বৃষ্টিতে ভেজা সেই রাত পর্ব-১৬+১৭

0
1155

বৃষ্টিতে ভেজা সেই রাত
লেখকঃ আবু সাঈদ সরকার
পর্বঃ 16 + 17
~
সাঈদঃ হঠাৎ পিছন থেকে একটা বড় ট্রাক এসে আমার গাড়িতে খুব জোরে একটা ধাক্কা মারলো…
গাড়িটা সাথে সাথে রাস্তা থেকে ছিটকে অনেকটা দুরে গিয়ে পড়লো আমিও ছিটকে একটা বড় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম এর পর আর কিছুই মনে নেই….


আদ্রিতাঃ ওনার জন্য আজ পোলাও, মুরগীর মাংস আরো নানা রকমের ভালো ভালো খাবার রান্না করেছি..
ওনাকে আজ সারপ্রাইজ দিবো

তখনি আমার ফোনে ওনার ফোন থেকে কল আসলো

আদ্রিতাঃ হ্যালো..

অপর দিক থেকে.. আপনি কে সেটা আমি জানি না তবে..

আদ্রিতাঃ কে আপনি ওনার ফোন আপনার কাছে কেনো…

লোকটাঃ দেখুন আমিও আসলে জানি না এনি কে এই নাম্বারটা কার..

আদ্রিতাঃ আমার স্বামীর..

লোকটাঃ যাক তাহলে ভালোই হলো আপনার স্বামীর বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে বাচবে কী না তার সন্দেহ আছে মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বেড়াচ্ছো আমরা ওনাকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে যাচ্ছি আপনি সেখানেই আসুন…

আদ্রিতাঃ কথাটা শুনার পর হাত থেকে ফোনটা পড়ে ভেঙ্গে চুরমাচার হয়ে গেলো চোখ দুটো ঝপসা হয়ে আসছিলো ওনি ছাড়া আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার..
এই পৃথিবীতে আমার একমাত্র আপন বলতে ওনিই তার কিছু হয়ে গেলো আমিও এক সেকেন্ড বাচবো না…

ওনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আমিই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম..

তাড়াতাড়ি হাসপাতালের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লাম…

মনে হচ্ছে এক একটা সেকেন্ড একেকটা বছরে মতো লাগছে….

তক্ষণে ওনার অফিসেও এই খবরটা পৌঁছে গেছে সবাই ওনাকে দেখতে হাসপাতালে এসেছেন…

আমি হাসপাতালে আসার আগেই ওনাকে আইসিওতে নিয়ে গেছে…

আইসিওর বাইরে সবাই দাড়িয়ে আছে তখনি হঠাৎ নজর পড়লো ওনার আম্মুর উপর সাইডের এক চেয়ারের উপর বসে প্রচুর কাদতেছেন…

প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসলো..

ডাক্তার রোগীর জন্য এখনি Ab negative রক্ত লাগবে আপনাদের মাঝে কারো শরীরের রক্ত Ab negative রয়েছে..

সবাই না বললো আমারোও রক্ত Ab negative না তাহলে কী হবে..


ডাক্তারঃ ২৫ মিনিটের মধ্যে রক্ত না পেলে রোগীকে আর বাচানো সম্ভব হবে না কারণ ওনার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বেড়িয়ে গেছে…

আদ্রিতাঃ আপনারা প্লিজ ওনাকে বাচিয়ে নিন প্লিজ আমি ওনাকে ছাড়া বাচবো না


ডাক্তারঃ দেখুন আমাদের হাতে যেটা রয়েছে সেটা তো আমরা করছি কিন্তু রক্ত না হলে ওনাকে বাচানো impossible..

আদ্রিতাঃ কিছু বলতে.. যাবো তখনি ভিড় থেকে..

আমার শরীরের রক্ত Ab negative..

যতটা রক্ত লাগে আমার শরীর থেকে বেড় করে নিন যদি আমার শরীরে সমস্ত রক্ত টুকু লাগে স্যারের জীবন বাচাতে তাহলে আমি মরে যেতেও রাজি কারণ আমি মারা গেলে কারো কিছু যায় আসবে না কিন্তু যদি স্যার মারা যায় তাহলে আমাদের মতো হাজারো অনাথ ছায়া হীন হয়ে পড়বে…


আদ্রিতাঃ কে এই ছেলেটা..

ডাক্তারঃ নার্স তাড়াতাড়ি এক ব্যাগ রক্ত বেড় করে নিন…
হাতে বেশি সময় নেই তার পর এক ব্যাগ রক্ত সেই ছেলের শরীর থেকে বেড় করে নার্স আইসিও তে ডুকলো..

কে সেই ছেলেটা যে আমার স্বামীর প্রাণ বাচানোর জন্য নিজে মরতে প্রস্তুত..


তাকে গিয়ে একটা বাড় দেখে আসি…

ছেলেটার পাশে বসে কে তুমি..

ছেলেটাঃ পরিচয় হীন একজন..

আদ্রিতাঃ কেনো তোমার আব্বু আম্মু নেই.

ছেলেটাঃ না তারা আমার জন্মের পর তারা মারা যায়.. তখন থেকেই আমি এতিম কিন্তু স্যার এর ছায়া ছিলো বলে আমার মতো হাজারো অনাথ শিশু আজ হাসি মুখে তিন বেলা শান্তিতে খেতে পারছে..


স্যার আমাদের অনাথ আশ্রমে প্রতিমাস ১ লাখ টাকা দেয়..

আমার তার কাছে চিরো জীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো..


আদ্রিতাঃ পৃথিবীতে মনে হয় ওনার মতো মানুষ খুজে. পাওয়া আসলেই খুব ভাগ্য বেপার.

আজ যদি ওনার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি কী নিয়ে বেচে থাকবো এই পৃথিবীতে..

সকাল গরিয়ে রাত আর আইসিওতে একজন ব্যক্তিই থাকতে পারবে আমি ডাক্তারকে অনেক বুঝিয়ে আইসিওর ভিতরে গিয়ে ওনার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম..

আজ সকাল বেলা হাসি মুখে বাসা থেকে বেড়িয়ে ছিলো বলেছিলো আজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে কিন্তু এখন ওনিই শান্তিতে ঘুমিয়ে রয়েছেন..


হাতের মধ্যে অনেক গুলো ব্যন্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে এখনো ওনার মাথা থেকে একটু হলেও রক্ত বেড়াচ্ছো..

উপরে দুটা সালাইন দেওয়া আছে মুখে অক্সিজেনর মাস্ক…

ওনার এমন অবস্থা দেখে নিজেই ভেঙ্গে পড়েছি…



সাঈদঃ যখন চোখ খুললাম তখন ঝাপসা ঝাপসা দেখতে শুরু করলাম পুরো মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে সারা শরীরটা অসহ্য ব্যাথা করছে মনে হয় এর থেকে মৃত্যুও অনেক ভালো নিজের উপর মনে হচ্ছে ভারি কোনো কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমি এখন কোথায় এত কষ্ট হচ্ছে কেনো কী হয়েছে আমার নিজের শরীরটাক এমন মনে হচ্ছে কেনো আমি কীভাবে শক্তি হীন হয়ে গেলাম…

আস্তে আস্তে চোখের ঝাপসা ভাবটা চলে গিয়ে দেখলাম আদ্রিতা আমার বুকের উপর মাথা রেখে প্রচুর কাদছে..
আদ্রিতা তুমি কাদছো কেনো একি আমার মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না কেনো…

আদ্রিতাঃ মনে হলো ওনি নেড়ে উঠলেন তাহলে কী ওনার জ্ঞান ফিরেছে এমা সত্যি তো ওনার জ্ঞান ফিরেছে আপনার কী খুব কষ্ট হচ্ছে……

সাঈদঃ হুম খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তুমি আমার কথা গুলো শুনতে পাবে না হয়তো চিরদিনের মতো কথা বলার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছি…

আদ্রিতাঃ কী হলে কথা বলছেন না কেনো আমার উপর কী রাগ করে আছেন ওনি ঠোঁট গুলো নোরাচ্ছেন কিন্তু কথা বলছেন না কেনো আমার সাথে..

সাঈদঃ এতটা কষ্ট হচ্ছে যে কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না হঠাৎ আইসিওর বাইরে নজর টা চলে গেলো বাইরে একজনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচুর কষ্ট লাগছিলো সে আর কেউ নয় আমার নিজের এ মা…

হয়তো সাহস হচ্ছে না ভিতরে আসার তাই বাইরে থেকে দেখতেচ্ছেন আম্মুর চোখে চোখ পড়তেই আম্মু সেখান থেকে সরে গেলেন..

মাঃ আজ ছেলেটার এত বড় এক্সিডেন্টের কারণ আমিই আমি মা হয়ে নিজের ছেলেকে সন্দেহ করেছি কত গুলো উল্টো পাল্টা কথা বলেছি এই মুখ নিয়ে তার সামনে যাওয়ার সাহস টুকু আমার নেই..

আদ্রিতাঃ আপনি ওমন ভাবে বাইরে তাকিয়ে আছেন কেনো আপনি একবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলুন আপনাকে আমি কোথাও একা একা যেতে দিবো না এই বলে দিলাম কিন্তু


সাঈদঃ আমার পাশে একটু শুয়ো না কথাটা হয়তো শুনতে পাই নি হাতের ইশারায় বললাম..


আদ্রিতাঃ কী ওমন ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছেন আপনার পাশে শুতে বলতেছেন.

সাঈদঃ হয়তো সে বুঝতে পেরেছে তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম..

তখনি..

নার্সঃ দেখুন ওনার সাথে একদমি কথা বলার চেষ্টা করবেন না ওনি কথা বললে ব্রেণে চাপ পড়বে এতে ওনার প্রচুর ক্ষতি হতে পারে..

এই আমি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেলাম ওনি আরামে ১২ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকবেন আপনি চাইলে পাশের বেড টাতে ঘুমাতে পারেন..

আদ্রিতাঃ নার্স চলে যাওয়ার পর কে শুনে কার কথা আমি ওনার পাশে শুয়ে পড়লাম আর ওনাকে হালকা ভাবে জরিয়ে ধরলাম সারাটা রাত ওনাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে ছিলাম..

সকাল বেলা..

ডাক্তারঃ আপনি বাইরে গিয়ে বসুন আমি এনার শরীরটা চেক করবো..

আদ্রিতাঃ আমি থাকলে কী হবে.

ডাক্তারঃ থাকতে পারবেন না বললসম তো এখন যান তো..

আদ্রিতাঃ না চাইতেও বেড়িয়ে পড়লাম…


কিন্তু খন পর..

ডাক্তারঃ রোগীর অবস্থা কিছু টা ভালো তবে একটা সমস্যা হয়ে গেছে…

আদ্রিতাঃ কী বলুন আমাকে…

ডাক্তারঃ ওনার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগার ফলে ওনি কথা বলতে পারবেন না হয়তো চিরদিনের মতো কথা বলার শক্তি টুকু. হারিয়ে ফেলেছেন ওনি..

আদ্রিতাঃ না এটা হতে পারে না..
আপনি মিথ্যা কথা বলছেন না না এটা হতে পারে না দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলাম এটা কী হয়ে গেলো আপনার আপনি নাকি কথা বলতে পারবেন না…
বলুন না এ কথাটা মিথ্যা.

সাঈদঃ বলতে যেও কিছু বলতে পারছি না মুখ ফুটে কিছু বেড়াচ্ছোই না…


এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর রিলিজ দিয়ে দিলো বাসায় গিয়ে সবাই আমাকে দেখতে আসলেও আম্মু আসে নি আম্মুকে দেখতে প্রচুর মন চাইছিলো কিন্তু আম্মু একটি বারো দেখতে আসলো না আমায়


আদ্রিতাঃ আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো আমায় বলুন..

সাঈদঃ হাতের ইশারায় ( কিছু না মন খারাপ)

আদ্রিতাঃ ভেঙ্গে পড়বেন না আপনি যদি ভেঙ্গে পড়েন তাহলে আমার কী হবে


সাঈদঃ

আদ্রিতাঃ আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন দেখবেন একদিন না একদিন ওনি আপনার কথা বলার শক্তি টুকু ফিরিয়ে দিয়েছেন..

সাঈদঃ তোমার কথাই যেনো সত্যি হয় হয়তো আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্যই আমাকে বাচিয়ে রেখেছেন…

আদ্রিতাঃ কিছু খেয়ে নিন কাল থেকে কিছুই মুখে তুলেন নি….

সাঈদঃ খাওয়ার ইচ্ছে টাই যে মরে গেছে..

আদ্রিতাঃ আমি খাবার নিয়ে আসছি মুখ হা করুন আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিবো আপনাকে..

সাঈদঃ জানি কিছু বললেও সে বুঝবে না তাই চুপ চাপ খেয়ে নিলাম..

আদ্রিতাঃ এবার শুয়ে পড়ুন আমি আসতেছি ওনাকে শুইয়ে দিয়ে আমিও ওনার পাশে শুয়ে পড়লাম..

আদ্রিতাঃ আচ্ছা আমি তো রোজ আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতাম আজ আপনি আমার বুকে মাথা রেখে ঘমাবেন

সাঈদঃ মেয়েটা পারেও বটে..

আদ্রিতাঃ ওনি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন আমি চুপ করে ওনার দিকে তাকিয়ে রয়েছি আর মাঝে মাঝে আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি…

ঘুমন্ত অবস্থায় ওনাকে ছোট বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে…

আজ ওনার জন্যই আমি বেচে রয়েছি যদি ওনার কিছু হয়ে যেতো সত্যি সত্যি আমি মরে যেতাম এই পৃথিবীতে ওনি ছাড়া আমার কেউ নেই…



অপর দিকে..

তামান্নাঃ এত কিছুর পরেও বেচে যায় কিভাবে আজ রাতেই কিছু একটা করতে হবে..
হ্যালো সোহেল একটা কাজ করে দিতে হবে এর বদলে যা চাইবি তাই দিবো…


সোহেলঃ সত্যি একটা রাত আমার সঙ্গে কাটাতে হবে বেবি..

তামান্নাঃ What..,

সোহেলঃ এক রাত আমার সঙ্গে থাকতে হবে যদি রাজি থাকিস তাহলে আমিও তোর কাজ করে দিবো..


তামান্নাঃ হ্যা আমি তাতেও রাজি কিন্তু কাজ হওয়া চাই..

সোহেলঃ প্রথমে রুম ডেট তার পর বাকি কাজ…

তামান্নাঃ তাই বলে আজ..

সোহেলঃ হ্যা এখনি আমার বাসায় চলে আয়…


তামান্নাঃ সাঈদ কে মারতে যা করতে লাগে সব করবো তবুও ওকে বাচতে দিবো না..

কিছু খন পরে সোহেলদের বাসায় যাওয়ার পরে..

সোহেল ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো আমায় আমার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে স্বাদ নিতে থাকলো এক সময় আমার জামাটাও খুলে ফেললো তার পর…


চলবে