বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী পর্ব-০৭

0
2255

#বেষ্ট_ফ্রেন্ড_নাকি_স্বামী?
#Part_7
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

রাফি আয়মানের ফোনটা কেটে দিয়ে রিধীর পাশে এসে দাঁড়ালো। রিধী আয়নার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রিধীও বুঝতে পেরেছে এটা আয়মান ভাইয়া আর কাশফি আপুর প্ল্যান। রাফি খাটে বসতে বসতে রিধীকে বলল
-অনেক বড় হয়ে গিয়েছো। নিজের ভাল নিজে খুব ভালই বুঝো কিন্তু আমার মন কেন বুঝলেনা?
-এই কথা বলছো যে!! (রাফির দিকে ঘুরে রিধী)
-রিধী তুমি ভাল করেই জানো কেন বলছি তাও কেন পাল্টা প্রশ্ন করছো?(ব্লেজার খুলতে খুলতে)
-(নিশ্চুপ)

এরপর রাফি খাট থেকে উঠে রিধীকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে বাহু ধরে বলল
-এতদিনে কি আমার জন্য মন থেকে কোনো ফিলিংস জন্মায়নি তোমার?? (মুখের সামনে মুখ রেখে)
-দুপুরে তো বলেছি। (কাঁপা কাঁপা গলায়)
-ভাইয়া,,আপু তোমায় বুঝিয়েছে তাই বলেছো। আমি জানি রিধী তুমি মন থেকে এখনও আমায় মেনে নাওনি!! আচ্ছা বলতে পারো আমি কি করেছি? শুধু ভালবাসি কথাটা বলেছি এইটাই কি আমার দোষ? বল রিধী চুপ করে থাকবেনা (রিধীর বাহু ধরে চিৎকার করে)
-রিধী কাঁপছে ভয়ে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
-রিধী তুমি কেন বুঝো না বল তো? কেন বুঝো না রাফির দরকার তোমাকে। এই ৯ টা মাস হয়ে গেছে আমাদের বিয়ে হয়েছে। একটাবার আমার কাছে এসেছো? একটাবার বলেছো রাফি আমি তোমায় ভালবাসি? উল্টো আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছো। কাছে আসা তো দূর একটু ছুঁতে পারিনি তোমায়!

রিধী এইবারো কোনো কথা বলছেনা। রিধীর শাড়ির আচল পরে যাচ্ছে আর রাফি তা উঠিয়ে দেয় আর বলে

-নিজেকে সামলাতে শিখো রিধী। আগামিকাল রাতে আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি। আমি এত অবহেলা আর অবজ্ঞা নিতে পারছিনা। আমিও মানুষ রিধী। ধৈর্য শক্তির লিমিটেশন আমার ও আছে। রাফসানকে আর তোমাকে অনেক বেশি মিস করব আমি। অন্তত রাফসানের সাথে আমাকে কথা বলতে দিও। (চোখের কোনে পানি চলে এসেছে রাফির)

রিধী রাফির দিকে তাঁকিয়ে কাঁদছে। রাফি রিধীকে ছেড়ে সরে যেতে নেয় তখন রিধী পেছন থেকে রাফির হাত ধরে। রাফি পেছন ঘুরে তাঁকায়। রিধী রাফিকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে কাঁদতে বলে

-কোথায় যাবা তুমি আমায় ছেড়ে? আমি ও যে তোমায় ভালবেসেছি অনেক বেশি। আমি আর রাফসান তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকব রাফি? বিশ্বাস কর আজকে আমি যা যা বলেছি সবই আমিমি আরো আগে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। প্লিজ রাফি মাফ করে দাও না আমায়! আর কখনো তোমার থেকে দূরে সরে থাকব না আমি।

রাফি আর কিছু বলতে পারেনা। রিধীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কারণ রিধীর চোখ এখন আর কোনো মিথ্যে বলছেনা। রাফি যে রিধীর চোখের ভাষা অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারে।

-বলনা কোথাও যাবা না আমায় ছেড়ে?
-না যাব না। শুধু আমায় একটু ভালবেসো আর কিছু লাগবেনা আমার। তুমি ছাড়া যে আমার আপন এখন আর কেউ নেই রিধী। তোমার অবহেলা সহ্য করাও যে দায়!!

রিধী রাফির শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে কেঁদে কেঁদে। এরপর রিধী রাফিকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। আর রাফি ওর মা বাবার ছবির দিকে তাঁকিয়ে বলছে
-আব্বু তুমি বলেছিলে আমার ভালবাসা যদি সত্যি হয় তবে তা পুর্নতা পাবে। আজ সত্যিই আমার ভালবাসা পুর্নতা পেয়েছে। আজ তোমার ছেলের চাইতে সুখি আর কেউ নেই। রাফি শার্ট খুলে পা ঝুলিয়ে, কপালে হাত দিয়ে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। রিধী টাওয়েল জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। রিধী রাফিকে ডাকে ফ্রেশ হতে যাওয়ার জন্য। রাফি তখন চোখ খুলে দেখে রিধী ভেজা চুলে, টাওয়েল জড়িয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফি আর এক মুহুর্ত দেরি না করে রিধীর হাত টান দিয়ে রাফির বুকে নিয়ে আসে রিধীকে। রিধীর সব ভেজা চুল রাফির মুখের উপর পড়ে। রাফি চুলগুলো সরিয়ে আরদেয়। আর রিধী তখন চোখ বন্ধ করে ফেলে আর রিধীর হার্ট বিট রাফি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। রাফি রিধীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। রিধীও চোখ বন্ধ করে ফেলে। এই অনুভুতি যে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এরপর রাফি রিধীকে বালিশে শোয়ায় আর রিধী রাফির দিকে তাঁকিয়ে থাকে। অনেক বেশি লজ্জা লাগছে রিধীর। আজ এই প্রথম রাফি রিধীর এতটা কাছে। রিধী রাফিকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়।

(বাকিটা আমি আর বলব না। নিজ দায়িত্বে বুঝে নিয়েন??????)

সকালে রিধী ঘুম থেকে জেগে দেখে রাফি ঘুমাচ্ছে রিধীর পেটের উপর হাত দিয়ে। আর রিধীর পিঠ রাফির বুকের সাথে মিশে আছে। রিধী তখন রাফির হাত আস্তে করে বিছানায় রেখে উঠে যায়। রিধী এতগুলো দিনে আজ রাফিকে শান্তিতে ঘুমাতে দেখলো। রাফি কখনই এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায়না। আজ ঘুমাচ্ছে।

রিধী ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে গেল। কিছুক্ষন পর রাফি রিধী রিধী বলে ডাকছে। রিধী তারাতারি রাফির কাছে গেল। রিধীকে দেখে রাফি জড়িয়ে ধরলো।

-কি হয়েছে তোমার?
-আমায় ডাকো নাই কেন?
-তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি। আমি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলাম।
-আমিও আসছি ফ্রেশ হয়ে।
-আচ্ছা আসো।

এরপর রাফি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেল। রিধীর চুলগুলো খুলে যাচ্ছে বারবার রিধী বাঁধতে পারছেনা। তখন রাফি একটা রিবন এনে রিধীর চুলগুলো বেঁধে দিল। রিধী তখন একটা মুচকি হাসি দিল রাফির দিকে তাঁকিয়ে। রাফি রিধীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর কথা বলছে। একটু পর রিধীর ফোন বাজলো। রাফি রিধীর ফোন পিক করতে গেল। কাশফি কল করেছে।

-হ্যা আপু বল।
-কি ব্যাপার রাফি রিধী কই?
-ব্রেকফাস্ট রেডি করে। রাফসান কি করে?
-রাফসানকে আয়মান খাওয়াচ্ছে আর আমি পাশে বসে আছি।
-হাহাহা ভাইয়া রাফসানকে খাওয়াচ্ছে।
-হেসো না রাফি বুঝছো। আমি পারি বাবুদের টেক কেয়ার করতে। (আয়মান বলল) তাছাড়া তোমার মুড এত ভাল ব্যাপার কি bro?
-ধুরর ভাইয়া। রাফসানকে নিয়ে তারাতারি চলে আসো।
-ওকে এসেই সব খবর পেটের থেকে বের করছি।

রাফি হাসি দিয়ে ফোন রেখে দিল। এরপর রিধীর গালে একটা চুমু দিল। আমি কতটা দিন অপেক্ষা করেছিলাম এই দিনটার জন্য। আজ তা পেয়ে গেছি। রিধীও রাফিকে জড়িয়ে ধরে বলল
-এভাবেই থাকতে চাই সারাজীবন।

চলবে