ফুল শর্য্যায় ছ্যাকা পর্ব-০৯

0
1272

গল্পঃ #ফুল_শর্য্যায়_ছ্যাকা
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
#পর্ব_০৯
—– তাই বুঝি আচ্ছা একগাধা সরি চল গাড়িতে উঠ এই বলে দুজন মিলে অবনির বাসায় ডুকেই কথা একটা শর্ক খায় দেয়ালে একটা বড় করে বাধাই করা ছবি সেটাতে অবনির কুলে বেবিটা আর সজিব অবনিকে জড়িয়ে ধরে আছে কথা অনেকটা বিস্মিত হয়ে চেয়ে রয়েছি ছবির দিকে!!

——ঐই কথা ওভাবে চেয়ে আসিস কেনো ও তোর সাথে তো কন্টাক্ট করতে পারিনি তোর ফোনটাও বন্ধছিল তাই আমার আর সজিবের বিয়ের কথা বলতে পারিনি কি করবো বল কি ভাবে যে কি হয়ে গেলো কিছু আন্দাজ করতে পারিনি? ((অপর্ণা নিশাতুল অবনি)

—— না ঠিক আছে আচ্ছা তোর বরকে বলিস ট্রিট দিতে বিয়ে তো খেতে পারিনি কথা অনেকটা হেসে কথাটা বললো??

—— ও তোকে তো বলাই হয়নি সজিব দুইদিন পর দেশে আসছে ওই লন্ডনে থাকে বুঝিস রি তো তার বাবার কত বড় প্রোপার্টি?!! (অপর্ণা নিশাতুল অবনি)

——— হুম তুই অনেক ভাগ্যবতীরে অর্পণা!!! ( কথা)

—- যা কি বলিস সজিবকে বিয়ে করা আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেনা মানুষটা জানিস জীবনে অনেক বড় ভুল করছি রাকিবকে ছেড়ে এসে জানিস হয়তো সজিবের কাছে সুখ পেয়েছি দামি গাড়িতে চড়ে বেড়াতে পারছি মাস শেষে হাজার হাজার টাকার শপিং কিন্তুু প্রিয় মানুষটার সাথে একসাথে বসে এক প্লেটে বসে কখনো খাবার খেতে পারিনি কখনো সজিব বলেনি অর্পণা তুমি হা করো আমি তোমাকে খাইয়ে দেয়!!!

——– এদিকে অর্পণার মুখে খাইয়ে দেওয়ার কথা শুনে কথার চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে কথার মনে হলো কথার যখন জ্বর ছিল তখন রাজ কথাকে খাইয়ে দিছে সারারাত পাশে বসে ছিল এইসব মনে করতেই বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা করতে শুরু করছে!!!

—-ওই কথা কই হারিয়ে গেলি??( অর্পণা)

——- না এমনি তার পর বল!! (কথা)

—— জানিস এখন খুব মিস করি রাকিবকে আমি বুঝে ফেলেছি ওর মতো কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারিবেনা কি পাগলটাই না ছিলো আমার জন্য রাকিব কলেজে একনজর দেখায় জন্য ছেলেটা পাগল ছিল কতরাত ঝগড়া করে পার করেছি তখন মনে করতাম ছেলেটা আমাকে ভালোবাসেনা কিন্তুু এখন বুঝতেছি রাগের আড়ালে তার পাহাড়সম ভালবাসা!!
জানিস খুব ইচ্ছে করে একটু প্রিয় মানুষটার হাত ধরে জোছনা রাতে গল্প করতে কিন্তুু বিয়ের পর যখন সজিবকে বলতাম তখন সজিব বলতো কি সব মানুষিকতা যাও ঘুমাও এই বলে সিগারেট টানতে টানতে ডান্স ক্লাবে চলে যেতো জানিস ঠিক তখনি রাকিবের কথা মনে পড়তো ছেলেটির সাথে তিন বছর সম্পর্ক ছিল কখনো খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়নি আমার দিকে কখনো হাতটিও ধরে নাই জানিস কথা এখনো আমার কানে বাজে রাকিবের সেই কথা গুলো!!
জানো অর্পণা তোমার আর আমার একটা ছোট্ট সংসার হবে ছোট্ট একটা জব করবো ছোট্ট একটা ফ্লাট থাকবে কিন্তুু ভালবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ কোনো জোছনা রাতে ঘুমাবোনা সারারাত ছাদে তোমার কুলে মাথা রেখে জোছনা দেখবো বৃষ্টি ভেজা দিনে বেলকুণিতে দাড়িয়ে গল্প করবো কি পারবা না আমার স্বপ্নের রানী হতে?? তখন মুচকি হেসে বলতাম পাগল একটা আমি হবো না কে হবে তোমার স্বপ্নের রানী জানিস কথা খুব মিস করি সেই সব দিনগুলি!!! ( অর্পণা)

——- তাহলে সজিবের সাথে কেনো বিয়ে করলি?? (কথা)

——- শুন তাহলে লন্ডনে এক ট্রুরে বেড়াতে গেয়েছিলাম সেখানেই সজিবের সাথে সম্পর্ক তার থেকেই বিয়ে !!

—— তাহলে রাকিব কোথায় গেলো?? (কথা)

——- ওই অর্পণা কাদছিস কেনো বল কি হইছে রাকিবের!!!?

—— শুন তাহলে লন্ডন ট্রুর থেকেই ফিরে সজিবের বাবার সাথে আমার বাবা বিয়ে ঠিক করে আমিও তখন ভেবেছিলাম রাকিব কে বিয়ে করলে ভালবাসা ছাড়া আর কিছু দিতে পারবেনা সে তার বাবারি বা আছে কি তাই বিয়ের সর্ব প্রথম কার্ডটা দিতে রাকিবকে দিতে একটা পার্কে দেখা করি জানিস কথা যখন আমার বিয়ের কথা রাকিবকে বলি সেইদিন হাসিখুশি মাখা মুখটা আধার কালো হয়ে ছিলো ছেলেটা সেইদিন প্রথম কেদেছিল!!
যে ছেলেটা কখনো তিনবছরে আমার হাতটি ধরারা সাহস পায়নি সেইদিন সেই ছেলেটাই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিল অর্পণা তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়োনা! যেয়োনা ছেড়ে তোমাকে ছাড়া আমার যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে!কিন্তুু আমি মিথ্যা মুহে এতটাই অন্ধছিলাম রাকিব কে বুক থেকে ছাড়িয়ে বাসায় এসে পড়ি পিছন দিকে তাকায়নি পর্যন্ত আমার হাতে রাকিবের ভালবাসার করুণ মৃত্যু হয় শুনেছি আমার বিয়ের পর বাসা চেন্জ করে ফেলে আর বিদেশ চলে যায়!!!

——- জানিস কতবার মরতে চেয়েছি কিন্তুু পারিনি আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুলটা হওয়ার আগে আমি যদি মরে যেতাম তাহলে হয়তো ভালো হতো এখন মনে হয় আমার মতো হতভাগী পৃথিবীতে কেউ নেই!শুনেছি বাসর রাত নারীদের শেষ্ঠ রাত আর আমার বাসর রাত কেটেছে একা একা আমাকে সারা রাত বসিয়ে রেখে সজিব সারারাত হোটেলে তার বান্ধবীর সাথে রাত কাটিয়েছে পরে সব জেনেছি যে সজিব আমাকে বিয়ে করেছে আমার বাবার প্রোপার্টির জন্য !!এখন খুব ইচ্ছে করে রাকিব কে দেখতে ওর পায়ে ধরে বলতে আমাকে ক্ষমা করে দাও কিন্তুু কি মুখ নিয়ে যাবো আমি তো তোর পবিএ ভালবাসাকে অপমান করেছি!!( অর্পণা)

—— মা মা কে এইটা?? ( ছোট একটা বাচ্চা)

—– মামনি এটা তোমার আন্টি?? ( অর্পণা)

—– আচ্ছা এটা তোর বেবী তাই না?? (কথা)

——– হুম রে কথা রিচি মামনির জন্যই শতবার মরতে চেয়েো ফিরে এসেছি! ( অর্পণা)

—— এদিকে কথা অর্পণা কে বাই বলে মনে মনে ভাবছে সজিবের মতো একটা বাজে ছেলের জন্য রাজকে কত কষ্ট দিয়েছে বাসর রাতে স্বামীর অধিকার পর্যন্ত দেয়নি চোখটা ভেজে উঠছে এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে পড়ে কথা কিন্তুু আজ বাসাটা খালি খালি লাগছে কেনো এতো খালি খালি লাগছে এদিকে কাজের মেয়ে খাবার দিয়ে গেছে টেবিলে খাবার বসতেই মনে হলো কথার রাজের কথা রাজ কি খেয়েছে ওই এখন কি করছে এইসব ভেবে কথা খাবার মুখে দিতে গেয়েও রেখে দিলো খেতে পারছেনা শুধু রাজের মায়াবী মুখটা ভেসে ওঠছে কথা যে রাজের সাথে অন্যায় করেছে রাজকি ক্ষমা করবে তাকে এইসব ভাবতে ভাবতে কথা রাজের লেখা ডাইয়িটা বুকে নিয়ে কাদতে কাদতে বলতে লাগলো রাজ তুমি আমায় ক্ষমা করবে না তোমার পায়ের নিচে জায়গা দিবেনা এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে দুটি চোখের পাতায় ঘুম এসে পড়ে হঠাৎ কথা দেখে যে রাজের বিয়ে হচ্ছে অপরিচিতার সাথে!!
কথা কি বলবে রাজকে ছাড়া যে কথা এখন আর বাচতে পারবেনা তাই চট করে ঘুমটা ভাঙতেই কাদতে লাগলো আলমারিতে রাখা রাজের শার্টটা শরীরের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো তোমাকে আমি কোথাও যেতে দিবোনা তুমি শুধু আমার শুধু আমার এইসব ভাবতে ভাবতে কথা মনে করে সত্যি কি রাজের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে নাকি এই কথা ভেবে গাড়িটা নিয়ে অপরিচাতেদর বাড়িতে গিয়ে নর্ক করতেই দায়োরান বললো এত রাতে ভেতরে যেতে দেওয়া যাবেনা!!

—– এদিকে কথা কোন অনুরোধ না করে বাড়ির বাইরে একটা বেন্চে বসে আছে কথা ভাবছে সকালে রাজ অফিস এ যাওয়ার পথে রাজকে আমার জীবনকে একনজর তো দেখতে পারবো তো তাতেই চলবো ওকে একনজর দেখেই চলে যাবো???

—— এদিকে আমার চোখে ঘুম আসছে না কথার কথা খুব মনে পড়ছে বুকের ভিতরটাই চিনচিনে ব্যথা করছে মনে মনে ভাবছি কথা হয়তো ঘুমাচ্ছে সে তো আমার থেকে দূরে থাকতেই চেয়েছে মুক্তি চেয়েছে আমার ভালবাসার বন্ধন থেকে কিন্তুু কেনো এমন লাগছে কেনো ঘুম আসছেনা তাই জানালা টা খুলতেই একটা শর্ক খেলাম বাইরের দিকে চোখ গেতেই বুকের ভিতরটা ধুমরে মুচরে গেলে বাইরে কথা বসে আছে কি করবো ভাবতে পারছিনা চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো পলকহীন ভাবে চেয়ে রয়েছি ভাবছি কথা এত রাতে কেনো বাসার সামনে বসে অাছে একমনে ভাবছি যাবো আবার বললাম আমি তো ছোটলোক কথা তো সজিব কে ভালোবাসে কথার কাছ থেকে দূরে থাকায় উওম হঠাৎ কার জানি স্পর্শ পেলাম শরীরে পিছন দিকে তাকাতেই!!দেখি অপরিচিতা!!

—— রাজ তুমি এখনো ঘুমাওনি!!? ( অপররিচিতা)

—— এদিকে জানালার পর্দাটা টেনে দিয়ে চোখটা মুছে অপরিচিতাকে বললাম এমনি ঘুম আসছেনা তাই জানালার পাশে চাদ দেখছি??? (আমি)

—- রাজ তোমার কি হয়েছে আজ তো অমাবস্যা তুমি চাদ কেমনে দেখে বাজে বকো নাতো!! ( অপরিচিতা)

——- না মনের আকাসের চাদটা দেখছিলাম কি করবো বলে মনের আকাসের চাদে হয়তে গ্রহণ লাগছে!! (আমি)

——– রাজ কি সব বলছো অন্ধকারে চাদ কেমনে দেখছো আর গ্রহণ মানে কি সব বলছো??? (অপরিচিতা)

—— আচ্ছা বাদ দাও তুমিও তো ঘুমাওনি অপরিচিতা!

—— কি করবো মনটাতো একজনকে দিয়ে দিয়েছি আর এছাড়া রাইসা তো বাবাকে পেয়ে মা টাকে ভুলে গেছে দেখতে এলাম মেয়েটাকে?( অপরিচিতা)

—— আচ্ছা অপরিচিতা তুমি ঘুমাও আমি একটু পর ঘুমাবো??

——- আচ্ছা রাজ তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করবো? ( অপরিচিতা)

———- হুম বলো কি রিকুয়েস্ট!! ( আমি)

——তুমি প্লিজ একটু ঘুমাও প্লিজ তুমি কি বুঝনা তুমি কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পাই প্লিজ ঘুমাও রাজ আর কত রাত জাগবে যাও তোমার মেয়েটা একা একা শুয়ে আছে (অপরিচিতা)

——- আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঘুুমাচ্ছি তুমিও ঘুমাও এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম মনে মনে ভাবছি কথা কি এখনো বাইরে বসে আছে হঠাৎ অনুভব করছি অপরিচিতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!!
——- আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঘুুমাচ্ছি তুমিও ঘুমাও এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়লাম মনে মনে ভাবছি কথা কি এখনো বাইরে বসে আছে হঠাৎ অনুভব করছি অপরিচিতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!!

–চোখ দু’টি শান্ত হয়ে যাচ্ছে।

— আচ্ছা রাজ! তোমায় একটা কথা বলি?

হুম,বলো কী বলবে?

—- তোমায় পায়ের নিচে, একটু জায়গা দিবে আমায়? যে অধিকারের মাধ্যমে একটা নারী সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। জানো,খুব ইচ্ছে হয় তোমায় বুকে মাথাটা রাখতে, তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকতে তুমি কি পারবে আমার স্বপ্নগুলো পূর্ণ করতে?

—-অপরিচিতা কথাগুলো বলে শেষ করতে না করতেই দেখে রাজ ঘুমিয়ে গেছে!!

তাই রাজকে ডাক না দিয়ে,রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। একসময় চাঁদের আলো রাজের মুখের ওপর পড়তেই! মনে হচ্ছে এ এক নতুন রাজ এতো সু্ন্দর লাগছে চাদের আলোয়! তা না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতো না। এভাবে অনেক্ষণ একপলকে চেয়ে থাকতে, থাকতে অপরচিতা ভাবলো রাজের কপালে এই চাদেঁই আলোই ভালবাসার একটা স্পর্শ একে দেয়!

তাই আস্তে আস্তে মুখটা রাজের কপালের একটা চুপু একে দিলো।কি সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে রাজ! কি মায়াবী মুখটা।অথচ এর পিছনে লুকিয়ে আছে কতইনা কষ্ট।

এইসব ভাবতে, ভাবতে অপরচিতা রাজের বুকের ওপর শুয়ে পড়ে! ঘুমের ঘোরে।অপরিচিতার মনে হচ্ছে রাজ যেনো ঘুমের মাঝেই অপরিচিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।অপরিচিতায় নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসতেছে, সে এক অজানা অনুভূতি।মনে হচ্ছে সে হারিয়ে যাচ্ছে অসীমের মাঝে। সে কিছুনা ভেবে রাজের বুকেই মুখ লুকালো, আর রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আস্তে আস্তে অপরিচিতা তার ঠোঠ দুটি রাজের ঠুটে লাগিয়ে দিলো ।

রাত পেরিয়ে,, সকালের মিষ্টি সূর্যের আলো জানান দিচ্ছে আরেকটা দিন শুরু হলো

…কি মজা! কি মজা! বাবাই মমকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।( রাইসা)

—– এদিকে রাইসার ডাকে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি, অপরিচিতা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে!

অনেকটা তাড়াহুড়ো করে অপরিচিতাকে যখনি ছাড়াতে যাবো। তখনি”বাবাই,বাবা
ই,থাক মমকে ছাড়াতে হবে না আমি তোমাদের জন্য চা করে নিয়ে আসছি। কি আনন্দ! আকাশে -বাতাসে
মম বাবাইকে জড়িয়ে ধরেছে। “এই বলে রাইসা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

.রাইসা রুম থেকে বের হতেই এই অপরিচিতা ছাড়ো কি করছো তুমি?

—–প্লিজ আর একটু থাকোনা এভাবে!

ছি অপরিচিতা কি বলছো এইবলে ছাড়িয়ে নিলাম অপরিচিতাকে আমার বুক থেকে!।

——অপরিচিতার ঘুম ভেঙ্গে যার বুক থেকে সরাতেই।

——-সরি! রাজ ঘুমের ঘরে ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি কিছু মনে করোনা?(অপরিচিত
া)

সরি শুধু তোমায় না আমারো বলার উচিত ছিলো।কারণ, আমায় তোমাদের বাসাতেই আশা ভুল হয়েছে।

আমার এমন কথা শুনে অপরিচিতা কাদো কাদো ভাবে বললো প্লিজ ভুল বুজনা। রাতে ঘুমের ঘরে তোমার বুকে শুয়ে পড়ি।

বাবাই কি হচ্ছে মামনির সাথে ঝগড়া করছো কেনো?

আচ্ছা ঝগড়া থামাও মম! দেখো তো আমাকে শাড়ি পড়লে কেমন লাগবে?

হঠাৎ শাড়ি কোথায় থেকে আসলো? ( অপরিচিতা)

——-কেনো নানু ভাই কিনে দিয়েছে। তুমি জানোনা মম?

——-“হঠাৎ আমি বলে ফেললাম”, রাইসা মামনি তোমাকে শাড়ি পড়লে মহারানীর মতো লাগবে

হি,হি,হি,কি মজা, হি হি হি অনেকটা জোরে জোরে হেসে উঠলো রাইসা।

মামনি তুমি এভাবে হাসছো কেনো?(আমি)

বাবাই আমাকো হাসতে দাও তো। আগে আমাকে মন ভরে হাসতে দাও?( রাইসা)

— আচ্ছা মম বাবাইকে ঠিক মতো লিপিস্টিক ও দিয়ে দিতে পারোনাই তুমি?

জানো বাবাই? আমি অনেক সুন্দর করে লিপিস্টিক দিতে পারি। তুমাকেও দিয়ে দিবো কেমন!

-ছি মা! তুমি দেখনি বাবার গালে লিপিস্টিক, কপালে লিপিস্টিক, ধ্যাত বাবাকে লিপিস্টিক দিয়ে দিবা ঠোটে, কেন মুখে দিয়েছো, ধ্যাত বাবা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমাকে দিয়ে দিবো।

এদিকে রাইসার কথা শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। আর মুখ কামড়াচ্ছি।

….অপরিচিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, লজ্জা মাখা মুখটা অনেক সুন্দর লাগছে।

—– রাইসা মামনি এবার তুমি চুপ করবে! বাবাকে লিপিস্টিক দিতে হবে না চলো ফ্রেশ হবে। ।

– মম একটা ছড়া বলি কেমন?

— আমাদের রাইসা মামনি কি ছড়াও পারে?

— তোমার মতো, বাবাই যদি ঠিক মতো লিপিস্টিক না দিতে, পারে তাহলে আমি ছড়া না বলতে পারলে কোন সমস্যা নেই হি,হি হি,( রাইসা)

—– আচ্ছা বলো মামনি কি ছড়া বলবে।( অপরিচিতা)

মনে মনে ভাবছি কি, ছড়া বলবে আল্লাই জানে!

— এক ছিল রাজা, রাজার ছিলো একটা বউ,
বউটা যেমন তেমন,
তাদের ছিল একটা রাজকন্যাটা ,
রাজকন্যা টা ছিল বড্ড অভিমানী!
রাজার আর রাণী মেলে করতো লিপিস্টিক নিয়ে খেলা,
ছোট্ট রাজকন্যা তা দেখলেই
বাজতো বারোটা,।
হি হি হি বাবাই, মম বলো তো ছড়া কেমন হয়েছে?

—- এদিকে রাইসার ছড়া শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিনা।

— হইছে মামনি,তোমায় ছড়া খুব সুন্দর হয়েছে এখন স্কুলে যেতে হবে রেডি হও।

— হুম যাচ্ছি, মামনি? ( রাইসা)

—- রাইসা চলে গেলে, আমি বলতে লাগলাম” শুনো অপরিচিতা আজ রাইসা বড় হলে কি ভাবতো, বলোতো? ছোট মেয়ে তাই লিপিস্টিক কেনো গালো মুখে লাগছে বুঝতে পারেনাই বলে এইরকম বললো। ক্ষমা করবে আমি কালকেই নতুন বাসা নিবো।

—- রাজ সরি সবটাই হয়েছে নিজের অজন্তেই। প্লিজ ভুল বুঝোনা আমায়?( অপরিচিতা)

—- বাবাই আমি রেডি,

—- এইতো আমার লক্ষি মামনি!।

— লক্ষি না ছাই! লক্ষি হলে মম আর আমাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে। (রাইসা)

-আচ্ছা মামনি বিকেলে, তোমাকে আর তোমার মমকে নিয়ে নদীর পাড়ে যাবো। (আমি)

…ওকে, বাবা উম্মা! আমার বাবাইটা দুনিয়ার শেষ্ট বাবা।(রাইসা)

—- সকালে ব্রেকফাস্ট করে, অপরিচিতা আর রাইসাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই!

—– সাহেব, সাহেব! ওই যে গাছের নিচে বেঞ্চটাতে মেয়েটা বসে আছে। ওই মেয়েটা রাত তিনটার দিকে এসেছিল আর যায়নি।

— দায়োরানের কথা শুনতেই,বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছিল,।বুকের মাঝে কষ্ট চাপা দিয়ে,, তবুও বললাম ও আচ্ছা তুমি যাও।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
এদিকে অপরিচিতা আমার দিকে চেয়ে আছে।

…হঠাৎ কথা আমাকে দেখে দৌড়ে কাছে আসলো।

—- মনে হচ্ছে, কিছু বলবে।ঠিক তখনি বাবাই, ও বাবাই এই আন্টিটাই না, তোমাকে বকা দিয়েছে,তোমাকে এতিম বলে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আচ্ছা বাবাই তোমাকে এতিম কেন বলেছে?

— মামনি তোমার আন্টি ঠিকই বলেছে। আমি যে মা এতিম আমার কেউ নেই।

বাবাই ছি, ওই আন্টি তোমায় মিথ্যা বলেছে, পঁচা আন্টি, তোমার রাইসা মামনি আছে না, সাথে রাইসা মামনির মম আছে না.? কে বলছে তোমায় কেউ নেই আমরা তো আছি?

—– সত্যি তো! আমার রাইসা মামনি আছে। এই বলে কুলে তুলে নিয়ে দুইগালে দুইটা পাপ্পি দিয়ে দিলাম।

— আন্টি, ওই আন্টি তুমি আমার বাবাইকে আবার বকা দিতে আসছো? আমার বাবাইটা অনেক ভালো।

এদিকে কথার দিকে চেয়ে দেখি, কথায় ঠোঁট কাপছে! চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখ দুটি লাল হয়ে আছে কিছু বলতে চেয়েও দৌঁড়ে চলে গেলো । নিজের অজান্তেই বুকটা কেমন করে উঠলো।

— রাজ চলে তো লেট হয়ে যাচ্ছে। ( অপরিচিতা)

—রাইসাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে, অফিসে গিয়ে বসতেই ডেস্কের ওপর দেখতে পাই একটা নীল খাম! খানিকটা অবাক হয়ে খামটা খুলতেই দেখি, একটা চিঠি,
-চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলাম প্রিয় রাজ, তোমাকে কি বলে সম্বোধন করবো তা আমার জানা নেই। জানো সেই কলেজের প্রথম দিন তোমাকে দেখেই ভালো লেগে যায়। সেই ভালো লাগা থেকেই ভালবাসা। আচ্ছা রাজ আমি জানি তোমার মনের আকাশে শুধু একজনের বিচরণ। সেই তোমার ছোটবেলার খেলার সাথী কথা। আর শুনেছি তোমার ডির্ভোস হয়েছে,।অনেকটা আশা ছিল তোমায় বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো, কিন্তু কি করবো আমার জন্য একটা, এতিম মেয়ের মুখ থেকে বাবা ডাকটা কেড়র নিতে পারিনা। বলো রাজ কিভাবে, পারি একটা মা হারানো বাবা হারানো মেয়ের শেষ স্বপ্ন যা তোমাকে নিয়ে গড়েছে,সেই স্বপ্নে দুস্বপ্ন হতে। আমি জানি রাজ, কারণ আমিও একটা মেয়ে, অপরিচিতা ম্যাডাম তোমায় সত্যি অনেক ভালোবাসে। পারলে ছোট্ট মেয়েটার মুখটা সব সময় হাসিখুশি রেখো।।

—- রাজ জানো, সবার ভালবাসা পূর্ণতা পায়না, আমারটা না হয় না পেলে,

ইতি, তোমার শুভাকাক্ষী পাখি।

—পাখির চিঠিটা পড়েই, অপরিচিতাকে বললাম পাখি কোথায়?

—- ও রাজ তোমাকে তো বলাই হয়নি, পাখি রিজাইন লেটার পাঠিয়েছে।

— কি বলছো এইসব আমাকে কেনো আগে বলনি।

—– রাজ আমি পাখিকে একমাস ভাবতে বলেছি, কারণ সেই অনেক sincere একজন কর্মচারী।

—– ওকে বাকিটা আমি দেখছি!

– অপরিচিতার রুম থেকে বের হয়ে ডেস্কে বসেই পাখিকে, ফোন করে বললাম, যে কাল আমরা পার্কে দেখা করছি, বলে ফোন রেখে দিলাম।

—– স্যার, এখানে একটা সাইন লাগবে,
!
—– আমি অনেকটা বিস্মিত হয়ে পিছন দিকে তাকাতেই দেখি রিসান! আরে রিসান তুই এখানে, কেনো?

—– রিসান কোনো কথা বলছে না, অবাক হয়ে চেয়ে আছে! দোস্ত কতো খুজেছি তোকে ( রিসান)

—– দোস্ত আমিও তোকে খুজেছি। অনেক ভালো লাগছে অনেক দিন পর তোর দেখা! ( আমি)

—- হুম দোস্ত অনার্স কমপ্লিট করে, এখানে আবেদন করেছিলাম, আল্লাহর রহমতে চাকরিটা হয়ে যায়।এইসব বাদ দে, শুন কথা ভাবী কেমন আছে?( রিসান)

—এদিকে, রিসানের মুখে কথা নামটা শুনতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো,

—- কি রাজ!বলছিস না কেনো, কথা ভাবী কেমন আছে?(রিসান)

— মনে, মনে বললাম ভালো থাকার জন্যই তো কথা ডির্ভোস নিয়েছে, হুম কথা অনেক ভালো আছে। ( আমি)

—– অফিস শেষ করে বাসায় যাচ্ছি অপরিচিতার সাথে,।হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা কাঁপছে, ফোনটা বের করতেই দেখি অাননোন নাম্বার!

– দুইবার রিং হতেই ফোনটা ধরি। কিন্তু কোনো কথা বলছে না, ও পাশ থেকে, খানিকটা বিস্মিত হয়ে, বলতে লাগলাম”কে বলছেন, কেন ফোন দিয়েছেন, কথা বলছেন না কেন “হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে চাঁপা কান্নার আওয়াজ হচ্ছে। বুঝতে আর বাকি হলোনা, কথা আননোন নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়েছে।

—— বাসায় এসে অপরিচিতাকে বললাম, অফিসের পাশে একটা বাসা নিয়েছি। ওখানে থাকবো, আর কালকের ঘটনার জন্য আমাকে ক্ষমা করবে,।

— রাজ কি বলো দোষটা তোমার ছিলোনা, ছিলো আমায়, তুমিই বরং ক্ষমা করো না আমায়, তবে একটা সত্যি জেনে নাও কালকে আমি যা নিজের অজান্তেই করেছি, তা সব তোমাকে নিজের স্বামী ভেবেই করেছি। দাওনা একটু স্হান রাজ, আমার যে মা, বাবা কেউ নেই তুমি ছাড়া।( অপরিচিতা)

—- প্লিজ অপরিচিতা কেনো বুঝনা, তুমি যা চাইছো, তা কোনদিন সম্ভব নয়।

—- ভালো থেকো আসি। এই বলে যখনি বের হবো!

দেখি দরজায় রাইসা বসে আছে।

—— মামনি তোমায় বাবাইকে যেতে,, দিবেনা?

—- হুম যাও, যাবেই তো, তুমি তো আমার বাবাই না,, তুমি কি জানো, মম রাতের বেলা তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদে। আমার মম তোমাকে অনেক ভালোবাসে, প্লিজ বাবাই তুমি মমকে ছেড়ে যেয়ো না। মমের কান্না আমি দেখতে পারবো না, যাও তুমি পচা বাবাই, যাও কাদছো কেনো যাওনা, আমি চলে যাবো, আকাশের তারা হয়ে যাবো, আল্লাহকে বলবো আমায় বাবা আদর করেনা, আমায়। মমকে কষ্ট দেই তাই আমি অভিমান করে তোমার কাঁছে এসে পড়েছি।

—– রাইসার কথা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না দৌড়ে কলিজায় টুকরা, টাকে কুলে তুলে গালে মুখে,চুমা দিয়ে বললাম,মামনি আর তোমায় বাবাইটা তার রাজকন্যাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা,।এই আমি কান ধরছি,

— হি,হি,হি মম দেখো? বাবাই কান ধরেছে।

— হইছে বাবা,অার কান ধরতে হবেনা, ওই দেখো মম কান্না করছে। আর মমকে কাদানোর শাস্তি হচ্ছে মমকে জড়িয়ে ধরে বলবে, আর কখনো ছেঁড়ে যাবেনা মমকে ….
চলবে…..