প্রেম আমার পর্ব-১৮+১৯+২০

0
9936

#প্রেম_আমার ♥
#পার্ট-১৮♥
#Ayanaa_Jahan_(Nusraat)♥
.
– ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া………! ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া…………..!
উঠ! দেখ ৯ টা বেজে গেছে। এই ভাইয়ায়ায়ায়ায়া……..উঠ নায়ায়ায়া।
.
এই নিয়ে কম করে হলেও দশ কি পনেরো বার ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে চেঁচিয়েছি। তবুও আমার এই নাদুশনুদুশ ঘুম কাতুরে গুনোধর ভাইকে উঠাতে পারলাম না। মানে একটা মানুষ এভাবে মরার মতো ঘুমায় কিভাবে? হাও! তাও এই অনন্যার ভাই হয়ে! এমনি সময় তো কানের কাছে আমার হাই ভোল্টেজ ওয়ালা এক চিৎকারেই কাজ হয়, বাট আজ হলো টা কি?
.
এতো পরিশ্রমের পরও কাজ না হওয়ায় ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য বিছানা ভিজলেও ভিজুক তাও ভাইয়ার ঘুম ছুটানো। হাতে মগটা নিয়ে চোরের মতো পা টিপেটিপে ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু ভালো করে খেয়াল করতেই চোখ গেল ভাইয়ার মুখের দিকে। কিসব বিড়বিড় করছে আর ঘুমের তালেই মুচকি মুচকি হাসছে।
লে ভাই! বান্দর টা দেখি মধুর মধুর স্বপ্নও দেখে। শুধু স্বপ্ন দেখেই না বরং মুচকি মুচকি হাসেও।
তবে রে আমার ভার্সিটি যাওয়ায় লেট করিয়ে মহারাজ মনের সুখে রঙ বেরঙ্গে স্বপ্নে হাবুডুবু খাবে তা তো হতে পারে না। মুখে একটা শয়তানি হাসির রেশ টেনে মগে থাকা পানি ছুড়ে মারলাম ভাইয়ার মুখ বরাবর। মেরেই এক দৌড়ে খাটের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। ওমনি এক লাফ দিয়ে ধরফরিয়ে উঠলো ভাইয়া। উঠেই বাচ্চাদের মতো আম্মুকে ডাকা শুরু করে দিলো।
.
– আম..আম্মুউউউ! আম্মুউউউ ভূ…ভূ…ভূত আমার ওপর হিশু করে দিয়েছে…!
.
ভাইয়ার ডাক শুনে আম্মু আব্বু একসাথে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই ভাইয়ার কাছে গেলেন। আম্মুকে কাছে পেয়ে ভাইয়া বাচ্চাদের মতো আম্মুর বুকে মুখ গুঁজে মিনমিধ করে ভূ…ভূ…ভূত! বলে যাচ্ছে।
আমি এতোক্ষণে খাটের পেছনে বসে চুপ করে থাকলেও আর থাকতে পারলাম না। ওভাবে বসে থেকেই একেবারে ঘর কাঁপিয়ে হাসা শুরু করে দিলাম। যাকে বলে একেবারে লেভেল ছাড়া ননস্টপ লাফিং। হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে আমার।
.
আমার হাসির আওয়াজে আম্মু আব্বু খাটের পেছনে চোখ গরম করে তাকালো আর ভাইয়া এতোক্ষণে বুঝতে পারলো কোনো ভূত টূত ওর ওপর হিশু করে নি বরং অল ক্রেডিট গোস টু মি, অনন্যা দি গ্রেট ফাজিল।
.
– শাঁকচুন্নি, বটগাছের পেত্নি, উল্টো পা বিশিষ্ট পিশাচিনী। গায়ের ওপর পানি ঢেলেছিস কেন ফাজিল? (দাঁত কটমট করতে করতে)
.
ভাইয়ার সাথে তাল মিলিয়ে এবার আম্মু আব্বুও আমার দিকে প্রশ্ন ছোড়া শুরু করে দিলো।
– অনু…! পানি ঢেলেছিস কেনো অগ্নির ওপর?
.
সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এক মুহূর্তে আমাকে টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলবে। তবে আমিও বা কম কিসে? হাসি থামিয়ে মুখে একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলাম,
.
– সেটা নাহয় তোমার গুনোধর ছেলেকে বলো। উনি নাকি রোজ আমায় ভার্সিটি নিয়ে যাবেন ইভেন নিয়েও আসবেন। তা এতোক্ষণ ঘুমোলে তো আমার একটা ক্লাস মিস হয়ে যাবে। ঘড়ির দিকে একবার তাকাও। ৯ টা বেজে ১৫ মিনিট। উনাকে আমি সেই ৮ টা ৫০ থেকে ডেকে চলেছি কিন্তু উনার তো ঘুম ভাঙ্গার কোনো নাম গন্ধই নেই। আর পানি মেরেছি ঠিক ৯ টা বেজে ১০ মিনিটে এন্ড তোমরা গত ৫ মিনিট যাবৎ এই রুমে অবস্থান করছো। দ্যট মিনিস পুরো বিশ মিনিট ধরে আমি এই বান্দরটাকে উঠাবার চেষ্টা করে গিয়েছি। তারপরোও কোনো হেলদোল না দেখেই পানি মারার স্টেপটা নিতে বাধ্য হয়েছি।
নাও কাকে বকা উচিৎ তোমরাই ভেবে দেখ। আমি এখন চুপ। (মুখে এক আঙুল চেপ)
.
আমার কথায় আম্মু আব্বু দুজনেই ফুলকো লুচির মতো ফুলে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালো। ভাইয়া মুহূর্তেই একটা শুকনো ঢোক গিলে দাঁত কেলিয়ে পালিয়ে যেতে নিলেই আম্মু খপ করে ভাইয়ার হাত চেপে ধরেই কান ধরে টানে ধরলো।
.
– আহহহ! আম্মুউউই লাগছে তো! ছেড়ে দাও প্লিজ……..!
.
– লাগার জন্যই তো ধরেছি। দিন দিন আদরে আদরে বাদর হয়ে যাচ্ছিস তুই। সকালে বাবুই তোকে কাঁধে উঠিয়ে ঘরে শুইয়ে দিয়ে গেছে। জানিস? তাও তোর ঘুম ভাঙ্গে নি। আর অনু তোকে এতোক্ষণ ডাকার পরও উঠিস নি! তাতে নাকি ভূত তোর ওপর হিশু করে দিয়েছে! (আমার দিকে তাকিয়ে) অনু যা করেছিস বেশ করেছিস। পুরো বালতি ভরে পানি দিয়ে বিছানাতেই গোসল করিয়ে দিতি। আরোও ভালো হতো।
.
আমি আর আব্বু এতোক্ষণ নীরব দর্শকের মতো মা আর ছেলের কান্ড দেখছিলাম। এবার দুজন দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে হু হা করে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলাম। আম্মুর হাত আলগা হতেই ভাইয়া সুযোগ বুঝে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
ভাইয়া যেতেই আম্মুও ফিক করে হেসে দিয়ে আমাদের সাথে হাসির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লো।
.
🌺
.
আমি আর রাত্রি পুল সাইডে গাছের নিচে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। দুজনের দৃষ্টি একদিকে। আর সেটারোও কেন্দ্রবিন্দু হলেন মি. সাদা বিলাই।
উনি ফোনে কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছেন আর একটা মেয়ে উনার সাথে কথা বলার জন্য রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। পারলে যেন এক্ষুনি উনার কোলের ওপর উঠে যেতো। আর উনি বারবার হাত দিয়ে বারণ করছে উনার কাছে যাতে না যায়।
কিন্তু কেনো যেন এসব দেখে আমার রাগ লাগছে। বলতে গেলে একপ্রকার জেলাস টাইপ ফিল হচ্ছে। কিন্তু কেনো তার উত্তর জানা নেই আমার।
অজান্তেই কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে উঠছে। রাত্রি আমার দিকে তাকিয়ে তা লক্ষ্য করে বলে উঠলো,
.
– কিরে তোর আবার কি হলো? আমরা তো সিনেমাহল ছাড়াই ফ্রি ফ্রি সিনেমা দেখছি তাতে তো তোর খুশি হওয়ার কথা। তা না হয়ে হঠাৎ রেগে যাচ্ছিস কেনো? (ভ্রু নাচিয়ে)
.
রাত্রির এমন কথায় আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম,
– আ..আ..আমি রাগ করতে যাবো কেনো? আসলে মেয়েটার ঢং দেখে বিরক্ত লাগছে, দেখনা কি রকম কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে লাফালাফি করছে।
.
– সে যাই করুক! তাতে তোর কি? হেই ফিশি অনন্যা সামথিং সামথিং?
.
– কি যাতা বলছিস রাত্রি। জাস্ট নাথিং নাথিং ! চল ক্লাসে যাই টাইম হয়ে গেছে।
.
বলেই ঠাস করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। যেই না উলটো দিকে ঘুরে হাটা দেবো ওমনি পা স্লিপ কেটে একট প্রকান্ড চিৎকার দিয়ে পুলে পড়ে গেলাম।
আমার পড়ে যাওয়া দেখে রাত্রি আমার নাম নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। কিন্তু ততক্ষণে আমি পানিতে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। পুলটা বেশি গভীর না হলেও আমি পুরোপুরিভাবে ডুবে যেতে পারবো অনায়াসেই। ইভেন আমি সাঁতারও কাঁটতে জানি না। শুধু হাত পা ছোটাছুটি করে চলেছি কিন্তু কিছুতেই পাড়ে যেতে পারছিনা। বরং আরোও পিছিয়ে যাচ্ছি আমি।
.
হটাৎ কে যেনো পুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সেই মানুষটা আর কেউ না আমার সাদা বিলাই। উনাকে দেখেই চোখ অবদি ডুবে গেল আমার। উনি তাড়াতাড়ি করে সাঁতরে এসে আমাকে নিয়ে পাড়ে যেতে লাগলেন। আমি এতোক্ষণে পানি খেয়ে খেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেলেছি। চোখে ঝাপসা দেখছি আমি। শুধু এতোটুকু বুঝতে পারছি আমাকে পাড়ে উঠিয়ে শুইয়ে দিলেন উনি। সাথেসাথেই আমাদের ঘিরে দাঁড়ালো সবাই। কানে মৃদু সুরে ভেসে আসতে লাগলো রাত্রির কান্না করতে করতে আমার নাম ধরে ডাকা।
.
আমার শ্বাস-প্রশ্বাস যেন আটকে আসতে চাইছে। নীবিড় ভাইয়া আমার পেটে ক্রমাগত চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা পানি বের করার পর উনি আচমকা আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। আর সাথেসাথেই চারপাশ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস কন্ট্রোলে আসা মাত্রই চটজলদি চোখ খুলে বসে পড়লাম আমি। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বসা মাত্রই সজোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে।
.
চলবে……………………

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১৯♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
নীবিড় ভাইয়া মাথা নিচু করে রেয়েছেন। থরথর করে ঠোঁট কাঁপছে উনার। হয়তো বা রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন উনি। আর সবাই যার যার অবস্থানে হা করে তাকিয়ে আছে। কারো গালে হাত তো কারো মুখে। অদ্ভুদ এক নিস্তবদ্ধতা ছেয়ে রয়েছে সবার মধ্যে। হঠাৎ রাত্রির আওয়াজে ঘোর কাটলো সবার,
.
– অনন্যা এটা তুই কি করলি? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? যে তোকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো তাকেই চড় মেরে দিলি? (আমার দুবাহু ঝাঁকিয়ে)
.
– বাঁচালো মাই ফুট। সবার সামনে এভাবে যে উনি আমাকে অপদস্ত করলো তার বেলা? ছিঃ। (নাক মুখ শিটকিয়ে কাশতে কাশতে)
.
– অনু তুই সাইন্সের স্টুডেন্ট তো? আমার কিন্তু যথেষ্ট ডাউট আছে। আরে মাথা মোটা ভাইয়া তোকে ইয়ে করে নি। (বিড়বিড় করে)
বরং মুখে মুখে শ্বাস প্রশ্বাস চালাবার এইড দিয়ে তোকে বাঁচিয়েছেন। গর্ধব!
.
রাত্রির কথায় চমকে উঠলাম আমি। আসলেই তো আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। উনি ওটা করার পরই তো বেটার ফিল হলো আমার। তাহলে কি আমি উনাকে ভুল বুঝলাম। সবার সামনে এভাবে না বুঝেই চড় মেরে দিলাম! ইয়া আল্লাহ! প্লিজ বাঁচালো মুঝে! এতোক্ষণে আশেপাশে কানাঘুষো শুরু হয়ে গেছে আমাদের নিয়ে। যেখানে আমাকে মস্তবড় আহাম্মক সাজানো হয়েছে।
.
নীবিড় ভাইয়া এবার মাথা তুলে তাকালেন। হুট করে আমায় দাঁড় করিয়ে রাত্রির হাত থেকে উনার শার্ট টা নিয়ে পড়িয়ে দিলেন। উনার পড়নে একটা টি-শার্ট আর প্যান্ট যা পুলে ঝাপ দেওয়ায় আমার জামা কাপড়ের মতোই পানিতে নাকানিচুবানি খেয়ে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। হয়তো শার্ট খুলে নেমেছিলনে। সিল্কি চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে উনার। যেখান থেকে টপ টপ করে পানি পড়ে যাচ্ছে।
আমাকে উনার শার্ট টা পড়িয়ে দেওয়া মাত্রই আমি সরি বলতে যাবো তার আগেই আমার সামনে উনার বড়বড় হাতের পাঁচ আঙুল মেলে থামিয়ে দিলেন আমায়। আর আমি ভয়ে ওখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছু বলার সাহস হচ্ছে না আমার। উনার শার্টটা গায়ের সাথে জড়িয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলাম।উনার মুখের গম্ভীরতা দেখে এটা নিশ্চিত যে আমার কপালে খুব বড়সড় একটা বাঁশ ঝুলছে। যেকোনো সময় আমাকে ভ্যানিশ করে দেবেন উনি।
.
– রাত্রি, অগ্নিদের বাড়ির চাবি দাও, ব্যাগে আছে। (আমার ব্যাগের দিকে আঙুল দেখিয়ে)
.
রাত্রি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে আমার ব্যাগের চেন খুলে চাবি বের করে উনার হাতে দিলো। ভাজ্ঞিস ব্যাগ রাত্রির কোলে ছিলো। নাহলে আমার সব যেত!
উনি চাবিটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে ফিরেই হুট করে কোলে তুলে নিলেন আমায়। আর আমি বাদে বাকি সবাই অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। যেন এই মুহূর্তেই হার্ট এট্যাক করে মারা যাবে। তবে মুখে কেউই কিছু বলবার সাহস পাচ্ছে না। পাবেই বা কি করে, ভার্সিটিতে নীবিড় নামটা শুনা মাত্রই সবাই ভয়ে থরথর করে কাপে। তাও কিছু নির্লজ্জ মেয়ে উনার থেকে এতোবার অপমানিত হবার পরেও পিছে পিছে ঘুরঘুর করে।
আমার কাছে উনার কোলে উঠা কোনো নতুন বিষয় নয়। আগেও উঠিয়েছেন তবুও আজ ভয় করছে কারণ উনার হাবভাব আমার সুবিধের ঠেকছে না। অন্যদিনকার মতো চোখেমুখে বিরক্তির রেশ থাকলেও আজ রয়েছে এক অদ্ভুত গম্ভীরতা। হয়তো এটা কোনো বড়সড় ঝড় আসার পূর্বাভাস!
.
উনি আমাকে কোলে উঠিয়ে দু কদম হেটে থেমে রাত্রিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
– অগ্নি প্রজেক্টে কাজ করছে, যদি দেখা হয় তো বলে দিও আমি ওর বোনকে নিয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে আসছি। টেনশন যেন না করে। ওর বোন ঠিক আছে।
.
পালটা কোনো জবাবের অপেক্ষায় দাঁড়ালেন না উনি। বড়বড় পা ফেলে হেটে যেতে লাগলেন গ্যারেজের দিকে। আর আমি ঠান্ডায় গুটিশুটি মেরে চুপ করে থাকলাম উনার কোলে।
উনি আজ বাইক আনেন নি। কার নিয়ে এসেছেন।
.
গাড়ি বের করে আমাকে নামিয়ে গেট খুলে ইশারা করলেন উঠে বসতে। আমিও আর কোনো কথা বললাম না। চুপচাপ বসে গেলাম। ঠান্ডায় গা অলরেডি কাঁপাকাঁপি করা শুরু করে দিয়েছে। উনি গেট লাগিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালানো শুরু করে দিলেন। হঠাৎ মনে পড়লো আমাদের বাসা তো এখন ফাঁকা। আম্মু আব্বুর তো আজ শপিংয়ে যাওয়ার কথা। হাই লা!
.
আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
– ভা…ভা..ভাইয়া…! বা..বাসায় তো কেউ নেই!
.
বিপরীতে উনি সামনের দিকে তাকিয়েই শুধু মাত্র একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবারোও ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলেন। আর আমি আল্লাহ আল্লাহ শুরু করে দিলাম। বেশ বুঝতে পারছি উনার মনে ভয়ানক কিছু চলছে। ওরে অনন্যারে, আব তেরা কেয়া হোগা!😭
.
🌺
.
– আসিফ, ওইযে স্ক্রুটা এদিকে দে। বোর্ডটা আগে লাগিয়ে নেই। (অগ্নি)
– এই যে ভাই নাও।
.
স্ক্রু নিয়ে আবারোও প্রজেক্টে বানানোয় মনোযোগ দিলো অগ্নি। অগ্নিসহ আরোও কয়েকজন এই প্রজেক্টে অগ্নিকে হেল্প করছে।
রাত্রি পা টিপেটিপে ল্যাবে ঢুকে গেল। রাত্রিকে দেখে আসিফ নামক ছেলেটা অগ্নিকে বলে উঠলো,
.
– ভাই, একটা মেয়ে এদিকেই আসতেছে। তোমার সাথে দরকার মেবি।
.
অগ্নি চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে ভ্রু কুঁচকে কাজ করতে করতেই বলে উঠলো,
– যে হয় হোক। আমি কাজে ডিস্টার্বনেস লাইক করি না। যেতে বল তাকে।
.
আসিফ মাথা নেড়ে “জ্বি ভাই” বলে রাত্রির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
– আপু, অগ্নি ভাইয়ের সাথে দরকার থাকলে এখন যান। ভাই কাজে ব্যস্ত আছে।
.
সাথেসাথেই রাত্রির মুখে ঘন কালো মেঘ নেমে এলো। ভেবেছিলো এই বাহানায় অগ্নির সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পাবে সে।
কিন্তু ব্যাপারটা নিতান্তই জরুরী না বললেও নয়। তাই মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– আসলে ভাইয়া, দরকারটা আমার না। উনার বোনকে নিয়ে। জাস্ট উনাকে একটু বলেন যে অনন্যার বিষয়ে কথা আছে।
– আচ্ছা, দাঁড়ান।
.
আসিফ দৌড়ে গিয়ে অগ্নির পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
– ভাই, আপুটা তোমার বোনের জন্য আসছে, কি জেনো জরুরী কথা জানানোর আছে।
.
আসিফের কথা বলতে দেড়ি হলেও অগ্নির কাজ ফেলে ছুটতে দেড়ি হলো না। এক ছুটে রাত্রির সামনে গিয়ে বলে উঠলো,
– অনন্যা কোথায়? কি হয়েছে ওর? (চিন্তিত হয়ে)
.
অগ্নির হঠাৎ এভাবে সামনে আসায় বুকটা ধুক করে উঠলো রাত্রির। সে ভুলেই গেয়েছি কি বলার ছিলো।
রাত্রিকে ওভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অগ্নি বিরক্ত হয়ে আবারোও বলে উঠলো,
.
– হেই ইউ, কি হলো বলো অনু কোথায়? (চেঁচিয়ে)
.
অগ্নির ধমক খেয়ে চমকে উঠলো রাত্রি, আমতা আমতা করে অনন্যার কথা মনে করে বলে উঠলো,
– আ..আসলে, অনন্যা পা স্লিপ কেটে পুলে পড়ে গিয়েছিলো। নীবিড় ভাইয়া ওকে পুল থেকে তুলে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে গেছে। আর চিন্তা করতে বারণ করেছে। অনু ঠিক আছে।
.
চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই জোড়ে একটা দম নিয়ে চোখ খুলে তাকালো রাত্রি। আর চোখ খুলতেই আহাম্মক বনে গেল সে। কারণ সামনে অগ্নির চিহ্নটিও নেই। এইটুকুনি সময়ের মধ্যেই অগ্নি হাওয়া।
সামনের ছেলেটার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাতেই
ছেলেটা চোখের ইশারায় বুঝালো অগ্নি ছুটে গেট দিয়ে বেড়িয়েগেছে। ছেলেটার ইশারা বুঝে রাত্রিও সেকেন্ডের মধ্যেই হাওয়া! আর ছেলেটা বোকার মতো হা করে চেয়ে রইলো শুধু। এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এভাবে দুজনের ছুটে বেড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা তার ছোটখাটো মাথার ৬ কিলোমিটার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। যার কারণে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।
.
.
– ভাইয়া…! দাঁড়ান…!
পেছন থেকে বাইক স্টার্ট দেওয়ার পূর্বমুহূর্তে কারো আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো অগ্নি।
রাত্রি ছুটতে ছুটতে ওর দিকেই আসছে। এসেই হাঁপাতে লাগলো সে। হাঁপাতে হাঁপাতেই বলে উঠলো,
.
– ভাইয়া…! আমিও যাবো। প্লিজ!
– হোয়াই?
– ভাইয়া অনু তো আমার বেস্টি! আর ওর ব্যাগ ফোন আমার কাছে আছে। (হাতে থাকা ব্যাগটা দেখিয়ে)
.
অগ্নি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভেবে, চোখের ইশারায় পেছনে বসতে বললো। রাত্রি অগ্নির সম্মতি পেয়ে চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়ে বাইকে উঠে পড়লো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে।
.
🍁
.
– আ…আ…আর এগোবেন না প্লিজ!
.
আমার পেছাতে পেছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আর পেছানোর জায়গাই নেই। বিন্দুমাত্রও না। আমার যম এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে ঠোঁটের কোনে সেই মারাত্মক ভয়ানক বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছি। পালাবার মতো কোনো স্কোপই বাকি রাখেন নি উনি। কি অদ্ভুদ! আমার বাসায় আমারই বাড়িতে আমার ওপর টর্চার করা হচ্ছে! হায় রে কপাল আমার। আজই আম্মু আব্বুকে শপিং যেতে হতো?
.
উনি এগোতে এগোতে আমার একদম কাছে চলে এসেছেন। যা দেখে আমার চোখ নিমিষেই বড়বড় হয়ে গেল। উনার গরম গরম নিঃশ্বাস সোজা আমার মুখের ওপর এসে পড়ছে।
.
– কি হলো? ভয় লাগছে? নিঃশ্বাস আটকে আসতে চাইছে? চড় মারার সময় এই ভয় কোথায় ছিলো হুম! (রাগী গলায়)
.
– আ…আ..আমি ভুল বুঝে…চ..চ..চড় মেরেছিলাম। স..সরি বললাম তো!
.
– অবশ্যই ভুল বুঝেই মারবে। কজ নীবিড় কখনোওই কোনো মেয়ের হাতে চড় খাওয়ার মতো কাজ করে না। এই নিয়ে তুমি তোমার মোটা মাথার জন্য আমায় দু দুবার চড় মেরেছো। তোমার সরি কি থাপ্পড় টাকে রিভার্স করে নিতে পারবে? (চেঁচিয়ে)
.
উনার ধমক শুনে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। বুক দুরুদুরু করে উঠছে বারংবার। উনি আমার থেকে আরেকটু দূরে গিয়ে বলে উঠলেন,
.
– ওকে দেন ইউ হ্যাভ টু অপশনস।
নাম্বার ওয়ান- পাস্টে যেয়ে থাপ্পড়টা তুলে নাও।
এন্ড নাম্বার টু- শাস্তির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নাও।
.
আমি উনার কথা শুনে থ হয়ে গিয়েছে। বলেন কি উনি। আরে আমি কি ডোরেমন যে পকেট থেকে টাইম মেশিন বের করবো আর পাস্টে চলে যাবো? মানে উনি আমাকে শাস্তি দিবেনই জাস্ট দেখাতে চান যে উনি আমাকে বাঁচার অপশন দিয়েছিলো বাট আই লস্ট দ্যাট।
উনি আমার অবস্থা দেখে আবারও বাঁকা হেসে বলে উঠলেন,
.
– কি পারবে না তো?
.
এই মুহূর্তে আমার ভীষণ রাগ উঠছে। কিন্তু রাগের মাথায় উলটা সিধা কিছু বলে ফেললে পাছে আমারই বিপদ তাই মাথা নিচু করে শুধু না বোধক মাথা নাড়ালাম।
.
উনি মুচকি হেসে ঝড়ে গতিতে এসে আমার দুহাত দেওয়ালের সাথে চেপে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।

চলবে………………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
উনার আচমকা আমার ঠোঁটের ওপর আক্রমণের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না কোনো কালেই। সাথেসাথেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেল। এই বুঝি আমার ঠোঁট টা ফিল্মের ভিলেনদের মতো রক্তাক্ত বানিয়ে ফেলবেন উনি।
কিন্তু উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার ঠোঁটে শুধু নিজের ঠোঁট ছুঁইয়েই রেখেছেন। আমার আমার চোখে নিজের স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছেন। এদিকে আমার হার্ট ঘোড়ার বেগে লাবডাব করে যাচ্ছে। উনার চাহনী দেখে আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। খুবই অস্বস্তি হচ্ছে আমার উনার এমন চাহনী দেখে।
.
উনি হুট করে আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার কানের লতিতে হাল্কা করে কামড় দিয়ে সরে দাঁড়ান। আর আমি যেনো আমার হারানো প্রাণপাখি পুনরায় ফিরে পেয়ে গেলাম। উনি সরে যেতেই বুকে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম আমি। তাতে যেনো উনি বেশ আনন্দ পেলেন বলেই মনে হলো। তা বুঝলাম উনার দুষ্টুমি ভরা হাসি দেখে।
হঠাৎ উনি মুখটা আবারও গম্ভীর করে বলে উঠলেন,
.
– আমি চাইলেও এতোটা খারাপ হতে পারবোনা যতোটা কিনা তুমি আমায় ভাবো।
যাও ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নাও। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
.
আমি পালটা কোনো জবাব দেওয়ার জন্য এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেট লাগিয়ে হাঁপাতে লাগলাম আমি।
একটু আগে কি হলো ভাবলেই আমার পুরো গা কেঁপে উঠছে। অজান্তেই ঠোঁটে আর কানে হাত বোলাতে লাগলাম আমি।
.
অনন্যা চলে যেতেই নীবিড় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিলো। অজান্তেই মুখ থেকে “ভীতুর ডিম” বেড়িয়ে যায় তার। কোনোরকমে হাসি কন্ট্রোল করে অগ্নির ঘরে যায় সে। এরকম ভেজা কাপড়ে থাকলে জ্বর বাধিয়ে ফেলবে নির্ঘাত।
.
🍂
.
অগ্নি ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় পৌঁছানো। ওর মাথায় শুধু অনন্যার চিন্তাই ঘুরঘুর করছে। যতোই মারামারি বকাবকি করুক না কেনো, অনন্যার কিছু হলে অগ্নি সব লন্ডভন্ড করে দিতে পারে।
আর এদিকে রাত্রির প্রাণপাখি যেনো এই উড়ে গেল বোধহয়। ভয়ে ডিবডিব করছে তার ভেতরটা। এতো স্পিডে অগ্নি বাইক চালাচ্ছে যে যেকোনো মুহূর্তে এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। ভয়ে অগ্নিকে বলতেও পারছে না সে যাতে বাইকটা একটু আস্তে চালায়।
.
আচমকাই একটা ব্লাক কালারের কার ওদের বাইকের সামনে এসে পড়ায় খুব জোড়ে ব্রেক কষে অগ্নি, যার জন্য রাত্রি পড়তে নিয়েও বেঁচে যায় অগ্নির হাত খাঁমচে ধরায়। অগ্নি রেগেমেগে রাত্রিকে নামতে বলে নিজেও নেমে বাইক স্টান্ড করে এগিয়ে যায় সেই গাড়িটির দিকে। অগ্নির রেগে যাওয়ার কারণ, এমনিতেই বাড়ি যাওয়ার তাড়া তার ওপর এভাবে হুট করে সামনে এসে কার থামানোর মানে টা কি? কিছু হলে তো অগ্নিদেরই হতো। অগ্নি শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে এগোতে লাগে যা দেখে রাত্রি রীতিমতো বিষম খাইয়া শুরু করে দিয়েছে এই ভেবে যে এখনোই কোনো গন্ডগোল বেঁধে যাবে নির্ঘাত। গন্ডগোল যাতে না বাঁধে তাই সেও পেছন পেছন ছুটে যায় অগ্নির।
.
গাড়ির গেট খুলে বেড়িয়ে আশা ব্যক্তিকে দেখেই থেমে যায় অগ্নি। আনমনেই তার মুখ থেকে হাল্কা স্বরে বেড়িয়ে যায় “রু…শো..!”
গাড়ি থেকে নেমেই মুখে এক বস্তা হাসি ঝুলিয়ে চোখের সানগ্লাসটা সুটের পকেটে রেখে এক দৌড়ে এসে অগ্নিকে জড়িয়ে ধরলো রুশো। রাত্রি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে দেখতে থাকলো তাদের দুজনের কান্ডকারখানা।
.
– হেই ব্রো..! ওয়াটস আপ? কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ? ওকে ওকে তোমায় বলতে হবে না। তোমার ফেইসের রিয়াকশন দেখেই বুঝা হয়ে গেছে আমার দ্যট ইউ আর রিয়েলি শকড!
ইয়েস এটাও একটা মোমেন্ট এড করবো আমার স্টোরিতে। ইউ নো এবারের স্টোরিড়া একদম হিট হবে আমার। (অগ্নিকে ছেড়ে হাসতে হাসতে)
.
অগ্নি নিজের হাতে নিজেই একটা চিমটি কেটে আহহ! করে উঠে। সে এবার শিউর যে এটা কোনো ড্রিম নয়, সত্যি সত্যিই রুশো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অগ্নি বুঝতে পারছেনা এভাবে হুট করে ইউএস থেকে কিভাবে এলো রুশো।
.
– এই তুই কখন এলি? আম্মু আব্বু কেউই তো বললো না। এখনই তো উড়ায় দিচ্ছিলি আমাদের স্টুপিড!
আর এসেই তোর কো রাইটার হওয়ার ভাবনা লেগে গেছে? তুই কোনোদিনোও শুধরাবি না তাইনা? (চিন্তিত ভাব দেখিয়ে)
.
– আরে আরে চিল ব্রো ইটস জাস্ট আ সারপ্রাইজ। এন্ড আই নিউ ইট দ্যাট আমার হিরো ব্রাদার ঠিকই হিরোর মতো ব্রেক কষে থেমে যাবে। আর প্লিজ এরকম বলো না তো দেখবে আমি একদিন ঠিকই একজন নামকরা রাইটার হয়ে যাবো।
.
অগ্নি হেসে রুশোর মাথায় একটা চাটি মেরে দেয়। আর রুশো আউউচ! করে উঠে বাচ্চাদের মতো আবারও অগ্নির গলায় ঝুলে পড়ে।
সব কিছুই যেনো রাত্রির মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
ও শুধু বোকার মতো একবার বিদেশ ফেরত ধলা ইন্দুরকে দেখছে তো একবার অগ্নিকে দেখছে। রাত্রি এবার রুশো কে খু্ঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। গায়ের রং ধবধবে সাদা। সিল্কি চুলগুলো দিয়ে কোরিয়ানদের মতো কপাল ঢাকা। গালে কোনো দাড়ি নেই। যাকে রাত্রির ভাষায় “ছিলা মুলা” উপাধি দেওয়া দরকার বলে মনে হচ্ছে তার। তবে আজব হলেও রুশোকে যেনো অন্য ছেলেদের মতো চাপ দাড়িতে নয় বরং এভাবেই মানিয়েছে। হাইট অগ্নির মতোই। চুলে হাল্কা ব্রাউন সেইডের কালার করা, মনে হচ্ছে এই কালাটা ওর জন্যই পারফেক্ট। পড়নে তার সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট আর শার্টের ওপরে পিংক কালারের সুট। সব মিলিয়ে পুরো কোরিয়ানদের মতো কিউট লাগলেও যেনো রাত্রির কাছে তাকে হাস্যকর বলেই মনে হচ্ছে। কারণ রুশো ছেলেটাই জোঁকার টাইপ।
.
রুশো অগ্নির পেছনে রাত্রিকে দেখতে পেয়ে বলে উঠলো,
– ব্রো, হু ইজ শি?
.
অগ্নি রাত্রির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে উঠলো,
– ও অনন্যার ফ্রেন্ড!
(অনন্যার কথা মাথায় আসতেই) হেই রুশো তুই ওকে নিয়ে বাসায় আয় ফাস্ট। আমি বাইক নিয়ে আসছি।
.
বলেই একপ্রকার দৌড়েই বাইকে উঠে স্টার্ট দিয়ে চলে গেল অগ্নি। আর রাত্রি শুধুই অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো অগ্নির যাওয়ার দিকে। রুশো রাত্রিকে নিচ থেকে উপরে দেখে নিয়ে বলে উঠলো,
.
– হেই বিউটিফুল! কাম। বাই দ্য ওয়ে ওয়াটস ইউর নেইম? (হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে)
.
রাত্রি রুশোর কথার বিপরীতে কিছু না বলে হাতে থাকা অনন্যার ব্যাগটা ওর বাড়িয়ে দেওয়া হাতে ধরিয়ে দিয়ে কারের গেট খুলে মুখ ফুলিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়ে।
রাত্রির এরকম করায় রুশো কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে কাঁধ উঁচু করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলো, “বোবা নাকি! ইশ এতো সুইট কিউট বিউটিফুল একটা মেয়ে শেষে কিনা বোবা? হাও পিটি!”
বলেই সেও গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লেগে পড়লো।
.
🌹
.
ওয়াশরুমের দরজা খুলে মাথা বের করে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। নাহ! ঘরে কেউ নেই। কেউ নেই দেখে একটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। কারণ আমার গায়ে শুধুমাত্র একটা টাওয়াল জড়ানো। সাদা বিলাইয়ের ভয়ে কাপড় নিয়েও ঢুকতে পারিনি আমি। পা টিপেটিপে ঘরে ঢুকেই আগে দরজা লাগিয়ে নিলাম আমি।
চটজলদি কাবার্ড খুলে একটা ড্রেস বের করে পরে নিলাম। আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হবে না বোঝা হয়ে গেছে আমার।
.
চুপচাপ বেড়িয়ে একবার নিচে ড্রয়িংরুমে তাকালাম আমি। পুরো বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। শুধুমাত্র ঘড়ির ঢং ঢং আওয়াজ কানে বাজছে। যা জানান দিচ্ছে এখন বাজে বারোটা। অবশ্য ঘড়িটার সাথে আমার যথেষ্ট মিল রয়েছে। দুজনেরই বারোটা বেজে গেছে। শুধু পার্থক্য এই যে, ঘড়ির সময় বারোটা আর আমার অবস্থা বারোটা!
.
ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা তারমানে সাদা বিলাই চলে গেছে। ভেবেই একটু লাফিয়ে নিলাম আমি। যাক বাঁচা গেল। উনার সামনে পড়লে আমার চৌদ্দ অবস্থা হয়ে যেতো। ভাইয়ার রুমে চোখ বুলাতেই আমার চোখ ছানাবড়া! ইশশ কি বাজে অবস্থা বানিয়ে রেখেছে ভাই আমার। অবশ্য আজ সময়ও ছিলো না কিছু গুছিয়ে নেওয়ার। আমি ভাইয়ার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড় গুলো ভাঁজ করতে লেগে গেলাম।
.
হুট করে কিছুর আওয়াজে আমি চোখ তুলে তাকালাম। যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি বিন্দুমাত্র তৈরি ছিলাম না। সাদা বিলাই শুধু আন্ডারওয়্যার পড়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। উনাকে এভাবে দেখে আমি চোখ বন্ধ করে দিলাম এক ঘর কাঁপানো চিৎকার।
.
– আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া………….!
– আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া……..!
– আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া……..!
– আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়্যায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া….!
.

– ঠাসসসসসসসসসসস………!
.
মুখের ওপর ঠাস দরজা লাগিয়ে দিলেন নীবিড় ভাইয়া। আমি কি চেঁচালাম! আমার থেকে দ্বিগুণ জোড়ে চেঁচিয়েছেন উনি। ইয়া….! আল্লাহ আমি কি দেখলাম। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। মুখটা অটোমেটিক্যালি হা হয়ে গেল আমার।
.
নীবিড় ভাইয়া দরজা খুলে টাওয়াল পড়ে বেড়িয়েই এক দফা ঝগড়া বাধিয়ে ফেললেন,
– হেই ইউউউ! নক করে ঘরে ঢোকা যায় না?
– এক্সকিউজ মি, ঘরের গেট লক করে ঢোকা যায় না?
– হেই লিসেন তোমাকে এখানে কে আসতে বলেছিলো?
– যাক বাবা! আমার বাড়ি আমার ভাইয়ের ঘর কারো পারমিশন নিয়ে আসতে হবে কি আমায়?
– ইউ নো হোয়াট? তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।
.
বলেই রেগেমেগে কাবার্ড থেকে ভাইয়ার একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট নিয়ে ঢুকে গেলেন ওয়াশরুমে। আর দরজা লাগানোর সময় বিকট এক শব্দে পুরো ঘর কেঁপে উঠলো।
আর আমি উলটো দিকে ঘুরেই হু হা করে হেসে উঠলাম। এক্কেবারে ঠিক হয়েছে উনার সাথে। শুধু আমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়েকে থাকতে লাগতো। ইশশ কি লজ্জা কি লজ্জা!
.
🌸
.
গাড়ি ড্রাইভ করছে সাথে একটু পর পর লুকিং গ্লাসে রাত্রিকে আঁড় চোখে দেখছে রুশো। তার কাছে রাত্রিকে একটা পাকা টমেটোর মতোই লাগছে। তার ভাবনা রাত্রির বেশ বোর ফিল হচ্ছে তাই তার বোরিং নেস দূর করতে ৩২ পাটি দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসলো রুশো।
.
– এই যে মিস বিউটিফুল! তোমার জন্য বেশ খারাপ লাগছে। (রাত্রি ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই) নো নো ডোন্ট বি এংরি। আই মিন তুমি বলতে পারো না তো কি হয়েছে? শুনতে তো পারো। সো তোমার বোরিং লাগবে না। কজ নাও ইউ আর ইন রুশোস কার। তোমার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে দ্যট হু আই এম। ইউ নো হোয়াট, আই এম দ্য গ্রেট স্ক্রিপ্ট রাইটার রুশো! (রাত্রি বিরক্তিমাখা ফেইসে তাকাতেই)
ওপস আই মিন, আমি অগ্নি ব্রোর কাজিন রুশো আহমেদ ওরফে খালাতো ভাই রুশো। আমি ইউ এস থেকে ওনার্স কমপ্লিট করে গতকাল নাইটে ফিরলাম। পাশাপাশি ড্যাডের বিজনেসও সামলাতে হয়, যদিও ইচ্ছের বিরুদ্ধেই (মুখটা বাচ্চাদের মতো করে)। আমার রাইটার হওয়ার খুব খুব খুবই ইচ্ছা। বাট, কেউ সাপোর্ট করে না। (মুখ কালো করে) তবুও আমি হাল ছাড়বোনা। আমিও প্রুভ করে দেখিয়ে দিবো যে আমিও পারি। আউ ক্যান ডু এনিথিং।
.
রাত্রি চুপচাপ এক কান দিয়ে রুশোর কথাগুলো শুনছে তো আরেক কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে! ভীষণ বিরক্ত লাগছে তার। তার মতে ছেলেরা কখনোই এতো কথা বলতে পারেনা। বাট এই বিদেশ ফেরত ধলা ইন্দুর কিভাবে এতো বকবক করছে আল্লাহ মালুম।
তাও চুপচাপ বসে রয়েছে সে। কেনো যেন কিছু বলতে ইচ্ছেই করছে না তার।
.
.
.
চলবে…………………………💕