বোনু পর্ব-২৩

0
3186

#বোনু
#Part_23
#Writer_NOVA

২ দিন পর….

সারা ড্রয়িং রুমে জুড়ে দৌড়াচ্ছে অরূপ, ঈশান,ইশাত। ওদের পেছন পেছন উষা।আজকে তিন ভাইয়ের মধ্যে যাকে পাবে হাতে, তাকেই আলু ভর্তা করবে।উষা গিয়েছিলো ইউ টিউব দেখে রান্না করতে।বেচারীকে শান্তি মতো কোন কাজ করতে দেয়নি ওর তিন ভাই। উষাতো রান্নার কোন জিনিসপত্র চিনে না।সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিন ভাই উল্টো পাল্টা মসলা দেখিয়ে দিয়েছে। চিনির বদলে লবণ,হলুদের বদলে মরিচ,আটার বদলে ময়দা।উষার পুরো রেসেপি খারাপ করে দিয়েছে। এত শখ করে রান্না করতে গিয়েছিলো।কিন্তু বাঁদড়গুলোর কারণে তা আর হলো না।তাই এখন খুন্তি হাতে ওদের পিছু ধাওয়া করছে।

উষাঃ দাঁড়াও আজকে তোমরা।তোমাদের আমি চাটনি বানাবো।রোদে শুকিয়ে বৈয়ামে ভরবো।পাঁজি, বজ্জাতগুলো।আমার পুরো রান্না খারাপ করে দিয়েছে। আমায় ভোলা-ভালা পেয়ে উল্টো পাল্টা মসলা দেখিয়ে রান্না খারাপ করে দিলো।কোথায় আমায় শিখিয়ে দিবে তা না করে পুরো রেসেপির তেরটা বাজালো।এখন আমি তোমাদের কে এসব খাওয়াবো।
অরূপঃ আমার কোন দোষ নেই বোনু।আইডিয়াটা ছোট ভাইয়ের ছিলো।
ঈশানঃ আমি কিছু করি নি।সব দোষ ইশাতের।
ইশাতঃ আমি কিছুই জানি না।
উষাঃ তোমরা জানবে কি করে?তোমরাতো দুধের ধোয়া নিম পাতা।তোমাদের মতো ভদ্র ছেলে একটাও নেই। শয়তানগুলো, তোমাদের আমি হারে হারে চিনি।
ঈশানঃ ইশাত এভাবে সারাদিন দৌড়ালো তো এনার্জি সব ফুরিয়ে যাবে।সকাল থেকে পেটে কিছু পরে নি।
অরূপঃ ডাইনিং টেবিলে বসে এতো এতো খাবার সাবার করলো কে ভাই? (অবাক চোখে)
ঈশানঃ সেই কখন খেয়েছি।এতখন পেটে থাকে নাকি।কবে হজম হয়ে গেছে।
ইশাতঃ জোরে দৌড়া নয়তো বোনুর হাতের খুন্তির বারি খেতে খেতে পেট এমনি ভরে যাবে।
উষাঃ না,এভাবে আমি কিছুতেই ধরতে পারবো না।এখন ইমোশন কাজে লাগাতে হবে।দেখাচ্ছি মজা তোমাদের?(মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে)

তিন ভাই বোনের ড্রয়িং রুম কয়েকবার চক্কর দেয়া হয়ে গেছে। অনেকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে।হঠাৎ পেছনে উষা কিছু একটার সাথে বেজে ইচ্ছে করে পড়ে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো। তিন ভাই ছুটে এলো
উষাঃ ও মা গো আমার কোমড়টা বোধহয় গেলো গো।কে কোথায় আছো গো? আমায় উঠাও।অনেক ব্যাথা পেয়েছি।
ইশাতঃ কি হয়েছে বোনু?
অরূপঃ বোনু কি করে ব্যাথা পেলি?সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না।
ঈশানঃ কানী কোথাকার?চোখ কি কপালে তুলে হাঁটিস।শুকনোর মধ্যে ব্যাথা পাস কি করে?
উষাঃ আমি ব্যাথা পেয়েছি তারপরও আমায় বকছিস?🥺ব্যাথাটা তো তোদের জন্য পেলাম।আমার কোমড়ের হাড্ডি ভেঙে গিয়েছে নিশ্চই।এখন যদি আমার জিবরান আমাকে বিয়ে করতে না চায়।বলে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না।তাহলে আমার কি হবে?আমিতো শেষ হয়ে যাবো।😭😭
অরূপঃ চুপ কর।একদম অলুক্ষ্মণে কথা বলবি না।তোর কিছুই হবে না।তোর পাঁচ ভাই তোর কিছু হতে দিবে না।আমি কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি।
ইশাতঃ আমি ফার্স্ট এইড বক্স আনছি।
ঈশানঃ অরূপ ভাই তুই এই মুটিকে সোফায় নিয়ে যা।দেখিস ওকে তুলতে গিয়ে তোর কোমড়ের হাড্ডি না ভেঙে যায়।
উষাঃ কি বললি তুই? আমি মুটি।তবে রে পাঁজি, শয়তান।তোর একদিন আমার যতদিন লাগে।
উষা ছুটে ঈশানকে মারতে এলো।উষা ভুলেই গিয়েছিল ও এখন ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করছে।অরূপ ও ঈশান ব্যাপারটা খেয়াল করে না পালিয়ে কোমড়ে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো।
উষাঃ এভাবে কি দেখছিস?
অরূপঃ তুই নাকি ব্যাথা পেয়েছিস?
ঈশানঃ তোর কোমড়ের হাড্ডি বলে ভেঙে গেছে।
উষাঃ ও হ্যাঁ,আমি তো অনেক ব্যাথা পেয়েছি। আমার কোমড়ের হাড্ডি সত্যি ভেঙে গেছে। আমি আসলে ভূলে গিয়েছিলাম। আসলে হয়েছি কি?😁
(আমতা আমতা করে)
ঈশানঃ তুই নাকি কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছিস?
অরূপঃ তোর কোমড়ের অবস্থা নাজেহাল। এখন হাঁটছিস কি করে?
উষাঃ আমি আসলে হয়েছে কি? আসলে ভাইয়ুরা….

উষার সামনে এগুতে লাগলো ঈশান ও অরূপ।ওরা দুইজন উষার চালাকি ধরে ফেলেছে। ওদেরকে সামনে আসতে দেখে উষা উল্টো দিকে দৌড়। ওকে পায় কে?অরূপ,ঈশান দুজন শব্দ করে হেসে উঠলো। ইশাত ফার্স্ট এইড বক্স হাতে নিয়ে ফিরে এসে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ইশাতঃ বোনু কোথায়? ও ব্যাথা পেয়েছে।তোরা বোনুকে এভাবে যেতে দিলি কেন? আবার পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে।আমি বক্স নিয়ে এলাম।বোনু কোথায় গেলো?
ঈশানঃ তুই এতো হাইপার হইস না তো।বোনুর কিছুই হয়নি।আমাদের সাথে চালাকি করছিলো।আমরা ধরে ফেলেছি বলে দৌড়ে পালিয়েছে।অরূপ তুই ওকে পুরো ঘটনা খুলে বল তো।
অরূপ ইশাত কে সব কিছু খুলে বললো।তিন ভাই একসাথে হাসছে।ওদের বোন ওদেরকে শায়েস্তা করতে এসে নিজের ফাঁদে নিজে পড়ে দৌড়ে পালিয়েছে। উষা এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে হাঁফ ছারলো।আরেকটু থাকলে ওর ভাইরা কি করতো তাই মনে মনে ভাবছে।
উষাঃ ইস,ধরা পরে গেলাম।নিজের ফাঁদে নিজেই পরলাম।শয়তানগুলো সব কিছু বুঝে যায়।বজ্জাতের নাতি,ইঁদুরের দুলাভাই, ফাজিল।এদের জন্য আমি রান্না করতে গিয়েও শান্তি পাই না।(একটু ভেবে) আমি দৌড়ে পালালাম কেন?আমিতো ওদের পিছু নিয়েছিলাম।আমার হাতে তো এখনো খুন্তি আছে।দেখছো আমি সব ভূলে গিয়েছি।আমাকে কি বোকা বানালো?ভয় দেখানোর কথা ছিলো আমার। আর আমিই ভয় পেয়ে চলে এলাম।দাঁড়াও তোমাদের মজা আমি দেখাচ্ছি।

বিরবির করে কথাগুলো বলে যেই পেছনে ঘুরলো। হাত লেগে কাচের গ্লাস টেবিল থেকে পরে গেল।

🍁🍁🍁

গ্লাস ভাঙার শব্দে ধ্যান ভাংগলো উষার।এত সময় ধরে পুরনো স্মৃতি গুলো মনে করছিলো উষা।বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো ওর কুকুর ছানাটা গ্লাস ফেলে দিয়েছে।বড় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। অরূপকে খুব মিস করছে উষা।সবকিছু থমকে গেছে ওর কাছে।

দরজার বাইরে অনেক সময় ধরে অর্ণব ও আদিল দাঁড়িয়ে আছে। বোনকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর সাথে কথা বলতে এসেছিলো।একটা সত্য জানাতে চায় দুই ভাই উষাকে।ইশাত, ঈশানও অরূপের মৃত্যুর পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।ভাই-বোনের এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ওদের জানানোর ডিসিশনে এসেছে বড় দুই ভাই। দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকে বোনের পাশে দাঁড়ালো অর্ণব,আদিল।গাল বেয়ে চোখের পানি পরছে উষার।আদিল আলতো হাতে বোনের চোখের পানি মুছে দিলো।
আদিলঃ বোনু??
উষাঃ তোমরা এখানে?কি মনে করে ভাইয়ু?
চোখের পানি মুছে একটা কৃত্রিম হাসি দিলো উষা।
অর্ণবঃ তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
উষাঃ হ্যাঁ, বড় ভাইয়ু বলো।
আদিলঃ আমাদের সাথে তুই,ইশাত,শান একজায়গায় যাবি।একটা আশ্চর্য কিছু দেখাবো।
অর্ণবঃ আমরা তোদের থেকে একটা সত্যি লুকিয়েছি।যেটা করা আমাদের একদম উচিত হয়নি।আমরা তোদের এভাবে মেনে নিতে পারছি না।
উষাঃ কি বলছো তোমরা?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আদিলঃ আমরা এখন বেরুবো।
উষাঃ কোথায়?
অর্ণবঃ আমাদের বাগান বাড়ি।সেখানে কাজ আছে।
উষাঃ আমার এখন ভালো লাগছে না।তাই কোথাও যেতে পারবো না।প্লিজ তোমরা আমায় জোর করো না।আমি এখন একা থাকতে চাই।
আদিলঃ তোকে আমাদের সাথে যেতে হবে।নইলে তুই এই অবস্থা থেকে বের হতে পারবি না।
অর্ণবঃ তৈরি হয়ে নে।আমরা এখনি বের হবো।

উষাকে কিছু বলতে না দিয়েই হনহন করে ওর বড় দুই ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সময় রাত দশটা।ঢাকার এই সময়টা ব্যাস্ত মানুষের ঘরে ফেরার আনাগোনা। রাস্তা ঘাটে মানুষের ভিড় ভালোই আছে।গাড়ির জানালায় মাথা হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে উষা।ওর সাথে ঈশান,ইশাত চুপ করে বসে আছে।মুখটা মলিন হয়ে আছে।আদিল ড্রাইভ করছে।পাশের সিটে অর্ণব বসা।গন্তব্য এখন বাগান বাড়ি।পেছনের সিটে ভাই-বোনের এরকম ভাবলেশহীন বসে থাকা ভালো লাগছে না অর্ণব, আদিলের।অন্য সময় হলে এতক্ষণ গাড়িতে ধুমছে মারামারি হতো ছোট তিনটার মাঝে। ইশাত,ঈশান বোনের সাথে লেগেই থাকতো।উষাও বিচার দিতে দিতে বড় দুই ভাইয়ের কান ধরিয়ে ফেলতো।কিন্তু আজ সব চুপ।তব্ধ খেয়ে আছে পরিবেশটা।বড় দুই ভাই মুচকি মুচকি হাসছে।হাসার,কারণটা হলো বাগান বাড়িতে গিয়ে তিন ভাই বোন যা দেখবে তাতে তারা আবার নিজেদের রূপে ফিরে আসবে।

ঘন্টা খানিক পর বাগান বাড়ি এসে পৌছালো। গাড়ি থেকে নেমে আদিল সদর দরজার বিশাল বড় তালা খুললো।ঈশান,উষা,ইশাত ভাইদের কান্ড কিছু বুঝতে পারছে না।হঠাৎ করে বাগান বাড়ি কেন এলো?সবার মনের মাঝে এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে।গেইটে একজন দারোয়ান ও একজন মালি ছাড়া এ বাড়িতে আর কোন মানুষ নেই। তালা খুলে ভেতরে ঢুকলো সবাই।

ইশাতঃ বাহ্ ভেতরটা তো বেশ পরিষ্কার ও পরিপাটি।
ঈশানঃ হঠাৎ এখানে কেন আনলে ভাইয়ারা?
অর্ণবঃ একটু পরেই বুঝতে পারবে।
আদিলঃ ভাইয়া দরজাটা লাগিয়ে দিবো।
অর্ণবঃ হুম। দরজা লাগিয়ে লক করে দে।আমরা রাতের খাবার এখানেই খাবো।
ইশাতঃ রান্না করবে কে?
ঈশানঃ পাগল হয়ে গেছো তোমরা?মানুষ নেই, কোন জোগাড় নেই, রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। তোমরা বলছো রাতে এখানে খাবো।
আদিলঃ খাওয়ার সময় দেখিস।এখন কথা না বলে উপরে চল তো।
উষাঃ তোমরা আমাদের সত্যিকারের বড়,মেজু ভাইয়ু তো।নাকি আমাদের শত্রু। তোমরা যদি আমাদের শত্রু হও তাহলে আমাদের ভাইয়ুরা কোথায়? তোমরা আমাদের ভাইয়ুর চেহারা লাগিয়ে এসেছো।আমাদের এখানে মেরে ফেলে রেখে যাবে।
অর্ণবঃ ধূর, বোনু।কি বলিস এসব?চল উপরে চল।
উষাঃ উপরে নিয়ে মেরে ফেলবে আমাদের। আমরা যাবো না।সেজু ভাইয়ু,ছোট ভাইয়ু পালা এখান থেকে।এরা আমাদের ভাই নয়।আমাদের মেরে ফেলতে এখানে নিয়ে এসেছে।
আদিলঃ কি উল্টো পাল্টা বকছিস বোনু?আমরা তোদের ভাই।আবার দয়া করে তোরা উপরে চল।

🍁🍁🍁

পাঁচ ভাই-বোন উপরে উঠে গেল। একটা সোকেসের সামনে এসে দাঁড়ালো। সোকেসের পেছনে হাত দিয়ে অর্ণব স্পর্শ করতেই সোকেসটা ফাঁক হয়ে গেল।সেখানে একটা গুপ্ত দরজা দেখা দিলো।অর্ণব পাশের একটা ফুলদানিতে হাত রাখতেই দরজাটা খুলে গেলো।দরজার অপর পাশে বিশাল বড় একটা বেড রুম।পুরো পরিপাটি করে রাখা সবকিছু। বিছানায় ল্যাপটপ দেখে বেশ অবাক হলো ইশাত,ঈশান ও উষা।কিন্তু খুব খুশি মনে অর্ণব ও আদিল পাশে থাকা সোফায় আরাম করে বসলো।

উষাঃ কে থাকে এখানে ভাইয়া?
ঈশানঃ কার কাছে নিয়ে এসেছো তোমরা আমাদের?
ইশাতঃ দেখ শান।কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠছে।মনে হচ্ছে কেউ মাত্র কফি তৈরি করে রেখেছে।
ঈশানঃ আমার কাছে সবকিছু রহস্যজনক লাগছে।কে থাকে এখানে?দরজায় বিশাল তালা,রুমের বাইরে এতো সিকিউরিটি। কি রকম খোটকা লাগছে?
ইশাতঃ তোমরা হাসছো কেন? উত্তর দেও।
উষাঃ ভাইয়ু আমার মনে হচ্ছে এটা আমাদের ভাই নয়।দেখিস আমাদের মেরে ফেলার জন্য এরা আমাদের ভাই সেজে এসেছে।
ঈশানঃ চুপ কর। কি বলিস? তোর মাথা সত্যি গেছে বোনু।তোকে ডক্টরের কাছে নিতে হবে।
উষাঃ ভালো কথা বললাম তো ভালো লাগলো না।এই জন্য বলে ভালো করলে ভালো নেই, সালাম করলে দোয়া নেই। বিপদে পরলে বুঝবি মজা।হু হু তখন আবার বলিস কেন বোনের কথা শুনলাম না।
আদিলঃ তোরা সোফায় এসে বস।
অর্ণবঃ আমরা একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি।
ইশাতঃ আমার জানা মতে বাগান বাড়িতে কেউ থাকে না।তাহলে মানুষ আসবে কি করে?
উষাঃ ভাইয়ু মানুষ না থাকতে পারে ভূততো থাকতে পারে।আমি সিউর এ বাড়িতে ভূত আছে।👻
ঈশানঃ তুই কি চুপ করবি?
আদিলঃ মানুষ না থাকলে গরম ধোঁয়া উঠা কফি কোথা থেকে এলো?
ইশাতঃ তাইতো।আমি কিছু বুঝতে পারছি না।সব আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ খট করে ওয়াস রুমের দরজা খুলে গেল।উষা শক্ত করে ঈশানের হাত ধরে রেখেছে। ওর বিশ্বাস এখানে ভূত আছে।ভেতর থেকে টাউজার ও টি-শার্ট পরিহিত একটা ছেলে বের হলো।তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে পেছন দিকে ঘুরতেই বেচারা ভয় পেয়ে গেলো। বুকে তিনটা ফুঁ দিয়ে ওদের দিকে তাকালো। ছেলেটাকে দেখে উষা,ইশাত ও ঈশানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এটা কি করে সম্ভব হতে পারে।

ঈশানঃ অ—রূ—প😳😳
উষাঃ ভাইয়ু ভূ উ উ উ উ উ ত—👻👻
ইশাতঃ অরূপ এখানে কি করে সম্ভব?
অরূপঃ কখন এলে তোমরা? তোমাদের দেখে তো আমি ভয় পেয়ে গেছি।
ইশাতঃ ভাইয়ু আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
ঈশানঃ অরূপ মারা গেছে। তাহলে এটা কে?
অরূপঃ কি বলো তোমরা? মারা গেলে ফিরে এলাম কি করে?
উষাঃ বলেছিলাম না ভাইয়ু এখানে ভূত আছে। দেখলে তো অরূপ ভাইয়ুর ভূত এখানে।
ইশাতঃ শান আমায় একটা চিমটি কাট তো।দেখি আমি সত্যি দেখছি নাকি স্বপ্ন।
ঈশান চিমটি কাটতেই ইশাত লাফ দিয়ে বললো।
ইশাতঃ আমি সত্যি দেখছি।আমার মাথা ঘুরচ্ছে।আমি এখন পাগল হয়ে যাবে।
অরূপঃ কেমন আছো তোমরা? বোনু কেমন আছিস? মুখ চোখের অবস্থা কি করেছিস?

অরূপ কথা বলতে বলতে উষার সামনে এসে দাঁড়াতেই উষা অরূপকে দেখে এতোখন নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পরলেও এখন পারলো না।অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরলো।পরে যাওয়ার আগে অরূপ ওকে ধরে ফেললো।
অরূপঃ বোনু কি হলো তোর?তুই ঠিক আছিস তো।
অরূপ ব্যস্ত হয়ে পরলো বোনকে নিয়ে।কোলে করে বেডে শুইয়ে দিলো।উষার এক হাত নিজের দুই হাতের মুঠে নিয়ে হাত ডলতে লাগলো।
অরূপঃ বোনু কি হলো তোর?
আদিলঃ চোখের সামনে মৃত মানুষ দেখতে পেয়ে আমাদের বোনু অজ্ঞান হয়ে গেছে।
অর্ণবঃ তোর জন্য এতোদিন কান্না করে চেহারার এই অবস্থা করেছে।এবার তুই বোনকে সামলা।
আদিলঃ এই ছোট দুইটার একি অবস্থা। তাই এখানে না এনে পারলাম না।

ইশাত,ঈশান হা করে অরূপের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের মাথা এখনো ঝিম ঝিম করছে। অরূপ বোনের জ্ঞান ফিরাতেই ব্যস্ত।অর্ণব,আদিল মিটমিট করে হাসছে।

#চলবে

#