#প্রেমপ্রদীপ
Part–32(বোনাস)
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
লেবু কাটতে গিয়ে হাতের অনামিকা আঙুল কেটে যায় আয়নার। সে সামান্য জোড়ে আহ বলে উঠেই বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কাটা আঙুলটা চেপে ধরে। এভাবে কাজ না হওয়ায় সে ওড়না দিয়ে কাটা আঙুল চেপে ধরে থাকলো যেন রক্ত জমাট বেধে রক্তপাত কমে যায়।
আচ্ছা কতোক্ষনের মধ্যে রক্তপার না থামলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়?
আয়না মনে করার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না। চাকুতে ধার ছিল ভালোই। বেশ খানিকটা কেটে গেছে।
সে ডাইনিং রুমে চলে এলো। টেবিলে সবাই বসে আছে। সকালের নাস্তা খাবে তারা।
রক্তপাত বন্ধ হয়েছে জন্য আয়না বেসিনের কল ছেড়ে কাটা জায়গাটা ধুয়ে নেয়৷ পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জায়গা টা ঝনঝন করে জ্বালা করতে লাগলো। তবুও সে ঠিকমতো পরিষ্কার করে নিল।
তারপর খেতে বসলো। আজকে সে মায়ের পাশে বসেছে। বসার পর দেখলো, সকালের নাস্তায় আজকে সাদা ভাত, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি।
আয়নার পরিবার মধ্যবিত্ত না। মধ্যবিত্তের চেয়ে এক ধাপ নিচে আছে। আজ-কালকার মধ্যবিত্ত রা গাড়িতে ঘুরে, সকালে ব্রেকফাস্টে ব্রেক এন্ড বাটার খায়।
তার বাবা ব্যবসা করে। ব্যবসা জিনিস টা এমন যে একবার ভাগ্য খুলে গেলে ফুলে ফেপে কলা গাছ হবে আর যদি ভাগ্য বন্ধ থাকে তাহলে অবস্থা যায় যায় থাকবে৷
আয়নার বাবা মেঘের অবস্থা ও যায় যায়।
ব্যবসায় লাল বাতি বহু আগেই জ্বলেছে।
আয়না প্লেটে ভাত বেড়ে ভর্তা আর ডিম নিল। ভাতের সাথে ভর্তা মেশানোর সময় কাটা জায়গায় লেগে জ্বলা শুরু করলো। সে উহ করে উঠে এজন্য সবার দৃষ্টি তার দিকে।
আয়না ইতস্তত করতে লাগলো। তার মা জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
— কিছু না আম্মু৷
— হাতের ওই জায়গা লাল কেন হয়েছে?
— কেটে গেছে।
অথৈ কি যেন ভাবলো। তারপর মেয়ের প্লেট টা এগিয়ে এনে নিজে ভাত মাখিয়ে আয়নার মুখের সামনে তুললো৷
আয়না হতভম্ব হয়ে যায়। অথৈ ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল এবং চটজলদি বলল, কি হলো খেয়ে নে। আমার কাজ আছে তো। তোকে খাওয়ানোর জন্য সময় নষ্ট করতে পারব না। তাড়াতাড়ি হা কর।
আয়না হা করে মায়ের হাত থেকে এক লোকমা ভাত মুখে দিলো। তার কি যে খুশি লাগছে সে নিজেও জানে না। খাবারের স্বাদ হুহু করে বহুগুণ বেড়ে গেল! নাহলে কি এই সাধারণ ভাত এতো অমৃত লাগে।
খাওয়া শেষ করতে না করতেই মেঘ এসে আয়নাকে বললো, দ্রুত রেডি হয়ে নে তো মা।
আয়না তখন রান্নাঘরে গরম পানিতে চা পাতা ঢালছিল। বাবার কথায় সে তার দিক ফিরে বলে, কি হয়েছে? কেন রেডি হবো?
মেঘ মুচকি হেসে বলে, আমরা দোকানে যাব৷ শপিং করতে৷
— কি কিনবে বাবা?
— আছে কিছু কাজ। তুই রেডি হয়ে নে।
— চা খেয়ে যাই?
— আচ্ছা ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করছি৷
আয়না চুলা বন্ধ করে বলে,তাহলে এক্ষুনি আসছি। জাস্ট পাচ মিনিটের মধ্যে আসছি৷
আয়না সত্যি সত্যি পাচ মিনিটের মধ্যে বের হলো তার রুম থেকে। আয়নাকে নিয়ে মেঘ রওনা হলো।
তারা বসুন্ধারা সিটি গেল। যাওয়ার পর মেঘ বললো, তোর জন্য কয়েকটা সুন্দর দেখে জামা কিন তো মা!
আয়না বাবার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো।
মেঘ উসখুস করতে করতে বলে, সেদিন দেখলাম হলুদ জামাটা টাইট হচ্ছিল তোর। এজন্য সময় বের করে আসলাম। তাড়াতাড়ি করিস একটু। আমাকে আবার দুপুরে অফিসে যেতে হবে।
আয়না নির্বাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার বাবা তাকে অনেক অনেক অসীম পরিমাণ ভালোবাসে তা সে জানে!
আয়নার মধ্যে আগের চাঞ্চল্য ভাব ফুটে উঠছে। সে এ দোকান থেকে ওই দোকান যাচ্ছে। এক দোকানে দুই থেকে তিনবার ও যাচ্ছে। কোন কিছুতেই সংকোচ বোধ করছে না সে। একই জামা ঘুরে ফিরে দেখতে। তার চোখে মুখে উপচে পড়া আনন্দ!
সে তৃতীয়বারের মতো আবারো একটা দোকানে গেল। সেলসম্যান কিছুটা বিরক্ত হলো।
কিন্তু মেঘের মধ্য কোন বিরক্তি কিংবা ক্লান্তি বোধ নেই। সেও মেয়ের সাথে সাথে ঘুরছে। বরং আনন্দের সাথে ঘুরছে। ভাবখানা এমন এল দোকান থেকে আরেক দোকান ঘুরার মতো মজার কাজ পৃথিবীতে আর নেই।
বাবা আর প্রেমিকের মধ্যে এই জায়গায়ই তফাত। বাবা হয় ধৈর্যশীল আর প্রেমিক হয় অধৈর্য শীল হয়!
টানা তিন ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে আয়না একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ কিনলো। নীল রঙ তার পছন্দ না। তার পরও জামাটা তার মনে ধরেছে জন্য কিনলো।
আয়নার প্রিয় রঙ সবুজ। সে সবুজ রঙের একটা সালোয়ার কামিজ কিনলো। এটার দাম একটু বেশি। তাও কিনলো। আজকে সে বাবার সাথে এসেছে। টাকা কম পড়লে ভিক্ষা করে শোধ করতে তাও কিনবে জামা।
মেঘ নিজ থেকে আয়নাকে একটা লাল রঙের কামিজ পছন্দ করে দিলো। ট্রায়েল দিতে গেল আয়না।
জামাটা পড়ে যখন আয়না বের হলো। মনে হচ্ছিল ভীন দেশের রাজকুমারী পথ হারিয়ে এই দোকানে এসেছে৷
মেঘ দোকানদার কে বললো, জামাটা প্যাকিং করার দরকার নেই। তার মেয়ে এই জামা পড়েই থাকবে৷
দোকানদারের কি যায়-আসে! তার তো সেল হলেই হলো। বরং প্যাকিং না করায় একটা প্যাকেট বেচে গেল৷
কিন্তু দোকানদার তো আর জানে না এই লাল জামা পড়ায় বাবা-মেয়ে কতো খুশি!
আয়নাকে নিয়ে বের হয়ে নিচতলায় গেল মেঘ। নিচতলায় ফোনের দোকান। আজকে সঙ্গে টাকা এনেছে। মেয়েকে ফোন ও কিনে দিবে সে।
আয়না প্রথমে এতো টাকা দিয়ে ফোন কিনতে চাচ্ছিলো না। মেঘ নিজ ইচ্ছায় মেয়েকে স্মার্ট ফোন সঙ্গে সিম কিনে দিলো।
ততোক্ষনে বেলা একটা বাজে। ফোনের স্ক্রিনেই সো করছে। আয়না ঘামতে লাগল। সে ভুলেই গিয়েছিল সমুদ্র তাকে শাস্তি দিয়েছে!
এখন কি হবে? বিরিয়ানি তো বানায় নি। সেটা বাদ! সে যাবে কিভানে ধানমন্ডি লেক? বাবাকে কি বলবে?
মেঘ বলে, কিছু খাবি?
আয়না মাথা ঝাকিয়ে না বলে৷
মেঘ বললো, আমাকে অফিস যেতে হবে। কিছু খেয়ে নিই?
আয়না ভয়ে ভয়ে বলে, বাবা!
–কি রে মা? আর কিছু কিনবি? চুরি-ফিতা কিছু লাগবে?
— আমি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাই?
মেঘ অবাক হয়ে গেল। মেয়ে কি বললো? কই যাবে?
ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা ভালো লক্ষন। বন্ধুর সাথে প্রাণ খুলে কথা বললে আয়নার মন আরো ভালো হবে।
এই ভেবে মেয়েকে রিকশা করে দিলেন। আয়না রিকশা নিয়ে যেতে থাকে ধানমন্ডি লেক৷
মেঘ বিন্দুমাত্র বিচলিত না আয়নাকে নিয়ে। মেয়ে তার অনেক স্মার্ট। ঢাকা ভার্সিটি পড়ত। ব্রাইট একটা ফিউচার ছিল তার।
সব এক নিমিষেই শেষ ।
★★★
আলিয়া মুড়ি মাখা খাচ্ছে তার ফেসবুক চালাচ্ছে। আজকে তার ছুটি। বাসায় আছে সেজন্য। এইজন্য মুড়ি, চানাচুর আর পেয়াজ, মরিচ দিয়ে মাখা বানিয়ে খাচ্ছে৷
খেতে খেতে একটা পোস্টে তার চোখ আটকে গেল। শ্রাবণ কে ট্যাগ করে দেওয়া একটা পোস্ট। পোস্টায় তিনটা ছবি। তিনটা।ছবিতেই একটা মেয়ের সাথে শ্রাবণের হাসি হাসি মুখে সেলফি।
ক্যাপশনে লেখা, Great time spent with Srabon. তারপর তিনটা লাল রঙের লাভ ইমোজি দেওয়া৷ সেখানে আবার শ্রাবণ লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে। শুধু তাই না! সেও লাভ ইমোজি কমেন্ট করেছে।
আলিয়া পারলে এক্ষুনি শ্রাবণের চুল ছিড়ে! দাতে দাত চেপে সে বসে আছে। কষ্ট হচ্ছে তার। শ্রাবণের মাথা ফাটাতে পারলে ভালো হত৷ সাপটা এতো পচা কেন? সে কি বুঝে যায় না এসব দেখলে আলিয়ার কষ্ট হয় বুকে।
★★★
আয়না যখন পৌছায় তখন পৌনে দুইটা বাজে। সে তাড়াহুড়ো করে লেকের শেষ প্রান্তে যায়। সেখানে একটা ব্রেঞ্চে সমুদ্রকে বসে বসে সিগারেট টানতে দেখলো সে। সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছা না সে কিছু তেই।
বিরিয়ানি রান্না না করার জন্য কি সে রাগ করবে?
কেন যেন সমুদ্র পেছনে তাকালো৷ সে বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। পেছনে আয়না ভর্য়াত চোখে
জুবুথুবু মেরে দাঁড়িয়ে আছে৷
সমুদ্রের হাত থেকে সিগারেট টা পড়ে গেল। মুখ অটোমেটিকলি হা হয়ে এলো।
আয়নাকে এতো সুন্দর লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। লাল জামাটা তার গায়ে ফুটে উঠছে। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।
বলতে গেলে তাকে আগুন সুন্দরী লাগছে! প্রচুন্ড ঘেমে গেছে সে৷ এই ঘাম সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ।
সমুদ্র উঠে দাড়ালো এবং আয়নাকে জিজ্ঞেস করে, হাত খালি কেন?
আয়না কোমল গলায় বলে, সকালে বাবা বাইরে নিয়ে এসেছিল তাই রান্না করতে পারিনি৷
সমুদ্র মনে মনে ভাবে, আয়ু তাহলে পারিবারিক ভাবে সাপোর্ট পাচ্ছে!
সে মুখে কিছু না বলে ইশারায় তাকে কাছে আসতে বলে।
আয়না সমুদ্রের কাছে এসে ব্রেঞ্চে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো।
সমুদ্র এক দন্ড দেরি না করে আয়ুর হাতের কনুই ধরে মারলো টান। এবং বলল, কিছু কিছু মানুষের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে নেই। এতে অমঙ্গল হয়! তাদের সঙ্গে জোকের মতো লেগে থাকতে হয়।
আয়না তার দিকে তাকায়। সে মুচকি হেসে বলে, আমি হলাম তোমার জীবনের সেই জোক! গায়ে লেগে থাকব। ছাড়ব না।
হাতে টান পড়ায় আয়না কাত হয়ে সমুদ্রের উপর গিয়ে ঠেকলো। চুলগুলো উড়াউড়ি করছে তার। সমুদ্রের মুখে আছড়ে পড়ছে আয়নার চুল!
সমুদ্র টিটকারি মেরে বলে, আশায় ছিল বিরিয়ানি খাব অথচ দেখো তোমার চুল খেতে হচ্ছে। হায় আফসোস।
–সর্যি।
— কি জন্য?
–শাস্তি পূরণ করতে পারিনি৷
— প্যারা নাই। শাস্তি ডাবল হবে নেক্সট টাইম।
সমুদ্র আয়ুর কোমড় চেপে ধরে সামনে তাকিয়ে বলে, ওই যে লেক দেখতে পাচ্ছো?
আয়না উসখুস করে বলে, হ্যা৷
— লেকের পানি স্বচ্ছ না?
–হুম।
— আমাদের মনটা কিছুটা এই স্বচ্ছ পানির মতোন পরিষ্কার। আমাদের মন পবিত্র থাকলেই আমরা পবিত্র। এবার ওই ডাস্টবিনের দিকে তাকাও৷
আয়না তাকালো ডাস্টবিনের দিকে। ডাস্টবিনে ময়লার স্তপ জোড়ো হয়ে আছে।
সমুদ্র তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, যাদের মন কুৎসিত তারা ওই ডাস্টবিনের মতো নোংরা।
আয়না সমুদ্রের দিকে ফিরে তাকালো। এতে দুজনে অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে৷
আয়না কাপা গলায় বলে, ওই ময়লা ডাস্টবিন থেকে যখন কেউ পরিষ্কার পানিতে ময়লা ছুড়ে মারে, তখন পানিও আর পবিত্র থাকে না।কালো স্পর্শে অপবিত্র হয়ে যায়।
সমুদ্র একধ্যানে আয়ুর কথা শুনলো। তারপর তার হাত চেপে ধরে বলে, পানি ফিল্টার করে পরিষ্কার করার অনেক পদ্ধতি আছে। একটা পদ্ধতি ব্যবহার করে পানিকে কি আবারো পরিষ্কার করা যায় না আয়ু?
আয়না সমুদ্রের চোখে চোখ রাখলো।
তারপর কাপা গলায় বলে, সবকিছু কি এতো সহজ সমুদ্র?
— অবশ্য ই সহজ।
এবারে আয়না সমুদ্রের হাত ধরে মৃদ্যু বেতাল সুরে বলে, আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আজীবন?
— তো থাকো। দূরে তো সরাচ্ছি না।
আয়না কেদে দিলো। সমুদ্র তাকে দুপাশে থেকে আকড়ে ধরে তার ভেজা চোখে নিজের ঠোঁটের পরশ দিয়ে বলে, অশ্রুমালা বর্ষণের মাধ্যমেও কিন্তু মন নামক বস্তু পবিত্র হয়।
আয়না সমুদ্র কে শক্ত করে চেপে ধরে শব্দ করে কেদে দেয়। সমুদ্র ও তাকে জোড়ে চেপে ধরে বলে, কাদিও না! কাদিও না! মানুষজন ভাব্বে আমি ছেলেধরা। তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে।
আয়না ফিক করে হেসে দিলো।
ইশ! মেয়েটা হাসলো কি মায়াবী লাগে! সমুদ্র যদি এই বিশ্বজগতের রাজা হত, তবে আদেশ দিত, জগতের সব মা-বোনেরা যেন দিনের এক ভাগে প্রাণ খুলে হাসে। না হাসলেই শাস্তি!
★★★
সমুদ্র সবে বাসায় আসলো। বাসার পরিবেশ তার ভালো লাগছে না। সবাই থমথমে হয়ে বসে আছে।
ড্রায়িং রুমের টেবিলে মেডিকেল রিপোর্ট রাখা। পাশেই মা-বাবা বসে আছে৷
সে কোন কথা না বলে রিপোর্ট হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে। কিছুক্ষন পর সরাসরি বাবার দিকে তাকালো সে৷
আবেগ তার দিকেই চেয়ে আছে। সমুদ্র থ হয়ে যায়। চোখ-মুখের রঙ পালটে গেল তার। চেহারায় কালো মেঘ জমা হলো তার।
হুট করে সে রিপোর্ট ফেলে দিয়ে বাবার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে। এক মুহূর্তের মধ্যে তার চেহারায় বেদনা ভাব ফুটে উঠেছে।
আবেগ তার কাধে হাত রাখতেই সমুদ্র বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেদে দিল।
আবেগের বুক ধক করে উঠে! তার ছেলে কাদছে!
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
Part–33
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
বাড়ির নাম আনোয়ারা ভিলা। সাধারণত এই জাতীয় বাড়িগুলার নাম মালিকের বউ-মেয়ের নামে হয়। এই লাল কটকটা রঙের বাড়ির মালিকের বউয়ের নাম আনোয়ারা ছিল। জনাবা আনোয়ারা দশ বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কথা সেটা না, কথা হচ্ছে বুড়া আবার বুড়া বয়সে বিয়ার পিড়িতে বসছে। সাত দিন আগে হাটু বয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করেছে৷
রঙ্গন বাসায় ঢুকতে ঢুকতে ভাবতে লাগে, এখন কি এই বাসার নাম বদলে যাবে?বাড়িওয়ালা সাহেবের নতুন সুন্দরী বউয়ের নাম কি? সেই নামে কি এখন এই বাড়ির নতুন করে নামকরণ করা হবে?
রঙ্গন তালতলার এই বাসায় থাকে। চারতলায় দুই রুমের বাসায় ভাড়া থাকে। তার এক রুমের বাসা হলেই হত। কিন্তু ফ্লাট বাসা এক রুমের পাওয়া যায় না। এজন্য এই বিল্ডিংয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছে। পূর্বদিকে বাসা হওয়ায় দুপুরে ভ্যাপসা গরম পড়ে আর মাঝে মাঝে পানি থাকে না। এছাড়া আর সমস্যা নাই। ভাড়া দিতে বাড়িওয়ালার বাসায় গেলে পুলিশ জন্য খাতেরদারি পায় সে! অথিতি আপ্যায়নে কেবল এক কাপ গ্রিন টি পায়।
সে চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে মুজা খুললো। মুজা দিয়ে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে। সাত দিন ধরে ধোয়া হয় না যে! আজকে হাফ ডে করে চলে এসেছে। প্রচুন্ড মাথা ব্যথা তার। অসহ্য মাথা ব্যথা কাবু করে ফেলেছে তাকে৷
সে রুমে ঢুকে শার্টটা খুলে ফেলে খালি গায়ে রান্নাঘরে গেল। ভাতের পানি বসিয়ে আবার রুমে এসে বাথরুমে গিয়ে গোসল করতে যায়৷
রঙ্গনের মা বেচে নেই। তার বাবা গাজীপুরে থাকে। এই বাসায় সে একাই থাকে।
গোসল সেরে বের হতেই ফোনে টুং করে ম্যাসেজ বেজে ওঠে। সে ফোনের স্ক্রিনে তার এক গোয়েন্দা ফ্রেন্ডের ম্যাসেজ দেখতে পেল। তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। এই ফ্রেন্ডকে দিয়ে সে মিস পিউয়ের খোজ-খবর নিতে বলেছিল।
ম্যাসেঞ্জারে তার বন্ধু পিউয়ের সব ডিটেইলস দিয়ে দিচ্ছে এক এক করে। পিউয়ের ন্যাশনাল আইডি কার্ড।মেয়ে আসলেই আরেমিকান সিটিজেন। মা-বাবা বাংলাদেশী। পিউয়ের জন্মও বাংলাদেশে৷ কিন্তু আঠারো বছরের বেশী থাকায় আমেরিকান সিটিজেনশীপ পেয়ে গেছে৷ এরপর আসলো পিউয়ের এডুকেশন সার্টিফিকেট।
রঙ্গন সার্টিফিকেট পড়ে মনে মনে বলে, দন্তচিকিৎসক নাকি মেয়ে ! মাই গড!
সে দ্রুত আয়নায় তাকালো এবং হা করে নিজের দাত দেখে নিল। নাহ তার দাত চকচক করছে। করবেই তো প্রতিদিন ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করে! এজন্য চব্বিশ ঘন্টাই মুখ ফ্রেস থাকে! দুর্গন্ধ হয় না। খালি ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্পটাই জমছে না তার!
এরপর পিউয়ের ফেসবুক আইডি লিংক ও পেয়ে যায়। দ্রুত সেই লিংকে ক্লিক করে কাক্ষিত সেই আইডি পেয়ে যায়। আইডির নাম পিউ ইশরাক।
বিনতে কাটা পড়ে গেছে! — বিড়বিড় করে বলে সে।
তারপর মুচকি হেসে পিউয়ের আইডির দিকে চেয়ে থাকে৷ আইডি লক করা না! পাবলিক করা। বেশ কিছু পোস্ট ও পাবলিক করা আছে৷
রঙ্গন কিছুক্ষন ধরে আইডি ঘুরতে থাকে। তার ভাত যে চুলায় দেওয়া সেটা মাথাতেই নেই।
পিউয়ের আইডি দেখতে দেখতে হুট করে একটা মহিলার ছবি আসলো মাদারস ডেতে পিউ তাকে উইশ করেছে৷
ছবির মহিলাটাকে চেনা চেনা লাগতে লাগলো তার! কোথায় যেন দেখেছে সে!! কিন্তু কোথায় মনে আসছে না! মাথায় প্রেসার দিচ্ছে রঙ্গন কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সে কুল না পেয়ে ট্যাগ মারা আইডিতে গেল। নাম সো করছে। রোদেলা জামান৷
তার বুক ধুক করে উঠে। হাতটা বফরের মতো ঠান্ডা হয়ে আসছে। হাতে থাকা ফোনটা ঘামের জন্য ভিজে যেতে লাগলো। রঙ্গন ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে ভ্রু কুচকে ঝিম মেরে কিছুক্ষন বসে থাকলো। তার চোখ লাল হয়ে আসছে। রঙ্গন অতি ক্লান্ত হলে তার চোখ লাল হয়ে যায়। আজ তো সে ক্লান্ত না! নাকি মনের দিক দিয়ে ক্লান্ত সে! বড্ড বেশিই ক্লান্ত সে!
এই নামটা তো তার খুব পরিচিত! এই নামের মহিলার সাথে তার একটা অতীত আছে!
রঙ্গন চোখ তুলে ফোনের দিকে তাকালো। ফোনের স্ক্রিন বন্ধ হয়ে গেছে।
সে স্থির দৃষ্টিতে ফোনের দিকে চেয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে, পিউ ওনার মেয়ে!
এটা আদৌ সম্ভব কি?
★★★
শ্রাবণ চুপচাপ বসে আছে খাওয়ার টেবিলে
নাস্তা করেই তারা মামা বাসায় যাবে। বর্তমানে সে আর তার মা ফুপু বাসায় আছে। কালকে এসেছিল। আজকে ফিরে যাবে। শ্রাবণ মামা বাসায় যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছে। এই বাসায় তার দমবন্ধ লাগছে। দমবন্ধ লাগছে তার কারন তার ফুপাত বোন আয়েশা। আচ্ছ একটা বিচ্ছু মেয়ে! কিছুটা গায়ে পড়া স্বভাবের বলা চলে! ফুপাত বোন এবার মাত্র অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে। এতো কম বয়সী মেয়ে কালকে তাকে প্রোপোজ করেছে। হাউ ডেয়ার সি!
শ্রাবণের তাকে সেই মুহূর্তেই মাটিতে পুতে ফেলতে মন চাচ্ছিল। সাহস কতো! কিন্তু কিছু করতে পারেনি। বিরক্ত লাগছে তার। কালকে সারা দিন এই মেয়ে তার পেছন পেছন ঘুরেছে৷ প্রথমে খারাপ লাগেনি। দুপুরের পর থেকে চরম বিরক্ত সে। এরই মাঝে তার সাথে কয়েক দফা ছবি তুলে ফেসবুক ফিড ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রথমে শ্রাবণ বুঝে নি আয়েশা তাকে পছন্দ করে।
প্রেমের ব্যাপারে ছেলেরা কাচা হয়! আলিয়া হলে আয়েশার মুখ দেখেই বুঝে যেত যে সে তাকে পছন্দ করে৷ কিন্তু শ্রাবণ বোকা তাই বুঝেনি। মেয়ে রাতে তাকে খাওয়ার পর ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফিল্মি স্টাইলে প্রোপোস করেছে।
সে না করায় কান্নাকাটি মেলোরড্রামা জুড়ে দিয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে লাগলো। শ্রাবণ কিছু বলে নি। নিচে চলে এসেছে এবং তাকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দিয়েছিল। এখন মাত্র রুম থেকে মায়ের ডাকে বের হলো।
তার ফুপু হলো শিল্পপতির বউ। বড়লোক মানুষ। তার বাবার চেয়েও আয়েশার বাবা বড়লোক। তার বাবা চিটাগংয়ের ব্যবসায়ী। আর আয়েশার বাবা ঢাকার নামকরা ডেইরি প্রোডাক্টসের ব্যবসায়ী সেই সাথে তাদের ঔষধ আর গার্মেন্টস আছে জন্য আয়েশার বাবা মানে তার ফুপা সাহেব শিল্পপতির কাতারে পড়েন। আয়েশাদের বাসা যেন বাসা নয়! রাজপ্রাসাদ!
শ্রাবণ চেয়ারে বসে আছে। আয়েশা রান্নাঘর থেকে ট্রেতে করে খাবার আনলো।
ট্রেতে মিস্টি, লুচি, আলুর দম, নেহারি, স্যুপ আছে। পুরো ট্রে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়ানো।
সে আস্তে করে ফয়েল পেপার সরিয়ে শ্রাবণ কে উদ্দেশ্য করে বলে, সব তোমার ফেভারিট। কোনটা আগে দিব? নেহারি না আলুত দম?
শ্রাবণ জবাব দিলো না।
আয়েশা আদূরে গলায় বলে, শ্রাবণ?
শ্রাবণ বিরক্তির শব্দ করে কর্কষ কন্ঠে বলে, ভাইয়া বলে ডাকবে। ম্যানারলেস মেয়ে কোথাকার! বয়সে বড় হই তোমার!
আয়েশা মৃদ্যু হেসে শ্রাবণের নিকটে এসে প্রায় ফিসফিস গলায় বলে, জামাইকে ভাই ডাকা নিষিদ্ধ করা হোক এই শহরে!
শ্রাবণ কড়া গলায় বলে, ফালতু কথা আমার সামনে বলবে না।
আয়েশা হিহি করে হেসে বলে, আমার জেদ সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই। যা চাই তা নিজের করেই শান্তি দেই।
শ্রাবণ কিছু বলবে আর আগেই সে বলে উঠে, আই সেইড শান্তি দেই নট শান্তি পাই! সো তোমাকেও নিজের করেই তোমাকেই রেহাই দিব জান।
★★★
আলিয়ার চুলে পরম যত্নে তেল দিয়ে দিচ্ছে আয়না। দুজনই ছাদে বসে আছে। পাটি বিছিয়ে বসে আছে দুই বোন। আলিয়ার চুল অনেক বড়। আয়না মনোযোগ সহকারে ছোট বোনের চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে৷
আলিয়ার হাতে মটরশুঁটি ভাজি। সে কুটকুট করে মটরশুঁটি চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। এই মটরশুঁটি ভাজা আপার স্পেশাল রেসেপি। কিভাবে যে সে বানায়! এত্তো মজা হয় যা বলার বাহিরে!
আপা?
–হুম?
–বল না কিভাবে এই ভাজা বানাও?
আয়না মৃদ্যু হেসে বলে, কিছু ই না শুধু মটরশুঁটির ছাল ছিড়ে ভেজে নিয়ে লবণ, শুকনা মরিচ আর চটপটি মশলা দিয়ে মেখে নিতে হবে।ব্যস আর কিছু না!
–ও! তোমার ফোনটা দাও তো। সেলফি তুলব।
আয়না তার নতুন কেনা ফোনটা বোনের হাতে তুলে দিতেই আলিয়া বোনকে নিয়ে তিন-চার টা ছবি তুললো।
আয়না কি একটা ভেবে বলে, এই ফোনটা তুই রাখ। আমাকে তোর পুরাতন ফোনটা দিস। আমার তো নতুন ফোনের দরকার নেই। তুই বাইরে যাস, তোর প্রয়োজন হতে পারে৷
আলিয়া তার দিকে তাকিয়ে বলে, না। না। আমার কোন দরকার নেই! আমাকে তো ফুপি আইফোন গিফট করেছে। ওটাও তো নিউ মডেল! তোমার জন্য ও বোধহয় এনেছে। পিউকে বলব?
— না। আমার ফুপির আইফোনের দরকার নেই। বাবা যেটা দিয়েছে সেটা নিয়েই আমি খুব খুশি!
আলিয়া মৃদ্যু হেসে বোনে জড়িয়ে ধরে বলে, আপা! আমি আজকে খুব খুব খুশি! তুমি যে আবারো স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছো। বিশ্বাস করো আমি খুব খুশি! আর সব ক্রেডিট সমুদ্র ভাইয়ার। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না আপা?
আয়না কিছু বলতে পারলো না। বোনের মুখে এই কথা শুনে তার লজ্জা লাগছে বেশ!
আলিয়া বোনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে । দুপুরে তাকে হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু সে যেতে চায় না। আপা আজকে রুই মাছের চপ বানাবে। আপার রুই মাছের চপ যে খাবে সে কোন দিন সেই খাবারের স্বাদ ভুলবে না। দূর্দান্তের উপরে হয় আপার হাতের রুই মাছের চপ!
সে আপার সাথে বসে ভাত খেতে চায়। কিন্তু সম্ভব না!
সে দুচোখ ভরে আপার হাসিমুখ দেখছে! আহা মন ভরে যাচ্ছে তার!
★★★
সমুদ্রের হাউমাউ কান্নায় নিস্তব্ধ হয়ে আছে বাড়ি। কারো মুখে কোন কোন কথা নেই। চারপাশ পিনপিনে নিরবতা! সকাল হয়ে এলেও কারো মনের অবস্থা ঠিক নেই। সবাই শোক পালন করছে।
সমুদ্র তার রুমে বসে আছে। সবকিছু অসহ্য লাগছে তার। বাবা ছাড়া সে অচল! নিরুপায়! বাবা তার মাথার ঢাল! বট গাছের মতো ছায়া দিচ্ছে তাকে। সে কিভাবে মেনে নিবে তার বাবার ক্যান্সার!
ক্যান্সার ভয়াবহ ব্যাধি! সমুদ্র মুখ ভার করে বসে আছে। চোখ ফুলে গেছে তার। রুমের দরজায় টোকা পড়লো। সে সায় দিল না। চুপ করে থাকলো।
রোদেলা সমুদ্র কে ডাকতে এসেছিল। ছেলে গেট না খোলায় ডাইনিং রুমে চলে আসে সে। আবেগ পেপার পড়ছে৷
রোদেলা ভারাক্রান্ত গলায় বলে, আমরা সাতদিনের মধ্যে সিংগাপুর যাব। এটাই ফাইনাল৷
আবেগ পেপারের পেজ পরিবর্তন করতে করতে বলে, এটা সম্ভব না! আমি কোথাও যেতে পারব না।
রোদেলা কাদো কাদো গলায় বলে, ওখানে ট্রিটমেন্ট হবে তোমার।
আবেগ শান্ত গলায় বলে, আমার সিংগাপুর গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যাংক ব্যালেন্স নেই৷ যা করার দেশেই করব।
রোদেলা চাপা গলায় বলে, তোমাকে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি আছি তো৷
আবেগ এবার রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার টাকায় আমি চিকিৎসা করব না।দুঃখিত।
— কেন?
— আমার আত্মস্মানবোধে লাগে৷
— এসব কি বলছো তুমি? আমি তোমার কোন কথা শুনব না। আমরা সিংগাপুর যাব
ব্যস।
— বার বার এক কথা বলতে ভালো লাগেনা
রোদেলা।
রোদেলা থ মেরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল। তারপর চাপা কান্না জুড়ে দেয়। এতে মোটেও বিচলিত নয় আবেগ।সে তার সিদ্ধান্তে অনড়।
রোদেলা আবারো সমুদ্রের রুমের সামনে গিয়ে বলতে লাগলো, সমুদ্র! গেট খুলো। দেখো তোমার বাবা কেমন বাচ্চামো করছে। বুঝাও তাকে।
এবারে সমুদ্র গেট খুলে দিল। রোদেলা গটগট করে সব বলে দেয় সমুদ্র কে।
সমুদ্র সব শুনে প্রতিত্তোরে বলে, বাবা যা চায় তাই হবে। আর আপনাকে টাকার গরম দেখাতে মানা করেছিলাম না? আমি নিজেও আপনার টাকায় বাবার চিকিৎসা হতে দিব না৷
রোদেলা ছেলের কাছে এমন কিছু শুনবে মোটেও আশা করেনি।
সমুদ্র বলে উঠে, আপনার টাকা জ্বলে যাক। আজকে বাবার এই অবস্থা আপনার জন্য! আপনি নারী নামে কলঙ্ক। আপনার কাছে স্বামী-সন্তানের কোন মূল্য ছিল না। এখন কেন দরদ দেখাচ্ছেন? চলে যান না প্লিজ নিজের বাসায়। রেহাই দেন আমাদেরকে।
রোদেলা আবারো চাপা কান্নায় মগ্ন হয়ে যায়। আর কত কষ্ট পেতে হবে তাকে? আর কত নারী হওয়ার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে? আর কতদিন?
ভাইয়ার গলার আওয়াজে পিউ রুম থেকে বের হয়ে দেখে ভাইয়ার রুমের দরজার সামনে মা কাদছে আর ভাইয়া নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
পিউয়ের রাগ উঠে যায়। নিশ্চয়ই ভাইয়া কিছু করেছে নাহলে মা কাদত না। সে ভাইয়ার কাছে গিয়ে বাজখাই গলায় বলে, মা কেন কাদছে ভাইয়া?
সমুদ্র নির্লিপ্ত গলায় বলে, আমি জানি না৷
— তুমি জানো না! তোমার জন্য ই কাদছে। নিশ্চয়ই মাকে কিছু বলেছো তুমি৷
সমুদ্র দ্বিগুণ কড়া গলায় বলে, সত্য কথা বলেছি এজন্য সহ্য হচ্ছে না।
পিউও চেচিয়ে উঠে বলে, তোমার সমস্যাটা কি?কেন মায়ের সাথে এমন করো?মা যে কষ্ট পায় তা দেখো না? নাকি চোখ থাকতেও অন্ধ তুমি!
সমুদ্র কিছু বলতে পারলো না।
পিউ বলে, কেন মায়ের সাথে সবসময়ই রুড বিহেইভ করো? মা তোমার জন্য কাদে ভাইয়া!
সমুদ্র বলে উঠে, আমার জন্য তার এতো সময় নেই রে পিউ! তুই না জেনে, না বুঝে চিল্লাবি না নাহলে থাপ্পড় মারব তোকে। বড় ভাইয়ের মুখের উপর কথা বলিস কিভাবে তুই?
সমুদ্র-পিউ ঝগড়া শুনে আবেগ হেটে হেটে তাদের দিকে আসলো। ছেলে-মেয়েদের কে ঝগড়া করতে দেখে হতাশ সে!
এই তার সুখী পরিবারের নমুনা!
চলবে।