বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী পর্ব-০৫

0
2161

#বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী?
#Part_5
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

রিধীর চোখের পানি পরে রাফির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাফি উঠে বসে দেখে রিধী কাঁদছে আর রিধী এক মনে রাফির দিকে তাঁকিয়ে আছে। রিধীর হাত ধরে রাফি জিজ্ঞেস করে
-কি হয়েছে তোমার রিধী? কাঁদছো কেন? কষ্ট হচ্ছে?
-(…..)
-রিধী প্লিইজ কথা বল। কি হয়েছে তোমার? না বললে আমি কেমন করে বুঝবো?
-রিধী এইবারো কোনো কথা বলল না।

রাফি রিধীর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় রিধীকে। রিধীও কোনো বাধা দেয়নি। রিধী ঘুমিয়ে যায় আর রাফি রিধীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আর বলছে
-এই নিষ্পাপ মুখটা দেখেই যে আমি সারাটা জনম পার করে দিতে পারি তা কি তুই জানিস না রিধী? তোকে যে আমার আমি র থেকেও বেশি ভালবাসি। তুই কি তা বুঝিস না রে পাগলি? আর কত কষ্ট দিবি আমায় বল? আর যে পারছিনা তোর থেকে দূরে সরে থাকতে। কবে তুই আমাকে তোর করে নিবি? (কাঁদতে কাঁদতে)

রাফিও ঘুমিয়ে যায়। সকালে রিধী ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে ও রাফির বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আর রাফি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চোখের কোণে পানি জমানো। রিধী বুঝতে পারে রাফিও কাল কেঁদেছিল। রিধী দ্রুত রাফির কাছ থেকে সরে যায়। রিধী ফ্রেশ হয়ে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। রাফি তখন ঘুম থেকে জেগে যায়। রাফি রিধীকে বলে
-এই সময়টায় কোন মেয়েকে কেমন লাগে জানি না বাট আমার রিধীকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আমি আবারো পরে গেছি রিধীর প্রেমে।

রিধী তখন পেছন ঘুরে তাঁকায়। কিন্তু কিছু বলেনা। এইভাবেই রিধী আর রাফির বিয়ের ৩ মাস কেটে যায়। একদিন রাতে রিধী বিছানায় শুয়ে আছে। রাফি পাশে বসে কাজ করছে ঠিক তখনি রিধী চিৎকার করে উঠে। রাফি রিধীকে নিয়ে হাসপাতালে যায় খুব দ্রুত। কাশফি আর রিধীর মা বাবাকে আসতে বলে হাসপাতালে। সবাই চলে আসে আধা ঘন্টার মধ্যে। তখন প্রায় মাঝরাত। রাফি বসে বসে কাঁদছে। রাফিকে কাশফির স্বামী আর রিধীর বাবা মিলে শান্ত করানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রাফি কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা। ওর একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন তো রিধী। ১ ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে বলল রিধীর পুত্র সন্তান হয়েছে। সবাই খুব খুশি হল। রাফি পাগল হয়ে গেছে রিধীকে দেখার জন্য তখন ভোরের আলো ফুঁটবে ফুঁটবে। রিধী হেলান দিয়ে শুয়ে আছে আর দোলনায় দোলানো বাবুসোনার দিকে তাঁকিয়ে আছে। রাফিকে দেখে রিধীর চোখে পানি চলে এলো। কেঁদে কেঁদে কি হাল করেছে নিজের ও!!! রাফি দ্রুত বাবুসোনাকে কোলে নিয়ে রিধীর পাশে বসলো
-অনেক কষ্ট করতে হয়েছে না তোমার এই বাবুটার জন্য???
-তোমার এই অবস্থা কেন? কেঁদেছো কেন?

রাফি তাজ্জব হয়ে গেল রিধীর মুখে তুমি শুনে। রাফি বলল
-রিধী??
-রিধী আর কিছু বলল না।

রাফি বাবুটাকে কাশফির কোলে দিল। এরপর রাফি হাসপাতালের ফর্মালিটি শেষ করল আর মা সন্তানের অবস্থা ভাল থাকায় আজই হাসপাতাল থেকে বিকালে রিলিজ দিবে রিধীকে। রাফি প্রতিটা মুহুর্ত রিধীর পাশে ছিল। রাফি রিধীকে আগেই বলেছিল বাবুর নাম রাফি রাখবে আর রিধীও না করেনি।

বিকেলে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার আগে হঠাৎ লিখন এসে দাঁড়ায় রিধীর কেবিনে। রাফি তখন রিধীকে তৈরি করছিল। লিখন কে দেখে রাফি আর রিধী দুইজনেরই প্রচন্ড রাগ হয়। রাফি লিখনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল আর জিজ্ঞেস করলো
-এখানে কি চাই?
-আমার বাবুকে।
-ওহ রিয়েলি!! নাইস জোক্স। কোন হিসেবে তুই নিজের বাবু বলে দাবী করছিস? জানিসনা আমি রিধীর স্বামী???
-বাট বেবিটা আমার। রিধীকে আমিই প্রথম স্পর্শ করেছিলাম।
-আর একবার যদি তুই এই কথা বলিস তোর জিহ্বা আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব। জানোয়ার কোথাকার! তোর সাহস কি করে হয় এই কথা বলার?? (লিখনের শার্টের কলার ধরে চিৎকার করে বলল রাফি)

রাফির চিৎকার শুনে সবাই কেবিনে এলো। সবার মাথা তখন রাগে আগুন হয়ে যায়। রিধীর বাবা আর কাশফির হাজবেন্ড তখন রাফিকে শান্ত করে ওর কলার ধরে বলে
-এই কুত্তার** তুই এইখানে কি করিস? এইখানে কেন তুই?? (কাশফির হাজবেন্ড)
-ভাইয়া ওকে চলে যেতে বল নয়ত এখন আমি ওকে খুন করে ফেলব।

লিখন তখন ও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। রিধী বেড থেকে নেমে লিখনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে
-কিরে আমার স্বামী কি বলছে শুনিসনি?? বেরিয়ে যা এখান থেকে। আর তোর বিন্দু পরিমান লজ্জা থাকলে আমার সামনে আর কোনোদিন আসবিনা। বেরিয়ে যা এখান থেকে।
-এত জেদ এখনো রয়ে গেছে! ধর্ষিতা উপাধি পেয়েও তোর জেদ কমেনি??

এই কথা বলতে দেরি কিন্তু রাফির রিয়েকশন এ দেরি হল না। রাফি লিখনকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। আয়মান (কাশফির হাজবেন্ড) পারছেনা রাফিকে থামাতে। রিধী রাফিকে থামায়। আর লিখনকে বের করার আগেই পুলিশ এসে লিখনকে নিয়ে যায়। রাফি প্রচন্ড রেগে আছে। দাঁড়িয়ে শুধু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কিছু বলছেনা। রাফি কিছুক্ষন পর রিধীসহ সবাইকে নিয়ে ওর বাসায় যায়। রিধী আর রাফির বেডরুমটা পুরো কিডস জোন বানিয়ে ফেলে রাফি,,কাশফি আর আয়মান মিলে। রিধীকে অন্যরুমে মায়ের কাছে রেখে আসে রাফি। ঘর সাজানো হয়ে গেলে রিধীকে নিয়ে আসে আর রাফসান (বাবুসোনার নাম) কে নিয়ে আসে রাফি। দেয়াল রাফি আর রিধীর ছোট বেলার সব ছবি আর বেবির ছবি দিয়ে সাজানো। রিধীকে ড্রিম জোনে ওয়েলকাম জানায় আয়মান আর কাশফি। রাফি রাফসান কে কোলে নিয়ে দোলনায় শোয়ায়। অনেক বেশি টেক কেয়ার করে রাফসানের। রিধীর তা দেখে ভালই লাগে আবার হিংসাও হয় কারণ এখন রাফসানকে আদর করে ঘুম পারিয়ে দেয় রাফি।

চলবে