প্রেমপ্রদীপ পর্ব-২৪+২৯

0
3522

#প্রেমপ্রদীপ
Part–28(বোনাস)
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

বসন্ত এসে গেছে। কেন যেন আয়নার বসন্ত ঋতুটা খুব প্রিয়। প্রকৃতি যেন এই ঋতুতে আপন মনে সাজু-গুজু করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আয়না একটা বাচ্চামো চিন্তা করে তাহলো বসন্ত ঋতু হলো মেয়ে! অদ্ভুত চিন্তা তার!

আজ ১৪ই ফ্রেবুয়ারি। আজকে নাকি ভালোবাসা দিবস ও বটে। ভালোবাসা আর বসন্তের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। এটা আয়নার একক মন্তব্য। বসন্তের বাতাসে ভালোবাসা ঘুরে বেড়ায়! বসন্ত বাতাসে প্রেম খুজে পাওয়া যায়। আয়না প্রতি বসন্ত বরণে কলেজ-ভার্সিটিতে গান গাইত। ভার্সিটিতে খুব বড়সড় করে বসন্ত উৎসব উৎযাপন করা হতো।

সে গুনগুন করে মিস্টি গলায় সুর তুললো,

আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা
কারা যেন ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে৷

মধুর অমৃত বানী, বেলা গেল সহজেই
মরমে উঠিল বাজি, বসন্ত এসে গেছে।

বসন্তে নাকি কোকিল কুহু কুহু করে ডাকে। কই শুনছে নাতো সে!

আজকে আয়না কেন যেন খুব খুব আনন্দিত। ফাগুনের হাওয়ায় তার অসুখ সেরে গেছে।

তার মনে হয় অধিকাংশ মানুষ বসন্তেই প্রেমে পড়ে।

সে আলমারি থেকে অনেক খুজে তার পুরনো হলুদ রঙের কামিজ খুজে বের করল। পড়ার পর দেখা গেল টাইট হচ্ছে। আয়নার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে ঠিক করল, টাইট হওয়া সত্ত্বেও এই জামাই পড়ে থাকবে। সাদা রঙের ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিল। চোখ কাজল দিতে মন চাচ্ছে। তার কাছে একটা কাজল আছে। কিন্তু অনেক পুরাতন। পুরাতন কিছু চোখে মাখতে হয় না। এতে চোখের ক্ষতি হয়। আলিয়ার কাছ থেকে চেয়ে নিবে সে। সবাই নিশ্চয়ই খেতে বসেছে।

আয়না ঠিক করেছে সে আজকে সবার সাথে বসে ভাত খাবে। আয়না রুমের দরজা খুলে ডাইনিং রুমে এসে দাড়ালো।

তখন মাত্র মেঘ আর দাদা খেতে বসেছে। আয়না মুচকি হেসে বলে, আমি আজকে ডাইনিং রুমে বসে তোমার সাথে খাব আব্বু৷

মেঘ প্রথমে অবাক হলো। পরে খুশি বলে, হ্যা মা। বস।

আয়না বেসিনে গিয়ে হাত ধুলো তারপর বাবার বিপরীতে বসল। দাদী রান্নাঘরে ছিল। আজকে অথৈ আর আলিয়া নেই। বিকেলে আসবে। কিন্তু অথৈ রান্না করে গেছে। সেগুলোই ফাতেমা বেগম গরম করছিলেন।

আয়নাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে সে প্রথম চমক খেল। মেয়েটা শ্বশুড়বাড়ি থেকে ফিরে এসে কোন দিন তাদের সাথে এভাবে বসে খায়নি।

সে দ্রুত গিয়ে সবার আগে আয়নার প্লেটে ভাত আর তরকারি বেড়ে দিলো। আজকে তাদের বাসায় ভাত, করলা ভাজি আর মাগুর মাছের ঝোল। মাগুর মাছ আলু দিয়ে রান্না করা হয়েছে। আয়না আগে একদম ই মাছ খেতে চাইত না কিন্তু এখন খায়। সে ভাতের সাথে তরকারি মাখিয়ে খেতে লাগলো।

দাদী তার পাশে বসে গ্লাসে ঢেলে দিয়ে আদুরে গলায় বলে, আরো এক পিস মাছ দেই?

–নাহ। লাগবে না৷

খাওয়ার মাঝে মেঘ অনেক কথা বললো। আয়না খুবই অল্প শব্দে উত্তর দিচ্ছে।

কথার মাঝে মেঘ বলে উঠে, আজকে খুব কাচ্চি খেতে মন চাচ্ছে। মা আমার জন্য বানাবি কাচ্চি?

আয়না খাওয়া থামিয়ে দিয়ে অবাক হয়ে বলে, আমি রান্না করব?

–হ্যা! বাবার জন্য পারবি না রান্না করতে? তোর হাতের রান্না খেতে মন চাচ্ছে। আজকে পহেলা ফাল্গুন। অথচ দেখ, আমরা মাগুর মাছের ঝোল খাচ্ছি।

আয়না কিছুটা ভেবে বলে, বাসায় গরুর মাংস আছে?

— না থাকলে নিয়ে আসব। কি কি লাগবে লিস্ট করে দে আগের মতো। আমি এনে দিচ্ছি৷

আয়না ছোট্ট করে আচ্ছা বললো।

খাওয়া শেষ করে আয়না রান্নাঘরে গিয়ে দেখে নিল কি কি লাগবে আর কি কি আছে? তারপর লিস্ট বানিয়ে বাবার হাতে ধরিয়ে দিল।

মেঘ বাইরে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল, সন্ধার আগেই এসে পড়বে।

আয়না দুপুরের পর পর ছাদে উঠে গেল। টাইট জামা পড়ায় একটু হাসফাস লাগছে। ছাদে উঠার পর মনে হচ্ছে, জামাটা চেঞ্জ করলেই পারত।

সে দোলনায় বসে আছে আর সমুদ্রের কথা ভাবছে। সমুদ্রের কথা অনুযায়ী তো সে চেষ্টা করছে। এখন কতোখানি সফল হবে তা জানে না সে। কিন্তু আয়নার খুব ভালোও লাগছে। সবার সাথে একসাথে খেয়ে তার মন দ্বিগুন ভালো হয়ে গেছে৷

★★★

— গোলাপ ই কিনব?

পিউ মাথায় হাত দিল ভাইয়ের কথা শুনে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে তো সবাই লাল গোলাপ ই দেয়। অথচ তার ভাই বেলি ফুলের মালা কিনতে চাচ্ছে৷

সে বেশ জোড় গলায় বলে, হ্যা। লাল গোলাপই কিনবে তুমি।

অগত্যা সমুদ্র লাল গোলাপ কিনব। চারটা পনের বাজে। ঠিক তিনটা পঞ্চান্ন মিনিটে পিউ রেডি হয়ে তার রুমে গিয়ে দাড়িয়ে ছিল। সমুদ্র আগে একবার আয়নাকে দেখতে যাবে। যদিও বলেছিল সাত দিন পর যাবে কিন্তু সে ঠিক করেছে আজকেই যাবে। যাওয়ার আগে পিউ তাকে জোড় করে ফুল কিনাচ্ছে। অবশ্য সমুদ্র পিউ এর অগ্রচরে একটা ডেইরি মিল্ক সিল্ক কিনে নিয়েছে আয়নার জন্য। সেই সঙ্গে যুক্ত হলো ফুল। প্রেস্ট্রি নিলে কেমন হয়?

যেমন কথা তেমন কাজ। একটা চকলেট প্রেস্ট্রি কিনলো কুপার’স থেকে। তারপর আয়নার বাসার দিকে যায়। বেশিক্ষন না জাস্ট দশ মিনিট থাকবে সে।

পিউকে গাড়ি তে রেখে উপরে উঠে গেল। কালকের অযুহাত ই দিবে। কালকে যে সে বাসায় এসেছিল এটা বোধহয় কেউ জানেই না।

সমুদ্র বেল বাজাতেই ফাতেমা বেগম মেইন গেইট খুলে দিলেন। সমুদ্র কে দেখে নিজেও ভারী অবাক। সমুদ্র এসেছে!

সমুদ্র স্মিত হেসে সালাম দিলো। উনি উত্তর দিতেই সমুদ্র বলে, পিউ চার্জার রেখে গেছে। সেটাই নিতে এলাম।

নানি বলল, আচ্ছা। ভেতরে আয়।

সমুদ্র ভেতরে ঢুকে চার্জার খোজার নাম করে বাসাটা দেখে নিল। আয়নার রুম খোলা। মানে বাসায় নেই মহারানী!

সে পকেট থেকে চার্জার বের করে, হাতে নিয়ে নানীর কাছে গিয়ে বলে, পেয়েছি নানী।

— আচ্ছা৷

সমুদ্র উসখুস করে বলে, বাসায় কেউ নেই? আলিয়া? আয়না?

— আয়না তো ছাদে। আলিয়া হাসপাতালে।

— ও। যাই তাহলে।

–হুম। বস কিছু খেয়ে যা।

— আরে না। অন্য আরেকদিন ।

বলেই গটগট করে বের হয়ে নানীর সামনে নিচে নামার ভান ধরল। যেই না গেট লাগিয়ে দিলো। সমুদ্র সুরসুর করে এক দৌড়ে ছাদে উঠে গেল৷

আয়না দোলনায় বসে ছিল। হুট করে কেউ তার চুলে হাত দিলো। সে অচেনা ও আচমকা কারো স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।

চুলে কেউ বিলি কাটছে। এদিকে আয়না ভয়ে জুবুথুবু হয়ে গেছে। পেছনে তাকানে পারছেনা। এখন কি সে নিজের বাসায়ও সেইভ না!

কেউ একজন তার পাশে এসে বসলো। আয়না সেদিকে খেয়াল করতেই অবাক হলো বটে।

সমুদ্র তার পাশে বসে দোলনার বেশ জোড়েই দোল দিলো। দোলনা সামনে যাচ্ছে তো বাকি সময় পেছনে যাচ্ছে। আয়না ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে সমুদ্রের দিকে হেলে পড়ে।

সমুদ্র চটজলদি তার কোমড় খানিকটা চেপে ধরে বলে, কেমন আছো?

আয়না ঢোল গিলে বলে, দোল দিও না। আমার মাথায় ঘুরায়৷

সমুদ্র থামিয়ে দিয়ে আয়নার গা ঘেষে বলে, যদি দোল খেলে মাথা ঘুরে তবে কেন দোলনায় বসো রমনী?

আয়না মুখ গোমড়া করে বলে, আমি জাস্ট বসি। দোল দেইনা।

–ও।

— তুমি কি সত্যি এসেছো?

সমুদ্র আয়নার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, না মিথ্যা মিথ্যা এসেছি।

আয়না অদ্ভুত ভাবে চেয়ে আছে তার দিকে। সে মুচকি হেসে আয়নার লম্বা চুল ধরে দিলো এক টান। আয়না ব্যথা পেয়ে আহ বলে উঠে।

সমুদ্র তা দেখে বলে, সবকিছু কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে৷

— তোমার না সাত দিন পরে আসার কথা?

— এসেছি বলে ভালো লাগেনি?

— সেটা বলিনি তো।

সমুদ্র আয়নার কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, আজকে থেকে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা শুরু করার কথা, করেছো?

–হুম।

–কি চেষ্টা চালিয়েছো?

আয়না কিছু বলবে তার আগেই সমুদ্র বলে, সুন্দর একটা জামা পড়েছো। ভেরি গুড। আর কি করেছো?

— দুপুরে সবার সাথে ভাত খেয়েছি। সন্ধার পর
রান্নাও করব।

সমুদ্র খুব মনোযোগ দিয়ে আয়নার খোলা রাখা চুলগুলো তে বিলি কাটছে। এতে অস্বস্তিবোধ করছে আয়না। সে জড়সড় হয়ে বসে রইল৷ লজ্জা লাগছে তার।

সমুদ্র বলল, কি রান্না করবে?

–কাচ্চি।

সে পকেট থেকে চকলেট বের করে আয়নাকে দিয়ে বলে, খাও৷

আয়না না করে দিয়ে বলে, আমার পেট ভরা। মাত্র ভাত খেয়েছি।

সমুদ্র তার হাত থেকে চকলেট টা নিয়ে ছিড়তে ছিড়তে বলে, ধুর পাগলি চকলেট খেতে আবার পেট খালি হওয়া লাগে নাকি?চকলেট যখ -তখন খাওয়া যায়।

সে আগে নিজে কামড় দিল তারপর আয়নার দিকে দিলো। সমুদ্রের জোড়াজুড়ি তে আয়না চকলেট এ কামড় বসায়।

সমুদ্র বলে উঠে, স্বামীর জুটা খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে! তোমার ও ভালোবাসা বাড়ছে নাকি?

আয়না জবাব দিতে পারলনা। সমুদ্র আবারো চকলেট খেতে লাগলো।

আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার এই চকলেট খুব পছন্দ। এজন্য এনেছি। নাও আরেকটু খাও।

আয়না এবার বিনাবাক্য চকলেটে কামড় দেয় কারন সেও চায় সমুদ্রের প্রতি তার ভালোবাসা আরো অনেক বেশি বাড়ুক।

সমুদ্র আবারো দোল দিল। আয়নাকে এবার ইচ্ছা করে টেনে নিজের কাছে এনে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো। আয়না বাধ্য মেয়ের মতো সমুদ্রের বুকের ধুকপুক আওয়াজ শুনছে। সমুদ্রের গায়ের মাতাল করা ঘ্রাণ তার নাকে আসছে। আয়নার চোখ টলমল করছে।

সমুদ্র আয়নাকে বাহুডোরে আবদ্ধ রেখে বলে,

হুটহাট করে প্রেমে পড়ার মজাই আলাদা।আয়োজন করে প্রেমে পড়া যায় না।

আয়না কিছু বললোনা। আয়না নিয়ে কিছুক্ষন দোল খেয়ে উঠে পড়ে সমুদ্র।

আয়না বলে, যাচ্ছো?

–জি। ভালো থাকবেন।

ঘড়ি দেখলো সে মাত্র পনের মিনিটের মতো কাটিয়েছে। গাড়িতে বোন অপেক্ষা করছে। জলদি যেতে হবে।

★★★

পিউকে নিয়ে ধানমন্ডি লেক ঘুরে ফুচকা খেল তারা। এরপর সাত মসজিদ রোডের দিকে হাটা ধরলে সমুদ্রের ফোন আসে। পপুলার হাসপাতাল থেকে। জবের জন্য আবেদন করেছিল সে। বাবার এক পরিচিত কলিগ ও আছে সেখানে। তার সুপারিশে তারা কথা বলতে চায় সমুদ্রের সাথে। আজকে হলে ভালো হয়।

সমুদ্র বিপাকে পড়ে যায়৷ পিউকে নিয়ে এসেছে এখন গেলে পিউ কোথায় থাকবে!

পিউ শোনামাত্র বলে উঠে, আমি কি শিশুবাচ্চা নাকি! তুমি এখুনি যাও। আমি বাসায় একা যেতে পারব।

সমুদ্র বলল, সত্যি পারবি।

— ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান টাইমস পারব। যাও তুমি।

— বাট,,,,

— এতো ভাবার কিছু নাই। যাও তো।

সমুদ্র পিউয়ের কথা বিশ্বাস করে নেয়। তার বোন পারবে একা যেতে তাই রওনা হলো। কাছেই পাচ-দশ মিনিটের রাস্তা। সমস্যা হবে না তার যেতে। কিন্তু পিউয়ের জন্য টেনশন কাজ করছে তার।

সমুদ্র যেতেই পিউ আইসক্রিম খাওয়ার জন্য সামনে পা দিলো৷ হঠাৎ হাতে টান পড়লো। এক সেকেন্ড লাগে সব বুঝতে। যখন বুঝলো কিছু হয়েছে ততোক্ষনে তার হ্যান্ড ব্যাগ এক লোক দিয়ে পালিয়ে গেছে৷

পিউ জোড়ে চিৎকার করে কেদে দিয়ে বলে, আমার আইফোন!

আশেপাশের মানুষ তার চেচানোর শব্দে তাকে ঘিরে ভীড় জমায়।

সবাই তাকে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে৷ পিউ নাকের পানি চোখের পানি এক করে কেদে কেদে বলে, আমার আইফোন ছিনতাই করে নিয়ে গেল।

একজন বলে উঠে, আইফোন মানে ওই যে ফোনের পিছনে অর্ধেক খাওয়া আপেলের ফোন?

পিউ মাথা ঝাকিয়ে হু বলে৷

সবাই মিলে তাকে বুদ্ধি দিল পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার।

পিউ সোজা পুলিশ স্টেশনে যায়। তাকে এক লোক নিয়ে যায়।

ধানমণ্ডি স্টেশনে যায় তারা। পিউ ঢুকে এক কন্সটাবেলকে বলে, সে আমেরিকান সিটেজেন৷

আমেরিকার নাগরিক শুনেই লোকটা বলে, স্যারের রুমে যান ম্যাডাম৷

পিউ স্যারের রুমের দিকে হাটা দিলো।

★★★

রঙ্গন তার কেবিনে বসে পা নাড়াচ্ছে আর অল্প ভলিউমে গান শুনছে।

গানটা হলো,

বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়।

এবার রঙ্গন নিজে থেকে তাল মিলিয়ে বেসুরা গলায় গাইতে লাগলো,

তুমি ছুয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়!

এট দ্যাট মুমেন্ট পিউ বিনা পারমিশন নিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে।

পিউয়ের কান্নামাখা মুখ দেখেই রঙ্গনের ও বুকেও চিনচিন করতে শুরু করে দেয়। শুধু পিউকে কাছে পেল না হায়!

পিউ কাদতে কাদতে রঙ্গনের দিকে না তাকিয়েই বলে, আমার আইফোন চুরি হয়ে গেছে। আপনি খুজে এনে দেন।

রঙ্গনের হার্টবিট মিস হলো বুঝি। কেউ এতো কিউট কিভাবে হয়?

রঙ্গন বলে উঠে, মডেল কি?

পরিচিত আওয়াজ শুনে পিউ মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে, বাসে তাকে ফেলে দেওয়া ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।

সে হতভম্ব হয়ে যায়।

রঙ্গন প্রশ্ন করে, রূপবতী কন্যা, মডেল কি ফোনের?

— আইফোন ইলাভেন ম্যাক্স প্রো৷

— ওহ মাই গড! ওই খড়ির চুলার মতো তিন লেন্সের ফোনটা চুরি হয়ে গেল?

–হুম।

চলবে৷

#প্রেমপ্রদীপ
Part–29
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

রোদেলা বারান্দায় থাকা ফুলের টবে পানি দিচ্ছিলো। তখনি আবেগ বারান্দায় ঢুকে বলে, এই সময় পানি দিচ্ছো? সূর্য তো ঢলে পড়ে গেছে! এখন গাছে পানি দিলে তো গাছেরা সালোকসংশ্লেষ করে খাবার রান্না করতে পারবে না।

আবেগের আজগুবি কথায় রোদেলা খানিকটা হাসলো। তারপর বলল, গাছ গুলো মরে যাচ্ছিল পানির অভাবে তাই এই অবেলায় পানি দিচ্ছি। আমার খেয়াল ছিল না জন্য সকালে দিতে পারি।

আবেগ রোদেলার কথা শুনে মনে মনে বলে, তোমার খেয়াল ছিল না জন্য আজকে আমিও ভালোবাসার অভাবে মরতে বসলাম।

কারো মনের কথা ও অবস্থা বোঝার ক্ষমতা মানুষ কে সৃষ্টিকর্তা দেননি। দিলে হয়তোবা একটা অসুবিধা হত। বিশৃঙ্ঘলা ঘটে যেত।

যেহেতু এই ক্ষমতা রোদেলার নেই তাই সে জানতে পারছে না, তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তসুলভ লোকটার ভেতরে কতো শত অভিমান চাপা পড়ে আছে।

আবেগ বলে উঠে, কালকে সকাল-সকাল গাছগুলোর আগাছা কেটে সাড় দিব।

রোদেলা বললো, আচ্ছা। ছাদেও তো গাছ আছে তাই না?

— হুম। তুলসি , মেহেদী , লেবু গাছ আর তিনটা গোলাপ গাছ আছে। মেহেদী গাছটা আম্মা লাগিয়েছে। আর লেবু গাছটা আমি। জানো আগে সমুদ্র ছোট থাকতে গাছের পাতার উপর ভাত দিত। ও ভাবত, গাছেরা তার মতো ভাত খেয়ে বড় হবে।

রোদেলা কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। রাস্তার ধার দিয়ে, এক লোক তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। পেছনে বাচ্চা দুটির মা আস্তে আস্তে হাটছে।

কোলের বাচ্চাটার হাতে চকলেট আর পাশে থাকা বাচ্চার হাতে চিপস।

দুইটা বাচ্চাকেও খুব খুশি মনে হচ্ছে। মনে হবারই কথা।

পৃথিবীটার সবচেয়ে সুখকর অনুভূতির মধ্যে শীর্ষে আছে বাবা-মার হাত ধরে বায়না করতে করতে কোথাও ঘুরতে যাওয়া।

ছোট্ট বাচ্চার সাথে মায়ের কতো স্মৃতি থাকে! তারই তো পিউয়ের সাথে হাজারটা স্মৃতি জমা আছে। ওই যে ফাস্ট ডে স্কুলে গিয়েই পিউ কান্না জুড়ে দিলো!

অথচ তার ছেলেটার সঙ্গে এমন কোন দামি মুহূর্তই নেই! নেই বললে ভুল হবে! আছে তো! সমুদ্রের যখন দুই বছর, যখন অনেক অসুস্থ হলো সে। রাতে না ঘুমিয়ে কান্না করত। রোদেলা কোলে নিয়ে সারারাত সমুদ্রের কান্না থামাতে ব্যস্ত থাকত।

রোদেলা কে অন্যমনস্ক দেখে আবেগ রুমে এসে শুয়ে পড়ে। তার আবার খারাপ লাগছে। শরীরের কল-কব্জা নষ্ট হয়ে গেছে তার।

ভেতর থেকে আবেগের কাশির শব্দে রোদেলা বারান্দা থেকে রুমে আসে এবং, আবেগকে বিছানায় শুয়ে হাসফাস করে জোড়ে জোড়ে কাশতে দেখে ঘাবড়ে যায় রোদেলা। সে তড়িঘড়ি করে তার কাছে আসতে চাইলে, ড্রেসিং টেবিলের পায়ার সাথে পা বেজে ডান পায়ের কানি আঙুলে প্রচন্ড জোড়ে ব্যথা পেল৷

রোদেলা ব্যথায় ভ্রু কুচকে ফেলে। সে সামনে আগালোনা। সেখানেই দাঁড়িয়ে গেল।

আবেগের কাশি থেমে গেছে। সে হালকা ক্লান্ত হেসে বলে, পায়ে লাগলো নাকি তোমার?

রোদেলা মাথা নাড়িয়ে বলে, টেবিলের সাথে হোচট খেয়ে লাগলো।

— এতো তাড়াহুড়ো করে আসার কি দরকার ছিলো?

রোদেলা বিচলিত হয়ে বলে, তুমি ওইভাবে কাশছিলে কেন?

— এমনি। বুক জ্যাম হইসে বোধহয়। ঠান্ডা লাগছিল।

— এখন কেমন লাগছে?

আবেগ থেমে গেল। আসলেই তো তার এখন কেমন লাগছে? মনটা খুব ফুরফুরে! তার দুই সন্তান একসাথে ঘুরতে গেছে। এজন্য সে খুশি। দুই ভাই-বোনদের মধ্যকার বন্ধন যেন অনেক দৃঢ় হয়। তার অনুপস্থিতিতে তো সমুদ্র কেই পিউয়ের জন্য ঢাল হতে হবে।

রোদেলা আবেগের কাছে এসে বসে, তার কপালে হাত রাখলো। নাহ, কপাল গরম না।জ্বর তো আসেনি।

রোদেলা চিন্তিত গলায় বলে, প্রেসার বেড়েছে কি?

–নাহ।

–তাহলে কি হয়েছে তোমার? নিজেকে আয়নায় দেখেছো একবারো? কেমন রোগা রোগা লাগে!,

আবেগ উত্তর না দিয়ে বলে, আচ্ছা রোদেলা?

রোদেলা জবাব দিল, কি?

— এক গ্লাস লেবুর শরবত বানাতে পারবে?

রোদেলা বললো, আচ্ছা। তুমি রেস্ট নাও। আমি বানিয়ে আনছি।

সে দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে লেবু কেটে শরবত বানালো। তারপর রুমের উদ্দেশ্য হাটা ধরে।

সে গ্লাস হাতে রুমের মুখে দাড়াতেই থমকে গেল। রোদেলার হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে গেল। তার হাত-পা কাপতে লাগলো। ঠোঁট কাপতে লাগলো। চোখ গুলো অস্বাভাবিক ভাবে বড় হয়ে গেল।

সে চেচিয়ে, ও আল্লাহ বলে উঠে!

এদিকে আবেগের কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেছে। সে নিশ্বাস টাও ঠিক ভাবে নিতে পারছে না।

রোদেলার পা নড়ছেনা আবেগের এই করুণ দশা দেখে তার মাথা ঘুরে গেছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারাবে সে।

বহু কষ্টে পা বাড়িয়ে সে আবেগকে স্পর্শ করে।

আবেগ রোদেলার স্পর্শ পেয়ে তার দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হতেই আবেগ কিছুটা অপরাধীর ন্যায় মুখ করে ফেলে। কিছুটা এমন চোর ধরা পড়েছে।

আবেগ কাচুমাচু হয়ে বলে, ও কিছু না। একটু অসুস্থ তো তাই আরকি,,,,,,,,

আবেগের ভাবখানা এমন যে রক্তবমি করাটা খুবই অপরাধের কিছু!

রোদেলা এতোক্ষন একটা ঘোরে ছিল। আবেগ উঠে দাড়ালো তারপর নিজে নিজেই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হলো।

এবং একটা কাপড় ভিজিয়ে এনে নিজে ফ্লোর পরিষ্কার করতে গেলে, রোদেলা বাধা দিয়ে বলে, তুমি বিশ্রাম নাও। আমি করছি।

আবেগ না বোধক অর্থ প্রকাশ করে বলে, যতোদিন বেচে আছি, নিজের কাজ নিজেই করব।

রোদেলা চমকে উঠে। আবেগ কেন যেন প্রায়শ মৃত্যুর কথাটা বলে।

সে কাদো গলায় বলে, এই সমুদ্রের আব্বু, তুমি এক্ষুনি আমার সাথে হাসপাতালে যাবে।

আবেগ এবার অপ্রস্তুত হয়ে গেল এবং আমতাআমতা করে বলে, হাসপাতালে কেন যাব! আমি সুস্থ আছি। তাছাড়া আমি নিজেই ডাক্তার।

রোদেলা জোড়ালো কন্ঠে বলে, না! আমার মনের শান্তির জন্য হলেও তুমি আমার সাথে যাবে৷ আমি কিছু শুনতে চাই না। আমরা এই মূহুর্তে যাব। চল।

রোদেলার জোড়াজুড়ি তে আবেগ তার সাথে বের হলো। সারা রাস্তা আবেগ অনেক কিছু চিন্তা করতে লাগলো। কি হবে যদি রোদেলা সত্যটা জেনে যায়? অনেক কষ্ট পাবে? এটা তো সে মারা গেলেও পাবে। কিন্তু মারা গেলে তো আর রোদেলার কষ্টটা সে দেখতে পাবে না। কিন্তু এখন সব জানতে পারলে যদি রোদেলা বিন্দুমাত্র কষ্ট পায়, সে আরো ভেঙে পড়বে।

হাসপাতালে গিয়ে আবেগের বিভিন্ন টেস্ট করানো হলো। হাসপাতাল থেকে জানালো, দুইদিন পর টেস্টের রেজাল্ট দিবে।

আবেগ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। সে চায় না কেউ তার অসুস্থতা সম্পর্কে জানুক। কেন যেন এই ব্যাপার টা তার গোপন করে যেতে মন চাচ্ছে।

তারা দুইজন যখন বের হবে, তখন পিজির সেই ডাক্তারের সঙ্গে দেখা। যার তত্তাবধানে আছে আবেগ। ওই ডাক্তার এখানকার চেম্বারেও বসে৷

উনি আবেগকে দেখেই সালাম দিয়ে বলে, স্যার আপনি কি আবারো টেস্ট করাতে এসেছেন?

আবেগ কোন উত্তর দিতে পারছেনা।

উনি পুনরায় বলে উঠে, আমি নিজে খুব সুক্ষ্ম ভাবে টেস্টের সবকিছু দেখেছি। আপনার সত্যিই ব্লাড ক্যান্সার। তাও সেকেন্ডে স্টেজ।

রোদেলা ডাক্তারটার কথা শুনে নির্বক হয়ে যায়। কয়েক মুহূর্তের জন্য তার চারপাশ ঘুরতে লাগে। সে কিছুই বুঝে পাচ্ছে না। তবে এতোটুকু বুঝে গেছে যে আবেগ সুস্থ নেই। তার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগে।

আবেগ নিষ্পাপ চোখে রোদেলার দিকে তাকালো। তাকে কাদতে দেখে আবেগের কি যেন হয়ে গেল। সেও রোদেলার হাত চেপে শব্দ করে কেদে দেয়। আবেগের কান্না দেখে রোদেলার কান্নার বেগ বেড়ে হাউমাউ কান্নায় পরিনত হয়।

আচ্ছা, তাদের জীবন টা এতো ছন্নহীন কেন, এতোটা বেতাল কেন, কেন সুতো ছিড়ে যাওয়া ঘুড়ির মতোন! কেন তারা নিয়তির দাস! কেন এতোটা অসহায়!

আচ্ছা, সুখ পাখি কি তাদের বাসার রাস্তা চেনে না!

★★★

পিউকে নিয়ে রঙ্গন পুলিশ স্টেশন থেকে বের হলো। পিউয়ের ফোন ছিনতাই হয়েছে। যেহেতু আইফোন তাই খুজে পাওয়ার চান্স আছে এপেল এর সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক স্ট্রং। তাই ট্রেস করে খুজে পাওয়া যাবে।

ধানমণ্ডির এক বস্তিতে যাবে তারা। তার সন্দেহ কালুই এই ফোন চুরি করেছে। এই এলাকায় কালুর মতো এক্সপার্ট চোর কমই আছে। কালুর আবার হাত বেশ লম্বা। জেলে ঢুকালে দুইদিনের মধ্যে ছাড়া পায়৷

রঙ্গন নিজের চুল আর পরনের শার্টটা ঠিক করে নিয়ে সামনে আগালো। পিউকে নিয়ে জীপে উঠে।

পিউ পেছনে বসেছে আর সে সামনে। গাড়ি স্টাস্ট দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে লুকিং গ্লাসে পিউকে দেখছে।

পিউ জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

রঙ্গন বিড়বিড়িয়ে বলে, বাইরে দেখার কি আছে! একটু আমার দিকেও তাকান।

এবারে সে গলা খাকিয়ে বলে, মিস! আপনার নামটা যেন কি?

পিউ ঝাঝালো কন্ঠে বলে, নাম তো বলিই নি একবারো।

রঙ্গন দমে গেল। মেয়েটা ভালোই চালাক। প্রথম দেখাই বোকা ভেবেছিল। এখন এই মেয়েকে নিজের চেয়েও চালাক লাগছে।

সে বলে, নামটা কি জানতে পারি?

— পিউ বিনতে ইশরাক।

পিউয়ের নামটা শুনে রঙ্গন মুচকি হেসে বলে, আপনার নামটা তো আপনার মতোই কিউট!

পিউ ভ্রু কুচকে বলে, সর‍্যি?

— না। না। কিছু না। তো আমেরিকান সিটিজেন আপনি?

–হুম।

— তাও এতো সুন্দর বাংলা পারেন?

— আমি কিন্তু জন্মসূত্রে বাঙ্গালী। আর আমার মা-বাবা ও বাঙ্গালী।

— আচ্ছা। আমেরিকা দেখতে কেমন? নিশ্চয়ই রুপকথার অচিন রাজ্যের মতো তাই না? সবাই সাদা ধবধবা?

পিউ রঙ্গনের কথায় হেসে দিলো। এতে লজ্জ পায় সে। এরকম বোকা কথা বলা ঠিক হলো না।

পিউ হাসিমুখে বলে, একবার ভ্যাকেশনে গিয়ে ঘুরে আসুন! তাহলে বুঝবেন কেমন দেখতে।

রঙ্গন মুখ কালো করে বলে, ওই কপাল নিয়ে কি জন্মেছি নাকি! ভ্যাকেশনে আমেরিকা যায় ধনীরা। আমার মতো মধ্যবিত্তরা ছুটিতে কক্সবাজারে যাই। আমেরিকা আমরা টিভিতে দেখি।

পিউ কিছু বলল না। সে বিরক্ত হচ্ছে ছেলেটার কথায়। ছেলে মানুষ এতো বাচাল হয় নাকি! এদিকে সে ফোনের চিন্তায় বাচে না আর উনি আসছে গল্প করতে!

রঙ্গন বলে উঠে, আমার নাম জানেন?

— না।

— রঙ্গন। আম্মা বড় শখ করে আমার নাম রঙ্গন রেখেছিল। আমি নাকি তার জীবন টা রঙ্গে ভরিয়ে দিয়েছি জন্য আমার নাম রঙ্গন রাখা হয়েছে। পুরা নাম হলো,,,,

— কথা না বলে সাবধানে গাড়ি চালান তো।

রঙ্গন বলে, আরে হ্যা! আপনি চিন্তা করবেন না ফোন পাওয়া যাবে।

বস্তির সামনে এসে গাড়ি থামালো। তারপর পিউকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনি বসে থাকুন। আমি আসছি আপনার ফোন নিয়ে।

গাড়িতে এসি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় রঙ্গন। বস্তির ভেতরে ঢুকবে এর আগে একটা দশ-বারো বছরের ছেলে দৌড়ে এসে বলে, আংকেল আগে হাত ধুয়ে নিন।

রঙ্গন আকাশ থেকে পড়লো। ইদানীং বস্তিতে ঢোকার আগেও হ্যান্ড স্যানিসাইজ করা লাগে নাকি!

সে হাত ধুয়ে ভেতরে ঢুকে কালুর রুমে গেল।

কালু সাহেব বসে বসে টিভিতে বিগ বস দেখছিল। রঙ্গন আসায় বিরক্ত সে। আজকে বিচার বসেছে বিগবস ঘরে। এই সময় কার পর্ব গুলো জম-জমাট হয়।

সে বিরস মুখে বলে, আরে, ধানমন্ডি থানার ওসি সাহেব যে!সালাম!

রঙ্গন বলে, ভাই! আইফোন টা ফেরত দে প্লিজ।আমি জানি তুই চুরি করছিস৷

কালু ভাব নিয়ে বলে, পারব না। আমার টাকা লাগবে।

রঙ্গন পকেট থেকে পাচ শ টাকা বের করে বলে এই নাও। এবার দাও।

কালু খপ করে টাকা টা নিয়ে বলে, মাত্র পাচশ! আজকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে যাব ডিনারে। আরো লাগবে।

এবারো রঙ্গন আকাশ থেকে পড়লো। শালা চোর ও ডেটে যায়!

সে পকেট থেকে আরো পাচশ বের করে বলে, মেয়েটাকে পটাতে চাচ্ছি জন্য টাকা দিয়ে নিচ্ছি।ফোন। নাহলে পিটাইয়া লাল করে দিতাম।

— রাখেন আপনার ধমক। তা মেয়ে পটাইতে পারবেন তো? ক্যাপাসিটি আছে নাকি হেল্প লাগবে?

— রঙ্গন পারে না এমন কোন কাজ নাই। এবার তো অন্তত ফোনটা দে।

কালু বিগ বস দেখায় মনোযোগ দিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দিল।

রঙ্গন ফোন হাতে নিয়ে পাওয়ার বাটন অন করে দেখে, পিউয়ের একটা হাস্যোজ্জ্বল ছবি স্ক্রিনে সো করছে৷

সে মৃদ্যু হেসে বলে, ওগো বিদেশিনী —
আমি তোমারে বহুকাল ধরে চিনি, তুমি যে আমার মনের রানী।

ফোন ফেরত এনে পিউকে দিতেই সে চব্বিশ টা দাত বের করে হেসে দেয়। রঙ্গন তাকে দেখে হাসে।

পিউ খুশি হয়ে রঙ্গনকে অনেক গুলো ধন্যবাদ দেয়।

রঙ্গন মনে মনে খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। সে বলে উঠে, চলুন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দেই।

— না। না। লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব৷

— সন্ধায় হয়ে গেছে। আপনাকে একা ছাড়া যাবে না।

রঙ্গনের এই কথাটা পিউয়ের খুব ভালো লাগে। একদম ভাইয়ের মতো দায়িত্ব নিয়ে বলেছে৷

পিউ তার সাথে গাড়ি করে যেতে রাজী হয়।

এবার পিউ নিজ থেকেই কথা শুরু করে। সে বলে উঠে, আপনার কোন ভাই-বোন নেই?

এই প্রশ্নে রঙ্গনের -মুখ টা শুকিয়ে যায়। সে ভেজা গলায় বলে, একটা ফুটফুটে বোন ছিল।

পিউ নরম গলায় বলে, এখন নেই?

রঙ্গন সামনের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, বেশি আদর করতাম তো তাই বিরক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। জানেন, ওর হাত গুলো তুলার মতো নরম ছিল।

পিউ রঙ্গনের কথার আগামাথা বুঝলো না। তবে এতোটা বুঝে যায় যে, আদুরে বোন হারিয়ে যাওয়ায় একজন ভাইয়ের হাহাকার কতোটা শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা।

পিউকে তার বাসায় নামিয়ে দেয় সে। তারপর নিজ গন্তব্যে চলে যায়। হুট করে তার মনটা বিষিয়ে গেল।

★★★

আয়না গোল গোল করে আলু কেটে আলাদা ভাবে সেটা ভেজে নিল। ভাজার সময় আলুতে মাংসের ঝোল দিল। এতে আলুর রঙ কিছুটা লাল লাল হয়। এরপর চালের মধ্যে রান্না করা মাংস দিয়ে, চুলার আচ বাড়িয়ে দেয়।

বাবা ঝোল ছাড়া পোলাও খেতে পারেনা। তার জন্য কি রোস্ট বানাবে সে? বাসায় ফার্মের মুরগি আছে। বানানো যায় রোস্ট। কিন্তু রোস্ট বানাতে দেরি হলে তো অসুবিধা!

রান্নাঘরের পাশের রুম তথা ডাইনিং রুমে মেঘ বসে আছে। পেপার পড়ছে আর আড়চোখে বড় মেয়েকে দেখছে।

তার মেয়ে দুটোকে দেখলেই পরাণটা জুড়িয়ে যায়। মেয়ের চিন্তিত মুখ দেখে সে বসে থেকেই বলে, কি হয়েছে মা?

আয়না বাবার কাছে গিয়ে বলে, রোস্ট বানাতে চাচ্ছি। খাবে তুমি?

মেঘ পেপার পড়ার ভান ধরে বলে, বানালে তো খাবই।

আয়নার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। সে দ্রুত মুরগির মাংস বের করে, রোস্ট রান্নার প্রস্তুতি নিয়ে নিল।

আধ ঘন্টার মধ্যে রান্না হয়ে যায়। রোস্টটা ভালো হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কাচ্চির চালে কোন সমস্যা ছিল তাই কেন যেন নরম হয়ে গেছে। এতে মনটা খারাপ হয়ে যায় তার। আবার আলু সেদ্ধ কম হয়েছে। একটু শক্ত শক্তই আছে।

আয়না একটা হতাশার শ্বাস নেয়।সে যে রান্না করেছে, এটা কি একবার সমুদ্র কে জানাবে? জানিয়ে যদি বলে এসে খেয়ে যেতে, সমুদ্র কি তার অনুরোধ রাখবে?

আয়না বাবার কাছে গিয়ে তার ফোন চাইল। মেঘ কোন প্রশ্ন না করে ফোন দিয়ে দিলো।

আয়না ছাদ থেকে এসে একবারও তার রুমে যায় নি। ড্রয়িং রুমে দাদির সাথে বসে ছিল। এতো দিন তো রুমেই থাকত। আজ না হয় অন্যরুমে থাকুক সে।

ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় গেল সে। ড্রয়িং রুমের বারান্দায়। সমুদ্রের নাম্বার তার মুখস্ত হয়ে গেছে। গ্রামীন ফোনের নাম্বার জন্য 017 দিয়ে শুরু হয়। এরপর নিউটনের মৃত্যুসাল তারপর, রাদারফোর্ডের পরমানু গঠনের সম্পর্কে মডেল প্রদানের সাল!

সে ডায়াল করলো সমুদ্রের নাম্বারে।

ওপাশ থেকে সমুদ্র রিসিভ করে বলে, আসসালামু আলাইকুম।

আয়না জানে সালামের উত্তর দিতে হয় তাই চুপ করে থাকতে পারলো না। জবাব দিলো।

সমুদ্র খুশি হয়ে গেল এবং আল্লাদী গলায় বলে, কি ব্যাপার আয়ু? আমাকে মিস করছিলে?

— রাতে খেতে আসতে পারবে এখানে?

সমুদ্র ভেবে-চিন্তে বলে, না গো। সম্ভব না। কেন? রান্না করেছো নাকি?

— হুম।

— আরেকদিন শুধু আমার জন্য রান্না করিও, তখন খাবো।

— আচ্ছা।

— আরকিছু?

— না।

— এটা কার নাম্বার?

— আব্বুর।

— আচ্ছা। রাখি তাহলে আল্লাহ হাফেজ। একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে।

আয়নার বলতে ইচ্ছে করছিলো, আরেকটু কথা বললে কি খুব ক্ষতি হবে?

কিন্তু কথাটা বলা হলো না।

সে তার রুমে গিয়ে লাইট অন করতেই হতভম্ব। টেবিলের উপরে একটা লাল গোলাপ, প্রেস্ট্রি আর একটা কার্ড।

সে কার্ড হাতে নিয়ে সেটা খুলে দেখে, কার্ডে গোটা গোটা কিন্তু প্যাচানো হাতের লিখায় লেখা,

নিজের মনের যত্ন নিও প্রিয়!

আয়নার মন মুহূর্তের মধ্যে ভালো হয়ে গেল। সেই সাথে খুশির অশ্রু চোখে এসে গেল।

চলবে।