আমরা ভালোবেসেছিলাম পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
162

#ধারাবাহিক গল্প
#আমরা ভালোবেসেছিলাম
শেষপর্ব
মাহবুবা বিথী

তিরিশ বছর পর হলেও নুরবানুর চিনতে এতোটুকু অসুবিধা হয়নি। শরীর ও চেহারায় বয়সের ছাপটা একটু বেশী পড়েছে। ওর গায়ে একটা লালরঙের পাঞ্জাবী। মুখশ্রীটা আগের মতোই আছে। তবে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। মেহরাবকে দেখার সাথে সাথে চৈত্রের তাপের দহনে পোড়া নুরবানুর চোখ আজ বর্ষার নব ধারাজলে যেন শীতল হয়ে গেল। এতোদিন এই প্রিয় মানুষটাকে দেখতে না পেয়ে চোখের কার্ণিশে মেঘ জমে ছিলো। সেই মেঘ আজ জল হয়ে বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজার মতো শরীর সমস্ত স্পন্দনকে শিহরিত করে দিলো। জীবন সংসারের রঙ্গ মঞ্চে বৈষম্যের চক্রবুহ্যের ফাঁদে পড়ে নুরবানু ভেবেছিলো ভালোবাসাটা মনে হয় আর কোনোদিন ওর আঁচলে ধরা দিবে না। আজ সেই ভালোবাসার পিলসুজে নিভে যাওয়া বাতিটা যেন হঠাৎ জ্বলে উঠলো। নুরবানুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ান আর মেহরাব উঠে আসলো। নুরবানু এভাবে মেহরাবকে দেখে ঘোরের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলো। কত অভিমান কত অপমানের জল গড়িয়ে গেছে এই তিরিশ বছরে। আয়ান কাছে এসে নুরবানুর হাত ধরতে ওর ঘোরটা ভেঙ্গে গেল। মেহরাবও পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিয়ে বাড়িতে নুরবানুর এমন আচরণে অতিথিদের মাঝে একটু গুঞ্জনের সৃষ্টি হলো। নুরবানুও বাস্তবতার মাঝে ফিরে এলো। শেহজাদ নুরবানুর এমন আচরণে একটু বিরক্তি প্রকাশ করে ঝামট মেরে পরীবানুকে বললো,
——দাঁড়িয়ে আছো কেন, যাও তোমার আদরের ননদকে বল, এটা কোনো নাটকের মঞ্চ নয় যে ওর নাটক দেখার জন্য সবাই বসে আছে। আশে পাশের মানুষ নানা কথা বলছে। ওদিকে কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে। এখনি বিয়ে পড়াতে হবে।
শেহজাদের উপর পরীবানুর মেজাজটা বিগড়ে গেল। তাই ও পাল্টা ঝামট মেরে বললো,
—–তোমাকে আয়ানের বিয়েটা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। বিয়ের সমস্ত আয়োজন আয়ান যখন একাই সামলে নিয়েছে তখন বাকিটাও সামলে নিতে পারবে।
আয়ান নুরবানুর হাত ধরে বরের আসনের দিকে এগিয়ে আসলো। মেহরাবও নুরবানুর পাশাপাশি হেঁটে আসলো। একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে। কাজী এসে বসে আছে। জুবাইদা লালটুকটুকে বেনারশী পড়ে কনের আসরে বসে আছে। যদিও সবাই জানে এই অনুষ্ঠান দুই পক্ষ মিলেই হচ্ছে। আসল সত্যটা হচ্ছে এই বিয়ের পুরোটা খরচ আয়ান একাই বহন করেছে। তবে জুবাইদার পরিবার যেটুকু সামর্থে কুলায় শুধু সেটুকুই কন্ট্রিবিউট করেছে। কাজী এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। আয়ানের উকিলবাপ হলো মেহরাব। বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ হয়ে গেলে আয়ান মাইক হাতে উপস্থিত সুধীবৃন্দের মাঝে মেহরাবকে পরিচয় করে দিতে বললো,
—–উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আজকে আমার এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি যার কারণে বেশী আলো ছড়িয়ে দিয়েছে সেই মানুষটির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই। উনি হচ্ছেন বাংলাদেশের গৌরব। ওয়াল্ডসেরা বিজ্ঞানীদের একজন। পাবলিক হেলথ এর উপর ডক্টরেট করে বর্তমানে আইসিডিডিআরবি তে কর্মরত। উনার নাম মেহরাব জামান।
নামটা উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে আগত অতিথিবৃন্দের মধ্যে অনেকেই উনাকে চিনতে পেরেছেন। বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ অ্যাক্টিভ তারা মুহুর্তে উনাকে চিনতে পেরে করমর্দন করলেন। আয়ান ওর শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে মেহরাবকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। একফাঁকে জুলেখা বিবির কাছে গিয়ে মেহরাব উনাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
——আন্টি কেমন আছেন?
জুলেখা বিবি মেহরাবের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—–আলহামদুলিল্লাহ,আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো। তোমার বাবা মা কেমন আছেন?
—–আল্লাহ আমাকে যখন যে অবস্থায় রাখে আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে শোকরিয়া আদায় করি। আমার বাবা মা সবাই ভালো আছেন। ওরা আমেরিকাতে সেটেলড হয়েছেন।
মেহরাবকে দেখার সাথে সাথে জুলেখা বিবির চোখের তারাটা নেচে উঠলো। উনার মেয়েটা এবার হয়তো সংসারী হবে এই আশায় বুক বাঁধলেন।
এরপর মেহরাব পরীবানুর দিকে তাকিয়ে বললো,
—–ভাবী কেমন আছেন?
—–তোমার সাথে কথাই বলবো না। আমার ননদটা তোমার অপেক্ষায় পুরোটা জীবন পার করে দিলো আর তোমার একবার জানতে ইচ্ছে হলো না,ও কেমন আছে?
——ভাবি মিথ্যা বলবো না। এক মুহুর্তের জন্য আমিও ওকে ভুলতে পারিনি। তবে স্টাটাস কিনতে গেলে আমার মতো পথের ভিখেরির দেরী তো একটু হবে। সবাই তো আর জমিদার হয়ে জন্মায় না।
——এখনও রাগ পুষে রেখেছো?
——রাগ পুষে রাখলে কি জীবনের শেষ সময়ে ওর কাছে ফিরে আসি?
—–তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে—–
—–না ভাবি,আমি এই মুহুর্তে এসব ভাবছি না। আয়ানের বিয়েটা আগে এনজয় করি।
——চলো, আমার বৌমার সাথে তোমার আলাপ করিয়ে দেই।
——ওকে আমি ভালোভাবেই চিনি। ও কিছুদিন আইসিডিডিআরবি তে ছিলো। ওর মাধ্যমেই আয়ানের সাথে আলাপ হয়। ওর মোবাইলে আপনাদের ফ্যামেলি ছবি দেখেই আমি চিনতে পারি।
একফাঁকে আয়ান এসে মেহরাবকে নিয়ে যায়। নুরবানু আগে থেকেই একটা নিরিবিলি জায়গায় বসেছিলো। আয়ান মেহরাবকে নুরবানুর পাশে বসিয়ে দিয়ে বরের আসনে গিয়ে বসে। দুজনেই যেন দীর্ঘবিরহের নিরবতা পালন করছে। মেহরাব নুরবানুর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। যখন ও এই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলো তখন মেয়েটি ছিলো সদ্য যৌবনা। আজ ও পরিপক্ক রমনী। ওর জন্য নিজের জীবনটা পর্যন্ত বাজি রেখেছিলো। আজ পর্যন্ত ওর জায়গায় কাউকে বসাতে পারেনি কিংবা বসাতে ইচ্ছে হয়নি। আত্মীয় স্বজন সবাই তখন মেহরাবকে বোকা বলেছিলো । কারণ ও বিয়ে করছে না অথচ নুরবানু তো বসে নেই। সে তো নিশ্চয় বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। এমনকি ওর বাবা মায়েরও ধারণা ছিলো ও কোনোদিন নুরবানুকে পাবে না। কিন্তু মেহরাবের বিশ্বাস ছিলো মৃত্যুর আগে হলেও নুরবানুর দেখা ও ঠিক পাবে। বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না দূরেও ঠেলিয়া দেয়। কবি সাহিত্যিকরা এই কথাগুলো এমনি এমনি লিখেননি। মানুষের জীবনে ঘটেছে বলেইতো লেখা হয়েছে। নুরবানুর শরীর থেকে একটা মিষ্টি সুবাস এসে মেহরাবকে আবেশে জড়িয়ে নিচ্ছে। সেই চেনা সুবাস।
ওদিকে নুরবানুর এখনও মনে হচ্ছে ও যেন স্বপ্ন দেখছে। আজ যে মানুষটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে এই মানুষটার জন্য ও পরিবার সমাজ সংসার সবার সাথে লড়াই করে গেছে। আজ পর্যন্ত এক মুহুর্তের জন্য মানুষটাকে ও ভুলতে পারেনি। দু,জনের মনের ভিতর ঝড় বইছে। নিরবতা ভঙ্গ করে মেহরাব বললো,
——আল্লাহপাকের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম মৃত্যুর আগে হলেও যেন আমার সাথে তোমার দেখা করিয়ে দেন। উনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমারও বিশ্বাস ছিলো তোমার দেখা একদিন আমি পাবো।
——-মনে হয়নি কখনও আমি অন্যের বউ হয়ে যেতে পারি?
—–হয়নি একথা বলবো না। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম তুমি স্বামী সংসার সন্তান নিয়ে হয়তো সুখেই আছো। তারপরও ইচ্ছে ছিলো মৃত্যুর আগে হলেও মানুষটাকে দূর থেকে একবার দেখবো। মাঝে মাঝে নির্জন রাতের একাকীত্বে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে পর হয়ে যাওয়ার কষ্ট অনুভব করতাম।
—–তুমি বিয়ে করোনি?
—–নাহ্ বিয়ে করে সংসারী হতে কেন যেন মনটা চায়নি।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষের পথে। বেশ রাতও হয়েছে। পরীবানু ওদের ডাকতে এসে বললো,
—–এবার তো বউকে নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। রাত তো অনেক হলো। মেহরাব তুমিও আমাদের সাথে চলো। এবার বিয়ে করে সংসারী হও।
—–সবার ভাগ্যে কি সবকিছু জোটে?
—–সেজন্য চেষ্টা করতে হয়।
—–সব চেষ্টা সাফল্য পায় না।
নুরবানুর মেহরাবের উপর খুব অভিমান হলো। এতোই যদি নুরবানুকে ভালোবেসে থাকে তাহলে গাঁটছড়া বাঁধতে সমস্যা কোথায়? নাকি এখন সেই পুরোনো অভিমান ধরে বসে আছে? মনের অভিমান চাপা দিয়ে নুরবানু পরিবানুকে তাগাদা দিয়ে বললো,
—-ভাবি কথা পরেও বলতে পারবে। ওতো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। দেরী হলে ভাইয়া রেগে যাবে।
অগত্যা সবাই বর আর বউকে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হলো। যাওয়ার আগে মেহরাব নুরবানুর কাছে ফোন নাম্বারটা চেয়ে নিয়ে বললো,
—–তুমি ডাক্তার মানুষ। কখনও হয়তো দরকার পড়তে পারে। তাই ফোন নাম্বারটা নিলাম।
মেহরাবের এই কথায় নুরবানু ভীষণ কষ্ট পেলো। ফোন নাম্বারটা দিলো তবে মনে মনে ভাবলো চোখের আড়াল হলে মনে হয় মানুষ মনের আড়ালও হয়ে যায়।
পরিবানু জুলেখা বিবি আর শেহজাদ আগেই বাড়ি পৌঁছে গেল। বর বউকে বরণ করতে হবে। মেহরাবকে বিদায় দিয়ে আয়ান আর জুবাইদাকে নিয়ে নুরবানু বাড়ি ফিরে আসলো। গাড়ি থেকে নেমেই নুরবানু নিজের রুমে চলে গেল। নুরবানু জানে, পরীবানু মেহরাবকে আকার ইঙ্গিতে বিয়ের কথা বলেছে। কিন্তু মেহরাবের বিয়েতে তেমন উৎসাহ নেই। অভিমানে নুরবানুর বুকের ভিতরটা ব্যথায় মোঁচড় দিতে লাগলো। আর এদিকে এটা নিয়ে বাড়িতে সবাই নানা কথা বলবে। সেটা শুনতে নুরবানুর একটুও ভালো লাগবে না। নুরবানু ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পুরো বাড়ি নিরব হয়ে গেল। রাতের নিদ্রাহীনতায় চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে। নুরবানু বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। হেমন্তের ঝিরঝিরে ঠান্ডা বাতাস এসে নুরবানুকে ছুঁয়ে দিলো। বাতাসে ভেসে আসছে শীতের আগমনি গান। কৃষ্ণপক্ষ চলছে। চাঁদটা একটু দেরী করে উঠেছে। একসময় দুচোখে ঘুম নেমে আসাতে নুরবানু বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।

বেশ কিছুদিন সময় পার হয়ে যায়। এরমাঝে নুরবানুর সাথে বেশ কয়েকবার মেহরাবের দেখা হয়েছে। অনেকটা সময় ওরা একসাথে কাটিয়েছে। পুরোনো স্মৃতির মাঝে দুজনেই হারিয়ে গিয়েছে। ওদের একসাথে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা, পড়াশোনা করার আড়ালে দু,জন দুজনকে লুকিয়ে দেখা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরে বেড়ানো এসব কতকথা মনে করে স্মৃতির আঙ্গিনায় হেঁটে বেড়িয়েছে। পাশাপাশি দু,জনের মনের গহীনে নিজেদেরকে আপন করে না পাওয়ার আফসোসও ছিলো। তবে বিয়ের প্রতি মেহরাবের কোনো আগ্রহ না থাকাতে নুরবানু খুব অবাক হয়েছিলো। নুরবানুর মনে হয়েছে মেহরাব যদি আরো কিছুদিন সময় নিতে চায় তাহলে ও বাঁধা দিবে না। এতোদিন যেহেতু অপেক্ষা করতে পেরেছে আর কিছুটা দিন সে অনায়াসে অপেক্ষা করতে পারবে। সেদিন আইসিইউ তে ডিউটি করছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখে মেহরাব ফোন দিয়েছে। আইসিইউতে অনেক পেশেন্ট থাকার কারনে নুরবানুকে কয়েকটাদিন অনেক ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। মেহরাবের খোঁজটা তেমন রাখা হয়নি।
—–হ্যালো মেহরাব কেমন আছো?
মেহরাব একটু গোঙ্গানীর মতো করে বললো,
——আমার শরীরটা খুব খারাপ। তোমার হাসপাতালে আসতে চাইছি?
—–ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে আসো। আমি কি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাবো?
—–না,তার দরকার হবে না। আমি এখান থেকেই অ্যাম্বুলেম্স নিয়ে আসছি।

মেহরাব হাসপাতালে আসার পর নুরবানু মেহরাবকে দেখে চমকে উঠলো। চেহারাটা পুরো ফ্যাকাশে হয়ে আছে। ওর ফাইল দেখে বুঝলো ও শরীরে মারণ রোগ বাসা বেঁধেছে। ব্লাড ক্যান্সার স্টেজ ফোর। ও ফাইল দেখে মেহরাবকে বললো,
——তোমার শারিরীক কন্ডিশনের যে এই অবস্থা আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি?
—–বললে তো জীবনের এই অবেলায় তোমার সাথে এতো সুন্দর সময়গুলো কাটানো যেতো না। জীবনের শেষ কটা দিন তোমার সাথে কাটানোর ইচ্ছে ছিলো। ডাক্তার আমাকে আগেই বলেছে আয়ু ফুরিয়ে আসছে।

নুরবানুর এই মুহুর্তে কোনোকিছু নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। কারণ মেহরাবকে এখনি আইসিইউতে নিতে হবে। মেহরাবের দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আইসিইউ কেবিনে নুরবানু এক মুহুর্তের জন্য ওকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। ওর অবস্থা এমন এতোদিন পর হারানো মানিক ফিরে পেয়ে তাকে আর নতুন করে হারিয়ে ফেলতে চাইছে না। তাই নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়ে ওকে সুস্থ করে তুলতে নুরবানু আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু মেহরাবেরর শরীর ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারপরও নুরবানু কোনো মিরাকল ঘটার আশায় একবুক আশা নিয়ে মেহরাবের সেবা করে যাচ্ছে। যদিও ডাক্তার হিসাবে নুরবানুও জানে মেহরাব জীবনের বাতিটা আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে। আজ নুরবানুর মনে হলো এই কারনে হয়ত মেহরাব ওকে বিয়ে করতে চায়নি। নিজের অস্থায়ী জীবনের সাথে নুরবানুকে জড়িয়ে ব্যথার বোঝা আর বাড়াতে চায়নি।
এক সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেল। মেহরাবের কন্ডিশন খারাপ হয়ে যাওয়াতে ওকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এর মাঝে খবর পেয়ে মেহরাবের ভাইটা অামেরিকা থেকে চলে এসেছে।ও ওখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি করে। ডাক্তার মেহরাবকে ক্লিনিকালি ডেড ঘোষণা করেছে।আজ মেহরাবের যন্ত্রগুলো খুলে ফেলা হবে। সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়ছে। হয়তো নুরবানুর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে পৃথিবীও ওর সাথে একাত্ম ঘোষণা করেছে। আয়ান জুবাইদা পরীবানু সবাই হাসপাতালে এসেছে।
জীবন যেন এক বহতা নদী। কারো কারো জীবনে এই নদীটার দু,কুল ভালোবাসার জোয়ারে ভরে থাকে। আর কারো জীবনে এই নদীটা শুকিয়ে মরা গাঙ্গের সোঁতা হয়ে থাকে। তবুও মরিচিকার মত ভালোবাসাটা হাতছানি দিয়ে ডাকে। কিন্তু কাছে যেতে না যেতেই আবছায়ার মাঝে হারিয়ে যায়।

সমাপ্তি।