#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৯
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে আর লাইটিং দিয়ে।চারপাশে শুধু হাসির আওয়াজ।সকলে মুখে খুশির ছাপ।তুমুল বেগে বাড়ির বড়রা কাজ করছে।রান্না চলছে এক পাশে। বাড়ি ভর্তি লোকের আনাগোনা।বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।আজ সামিয়ার মেহেদি অনুষ্ঠান।মেয়েরা পড়েছে মেহেদী পাতা রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পড়েছে পাঞ্জাবি।সামিয়াকে পড়ানো হয়েছে সবুজ রঙের স্টনের কাজ করা লেহেঙ্গা।সাজানো হয়েছে সুন্দর করে।মেহেদী পড়ানোর জন্য মেহেদী আর্টিস্ট আনা হয়েছে।এক পাশে বউ কে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে।আরেকপাশে রিদিতা,সাজিয়া আর নিশি মেহেদী পড়ছে।বেলী ও পড়বে তবে সে এখনো রেডি হয় নি।
বসার ঘরে উপস্থিত হল সুবাস।দু চোখে বেলীকে খুঁজলো।কাজের চাপে আজ একবারও বেলীর দেখা মিলে নি।
-বেলীকে যে দুই চোখ খানা খুঁজছে সেই চোখকে বলতে চাই বেলী এখনো রেডি হয় নি।
রিদিতা সাজিয়াকে কথাটা বলেই হাসলো।সাজিয়ার কয়েক সেকেন্ড লাগলো বুঝতে।বুঝতে পেরে সেও হেসে দিল।সুবাস বুঝতে পারলো কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। সে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো।
-বেলী তোমার এখনও হয় নাই?
– হুম রেডি আমি। চলেন যাই।
-এভাবেই যাবে?
-কেনো কি সমস্যা ?
– চুল গুলো বেঁধে নাও।মেহেদী পড়ার সময় অসুবিধা হবে চুল খোলা থাকলে।
– হুম চলেন.
বেলী চুল গুলো খোঁপা করে সামনে দিকে পা বাড়ালো।
-দাড়াও
-আবার কি?
সুবাস বেলীর দিকে এগিয়ে আসলো।বেলীর খোঁপা করা চুলে বেলী ফুলের মালা গুজে দিলো।বেলী কপালে চু’মু খেয়ে বললো
-এখন পরিপূর্ণ লাগছে।
– আপনার মনে হয় বেলী ফুল অনেক প্রিয়।তাই না?
– কিভাবে বুঝলে?
– এই যে আপনি আমার জন্য প্রতিদিন অফিসে থেকে ফেরার সময় ফুল নিয়ে আসেন। খোঁপায় গুজে দেন।
– পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস গুলোর মধ্যে একটি হলো ফুল।ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম বলা চলে।আমার কাছে ভালোবাসার পর সবচেয়ে শুদ্ধ জিনিস হলো ফুল।আর ফুল আমরা আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোকে দেই।তাই আমিও আমার বউয়ের জন্য, আমার বেলীর জন্য, বেলী ফুল নিয়ে আসি।
বলেই সুবাস বেলীর হাত ধরে বসার ঘরের দিকে হাটা ধরলো।বসার ঘরে মেয়েরা একদিকে নাচছে অন্য দিকে মেহেদী পড়ানো হয়েছে।বেলী ও সবার সাথে বসে পড়লো।
-বুজলা আপু বেলীর হাতে সুন্দর করে বউ দের মতো করে মেহেদী দিয়ে দাও।সাথে সুন্দর করে সুবাসের বউ লিখে দিবা।
মেহেদী আর্টিস্টের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো সাজিয়া।সাজিয়ার মুখে এই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো বেলী।এক পলক সুবাসের যাওয়ার দিকে তাকালো।এই লোক কোনো কিছু শুনছে বলে মনে হয় না।
-হুম বেলী আমাদের বংশের বড় বউ।তার হাতে সুন্দর করে লাগিয়ে দিয়ো কেমন!
রিদিতা বলে উঠলো।
-আপু তুমিও আমাকে লজ্জা দিয়ে যাচ্ছো।(বেলী)
– এই তোরা কেউ আমার ছেলের বউকে লজ্জা দিবি না বলে দিলাম।
রান্না ঘর থেকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন মনিরা বেগম।
তখন বসার ঘিরে প্রবেশ করলো সুবাসের খালামণি এবং তার দুই মেয়ে।আমরিন ও নূপুর ।দুজনেই মনিরা বেগমের গোলা জড়িয়ে ধরলো।
-এতো লেট হলো কেনো আসতে?(মনিরা বেগম)
-আসলে খালামণি রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।আর এতো গরম দেখো না ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি।। (আমরিন)
-আচ্ছা একটু রেস্ট করে তোমরা মেহেদী দিতে বসে পরো।
-রিদিতা আপু দেখেছো কত ঢং করে কথা বলে এই মেয়ে( নিশি)
-এভাবে বলিস না নিশি কেউ শুনতে পেলে খারাপ ভাববে(সাজিয়া)
-হুম কি আর করার বল।খালাতো বোন হয়।কিছু বলাও যায় না।আমার নিজেরও তাদেরকে ভালো লাগে না। (রিদিতা)
-হুম সুবাস ভাইয়া ভালো করেছে এই ঢঙ্গি কে বিয়ে না করে আমাদের লক্ষী বেলীকে করেছে(সাজিয়া)
তাদের কথার মাঝে আমরিন আসে রিদিতাকে জড়িয়ে ধরলো।
-কেমন আছো আপু?তোমরা কেমন আছো ?
-ভালো আছি আমরা সবাই। তুমি কেমন আছো?
হালকা হেসে বললো রিদিতা।
-ভালো। তবে সুবাস ভাইয়ার বিয়েতে আমাদের কেনো বলো নি?
তাদের কথার মাঝে নূপুর প্রশ্ন করে বসলো রিদিতাকে।
-আসলে সব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে তো তাই আরকি।কথা পরেও হবে যাও তোমরা মেহেদী লাগিয়ে নাও (রিদিতা)
সামিয়ার মন ভালো করার জন্য সকলে মিলে সামিয়াকে নিয়ে নাচতে শুরু করলো। সকলে মিলে প্রথমে ভালো ভাবেই নাচ’তে লাগলো।কিন্তু বেশ কয়েক বার আমরিন বেলীকে ধাক্কা দিয়েছে।একবার রিদিতা সামলে নিয়েছিল নাহলে পরে যেতো। বেলী যেদিক যাচ্ছে আমরিন সে দিকেই যাচ্ছে।তাই বেলী এবার নাচ শেষে পানি খাওয়ার উদ্দেশে টেবিলের দিকে পা বাড়ালো। বেলী পা বাড়াতেই তার সামনে আমরিন নিজের পা রাখতে বেলী উল্টে গিয়ে পড়লো মাটিতে। কাচের টি টেবিলের সাথে ধাক্কা লাগায় হাত কেটে গেলো।পুরো মেহেদী লেপ্টে গেলো শাড়িতে।পায়ে এবং কোমরেও বেশ জোড়ে ব্যথা পেলো।বেলী কান্না করে দিলো।ঠিক সেই সময় এক জোড়া পুরুষালি হাত বেলীকে কোলে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
-বেশি ব্যথা করছে?আম্মু ফার্ষ্ট এইড বক্স টা নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।
মনিরা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো সুবাস।
বেলীর হাতে রক্ত পরিষ্কার করে দিলো।বেলী কান্না
করতে লাগলো।সুবাস একেবারে আমরিন দিকে এগিয়ে গেলো
-তুমি কেনো ইচ্ছা করে বেলীর সামনে নিজের পা দিয়েছো?
রাগী গলায় বললো সুবাস।
…….
-আমি কিছু আস্ক করেছি।আনসার মি ডেমন ইট।
টেবিলে থাকা কাচের গ্লাসকে ছুঁড়ে ফেললো সুবাস।সুবাসের দু চোখ লাল হয়ে আছে। এতোটা রাগতে কখনো দেখা যায় নি সুবাসকে।উপস্থিত সকলে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
-আমি ইচ্ছা করে করি নি সুবাস ভাইয়া।বেলী নিজের বেখেয়ালি জন্য পরে গিয়েছে।(নেকা কান্না করতে করতে বলল আমরিন)
-আবার মিথ্যা কথা বলছো তুমি।আমি নিজের চোখে দেখেছি বেলী পা বাড়াতেই তুই নিজের পা রাখো যার ফলে বেলী পা বেজে পড়ে গিয়েছে।
বেলী পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে সুবাস বসার ঘিরে আসে এবং দেখে ফেলে যে আমরিন ইচ্ছা করে এগুলো করছে।
-ভাইয়া সরি।তুমি হয়তো ভুল দেখেছো।আমি বেলীর সাথে এমন করি নি
-বেলী কি হুম?বেলীকে ভাবি না ডেকে নাম ধরে ডাকছো কেনো?
– ভাইয়া বেলী তো আমার থেকে ছোট।তাকে নাম ধরে ডাকবো না তো কি করবো?
– আমি কি তোমার ছোট না বড়?
– বড় ভাইয়া।
– হুম। মনে রাখবে আমি তোমার বড়।বেলী আমার ওয়াইফ।সেই হিসেবে বেলী সম্পর্কে তোমার বড় হয়।তাই আজ থেকে বেলী ভাবি বলবে। আম আই ক্লিয়ার
খানিকটা উচু আওয়াজে কথা গুলো বললো সুবাস।বেলীকে কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে হাতে ধরলো সুবাস।সুবাস যেতেই নেকা কান্না শুরু করলো আমরিন। সে নাকি কিছু করে নি। আরো কত কিছু।
চলবে….?
হ্যাপি রিডিং
#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২০
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সুবাস বেলীকে বেডে বসিয়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে বেলীর মেহেদী পরিষ্কার করে দিলো।আলমারি থেকে শাড়ি বের করে বেলীর হাতে ধরিয়ে দিলো।বেলীকে ওয়াশরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।বেলী ফ্রেশ হয়ে এলো।সুবাস নিজ হাতে বেলীকে খাইয়ে দিলো।বেলীকে শুয়ে দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়ে গেলো যেনো এক পা ও রুমের থেকে বের না হয়।নাহলে তার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
মেহেদির অনুষ্ঠান শেষ।রাতে বেলা সামিয়া,
সাজিয়া,রিদিতা,নিশি একসাথে সামিয়ার রূমে বসে আছে।রিদুতা এক পাশে বসে আছে তার কোলে চাঁদ ঘুমাচ্ছে।পাশে নিশি বসে ফোনে এফ বি স্ক্রল করছে আর কথা বলছে।নিশির উল্টো পাশে বসে আছে সাজিয়া।সামিয়া ডিভানে বসে যুএলারি গুলো খুলে নিচ্ছে।
-আপু আমরিন আপু কি আসলেই বেলী আপু কে ধাক্কা দিয়েছিল?(নিশি)
-আমি কয়েকবার দেখেছি ধাক্কা দিতে।একবার আমি বেলীকে সামলে নিয়েছি।পরের ঘটনা আমি দেখি নাই।রিদিতা)
-কিন্তু এমন করলো কেনো?(নিশি)
আরে সুবাস ভাইয়াকে না পেয়ে এমন করেছে(সাজিয়া)
-মানে?(নিশি)
-মানে হলো খালামনি সুবসকে দিকে আমরিনের বিয়ের কথা বলেছিল।সুবাস না বলে দিয়েছে।(রিদিতা)
-মামী কিছু বলে নি (নিশি)
– নাহ আম্মু কি বলবে।আম্মুর ও তাদের চাল চলন ভালো লাগে না।(রিদিতা)
-সব ঠিক আছে কিন্তু কি হলো?বেলীর মুড পুরা নষ্ট হলো।মেয়েটা কত খুশি ছিল।(সাজিয়া)
-হুম ব্যথাও পেল।তবে সুবাস ভাইয়া খুব ভালো কাজ করেছে।(সামিয়া)
-হুম ঘুমিয়ে পড় অনেক কাজ আছে কাল (রিদিতা)
আরো একটি নতুন দিনের আগমন ঘটলো।বেলীর ঘুমের মাঝে আগমন ঘটলো সূর্য মামার।চোখ মুখ কুচকে উঠে বসলো বেলী।এতক্ষণ ঘুমিয়েছে এবার উঠতে হবে।শরীর ভালো ছিলো না বলে একটু লেট করে উঠলো।বেলী ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সুবাস ডিভানে বসে আছে। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা।সবুজ রঙের পাঞ্জাবিটা শরীর জুড়ে লেপ্টে আছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।পুরো ফেস জুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।বেলী ধীর গতিতে সুবাসের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে গেলো।এই মুহূর্তে লোকটাকে একটু লেবুর শরবত করে দিলে ভালো হবে।একটু আরাম লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ।বেলী কিচেনে গিয়ে লেবুর শরবত করে নিলো।কিচেনে প্রবেশ করলেন মনিরা বেগম।বেলীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন
-আমাকে বলতি আমি তোকে লেবুর শরবত করে দিতাম।তুই কেনো নিচে এলি কষ্ট করে?
-আসলে চাচী শরবত টা…
-আরে মামী এই শরবত তো বেলী ভাবির জন্য না।শরবত হলো আমাদের শ্রদ্ধেয় ভাইয়ার জন্য।
বলেই হাসতে লাগলো নিশি।নিশির কথা শুনে রিদিতা ও মনিরা বেগম হেসে উঠেন।বেলীর দু গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
-এই তোরা আমার ছেলের বউকে লজ্জা দিচ্ছিস কেনো?
মনিরা বেগমের কথা আবার হাসির আওয়াজ শোনা যায়।বেলী দ্রুত পায়ে কিচেন থেকে রমের দিকে হাটা ধরে।এখানে থাকলে সবাই মিলে তাকে লজ্জা দিবে।
বেলী রূমে এসে দেখলো সুবাস ফ্রেশ হয়ে এসেছে।যে গরম ফ্রেশ না হলে কি থাকা যায়?বেলী দেরি না করে সুবাসের সামনে শরবতের গ্লাস ধরলো
-এই নিন শরবত টা খেয়ে নিন।ভালো লাগবে
সুবাস মুচকি হাসলো। এই শরবতের ভীষণ প্রয়োজন ছিল।সুবাস অর্ধেক শরবত খেয়ে বাকি অর্ধেক বেলীর সামনে ধরলো
-খেয়ে নাও মহব্বত বাড়বে।
বেলী মুচকি হেসে বাকি শরবত টুকু খেয়ে নিলো।
-বাহ বউ দেখি আমার ভীষণ খেয়াল রাখছে।ব্যাপার কি?
-কোনো ব্যাপার না মনে হলো এতো কাজ করছেন তাই একটু শরবত খেলে ভালো লাগবে।তাই আর কি….
– ওহ! যাক বউয়ের আদর যত্ন পাওয়ার সৌভাগ্য তাহলে আমার হলো।তবে তুমি চাইলে বলতে পরো অন্য কোনো ব্যাপার থাকলে।
– বললাম তো কোনো ব্যাপার নেই।আপনি শুধু শুধু বেশি বুঝছেন।
– তাহলে তো ভালোই।আসো, কাছে আসো।তুমি এতো কষ্ট করে আমার জন্য শরবত নিয়ে এলে।তোমাকে তো এর জন্য কিছু একটা দিতে হবে তাই না?
বলেই বাকা হাসলো সুবাস
– না, না আমার কিছু প্রয়োজন নেই।আমার কিছু লাগবে না।
বলেই রূমে থেকে বেরিয়ে গেলো বেলী।সুবাস হাসলো।
হলুদের সন্ধ্যা।সব কিছু সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।অতিথিরাও সব আসতে লাগলো।বেশ অনেক ক্ষন পরে বউ সহ সকলের আগমন ঘটলো।সামিয়াকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।হলুদ রঙের লেহেঙ্গা।সাথে ম্যাচিং করে স্টনের অলঙ্কার পড়ানো হয়েছে।সাথে চুল গুলো সুন্দর করে বেঁধে দু বাঁশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।সুন্দর করে মাথায় ওড়না দেয়া হয়েছে।এক কথা অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সামিয়াকে স্টেজে বসানো হয়েছে।হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো একে একে সকলেই সামিয়া কে হলুদ দিয়ে দিলো।এক পাশে বসানো হয়েছে সামিয়াকে এর অন্য পাশে বসানো হয়েছে নিহালকে এক সাথেই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।ছেলেদের ড্রেস কোড হলো হলুদ পাঞ্জাবী।একে একে নিহালকে হলুদ লাগানো হলো। সব কিছুর মাঝে এক জোড়া চোখ বেলীকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।লাল পাড়ের বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছে বেলী।সাথে ম্যাচিং করা স্টনের অলংকার । ভারি সাজে আজ একটু অন্যরকম লাগছে।চুল গুলো সুন্দর করে সেট করেছে।নাকের নাক ফুল জল জল করছে।লিপস্টিক দেয়া ঠোটের হাসি যেনো আরো স্নিগ্ধ লাগছে।এর মাঝে সুবাস ডাক পড়ায় প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে হেসে চলে গেলো।
হলুদের পর্ব শেষ হতেই নাচ শুরু হলো।সায়েম এবং রিদিতা কাপল ড্যান্স করলো।সাজিয়া আর নিশি নাচ শেষে হলেই সুবাস এবং বেলীকে নাচের জন্য ডাক দেয় হলো।সুবাস তো নাচবেই না কত বার বলার পর রাজি হয়েছে। বেলী একবার বলার পড়ে রাজি হয়ে গেলো।সুন্দর একটা কাপল ড্যান্স করলো তারা।
ইয়াসিরের ড্রেস ড্রিংকস পরে যায় ভুল বসত তাই ড্রেস ক্লিন করার জন্য গেস্ট রুমের ওয়াশরুমে এসেছিল।সামিয়া তা দেখে ওয়াশরুম যাবে বলে উপরে চলে এলো।ইয়াসির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সামিয়া দাড়িয়ে আছে।
-ইয়াসির ভাই আপনার মনে কি আমার জন্য একটুও মায়া জন্মে নি?আমাকে কি একটুও ভালো লাগে না?আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ?আমার জন্য কি একটুও অনুভূতি কাজ করে না?
……
-চলুন না আমরা পালিয়ে যাই।আমি আপনাকে ছাড়া অন্যকেউকে কল্পনা করতে পারি না।
-এই মেয়ে আপনার মাথা ঠিক আছে? কি সব আজ বাজে কথা বলছেন?
-নাহ আমার মাথা ঠিক নেই।আমি ঠিক নেই ইয়াসির ভাই।আমি ঠিক নেই।আমার ভিতর ঝড় চলছে।সেই ঝড় আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।আমি তলিয়ে যাচ্ছি ঝড়ের মধ্যে।আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি নিতে পারছি না।আমার খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।আমার দম বন্ধ লাগছে।আমাকে নিজের করে নিন না?
-কাল আপনার বিয়ে আজ আপনি কি সব কথা বলছেন।আপনি আসলেই পাগল হয়ে গেছেন।
-হুম আমি পাগল হয়ে গেছি।আপনের ভালোবাসায় আমি পাগল হয়ে গেছি।আপনার ভালোবাসায় মাতোয়ারা হয়ে গেছি।আপনার ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছি।
– দেখুন আপনি আপনার লিমিট ক্রস করছেন।আপনাকে আর আমাকে এক সাথে দেখলে মানুষ অন্যান্য কিছু ভাববে।
– ইয়াসির ভাই…..
এবার ঠান্ডা গলায় বললো সামিয়া
…….
-“আপনি আমার কাছে ফুলের মতো স্নিগ্ধ,পবিত্র, হলেও কেনো আমি আপনার কাছে কাটার মতো বিষাক্ত।”
-শুনুন সামিয়া আপনার কালকে বিয়ে।আপনি আর কোনো পাগলামো করবেন না।বিয়ে টা সুন্দর মতো করে নিবেন।আপনি ভালো থাকবেন।
– একটা লাস্ট চাওয়া পূরণ করবেন ইয়াসির ভাই….
– কি চাই?
– আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে চাই ইয়াসির ভাই।কথা দিচ্ছি আর জীবনেও আপনার সামনে আসবো না।কথা বলবো না
বলেই সামিয়া ইয়াসিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেনো ছেড়ে দিলেই উড়ে পালাবে। প্রথম কোনো মেয়ের এত কাছ থেকে স্পর্শ পেয়ে কেমন যেন শির শির অনুভব হলো ইয়াসিরের।স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সামিয়া কাদছে।ইয়াসির সামিয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা হাটা ধরলো।একবার পিছে তাকালো না পর্যন্ত।
চলবে…..?
হ্যাপি রিডিং