প্রেম আমার পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
10294

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
ছাদে পা রাখা মাত্রই আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম যেনো। নড়বার শক্তিও হাড়িয়ে ফেলেছি আমি। শুধু মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রয়েছি।
.
ছাদের আনাচে কানাচে নীল সাদা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। পুরো ছাদের সাথে ফুলের টবগুলোও ঝকমক করছে। আমার দোলনাটায় এত্তোগুলো ফুল দিয়ে সাজানো। ছাদের মাঝ বরাবর একটা গোল টেবিল তার ওপরে আমার পছন্দের এত্তোবড় একটা কেক। তার ঠিক পেছনে খানিকটা উঁচুতে বড় একটা ঝুলানো ব্যানার টাঙানো। তার দুপাশে নীল সাদা রং এর বেলুন লাগানো। ছাদের প্রত্যেকটা পিলারে বেলুনের বাহাড়। এমনকি পুরো ছাদের ফ্লোরেই বেলুনের ছড়াছড়ি।
.
নিত্য আপু খুব মন দিয়ে কেক ডেকোরেশন করছে। রাত্রি ক্যান্ডেল হাতে টেবিলের দিকে যাচ্ছে। অগ্নি ভাইয়া দুহাতে দুটো টেডিবিয়ার নিয়ে দোলনায় রাখছে। ওদিকে রুশো ভাইয়া বেলুন ফোলাচ্ছে। বর্তমানে অর্ধেক ফুলিয়েছে। কিন্তু শুধু নীবিড় ভাইয়াকে কোথাও দেখতে পারছিনা।
.
হঠাৎ, আমাকে দেখে সবাই একদফা ভূত দেখার মতো চমকে গেল। সবাই যেনো স্টাচু হয়ে গিয়েছে। রুশো ভাইয়ার অর্ধেক ফোলানো বেলুন ফুসসসস….! করে চুপসে ভাইয়ার মুখ থেকে উড়ে গেলো।
পর মুহূর্তে সবাই ঘড়ির দিকে এক পলক চেয়েই একসাথে “Happy Birthday Anannya” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। সাথে সাথেই এক বস্তা গোলাপ ফুলের পাপড়ি আমার ওপর এসে পড়তে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে ওপরে তাকাতেই দেখি এই ফুলের পাপড়ি গুলো এমনি এমনি নয় বরং আমার হ্যান্ডসাম সাদা বিলাই আমার ওপর ছড়াচ্ছেন। উনাকে এক পলক দেখেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। এত্তো সুন্দর সারপ্রাইজ দেখে খুশিতে আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। চোখে পানি চিকচিক করছে। এ তো কোনো কষ্টের অশ্রু নয় এতো পরম সুখের অশ্রুকণা!
.
নীবিড় ভাইয়া ওপর থেকে ততক্ষণাত নেমে এলো। উনি বাদে বাকি সবাই দৌড়ে এসে আমার খুব টাইডলি হাগ করে বসলো,
.
– কি টাইমিং রে অনু! আমরা তো কাজে কাজে ভুলেই গিয়েছিলাম ১২ টা বেজে আসছে। একদম ঠিক টাইমে ছাদে এসেছিস। (অগ্নি)
.
– বার্থডে গার্ল, তো বলো কেমন লাগলো আমাদের দেওয়া সারপ্রাইজ? (নিত্য)
.
– স্পিচলেস! আমি বাকরুদ্ধ! (আনমনেই বলে উঠলাম)
.
সবাই আমার কথা শুনে হাসা শুরু করে দিলো। রাত্রি আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বলে উঠলো,
– অনন্যা রে, তোর সবার বার্থডে মনে থাকে আর নিজেরটাই ভুলে গিয়েছিলি?
.
আমি মাথা চুলকে চুলকে বলে উঠলাম,
– সেই রে! তোর অত্যাচার দিন দিন বেরেই চলেছে। দেখ এখনই সব ভুলে যাচ্ছি। তোর চেঁচামেচিতে না নিজেকেই ভুলে যাই! 🤷‍♀
.
রাত্রি আমার কথা শুনে চোখ ছোটছোট করে কেবল বকতে যাবে তার আগেই রুশো ভাইয়া চোখমুখ ঢেকে বলে উঠলো,
– প্লিজ! ছুটকির বার্থডের দিন এটলিস্ট এটম বোম্ব ফাটিয়ো না।
.
ভাইয়ার কথায় হু হা করে হেসে উঠলাম আমরা। আর রাত্রি কটমট করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়েও আমার জন্য কিছু বললো না।
.
– হ্যা রে ভাইয়া! আম্মু আব্বু কেও ডাকতি!
.
– নারে আম্মু আব্বু জানেই। আর আব্বুর তো রাত জাগা যাবেই না। আম্মুকে আসতে বলেছিলাম বাট বললো ছোটদের মধ্যে আসতে চাইলো না। বিকেলে তো আয়োজন করবেই তখন সবাই থাকবে। চিন্তা করিস না। এটা তো জাস্ট আমাদের প্লান ছিলো। (অগ্নি)
.
– হেই ব্রো সিস, তোমাদের হলে চলো, ছুটকিকে দিয়ে কেক কাটাই। আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা ট্রাস্ট মি! ইশশ দেখতেই কি ইয়াম্মি লাগছে খেতে কেমন লাগবে ভাবলেই….!😋 (রুশো)
.
রুশো ভাইয়ার কথায় হেসে উঠলাম আমরা সবাই। এমনি এমনি কি আর ওকে জোঁকার বলা হয়?
নিত্য আপু টেবিল থেকে কিছু একটা এনে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– অনন্যা, এটা তোমার জন্য!
.
বলেই আমার মাথায় একটা সাদ পাথরের তাজ পড়িয়ে দিলো। তাজটা অসম্ভব সুন্দর! সিম্পলের মধ্যে। যেমনটা প্রিন্সেসরা পরে অনেকটা সেরকমই।
.
– থ্যাংকইউ সো মাচ আপুউউউউ!
.
– থ্যাংক ইউ আমায় না বলে ওই যে ভাইয়াকে বলো। ভাইয়া সারা মার্কেট ঘুরে বেছে বেছে এই তাজ টা নিয়ে এসেছে।
.
আপুর কথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। বলে কি! নীবিড় ভাইয়া কিনেছে এটা? তাও আমার জন্য? উনার মতো বদমেজাজি, গোমড়া মুখো সাদা বিলাই কি না আমার জন্য কিনেছে? উনি তো আমায় সহ্যই করতে পারেন না। সবটাই কি তবে বেস্টফ্রেন্ডের বোন দেখেই?
হবে হয়তো! ভেবেই একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লাম আমি। আসলেই উনার পছন্দ আছে বৈকি।
.
🍂
.
আজ থেকে উনিশ বছর পূর্ণ হলো আমার। সেই সুবাদেই কেকের ওপরে “1” এন্ড “9” ডিজিটের দুটো ক্যান্ডেল জ্বালানো।
নিত্য আপুর ট্যালেন্ট দেখে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। এটা যে ঘরে বানানো কেক বোঝার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। ডেকোরেশন ও তাই। একটা স্মাইলি ফেইস আঁকানো তাতে। পাশে বড়বড় করে আমার নাম লেখা! ওরে ট্যালেন্ট রে। আর আমি চা পর্যন্ত বানাতে পারি না, ভেবেই নিজের গালে আস্তে করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম।
.
– ওই ফুঁ দে। (অগ্নি)
– হ্যা! অনন্যা কি ভাবছো ফুঁ দাও। (নিত্য)
.
আমার এক পাশে অগ্নি ভাইয়া, আরেক পাশে রাত্রি। রাত্রির পাশে রুশো ভাইয়া, আবার রুশো ভাইয়ার পাশে নীবিড় ভাইয়া, আর উনার পাশে নিত্য আপু। আবার নিত্য আপুর পাশে অগ্নি ভাইয়া। বলতে গেলে সবাই আমাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ঠিক সামনে নীবিড় ভাইয়া।
অগ্নি ভাইয়া আর নিত্য আপুর তাড়া দেওয়ায় আস্তে করে হেলে ফুঁ দিলাম। কিন্তু কপাল আমার একটা ক্যান্ডেল নিভলেও আরেক টা নিভে নি। তা দেখে সবাই হেসে দিলো আর অগ্নি ভাইয়া আমার মাথায় চাটি মেরে বলে উঠলো,
.
– ওরে আহাম্মক রে। সামান্য দুটো ক্যান্ডেলও ফুঁ দিয়ে নেভাতে পারে না।
.
ভাইয়ার হাতে একটা চিমটি কেটে দিয়ে ভেংচি কাটলাম আমি। এবার জোড়ে একটা ফুঁ দিয়ে দুটো ক্যান্ডেলই ফেলে দিলাম। 🤦‍♀
.
🌸
.
কেক কেটে পড়লাম মহাবিপদে। সবার আগে কাকে খাওয়াবো এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলাম। শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ডান দিক থেকে যতদূর হাত যায় ততদূর যে যে থাকবে তাকে খাওয়াবো দেন বাম দিকে যারা থাকবে তাদের খাওয়াবো। সেই সিদ্ধান্তেই অটুট হয়ে ভাইয়াকে আগে কেক খাওয়ালাম। কেকের টুকরোটা ছোট করে কাটায় অগ্নি ভাইয়াকে খাইয়ে নিত্য আপুকে দিয়েই শেষ হয়ে গেল। তবে একটা জিনিস খেয়াল করলাম কেক খাওয়ানোর সময় দুজনই লজ্জা টাইপ মুচকি মুচকি হাসছিলো। হাসুক ঠিক আছে বাট লজ্জা লজ্জা ফিলিংস কেনো? ভাববার বিষয় হলেও ব্যাপারটা তেমন পাত্ত না দিয়ে আবারোও কেক কেটে এক পিস নিলাম রাত্রিকে খাইয়ে রুশো ভাইয়াকে দিবো তখনই দেখি ভাইয়া আগে থেকেই হা করে রয়েছে। আমি ফিক করে হেসে পুরো পিস টাই রুশো ভাইয়াকে দিয়ে দিলাম। রুশো ভাইয়াও মনের সুখে কেক খেতে লেগে পড়লো।
.
এবার আমার বুক ধুক ধুক করছে কারণ লাস্ট ওয়ান যিনি এখনোও কেক খান নি তিনি হলেন ওয়ান এন্ড ওনলি মুখসধারী সাদা বিলাই। উনাকে চেনা বড়ই মুশকিল। সবার সামনে আমার সাথে হেসে হেসে কথা বললেও, কেউ না থাকলে একেবারে সাবান ছাড়াই ধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেন। হাহ!
আচ্ছা উনাকে খাওয়ানো টাকি খুব জরুরী? না খাওয়ালে হয় না? উনি তো তাকাচ্ছেন ও না। তাহলে বরং নাই খাওয়াই।
এসব আকাশ পাতাল ভাবছি তখনই ভাইয়ার গলা কানে এলো,
.
– কিরে? কি ভাবছিস? নীবিড় কে খাওয়া।
.
ভাইয়ার ভাবনার মাঝখানে সাইকেল চালানোর জন্য আমার সাজানো গোছানো পরিকল্পনাটা একদম মাঠে মারা গেল। আমি মুখ গোমড়া করে এক পিস কেক নিয়ে উনার সামনে গেলাম। উনি আমাকে দেখে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকালেন, সাথে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললেন। যা জানান দিচ্ছে তিনি মনে মনে কোনো ফন্দি আটছেন নিশ্চয়। আমি ভয়ে ভয়ে উনার মুখের কাছে কেকের টুকরোটা এগোতেই উনি আমার হাত ধরে কেকের সাথে আমার হাতের আঙুলও মুখে ঢুকিয়ে নিলেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় আমি চোখ বড়বড় করে ফেললাম। সাথেসাথেই উনি আমার আঙুলে “কচ” করে কামড় বসিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি ব্যাথায় যেই না মুখ খুলে চেঁচাতে যাবো তার আগেই উনি কৌশলে কেকের বাকি অংশ আমার মুখে পুড়ে দিলেন। সবটা সবার অগোচরেই ঘটে গেল। কারণ সবাই তো মজা করতে ব্যস্ত।
নীবিড় ভাইয়া আমার দিকে বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে নিজের ঠোঁট বামদিকে বাঁকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভাইয়াদের কাছে চলে গেলেন।
আর আমি কেক নিয়েই মুখ ফুঁলিয়ে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছি। কেক টাকে চাবানোর কথাও মাথায় নেই আমার।
হঠাৎ মনে পড়ায় কোনোরকমে কেকটা গিলে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। কি হলো একটু আগে? ইয়া আল্লাহ! আমাকে বাঁচাও এই জল্লাদের কাছ থেকে। দিনে দুপুরে এতো অত্যাচার আর সহ্য করা যায় না।
ভাইরে তুই কি এই দুনিয়ায় আর বেস্টু পাইস নাই?
.
🌹
.
– মাম্মিইইইইইইইইইই……………..!
.
বলে চেঁচিয়েই ভয়ে কুঁকয়ে উঠে রাত্রিকে চেপে ধরে ওর পেছনে মুখ লুকালো রুশো ভাইয়া!
.
ভাইয়ার এহেন কান্ডে কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না আমরা। আবার কি হলো? আগের বার নাহয় রাত্রির কথা বলায় ভয় পেয়ে ভাইয়ার কোলে উঠেছিলো রুশো ভাইয়া। কিন্তু এবার ভয় পেয়ে রাত্রিকেই চেপে ধরলো কেনো?
.
– একি কি করছেন? ছাড়ুন আমায়!
.
রুশো ভাইয়া রাত্রির কথায় কিঞ্চিত পরিমাণেও সরলো না। বরং ওকে ধরে রেখেই সামনে আঙুল দেখিয়ে বলে উঠলো,
– ক…ক..ক..ককরোচ…..!
.
রুশো ভাইয়ার দেখানো আঙুল বরাবর তাকিয়ে দেখি একটা আরশোলা হেটে যাচ্ছে। হায় কপাল! আমি আরশোলা দেখে একটু ভয় পেলেও রুশো ভাইয়ার ভয় পাওয়া দেখে নিজেকে বড়ই সাহসী বলে মনে হচ্ছে আমার।
.
অগ্নি ভাইয়া হাসতে হাসতে আরশোলা টাকে সরিয়ে দিয়ে এসে আরোও মজা করে বলে উঠলো,
– রুশো…! এই দেখ আমার হাতের মুঠোয় আরশোলাটা আছে। তোকে হ্যালো, হায় বলার জন্য ছটফট করছে!
.
ওমনি রুশো ভাইয়া “নোওওওও….!!” বলে চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠে রাত্রিকে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।
বর্তমানে রাত্রির অবস্থা একেবারেই দেখার মতো হয়েছে। না পারছে ভাইয়াকে ছাড়াতে আর না পারছে সইতে….!
ব্যাপারটায় কার কি মনে হচ্ছে তা জানি না তবে আমার ব্যাপক মজা লাগছে! হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে বোধহয় আমার!
.
চলবে………………..💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌸
.
ছাদের এক কোণে বসে নাকে বরফ লাগাচ্ছে রুশো ভাইয়া। তার ঠিক পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছি আমি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নাক টাকে টমেটো বানিয়ে ছাড়লো রুশো ভাইয়া। আমি বুঝিনা দেহের এতো গুলো অঙ্গ-প্রতঙ্গ থাকার পরোও রাত্রির চোখে কোনো ভাইয়ার অসহায় নাকটাই পড়ে! হুয়াই?
.
অগ্নি ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া নিজেদের মধ্যে কিসব খুশুর ফুশুর করে যাচ্ছেন। আর একটু পর পর মুখ টিপে হেসে চলেছেন। ওদিকে নিত্য আপু চেয়ারে বসে হাই তুলছে। যা জানান দিচ্ছে আপুর চোখে এক বস্তা ঘুম এসে বাসা বেঁধেছে।
আর রাত্রি তো তখন রুশো ভাইয়ার নাকটাকে টমেটো বানিয়েই ঘরে চলে গেছে। এতোটা রাগ কেনো করলো ও? রুশো ভাইয়া তো আর ইচ্ছে করে করে চেপে ধরে নি ওকে। ভয় ভাঙার পর বেশ কয়বার সরি ও তো বলেছে তাও এতো রাগ! ইশশ কি ঘুষি টাই না মেরেছিলো! ভাবলেই মনে হয় এই বুঝি আমার নাকটাই ফেটে গেল রে।
.
ঘরের দরজা লাগিয়ে বালিশ কোলে নিয়ে এক নাগারে কেঁদে যাচ্ছে রাত্রি। সে এই জন্য কাঁদছে না যে রুশো তাকি জড়িয়ে ধরেছিলো। বরং সে তো কাঁদছে অগ্নির জন্য। ফোঁফাতে ফোঁফাতেই অস্পষ্ট গলায় বলে যাচ্ছে সে,
.
– কেনো অগ্নি ভাইয়া কেনো করলেন এমন? অন্য কেউ আমাকে ধরায় কোথায় ছাড়িয়ে দেবেন তা না আরোও এমন মজা করলেন যেনো ওই ধলা ইন্দুর আরোও আমায় চেপে ধরে। আপনার কিচ্ছু যায় আসলো না? আরোও হাসাহাসি করছিলেন আমায় নিয়ে আপনি। কেনো? আপনি কি বোঝেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। কই আপনি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলেন না, নিত্য আপুর সাথে তো খুব হেসে খেলেই কথা বলেন আপনি। আজ এতো সুন্দর করে সাজলাম, এক নজর দেখলেনও না। কেনো বলুন?
.
এসব বলছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে রাত্রি। সব কষ্ট যেনো একসাথে ভর করছে আজ। চোখের জলগুলোও বাঁধ মানছে না যেনো। অবলিলায় গড়িয়ে পড়ছে
চোখজোড়া থেকে তার।
.
🌹
.
সবার মাঝেই যখন পিনপতন নীরবতা বিরাজমান তখনই সেই নীরবতার পর্দা ভেদ করে নিত্য আপু এক আঙুল উঁচু করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
.
– গাইস, আই হ্যাভ এন আইডিয়া!
.
নিত্য আপুর কথা শুনে সবাই এক্সাইটেড হয়ে যেই না বলে উঠলাম “কি আইডিয়া?” ওমনি মুখে হাত দিয়ে হাই তুলতে তুলতে আপু বলে উঠলো,
.
– জেগে থেকে কোনো লাভ নেই। চলো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই।
.
আপুর এমন আইডিয়া শুনে সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠে বলে উঠলাম “What ???” যা শুনে কানে দু হাত চেপে গোমড়া মুখ করে আবারোও ধপ করে বসে পড়লো নিত্য আপু। ঠোঁট উল্টে আবারোও বলে উঠলো,
.
– তো আর হবে টা কি? এখন ১ টা বেজে ৩০ মিনিট। তাতে নাকি ২ টো পর্যন্ত জেগে হই হুল্লোড় করবো আমরা। তা না সবাই চুপচাপ। কিচ্ছু ভেবে পেলে না কেউই? তার থেকে তো ঘুমোনোই ঢেড় ভালো। নয় কি?
.
নিত্য আপুর এমন কথায় গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো অগ্নি ভাইয়া। বুক ফুলিয়ে একটা দীর্ঘঃশ্বাষ টেনে আমায় উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– অনু যা তো আমার ঘর থেকে গিটারটা নিয়ে আয়। সবার ঘুম ছোটাচ্ছি আমি।
.
ভাইয়া গান গাইবে শুনেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো সবার। ভাইয়ার গানের গলা আসলেই মারাত্মক। একদম ঘায়েল করে দেওয়ার মতো। ভাইয়ার গান শুনলে মনে হয় কান দিয়ে না বরং মন দিয়ে শুনছি। একদম বুকে এসে লাগে!
কিন্তু ভাই আমার যে কিনা স্টেজ ছাড়া গানই করে না সে কিনা আজ সবাইকে লাইভ গিটারে টিউন তুলে গাইবে তাও কোনো জোড়াজুড়ি ছাড়াই! ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে কষ্ট হচ্ছে আমার।
তবুও এক্সাইটমেন্ট যেনো আর ধরে না।
.
এদিকে রুশো ভাইয়া ভাইয়ার গান শুনার উত্তেজনায় হাত উঠিয়ে লাফাতে নিতেই নাকে হাত লেগে বারি খেয়ে “আউউচ” করে উঠে আবারোও নাকে বরফ ঘষতে লেগে পড়লো। যে দেখে আমি ফিক করে হেসে রুশো ভাইয়ার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে হাঁটা ধরলাম ভাইয়ার রুমের দিকে। আসার সময় রাত্রিকে আবারোও মানানোর চেষ্টা করবো। এতক্ষণে রাগ কমার কথা নিশ্চয়।
.
গিটার হাতে রাত্রির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এই নিয়ে কম করে হলেও পাঁচ কি ছ বার ডেকেছি ওকে, যাতে আমাদের সাথে ছাদে যায়। কিন্তু প্রতিবারই ফিল্মের বোরিং ক্যারেকটারদের মতো উত্তর দিয়েছে সে ” তোরা যা। আমাকে একটু একা থাকতে দে”! যা শুনে আমার মাথায় আতশবাজি ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। শেষমেশ রেগে গেলাম আমি। এতোটা রিয়াক্ট করার কোনো মানে হয় নাকি? রাত্রি এবার একটু বেশি বেশি করছে। রেগেমেগে একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলাম,
.
– ঠিক আছে। থাক তুই আসতে হবে না। আজকের দিন টায় ও রেগে বসে কাটিয়ে দে।
ভাইয়া গান গাইবে এখন। আমি গিটার নিয়ে গেলাম। টাটা। কানে তুলো দিয়ে ঘুমো।
.
বলেই হাটা ধরলাম আমি। ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসার অপেক্ষায় রইলাম না আর। যে বুঝতে পারে না তাকে বোঝানো যায়, কিন্তু যে বুঝতেই চায় না তাকে হাজার চেষ্টা করেও কিছু বোঝানো যায় না। তাই আর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে সময় নষ্ট করলাম না আমি। আজ আমার জন্মদিন, এই দিনেও যদি সে আমার সাথে কথা না বলে তাহলে এ কেমন জন্মদিন? পেত্নি একটা! তোর বর যে হবে সে তোকে দিনরাত ২৪ ঘন্টা জালিয়ে মারবে। দেখে নিস।
.
এরকম আরোও হাজারটা বকবক করতে করতে ছাদে গিয়ে পৌঁছোলাম আমি। আমি যেতেই দেখি মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে অলরেডি গোল হয়ে বসে গিয়েছে সবাই। আমি গিয়ে গিটারটা ভাইয়ার হাতে দিয়ে নিত্য আপুর পাশে বসে পড়লাম। আমার বাম দিকে রুশো ভাইয়া। তার পাশে নীবিড় ভাইয়া আর তার পাশে অগ্নি ভাইয়া। আবার অগ্নি ভাইয়ার পাশে নিত্য আপু। এরকম একটা সিকুয়েন্স বজায় রেখে বসেছি সবাই। এবারোও সাদা বিলাই আমার ঠিক সামনে। কি কপাল ! কেনো যে বারবার আমাকে উনার মুখোমুখিই হতে হয় কে জানে!
.
ভাইয়া গিটারে টিউন তুলবে ঠিক সেই সময়েই কারো আগমনের শব্দে সবাই পেছন ফিরে তাকালাম।
রাত্রি ধীর পায়ে গুটিশুটি মেরে এগিয়ে আসছে এদিকেই। আমি ওকে দেখে খুশি হলেও মুখে তা প্রকাশ না করে মুখ ফুলিয়ে রুশো ভাইয়ার দিকে চেপে বসলাম। রুশো ভাইয়া এক পলক রাত্রির দিকে চেয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। রাত্রি আমার আর নিত্য আপুর মাঝে চুপটি করে বসে পড়লো।
.
– কি রাত্রি, এতোক্ষণে তোমার রাগ কমলো!
আর রাগ করে থেকোনা গো পাখি। দেখো রুশো ভাইয়া সেই কখন থেকে মন খারাপ করে রয়েছে। ভাইয়া তো আর ইচ্ছে করে কিছু করেনি তাইনা?
.
রাত্রি মুচকি হেসে বলে উঠলো,
– আমি আর রেগে নেই আপু।
.
নিত্য আপু রাত্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো,
– এইতো গুড গার্ল!
.
বিনিময়ে রাত্রিও হাসলো। আমি রেগে আছি বুঝতে পেরে রাত্রি আমার হাত ধরে করুন সুরে বলে উঠলো,
– সরি অনন্যা! আমি একটু বেশিই রিয়াক্ট করে ফেলেছিলাম। আর এমন হবে না। প্লিজ রাগ করে থাকিস না আর।
.
আমি রাত্রির দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিমাখা চোখে তাকিয়েই পর মুহূর্তে ফিক করে উঠলাম। আমার হাসির সাথে বাকি সবাইও হেসে তাল মেলালো। আপনজনদের প্রতি রাগ জিনিসটা আমার নেই বললেই চলে। যা আছে সেটা শুধুই অভিমান। তাও ক্ষণিকের জন্য। আমার মতে অতিরিক্ত রাগ-অভিমান এসব সম্পর্কে ক্ষতের সৃষ্টি করে। যা আমি মানতে একেবারেই নারাজ। কেনো শুধু শুধু রাগ অভিমান করে জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলো নষ্ট করতে হবে? পরে তো ঠিকই আফসোস করতে হয়। তার থেকে এসব রাগ অভিমান না করে ফুরফুরে মেজাজেই থাকা শ্রেয়।
.
🍂
.
ভাইয়া গান গাইতে চেয়েই যেনো পড়লো মহাবিপদে। কোন গানটা গাইবে এই নিয়ে বড়ই কনফিউজড ভাইয়া। কারণ আমরা এক একেকজন একেক গানের আবদার করে বসছি। একপ্রকার চেঁচামেচিই শুরু করে দিয়েছি বলা যায়। একেকজনের একেক আবদার শুনে ভাইয়া হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। শেষে আর না পেরে “স্টপ” বলে চেঁচিয়ে উঠলো ভাইয়া।
.
– চুপ সবাই চুপ। আমার যেটা পছন্দ সেটাই গাইবো। এটাই ফাইনাল।
.
ভাইয়ার কথায় আমরা সবাই মুখে আঙুল চেপে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। নীবিড় ভাইয়া ভাইয়ার কানে ফিসফিসিয়ে কি জেনো বলে সরে আসলো। ভাইয়াও চোখের পলক ফেলে সম্মতি জানালো। ব্যাপারটা বুঝলাম না। না বুঝেই আপাতত গান শুনায় মনোযোগ দিলাম আমি।
.
– Soch na Jeyada, keya hain irada,
Mujhko bol de…!
Kiu hein khafa tu raj jo dilke
Mujhpe khol de….!
Tu udas to chehere pe,
Mere udasi chayi hein……!

PAGLE Tu…Mera Bhai Hain…!
PAGLE tu…Mera Bhai hain…..(||)
……………………………………………….

.
ভাইয়ার গান শুনে সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো যেনো। তবে সবচেয়ে বেশি খুশি বোধহয় নীবিড় ভাইয়াই হয়েছেন। গানটা স্পেশালি নীবিড় ভাইয়াকে ডেডিকেট করেই গেয়েছে ভাইয়া এটা স্পষ্ট! নীবিড় ভাইয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। ঠোঁটের কোণে সেই প্রশান্তিমাখা হাসি ফুটে উঠেছে উনার।
.
– এই তোকে না বললাম এটা বাদে অন্য কোনো গান গাইতে! শালা, ইমোশনাল করে দিস কেন বলতো…!
(ভাইয়ার কান টেনে ধরে)
.
– আহহ…! লাগছে! ব্যাটা ছাড়। কোথায় থ্যাংকস জানাবি তা না। আর তুই আবার আমাকে শালা বলে ডাকলি? (চোখ ছোট ছোট করে)
.
– ওহ! বললাম নাকি? কি জানি মনে পড়ছে না তো! (মাথা চুলকে)
.
“দাড়া মনে করাচ্ছি” বলেই ভাইয়া নীবিড় ভাইয়ার মাথা চাটি মেরে দিলো।
মার খেয়ে দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়লো। আমরা এতোক্ষণ নীরব দর্শকের মতো ওদের কান্ড কারখানা দেখছিলাম। এবার সবাই এক সাথে হাসা শুরু করে দিলাম।
.
রাত ২ টো বেজে ১২ মিনিট। ঘুমবাবাজি অলরেডি আমার চোখে কলিংবেল বাজিয়ে চলেছে। শুধু একটা আরামদায়ক বিছানা দরকার। ব্যাস তাতেই একটা জব্বর ঘুম দেবো আমি। আমার সাথে সাথে সবারই প্রায় একি অবস্থা! শুধু ভাইয়া আর নিত্য আপু বাদে। ব্যাপারখানা বড়ই অদ্ভুত! একটু আগে নিত্য আপু ঘুমে টুপছিলো। এখন আবার চোখে ঘুমের বিন্দুমাত্র লেশফেশ ও নেই।
আমি আর পারবোনা ঘুম আটকে রাখতে। ওদিকে রুশো ভাইয়া অলরেডি বসে বসেই ঘুমোনো শুরু করে দিয়েছে। রাত্রি আর আমার একি অবস্থা। হঠাৎ নীবিড় ভাইয়া ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠলেন,
.
– অগ্নি, ভাই আমার আমি গেলাম। তুই টেবিল চেয়ার যার যার জায়গায় রেখে শুতে চলে আয়।
.
বলেই চোখ ডলতে ডলতে ভেতরে চলে গেলেন। নীবিড় ভাইয়ার যাওয়া দেখে রুশো ভাইয়াও টলমল করতে করতে ছুট লাগালো। এবার আমার আর রাত্রির যাওয়ার পালা। যেহেতু আর ঘুমের সাথে প্রতিযোগীতায় পারা যাচ্ছেনা।
.
– আমরা গেলাম। আপু, ভাইয়া তোমরাও এসো।
.
বলেই রাত্রিকে টানতে টানতে নিয়ে চলে এলাম। রাত্রির ঘুম চোখে টুপটুপ করছে তাও আসতে চাচ্ছিলো না কেনো আল্লাহ মালুম।
ঘরে এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। আহহ! আই লাভ ইউ ঘুম!
.
– আচ্ছা ভাইয়া, আপনি থাকেন। আমিও গেলাম।
.
বলেই যেই না নিত্য যেতে লাগলো ওমনি পেছন থেকে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো তাকে অগ্নি।
– কি আমি তোমার ভাইয়া লাগি এখন তাইনা?
.
– হুহ! যাও তো। কোথায় ভাবলাম আমাকে নিয়ে একটা রোমান্টিক গান গাইবে তানা আমার সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিলে। আল্লাহ এত্তো সুন্দর ভয়েজ দিয়েছে হবু বউকে দু-চারটে গান উপহার তো দিতে পারো।
.
– ওহহো তাইতো বলি আমার মেমসাহেবের মুখ গোমড়া কেনো! আরে রাগ করছো কেনো বলতো? আমি তো তোমারই। যখন খুশি তখনই গান শুনতে পারবে। আচ্ছা কাল তোমাকে নিয়ে একটা গান গাইবো পার্টিতে ওকে? এবার তো হাসো।
.
নিত্য মুচকি হেসে অগ্নির গালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে ছুট লাগালো ঘরে। আর অগ্নি ওখানেই স্টাচু হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আনমনেই বলে উঠলো সে “এটা কি ছিলো?”
.
🌺
.
আম্মু আব্বু পার্টির এরেঞ্জমেন্টের জন্য ব্যস্ত। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে চলেছে। যদিও খুব বেশি কেউ আসবে না। আন্টি আংকেল, আর আব্বুর কিছু বন্ধুবান্ধব সাথে নীবিড় ভাইয়ার আব্বুও আসবে। আর আমরা ছোটরা তো আছিই।
সকাল সকাল নীবিড় ভাইয়া আর নিত্য আপু বাসায় চলে গেছিলো। আবার দুপুরের দিকে এসে কাজে লেগে পড়েছে। সবাই যার যার কাজেই ব্যস্ত। আরে আমি বার্থডে গার্ল আমাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছেনা। হুহ!
.
বড্ড খিদে পেয়েছে তবে সেটা যেমন তেমন খিদে নয়। টক জাতীয় কিছুর খিদে। লোকজন আসতে আসতে তো সন্ধ্যে হয়ে যাবে। এদিকে লাঞ্চ করেও যেনো পেট ভরে নি আমার। পেট আমার টক-ঝাল করে মরছে। সবাই ব্যস্ত কাকেই বা বলবো এই অদ্ভুতুড়ে খিদের কথা ?
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরলাম কিচেনের দিকে।
.
কিচেনে কেউই নেই। একটা বড় ঝুড়িতে এত্তোগুলো সিদ্ধ ডিম রাখা আছে। আশেপাশে কিছু না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফ্রিজ খুললাম আমি। ফ্রিজের ভেতরে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আমার তেঁতুলের আচারের বয়ামে। আহা! এতোক্ষণ কই ছিলি তুই?😋
.
আচারের বয়াম হাতে নিয়ে কিচেনেই সিনের পাশে বসে আচার খেতে লাগলাম আমি। উফ! কি মজা!
আচার খেতে আমার কোনোকিছুরই হুশ নেই।
হঠাৎ কারো চাপা হাসির আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি রাত্রি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
যা দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলাম,
.
– লাফিং গ্যাস খেয়ে এসেছিস নাকি? পাগলির মতো হাসছিস কেনো?
.
রাত্রি হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,
– বা রে, তো হাসবো না? তুই যে বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে বসে আছিস! না হেসে কি আর পারা যায়?
.
রাত্রির কথা লাফ মেরে দাঁড়িয় রাগি গলায় বলে উঠলাম,
– ওই পেত্নি, কিসব আজেবাজে বকছিস? কোথায় বলা আছে আচার খেলেই প্রেগন্যান্ট হয়? আমার টকের খিদে লেগেছিলো তাই আচার খাচ্ছি!
.
আমার কথায় রাত্রি যেনো চরম অবাক। চোখ বড়বড় করে বলে উঠলো,
– সে কিরে…! তাহলে তো নিঃসন্দেহে প্রেগন্যান্ট! আল্লাহ গো……! কে করলো এটা?
.
আমি ওর কথায় রেগে গিয়ে “তবে রে বলেই” ঝুড়ি থেকে একটা ডিম হাতে নিলাম। রাত্রি বিপদের গন্ধ পেয়েই উলটো দিকে ছুট লাগালো সাথে আমিও। একটু যেতেই হাতে থাকা ডিমটা ছুড়ে মারার অভিনয় করে ভয় দেখাতে যেয়ে হাত ফসকে ডিমটা উড়ে গেলো আমার। আমি আর রাত্রি দুজনেই বিস্ময়ে ডিমের ল্যান্ডিং পয়েন্ট দেখতে ব্যস্ত হওয়া মাত্রই চোখ যেনো বেড়িয়ে এলো দুজনার। শেষমেশ সাদা বিলাইয়ের মাথায়ই ডিমটা গিয়ে সোজা ল্যান্ডিং করে বসলো রে।😑
.
আমি আরোও চরম অবাক হয়ে পড়লাম কারণ ডিম টা সেদ্ধ নয় বরং কাঁচা। যা দেখে মুখে দুহাত চেপে চোখ বড়বড় হয়ে এলো আমার। ডিমের কুসুম উনার মাথায় সূর্যমুখী ফুলের মতো ফুটে উঠেছে। আর সাদা অংশে মাখামাখি উনার গা! উনি রক্তিম চোখে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমার দিকে চেয়ে রাগটাকে একেবারে সঞ্চয় করে নিচ্ছেন।
এমন সময় রুশো ভাইয়া এই পরিস্থিতি দেখে বলে উঠলো,
.
– ওহ মাই আল্লাহ!
নীবিড় ব্রোর মাথায় ফুটলো আন্ডা!
এখন তো ছুটকি খাবে ডান্ডা!😱
.
.
.
চলবে………………💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-২৬♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat) ♥
.
🌺
.
– ভা..ভা…ভাইয়া…! প্লিজ আমাকে যে..যেতে দিন। আমি তো আর ইচ্ছে করে আন্ডা ফুটাইনি! থুক্কু মানে ওই ডিম মারিনি। ওটা তো.. ইয়ে মানে ওই হাত থেকে ফসকে উড়ে গিয়েছিলো আর ল্যান্ড করার মরো ভালো জায়গা খুঁজে না পেয়ে আপনার মাথা টাকেই বেঁছে নিয়েছিলো। আ..আমার কোনো দোষ নেই।
.
এবারও উনি ভাবলেশহীন। আমি উনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সেই কখন থেকে কাকুতিমিনতি করে চলেছি কিন্তু উনি তো উনিই। আমাকে ওখান থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছেন। বর্তমানে আমি আর আন্ডামাখা সাদা বিলাই একই ওয়াশরুমে অবস্থান করছি। উনি দরজা আটকে দিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছেন। এই নিয়ে কয়েকবার মাফ চেয়ে উনার কানে ডুগডুগি বাজিয়েছি কিন্তু উনি যেনো কিছু শুনতেই পারছেন না। আসার সময় রুশো ভাইয়া আর রাত্রিকে মুখে আঙুল চেঁপে থাকতে বলে এসেছেন। ওরাও নীবিড় ভাইয়ার রক্তিম চোখ দেখে ভয়ে কিছু বলার সাহস পায় নি। এদিকে আমি অসহায়! চেঁচামেচি করেও কোনো লাভ হবে না। কেউ এদিকে নেই। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। তাই উনার কাছে মাফ চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, যদিও জানি মাফ তো আজীবনেও করবেন না, তবে আমাকে সাফ করে দিতে পারেন অবশ্য।
.
– ভা..ভাইয়া…..!
আর বলতে পারলাম না। উনি এবার হেলান দেওয়া থেকে উঠে সোজা আমার উপর আক্রমণ করে বসলেন। আমার দুবাহু শক্ত করে দুহাতে ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনি আমায়!
.
– একদম চুপ! আর একটা কথাও বলবে না তুমি। তোমার জন্য আজ আমার এই হাল! ইয়াক…! জাস্ট লুক এট মি! আমার কি অবস্থা করেছো তুমি!
এখন তুমিই এসব পরিষ্কার করবে। শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে সাইডে দাঁড়াও। পানিশমেন্ট আরোও বাকি আছে।
.
বলেই ঝড়না ছেড়ে দিলেন উনি। ঝড়নার পানিগুলোর ছিটে এসে পড়ছে আমার ওপর। আর উনি চোখ বন্ধ করে ঝড়নার নিচে দাঁড়িয়ে ভিজে যাচ্ছেন। একসময় উনার চুল থেকে ডিমের কুসুমটা টুস করে পড়ে গেল। যা দেখে আমি মনে মনে বলে উঠলাম “ওভাবেই তো ভালো লাগছিলো উনাকে। কি সুন্দর সূর্যমুখী ফুলের মতো ফুটেছিলো উনার মাথায়!
তখন কার সিন টা আসলেই জাস্ট দেখার মতো ছিলো। কিভাবে ডিমটা উড়ে গেল! ওর সোজা সাদাবিলাইয়ের মাথায় ল্যান্ড করে বসলো! 😅
ডিম ও কতো বুদ্ধিমান রে! ভাবা যায়? ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো যে কার মাথায় ফুটা উচিৎ!
.
– এই মেয়ে! কি ভাবছো? নাও এখন কাজে লেগে পড়ো কুইক! (চেঁচিয়ে)
.
উনার হাই ভোল্টেজ ওয়ালা ধমক খেয়ে আমি পূনরায় বাস্তবে ফিরে এলাম। কিন্তু উনার ওই ডিমমাখা চুলে হাত দেবো কিভাবে? ইয়ুউউউ!!! এমনিতেই তো উনার কাছে গেলেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। সেখানে উনাকে শ্যাম্পু করিয়ে দেবো আমি? ইম্পসিবল!
তাই মনে মনে একটা ফন্দি আটলাম। জানি না কাজে দেবে কি না। তাও শেষরক্ষার জন্য আটানো ফন্দিটাকে বাস্তবায়ন করা জরুরী! পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মুখটা কাচুমাচু করে ইনোসেন্ট মার্কা হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
.
– ভা…ভাইয়া! আপনি এতো রাগ করছেন কেনো বলুন তো? আপনার তো আরোও আমার কাছে থ্যাংক ফুল থাকা উচিৎ!
.
নীবিড় ভাইয়া এবার চোখ খুললেন। বিস্ময়ে “What?” বলে চেঁচিয়ে উঠলেন উনি। আবারোও আমি মুখটা কাচুমাচু করে বলে উঠলাম,
.
– আসলে কি জানেন ভাইয়া! ডিম বড়ই উপকারী একটা খাদ্যবস্তু! ডিম খেলেই যে শুধু উপকার তা নয়! এটা লাগিয়েই মানু্ষ উপক্রিত হয়। দেখেন না এখন কার মানুষ ডিম খাওয়ার বদলে মাখে। এটা দিয়ে বিভিন্ন ফেইস প্যাক তৈরী করে। আর চুলের কথা বলবেন তো, ডিমের কোনো তুলনাই হয় না। চুল ঘন, সিল্কি, মজবুত করায় ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডিম মেরে তো আরোও আপনার চুল সুন্দর করে দিলাম আমি। এখন বলুন, আমাকে থ্যাংকস দেবেন নাকি শাস্তি!
.
উনি আমার দিকে দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে পর মুহূর্তে হু হা করে হেসে ফেললেন।
আমি বুঝলাম না হাসলেন কেনো উনি? উনার তো উলটে আরো রাগ করবার কথা ছিলো। তাহলে কি সত্যিই আমার ফন্দি কাজে লেগে গেলো?
ভেবেই মনটা খুশি হয়ে গেলো। কিন্তু এই খুশি আর বেশিক্ষণ টিকলো না যখন সাদা বিলাই হাসতে হাসতেই বলে উঠলেন,
.
– সিরিয়াসলি অনন্যা! তুমি আমায় তোমার স্টুপিড লজিক দিয়ে ভোলাতে চাইছো? কত্তো ডাম্ব তুমি! উফফফ…..!
.
বলেই আবারো হাসতে লাগলেন। এবার পড়লাম আমি বড়ই দুশ্চিন্তায়। তার মানে কি সত্যিই আমাকে উনার ডিমমাখা চুলে শ্যাম্পু করিয়ে দিতে হবে? আল্লাহ গো! সামবদি খিল মিহ পিলিজ!😭
.
🌸
.
কিচেনের পাশে চেয়ার টেনে বসে নখ খাচ্ছে রুশো। তার ঠিক সামনে পায়চারী করে যাচ্ছে রাত্রি। তাদের দুজনেরই টেনশনে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। কে জানে আবার কান ধরে উঠবস করায় নাকি অনন্যা কে! রাত্রি হঠাৎ পায়চারী থামিয়ে একবার রুশোর দিকে তাকালো। রুশো এখনোও সমানে নখ কামড়ে যাচ্ছে।
যা দেখে বিরক্তবোধ করলো রাত্রি। তার মতে এসব নখ কামড়ানো বাচ্চাদের কাজ সেখানে এতো বড় একটা ছেলে নখ কামড়াচ্ছে। যদিও রুশোকে দেখতে বাচ্চাদের মতোই লাগে।
.
– এইযে আপনি, সেই কখন থেকে নখ কামড়ে যাচ্ছেন। বন্ধ করুন।
.
রুশো রাত্রির ধমক খেয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। আসলেই তো সেই তখন থেকেই দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে যাচ্ছে সে। টেনশনে হুশই ছিলো না তার। রাত্রির কথায় টের পেলো মাত্র।
.
– আমি কি আর ইচ্ছে করে নখ কামড়াচ্ছি? ওটা তো টেনশনে আপনা আপনিই হয়ে যাচ্ছিলো।
.
রাত্রি বিনিময়ে কিছু বলবে তার আগেই অগ্নি এসে হাজির হলো।
– এই তোরা এখানে কি করছিস? আর নীবিড় কোথায়?
.
অগ্নির প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে রুশোর অনন্যার হাত থেকে নীবিড়ের মাথায় ডিম পড়ার সিন মনে পড়ে গেল। আনমেই বলে উঠলো সে,
– আন্ডা ফুটা!
.
অগ্নি রুশোর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। “What?” বলে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে রুশোর দিকে রাকায় সে। এদিকে রাত্রি আরো ঘামতে শুরু করেছে। রুশো বলে দেবে ভেবে রাত্রি নিজের পা তুলে দিলো রুশোর পায়ের ওপরে। পায়ে ব্যথা অনুভব হওয়ায় “আউচ” করে উঠা মাত্রই রাত্রি চট করে নিজের পা সরিয়ে ফেলে। রাত্রির পায়ের খোঁচা খেয়ে হুশ আসে তার।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে দাঁত কেলিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো সে,
.
– উপসস সরি ব্রো! স্টোরির সিন নিয়ে ভাবছিলাম। নীবিড় ব্রো মেবি ঘরের দিকে গেলো।
.
– নিশ্চয় আবার শাওয়ার নিতে গিয়েছে। বেচারা অনেক খাটাখাটনি করে হাঁপিয়ে গেছে। আচ্ছা রুশো তুই আয় হেল্প লাগবে। আর এইযে তুমি, (রাত্রির দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে) এটা গিয়ে অনন্যাকে দিয়ে এসো।
.
রাত্রি মুগ্ধ চোখে চেয়ে রয়েছে অগ্নির দিকে। অগ্নির কথা তার কান পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছেনা। অগ্নির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চুলগুলোও ভিজে গিয়েছে ঘেমে যাওয়ার কারণে। চিপ বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পরছে। ক্লান্ত মুখখানাতেও কেমন অদ্ভুত স্নিগ্ধতা ছেয়ে রয়েছে যেনো। রাত্রি অগ্নির কথা না শোনায় খানিকটা বিরক্তবোধ করলো অগ্নি। কিছুটা জোড়ে আবারোও বলে উঠলো,
.
– কি হলো ধরো!
.
এবার রাত্রির হুশ এলো কাঁপাকাপা হাতে ব্যাগটা নিলো রাত্রি। রাত্রির মন খারাপ হলো অগ্নির এভাবে কথা বলায়। রুশো ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরে বলে উঠলো,
.
– হেই এটম বোম্ব! আজকে সুন্দর করে সেজো কেমন! ছুটকিকেও সাজিয়ে দিও। কালকের সাজটা কিন্তু অনেক স্টানিং ছিলো।
.
বিনিময়ে রাত্রি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো রুশোর দিকে। তাকিয়েই গটগট করে বড়বড় কদম ফেলে হাটা ধরলো অনন্যার ঘরের দিকে। আর রুশো রাত্রির চলে যাওয়ায় দিকে চেয়ে রইলো।
অগ্নি রুশোর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো,
.
– কিরে ড্রিমার তোর এটম বোম্বের ওপর ফিদা হলি নাকি?
.
বিনিময়ে রুশো হাসলো।
– নোপ ব্রো! জাস্ট ওর রাগী ফেইস টা দেখতে ভালোলাগে। হিহি। 😁
.
অগ্নি হেসে রুশোর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে ডেকোরেশনের কাজে লেগে পড়লো।
.
🌹
.
বিগত ১৫ মিনিট যাবৎ আমি সাদাবিলাইয়ের কেশে শ্যাম্পু ম্যাসাজ করে চলেছি। তবুও ডিমের গন্ধ ছোটাতে পারছিনা আমি। ইশ কি বিদঘুটে গন্ধ। এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে ডিম টা কি পচা ডিম ছিলো নাকি? কিন্তু তা হলে তো ডিম টা হাল্কা হতো! উহু! ডিমের গন্ধ এতো বাজে তা আজ জানলাম।
.
– কি হলো থেমে গেলে কেনো? ভালোমতো ওয়াশ করো! যদি একটুও ছিটেফোঁটা গন্ধ থাকে তাহলে তো বুঝতেই পারছো তোমার কি হাল করবো।
.
সাদাবিলাইয়ের কথায় একটা শুকনো ঢোক গিললাম আমি। কল্পনায় দেখেও নিলাম আমি এক বিরাট হাড়ির ভেতর বসে আছি। আর সাদা বিলাই আমার থেকে প্রায় দশগুণ বড়। উনাকে দেখতে একটা বড়সড় দানবের মতো লাগছে। উনি অট্টহাসি হেসে একেরপর এক ডিম ছুড়ে মারছেন আমার ওপর। আর আমি ডিমের সাগরে ভেসে চলেছি।
কল্পনা দেখেই আতকে উঠলাম আমি। সাথে ভয়ে “নায়ায়ায়ায়ায়া…..” বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
নীবিড় ভাইয়া ধরফড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। আমার দুবাহু ঝাঁকিয়ে বলে উঠলেন,
.
– এই কি হয়েছে চেঁচাচ্ছো কেনো?
.
উনাকে দেখে ভয়টা আরোও বাড়লো বৈ কমলো না। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম আমি।
কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
– পি..প্লিজ! আমার কাছে আসবেন না। আমার ভ..ভয় করছে। ডিম মারবেন না সাদা বিলাই প্লিজ।
.
উনি আচমকা আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে হেঁচকা টান দিয়ে আমাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলেন। আমি এতোক্ষণ অর্ধভেজা অবস্থায় ছিলাম কিন্তু এবার পুরোপুরিই ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে গেলাম। আমি উনার এতোটা কাছে চলে এসেছি যে আর একটু খাটো হলে বোধহয় উনার হৃদস্পন্দন শুনতে পেতাম।
উনি আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই বলতে শুরু করলেন,
.
– কেনো করো এমন হুম? বলিনা আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে! তাও কেনো এতো জ্বালাও আমায়? বোঝোনা কেনো বলোতো? কেনো এতো পোড়াও? নিজেকে যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা আমি।
.
উনার এমন শীতল কন্ঠে পুরো শরীরে শিহরণের স্রোত বয়ে গেল আমার। একদফা কেঁপে উঠলাম আমি। আমার হৃদপিন্ডটা ভীষণ ফাস্ট বিট করা শুরু করে দিয়েছে। গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আমার। উনি আমার কপালে হাল্কা করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই জমে গেলাম আমি। নাম না জানা এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার। কিন্তু আমার তো এতোক্ষণে তো আমার রেগে যাওয়া উচিৎ কিন্তু আমার মধ্যে সেই রাগটা যেনো সৃষ্টিই হচ্ছে না।
.
উনি আমায় হুট করে ছেড়ে দিয়ে ঝড়না বন্ধ করে দিলেন। মুখ উলটো দিকে ঘুরিয়ে আমার দিকে টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
– গা মুছে নিজের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও, ফাস্ট।
.
উনার হুট করে অন্য ফ্লেভারে চলে যাওয়ায় কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। কোনোরকমে গা মুছে ভেজা পায়েই বেরিয়ে এলাম।
আমার রুমে এসে দেখি খাটের ওপরে একটা ব্যাগ রাখা। যার ভেতরে মেবি কোনো ড্রেস রয়েছে। ব্যাগটা নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে নিলাম।
ড্রেসটা আসলেই অসাধারণ। অফ হোয়াইট কালারের লং গাউন। তাতে সাদা পাথরের কাজ রয়েছে। এক কথায় নিজেকে নিজের কাছেই এখন পুতুল পুতুল লাগছে আমার।
.
🍁
.
আমি সিঁড়ি বেয়ে নামছি। আমার দুপাশে রাত্রি আর নিত্য আপু। সাজাবার জন্য গিয়েছিলো। কিন্তু আমি তো ভারী সাজ নেই না। রাত্রি মেকআপ বক্স যেই না খুলতে নিয়েছিলো ওমনি এক লাফ মেরে ২ হাত সরে গিয়েছি আমি। আমার মতে এসব মেকআপ আসলে ফেক আপ। মেকআপ করলে নিজেকে অন্য অন্য লাগে। নিজের আসল চেহারাটাই ঢাকা পড়ে যায়। যেটা একেবারেই অপছন্দ আমার। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছে তাতেই মাশাল্লাহ! নিত্য আপুও বেশি সাজগোজ পছন্দ করে না। তবুও রাত্রিও জোড়াজুড়িতে লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে নিলাম। এটার আমার সাজগোজের সর্বোচ্চ সীমা।
.
নীবিড় ভাইয়াকে দেখেই আজ আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে বসলাম। বুকের ভেতরটা কেমন যেনো ধক করে উঠলো আমার। উনি অফ হোয়াইট শার্ট পরেছেন। উপরের দুটা বাটন খোলা। হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। সাথে কালো প্যান্ট। সিল্কি চুলগুলো চিকচিক করছে। কপালে এসে পড়ছে তাদের খানিকটা। ডার্ক রেড ঠোট গুলোতে সেই ভুবন ভোলানো হাসি….!উফফফফ! এত্তোগুলো মাশাল্লাহ।
আমি নামতেই আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পরমুহূর্তে চোখ নামিয়ে নিলেন।
.
🌺
.
কেক তো কাটা শেষ ইভেন সবাইকে দিয়ে দেওয়াও শেষ তবে আরেকটা কেক কেনো?
ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করতেই কেমন এক রহস্যময়ী হাসি দিলো। খটকা লাগছে এবার। রুশো ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে রয়েছে আমার দিকে। নিত্য আপু মুচকি মুচকি হাসছে। রাত্রি আমার পাশে থাকায় ওর রিয়াকশন চোখে পড়লো না আমার। আমি রাত্রির দিকে মুখ ঘোরাতেই অনুভব করলাম কেউ এদিকে আসছে। বিপদের আশংকা করে চট করে সরে যেতেই রুশো ভাইয়ার ক্রিমে মাখা হাত সোজা গিয়ে পড়লো রাত্রির গালের ওপর। 😱
আর আমি বোম্ব ফুটার আগেই দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললাম। আমার সাথে সাথে বাকি সবাইও তাই। তৃতীয়বার নাক ফাটার দৃশ্য দেখলে আমি বোধহয় হার্ট এটাকই করে বসবো।
.
.
.
.
চলবে…………………💕