ফুল শর্য্যায় ছ্যাকা পর্ব-১৩

0
1088

গল্পঃ #ফুল_শর্য্যায়_ছ্যাকা
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
#পর্ব_১৩
— পাখি অনেকটা রিসানের কথা শুনতেই অনেকটা অবাক হলো,রিসান বলছে” পাখি তোমায় ভালবাসি বড্ড বেশি ভালবাসি” পাখি রিসানের মুখে ভালবাসার কথা শুনে বিস্মিত হলো রাগ করতে চেয়েও কেনো জানি রাগ করতে পারলনা।

–ওই রিসান,, উঠো, মা এসে পড়বে।

— ” আর একটু থাকতে দাওনা প্লিজ”( রিসান)

— রিসান কি করছে এসব?

— এদিকে রিসান পাখিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ঘুমের ঘরে।

— পাখি অনেকটা বিরক্তি নিয়ে রিসানকে, ধাক্কা দেয়। রিসানকে ধাক্কা দিতেই রিসান বিছানার নিছে পরে যায়!

— ওই কোন সালারে! ধাক্কা দিলো!(রিসান)

– আমি ধাক্কা দিয়েছি!( পাখি)

— রিসানের ঘুম কাটলেই রাতের কথা মনে পড়ে! ” পাখি সরি ঘুমের ঘরে তোমাকে কোলবালিশ মনে করে “”””””

— আমাকে কী তোমার কোলবালিশ মনে হয়?অনেকটা রাগি লুক নিয়ে (পাখি)

— সত্যি বলবো?( রিসান)

—–হুম বলো

— তুমি না কোলবালিশের চেয়েও নরম।, মনে হয় সারাজীবন জড়িয়ে ধরে থাকি! কথাটা বলে জিবে কামড় দিলো রিসান! আর মনে মনে ভাবছে কি বলতে কি বলে ফেললো।

— রিসান, তোমাকে আমি ভালো বন্ধু মনে করি।এমন কিছু করোনা তোমার প্রতি বন্ধুত্বের বিশ্বাসটা ওঠে যায়। আর হ্যাঁ। আন্টিকে বলে আজই বাসা থেকে চলে যাবো। (পাখি)

— রিসান! মনে মনে ভাবছে সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। তাই পাখিকে বললো ” জানো পাখি ছোট বেলা থেকে কোলবালিশ বুকে নিয়ে ঘূমানো অভ্যাস। কিন্তু কাল তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। প্লিজ তুমি ভুল বুঝোনা? তুমি ভুল বুঝলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।

— পাখি, রিসানের এমন কথা শুনে অনেকটা নিজের রাগকে কন্টোল করলো। একি রিসান কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেনো। এই রিসান কান ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

— আমি যে অপরাধ করছি তাই কান ধরে দাঁড়িয়ে অাছি। বলো তুমি ক্ষমা করেছো আমায়? (রিসান)

— পাখি, রিসানের এমন ছেলে মানুষী দেখে হেসে দিলো। আচ্ছা যাও এবারের মতো ক্ষমা করলাম।

— সত্যি??

— হুম সত্যি। যাও ফ্রেশ হও। আমিও হবো। (পাখি)

— রাজের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে ” মোবাইলে ৩৩ টা মিসকল, তাই নাম্বার টা দেখে অনেকটা বিস্মিত হয়। কারণ মামা মামী এতোবার ফোন দিয়েছে। কথার কিছু হলোনাতো?

— তাই দেরী না করে মামা মামীকে ফোন দিতেই! দুইবার ফোন দেওয়ার পর ওপাশ থেকে কে যেনো ফোনটা রিসিভ করলো!

— হ্যালো! রাজ ” বাবা একটু হসপিটালে আসবা?( কথার বাবা)

—– মামা কি হয়েছে? আমার কথায় তো কিছু হয়নি? অনিচ্ছা সত্বেও বলে ফেললাম!

— বাবা রাজ তুমি আসো! পড়ে বলছি!

–সকালে ব্রেকফাস্ট না করে, শার্টটা গাঁয়ে দিয়ে বের হতেই।

— রাজ “কোথায় যাচ্ছো সকাল সকাল? ( অপরিচিতা)

— আমার একটু তাড়া আছে!

— আচ্ছা যাও আকটানের কোনো ক্ষমতা নাই আমার! শুধু বলতে চাই ব্রেকফাস্ট টা করে যাও।

— রাস্তায় করে নিবো বলে গাড়ি নিয়ে বের হলাম। গাড়ি ড্রাইভ করছি, আর মনে মনে ভাবছি, কথার তো কিছু হলোনা আবার? ভাবতে ভাবতে হসপিটালে এসে পৌঁছায়।

— বাবা,রাজ আসছো, ? আমার মেয়েটা দুই দিন ধরে খাবার তো দূরের কথা একটু পানিও খাচ্ছে না। এমনিতেই অসুস্হ হসপিটালে আছে। তার উপর কিছুই খাচ্ছেনা। বাবা কথাকে তোমার মেনে নিতে হবেনা।আমি জানি, কথা যা করেছে তা ঠিক করে নাই। কোনো বাঙ্গালি মেয়ে, তার স্বামীর সাথে এমন ব্যবহার হয়তো আজ পর্যন্ত কেউ করেনি। স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত তা আমি জানি, বাবা।আমার মেয়ের জন্য বাবা আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ক্ষমা করে দাও, ওকে হাজার হলেও মেয়েতো, ওর কষ্ট আমি আর দেখতে পাচ্ছিনা। না খেয়ে আমার মেয়েটা হয়তো মারা যাবে । বাবা হয়ে মেয়ের মৃত্যু দেখতে পারবোনা। তার আগেই যেনো আমার মরণ হয়( কথার বাবা)

— মামা, কী বলছেন? এইসব, আমি বাবা,মা কে হারিয়ে নতুন বাবা মাকে পেয়েছিলাম।কখনো মা বাবার অভাব বুঝতে দাওনি। কখনো কষ্ট দাওনি। কখনো অন্যের ছেলে ভাবনি। আর বাবা হয়ে কোনো, বাবা ছেলের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেনা। আমাকে অার ছোট করবেন না। আপনি যা বলবেন তাই করবো বাবা বলেন?কী করতে হবে আমার। নিজের জীবনটা যদি চান তাও আপনার পায়ের কাছে সর্পে দিবো।

— বাবা, জীবন দিতে হবেনা। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জিনিষ হচ্ছে সন্তানের লাশ। তাই বাবা মরার কথা বলোনা। রাজ” বাবা তোমাকে আমি জোর করবোনা, তুমি কথাকে গ্রহণ করো। তবে যেভাবে হোক আমার মেয়েটাকে কিছু খাওয়াই। আমার মেয়েটাকে বাঁচাও।আমার মেয়েটা না খেয়ে খেয়ে মারা যাবে।

— আচ্ছা বাবা, আপনি চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। কথা কোথায়?

— বাবা, ২১ নাম্বার কেবিনে।
….
— আমি কথার কেবিনের কাছে গেতেই বুকটা হুহু কেদেঁ ওঠলো। এ কেমন চেহারা করেছে, মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। চুলগুলো উষ্কশুষ্ক হয়ে গেছে। চাঁদের মতো মুখটাতে মনে হচ্ছে গ্রহণ লেগেছে। মায়াবী মুখটা সন্ধ্যা তারার মতো নিভু নিভু করে জ্বলছে। মনে হচ্ছে কখন না তাড়াটা আড়ালে পড়ে যায়, এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে অনবরতো অশ্রু জড়তে থাকলো। নিজের অজান্তেই কথায় মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম, চোখের পানি কথার মুখের ওপর পড়ছে। আর মনে মনে বলছি ‘ কলিজার টুকরা যে তুমি,। তোমার সুখের জন্যই মুক্তি দিয়েছি তোমাকে। তুমার সুখটাই যে আমার সুখ। কথার বুকের ওপর একটা ডাইরি, “রাজ ক্ষানিকটা অবাক হলো ” কারণ ডাইরিটা তার লেখা। বুকের ওপর শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে ডাইরিটাকে।

— ভাইজান আপনি আইছেন! (কথার বাসার কাজের মেয়ে)

— হ্যাঁ তোর নামটা যেনো কি?

— ভাইজান তোবা!

— ও আচ্ছা।

— ভাইজান,একটা কথা বলবো , যদি কিছু না মনে করেন? (তোবা)

— জি আচ্ছা! বলো।

– ভাইজান, অাপা আপনার সাথে অনেক অন্যায় করেছে জানি। তবে তার চেয়ে বেশি নিজেকে কষ্ট দিয়েছে আপা। আপা সত্যি আপনাকে তার নিজের চেয়ে বেশি ভালবাসে। “ভাইজান “আপা তার অপরাধের শাস্তি পেয়েছে। জানেন ভাইয়া ‘ আপাকে কখনো কোনদিন নামায পড়তে দেখেনি, কিন্তু এখন ভাইয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে নিজের জন্য কিছু চায়না সব আপনার জন্যই চায়। একটা রাত ও আপা মণিকে ঘুমাতে দেখিনি, আপনার শার্টটা বুকে জড়িয়ে কাঁদতো। যদি খেতে বলতাম, তাহলে বলতো নিজের জীবনে ছেড়ে চলে গিয়েছে বেঁচে থেকে লাভ কী? আত্মহত্যা করতে তো পারবোনা। এটা মহাপাপ তাই নিজের পাপের শাস্তি নিজেকেই দিতেছি। ভাইজান আপা মনি বলতো ” তোবা আমার স্বামী আমাকে ক্ষমা করবে না , আমার কলিজার টুকরা রাজকে ছাড়া বাঁচবো, আমি যে আমার কলিজার টুকরাটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, ক্ষমা যদি না করে। অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয় কীভাবে বাঁচবো বল তোবা বল আমায়। আচ্ছা তোবা জানিস প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখি রাজ আমাকে মেনে নিয়েছে, আমার ঘরে কি ফুটফুটে একটা ছেলে এসেছে, নাম কাব্য ঠিক রাজের মতোই। কী সুন্দর করে আমাদের দুজনকে মা, বাবাই বলে ডাকে। কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙ্গলেই দেখি রাজ ” আমার বুকে নেই। জানিস তোবা তখন আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তোবা আমার জীবনটার জন্য দোয়া করিস ।ভাইজান আপা মনি আপনাকে অনেক ভালবাসে নামাযে বসে বসে আপনার জন্য কাঁদে। আপনি আর আপা মণিকে কষ্ট দিয়েন না,সব ভুলে বুকে ঠেনে নেন। (তোবা)

— এদিকে তোবার মুখে কথার ব্যাপারে এইসব কথা শুনে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছি চোখের জল আর আকটাতে পারছিনা।

— ভাইজান আপনি কাদছেন কেনো?

— না কাঁদছি নাতো চোখে ময়লা গিয়েছে।

— ভাইজান, বাসায় যেতে হবে মা একা আমি আসি । আপা মণিকে কষ্ট দিয়েন না।

— এদিকে তোবা চলে যাওয়ার পর কথার দিকে একনজরে চেয়ে আছি। হঠাৎ দেখি কথা আস্তে আস্তে চোখ খুলছে। তাই তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে কথার কাছ থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম।

— তুমি আসছো?

— হুম। কি শুরু করছো খাওয়া ধাওয়া বাদ দিয়ে।প্লিজ খেয়ে নাও।

— আমাকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নিবে কী? যানো রাজ তোমাকে একটা বার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তুমিরযাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারো, তবে একটিবার আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে? (কথা)

— কি বলছেন এইসব। আপনি কোনো অপরাধ করেননি। আর অপরাধ নিজের অজান্তে করলেও ক্ষমা করে দিয়েছি। এখন একটা অনুরোধ করবো রাখবে?

— হুম, অনুরোধ নয় বলো আদেশ, তুমি আমার জীবন চাইলেও হাসতে হাসতে দিয়ে দিবো। একটা মেয়ের কাছে স্বামীই যে সব।

— তাহলে সময়মতো খেয়ে নিবে, এটা অনুরোধ।

— আচ্ছা! তুমি বলছো, না খেতে মন চাইলেও খাবো। স্বামীর কোনো আদেশ পালন না করতে পারলেও এটা তো করতে পারবো। তোমাকে একটা অনুরোধ করবো?

— হুম করো।

— আমাকে খাইয়ে দিবে! খুব ইচ্ছা করছে তোমার হাতে খেতে কেঁদে দিয়ে।

— আচ্ছা এই বলে খাইয়ে দিচ্ছি, কথা খাবার খাচ্ছে আর কাঁদছে। এমন দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা। মনে হচ্ছে কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা কিন্তু তা তো এখন সম্ভব নয়।

— তুমি কাদঁছো কেনো? (কথা)

— না কাঁদছি না তো?

— হঠাৎ পকেটের ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজছে। ফোনটা ধরতেই মনে হচ্ছে ওপাশে কেউ কাদঁছে।

– হ্যালো ‘ অপরিচিতা কাঁদছো কেনো?

–” রাজ ” আমার বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটাও মনে হয় হারিয়ে ফেললাম।

— কি হয়েছে বলবে তো?
অপরিচিতা কাঁদতে কাদতে বলতে লাগলো ” রাজ, রাইসা কথা বলছেনা! রাজ আমার কলিজার টুকরা টার কিছু হয়ে গেলে আমি বাচঁবনা। রাজ প্লিজ কোথায় তুমি? প্লিজ আসো একটু বাসায়।

—– হাসপাতাল থেকে বের হতেই, কথার সেই রহস্যময়ী চাহনী, মনে হচ্ছে, তার চাহনী আমায় বলে দিচ্ছে “রাজ” তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়োনা। কিন্ত আমাকে যে, যেতেই হবে, মহারাণীটার কিছু হলে যে আমিও বাঁচবোনা।

–সি. এন.জি করে বাসায় আসতেই দেখি,অপরিচিতা রাইসাকে বুকে নিয়ে অশ্রু নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছে।

— অপরিচিতা, রাইসার কি হয়েছে! ( আমি)

— অপরিচিতা, কিছু বলছেনা,।শুধু চোখদিয়ে অশ্রু ফেলছে,।রাইসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।

— এই অপরিচিতা! প্লিজ কথা বলোনা, প্লিজ কথা বলো প্লিজ।কথা বলছোনা কেনো?

— অপরিচিতা কোনো কথা বলছেনা, রাইসাকে বুকে নিয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছে। আর করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— রাইসার দিকে তাকাতেই,বাবাই, বাবাই, আমার কিছুই হয়নি। আমি সম্পূণ সুস্হ। আচ্ছা বাবাই, তোমাকে না কাঁদলে অনেক বাজে দেখায়, বাবাই, প্লিজ আর কেঁদোনা। বাবাই,একটু হাসো তো? দেখি আমার বাবাইকে,। আচ্ছা বাবাই, যদি আমি হারিয়ে যায় একদম কানবেনা। তখন তো বলতে পারবোনা বাবাই, ওই বাবাই, আর কেদোনা। কাঁদলে তোমায় বড্ড খারাপ লাগে! আচ্ছা বাবাই, আমি যদি আর কখনো এভাবে কথা না বলি যদি মারা যায়?

— না, আমার মহারাণী এমন কথা আর কখনোই বলবেনা। কিন্তু রাইসা তো কথা বলছেনা। ” রাইসা তো সেন্সলেন্স হয়ে আছে। যা ভাবলাম সব কল্পনা ভাবতেই বুকটাতে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেলো।

— একটা এমবুলেন্সকে ফোন দিয়ে। রাইসা আর অপরিচিতাকে নিয়ে হসপিটালের ইমান্জেন্সী বিভাগে ভর্তি করলাম।

— এখন আমি ইমান্জেন্সী বিভাগের বাহিরে বসে আছি।মনের মাঝে এক অজানা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ” মিঃ রাজ, মা,মেয়ে দুজনের অবস্হা সংকোচ জনক।দুজনের বাচার চান্স ফিফ্রটি, ফিফ্রটি। ডাক্তার কি হয়েছে বলবেন তো?

— শুনেন মিঃ রাজ, মিসেস অপরিচিতা, মেনটালিটি সর্ক খেয়েছে। তার ভালবাসার মানুষেরর কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে।আচ্ছা মিঃ রাজ, মিসেস অপরিচিতা কী কাউকে ভালবাসতো? পেশেন্ট এর যে অবস্হা তা দেখে মনে হচ্ছে পেশেন্ট কাউকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতো।শুধু ভালই বাসতো না তাকে ভেবেই দিনরাত পার করতো। পাশাপাশি মেয়ের অসুস্হতা তার ওপর তীব্র মানুষিক প্রভাব ফেলেছে!তাই ব্রেন এর সিক্সটি পারসেন্ট হেমারিজ হয়ে গেছে। যদি পারেন পেশেন্ট যাকে ভালবাসে তাকে বলেন পেশেন্টকে যেনো কোন প্রকার কষ্ট না দেয়।ভালবাসার মাধ্যমে সম্পূণ সুস্হ হতেও পারে।তবে যদি, ছোট্ট মেয়েটা মারা যায়, আর যাকে ভালোবাসে সে যদি না ভালবাসে পেশেন্টকে তাহলে পেশেন্ট বড্ড উন্মাদ হয়ে যাবে, মারাও যেতে পারে।

— আচ্ছা ডাক্তার, রাইসার কি হবে? বাঁচবে তো?

— বাঁচা মরার মালিক সব ওপর ওয়ালার হাতে। এখানে আমরা শুধু চেষ্টাটা করতে পারি। মিঃ রাজ ছোট্ট মেয়েটা লাস্ট পর্যায়ে আছে,।এখনো কিডনী ম্যানেজ করা গেলোনা। ৭২ ঘন্টার মাঝে কিডনী প্রতিস্হাপন করা না গেলে, বাঁচানো যাবেনা ছোট্ট বাচ্চাকে। আরেকটা কথা যে কি ভাবে বলি,। তবে বলতেই হবে, ছোট্ট মেয়েটা যে পরিস্হিতিতে আছে সেখানে দেশের কেউ কিডনী প্রতিস্হাপন করার সাহস পাচ্ছে না। অপারেশন আন সাকসেস এর সম্ভাবনা এইট্টি পারসেন্ট। মিঃ রাজ, ২৪ ঘন্টার মাঝে কিডনী সংগ্রহ করে বিদেশ নিয়ে যেতে হবে।

— ডাক্তার কিডনী নিয়ে চিন্তা করবেন না। প্লিজ ডাক্তার বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্হা করেন।

— মিঃ রাজ কে কিডনী দিবে, তাকে ডাকেন। তাঁর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো? আর এই গ্রুপের ব্লাড সবার সাথে পাওয়া যায়না।( ডাক্তার)

—– কিডনী, টা আমি দিবো!

-What. এটা কোনো ভাবেই পসিবল নয়।

— কেনো পসিবল নয়?

— মিঃ রাজ, আপনি যে অসুস্হ প্রতিমাসে হসপিটালে আসেন। আপনার সব রির্পোট দেখছি। মিঃ রাজ ক্ষমা করবেন,আমরা ডাক্তার মানুষকে বাঁচায়। একজনকে বাঁচাতে কাউকে মৃত্যুর মুখে টেলে দিতে পারিনা।

— plz doctor.no more question . Raisa is my heart.

— ok…. mr.. Raj

— মিঃ রাজ আপনার জন্য একটি খুশির সংবাদ আছে।

— খুশির সংবাদ! তাও আমার জন্য?

— হুম, এই মাএ খবর পেলাম, আমেরিকা থেকে এক ডাক্তার আসছেন আজকের রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে। তিনি সার্জারি বিশেষজ্ঞ আশা করি, তাকে যদি রিকুয়েষ্ট করেন তাহলে রাইসার অপারেশন করতে পারে। আর যদি তিনি রাজি হন তাহলে বিদেশ যেতে হবেনা।এই নেন, ডাক্তারে ভিজিটিং কার্ড।

—- ডাক্তারের কাছ থেকে কার্ডটা নিয়ে দেখলাম কার্ডে একটা ঠিকানা দেয়া। , মিস, সাথি, এম. বি. এস সার্জারি বিশেষজ্ঞ, আমেরিকা।
ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতাল।

— কার্ডটা দেখে পকেটে রেখে দিলাম।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

— হাসপাতাল ভাবলাম একটি বার ভাবলাম অপরিচিতাকে দেখে যায়। এদিকে অপরিচিতার কেবিনে যেতেই বুকটা কেমন করে ওঠলো। আস্তে আস্তে অপরিচিতার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাঁছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি” অপরিচিতার” মিটি মিটি করে তাকাচ্ছে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে চোখের ইশারায় উঠে বসতে চাচ্ছে।

— তাই অপরিচিতাকে উঠিয়ে বসতে দিলাম, কাছে বসে আছে, মাথায় আলঁতো করে নিজের অজান্তেই হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । তুমি চিন্তা করোনা, আর প্লিজ কেদোনা ” রাইসার ” কিছুই হবেনা। এই বলে চোখটা মুছে দিতেই অপরিচিতা জড়িয়ে ধরে আছে আমায়। সরাতেও পারছিনা,, অপরিচিতা কিছু বলছেও না শুধু চোখের জলে শার্টটা ভিজিয়ে ফেলছে। ছাড়িয়ে দিতে যাওয়াই, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। এমন সময় ডাক্তারের কথা গুলো মনে পড়ছে” মিঃ রাজ, অপরিচিতা কাউকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে। আর তার দিবানিশির ভাবনায় সেই মানুষটাই থাকে। আর যদি কোন ভাবে সে মানুষটাকে হারিয়ে ফেলে, সাথে নিজের মেয়ের এমন অবস্হা। তাহলে যে কোন সময় একটা একসেডেন্ট হয়ে যেতে পারে। ” কথা গুলো ভাবতেই মাথার বাঁজ ভেঙ্গে পড়লো। এক দিকে কথার ভালবাসা অন্যদিকে অপরিচিতা।আল্লাহ এ কোন খেলায় ফেললে আমায়! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।অপরিচিতাকে দেখি বুকেই ঘুমিয়ে গেছে। অপরিচিতাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে। I C U ·র দিকে চোখ যায়।

— I C U এর রুমের গ্লাসটা দিয়ে ভেতরে তাকাতেই দেখি, ছোট্ট একটা পরীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে রাখছে। সন্ধা তারাটা সম্পূণ আকাশটা আলোকিত করে মিটিমিটি জ্বলছে। কি সুন্দর মায়াবী মুখটার ওপর একটা অন্ধকার ছায়া পড়ে আছে।কখন যে তাড়াটা নিবে যাবে ভাবতে পারছিনা। হঠাৎ বাবাই, আবারো তুমি কাঁদছো কেনো?

— এইসব মনে পড়তেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো, কলিজাটা মনে হয় I C U এর ভেতরে বদ্ধ করে রাখছে। যে ভাবেই হোক নিজের জীবন দিয়ে হলেও ফুলের মতো পবিএ জীবনটাকে বাঁচাতে হবে।

–সকাল বেলা হালকা কিছু খেয়ে। কার্ডটা অনুযায়ী সেই ঠিকানা অনুযায়ী বসে আছি। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে বললো, ম্যাডাম আপনাকে যেতে বললো।

— ম্যাডাম আসতে পারি?

— জি আসেন।কথাটা বলে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো! আপনি! আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যেনো দেখেছি।
..
— দেখবেন হয়তো?

— আচ্ছা, আপনাকে হয়তো মেডিকেল কলেজের সামনে দেখেছিলাম ৪ বছর আগে। হুম আপনিই যার জন্য আমি সাথী আজ এ অবস্হাই। সেদিন যদি আপনি হসপিটালে ঠিক টাইমে নিয়ে রক্ত না দিতেন তাহলে আজ হয়তো ডাক্তার সাথী মাটির সাথে মিশে যেতো।

— ম্যাডাম কি বলছেন? এইসব, আমার কতর্ব্য ছিল আপনাকে নিয়ে যাওয়া।

— তা কি ভাবে সেবা করতে পারি? আমি তোমার।

— ম্যাডাম, আপনাকে একটা অনুরোধ করবো?

— তুমি করে বললে খুশি হবো। আর অনুরোধ নয়, বলতে পারো আদেশ। কারণ জীবনটা যে তোমারি দেওয়া।

— না জীবন দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আমি শুধু মানুষ হিসেবে আরেকটা মানুষের বিপদে সাহায্য করেছি।

— হইছে তোমার সাথে কথায় পারবোনা বলো কি করতে পারি!?

— এইযে টেষ্ট, আমার কলিজার টুকরাটা রাইসা বাচান যে ভাবে পাড়েন।

— হুম, কাল আমাকে ডাক্তার আবির ইনর্ফম করেছিল।সেটা যে তুমি হবে তা ভাবতে পারিনাই। আচ্ছা চিন্তা করোনা, কিছু হবেনা। তোমার কলিজার টুকরা মেয়েটা তো আমারো মেয়ের মতো, । তবে কিডনী কে দিবে?

— ম্যাডাম, আমি দিবো!

— আবারো, ম্যাডাম, শোন তোমার টেষ্ট করেছো কিছু?

— হুম, এই নেন, বলে রিপোর্ট গুলো সব দিলাম।

– ডাক্তার ম্যাডামের মুখটা এক মুহুতেরর মাঝে অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে গেলো।

— রাজ ক্ষমা করবে আমায়, আমি এই অপারেশন করতে পারবোনা?

— কেন পারবেনা?

— রাজ আমি একজনকে বাঁচাতে অন্য জনকে জেনে শুনে মৃত্যুর মুখে টেলে দিতে পারতাম না।

— প্লিজ, অনেক আশা নিয়ে আসছি!

— রাজ ক্ষমা করবে আমায়!

— ম্যাডাম, আপনার পায়ে পড়ি। প্লিজ, আমার মেয়েটাকে বাঁচান।

—” রাজ “কি করছো? আমি জীবনে অনেক মানুষ দেখেছি তোমার মতো ফেরশতা সমতুল্য। “রাজ ” আমি আমার জীবনের সেরা অপারেশনটি হয়তো কাল করতে যাবো।

–এদিকে রুম থেকে বের হতেই ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বাজছে।

— হ্যালো, বাবা তুমি কোথায় ( মামা)

— মামা, আমি একটু বাইরে আছি!

–” রাজ” বাবা কথা পাগলামো করছে, একটু বাসায় আসবে, ?

— হুম আসছি!

— দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, মামী বললো ভেতরে যেতে,

–তাই দরজা খুলে ভেতরে গিতেই দেখি, কেউ একজন মোনাজাতে বলছে, আল্লাহ সেই ছোটবেলা থেকে এই গুনাহগার বান্দী তোমার কাছে কিছু চায়নি। “আল্লাহ হে পরওয়ার দিগার” রাহিম, রহমান, তোমার কাছে, ফরিয়াদ,আমার স্বামীটাকে যেনো সবসময় ভালো থাকে। আল্লাহ জীবন মরণ বিয়ে শাদী সবকিছু তোমারপক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ তোমার কাছে একটাই চাওয়া আমার স্বামীর বুকেই যেনো মরতে পারি। আল্লাহ ” কবুল, কবুল, কবুল তিনটা শব্দ বলে, তোমার পবিএ কালামকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি। আল্লাহ আমার স্বামীকে ছাড়া বাঁচবোনা। তার পদতলে আমার একটু জায়গা করে দাও। আমি অপরাধী আল্লাহ আমার হায়াতটুক আমার স্বামীকে দিয়ে দাও, তাও তাকে ছাড়া আর বাঁচতে পারবনা। আল্লাহ দাওনা আমার স্বামীর বুকে একটু জায়গা করে দাও। ” আমিন”

—— নামায পড়ে শেষ করে তাকাতেই কথা আমায় দেখতে পারে!! চোখ দুটি মুছে বলতে লাগলো ” রাজ তুমি নাকি কিডনী দিতে চাচ্ছো, ডাক্তার আবির আমাকে সব বলেছে। ” রাজ ” জীবন আমায় তোমার কিছু হলে আমি বাচবোনা। প্লিজ তুমি নিজের মৃত্যু যেনেও এমন কিছু করোনা। বলো তোমায় ছাড়া কেমনে বাঁচবো। তুমি চলে যাওয়ার পর প্রতিটা মুহুর্ত তোমার স্মৃতি নিয়ে কিভাবে বেচে আছি তা আল্লাহ জানে। রাজ আমি আর পারছিনা, তুমি যাওয়ার পর একটা রাত ঘুমাতে পারিনাই, প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে মোনাজাতে তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা আল্লাহর কাছে চাইতাম।তোমার ডাইয়িটা বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম। আজ আমাকে গলাটিপে মেরে ফেলো, নয়তো বুকে টেনে নাও। ( কথা)

— কথা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আসি! এই বলে বের হতেই পা বাড়াতে পারছিনা। পা টা কে জানি ধরে আছে, নিচ দিকে তাকাতেই দেখি কথা পা ঝাপটে ধরে বলছে” আমাকে ছেড়ে যেয়োনা, আমি মরেই যাবো জীবন, বলে কীভাবে বাঁচবো তোমায় ছাড়া, আমাকে গলা টিপে মেরে, ফেলো। তারপর আমার লাশের ওপর দিয়ে যাও। কথার মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলামনা, বুক ফেটে কান্না আসছে, টান দিয়ে পা থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলাম। মনে হচ্ছে দেহে প্রাণ ফিরে এলো। এদিকে কথা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, আছে চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। কথা ছাড়ো এবার আর কোথাও যাবোনা আমার জীবনটাকে ছেড়ে।

— এই কথা কী হলো কথা বলো, চোখ বন্ধ করে আছো কেনো? চোখ খুলো প্লিজ।
চলবে…..