বিয়ে পর্ব-৩৪

0
677

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব- ৩৪

পারফিউমের মিষ্টি সুবাসে মাঝরাতে হঠাৎ অদ্রির ঘুমটা ভেঙে গেলো। নড়াচড়া করতে খুব অসুবিধা হচ্ছিলো। ও চোখ খোলার চেষ্টা করলো। তবে অন্ধকারে কিছুই ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না৷ একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলো ধ্রুব’র বিছানায়। অদ্রি ঘটনা বোঝার চেষ্টা করলো। ও তো রোকেয়ার ঘরে শুয়েছিলো তাহলে এঘরে কীভাবে এসেছে? কিছুই ওর মাথায় ঢুকলো না। অদ্রি এপাশ-ওপাশ ফিরতেই দেখলো ওর থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে, অদ্রি বিছানা থেকে নামতে গেলে ওর ওড়নায় পড়লো টান। পিছু ফিরে দেখে ওর ওড়নার কোণ ধ্রুব’র হাতের মুঠোয়। অদ্রির আর বুঝতে বাকি থাকে না ও এই ঘরে কীভাবে এসেছে। মধ্যরাতের নির্মল আকাশ। চুপচাপ চারিপাশ। ঘরে শুধুমাত্র ঘুমন্ত ধ্রুব’র নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ অদ্রি হ্যাঁচকা টানে নিজের ওড়নাটুকু ছাড়াতেই ধ্রুব ধড়মড়িয়ে ওঠে বসলো। কি হয়েছে বোঝার চেষ্টা করলো। এরপর পাশ ফিরে অদ্রিকে রাগী চেহারায় তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। অদ্রি জোরালো গলায় প্রশ্ন করলো,
— আমি তো নানুর ঘরে ছিলাম, এ ঘরে কিভাবে এলাম?
ধ্রুব এতক্ষণে বুঝতে পারলো ঘটনা কি! কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। কারণ কথায় কথা বাড়ে। ও চায় না এত রাতে অদ্রির সাথে আবারও খারাপ ব্যবহার করতে। ওকে চুপ থাকতে দেখে অদ্রি দ্বিতীয়বার আবারও একই প্রশ্ন করলো। ধ্রুব এবার বিরস গলায় উত্তর দিলো,
— আমি নিয়ে এসেছি তোমাকে।
অদ্রির কন্ঠে রাগ,
— কেন?
ধ্রুব স্বাভাবিক স্বরে বলল,
— পার্টনারদের আলাদা থাকতে নেই। এতে দূরত্ব
তৈরি হয়।
অদ্রি তাচ্ছিল্য করলো।
— আমরা কাছাকাছি ছিলামই কখন? দূরত্ব তো প্রথম থেকেই চলে আসছে। এখন এতো দূরত্ব কমানোর পেছনে নিশ্চয়ই আপনার কোনো মতলব আছে।
ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। কিছুই না জানার ভান করে বলল,
— আমাকে এত কথা শোনানোর মানে নেই। তুমি না হয় আমার ওপর হাত-পা ছুঁড়াছুঁড়ি করো, আমি তাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অন্য কেউ তো আর হয়নি।
— মানে?
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— নানুই আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে নিয়ে আসতে।ঠিকঠাক ঘুমাতে পারে না, নড়াচড়া করে, হাত-পা ছুঁড়ে এমন কেউ তার পাশে থাকলে তার ঘুমের অসুবিধা হয়। আমার বউয়ের দায়ভার তো আমারই, সেজন্যই ডেকে নিয়ে গছিয়ে দিলো আমার হাতে।
অদ্রি সন্দেহ নিয়ে তাকালো। কই, রোকেয়ার ঘরে যখন ও যখন ঘুমাতে গেলো তখন তো ওকে এসব বলেনি। বরংচ আরো আদর করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। তাহলে ধ্রুব এসব বলছে কেন? অদ্রির বিশ্বাস হলো না কথাগুলো। ধ্রুব একপর্যায়ে রেগে গেলো। বললো এক্ষুনি রোকেয়াকে ডেকে এনে প্রমাণ করে দেবে ও সত্য বলছে। অদ্রি ঝামেলা বাড়াতে চাইলো না, সেজন্য চুপ করে গেলো। ধ্রুব’র সাথে এক বিছানাতে শোয়ার ওর কোনো ইচ্ছে নেই। সেজন্য সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম নামলো না সাথে সাথেই৷ ধ্রুব এটা দেখে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে বলল,
— বেডে যাও তুমি, আমি এখানে শুয়ে পড়ছি!
অদ্রি মাথা নাড়লো,
— প্রয়োজন নেই।
ধ্রুব থমথমে গলায় বলল,
— আছে।
— আমি যাবো না।
ধ্রুব গম্ভীর গলায় বলল,
— আচ্ছা মুশকিল তো, তুমি এমন ঘাড়ত্যাড়া কেন?
— আমার ইচ্ছে।
— আশ্চর্য! দুটো ভালো কথা বললে কি হয়? আমার সাথেই তোমার সব রাগ-জেদ। মাঝেমধ্যে আমার কথা শুনলে কি ক্ষতি হয়?
অদ্রি স্থির কন্ঠে বলল,
— আপনি এসে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন, আর আমি আপনার সাথে হেসে হেসে কথা বলবো? আপনার মনে হয় আমি এসব করবো?
ধ্রুব হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হয় এটাই৷ ও গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
— প্লিজ এটা স্বাভাবিক ভাবে নাও অদ্রি। আমি জানি উচিৎ হয়নি, ভুল করেছি৷ আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো তোমার ওপর…
অদ্রি ভাবলেশহীন গলায় বলল,
— যান, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

শান্ত, স্থির কণ্ঠের বাক্যগুলো ধ্রুব’র বুক ভারী করে দিলো। এবার নিজের প্রতি সত্যি ওর করুণা হচ্ছে। এই মেয়েটা নিজেও তো ভালোবাসে ধ্রুবকে৷ এটা কিরকম ভালোবাসা যেখানে এত রাগ, জেদ নিয়ে বসে থাকে? আর কত ধৈর্য ধরবে সে? ধৈর্যের বাঁধটা এবার সত্যিই ভেঙে গেলো ধ্রুব’র। মেয়েমানুষ এমন জটিল জানলে সে এই মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাতো না। ভুল করে একবার তাকিয়ে সে যে ফাঁসলো, সেই ফাঁস থেকে বেরুনোর আর কোনো পথ বের করতে পারছে না সে। ধ্রুব’র মস্তিষ্ক আবারও ক্রোধিত হয়৷ ঠিক করে সেও এবার থেকে অদ্রির মতোই ব্যবহার করবে৷ এতভাবে চেষ্টা করেও যখন মেয়েটা ওকে এত কষ্ট দিচ্ছে তখন সেও নিজের যা খুশি তা-ই করবে। এবার অদ্রি রাগ, করুক, জেদ করুক তাতে ওর কিছুই যায় আসবে। ধ্রুব অদ্রিকে শেষবারের মতো বিছানায় শুতে বললো। কিন্তু অদ্রি বরাবরের মতোই নিজের জেদকেই প্রাধান্য দিলো৷ ধ্রুব রেগে ওকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। অদ্রির চেঁচামেচি, ছটফটানিতে কোনো ভ্রুক্ষেপই করলো না। এরপরে হাতের কাছে থাকা জগের পুরো পানি সোফায় ঢেলে দিয়ে ঠাস করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়তেই অদ্রি ভীষণ
রাগান্বিত হয়ে বলল,
— বাড়াবাড়ির লিমিট ক্রস করে ফেলছেন।
ধ্রুব এবার ওঠে বসে। প্রচন্ড এক ধমক দিয়ে
বলল,
— স্টপ ইট। লিমিট তুমি ক্রস করছো। এবার আমি তা ঠিক করবো…
ধ্রুব’র ধমকে অদ্রির বুক কেঁপে ওঠলো। চোখ ভিজে ওঠলো। ধ্রুব সেটা দেখে আবারও ধমক দিলো,
— চোখ মুছো! নাকেরজল, চোখেরজল এক করে আমার বুকে ব্যথা ধরালে বেশি ভালো হবে না। কাল রাতের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! এবার ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ ঘুমাও…
অদ্রি সত্যিই এবার ভয় পেলো। ধ্রুব’র চোখের চাহনিতেই ওর সমস্ত ক্রোধ বোঝা যাচ্ছে৷ অদ্রি
চুপচাপ শুয়ে পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ধ্রুব নিজেও শান্ত হবার চেষ্টা করছে, তবে ওর শরীর কাঁপছে। অদ্রির জেদ সে আর সহ্য করবে না।

আদিবার বিয়ের রিসেপশন অনুষ্ঠান শেষ করে ওখান থেকে বেলা গড়াতেই শায়লারা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। অদ্রি সারা রাস্তা মুখ কালো করে রইলো। ধ্রুব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকলো। দু’জনের কেউই কাউকে একবিন্দু কেয়ার করছে না।
গাড়ি ছুটে চলেছে হাইওয়ে ধরে। ধ্রুব’র পুরো মনোযোগ ড্রাইভিংয়ে। মাঝেমাঝে আড়চোখে লুকিং গ্লাস দিয়ে অদ্রিকে দেখছে। কাল রাতে ধ্রুব’র কঠোর ব্যবহারের জন্য অদ্রি মুখে কুলোপ এঁটে পেছনে শায়লার সাথে বসেছে। ধ্রুবও ওকে বলেনি সামনে বসার জন্য। কেন বলবে সে? নিজের ভালোবাসার বউকে কাছে টানায় সে নাকি ভারি অন্যায় করেছে! করবে সে অন্যায়, ডোন্ট কেয়ার! বাড়ি ফিরতে ফিরতে ওদের রাত আটটা বেজে গেলো। সকলেই খুব ক্লান্ত। আশফাক সাহেব আগেই বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে রেখেছেন। সকলেই ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো, আড্ডাও হলো কিছুক্ষণ। এরপর যার যার ঘরে বিশ্রাম নিতে চলে গেলো।

এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেলো। অদ্রি এখন “ক” বললে ধ্রুব “খ” বলে। দু’জনের বনিবনা একদম হয় না।
অদ্রি ফ্লোরাকে ভীষণ মিস করে। এতদিন হৈ-হল্লা, মানুষের ভিড়ে থেকে এখন খালি বাড়িতে অদ্রির আর ভালো লাগে না। কথা বলার মতো শায়লা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ নেই, এমনকি জরিনাও গ্রাম থেকে ফেরেনি। অদ্রি ফোন হাতে নিয়ে সময় কাটাতে বই পড়ে, ফোন স্ক্রল করে কিন্তু কিছুতেই ওর মন টিকে না। রাত এগারোটা৷ বই পড়তে পড়তে অদ্রি বালিশে মুখ গুঁজে শুয়েছিলো। আচমকা শুনলো কেউ একজন জিজ্ঞেস করছে,
— বাইরে যাবে?
অদ্রি হুট করে মুখ তুলে চাইলো। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব৷ অফিস থেকে ফিরলো কখন? ও মুখ
ফিরিয়ে কাঠ গলায় উত্তর দিলো,
— না।
— কেন?
— আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি আমাকে হঠাৎ বাইরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, তাও এত রাতে? ব্যাপার কি?
অদ্রির ত্যাড়া কথায় ধ্রুব’র চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ভেবেছে মেয়েটাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে। সারাদিন একা বাসায় বসে থাকে, বোর হয়। সে নিজেও সারাদিন অফিসে থাকে। ঠিকঠাক কথাও হয় না কতদিন! ভেবেছিলো ওর সাথে সময় কাটাবে। কিন্তু না, ধ্রুবকে না রাগালে অদ্রির তো চলবেই না। ও চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিলো,
— আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবো। তোমাকেও তাই নিয়ে যাবো। যেতে না চাইলেও নিয়ে যাবো! সো, চলো…
অদ্রি হতবিহ্বল হয়ে ওঠে বসলো। বাহ! মনে মনে এতদূর? নিছকই অদ্রির সাথে এতদিন ভালোমানুষির নাটক করে গেছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ক’দিন আগেও যে মানুষটা ওকে ভালোবাসি বলে বলে মাথা খারাপ করে দিতো, সে এখন বড় গলায় বলছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবে! ছিহঃ! ও তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
— এইতো নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দিলেন। এতদিন তো এটারই অপেক্ষা করেছেন, এখন যখন সব পেয়ে গেছেন তখন তো আমাকে ছুঁড়েই ফেলবেন। আমিই ঠিক ভেবছিলাম…
ধ্রুব নিচু হয়ে অদ্রির মুখোমুখি বসলো। ওর হাসি পাচ্ছে। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে স্বাভাবিক
কন্ঠে বলল,
— ভেরি ইন্টিলিজেন্ট অদ্রি। এসব নেগেটিভ ব্যাপারগুলো কত সহজে আন্দাজ করে ফেলো, বুঝে যাও। অথচ হৃদয়ে রক্তক্ষরণের বন্যা বইয়েও এতদিনে তোমাকে বোঝাতে ব্যর্থ যে আমি তোমাকে কতটুকু চাইতাম। যাকগে সেসব কথা, এতো কম্পলিকেশনস নিয়ে কোনো সম্পর্কই সামনে এগুতে পারে না। সেজন্য
আমি ঠিক করেছি তোমার সব যখন পেয়েই গেলাম তখন আর কি দরকার তোমাকে? যে যার মতো থাকি না!
অদ্রির কপালে ভাঁজ। এসব কি বলছে ধ্রুব? ওর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না,
— মানে?
ধ্রুব ভাবলেশহীন গলায় বলল,
— মানে এটাই, এখন থেকে আমার যা খুশি তাই করবো। বউ হয়েছে, গার্লফ্রেন্ড হবে না তা কি কখনো হয়?
অদ্রি কটমট করে বলল,
— ওহ আপনি এবার গার্লফ্রেন্ড বানাবেন তাইতো? মানে বউ রেখে পরকীয়া?
ধ্রুব ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
— বউ তো বেশি ইন্টিলিজেন্ট, তাই ঠিকঠাক যাচ্ছে না ওর সাথে। মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য গার্লফ্রেন্ড দরকার। আজকে আমার ফার্স্ট ডেইট, তুমিও চলো। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারপার্টি হবে রাত বারোটায়…
অদ্রি তেজ নিয়ে হাসলো,
— আমাকে কেন যেতে হবে?
ধ্রুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
— তুমিও দেখবে তোমার অপরাধী হাজব্যান্ডকে কার সাথে মানায়, আফটার অল তুমি আমার বউ!
অদ্রি জ্বলে ওঠলো। ধ্রুব এতো খারাপ এতোদিন তো ধরতে পারেনি। ওর সামনে অন্য মেয়ের কথা কিভাবে বলতে পারছে? এই লোকটাকে ও ভালোবেসেছে? একে? অদ্রি নিতে পারলো না এতো বাজে কথা। বলে ওঠলো,
— শাট আপ…
ধ্রুব ওকে লক্ষ্য করছে আর শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। মেয়েটা কি একটু হলেও জেলাস? ও অদ্রিকে আরও রাগিয়ে দিতে নির্বিকাভাবে বলল,
— তুমি তোমার মতো থাকো, আমি আমার মতো….
অদ্রির চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠলো। থমথমে গলায় বলল,
— এই আপনার ভালোবাসার ধরণ?
ধ্রুব কাবার্ড খুলতে খুলতে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
— ফুটো থালায় ভালোবাসা বিলিয়ে কি লাভ? যখন
তুমি দামই দাওনি! যাইহোক, কীসে আমাকে ভালো মানায় বলো তো?
অদ্রি ক্যাটকেটে স্বরে উত্তর দিলো,
— আপনাকে কিছুতেই মানায় না।
ধ্রুব বাঁকা হাসলো,
— আর ইউ জেলাস?
অদ্রির গা জ্বলে গেলো। ওর মন পুড়ছে তীব্রভাবে। মরে গেলেও সে এটা স্বীকার করবে না৷
— নো ওয়ে…

.

চলবে…..