প্রেম আমার-৩০+৩১+৩২

0
8708

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩০♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে চেয়ে রয়েছে রাত্রি। তার ঠিক সামনে হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে চলেছে রুশো। রক্তরাঙা চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে সে। থরথর কাঁপছে রুশোর গোলাপি আভায় মোড়ানো ঠোঁটজোড়া। গায়ের ফর্সা রং পাল্টে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। দুপাশের চুলের চিপ বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে।
রোড সাইডের সোডিয়াম বাল্বের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুশোর এমন ভয়ানক রূপ।
.
রাত্রি রুশোর এমন রূপের সাথে পূর্ব পরিচিত নয়। সে তো সব সময় দাঁত কেলিয়ে থাকা হাস্যজ্বল রুশোকে চেনে। কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই রাগতে দেখি নি রুশোকে সে। যেখানে প্রচন্ড রেগে দু-চারটে থাপ্পড়ও খেয়ে ফেলার কথা ছিলো, সেখানেও খুবই ঠান্ডা মেজাজে আবিষ্কার করেছে সে রুশোকে। রুশোর এরকম ভয়ানক চাহনী দেখে রাত্রি শুধু ভয়ই পাচ্ছে না সাথে চরম অবাকও সে। কিন্তু এখন এসবে পাত্তা না দিয়ে রাত্রি হুট করেই রেগে গেলো৷ তার প্রশ্ন,”কেনো রুশো তাকে সরিয়ে আনলো!”
.
— আপনি আমাকে সরিয়ে আনলেন কেনো ওখান থেকে? হ্যা? (অনেকটা জোড়েই বললো রাত্রি)
.
রুশো নিজেকে শান্ত করবার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না সে। কি করেই বা পারবে? রাত্রিকে ওভাবে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কি অনুভূতি হয়েছিলো সে তো শুধু সেই জানে। রুশোর মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তার নিজের প্রাণ বেড়িয়ে যাচ্ছে। প্রাণ বাজি রেখে ছুটে এসে রাত্রিকে বাঁচিয়েছে সে। যদি আর কয়েক সেকেন্ড দেড়ি হতো তখন কি হতো? ভেবেই বারবার মোচড় দিয়ে উঠছে রুশোর হৃদপিন্ড।
রুশোর রাগ জিনিসটা বরাবরই কম। সহজে রাগবার পাত্র নয় সে। তবে বিশেষ কোনো কারণে যদি একবার তার রাগ উঠে যায় তবে তা থামানো খুবই কষ্টসাধ্য। এখনও ঠিক তাই।
রাত্রি রুশোর কোনো জবাব না পেয়ে আবারও চেঁচিয়ে উঠলো,
.
— কি হলো বলুন! কেনো সরিয়ে নিয়ে এলেন আমায়? মরে যেতাম আমি। এই পৃথিবী থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়ে যেতাম। আমি মরতে চাই…..
.
আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না রাত্রির। তার আগেই আবারও রুশোর হাতের ৫ আঙুল গিয়ে পড়লো তার অপর গালে।
.
— সাহস কি করে হয় তোমার? খুব মরার শখ না? কিন্তু তোমার সেই ইচ্ছেটা আমি বেঁচে থাকতে পূরণ হবে না। গট ইট? (চেঁচিয়ে)
.
রুশোর চিৎকারে কেঁপে উঠে রাত্রি। সাথে আকাশের বুক চিরে নামতে থাকে ঝুম বৃষ্টি। আজ আকাশে মেঘ করছিলো অনেকক্ষণ ধরেই।
বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেতে থাকে রুশো আর রাত্রি। তারা দুজনেই নিরদ্বিধায় গায়ে মাখতে থাকে বৃষ্টি কণা গুলো। রাত্রি নিশ্চুপ থেকে যায় এবার। শুধু চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনাজল যা বৃষ্টির সাথে মিশে একাকার হয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার গাল বেয়ে।
.
রুশো কিছুক্ষণ আবারও চুপ থেকে রাগটাকে দমিয়ে নিয়ে রাত্রির গালে আলতো করে হাত রেখে বলতে থাকে,
— খুব লেগেছে না? আই এম সরি রাত্রি। একচুয়ালি আমি নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি ট্রাস্ট মি। প্লিজ তুমি আর মরার কথা বলবানা। আমার সহ্য হয় না।
.
রুশো রাত্রিকে নাম ধরে ডাকায় কিছুটা অবাক হয় রাত্রি। কিন্তু পর মুহূর্তে আবারও রেগে যায়। ঝাঁঝালো
কন্ঠে বলে ওঠে,
.
— আমি মরলে আপনার কি হ্যা? বাঁচতে চাইনা আমি! অগ্নি ভাইয়াকে ভালোবাসি আমি। উনাকে না পেলে আমি বেঁচে থেকে কি করবো?
.
রুশোর বুকটা আবারও ছ্যাঁত করে ওঠে। এতো চেষ্টা করে নিজের রাগ থামালো কিন্তু আবারও রাত্রি তার দমিয়ে থাকা রাগটাকে টেনে বের করে আনলো।
রুশো রাত্রির দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,
.
— আমার কি মানে? আমার অনেক কিছু! আর তুমি শুধু অগ্নি ব্রো কেই ভালোবাসো? নিজের পরিবারকে ভালোবাসো না? নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন এদের কারোর কোনো ভ্যালিউ নেই তোমার কাছে? যারা ১৯ টা বছর নিঃস্বার্থ ভাবে তোমার দেখভাল করে আসলো, তোমাকে ভালোবেসে আসলো তাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই তোমার? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তুমি তো নিশ্চিন্তে মরে যেতে, তোমার পরিবারের ওপর দিয়ে কি যেতো কোনো ধারণা আছে তোমার? মুসলমান হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নাও কিভাবে তুমি? কি ভেবেছো, মরে গেলে সব ল্যাঠা চুকে যাবে? পরকালে শান্তিতে থাকবে তুমি? নেভার!
এখন কি কষ্ট পাচ্ছো তার থেকে হাজার গুণ কষ্ট পেতে হবে তোমাকে।
.
বলেই রাত্রিকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে রুশো। রুশোর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। কিন্তু সে তো নিরুপায়। ছেলেদের যে হাজার কষ্টতেও চোখের জল ফেলা মানায় না। বিশেষ করে রুশোর মতো একজন হেসে খেলে বেড়ানো মানুষকে তো কোনোভাবেই না।
তাই সে মুখ ফিরিয়ে কষ্টগুলো গোপন করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
এদিকে রাত্রির মনে রুশোর বলা প্রত্যেকটা কথা প্রতিধ্বনির মতো বাজতে থাকে। রুশোর বলা প্রত্যেকটা কথা সত্য, যুক্তিসঙ্গত! সে তো এসব আগে ভাবে নি। শুধু অগ্নির কথাই ভেবে গেছে সে। অজান্তেই রুশোর বলা প্রতিটা কথা রাত্রিকে শক্ত হতে সাহায্য করতে থাকে। রাত্রি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘঃশ্বাস টেনে রুশোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
.
— ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া!
.
রুশো এতোক্ষণ উল্টোদিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করে ছিলো। রাত্রির কথা কানে পৌঁছানো মাত্রই চট করে ঘরে দাঁড়ায় সে। খুশিতে চোখ চিকচিক করছে রুশোর। রুশো চায় রাত্রি শক্ত হোক। বাস্তবতা বুঝুক। রুশো রাত্রিকে ভালোবাসলেও, কষ্ট পেলেও চায় শুধু রাত্রি ভালো থাকুক। ভালোবাসলেই যে ভালোবাসার মানুষটিকেও পেতে হবে এর তো কোনো মানে নেই। দূর থেকেও তো ভালোবাসা যায়।
ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকতে পারাটাই তো রুশোর কাছে অনেক। এর থেকে বেশি আর কিছু চায় না সে। কিচ্ছুটি না!
.
— রাত্রি তুমি যেহেতু অগ্নি ব্রো কে লাভ করো, সো এটা অবশ্যই চাইবে সে ভালো থাকুক! নয় কি? (শান্ত গলায়)
.
রাত্রি রুশোর প্রশ্নে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
রাত্রির উত্তর পেয়ে রুশোর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। রুশো আবারও বলতে শুরু করলো,

— তবে তুমি এটা নিশ্চয় জানো, অগ্নি ব্রো আর নিত্য একে অপরকে ভালোবাসে। সেই হিসেবে তোমার খুশি হওয়া উচিৎ। ভালোবাসার মানুষটা যা চায় তা পেলে খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
.
রুশোর কথায় মুখে হাসি ফুটে উঠলো রাত্রির। একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে রাত্রি বলে উঠলো,
— আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া। আমি আসলে তখন নিজের সেন্সে ছিলাম না। ব্রেইন কাজ করছিলো না। সব কিছু কেমন ধোঁয়াশা বলে মনে হচ্ছিলো আমার কাছে।
.
রাত্রি কথার মাঝে রুশো রাত্রিকে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। তাদের পাশ কাটিয়ে দ্রুতবেগে যাওয়া ট্রাকটির টায়ার দ্বারা ছিটকে পরা কাদাজল রাত্রির গায়ে একটুর জন্য লাগতে লাগতে লাগেনি।
ট্রাকটি যেতেই রুশো রাত্রিকে ততক্ষণাত ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,
.
— সরি সরি, তোমাকে না সড়ালে এতোক্ষণে কাদার ভূত হয়ে যেতে। ইউ নো তোমার মতো এটম বোম্ব কাদায় মেখে গেলে একদম পেত্নি পেত্নি লাগবে।
.
রাত্রি রুশোর কথায় চোখ ছোট ছোট করে ভ্রু কুঁচকে রুশোর দিকে তাকানো মাত্রই রুশো দুহাতে নাক চেপে ধরে বলে উঠলো,
— এই না না প্লিজ! এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে নাক লাল হয়ে গিয়েছে। এর থেকে বেশি লাল বানালে সত্যিই ছুটকির বলা টমেটো হয়ে যাবে নাকটা!
.
রাত্রি রুশোর এমন বাচ্চামো দেখে ফিক করে হেসে দেয়। তার হাসি দেখে রুশোও হেসে ফেলে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রাত্রির ওই মুখখানায়। বৃষ্টিতে ভিজে খিলখিল করে হাসতে থাকা প্রেয়সীকে যেনো অপরূপ লাগছে তার কাছে।
রাত্রি রুশোকে বোকার মতো হা করে থাকতে দেখে বললো “চলুন এবার যাওয়া যাক! ঠান্ডা লেগে যাবে তো!”
রুশোও মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে রাত্রির পাশে হাটা ধরলো।
.
🍁
.
— আম্মু কি হলো বলোতো? সেই কখন বেড়িছে ওরা। বৃষ্টিও তো হচ্ছে। ফোনেও পাচ্ছিনা কাউকে। রাত্রি তো ফোন আমার বিছানাতেই ফেলে গেছে।

— রুশো গেছে তো! চিন্তা করিস না ড্রাইভারকেও তো পাঠিয়েছি খুঁজতে। ঠিক চলে আসবে।
.
আমাদের কথার মাঝখানেই আগমন ঘটে রাত্রি আর রুশো ভাইয়ার। আমরা সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। দুজনেই ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। টপটপ করে পানি পড়ছে দুজনের শরীর বেয়ে।
.
আম্মু দৌড়ে দুটো টাওয়াল এনে দুজনের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— কোথায় গিয়েছিলিস তোরা? হিসেব আছে কোনো সবাই কতো টেনশনে ছিলাম?
.
রুশো ভাইয়া টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো,
— আসলে মনি, ওকে একটু রাগিয়ে দিয়েছিলাম। তাই রাগ করে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। সরি আর এমন হবে না।
.
— রুশো, কবে সিরিয়াস হবি তুই? এমন মজা কেউ করে? তোদের নিয়ে আমি আর পারিনা। তোর মা কে কমপ্লেইন দিতে হবে।
.
রুশো ভাইয়া আম্মুকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে গেলো কারণ ভাইয়ার গা ভেজা। অসহায় ভাবে ঠোঁট উলটে বলে উঠলো,
— সরি মনি আর হবে না। প্লিজ এটাই লাস্ট টাইম।
.
আম্মু আর কিছু বললো না, ড্রাউভার আংকেল কে ফোন করে ঘুরে আসতে বললো। সাথে রুশো ভাইয়াকে অগ্নি ভাইয়াকে ঘরে পাঠিয়ে দিলো, আর আমায় বললো রাত্রিকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে চেঞ্জ করিয়ে আনতে।
আমিও আর কথা বাড়ালাম না। রাত্রিকে নিয়ে ঘরে চলে এলাম। সবাই নিশ্চিত হলেও আমার মনে কেমন একটা খটকা থেকেই গেলো। এতো ছোট কারণে তো আর জল এতোদূর গড়াবেনা। রাত্রির এক্সাক্টলি ঠিক কি হয়েছিলো তা আমাকে জানতে হবে। আজ না হোক কাল জানতেই হবে।
.
🍂
.
রাত্রিকে আজ থেকে যেতে বললাম। আন্টিকে ফোন করে অনেক তেল লাগিয়ে তবে কাজ হলো। বৃষ্টির দোহাই দেওয়ার পরই থাকতে দিতে রাজি হলেন আন্টি।
নীবিড় ভাইয়ারা একটু পরই চলে যাবেন। আম্মু থেকে যেতে বলেছিলো কিন্তু আংকেলের খুব সকালে অফিস আছে সাথে অফিসের কাজও আছে যা রাতে বাসায় গিয়ে করবেন।
আপাতত আমার যেটা কাজ তা হলাও সাদা বিলাইয়ের সাদা শার্টটা উনাকে ফেরত দিয়ে দেওয়া। জুসটা অবশ্য খুব ভালো করেই ওয়াশ করে দিয়েছি কিন্তু ভেজা শার্ট তো আর দিতে পারবোনা। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে আমার হেয়ার ড্রায়ার বের করলাম। হেয়ার ড্রায়ার অন করে চুল না শুকিয়ে শার্ট শুকোতে লাগলাম।😅
.
শার্ট প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে অনেকটা। তাই তাড়াতাড়ি করে ভাঁজ করেই ছুট লাগালাম উনার কাছে। কিন্তু কপাল আমার। গেট খুলে ওতো না দেখে হন্তদন্ত হয়ে বেড়োতে গিয়ে ঠাস করে উনার সাথেই আবার ধাক্কা খেয়ে বসলাম। আর আমার ঠোঁট গিয়ে ডিরেক্ট বসে গেলো উনার গলায়!
তাড়াতাড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুখে ইনোসেন্ট মার্কা হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
.
— মেইনে কুছ নেহি কিয়া ভাইয়া!
.
উনিও আমার চেয়ে কম কিসে আমার দিকে তাকিয়ে বাম পাশের ভ্রু উঁচু করে বলে উঠলেন,
— লেকিন আব ম্যায় বহত কুছ কারুংগা!
.
আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে উনার গলার দিকে তাকালাম। কিন্তু যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ বোধহয় কোটর থেকে বেড়িয়ে হাতে চলে আসবে।
উনার গলায় আমার ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগ! হায় আল্লাহ কি ভেবে যে আজ লিপস্টিক দিতে গিয়েছিলাম! উনি তো দেখলে আমাকে আর আস্ত রাখবেন না। ভয়ে তো এখন বলতেও পারবোনা। তার থেকে ভালো পাতলি গালি সে নিকাল যাও!
যেই ভাবা সেই কাজ, উনার হাতে শার্টটা ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম আমি।
যা হবে হোক। আমার সামনে না হলেই ভালো!
হেই সামবদি খিল মিহ প্লিজ!😣
.
অনন্যার ওভাবে চোরের মতো পালিয়ে যাওয়া দেখে হেসে ফেলে নীবিড়। আনমনেই বলে ওঠে সে, “পাগলী একটা!”
.
চলবে…………………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩১♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🍂
.
— ভাইইইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া………..!😱
.
নিত্যর এক চিল্লানিতে ধড়ফড়িয়ে উঠে নীবিড়। হঠাৎ এমন চিৎকারের কোনো মানে না খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে সে,
.
— এই মেয়ে চেঁচাচ্ছিস কেনো? উফফফ আমার কানটা গেল…..! (কান চেপে ধরে)
.
নিত্য নীবিড়ের গলার লিপস্টিকের দাগটা খুব সূক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে উঠলো,
— চেঁচাচ্ছি কি আর সাধে? তলে তলে এতোকিছু করে বেড়োচ্ছিস আর আমরা কিচ্ছু জানলাম না? আর আমরা লুকানো মাত্রই বকে দিলি?
.
নীবিড় নিত্য কথার কোনো আগা-মাথাই বুঝে উঠতে পারছে না। বোকার মতো চেয়ে রয়েছে সে। অনেক চেষ্টা করেও যখন কিছুই বুঝতে পারলো না, তখন আবারও ধমকে উঠলো নীবিড়,
.
— নিত্য কি আজেবাজে বকছিস বলতো? অগ্নির প্রেমে পড়ে পুরো মাথাটাই গিয়েছে তোর নাকি?
.
নিত্য মুখ ফুলিয়ে আঙুলের ইশারায় নীবিড়ের গলায় দেখিয়ে বলে উঠলো,
— কার মাথা গেছে আর কার আছে তা আয়নায় গিয়ে দেখে নে।
.
এবার নীবিড় কিছুটা ভরকে যায়। গলায় আবার কি হলো যাতে নিত্য এসব বলছে তা দেখতে বসা থেকে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নীবিড়। আয়নার খুব কাছে গিয়ে গলার দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকাতেই জোড়ে জোড়ে কাশতে লাগলো সে।
নীবিড়কে এভাবে কাশতে দেখে নিত্য কোমড়ে হাত দিয়ে ডিডেকটিভদের মতো প্রশ্ন করতে লাগলো,
.
— কিইই মি. সাদমান শাহরিয়ার নীবিড়? কবে থেকে চলছে এসব হুম…? আড়ালে আড়ালে এতোকিছু? কিসমিস পর্যন্ত চলে গিয়েছেন! বাহ!
.
নিত্যর কথায় চোখ বড়বড় করে তাকায় নীবিড়। অনেকটা থতমত খেয়ে আমতাআমতা করে বলে ওঠে,
— দেখ নিত্য! তুই যা ভাবছিস আসলে তা না! লেট মি এক্সপ্লেইন!
.
— রাখ তোর এক্সপ্লেইন! আগে বল ভাবী কে?
.
নীবিড়ের এবার রাগ উঠে গেলো৷ ওকে কিছু বলার সুযোগটাই যে দিচ্ছে না নিত্য।
তাই আগের ফ্লেবারে কনভার্ট হয়ে আবারও ধমকে উঠলো,
.
— ওই থাপ্পড় চিনিস? এক থাপ্পড়ে সব কটা দাঁত ফেলায় দিবো। যেটা জানিস না সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করিস না! এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। নাথিং এলস। তখন অন্যনার সাথে ধাক্কা লেগে হয়ে গিয়েছিলো…আরকি!
.
নিত্য এবার আসল ব্যাপারটা বুঝে আনমনেই বলে উঠলো,
— আহা! কি রোমান্টিক এক্সিডেন্ট।
.
নীবিড় এবার রেগেমেগে বোম্ব হয়ে “তবে রে” বলে উঠতে নিলেই নিত্য ঝড়ের বেগে পালিয়ে নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল।
নীবিড় নিত্যর পালানো দেখে হাসতে হাসতে আবারও আয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অনন্যার লিপস্টিক লেগে থাকা জায়গায় আলতো করে হাত বুলিয়ে, সেই হাতটা নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে উঠলো!
.
🍁
.
ক্যাম্পাসে বটগাছটার নিচে গাল ফুলিয়ে বসে আছি আমি। সকাল বেলা রাত্রি নিজের বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ বাদেই ফোন করে জানায় তার নাকি জ্বর এসে গেছে। অবশ্য তা অস্বাভাবিক কিছুই না। এতোক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর বাধানো টা নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যাটা তো হচ্ছে আমার। এভাবে একা একা কি করবো আমি? ভীষণ বোরিং লাগছে আমার।
আর কিছু করারও তো নেই ভেবেই পাশে থাকা চিপসের প্যাকেট খুলে আনমনেই আস্তে আস্তে চিপস চিবুতে লাগলাম।
.
আমার খাওয়ার মাঝে আজ আবারও বাঁধ সাজলো সেই সিফাত নামের ছেলেটি! মেজাজটা নিমিষেই আরোও বিগড়ে গেল আমার। মুখে থাকা চিপসটা চিবিয়ে খেয়ে পানির পট থেকে পানি খেয়ে নিলাম। উদ্দেশ্য শুকনো গলায় ঝাড়ি মারলে ঝাড়িটাও শুকনো শুকনো নিঃষ্প্রাণ বলে মনে হবে।
তাই গলা ভিজিয়ে নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে বলে উঠলাম,
.
— কি চাই?
.
— আপনাকে..!
.
— হোয়াট???
.
— না মানে আপু, আপনাকে সেদিনের জন্য সরি বলতে এসেছিলাম। আসলে ভাইকে দেখে সেদিন ভয়ে মিথ্যে বলে ফেলেছিলাম। মাফ করে দিয়েন আপু। সরি এগেইন।
.
ভেবেছিলাম ভাব নিয়ে দু-চারটে ধমক দিয়ে ছেড়ে দেবো। কিন্তু বেচারার অসহায় ফেইস দেখে ধমকটা পেট থেকে মুখে আসার পূর্বেই ভ্যানিশ হয়ে গেল। আম্মু সবসময় বলতো কেউ কোনো ভুল করে যদি ক্ষমা চায় তবে তাকে মাফ করে দেওয়া উচিত। আম্মুর সেখানো গুণে গুণান্বিত হয়ে আমিও মাফ করে দেবো ভেবে নিলাম। তবে একটু ভাব তো নেওয়াই যায়।
ভেবেই পায়ের ওপর পা উঠিয়ে ড্যাশিং মুড নিয়ে বলে উঠলাম,
.
— ঠিক আছে ঠিক আছে। মাফ করে দিলাম যান। নেক্সট টাইম আর যেনো এমন ভুল না হয়।
.
নিমিষেই ছেলেটির চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠলো।
“আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!” বলেই লাফাতে লাফাতে চলে গেলো সিফাত।
বুঝলাম না এতো খুশি হওয়ার কি আছে! কে জানে বাবা!
ছেলেটির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আবারও চিপস খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম!
.
হুট করে কেউ ঝড়ের গতিতে এসে পাশে বসে যাওয়ায় হকচকিয়ে উঠলাম আমি। ভয়ে এক লাফ মেরে উঠে যেতে নিলেই আমার চোখ যায় হুট করে আসা আগুন্তকের দিকে। উনাকে দেখেই আবারও আমার বুকের ভেতর কেউ ড্রাম বাজাতে শুরু করে দিলো যেনো। কেমন যেনো ধুকপুক ধুকপুক করে উঠছে বুকের বাম পাশটা।
ভয়টা আরোও বেরে গেলো যখন কালকের ঘটনা মনে পড়লো, আচ্ছা উনি আদৌ খেয়াল করেছিলেন? নাকি না দেখেই শাওয়ার নিয়ে ফেলেছেন!
.
আমি যখন আনমনেই এসব কথা ভাবতে ব্যস্ত উনি তার মধ্যে বেশ কয়েকবার ডেকেছেন আমায়। তবে আমার ধ্যান অন্য দিকে থাকায় উনার কোনো ডাকই কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি আমার। আমি ভাবনার জগতে ভাসতে ভাসতে হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সাথেসাথেই হুশ ফিরে পেলাম আমি। নীবিড় ভাইয়া আমাকে টানতে টানতে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে গেলেন। আমি হাত ছাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না। উনি আমায় রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলেন।
.
এদিকে আমার বুকের সিস্টোল-ডায়াস্টোল রেট বেড়েই চলেছে। উনি আমার কাছে এসে দুদিকের চুল কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে ভালো করে আমার কান দেখে নিলেন। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। হঠাৎ কান দেখতে ব্যস্ত কেনো হলেন উনি?
উনি এবার আমার থেকে কিছুটা ডিস্টান্স বজায় রেখে বলে উঠলেন,
.
— আহহা! কানে তো তুলো গুঁজা নেই। তাহলে আমার ডাক শুনতে পেলে না কেনো হুম?
.
উনার এতো শীতল কন্ঠ আমার ঠিক সুবিধের ঠেঁকছে না। উনার রাগী গলা শুনেই আমি অভ্যস্ত। হুট হাট উনার এমন পাল্টি খাওয়া আমি ঠিক মেনে নিতে পারিনা। উনার পাল্টি খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমার ঠিক কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত তাও আমি বুঝতে পারিনা।
.
উনি আমার নীরবতা দেখে আস্তে আস্তে আমার কাছে এগোতে লাগলেন। উনার আমার দিকে আগানো দেখে আমি ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে পেছাতে লাগলাম। একসময় পেছাতে পেছাতে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো। সাথে আমি আরোও একরাশ ভয়ে আঁতকে উঠলাম।
উনি আমার একদম কাছে এসে দুহাতে কোমড় জড়িয়ে উনার কাছে টেনে নিলেন। আমি ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। আমার শ্বাসঃপ্রশ্বাস আরোও দ্রুত চলতে লাগলো। উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
.
— এখন ভয় পাচ্ছো কেনো হুম? আমাকে পোড়ানোর আগে ভয় করে নি তোমার?
.
উনার কথার কোনো অর্থ খুঁজে পেলাম না আমি। বোকার মতো চেয়ে রইলাম শুধু উনার দিকে, যার অর্থ “কি বলছেন এসব! আমি তো বুঝতে পারছিনা!” উনি আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে মুচকি হেসে ফুউউ দিয়ে আমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলেন। সাথেসাথেই কেঁপে উঠলাম আমি। উনার শার্টের কলার খাঁমচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরোও কাছে টেনে নিলেন নিজের। উনার ঘনঘন নিঃশ্বাস সোজা এসে পড়ছে আমার কপালে। এদিকে আমি ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি।
.
উনি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার গলায় চেয়ে থেকে হুট করেই আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালেন। সাথে-সাথেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।
আমার গলায় ঠোঁট ছুঁইয়েই আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান উনি। পকেটে দুহাত গুঁজে ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠেন,
.
– শোধবোধ!

যাই হোক। ক্লাস শেষ হলে অপেক্ষা করো।
.
বলেই দরজা খুলে শিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন নিজ গন্তব্যে। আর এদিকে আমি হ্যাবলার মতো চেয়ে রইলাম উনার যাওয়ার দিকে। উনার ভাবখানা এমন যেনো এতোক্ষণ যা যা ঘটে গেলো তার কিছুই ঘটে নি।কিচ্ছুটি না।
.
চলবে………………..💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৩২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
আমি যেনো অনুভূতি শুণ্য হয়ে গিয়েছি। এতোক্ষণে গাল বেয়ে পড়তে থাকা নোনাজল গুলোও শুকিয়ে গিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার ঠিক কেমন আচরণ করা উচিত তা জানা নেই আমার। ভাবতেই শিউরে উঠছি, যে কিছুক্ষণ আগেই আমি কুমারী ছিলাম আর এখন কারো বিবাহিত স্ত্রী! এখন থেকে আমার নামের সামনে মিস নয় মিসেস বসবে। একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন থাকে। থাকে কতো কল্পনা জল্পনা! অথচ আমি সেই কল্পনা করবার সময়টুকুও পেলাম না। হায় রে নিয়তি! মানুষকে কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলে তা বলা মুশকিল।
.
আমার সামনে থাকা নিস্তব্ধতায় ঘেরা ব্যক্তিটি মাথা নিচু করে স্রেফ বসেই রয়েছেন। উনাকেও ভাবলেশহীনই লাগছে। নিজের জায়গা থেকে বিন্দুমাত্র নড়ছেন না উনি। ঠাঁয় বসে আছেন একইভাবে।
.
— কি হয়ে গেলো এটা! কি করবো এখন আমরা? মানলাম এটা এক্সিডেন্ট বাট এটা বিয়ে। কোনো ছেলেখেলা না। এটা কোনো শারীরিক ইঞ্জুরিও না যে অপারেশন করে ঠিক করানো যাবে। জাস্ট ইমাজিন রুশো! এটা বিয়ে…..!
.
— কিন্তু এরকম ভাবে বিয়ে কি করে মেনে নেওয়া যেতে পারে ব্রো? বাসায় কি বলবো আমরা? যে এক্সিডেন্টলি বিয়ে হয়ে গিয়েছে? মনি কে কি জবাব দেবো? তুমি জানো মনির হাই প্রেশার! এসব শুনলে সামলাতে পারবে না মনি নিজেকে।
.
রুশোর কথার আর কোনো জবাব দিতে পারলো না অগ্নি। সবার মাঝেই পূণরায় নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল।
.
🍂
#Flashback
.
ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ। আজ ইফতেখার স্যার আসেন নি তাই লাস্ট ক্লাস আর হয়নি। ছেড়ে দিয়েছে ফার্স্ট ইয়ার। কিন্তু সাদা বিলাই তো অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। কি করবো আমি? আজ যা করলেন তাতে উনার সামনে দাঁড়াতেও তো পারবো না। ভিষণ টেনশনে পড়ে গেলাম যেনো। ওরে রাত্রি তোর নাম রাত কে ঘিরে, যা করবি রাতে করবি। জ্বর বাধাবি রাতেই বাধাবি। দিনে কেনো জ্বর বাধলি রে….! এসব বকবক করছি আর নিজের কপাল নিজে চাপড়াচ্ছি। রুশো ভাইয়ার তো আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সেটা আরোও ৪৫ মিনিট পর। ভাইয়া আংকেলের বিজনেসে জয়েন করেছে। কাজ কর্ম তো কম থাকে না। এতো জলদি আসতে বলতেও ইচ্ছে করছেনা।

হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো রাত্রি! হ্যা রাত্রিই তো। ওর বাড়িতেই নাহয় যাই। আমাদের বাসায় যাওয়ার অনেকটা আগেই পড়ে ওদের বাড়ি। ভার্সিটি থেকে এক কথায় কাছেই। রিকশায় গেলে ও আগে নামে তার খানিক বাদে নামি আমি।
রাত্রির বাসায় গেলে ওকে দেখেও আসা যাবে। সাথে আজকের নোটস ও দিয়ে আসা যাবে। ক্লাস ছুটির সময় নাহয় রুশো ভাইয়ার সাথে চলে যাওয়া যাবে।
সেই ভেবেই ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রোডে রিকশার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
.
আমার অপেক্ষা করার মুহূর্তেই হুট করে কোথা থেকে একটা কালো গাড়ি এসে আমার ঠিক পাশ বরাবর ঘেঁষে দাঁড়ায়। হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনায় আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।
এভাবে কারোও সামনে গাড়ির ব্রেক কষে কেউ? আমি রোডের আরো একটু কাছে থাকলে তো লেগে যেতো আমার। ভেতরে কোনো গাধা ড্রাইভার আছে দেখতে গাড়ির গ্লাসে নক করলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে পেছনের গেট খুলে দুজন মুখশ পরিহিত কালো পোষাকে মোড়ানো লোক বের হলো। যাদের দেখে আমার মনে কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করতে থাকলো। আমি এক পা ফেলে উল্টো দিকে ঘুরবো তার আগেই তারা আমার মুখের ওপর কিছু একটা দিয়ে স্প্রে করে দিলো। না চাইতেই শ্বাস নিয়ে ফেলায় স্প্রের ইফেক্ট পড়তে শুরু করলো আমার শরীরে। পা দুটো যেনো আসার হয়ে আসছে আমার। শক্তি হারিয়ে ফেলছি ক্রমাগত। সাথে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলাম আমি। বুঝতে পারছি আমি ধীরেধীরে জ্ঞান হারাচ্ছি। তবে জ্ঞান সম্পূর্ণ রূপে চলে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে এটুকু বুঝতে পারছি যে তারা আমায় ধরে গাড়ির ভেতরে নিয়ে বসাচ্ছে। তারপর আর কি হয়েছে কিচ্ছু মনে নেই আমার।
.
🌹
.
মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ নীবিড়ের চোখ যায় বাইরের দিকে। জানালা দিয়ে ফার্স্ট ইয়ারের কিছু স্টুডেন্ট দের দেখতে পেয়ে আবারও ক্লাসে মনোযোগ দেয় নীবিড়। কিছুক্ষণ বাদে হুট করেই তার মনে পড়ে এখন তো ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস চলার কথা। এরা বাইরে কি করছে? এনিহাও ছুটি দিয়ে দেয় নি তো? অনন্যা কোথায় তাহলে? ও কি বাইরে অপেক্ষা করছে?
এসব ভেবেই অগ্নিকে ক্লাস করতে বলে স্যারের পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে যায় নীবিড়। ক্যাম্পাসের এদিক ওদিক চোখ বুলিয়েও কোথাও অনন্যাকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে সে। তার মানে কি অনন্যা একা বাসায় চলে গেলো?
নীবিড়দের আরোও দুটো ক্লাস বাকি ছিলো। ভেবেছিলো অনন্যাকে এগিয়ে দিয়ে ক্লাসে চলে আসবে কিন্তু তা তো আর হলো না। ভেবেই মুখ কালো করে ফিরে আসছিলো তার আগেই রনি নামের একটা ছেলে দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে তার সামনে থামে।
.
— ভাই ভাই, অনেক বড়ো ঝামেলা হয়ে গেছে।
.
ঝামেলার কথা শুনেই বুকে অজানা ভয় এসে জমা হলো নীবিড়ের। বিপদের আশংকায় প্রথমেই অনন্যার কথা মাথায় আসে তার। চোখেমুখে অস্থিরতার ছাঁপ ফেলে জিজ্ঞেস করে সে,
.
— কি বলছিস? কিসের ঝামেলা!
.
ছেলেটা আরোও একটু দম নিয়ে এক নাগারে বলতে শুরু করে,
— আমি বাইরে নোটের কয়েকটা কপি আনাইতে গিয়েছিলাম। তখন দূর থেকে দেখি অনন্যা ভাবী রোডের সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। তখন হুট করেই একটা কালো গাড়ি থেকে দুজন নেমে আপুকে অজ্ঞান করে ধরে নিয়ে চলে গেছে। আমি দৌড়ে আটকানোর জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই ওরা ভাবীকে নিয়ে চলে গেছে। ওই যে পূর্ব দিকের রোড দিয়ে গেছে ওরা।
.
নীবিড় আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। হন্তদন্ত হয়ে ছুট লাগালো গ্যারেজের দিকে। ছুটতে ছুটতেই ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
— অগ্নিকে বলে লোকেশন ট্রাক করে পুরো গ্যাং নিয়ে আয়। জলদি…!
.
বলেই অদৃশ্য হয়ে গেলো নীবিড়। অনন্যার ফোনের লোকেশন ট্রাক করে বাইক নিয়ে ছুট লাগালো সেই পথে। ওদিকে অগ্নিদের ক্লাসে স্যার থাকায় রনি বলতেও পারছেনা৷ স্যার খানিক বাদে বেড়িয়ে যাওয়া মাত্রই রনি ক্লাসে ঢুকে অগ্নিকে সবটা খুলে বলে। সবটা শুনে অগ্নির পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে যায়। তাড়াহুড়ো করে ওদের ১৫ জনের পুরো গ্যাং নিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে পরে অগ্নিরা।
গেট থেকে বের হবে সেই সময় রুশোর গাড়ি এসে থামে অগ্নির সামনে। অগ্নিকে দেখে রুশো মুখে হাসির রেশ টেনে বের হয়ে কিছু বলবে তার আগেই অগ্নির সাথে থাকা 3 জন ছেলে অগ্নির ইশারায় এসে রুশোর গাড়িতে বসে পড়ে। অগ্নি শুধু রুশোকে এটুকু বলে “অনু ইজ ইন ডেঞ্জার রুশো!” বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে “ফলো মি” বলে ছুট লাগায়। অগ্নির পেছনে ছুট লাগায় আরোও ৫ টা বাইক সাথে রুশোর গাড়িও।
.
🌸
.
নীবিড় ফুল স্পিডে বাইক চালিয়ে পৌঁছে যায় অনন্যার ফোনের লোকেশন অনুযায়ী জায়গাটায়। জায়গাটা শহর থেকে একটু দূরে এবং ভেতরে। সারি সারি টিন সেট এর বাড়ি। অদ্ভুত রকম ভাবে সবগুলো বাড়িই একই রকম। নীবিড় খুবই সাবধানে প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ি সার্চ করা শুরু করে দিলো কিন্তু কোনো বাড়িতেই অনন্যাকে পেলো না। আর মাত্র দুটো বাড়ি বাকি। এই দুটোই শেষ আশা। যেকোনো একটায় অনন্যাকে পাবেই বলে নীবিড়ের দৃঢ় বিশ্বাস।

.
— পি..প্লিজ…আমার কাছে আসবেন না। কে আপনারা? কেনো এনেছেন আমায় এখানে? প্লিজ আমায় যেতে দিন। বাসায় আম্মু আব্বু টেনশন করছে।
.
আমার কাকুতিমিনতি শুনে ভিলেনের মতো হাসতে থাকে দুজন মুখশ পরিহিত মানব। এর মধ্যে একজন অপরজনকে বাইরে গিয়ে পাহারা দিতে ইশারা করায় লোকটি বাইরে বেড়িয়ে যায়। যে ইশারা করেছিলো সে দরজার কাছে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। যার ফলে ভয়টা আরোও তীব্র ভাবে গ্রাস করতে থাকে আমায়।
এতোক্ষণ আমি জ্ঞানহীন ছিলাম। তাই মাথাটা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছে।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে এই আধাপাকা ঘরে আবিষ্কার করলাম। হয়তো লোক দুটো আমার জ্ঞান ফেরারই অপেক্ষা করছিলো বলে এতোক্ষণ কিছুই করে নি। কিন্তু এখন তো জ্ঞান ফিরেছে আমার। কি করবে এই লোকটা আমার সাথে? আমি তো শক্তিতে পারবো না।

লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে নিজের মুখশ এক টান মেরে খুলে ফেলে দিলো। যা দেখে আমার চোখ নিমিষেই বড়বড় হয়ে গেলো। কারণ ইনি আর কেউ নন, ইনি তো সেই সিফাত নামের ছেলেটা। যে আজ সকালে আমার থেকে ক্ষমা পাবার জন্য পায়ে পড়তে পর্যন্ত প্রস্তুত ছিলো সেই কি না আমায় কিডন্যাপ করলো?
.
— আপনি…!

— হুম আমি! কেনো চিনতে পারছো না জানেমান? সমস্যা নেই। বিয়েটা হয়ে যাক তারপর ঠিকই চিনতে পারবে।

— মা..মা…মানে? কিসব বলছেন আপনি কার বিয়ে? কিসের বিয়ে?

— ওহ বুঝতে পারছো না সোনা? ওয়েট বুঝাচ্ছি৷ জাস্ট ৫ মিনিট ওয়েট করো এরপর তুমি আমার বউ হবে আর বউ হলে তারপর কি হবে এটা তো জানো?
বাসর করবো আমরা দুজনে মিলে। উফফফ আমার তো আর তরই সইছে না। (জ্বিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে)
.
ছেলেটার কথায় ঘিনঘিন করে উঠলো আমার পুরো শরীর! ছিঃ মানুষ এতোটাও খারাপ হয়? নাহ! প্রাণ থাকতে আমি কিছুতেই এই শয়তানকে বিয়ে করবো না। তাই ঝাঁঝালো কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
.
— তুই যা ইচ্ছা কর প্রাণ থাকতে আমি তোর মতো কাপুরুষ কে বিয়ে করবো না।
.
ছেলেটার যেনো তাতে কোনো রিয়াকশই হলো না। ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এসে আমার ওড়নাটা এক টান মেরে ফেলে দিলো। আমি সাথেসাথেই দু হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলাম। ছেলেটা আবারও আমার গায়ে টাচ করার জন্য হাত বাড়ানো মাত্রই বিকট এক শব্দে কাঠের দরজাটা ভেঙ্গে আমাদের সামনে পড়ে গেলো। দরজার সাথে সাথে রক্তেমাখা মুখশধারী মানুষটাও ছিটকে পড়ে গেল।
মাথা উঁচু করে ভাঙ্গা দরজার ফাঁকে যাকে দেখতে পেলাম তাকে দেখেই আমার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
.
নীবিড় ভাইয়া হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন সিফাতের দিকে। কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে উনার। শার্টের সবকটা বোতাম খোলা। ভেতরে হোয়াই কালারের একটা টি-শার্ট পড়া। সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তাতেও যেনো অদ্ভুত রকমের ভয়ংকর সুন্দর লাগছে উনাকে।
নীবিড় ভাইয়াকে এই মুহূর্তে এখানে দেখে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম সিফাতের। তার এখন একমাত্র ধান্দা এখান থেকে পালানোর কিন্তু সে তো জানে সাদমান শাহরিয়ার নীবিড়ের থেকে পালানো শুধু মুশকিলই নয় অসম্ভব ও।
.
নীবিড় ভাইয়া চোখমুখ শক্ত করে ঘরে ঢুকেই সিফাতের বুক বরাবর লাথি মেরে তাকে খাটের ওপর ফেলে দিলো। সাথেসাথে মড়মড় করে খাটটা ভেঙ্গে গেলো। সিফাত ব্যথায় এক প্রকান্ড চিৎকার করে উঠলো।
নীবিড় ভাইয়ার চোখে মনে হচ্ছে দপদপ করে আগুন জ্বলছে। উনি খাট থেকে সিফাতকে তুলে আবারও এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে দিলেন। মারতে মারতে রক্তাক্ত করে দিলেন ছেলেটিকে। এদিকে এসব মারামারি দেখে আবারোও মাথায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো আমার। আমি দুহাতে কান চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
.
— থামুন প্লিজ! আমি সহ্য করতে পারছিনা আর!
.
নীবিড় ভাইয়া আমার কথায় থেমে গিয়ে সিফাত কে ছেড়ে আমার কাছে এসে নিজের শার্ট খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দেন। দিয়েই শক্ত করে চেপে ধরেন নিজের বুকে।
উনার হৃদস্পন্দন এতোটাই তীব্র যে আমি তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি। উনি আমায় নিজের বুকে জড়িয়েই কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে শুরু করেন,
.
— ঠিক আছো তুমি? কোথাও আঘাত পাও নি তো? জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
.
বলেই আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার পুরো মুখ ভরিয়ে দিতে থাকেন নিজের ঠোঁটের ছোট্ট ছোট্ট ছোঁয়ায়!
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমার খারাপ লাগছেনা। উনার ছোঁয়া গুলোয় প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি আমি। নিজেকে সব থেকে বেশি সুরক্ষিত লাগছে উনার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে। এবার আমি নিজেও উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। আর উনি আমার কপালে নিজের ঠোঁট বুলাতে লাগলেন।
.
নীবিড় ভাইয়ার আমার প্রতি মনোযোগ দিয়ে দেওয়ায় ছেলেদুটো খোঁড়াতে খোঁড়াতে পালিয়ে যায় ঘর থেকে। তার কিছুক্ষণ পড়ই একদল লোক হুড়মুড় করে প্রবেশ করে আমাদের অবস্থানরত ঘরে। এসেই আজেবাজে মন্তব্য শুরু করতে থাকেন তারা।
.
— ছিঃ ছিঃ আমাগো মহল্লায় এমন নষ্টামি করো? সাহস হয় কেমনে তোমাগো? এদের মান সম্মান কিছুই নাই নাকি।
.
— ঠিক কইছেন। বড়লোকেরা গরিবদের ঘরে আইসা এইসবই করে। কিন্তু এগুলো তো হইতে দেওয়ন যাইবোনা।
.
— একদম তাই। বিয়ে দিয়ে দেও ওগো! এই মিয়া কাজিরে ডাকেন তাড়াতাড়ি!
.
লোকগুলোর কথায় আমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছেনা। নিজেকে কেমন রোবট রোবট লাগছে আমার। কোনো এক ধাঁধায় হাড়িয়ে গিয়েছি যেনো। শুধু চোখ থেকে নিঃশব্দে নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়ছে আমার। নীবিড় ভাইয়া উনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন কিন্তু কিছুইতেই তারা বুঝতে চাইছেনা। উনাদের কথা কাটাকাটির মাঝেই ঘরে প্রবেশ করে লম্বা পাঞ্জাবি আর টুপি পরিহিত এক দাড়িওয়ালা লোক। উনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি কোনো হুজুর নয়তো কাজী। সবার জোড়াজুড়িতে শেষমেশ বিয়ে করতে বাধ্যহয়ে পড়লাম আমরা। নাহলে এখান থেকে যেতে দেবেন না কেউ এটা স্পষ্ট। সাথে বাইরে ভূয়া খবরও ছড়াতে পারেন তারা।
.
মুখ ফুটে শুধু কবুলই উচ্চারণ করেছি আমি। তারপর আবারোও নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছি। মাথা কাজ করছে না আমার। নীবিড় ভাইয়া রেগেমেগেই কবুল বলে হুট করেই একদম শান্ত হয়ে পড়লেন। চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে থম মেরে রইলেন উনি।
তখনও লোকগুলো আজেবাজে কথা বলায় ব্যস্ত।
এমন সময় হুড়মুড় করে প্রবেশ করে অগ্নি ভাইয়া, রুশো ভাইয়া সাথে আরোও অনেকগুলোন ছেলে। আমি হিসেব করিনি তবে ১০-১৫ জনের মতো হবে নির্ঘাত।
.
— অনন্যা! নীবিড়………! তোরা ঠিক আছিস? (হন্তদন্ত হয়ে বললো অগ্নি)
.
গ্রামের লোকগুলোনের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করে উঠলেন,
— আপনে কিডা! হেই ছ্যামড়া ছেমরী কি আপনাগো কিছু হয়?
.
— হয় না মানে? শি ইজ আওয়ার সিসটার! আমাদের বোন হয়। আর ওই ছেলেটা আমাদের বড় ভাই। ছুটকিকে কিডন্যাপ করে এনেছিলো কেউ। ওকেই বাঁচাতে এসেছে ব্রো! সাথে আমরাও।
.
রুশো ভাইয়ার কথায় ভরকে গেলো লোকগুলো। তারপর আমাদের এখানে একলা পাওয়া থেকে শুরু করে বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব বললো ভাইয়াদের উনারা। সবকিছু শুনে ধপ করে বসে পড়লো ভাইয়া। রুশো ভাইয়া মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো ভাইয়ার পাশে। পেছনে থাকা ছেলেগুলো ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে যেতে লাগলো গ্রামের লোকগুলোকে। উনারা এখন শুধু মাথা নিচু করে রয়েছেন। এতোক্ষণ ধরে আজেবাজে বলা লোকগুলোও অপরাধীর বেশে দাড়িয়ে আছেন শুধুই।
.
— আপনারা প্লিজ যান এখান থেকে। আর আসিফ তোরাও চলে যা। আমাদের একা ছেড়ে দে। অনু এখন সেইফ!
.
— কিন্তু ভাই……
.
— কোনো কিন্তু না আর। যা তোরা প্লিজ। আর আপনারাও চলে যান। যা সর্বনাশ করার তা তো করেই ফেলেছেন এখন আর কি করবেন? যান এখান থেকে।
.
ভাইয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আর কেউ কিছু বললো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে বেড়িয়ে গেলো সবাই।
.
#Flashback_Ends…..🍁
.
— ব্রো আমার মনে হয় ওদের দুজনকে একটু নিজেরদের মধ্যে কথা বলতে দেওয়া উচিত। ওরা যদি মানিয়ে নিতে পারে তাহলে……..
.
রুশো ভাইয়ার কথা কেড়ে নিয়ে অগ্নি ভাইয়া বলে উঠলো,
— ঠিক বলেছিস। হয়তো আমরা সবটা গোপনে রাখবো তবে ওদের নিজেদের মাঝে কিছু বোঝাপড়া করে নেওয়া দরকার।
.
বলেই নীবিড় ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে অগ্নি ভাইয়া রুশো ভাইয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
নীবিড় ভাইয়া ধীর পায়ে আমার সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন। আমার ডান হাত নিজের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে নিঃশব্দে ঠোঁট বুলাতে লেগে পড়লেন! কিন্তু আমি তখনও ভাবলেশহীন।
.
.
.
চলবে……………………….💕