#ভালোবাসব_যে_তোকে?
পার্ট ৪
লেখিকাঃসারা মেহেক
??
মৌ এসব শুনে নিরবে চোখের জল ফেলছে। সে ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হয়ে যাবে। সে তো আয়ান ভাইয়ার সাথে কখনোই ওভাবে মিশে নি যেমনটা এই আন্টী বলছে।এদিকে মৌ এর মা বাবা এসব শুনে হতবাক।তারা তাদের মেয়েকে বিশ্বাস করে।কিন্তু বাইরের মানুষের এসব বদনাম শুনে তারা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছে।
ঐ আন্টীটা এই সেই অনেক কথা শুনাচ্ছে।মৌ কেঁদেই চলছে।আর আয়ান রাগে যেন ফেটে যাচ্ছে। বয়সে বড় দেখে কিছু না বলে চুপ করে সব সইসে সে।
হঠাৎ করে আয়ানের আম্মু বলে উঠলো,”ওরা দুজন বিবাহিত।”
এ কথা শুনে সবাই চরম অবাক হয়ে যায়। কেউ ভাবতেই পারেনি উনি এমন কিছু বলবেন।আয়ানের আম্মু অনেকক্ষন ধরে চুপ ছিলেন।তিনি ভাবছিলেন কিভাবে এনার মুখটা বন্ধ করা যায়।তিনি অনেক ভেবেচিন্তেই কথাটা বলেছেন।
আয়ান আর মৌ যে বিবাহিত এ কথা শুনে আন্টীর মুখে লেগে গেলো তালা।আর কোনো কথা মুখ দিয়ে বের করতে পারছে না।
আয়ানের আম্মুঃকি হলো ভাবি? চুপ হয়ে গেলেন কেনো? কতো কিছুই তো বলছেন আপনি,এখন বলুন দেখি।আমার জানামতে বিবাহিত কোনো ছেলে মেয়ে এভাবে ঘুরলে,গল্প করলে তো কোনে সমস্যা হওয়ার কথা না আপনার।
আন্টী আমতা আমতা করে বলছেন,
“কককিভাবে মানবো যে এরা বিবাহিত?
আয়ানের আম্মুঃআমি বলছি। আর আমাদের পরিবারের সবাই যানে।আর কি দরকার।আর বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার আছে।কিন্তু সেটা আপনাকে দেখানোর ইচ্ছা নেই।
সবাই অবাক হয়ে শুধু আয়ানের আম্মুর কথা শুনছে।
আন্টীঃওরা বিবাহিত হয়ে থাকলে আপনি এএতোক্ষন চুপ কেনো ছিলেন?আর এদের বিয়ের কথা সমাজের কেউই তো জানে না।
আয়ানের আম্মুঃদেখতে চাচ্ছিলাম যে আপনি আসলে কোন পর্যায়ের চিন্তা ভাবনা করেন।একটা ছেলে মেয়ে যে দুইদিন আলাদা দেখেছেন তাতেই আপনি এমন ভেবে নিলেন!! আপনার উচিত ছিলো এতো কিছু বলার আগে আসল ঘটনা জানার। কিন্তু আপনি কিছু না ভেবেই এতো কিছু বলে ফেললেন।
এবার আপনাকে বলি আসলে কি হয়েছিলো। আপনি যেদিন ওদের ২জনকে বাইরে দেখেন সেদিন আসলে ২জন ছিলো না ৩জন ছিলো ওরা। আপনি একটু ভালোভাবে দেখলে অহনা কে দেখতে পেতেন।
আর ছাদে গল্প করার কথা বলছিলেন তো,তখন আসলে মৌ আয়ানের কাছে পড়া বুঝতে গিয়েছিলো।পড়া শেষ হলে চলে এসেছে।ব্যস এটুকুই। অথচ না বুঝে না জেনে কতো কিছু বানিয়ে দিলেন আপনি।
আর বিয়ের কথা কেউ জানে না।কারন আমরা বলিনি।মৌ এর পরীক্ষা শেষে অনুষ্টান করে ওকে এ বাড়ীতে আনতাম।
আন্টী লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
আয়ানের আম্মুঃআমার মনে হয় আপনার সব জানা হয়ে গিয়েছে।আপনি যেতে পারেন এখন।
উনি যাওয়ার সাথে সাথে সবাই আয়ানের আম্মুর দিকে ঘুরে তাকালো।সবার চোখে মুখে হাজারো প্রশ্ন।
আয়ানঃআম্মু,তুমি কি সব বললা ঐ আন্টী কে??আমাদের বিয়ে কবে হলো!!!
আয়ানের আম্মুঃহয়নি,তো হয়ে যাবে আর আজকেই হবে।
আয়ানঃআম্মু তুমি ঠিক আছো তো??কি সব বলছো!!!
আয়ানের আব্বুঃতোমার আম্মু যা বলেছে ঠিক বলছে। তোমার আম্মু সঠিক সময়ে সঠিক ডিসিশন নিয়েছে।
আয়ানঃএটা কোন দিক দিয়ে সঠিক ডিসিশন!!!আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।
আয়ানের আম্মুঃসবার সম্মান বাঁচানোর জন্য আমার কাছে এটাই ঠিক মনে হয়েছে। সমাজের কেউই তোদেরকে ভালো চোখে দেখতো না। যদিও কিছু করিসনি তোরা, কিন্তু উনি সবার কাছে তাই বলে বেড়াতো যা উনি নিজে দেখেছেন।
কিন্তু তোরা দুজন স্বামী স্ত্রী এটা জানার পর উনি এমন কিছুই বলতে পারবেন না।
আয়ানের আব্বুঃহুম।আর এমনিতেও আমি আর তোর মা ভেবেছিলাম মৌ এর পরীক্ষার ওদের বাসায় তোর জন্য বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যাবো।আর আমাদের দুজনেরই মৌ কে আগে থেকেই ভালো লাগতো।
আয়ানের আব্বু মৌ এর আব্বুর উদ্দেশ্যে বলে,
“কি রেজোয়ান সাহেব ঠিক আছে আমাদের ডিসিশন??”
মৌয়ের আব্বুঃজি হ্যা ঠিক আছে।আমারও মনে হয় এমন কিছুই ভালো হবে।
এরপর ঐ রাতেই কাজি সাহেবকে ডেকে বিয়ে পরানো হয়। মৌ কিছুই বলে নি কারন সে এসব কিছু শুনার পর অনেক স্ট্রেস এ ছিলো। আর আয়ান মানা করেছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনে নি।
বর্তমানে,
আয়ান অহনাকে ফোন দেয়,
“অফিস থেকে আসার সময় ফোন দিতে বলেছিলি যে?”
“হুম,আসলে না আমার খুব চকলেট খেতে ইচ্ছা করছে। নিয়ে আসিছ ভাইয়া। আর হ্যা শোন, সবই ডাবল আনিস।”
“ডাবল কেনো?? আমি তো খাই না।”
“তোর জন্য কে আনতে বলেছে।আমি তো মৌ এর কথা বলছি। তুই কি ভুলে গিয়েছিস নাকি যে তোর বাসায় একটা বউ আছে??”
“ওহ হ্যা তো। আচ্ছা আনবোনে।”
এ বলে আয়ান ফোন রেখে দিলো।
মৌ বললো, “অহনা শোন না।আমার না খুব রান্না করতে ইচ্ছা করছে।আম্মুকে বলে আজকের রাতের রান্নাটা আমি করি?”
“আম্মু কি রাজি হবে নে?”
“আরে হবে,চল তো আগে গিয়ে বলি রান্নার কথা।”
তারপর তারা গিয়ে আয়ানের আম্মুকে রান্না করার কথা বললো। প্রথমে আয়ানের আম্মু কিছুতেই রাজি হলো না।পরে তাদের জোরাজুরিতে রাজি হলো।
মৌ আর অহনা দুজন মিলে রাতের খাবার রান্না করলো। রান্না করে এসে তারা রুমে বসে আছে। এমন সময় আয়ান অফিস থেকে আসলো।তাকে দেখেই অহনা বলে উঠলো,”ভাইয়া চকলেট এনেছিস?”
“হুম।এই নে।”
তারপর আয়ান মৌ আর অহনার দিকে এক বক্স চকলেট এগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
অহনা আর মৌ মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে।হঠাৎ মৌ বলে উঠলো,”জানিস অহনা আমার না তোর ভাইয়াকে এখন খুব জ্বালাতে ইচ্ছা করছে।”
“আমারো ইচ্ছা করছে।”
মৌ অহনার সম্মতি পেয়ে কাজ শুরু করলো।সে চকলেট খেয়ে খোসা গুলো সব বিছানায় ফেলতে লাগলো।তার দেখাদেখি অহনাও তাই করলো। এদিকে আয়ানের ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার আওয়াজ শুনে তারা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আয়ান রুমে এসে পুরো অবাক। পুরো বিছানায় চকলেট এর খোসা দিয়ে ভরা। এসব দেখে তার চরম রাগ হতে লাগলো। কারন সে বড্ড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ। এসব ময়লা যেখান সেখানে ফেলা তার সহ্য হয়না। সে জোরে জোরে অহনা কে ডাকতে লাগলো।কিন্তু ঐদিকে অহনা কোনে জবাব নিচ্ছে না। মৌ আর অহনা তো নিচে এসে আয়ানের ডাক শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ।তারা কোনোরকমেই হাসি থামাতে পারছে না।
আয়ানের আম্মু টেবিলে খাবার রেডি করছিলো।তাদের দুজনের হাসি দেখে উনি বললেন,
“কিরে এভাবে হঠাৎ পাগলের মতো হাসছিস কেনো?”
অহনা বললো,”তোমার ছেলেকে একটু জ্বালালাম আরকি।সেই মজা লাগছে আমার।”
“আহারে আমার ছেলেটা তোদের দুজনের অত্যাচারে পাগল হয়ে যাবে।”
এদিকে আয়ান রাগে রাগে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।তাকে দেখে অহনা আর মৌ দৌড়ে রান্নাঘরে গেলো।
খাবার সময়,
সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে। আয়ান বললো,
আয়ানঃআচ্ছা আজকে খাবারের টেস্ট একটু আলাদা লাগছে। ব্যাপার কি?
আয়ানের আম্মুঃআজকে মৌ আর অহনা মিলে রান্না করেছে।
আয়ানঃওহ তো দুই সুপার স্পেশাল রাধুঁনি রান্না করেছে আজকে।বেশ ভালোই রান্না করেছে।
মৌ খেতে খেতে আয়ানের দিকে মাছের বাটী এগিয়ে দিয়ে বললো,”আরে আয়ান তুমি তো এটা খাওনি।এটা নাও অনেক মজা হয়েছে।”
এ কথা শুনে আয়ান বিষম খেলো।কারন এর আগে মৌ আয়ানকে ভাইয়া বলে ডেকেছে আর আপনি বলে সম্বোধন করেছে।কখনো তুমি বলেনি।
আয়ানের এ অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে।আয়ান তো বেশ লজ্জা পেয়েছে।
সবাই খাওয়াদাওয়া করে যে যার রুমে চলে গেলো।মৌ রুমে যাচ্ছিলে তখন অহনা তাকে ডাক দিয়ে বলে যে,
“আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই জান।যা দিয়েছিস না আজকে ভাইয়াকে।আমার তো সেই মজা লেগেছে তখন।”
“থ্যাংকস মেরি জান।কিন্তু এটা তো কিছুই না।এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।আমার কথা মনে থাকে না তাইনা?আমাকে ভুলে যাও তো।কিন্তু এখন থেকে সবসময় শুধু আমিই তোমার মনে ঘুরে বেরাবো দেখো।”
এ বলেই মৌ একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়।
রুমে এসে মৌ দেখে যে আয়ান গুটিশুটি ভাবে ঘুমিয়ে আছে।
“আহারে বেচারার মনে হয় হালকা শীত লাগছে।কাথাটা গায়ে দিয়ে দেই।”
এরপর মৌ আয়ানের গায়ে কাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
সকালে মৌ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।সে নিচে গিয়ে আয়ানের আম্মুকে নাস্তা বানাতে হেল্প করলো।
এদিকে আয়ান ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিতে গেলো।
শাওয়ার নিয়ে সে বের হলো কেবলই অমনি মৌ রুমে ঢুকলো।মৌ রুমে এসেছিলো ফোন নিতে।সে দেখলো আয়ান শুধু একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে আছে।
“আস্তাগফিরুল্লাহ,নাঊযুবিল্লাহ।ছিঃ ছিঃ।এ আমি কি দেখলাম। এভাবে কে রুমে থাকে!!!”
এ বলেই মৌ পিছনে ফিরে দাড়ীঁয়ে রইলো।আয়ান তো এসব দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,”এই তুই এভাবে আমার রুমে নক না করে কেনো ঢুকেছিস? এটা আমার রুম। আমি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আমার রুমে থাকবো।তুই বলার কে হ্যা?”
এসব শুনে মৌ এর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। সে হঠাৎ করে সামনে ঘুরলো।ধীরে ধীরে সে আয়ানের দিকে এগুতে লাগলো।আয়ান তো এসব দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।সে ভেবে পাচ্ছে না মৌ আসলে কি করতে চাচ্ছে।
মৌ এগুতে এগুতে বললো,”এটা শুধু তোমার রুম না মি.আয়ান।এটা আমার রুম ও।বিয়ে করে এনেছো আমায়।তোমার সব কিছুর উপর আমার অধিকার আছে।এমনকি তোমার এই শরীরের উপর ও।”
এতোক্ষনে মৌ আয়ানের একদম কাছে চলে এসেছে।
আয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মৌ তার আঙ্গুল আয়ানের ঠোটের উপর রাখে আর বলে,
” হুশ…একটা কথাও না।জানো তোমার এই বডি দেখে না আমার একটা গান মনে আসছে।পুরোনে একটা গান।আমি কিছু ওয়ার্ড চেন্জ করেছি।”
এ বলেই মৌ হালকা কণ্ঠে গান ধরলো,
“পরেনা চোখের পলক
কি তোমার বডির ঝলক।
দোহাই লাগে বডিটা তোমার
একটু শার্টে ঢাকো।
আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাবো
বাচাঁতে পারবে না গো।”
এ গান গাওয়ার সময় মৌ অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছিলো।
(আমি নিজেরই চরম হাসি পাচ্ছিলো গানটা লিখার সময়।??।কেউ গানটা খারাপ মাইন্ডে নিবেন না প্লিজ।যাস্ট মজার জন্য বানালাম)
মৌ তো মনে মনে হেসেই যাচ্ছে একে তো আয়ানের মুখের অবস্থা দেখে। আর গানের কথা মনে পরে।
আয়ানের অবস্থা তো নাজেহাল।ঘাম ছুটছে তার।কোনোদিনও কোনো মেয়ের এতোটা কাছে আসেনি সে।তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
মৌ আয়ানের কাছে থেকে চলে গিয়ে একটা শার্ট এনে আয়ানের মুখের উপর মেরে বললো,”তাড়াতাড়ি নিচে আসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
এ বলে মৌ সেখান থেকে চলে আসলো।
“কি ডেন্জারাস মেয়েরে বাবা!!!এতো সাহস এর!!! আমার এতো কাছে আসলো সে,আমার ই ঘাম ছুটে গেলো।আর এ মেয়ের তো ভাবভঙ্গির কোনো পরিবর্তন ই দেখলাম না।”এ বলে আয়ান রেডি হয়ে নিলো।
আর মৌ তো নিচে এসে হাপাচ্ছে।হাত পা প্রচ্ন্ড কাঁপছে তার।
“আজিব।আমি এতো সাহস পেলাম কিভাবে!!!আয়ানের কতো কাছে ছিলাম আমি!! তখন বেশি ভয় না লাগলেও এখন এতো ভয় কেনো লাগছে??হার্টবিট এতো বেড়ে যাচ্ছে আল্লাহ!!!”
চলবে…