#প্রেমপ্রদীপ
Part–37
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
আয়নাকে নিয়ে বাসার বাইরে বের হয়ে হাটা ধরে সমুদ্র। চারপাশে তার কোন খেয়াল নেই। নানু বাসার সবাই যে তার এহেন কাজে নির্বাক।তাও সমুদ্রের মাথা ব্যথা নেই।
জোড়ে জোড়ে হাটছে সে। এদিকে যে আয়না তার সঙ্গে টাল সামলাতে পারছেনা, সেদিকটাও বিবেচনা করছেনা সমুদ্র।
তার নাক-মুখ নিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। চোখে লালচে ভাব ফুটে উঠেছে সেই সাথে ক্রোধ।
আয়না সমুদ্রের হাতে চিমটি কেটে বলে, একটু আস্তে হাটো না! প্লিজ।
চিমটি খেয়ে ঘোড় কাটে সমুদ্রের। সে পেছনে ফিরে দেখে, আয়না ঘেমে গেছে। তার ও চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে। দয়া হলো তার।
সমুদ্র আয়নাকে নিয়ে মাঝরাস্তায় ফুটপাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ এই জায়গার নাম বনফুলের গলি, শেওড়াপাড়া। আয়নার বাসা আরো ভেতরে আর সমুদ্রের বাসা ফার্মগেট।
দুজনেই হাপিয়ে গেছে। সমুদ্র বড় বড় শ্বাস ফেলে বলে, পানি খাবে?
–হু।
সমুদ্র পাশের দোকান থেকে পানি কিনে এনে আগে নিজে খেল তারপর আয়নার হাতে দিলো। আয়না স্মিত হেসে পানি খেয়ে বলে, বাসায় ফিরে যাই? আব্বু-আম্মু চিন্তা করবে তো!
–করুক চিন্তা। মাঝে-মধ্যে চিন্তা করা ভালো। আমার বউকে আরেকজনের সঙ্গে সেটিং করানোর দায়ে তোমার পরিবার কে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
আয়না ফিক করে হেসে উঠে।
সূর্য ঢলে পড়েছে। তার আর কোন অস্তিত্ব নেই। কে বলবে মাত্র তিন ঘন্টা আগেই এই সূর্যের উত্তাপে বাইরে দাঁড়ানো যাচ্ছিলো। গা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিলো। অথচ এখন আর সূর্যের খোজ নেই। আমাদের জীবন টাও কিছুটা সুর্যের মতো! এই আছে, এই নেই!
আয়না বিনীত গলায় বলে, এমন করা ঠিক হচ্ছেনা। বাসায় কাউকে কিছু ই জানানো হয়নি। অন্য কিছু ভেবে বসছে৷
সমুদ্র নির্লিপ্ত গলায় বলে, যার যা ভাবার ভাবুক। আল্লাহ মাথা দিছে ভাবার জন্য ই৷ সুতরাং আমি-তুমি না ভাবতে দেওয়ার কে?
আয়না মুখ কালো করল। ছেলেটার মাথা গেছে। তালবিহীন কথা বলছে।
সমুদ্র বলে উঠে, তোমার ও শাস্তি আছে।
আয়না চোখ গোল গোল করে তার দিকে তাকালো। সমুদ্রের দাদা-দাদার দাদা তথা পূর্ব পুরুষ কি শিক্ষক ছিল যে কথায় কথায় শাস্তি-শাস্তি করে? ডাক্তার মানুষের মুখে এমন টিচারের মতো কথা কেন?
সমুদ্র বলে,শেওড়া পাড়া থেকে ফার্মগেট অব্দি ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় হাটবে।
— একা?
–নাহ!একা কেন? সঙ্গে আমি থাকছি।
–তাহলে তো আমার সঙ্গে তোমার শাস্তি ভাগাভাগি করতে হবে?
সমুদ্র বাকা হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, বাকি জীবন টাই ভাগাভাগি করতে চাইছি সেখানে শেওড়াপাড়া থেকে ফার্মগেট হাটা তো কোন ব্যাপার ই না।
আয়না মাথা নিচু করে হাসল। তার এতো ভালো লাগছে কেন? সে জানে না!
সমুদ্র আয়নার ডান হাত ধরলো। আয়না তার স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে। চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছে।
হৈ-হল্লা, মানুষের ভীড়ে আর প্রেম প্রেম ভাব আসছে না কিন্তু তবুও সমুদ্রের মনেও ভালোবাসা জোয়ার নেমেছে।
তারা দুইজন ই হাটছে। উদ্দেশ্যেহীন ভাবে হাটছে হাত ধরাধরি করে। আয়নার বাম হাতে অর্ধেক খাওয়া পানির বোতল। সে বোতল টা ফেলে দেয়নি।হাটতে হাটতে যদি সমুদ্রের পিপাসা পায় তখন দেওয়া যাবে। সে খেয়াল করেছে, ছেলেটার একটু পর পরই গলা ভেজাতে হয়।
সমুদ্র আয়ুর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
জানো কি? ভালোবাসার অপর নাম হলো বিষ। কেউ জেনে-বুঝে বিষ খায় না। কিন্তু ভালোবাসা নামক এই বিষটা দেখতে অবিকল মধুর মতো। তাই তো মানুষ ভ্রমে পড়ে মধুর মতো দেখতে “ভালোবাসা” নামক বিষ সমুদ্রে ঝাপিয়ে মরে।
নূর।
আয়না অদ্ভুত চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। সে মুচকি হেসে বলে, ভালোবাসার অপর নাম বিনাশ! আর মানুষ এই বিনাশের তালাসেই থাকে!
আয়ু স্মিত হেসে বলে, তুমি কি কোন কারনে রেগে আছো আমার উপর?
— সাধারণত আমি রাগ করতে চাইনা। তবে কিছুটা অভিমান জন্মেছে। আগে কেন জানাও নি! তাহলে ই সব সমস্যার সমাধান হত৷
আয়না থেমে যায়। উত্তর দিলো না কিন্তু হাটা থামিয়ে দিল সে। আর হাটতে মন চাচ্ছে না। তার দেখাদেখি সমুদ্র থেমে গিয়ে বলে, আর পারছো না হাটতে?
–না। রেস্ট নেই তারপর শাস্তি পূরণ করি?
সমুদ্র আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তারা চন্দ্রিমা উদ্যানের কাছাকাছি তাই বললো, আরেকটু সামনে আগাই। তারপর বসে কিছুক্ষন গল্প করি? আসো।
ধীরগতিতে হেটে চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে গিয়ে দাড়ালো তারা।
ফুটপাতে মানুষ বসে গল্প করছে। আরো সামনে এগিয়ে নিরিবিলি এক জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়ে তারা।
আয়না ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে বড় করে দম নিয়ে সমুদ্রের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।
সমুদ্র বলে, থ্যাংক্সস। পানির পিপাসা পেয়েছিল।
দুজন বসে আছে। কারো মুখে কথা নেই। আয়ু আড় চোখে বারবার সমুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। সরাসরি তাকাতে লজ্জা লাগে। যদি সে প্রশ্ন করে, এই মেয়ে! এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? তখন জবাবে কি বলবে?
সমুদ্র আয়নার কাধে হাত রেখে বলে, পরিবেশটার মধ্যে প্রেমের ছিটেফোঁটা ও নেই। তবুও ভালো লাগছে তাই না?
–হু।
— একটা গান ধরাও তো আয়ু!
সমুদ্র যতোবারই আয়ু বলে ডাকে আয়নার এতো আনন্দ হয় যে পৃথিবীর সব মানুষ কে ডেকে ডেকে বলতে মন চায়, দেখো দেখো কেউ একজন আছে যে আমাকে খুব ভালোবাসে। তোমরা তোমাদের এমন প্রিয়জনকে কি বলে ডাকো? আমি তাকে সমুদ্র বলে ডাকি। তোমাদের জীবনে আছে কি এমন কোন সমুদ্র যা শুধু তোমার নামে জোয়ার-ভাটা দেয়?
সমুদ্র বলল, গান গাও। কি ভাবো এতো?
আয়ু বলে উঠে, আমি গান গেতে পারিনা।
–যেমনই পারো গাও।
— গানের সব লাইন মনে থাকেনা। গানের লাইন হয় অর্ধেক থেকে না হয়, শেষ থেকে মনে থাকে !
— তারপর ও গাও। বরংচ অর্ধেক থেকে সুর তোলা গান শুনতেই আমার ভালো লাগে৷
আয়না উত্তেজিত হয়ে গাইতে লাগলো,
আমি কখনো যাইনি জলে
কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ
ডানা মেলা গাংচিলে
আবার যেদিন তুমি সমুদ্র স্নানে যাবে
আমাকে ও সাথে নিও
নেবেতো আমায়…. বল নেবে তো আমায়..!!
সমুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। আয়নার গলায় গানটা শোনার পর তার মাথা ফাকা-ফাকা লাগছে। অদ্ভুত সুন্দর ছিল গানটা! কন্ঠে নেশা ছিল। প্রতিধ্বনি হলে ভালো হত। আবার শোনা যেত। এমন ভাবনা ভেবে স্বয়ং সমুদ্র বলে উঠে মনে মনে, নাহ, প্রতিধ্বনি না হয়ে ভালোই হয়েছে।
সমুদ্রের ধারনা, কিছু কিছু জিনিস একবারই দেখয়ে হয়, আবার কিছু কিছু ধ্বনি একবারই শুনতে হয়, আবার কিছু কিছু ঘটনা জীবনে একবার ই ঘটা উচিত দ্বিতীয়বার দেখতে গেলে, শুনতে গেলে এবং ঘটাতে গেলেই মহা বিনাশ দেখা দিবে৷
তার কাছে মনে হচ্ছে, আয়নার গাওয়া গানও একবারই শোনা উচিত। দ্বিতীয়বার শুনলেই মহা অঘটন ঘটে যাবে! সে প্রতিজ্ঞা করল,আর কোন দিন আয়ুর কন্ঠে গান শুনতে চাইবে না৷
গাওয়ার সময় আয়নার গলা কাপছিলো। এখন শরীর কাপছে কারন সে কাদছে। কাদার শব্দ আটকানোর আপ্রান চেষ্টা চালিয়েও লাভ হলোনা। বরং আরো জোড়ে হাউমাউ করে কেদে দিয়ে সে সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে, এক সমুদ্রে যতোগুলো ঢেউ ঠিক সেই পরিমাণ ভালোবাসি তোমাকে।
সমুদ্র টিটকারি মেরে বলে, অংকে কাচা। তাই গগনা করতে পারছি না!কতো হবে উত্তর? দুই বা তিন?
আয়ু তাকে জড়িয়ে রেখে কান্নারত অবস্থায় হেসে দেয়।
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
Part–38
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
ক্রিং ক্রিং শব্দ করে বেল বাজাচ্ছে সমুদ্র। তার যেন তর সইছে না। সে একাধারে বেলা বাজিয়েই যাচ্ছে৷ পাশেই আয়না দাঁড়িয়ে আছে। রাত দশটা বাজে। তারা দুজনেই সাতটার দিকে বেরিয়েছিলো। তিন ঘন্টা পর বাসায় ফিরেছে। তাও আয়নার বাসায় না। সমুদ্রের বাসায়। ফুপুর বাসায় বহু আগে আসত আয়না। ফুপা অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। সে আসলে তাকে আর সমুদ্র কে চকলেট, জুস কিনে দিত। সমুদ্রের কাজিন ছিল শ্রাবণ। তাকে নিয়েও খেলত তারা দুইজন। এখন শ্রাবন ও অনেক বড় হয়ে গেছে। ফুপুর সাংসারিক জীবনও সুখকর নয়। না জানি কি হয়! মা আর ফুপির মধ্যে ঝামেলা আছে। তাদের মধ্যে কোন ধরনের যোগাযোগ হয় না। হুট করে মা যদি জানে তার সমুদ্রের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে৷ কি হবে জানে না সে!
গেট খোলার শব্দে আয়নার ধ্যান ভাংলো। সে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে পিউ দাঁড়িয়ে আছে। পিউয়ের মুখ কালো।
সমুদ্র ঝাঝালো কন্ঠে বলে, সামনে থেকে সর পিউ আর আয়নাকে নিয়ে আমার রুমে আসো৷
সমুদ্র রুমে ঢুকেই একটু থ হয়ে যায়। নানা বাড়ির সবাই তাদের বাসায় বসে আছে। নানা-নানি, মামা-মামী, আলিয়া সবাই বসে আছে। সমুদ্র অবাক হলো না। এটা হচ্ছে জানা কথা। যেহুতু সে এই বাড়ির মেয়েকে বাসা থেকে টেনে এনেছে। সুতরাং তার বাসায় বৈঠক বসবে৷ ইটস ভেরি নরমাল।
সমুদ্র ড্রয়িং রুম কাটিয়ে নিজের রুমে যেতে চাইলে, আবেগ কড়া গলায় বলেন,সমুদ্র?
সমুদ্র নির্বিকার ভাবে বলে , জি আব্বু?
— কোথায় ছিলে এতোক্ষন?
— চন্দ্রিমা উদ্যানে।
আবেগ বিষ্ফরিত চোখে তার দিকে তাকালো। সমুদ্র চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল৷
আবেগের পাশেই রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে অথৈয়ের সাথে একবার কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে৷ অথৈয়ের দাবি সমুদ্র নাকি আয়নাকে জোড় করে তাদের বাসা থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে৷ এমন কথা শুনে রোদেলা সহ আবেগ সবাই আকাশ থেকে পড়েছে৷ তদের ছেলে তার মামাত বোন নিয়ে পালিয়েছে? এমন খবর তো কেবল পেপারে পড়েছে৷ আজকে তাদের ছেলে তা করে দেখালো! রোদেলা সমুদ্রের কথা শুনেও অবাক। মানুষ পালিয়ে দূরে কোথাও যায়। চন্দ্রিমা উদ্যান তো যেতে শোনেনি। যাইহোক তার ছেলে খবর পড়ে না বরং খবর গড়ে তুলে ।
আবেগ জোড়ে চেচিয়ে উঠে বলে, ফাইজলামি পাইছো সবকিছু?
সমুদ্র অবলীলায় বলে, ফাইজলামি কেন পাব? তুমি আমার বাবা হও। যা সত্য তাই বলছি৷
— মেঘের মেয়ে কোথায়? ওকে কেন তার বাসা থেকে নিয়ে পালিয়েছো?
সমুদ্র চোখ ছোট করে বলে, পালাব কেন? কি আশ্চর্য?
অথৈ তেজ গলায় বলে, ভাই আপনার ছেলেকে বলেন আমার মেয়ে কই? নিশ্চয়ই আমার মেয়েকে এই ছেলে পাচার করে দিয়েছে৷ আমার মেয়ের কিছু হলে আপনার ছেলেকে আমি জেলের ভাত খাওয়াব।
সমুদ্র চেতে উঠে বলে, আমাকে আপনি জেল খাটানোর হুমকি দিচ্ছেন? আমি কি চোর নাকি?
অথৈ বলে উঠে, চোরের বাপ তুই! আমার মেয়ে কই?
সমুদ্র বলে, কি আজব মামী। আপনি তুই-তুরাকি করছে কেন? সম্মান বলেও তো কিছু আছে তাই না!
অথৈ ঠোঁট বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, ইশ আসছে আমার সম্মানিত ব্যক্তি! তোর আবার কিসের সম্মান? সেইদিন ই না গাদা বাচ্চা ছিলি। যেখানে-সেখানে প্যান্ট ভিজাতি। নাক টিপলে দুধ বের হওয়া ছেলে সম্মান চায়৷ এই সত্য করে বল আমার মেয়ে কই?
সমুদ্র দমে গেল। এটা সত্যি যে সে চার বছর বয়স অব্দি বাথরুমে বাথরুম সারতে জানত না।যেখান-সেখানে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলত৷ সে মামীর প্রশ্নের উত্তরে বলে, আপনার পেছনেই আপনার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দয়া করে একটু পেছনে তাকান।
অথৈ পেছনে তাকিয়ে দেখে সত্যি আয়না গেটের সঙ্গে মিশে দাঁড়িয়ে আছে। আয়নার দুই পাশে আলিয়া আর পিউ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে।
অথৈ আয়নাকে প্রশ্ন করে, কোথায় ছিলি তুই? রোদেলার ছেলের সঙ্গে ছিলি এতোক্ষন?
আয়না মাথা ঝাকিয়ে উত্তরে হ্যা বললো৷
অথৈ চেচিয়ে উঠে বলে, রোদেলার ছেলের সঙ্গে তোর কি এমন সম্পর্ক যে সে আসল আর তুই সুরসুর করে ওর সঙ্গে হাটা ধরলি? বেয়াদব মেয়ে!
আয়না পারলে এখুনি কেদে দেয়।
সমুদ্র কিছুটা জোর গলায় বলে, মামী আমার নিজের ও একটা পরিচয় আছে। কারো ছেলের পরিচয়ে আমাকে না ডেকে আমাকে আমার নিজ পরিচয়ে ডাকলে খুশি হতাম।
অথৈ আগুন দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, এখানে তোমাকে তো খুশি করতে আসিনি৷
মেঘ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলে, একটু চুপ কর। সমুদ্র কে বলতে দাও। কেন এমন করেছো সমুদ্র ?
তখন আবেগ বলে, আয়নাকে ভেতরে এনে বসাও। ওকে এক গ্লাস পানি এনে দাও রোদেলা। দুইজনই আমাদের ছেলে-মেয়ে। কাজেই অধৈর্য হওয়ার দরকার নেই। সমুদ্র তুমি ও চাইলে এক গ্লাস পানি খেতে পার৷
সমুদ্র বলে, লাগবে না।
আয়নাকে পানি দেওয়া হয়। সে এক ঢোকে সম্পূর্ণ পানিটা খেয়ে ফেলে।
এবারে মেঘ প্রশ্ন করে, সমুদ্র! তুমি আয়নাকে কেন নিয়ে এসেছো আমাদের বাসা থেকে? ও তোমার কে হয়? কোন অধিকারে তুমি এই কাজ করলে?
সমুদ্র ধপ করে বলে, কোন ভ্যালিড অধিকার আছে কিনা জানি না। তবে ওর প্রতি আমার ভালোবাসার অধিকার আছে। সেই জোড়েই ওকে নিজের সঙ্গে এনেছি।
ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই টাস্কি খেল সমুদ্রের কথায়।
অথৈ বলে উঠে, তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো?
— জি।
মেঘ প্রশ্ন করে, তুমি আয়নাকে আগে থেকে চিনো? নাকি ঢাকায় এসে পরিচয় হয়েছে?
সমুদ্র স্বাভাবিক থেকেই বলে, ছোট্ট বেলায় চিনতাম। তারপর যোগাযোগ ছিল না৷ এরপরে নানুবাসায় এসে আবার যোগাযোগ হয়েছে৷ সমুদ্র ইচ্ছা করেই বিয়ে কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছে
তাদের বিয়ের কোন ঠিক-ঠিকানা নাই। রেজিস্ট্রি হয় নি। অভিভাবক হিসেবে কেউ ছিল না। আয়নার উকিল বাবা বানানো হয়েছিল গ্রামের একজন কে। এমন বিয়ের মেয়াদ আছে কি নাই তাও জানে না সমুদ্র। বাসায় বিয়ের কথা বললে আরো ঝামেলা হবে। মামীর মতি-গতি ভালো না। মহিলা তিল কে তাল বানাবে।
মেঘ প্রশ্ন করে, আয়নাও তোমাকে ভালোবাসে?
— সেটা ও জানে। আমার জানা নেই। ওকে জিজ্ঞেস করুন।
আবেগ থমথমে গলায় বলে, তোমার কথা বলার স্টাইল থেকে মনে হচ্ছে তুমি আমাদের কে অসম্মান করছো কারনটা কি?
— কারণ টা হচ্ছে এই মূহুর্তে আমার খুব বিরক্ত লাগছে৷
আবেগের সমুদ্রের গালে থাপ্পড় দিতে মন চাচ্ছে। এই ছেলে নিশ্চয়ই কোন আকাম করে এসেছে। মেঘের মেয়ের সাথে কি করেছে কে জানে? প্রেম করেছে কি?তার ছেলে প্রেম করবে? ব্যাপার টা বিশ্বাস হচ্ছে না আবেগের। নাক দিয়ে সর্দি টানা ছেলে প্রেম করলো তার নাকের ডগায়! আর সে কিচ্ছুটি জানতে পারলো না।
সমুদ্র বললো, আমি আয়নাকে ভালোবাসি। তাকে বিয়ে করতে চাই৷ এখন বলো বিয়ে দিবেন কিনা?
রোদেলা হতভম্ব হয়ে গেল এবং বলল, বিয়ে করব বললেই কি বিয়ে হয় নাকি?
— চাইলে সব সম্ভব। চাইলেই বিয়ে করা যায়। চাইলেই ক্যারিয়ার গড়া যায়। মানুষ পারেনা এমন কোন কাজ নেই। মানুষ ডাইনামেট বানিয়ে পাহাড় ভাংছে। চাদে যাচ্ছে। সেখানে আমি একটা বিয়ে করতে পারব না? এতোটাই অযোগ্য নাকি আমি?
রোদেলা চুপসে যায়। সমুদ্র ভুল কিছু বলে নি।
অথৈ কিছু বলবে আর আগে সমুদ্র বলে উঠে,যেই লোকটা আয়নাকে দেখতে এসেছিল সে কি করে?
–ব্যাংকে চাকরি করে।
সমুদ্র হেসে ফেলে বলে, তাতেই বাসায় ডেকে এনে মিস্টি খাওয়ালেন? তাহলে তো আমাকে বিরিয়ানি খাওয়ানো উচিত। কারণ আমি ডাক্তার। আমি তো আরো সুপাত্র! এখুনি কাজি ডাকেন মামী৷
অথৈ হতবিহ্বল হয়ে বলে, আরে! আয়নার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ও তো কোন মূল্য আছে?
— নাহ নাই। ওর কোন মূল্য নাই। ও হচ্ছে কাঠের পুতুল। আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাই করবেন ওর সাথে। এতোই যদি ওর ইচ্ছা নিয়ে চিন্তা থাকত তাহলে আর বাসায় পাত্রপক্ষ ডাকতেন না। এতো বিবেকহীন কেন আপনি মামী?
অথৈ কিছু বলতে পারলো না। হাটুর বয়সী ছেলে তাকে অপমান করছে। কি বলবেন তিনি? ভুল ও বলেনি ছেলেটা। সত্যি তো মেয়ের কাছে একবারও কিছু জিজ্ঞেস করেন নি তিনি।
আয়না কান্নারত সুরে বলে উঠে, প্লিজ আমার মাকে কিছু বলবে না। তাকে অসম্মান করে কোন কথা আমার সহ্য হয় না।
সমুদ্র চুপ হয়ে গেল। সমুদ্র চুপ মানে সবাই চুপ। আবেগ ও কিছু বলছে না। কি বলবে সে?
এবার তালুকদার সাহেব উঠে দাড়ালো এবং বলল, আয়না যদি রাজী থাকে আজকেই ওদের বিয়ে পড়িয়ে দিব। আয়না মামনি তুমি আজকে বিয়ে করতে রাজী?
আয়না কোন দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিল, না।
চলবে৷