছেলে পটাতে চেয়েছে কেউ সাকসেস হতে পারে নি। আর এই ছেলে কিনা তাকে এভাবে ইনসাল্ট করেছে!
জেরিন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে হাতে থাকা একটা কাগজের টুকরো রেহানের দিকে এগিয়ে দেয়।
রেহান – কী এটা? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – আপনি যেটা চাইছিলেন সেটাই।
রেহান – আর ইউ শিওর?
জেরিন – একদম!
রেহান – ওকে থ্যাংকস্ — বলেই কাগজের টুকরো টা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
জেরিন তো মনে মনে নাগিন ড্যান্স দিচ্ছে। যাক এতোদিনে তার মনের আশা পূরণ হলো!
জেরিন বাসায় চলে আসতেই দেখে কুহু দাড়িয়ে আছে।
কুহু – তুই ঐ ছেলের সাথে কী কথা বলছিলি?
জেরিন – এমনি কিছুনা।
কুহু – দেখ জেরি ছেলেটা ভালো না। যদি ভালো হতো আমিই তো তোকে হেল্প করতাম বল। আমি তো চাইবো না জেনে শুনে আমার বোন কে একটা বখাটে ছেলের পাল্লায় ফেলতে।
জেরিন – আপি আমি কারো পাল্লায় পড়ি নি। — বলেই চলে আসে।
কুহু – ( তুই যে কেনো বুঝতে পারছিস না। ছেলেটা সত্যিই তোর জন্য পারফেক্ট না রে। আস্ত বখাটে ছেলে ও।)
এদিকে রেহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাম্বার টা হাতে নেয়।
রেহান – একবার ফোন করে দেখবো? হুম দেখি। নিশ্চয় অবাক হয়ে যাবে আমার কোকিল পাখিটা। ওর বোন টা হেল্প না করলে তো মহারানির ফোন নাম্বার টাই পেতাম না।
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বার টা দিয়ে ফোন দেয়….
চলবে…