#বোনু
#Part_04
#Writer_NOVA
আমেরিকা থেকে আসা বিমানের থেকে নেমে এয়ারপোর্টে এক মিনিটও দেরি করলো না একটা ছেলে।গাড়িতে উঠে বসলো।গন্তব্য এখন হাসপাতাল। সেখানে তার প্রেয়সী জীবন মরণের সাথে লড়াই করছে। ছেলেটার বয়স ২৪ বছর।দেখতে বেশ স্মার্ট। গায়ের রং শ্যাম বর্ণ।চেহারাটা অনেক মায়াবী। নাকটা কিছুটা খাড়া।সবচেয়ে বেশি সুন্দর তার হাসিটা।কারণ হাসলে গালে টোল পরে।ছেলেদের গালে টোল পরলে এতো সুন্দর লাগে তা ওকে না দেখলে বুঝা যাবে না।চোখের পাপড়িগুলো একটু বেশিই বড়।পলক ফেললে ভালো লাগে দেখতে।চুলগুলো অগোছালো। চোখ মুখের অবস্থা নাজেহাল। কাল সারারাত কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ওনার তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর খুব কম বয়সে বিজনেসর জগতে প্রবেশ। পরিবারে এক বড় বোন এবং মা আছে।
চার ভাই বোনের আই.সি.ইউ এর সামনে বসে আছে। এখনো ২৪ ঘন্টা হয়নি।৭২ ঘন্টার আগে কোন কিছু বলা যাবে না।
অর্ণবঃ অরূপকে জিজ্ঞেস করেছিলি কোন খোঁজ পেয়েছে কি না?
ইশাতঃ না ভাইয়া,এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আদিলঃ তবে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে।ওরা তো জানে না কাদের কলিজায় হাত দিয়েছে।
অর্ণবঃ শান কোথায় আদি?
আদিলঃ ওর নাকি জরুরি কোন কল এসেছে। কথা বলছে।
ওদের সামনে অরূপ এলো।অরূপের বয়স ২৩ বছর। খুব ছোটবেলায় অর্ণব ওকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো।তখন থেকে এই পর্যন্ত কখনি ওদের কথার অবাধ্য বা অমান্য করে নি।চার ভাইয়ের পাশাপাশি অরূপও উষাকে ভীষণ ভালবাসে।তবে সেটা ভাইয়ের মতো।অরূপ যেনো নিজের চারটা ভাই ও একটা বোন পেয়েছে।অরূপও যদি জানতে পারে ওদের বোনুকে কেউ ডিস্টার্ব করেছে তাহলে তাকে আধা ঘণ্টা পর হসপিটালের জরুরি বিভাগে খুঁজে পাওয়া যাবে।ওর কারণে উষাকে কেউ ডিস্টার্ব করাতো দূরে থাক ওর দিকে তাকাতেও ভয় পায় ।কলেজে উষাকে দেখে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব অরূপের।অরূপ অর্ণবের ডান হাত।ওর বডিগার্ডের প্রধান অরূপ।অরূপের কাজ হলো ২৪ঘন্টা ওদের চার ভাইয়ের কথা মানা ও বোনকে দেখে রাখা।
অরূপঃ ভাই, আমাকে ডেকেছেন?
অর্ণবঃ বোনু যখন এক্সিডেন্ট করেছিলো তখন তুই কোথায় ছিলি?
অরূপঃআমি তো গুলশানে ছিলাম।আপনি চৌধুরীদের সাথে যে ২০ কোটি টাকার ডিল করেছিলেন তা কনফার্ম করে নিতে।
আদিলঃ তুই কি করে জানলি বোনু এক্সিডেন্ট করেছ?
অরূপঃ আমাকে একজন আননোন নাম্বার থেকে কল করেছে। শুধু এতটুকু বলছে মির্জাদের একমাত্র বোন এক্সিডেন্ট করেছে। আমি ১মে বিশ্বাস করিনি।পরে আবার কল করে জানায়। আমি লোক লাগিয়ে জানতে পারি কলেজের উল্টো দিকে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। গাড়ির বর্ণনা শুনে সেখানে ছুটে যায়।গিয়ে দেখি বোনু এক্সিডেন্ট করেছে।
ইশাতঃ আমাদের বাড়ি কলেজের সামনের দিকে কিন্তু বোনু উল্টো দিকে কেন যাবে?
অরূপঃ বোনু উল্টো দিকে কেন গিয়েছে সেটা আমার জানা নেই।
অর্ণবঃ ওর বডিগার্ড কোথায় ছিলো?
অরূপঃ ভাই, বোনু কাল অনেক জিদ করেছে তার সাথে যাতে কেউ না থাকে। সে বাড়িতে একাই চলে যাবে।এমন কি সাথে ড্রাইভারও নেই নি।কারো কোন কথা শুনেনি।বোনুর জেদে বাকি সবাই চলে এসেছে।
ইশাতঃ তুই যখন বোনুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলি তখন কি কোন সন্দেহজনক কিছু দেখেছিস?
অরূপঃ তেমন কিছু তো মনে পরছে না সেজো ভাই।
আদিলঃ ভালো মতো মনে করে দেখ।একটু ভাব।
অরূপ অনেক সময় ধরে ভাবলো।মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো।
অরূপঃ মনে পরেছে।আমি যখন বোনুকে খাঁদের থেকে তুলে এনেছিলাম তখন সেখান থেকে কিছুটা দূরে একটা কালো প্রাইভেট কার দাঁড়া করানো ছিলো।
গাড়িতে করে আসার সময় পেছনে একটা সাদা গাড়ি দেখেছিলাম। তখন আমার এতোদিকে খেয়াল করার সময় হয়নি।আমি কতখনে হসপিটালে আসবো তার টেনশনে ছিলাম।
অর্ণবঃ তুই জানলি কি করে বোনুকে এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে?
অরূপঃ আমি খবর নিয়েছি।
কাল বিকেলে যখন হসপিটালে মির্জারা ছুটে এসেছিলো তার কিছুখন পর অরূপ চার ভাইকে এই কথাটাই বলেছিলো যে তাদের বোন এক্সিডেন্ট হয়নি তাকে এক্সিডেন্ট করিয়েছে। যা শুনে চার ভাই রেগে বলেছিলো যে এই কাজটা করেছে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।
অর্ণবঃআদি ওর কাছে থেকে নাম্বারটা নিয়ে তদন্ত কমিটির কাছে পাঠিয়ে দে।যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
আদিলঃ কোন নাম্বার থেকে কল এসেছে?
অরূপঃ মেজো ভাই, এই নাম্বারটা থেকে।
(মোবাইলে নাম্বার দেখিয়ে)
আদিলঃ আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ইশাতঃ কাল রাতে বোনুকে কে মারতে চেয়েছিলো তা দেখতে পেয়েছিস?
অরূপঃ না সেজো ভাই। তার পরনে কালো পোশাক ছিলো।মুখটাও মুখোশে ঢাকা ছিলো।পালানোর সময় আমার সাথে ধাক্কা লাগে।ঝড়ের বেগে পালিয়ে যায়।আমি পিছু নিয়েও ধরতে পারনি।
অর্ণবঃ সব খবর নে অরূপ। আমার বোনুর কিছু হলে একটাকেও আমি ছারবো না।২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার সব খবর চাই।
অরূপঃ ঠিক আছে ভাই।বোনুর অবস্থা কেমন ভাই?
অর্ণবঃ কোন রেসপোন্স নেই। কি হবে তা একমাত্র আল্লাহ জানে।
অরূপঃ আমি সকালে বোনুর জন্য নামাজ পড়ে অাল্লাহর কাছে বোনুর সুস্থতা চেয়েছি।দেখেন ভাই আল্লাহ আমাদের কথা ফেলবে না।বোনু ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।(ছলছল চোখে)
অরূপের কথা শুনে তিন ভাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। যে ছেলেটার সাথে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই, নেই কোন আত্মীয়তা।সেই ছেলেটাও তাদের বোনকে কতটা ভালবাসলে এমনটা করতে পারে।ওদের এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরূপ বললো।
অরূপঃ ভাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমিও আপনাদের মতো বোনুকে অনেক ভালবাসি।হয়তো আমি ওর আপন ভাই নই।কিন্তু কোন অংশে আমি ওকে নিজের বোনুর থেকে কম ভালোবাসিনি।আমি বোনুকে কখনও বোন ছারা অন্য চোখে দেখি নি। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
তিন ভাই অরূপকে জরিয়ে ধরলো।সত্যি ওরা ভুল মানুষকে বোনুর দেখার জন্য চয়েজ করেনি।
অর্ণবঃ আমার বোনুটা সত্যি অনেক লাকিরে।ও একটা দুইটা নয় ৫ টা ভাই পেয়েছে। সত্যি আমি আমাদের জন্য আরেকটা ভাই এনেছি।
(কান্না জরানো কন্ঠে)
অরূপঃ আমি বেঁচে থাকতে বোনুর কিছু হতে দিবো না।এটা আমার অঙ্গিকার।যেভাবে হোক যে করে হোক, দরকার হলে নিজের জীবন দিয়ে হোক বোনুর এই অবস্থার জন্য যে দায়ী তাকে খুঁজে বের করবো।
ইশাতঃ বড় ভাইয়া তুমি সত্যি আমাদের জন্য আরেকটা ভাই নিয়ে এসেছো।হয়তো এতদিন না বুঝলেও আজ বুঝতে পেরেছি অরূপ আমাদের জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট।
অরূপঃ ভাই আপনি আমায় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছেন। আমি আজও জানি না আমার বাবা-মা কে? রাস্তার একটা ছেলেকে কখনও নিজের ভাইয়ের চোখে ছারা অন্য চোখে দেখেননি।আমার মতো ছেলেকে বিশ্বাস করে আপনাদের সাত রাজার ধন বোনুকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।আমি আপনাদের নুন খেয়ে কখনও আপনাদের সাথে বেঈমানী করবো না।কিন্তু কাল যদি আমি থাকতাম তাহলে হয়তো বোনুর এই অবস্থা হতো না।আমায় মাফ করে দিবেন আমি কাল আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি নি।যার কারণে বোনু এতো কষ্ট পাচ্ছে। আমি সত্যিই দুঃখীত।
(কাঁদতে কাঁদতে)
আদিলঃ তোর কোন দোষ নেই অরূপ।এটা আমাদের ভাগ্যে আল্লাহ লিখে রেখেছে।তোর ভালবাসা দেখে আমরাও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সত্যি আমরা তোকে পেয়ে ধন্য।
ইশাতঃ খবর লাগানো শুরু করে দে।যত টাকা লাগে সব আমরা দেবো। আমার বোনুকে যারা মারতে চেয়েছে তাদের আমাদের চোখের সামনে চাই।
অরূপঃ চিন্তা করবেন না ভাই। সব আমার ওপর ছেরে দেন।আমি সব খবর নিয়েই ফিরবো।
অরূপ চলে গেল।কিন্তু অরূপের উষার প্রতি ভালবাসা দেখে ওরা যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অরূপ খুব গম্ভীর টাইপের ছেলে।কখনো মনের ভাব প্রকাশ করে না।কিন্তু আজ ওর চোখে শুধু উষার প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা দেখতে পেরেছে। যার মধ্যে ছিলো না কোন মিথ্যা, কোন ছলনা কিংবা বাহানা।
হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমেই কোর্টটা ছু্ঁড়ে ফেলে দিলো সদ্য আমেরিকা থেকে আসা ছেলেটি।দরজাটা খুলে দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে চলে গেল। এতটা তাড়া ছিলো যে তার। গাড়ির দরজাটা পর্যন্ত লাগানোর সময় নেই। ভেতরে প্রবেশ করে উষার আই.সি.ইউ এর নাম্বার জেনে সেদিকে ছুটলো।মাঝপথে ঈশানের সাথে দেখা হলো।
—-শান,উষা কোথায়? ও এখন কেমন আছে? কিভাবে এক্সিডেন্ট করলো?ও কি ভালো হবে না? ও আমার সাথে রাগ করেছে?আমি ওর সব কথা মেনে চলবো? ও কি আমার সাথে আর কথা বলবে না?
(এক নিঃশ্বাসে সব কথা বললো)
ঈশানঃ জিবরান তুই? (অবাক হয়ে)
আমেরিকা থেকে যে ছেলেটা আসলো তার নাম জিবরান খান।ইশাত ও ঈশানের বন্ধু এবং অর্ণবের ডিল পার্টনার।১ সপ্তাহের জন্য একটা ডিল কনফার্ম করতে আমেরিকা গিয়েছিলো।উষার এই অবস্থা শুনে ডিল কনফার্ম না করেই চলে এসেছে। উষাকে অনেক ভালবাসে জিবরান।সেটা অবশ্য উষার চার ভাই জানে।জিবরানের মতো ভালো ছেলে আজকাল হয়তো খুব কম পাওয়া যাবে।কোন বেড হেবিট নেই।
জিবরানঃ কি রে কথা বলছিস না কেন?
ঈশানঃ এতো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর কিভাবে দিবো?
জিবরানঃ কোথায় আমার উষা? আমি ওকে এক নজর না দেখলে যে শান্ত হতে পারবো না।গতকালের রাতটা যে কিভাবে কেটেছে সেটা তোকে বুঝাতে পারবো না।উষা এখন ভালো আছে? ওর কাছে নিয়ে চল আমাকে?তোরা থাকতে কিভাবে হলো এসব?কিভাবে হলো এক্সিডেন্ট?
ঈশানঃ মাঝে মাঝে মানুষের দ্বারা মিসটেক হয়ে যায়।আমাদেরও হয়েছে। যার মাসুল আমাদের বোনুকে দিতে হচ্ছে।
জিবরানঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমাকে তুই আগে উষার কাছে নিয়ে চল। পরে সব কথা শুনবো।
ঈশানঃ হুম চল।
ঈশান জিবরানকে নিয়ে উষার কাছে চললো।জিবরানের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়। কতখনে ওর ভালবাসার মানুষটাকে এক পলক দেখবে।তার জন্য ছটফট করছে।
#চলবে