ফুল শর্য্যায় ছ্যাকা পর্ব-১১

0
1148

গল্পঃ #ফুল_শর্য্যায়_ছ্যাকা
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
#পর্ব_১১
— স্যার ওই মেয়েটা যায়নি, প্রায় ৬ ঘন্টা ধরে বাড়ির সাইর্ডে বেঞ্চটাতে বসে কাদঁছে আর কিছুক্ষণ পরপর রাস্তায় দিকে তাকাচ্ছে। স্যার মেয়েটা কিছু খায়নি সারাদিন ওখানেই বসে ছিল। আমি একবার বলেছিলাম ম্যাডাম আপনার জন্য কিছু কিনে নিয়ে আসবো। বিপরীতে সে বলেছিল ” ভাইয়া খাবার লাগবেনা, দোয়া করো আমি যেনো আমার স্বামীর পায়ের নিচে একটু জায়গা পায়” স্যার মনে হচ্ছে তার স্বামীটা অনেক ভাগ্যবান। কারণ মেয়েটা তার স্বামীকে অনেক ভালোবাসে। (দায়োরান)

—- এদিকে দায়োরানের কথা শুনে নিজের, কান্না লুকাতে পারছিনা। বুকটা হাহাকার করছে। আচ্ছা তুমি যাও আমি উনার সাথে কথা বলছি।

— জি স্যার,,

— গাড়ি থেকে নেমে, কথায় সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম কথা এখনো আমাকে দেখেনি মাথা নিচুঁ করে আছে, গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে ।

— আমি, হালকা কাশি দিতেই,দেখি কথা মাথা তুলে কেমন যেনো করুণ নজরে তাকালো,তার চাহনী দেখে মনে হচ্ছে কথা কিছু বলতে চায় ।

— কথার মুখটা দেখার সাথে সাথেই বুকটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে ওঠলো। কথা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোটার মতো টপ টপ করে পানি পড়ছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। খুব ইচ্ছে করছে ভালবাসার মানুষটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে, বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে তুমি নিজের শরীরের কি করেছো? তুমি জানোনা তুমি কষ্টে থাকলে, আমি কষ্ট পায়। বুকটা ফেটে যাচ্ছে কথার এমন অবস্হা দেখে । কিন্তু না, কথা তো আমাকে ভালোবাসেনি, এই কথা তো আমার ছোটবেলার খেলান সাথী কথা নই। এই কথার কাছে তো আমি ছিলাম একজন মা- বাবা হীনা ছোটলোক।যারজন্য সবসময় এতিম অনার্থ বলেই ধিক্কার জানিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পাতা ছলছল করে ওঠলো।

— হঠাৎ! কথা এমন করবে তা মোটেও ভাবতে পারিনি! কথা আমার পা দু’টি জাপটে ধরে বলছে ” রাজ ক্ষমা করে দাও আমায়”। আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি।আমাকে তুমি যা সাজা দিবে দাও, তোমাকে তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না রাজ। তা নাহলে আমাকে গলাটিপে মেরে হলো তবুও তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না।

— আমি মনটাকে শক্ত করে বললাম একি! করছেন আপনি? লোকে দেখলে কি মনে করবে?

— যে যাই মনে করুক, বা ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা ” রাজ ” আমি আমার স্বামীর পা ধরেছি, লোকে কি বললো তা তো আমার জানার বিষয় নয়।

— প্লিজ পা ছাড়েন!

— তুমি যতক্ষণ না আমায় ক্ষমা করবে ততক্ষণ আমি পা ছাড়বো না।

— এদিকে কথাকে পা থেকে, তুলে বললাম ” আমি তো তোমায় তখনি ক্ষমা করে দিয়েছি, ডির্ভোস পেপারের সাথে সাথে ক্ষমা টাও করে দিয়েছি।

—- “রাজ ” দাওনা তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা? তুমি শুধু দুইবেলা খেতে দিয়ো, অপরিচিতাকে নিয়ে সংসার করো আমার কোনো অসুবিধা নেই! শুধু তোমার বাড়িতে চাকরিনী হিসেবে একটু জায়গা দিয়ো? ( কথা)

— কি বলছেন আপনি জানেন? আপনার প্রতি আমার কোনো অধিকার নেই। একটা এতিমের চাকরানী হবে লন্ডন এ ইন্জিনিয়ারিং পড়ুয়া একটা মেয়ে। শুনেন আমরা এতিম, এতিমদের কখনো বড় স্বপ্ন দেখতে হয়।এতটাই হতভাগ্য নিয়ে জন্ম নিয়েছি যে, যার কারণে ছোটবেলাতেই মা বাবাকে হারায়, আমাদের স্বপ্ন দেখা অপরাধ। আর এখন তো আপনার খুশি হওয়ার কথা, এতিমটা আর আপনাকে বিরক্ত করেনা,।জানেন মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জন্মটা না হলেই ভালো হতো। আমার জন্য আপনি আপনার ভালবাসার মানুষকে পাননি। বিয়ে নিয়ে আপনাদের কত প্ল্যান ছিলো, সব ভেস্তে গেয়েছে। বলা ঠিক না, জানেন আপনাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমাদের একটা সংসার হবে। সংসারে রাইসার মতো একটা মেয়ে আসবে, কথা টা বলেই কেদে ফেললাম। কিন্তু আপনি বাসর রাতেই, আমাকে বলেছেন আপনার হৃদয়ের আকাশটা শুধু সজিবের, সজিব ছাড়া অন্য কেউ আমাকে ছোঁতে পারবেনা।এতিম, ছোটলোকের বাচ্চা বলে বাসর রাতের দিন কতো কথাই না বলেছেন। বাসর রাতটা ফ্লরে শুয়ে কাটাতে হয়েছে। শুনেন আমি আপনাকে মুক্তি দিয়েছি। চিরদিনের জন্য। আর আমার সামনে কখনো এইসব বলতে আসবেন না। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে, আপনার সাথে কাটানো ওই স্মতিগুলো মনে করতে,।আমি আর কখনো আপনার মুখটা দেখতে চায়না, আপনি কখনো আমার সামনে আসবেন না। কথাগুলো বলতে গিয়ে মনে হলো দেহ থেকে প্রাণটা বের হয়ে যাচ্ছে।

— কথা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে চোখ দিয়ে, অনবরত পানি ফেলছে। কথা কি বলবে, কথা যা মনে মনে ভাবছে আমি যা রাজের সাথে করেছি তা কোন পশুও করতে পারেনা। কিন্তু আমি ততো রাজকে ছাড়া বাচঁতে পারবোনা। হঠাৎ,,

— বাবাই, বাবাই, তুমি এখানে, এখনো বাসায় যাওনি? কখন যাবে?তুমি জানো না?বাবাই মম তোমাকে ছাড়া কখনো খায়না। বাবাই মমকে তুমি কষ্ট দিয়েছো, মম তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাদঁছে। আসো খাবে চলো মম খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।(রাইসা)

— এদিকে রাইসার মুখে এমন কথা শুনে, কথা কাঁদতে কাঁদতো দৌঁড়ে চলে গেলো। কথার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ দিয়ে এখন আষাড়ো ঝরণা ধারা বইছে।

— বাবাই তুমি কাদছো কেনে?

— না! মা, কাদছি না। চলো খাবো চলো , এই বলে শার্টের হাতা দিয়ে চোখটা মুছে রাইসা কে কুলে নিয়ে বাসায় ডুকলাম।

— বাসায় ডুকেই অনেকটা অবাক হলাম।

— অপরিচিতাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। হালকা, করে চোখে কাজল লাগিয়েছে, চোখ দু’টি হরিণের মতো ছলছল করছে।সবচেয়ে অবাক হওয়ার কথা হলো আজ প্রথম অপরিচিতা শাড়ি পড়েছে, মেরুন কালারের শাড়ীতে স্বগের অপস্নসীর মতো লাগছে অপরিচিতাকে।

— বাবাই, তুমি ওভাবে মামনির দিকে চেয়ে রয়েছে কেনো? তুমি কি আর কখনো মমকে দেখনি?

—- রাইসার কথা শুনে লজ্জায় মাথাটা নামিয়ে ফেললাম।

— হইছে রাইসা, মা তোমার বাবাকে নিয়ে খেতে এসো, আর পাকনামি করতে হবেনা।

—- এদিকে খাবার টেবিলে বসতেই দেখি আমার সব ফেবারিট আইটেম, সাথে ভুনা খিচুড়ী ও আছে। বুঝতেছিনা! আজ কোনো স্পেশাল ডে নাকি?

—- খানিকটা নীরবতা ভেঙ্গে বলেই ফেললাম “” অপরিচিতা তোমায় একটা কথা বলবো “?

— অপরিচিতা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো।

—–আচ্ছা বলো তো এতো সুন্দর করে সাজার মানে টা কি?

—- কেনো খারাপ লাগছে আমায়?

— না খারাপ লাগবে কেনো।

— তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে খারাপ লাগছে।

— ধ্যাত! আমি কি বলছি তোমায়? যে আমার খারাপ লাগছে।

— তাহলে একটিবার বলতে তো পারতে কেমন লাগছে আমায়?

— সত্যি বলতে,,,,

— কি বলো?

— শাড়ি পড়লে যে তোমায় এতো সুন্দর লাগে! তা হয়তো জানা ছিলনা, মনে হচ্ছে একটি গোলাপ কুড়ি থেকে ফুটে বড় হচ্ছে। আর কাজল টা মনে হচ্ছে, ফুলের রঙটাকে গাড় করেছে, আর ভেজা চুলের গন্ধ, ফুলের সুবাসের মতো, ছড়িয়ে যাচ্ছে।

— হইছে, হইছে আর বলতে হবেনা, আমার লজ্জা করেনা বুঝি?

—- হি,হি,হি, বাবাই দেখো মামনির নাকি লজ্জা করে?

— সত্যি কি লজ্জা করে? কথা বলে অপরিচিতায় দিকে তাকাতেই দেখি, অপরিচিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

— পৃথিবীতে হয়তো, সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে মেয়েরা যখন লজ্জা পেয়ে মিটিমিটি করে তাকায়। মনে হয় লজ্জায় মুখটা লাল,হয়ে মুখ থেকে, মায়াবী আভা বের।

— বাবাই,জানে মা এতো সুন্দর করে সেজেছে কেনো? কেনো তোমার সব পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে।

— রাইসার কথায় খানিকটা বিস্মিত হয়ে বললাস” মামনি আমি তো জানিনা, কেনো তোমার মামনি, এতো সুন্দর করে সেজেছে। আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে।” তুমি কি জানো?

— হি,হি বলবোনা।তবে বলতে পারি একটা শর্ত আছে।

— ওকে বলো কি শর্ত?

— বাবাই,আমাকে আর মমকে আজ বাহিরে থেকে ডিনার করিয়ে আনতে হবে।

— ওকে, এখন বলো?

— বাবাই, মমের আজ জন্মদিন। তাই মম আমার রাগি, বাবাটার জন্য সেজেছে হি,হি।( রাইসা)

— রাইসার কথা শুনে শর্ক খেলাম, আজ অপরিচিতার জন্মদিন।অথচ আগে জানলে ছোট্ট হলেও একটা গিফট করা যেতো।

— রাজ! কি হলো খাচ্ছো না কেনো?

— তোমার জন্মদিন, আগে কেনো বলোনি?

— সারপ্রাইজ দিলাম তোমায়!

— তাই বলে এমন সারপ্রাইজ। তোমার জন্মদিনে তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না!

— হইছে কিছু দেওয়া লাগবেনা, একটা অনুরোধ করবো?

— হুম কি বলো।

— আমি কি তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি, খুব ইচ্ছা করছে তোমার পছন্দের খাবার তোমাকে খাইয়ে দিতে।

— আমি কি ছোট মানুষ নাকি? অপরিচিতা।

— হি,হি,বাবাই তুমি ছোটই! আমি বড়। ( রাইসা)

— হুম, আমাদের রাইসা মামনি তো বড় কতো বড়।

— বড়দের কথা শুনতে হয়, তাই মম তোমাকে খাইয়ে, দিবে তুমি মমকে খাইয়ে দিবে। আর তোমরা দুজন আমাকে খাইয়ে দিবে। অনেক মজা হবে তো তাই না?

— এদিকে রাইসার কথা শুনে, আর না করতে পারলাম না, এদিকে দেখি মুখের কাছে অপরিচিতা খাবার তুলে ধরেছে। খাবার মুখে দিয়ে চিবাচ্ছি, চেয়ে দেখি অপরিচিতা, মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে আমায় দিকে!

—- আমি, খানিকটা পড় বললাম, কি হা করে আর কতক্ষণ বসে থাকবো? আর এভাবে চেয়ে রয়েছো কেনো?

—- না দেখছি!

— কি দেখছো?

— “রাইসার আব্বুটাকে দেখছি! এই বলে জিহ্বায় কামড় দিলো”( অপরিচিতা)

— এদিকে, অপরিচিতা আমাকে খাইয়ে দিলো, আমি কি করবো রাইসার হাসিমুখটা দেখার জন্য অনিচ্ছা সও্বেও আমিও অপরিচিতাকে খাইয়ে দিলাম।আর অপরিচিতা আর আমি মিলে রাইসা মামনিকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষ হতেই”‘

— রাজ তোমার কাছে আমার ছোট্ট একটা চাওয়া আছে?

— কি চাইবে বলো?

—রাজ বলো তুমি, কিছু মনে করবেনা?

–হুম, বলো!

—তুমি বলেছো না আমার জন্মদিন উপলক্ষে তুমি কিছু দিতে পারলা না?

— হুম অপরিচিতা, কিছুই দিতে পারলামনা।

— আজ এমন ইচ্ছা জিনিস চাইবো তা ইচ্ছা করলেই দিতে পারবে! প্লিজ “রাজ”তুমি বলো আমি যা চাইবো, তাই জন্মদিনের গিফট হিসবে আমায় দিবে?

— হুম দেওয়ার মতো হইলে অবশ্যই দিবো, তুমি কি চাইবে বলো?

— “রাজ “আমি জানি তুমি দিতে পারবে। তুমি ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা।

— আচ্ছা কি জিনিস চাইবে, তা তো বলবে আমায়?

— আচ্ছা কি চাইবে বলো?

— হুম, ” রাজ”আমাকে আবার না করবে না তো?

— অপরিচিতা প্রমিজ করছি, দেওয়ার মতো হলে অবশ্যই দিবো। আর আজ তোমার জন্মদিন তুমি যা চাইবে তাই দিবো।

সত্যি তো?

— হুম, সত্যি, সত্যি, সত্যি! তিন সত্যি দেওয়ার মতো হইলে তোমাকে আজ পৃথিবীটাই দিয়ে দিবো।

— তাহলে শুনো রাজ! তুমি কি সারা জীবন তুমি “”””””
তাহলে শুনো রাজ! তুমি কি সারা জীবন রাইসার আব্বু হয়ে থাকবা? আমাকে কে কি তুমি তোমার পায়ের নিচে জায়গা দিবো। যে জায়গা একটা মেয়েকে আর একটা ছেলেকে একই ছাদের নিচে, থাকার সমাজ কতৃক অধিকার দেয়। রাজ তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই, দিবে কী তোমায় পায়ের নিচে একটু জায়গা??

— অপরিচিতা তুমি এইসব কি বলছো? এটা কিভাবে সম্ভব?

— রাজ, জানো যখন রাস্তায় বের হয় তখন কিছু বখাটে ছেলে বলে, এইযে ভাবী একা নাকি? আর কত দিন একা থাকবেন। আমরা কি দেখতে খারাপ, আমাদের দিয়ে কি চলবে? রাতে ফ্রি থাকলে বইলেন। আর কত রাত একা কাটাবেন। “রাজ”মানুষ এতো খারাপ হয় কীভাবে? কত কষ্টে মেয়েটাকে নিয়ে বেঁচে আছি। রাজ তাদের এমন কথা শুনে বাসায় এসে কাদতে হয়। মনে মনে বলি আজ যদি, রাফি থাকতো তাহলে কেউ এসব বলতে পারতোনা। মেয়েটা না থাকলে হয়তো আত্মহত্যা করতাম।শুধু রাইসার জন্যই, মানুষের এতো বাজে কথা শুনেও বেচে থাকতে হচ্ছে। রাজ রাইসার কিছু হয়ে গেলে আমি হয়তো বাচবোনা। রাজ বলো আমি কী করবো।কতজনের মুখ বন্ধ করবো?”রাজ”তোমার কাছে কিছুই চায়না শুধু তোমায় পায়ের নিচে একটু জায়গা চায়। যা একটা মেয়েকে সমাজে মাথা উচু করে বাচঁতে শিখায়।

— অপরিচিতা, আমার হাত পা যে ভালবাসায় শেকলে আবদ্ধ। কেমনি আমি তোমায় বুকে জড়িয়ে নিবো বলতে পারো?

— রাজ আমি কখনো তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না। তবুও পাড়ায় ছেলেদের মুখে এমন বাজে কথা শুনতে পারবোনা। হয় তুমি আমাকে গলা টিপে হত্যা করো তা নাহলে এই অপবাদ থেকে আমাকে রক্ষা করো।

— কি বলবো, ভাবতে পারছিনা।

— রাজ, তোমার ওপর আমার বাঁচা মরা নির্ভর করছে। প্লিজ রাজ তোমার পায়ের নিচে দাওনা একটু জায়গা। জানো রাজ পাড়ার ছেলেরা যখন সতীত্ব নিয়ে কথা বলে তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে! কথাটা বলে অপরিচিতা কেদেঁ দিলো।

—– আমি বাকরুদ্ধ হয়ে অপরিচার কথা শুনছি। কি বলবো বুঝতে পারছিনা! আল্লাহ এ কোন খেলায় ফেললে আমায়? কি করবো আমি?

— বাবাই, বাবাই তোমরা এখনো রেডি হওনি? কখন যাবে? মা, মা,, তুমি কাদছো কেনো? তুমি কাদলে আমিও কান্না করবো। একদম কান্না করবে না। জন্মদিনে কেউ কাঁদে। বাবাই তুমি মাকে একদম বকবেনা। বাবাই তুমি মমের চোখের পানি মুছে দাও যাও?( রাইসা)

—- রাইসার কথা মতো, অপরিচতার কাছে যেতেই, অপরিচিতা মাথাটা নামিয়ে নিলো। যখনি অপরিচিতার চোখের পানি মুছে দিতে যাবো তখনি অপরিচিতা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, আমি শতবার কাদিঁতে রাজি যদি তুমি আমার চোখের পানি মুছে দাও,রাজ কিছুই চায়না সারাজীবন তোমার বুকের কোণে একটু জায়গা চায়।জানো রাজ তোমার বুকে আমি আমার শান্তির নীড় খুজে পায় । তোমার হাতের স্পর্শটাও যে আমার পরম পাওয়া । , ছোট বাচ্চা যেমন ভয় পেলে আকঁড়ে ধরে থাকে এভাবে অপরিচিতা জড়িয়ে ধরে আছে। তার চোখের পানিতে বুকটা ভিজে যাচ্ছে। মনের ভেতর এক অজানা ধ্রুব ছাঁয়া সৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ, “কথার” কথা মনে হতে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা করতে লাগলো। তাই অপরিচিতাকে বললাম”কি করছো ছাড়ো আমায়?”

— হি হি, মম বাবাই কে জড়িয়ে ধরেছে,! কি মজা কি মজা!বাবা,ই লেট হয়ে যাচ্ছে। তুমি না বলছো বাহিরে ডিনার করতে নিয়ে যাবে? কখন যাবে।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**

— রাইসার কথা শুনে অপরিচিতা বুক থেকে সরালাম,। বুক থেকে সরাতেই দেখি অপরিচিতা মাথা নিচু করে আছে। লজ্জাবতীর মতো মুখটা লাল হয়ে আছে।

— আচ্ছা রাজ !! তুমি ফ্রেস হয়ে আসো।

— আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

—ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে মোবাইলটা বাজছে। বালিশ মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে ফোনটা তুললো কথা “”””

— হ্যালো,, সুইট হার্ট তুমি কোথায় প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো সন্ধ্যা ৭.টায় পার্টি ।( সজিব)

— কথা মনে মনে ভাবলো এই নর্দমার কীটের জন্য আমার কলিজায় টুকরা রাজকে কষ্ট দিয়েছি। নর্দমার কীটটার একটা শাস্তি দেওয়া দরকার। এই মনে করে বললো” আচ্ছা তুমি সব কিছু রেডি করো তোমার সব বন্ধুদের দাওয়াত করো, আমি যথাসময়ে আসছি “” ( কথা)

— ওকে! মাই সুইর্ট হার্ট। উম্মাহ! আচ্ছা সুইট হার্ট রাখছি পড়ে কথা হবে। (সজিব)

— সজিব ফোনটা রাখতেই কথা ” অর্পণা নিশাতুল অবনীকে ফোন দিলো,, কিছুক্ষণ রিং হতেই,,

— হ্যালো কে?

— অবণী, আমি কথা কেমন আছিস???

— হ্যা কথা, এতদিন পর মনে পড়লো?

— নারে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তোর সাথে কথা আছে, তুই আর রিচি মামনী রেডি হয়ে, আলীশান হোটেলে আসবি সাতটায়। (কথা)

— কিসের জন্য??

— অর্পণা প্লিজ আসবি কেমন?

— ওকে! আসবো। আমার বান্ধবীটা তো খুশি!

— হুম! অনেক খুশি। ( কথা)

–” কথা, ফোনটা রেখে, ফ্রেশ হয়ে, ডেস্রিং টেবিলের কাছে এসে চোখে একটু কাজল লাগানোর জন্য ড্রেসিংটেবিল এর লংকার খুলতেই দেখে একজোড়া ঝুমকো, খুব সুন্দর। ঝুমকো জুড়া হাতে নিতেই বুকটা কেঁপে ওঠলো, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে, অশ্রু গড়িয়ে পরলো।কারণ এই ঝুমকা জোড়া যে রাজ কথার জন্য কিনেছিল, কথার এখনো মনে আছে একদিন, রাজ অফিস থেকে ফেরার সময় দুইটা বেলীফুলের মালান,সাথে একজোড়া কিনে আনে কথার জন্য! কিন্তু কথা ডেস্রিংয়ের ওপর বেলীফুল এর মালা পা দিয়ে পিসে ফেলে , কথা মনে মনে ভাবে ফুল আর ঝুমকো হয়তো কথার মন বোলানোর জন্য নিয়ে আসে, তাই ফুল পা দিয়ে পিসে ফেলে, রাজকে অনেক অপমান করে।কথায় কানে এখনো রাজের সেই কথা গুলো বাজছে ” যানে কথা তোমার চুলগুলো খুবসুন্দর তোমায় খোপায় বেলীফুলে মালা গুজে সাথে ঝুমকা জোড়া পড়লে অনেক সুন্দর লাগবে। মনে হবে স্বগ্বের কোনো অপর্সী “” কথা ঝুমকু জোড়া বুকে নিয়ে বলতেছে ” রাজ ” আমি অনেক বড় অন্যায় করছি। তোমার ভালবাসাকে অবহেলা করে। আমি কখনো জানতাম না তোমার ভালবাসাটাই আমার বেচে থাকার অক্সিজেন। কথা ঝুমকো জোড়া পড়ে আয়নার দিকে তাকালো। সত্যিই ঝুমকো জোড়া কানে পড়াতে অনেক সুন্দর লাগছে।

— কথা চোখটা মুছে, গাড়ি নিয়ে বের হলো।

— অপরিচিতা, তোমার হলো? (রাজ)

—- আর একটু! প্রায় হয়ে গেছে।

— রাজ মনে মনে ভাবছে ” মেয়েদের এই একটা সমস্যা তাদের সাজুগুজু করতে ঘন্টায় পর ঘন্টা চলে যায়। ”

— বাবা চলো, আমাদের হয়ে গেছে! (রাইসা)

— এদিকে, অপরিচিতায় দিকে তাকাতেই, চোখের পলক ফেলতে পারছিনা, হালকা করে পিংক কালারের শাড়ির সাথে, পিংক কালারের শাড়ী, সাথে খোলা চুলে, বেলীফুলের মালা। এক অজানা পারফিউম আসছে। চোখ দুটির দিকে তাকানো যাচ্ছে না, কাজল কালো চোখ দু’টিতে কাজল দেওয়াই আরো মায়াবী হয়ে ওঠেছে।

— “রাজ ” এভাবে চেয়ে থাকবে নাকি? বের হবে। লেট হয়ে যাচ্ছে। ( অপরিচিতা)

— হুম চলো, বলে রাইসাকে কুলে নিয়ে গাড়িতে ওঠে, ড্রাইবারকে গাড়ির ছাড়তে বললাম।

— গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আমার পাশেই অপরিচিতা বসেছে। কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে অপরিচিতা, আমার চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, শেরপুর নিউমার্কেট আসতেই গাড়ি জ্যামে পড়ে যায়। হঠাৎ দিকে অপরিচিতা ঘুমিয়ে গেছে, ঘুমের ভেতরে মাথাটা আমার কাধে রেখেছে।বাতাসে চুলগুলো চোখের ওপর এসে পড়ছে। খুব সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে একটি ফুটন্ত গোলাপ। কিচ্ছুক্ষণ পর গাড়িতে হোটেলের সামনে এসে থামতেই, অপরিচিতাকে ঘুম থেকে তুলে রাইসাকে নিয়ে হোটেলে ডুকলাম।

– এদিকে খুব সুন্দর করে হোটেলে একটা রুম সাজানো, মনে হচ্ছে কারো পার্টি আছে রুমের পাশ কেটে, ওয়েটারকে ক্যান্ডেলাইট ডিনারের জন্য সবকিছু রেডি করতে বললাম।

— বাবাই, বাবাই, এভাবে ডিনার করাকে কি বলে? ( রাইসা)

— মামনি, এভাবে ডিনার করাকে ক্যান্ডলাইট ডিনার বলে, এদিকে জানালা দিয়ে মৃদু হাওয়া বইছে। চাদের আলোতে অপরিচতা মনে হচ্ছে রং বদলাচ্ছে।

— অপরিচিতা রাইসা আর আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে, আর আমি আর রাইসা অপরিচিতাকেও খাইয়ে দিচ্ছি।

— খাওয়া শেষ হলে, বাবা,ই চাদের আলোতে তারাগুলোকে দেখা যাচ্ছেনা। বাবাই ডাক্তার আংকেল বলেছে আমি নাকি কিছুদিন পর তারা হয়ে যাবো। বাবা’ই মম আমি যদি তারা হয়ে যায়, চাদের আলোর মাঝে আমায় কি মনে পড়বে, তোমাদের। বাবা’ই তোমরা যদি তখন আমাকে ভুলে যাও আমার না খুব কষ্ট হবে। প্লিজ তোমরা তখন আর ঝগড়া করোনা,, আমি কিন্তু তারা হয়ে ঠিক তোমাদের দেখবো।আকাশ থেকে ডাকলে কি তোমরা শুনতে পাবে?

— এদিকে, রাইসার এমন আধাত্মিক কথা শুনের অপরিচিতা আর আমি দুজনেই কেদে দিলাম। কি যেনো মনে করে রাইসাকে কুলে নিতে যাবো তখন অপরিচিতাও রাইসাকে বুকে জড়িয়ে বলতে লাগলো, তোর কিছুই হবেনা মা,তুই যে আমার বেঁচে থাকার একমাএ অবলম্বন। এদিকে তাকিয়ে দেখি রাইসা আমার আর অপরিচিতার বুকে দুজনের মাঝখানে রাইসা।নিজেদের অজান্তের দুটি হাত এক হয়ে গেছে।।

— অপরিচিতা, তুমি রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসো, আমি হোটেলের বিলটা দিয়ে আসছি।

— “আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আসো বলে অপরিচিতা রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে বসলো।

— আমি বিল দেওয়ার জন্য যখনি, ক্যাশ কাউন্টারে যাবো।তখনি , হোটেলের যে রুমটাতে পার্টি, হচ্ছে সে রুম থেকে কথার কন্ঠ ভেসে আসছে।অনিচ্ছা সত্বেও, রুমের ভেতর যা শুনলাম তা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না, কথা “””””””””
চলবে…..