#ভালোবাসব_যে_তোকে?
পার্ট ৯
লেখিকাঃসারা মেহেক
??
মৌ গিয়ে সেই টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। আয়ান আর মনা কেউই যেনো তাকে এখানে একদমই আশা করেনি।
আয়ানঃ মৌ তুই এখানে কি করিস??আর অহনা তুইও??
মৌ ঃআমাদের এখানে আশা করোনি তাই তো??
আয়ানঃ না এমন কিছুই না।
মনাঃএটা কে বেবি??
মৌ রাগি চোখে মনার দিকে তাকিয়ে বললো,
মৌ ঃঐ ঐ কিসের বেবি হ্যা??এ কি কোলে নেওয়া বাচ্চা নাকি হ্যা? আরেকবার এসব বেবি টেবি বললে মাথার যে সব চুল বের করে আছিস তা একটাও আস্ত রাখবো না।
মনাঃ এই মেয়ে কে তুমি হ্যা? আমাকে আমার বিএফ এর সামনে এভাবে ধমকাচ্ছো তোমার সাহস তো কম না।আয়ান তুমি কিছু বলছো না কেনো??
মৌ ঃ হেউ ইউ, সো কল্ড জিএফ। আমি এই খাটাশের ওয়াইফ। বুঝছিস??
মনাঃহোয়াট!!!আয়ান তুমি বিয়ে করেছো কবে?? আমাকে বললা না তুমি!!আমাকে এতো বড় ধোকা দিলে!!!
মৌ ঃঐ তুই আমার দিকে তাকা… এসব ন্যাকা কান্না আর ঢং করলে তোকে আমি সামনের ঐ পুকুরটায় নিয়ে গিয়ে ফেলবো।
মনাঃতুমি আমাকে “তুই” করে বলছো!!আমি যে তোমার থেকে বড় সেটা তোমার চোখে পরে না??
মৌ ঃ ওহ,বড়। তো মিস সিনিয়র সিটিজেন আপনার একসাথে কয়টা চক্কর চালানো লাগে হুম??
আয়ান আর অহনা সব কিছু নিরব দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে।কিই বা বলবে তারা।মৌ এর এমন রূপ আয়ান তো না ই অহনাও দেখে নি। মৌ যে এভাবে ঝগড়া করবে তা তাদের জানার বাইরে ছিলো।
মনা তো মৌ এর প্রশ্ন শুনে বেশ ভয় পেয়ে যায়।সে আমতা আমতা করে বলে,
মনাঃমমানে??কককি বলছো তুমি??
মৌ ঃওলে ওলে মাসুম বাচ্চারে… ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না।..
আমি বলছি যে একসাথে তোর কয়টা বয়ফ্রেন্ড লাগে???
মনাঃ কককি সব বলছো?? আমার শুধু একটা বয়ফ্রেন্ড ই আছে আর সেটা হলো আয়ান।
মৌ ঃওওওও তাই নাকি। তাহলে কালকে মনে হয় একটা ছেলে ভুতের সাথে হাত ধরে হাটঁছিলি??
মনাঃসেই ছেলে আমার ফ্রেন্ড।
মৌ ঃ ওও ফ্রেন্ড।। কিন্তু এমনভাবে হাত ধরা ছিলো, আমার তো ফ্রেন্ড মনে হলো না।।সত্যি বলবি নাকি দিবো এক চড়।
এতোক্ষন রেস্টুরেন্ট এর সবাই চুপচাপ ছিলো।কিন্তু মৌ এর শেষ কথাটা একটু জোরে হওয়ায় কেউ কেউ একটু বিরক্তও হলো।
এদিকে মনা যেনো মৌ এর কথায় কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।সে আমতা আমতা করে বললো,
মনাঃআআসলে ঐটা আমার বিএফ ই ছিলো।
বলেই মাথা নিচু করে রাখলো।
আয়ান তো মনার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। সে বিশ্বাস করতে পারছে না মনা এমন কিছু করবে।
আয়ানঃ কি বলছো এসব মনা!!তুমি আমাকে এতোদিন ধরে ঠকাচ্ছিলে??
মনাঃআসলে লাস্ট ১ মাস তুমি আমাকে তেমন সময়ই দিতে না। আমি ফেড আপ হয়ে গিয়েছিলাম এসব থেকে। আর এর মধ্যে শাকিল আমাকে প্রপোজ করে তাই আমি একসেপ্টও করে নিই।
আয়ানঃ লাস্ট এক মাস ধরে এসব চলছিলো!!আর আমি আজকে জানলাম!! আমার এই এক মাস অফিসে অনেক কাজ ছিলো বিধায় তোমাকে সময় দিতে পারেনি।তাই বলে তুমি এক সাথে দুদিকেই রিলেশন চালাতে!! বাহ বাহ।
আয়ানের এ কথায় মনা মাথা নিচু করে থাকে।
মৌঃ অহনা তোর ভাইয়ের নামে আমি পরকিয়ার মামলা ঠুকে দিবো।
অহনাঃএমন কোনো মামলা করা যায়!!জানতাম না তো।
মৌ :না করা গেলে আমি নতুন করে তৈরী করতে বলবো।অসহ্যকর সব।তুই চল এখান থেকে।
এ বলেই মৌ অহনার হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্ট এর বাহিরে এসে দাঁড়ায়।
সে ওয়েট করছে আয়ানের জন্য।
এদিকে আয়ান মনাকে কিছু একটা বলে বাইরে এসে দেখে মৌ আর অহনা দাঁড়ীয়ে আছে।
সে গাড়ী পার্কিং এরিয়া থেকে এনে অহনা আর মৌ কে গাড়ীতে বসতে ইশারা করলো।
মৌ রেগে গিয়ে পিছনের সিটে বসলো।অহনাও মৌ এর সাথে বসলো।
বাড়ীতে এসে মৌ কাউকে কিছু না বলে সোজা তার রুমে চলে গেলো। আর অহনা নিজের রুমে।কিছুক্ষণ পর আয়ান এসে তার রুমে গেলো।দাদি আর আয়ানের আম্মু তো শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। তারা বুঝতে পারছে না আসলে হচ্ছেটা কি।কাউকে যে জিজ্ঞাস করবে তারও উপায় নেই।সবাই যে যার রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।
আয়ান রুমে ঢুকে দরজাটা কেবলই বন্ধ করলো অমনি মৌ বসা থেকে উঠে এসে আয়ানের কাছে এসে দাঁড়ালো। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই মৌ তার কলার চেপে ধরে বললো,
“ঐ তোর ক্যারেক্টার এতো ঢিলা কেনো হুম??ঘরে বউ থাকতে আবার জিএফ এর সাথে দেখা করতে যাইস কেনো??
“আরে আমি মনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম একটা কাজে।”
“ঐ লুইচ্চা বেটা….এতো কিসের কাজ হুম?? যে আমার ফোনটুকু ধরার সময় পাইসনি??”
“আমার ফোন সাইলেন্ট এ ছিলো।আর তুই এভাবে তুই তুকারি করে কথা বলছিস কেনো??”
“আমার ইচ্ছা।আমার হাসবেন্ড। আমি যা খুশি তাই করবো যেভাবে কথা বলতে ইচ্ছা করবে সেভাবে করবো।আর এরপর থেকে যদি তুই ঐ মনার সাথে দেখা করিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম। ”
এ বলে মৌ আয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অহনার রুমে এসে নক করলো। অহনা দরজা খুলে দিতেই সে ভিতরে ঢুকে রুমের দরজা আটকিয়ে দিলো।
“আয়ান নক করলে তুই খবরদার দরজা খুলবি না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
অহনা আর কথা বাড়ালো না। কারন সে জানে এখন মৌ কোনো কথাই শুনবে না।
রাতের খাবারের সময় মৌ নিচে গেলো না। অহনা খাবার রুমে এনে দিয়ে গেলো।সবাই মৌ এর এতো বেশি রাগের কারন জানতে চাইলে।তারপর অহনা আজকের সব ঘটনা বললো। আয়ানের আব্বু,আম্মু আর দাদি তো আয়ানের উপর খুব রেগে আছে।আয়ানের আম্মু তো তাকে বেশ কথা শুনিয়েছে।
এভাবে এক দিন চলে গেলো।পুরো একটা দিন মৌ আয়ানের সামনে যায়নি। আয়ান অবশ্য অনেকবার ট্রাই করেছিলো মৌ এর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু মৌ নাছোড়বান্দা। সে কথা বলবে না মানে বলবেই না।
রাতের বেলা,
সবাই যে যার রুমে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিচ্ছে। মৌ অহনার রুমে শুয়ে আছে।এভাবে তার আর ভালো লাগছে না।বেশিরভাগ সময়ই রুমে থাকতে হয় কারন আয়ানের আজকাল অফিসে কাজ কম থাকায় বাসায়ই থাকে সে।
মৌ ভাবলো তার রুমের থেকে একটা বই এনে পড়বে।কিন্তু সমস্যা হলো আয়ান তো এখন রুমে।সে যাবে কিভাবে রুমে??এদিকে মনটা পরে রয়েছে বই এর উপর।অহনাও ঘুমিয়ে পরেছে।ও জেগে থাকলে মৌ কে এতো ভাবতে হতো না। অহনাকেই পাঠিয়ে দিতো রুমে বই আনার জন্য।কিন্তু এখন কি করবে সে???
কিছুক্ষণ ভাবার পর সে রুমের দিকে বাড়ালো। আয়ান রুমে থাকলে বই আনবেনা।আর না থাকলে তো ভালোই। কাজ হয়ে গেলো।
মৌ অহনার রুম থেকে বের হয়ে দেখলো আয়ান ড্রইং রুমে বসে ফোন টিপছে।
“যাক ভালোই হলো নিচে বসে আছে জনাব।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বইটা নিয়ে আসি।”
মৌ তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে বই নিয়ে বের হতে যাবে তার আগেই আয়ান রুমে এসে দরজা আটকে দিলো।
এদেখে মৌ এর যেন কলিজা শুকিয়ে এলো। যার সাথে কথা বলবে না ভেবে রুম থেকে বের ই হয়নি সে নিজেই তার সামনে হাজির।
“যাক বাবা,পাখি নিজেই খাঁচায় বন্ধি হলো। আমার কিছুই করা লাগলো না।”
এ বলেই আয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে মৌ এর দিকে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে।
মৌ এর তো তা দেখে রীতিমত হাত পা কাঁপছে ভয়ে।
সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“দেখো,আমি এখানে শুধু বই নিতে এসেছি।আমি এখনি চলে যাবো।”
“উহু তা তো যেতে দেওয়া যাবে না।পুরো একটা দিন তুি আমার সামনে আছিস নি।আমি তোকে কালকের আসল ঘটনা বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তুই তো শুনলিই না।”
“আমি তোমার কোনো কথা শুনতে পারবো না।”
এ বলেই মৌ দরজার দিকে পা বাড়ালো।কিন্তু তার আগেই আয়ান মৌ কে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো।
মৌ এর তো অবস্থা খারাপ।
“কি ব্যাপার তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো?? অন্যসময় তো নিজেই আমার কাছে আাছিস।তখন তো কিছুই হয় না।”
মৌ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমি স্বেচ্চায় আসলে কিছু মনে হয়না। আমাকে প্লিজ যেতে দাও। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
“ব্যাপার না। এখন ভালো লাগবে।”
“মানে?”
আয়ান হঠাৎ করে মৌ এর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দেয়।মৌ তো রীতিমত শকড আয়ানের এমন কাজে। তার চোখ দুটো বড় হয়ে গিয়েছে।সে ভাবেও নি আয়ান এমন কিছু করবে।
৫মিনিট পর আয়ান মৌ কে ছেড়ে দিলো। দুজনে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।মৌ এর তো দম পুরো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।সে ভালোভাবে শ্বাসই নিতে পারছিলো না।
মৌ তো রেগে আয়ানকে বলে,
“ছিঃ এসব কি করলা তুমি!!”
“ওমা। এতে ছিঃ এর কি আছে। আমি তোর স্বামি। সো এটা স্বাভাবিক ই।আর কি করলাম, এটা আরেকবার করে দেখাবো??”
মৌ এ কথা শুনে তার হাত দিয়ে ঠোট ঢেকে রাখলো।আয়ানের তো এ দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। সে মুচকি হেসে বললো,
“আরে টেনশন নিস না।এখন আপাতত এমন কিছু করবো না। সময় হলে সব আদায় করে নিবো।এখন একটু বস।কিছু কথা আছে।”
“নাহ আমি কিছু শুনবো না। আমার শুনার ইচ্ছা নেই।”
“বসে কথা শুনবি নাকি আরেক ডোজ দিবো??”
মৌ এর এখন খুব লজ্জা লাগছে আয়ানের সামনে থাকতে। তাই সে যেতে চাচ্ছিলো। কিন্তু এখন আর কোনো পথ খোলা নেই তার সামনে। তাই সে বাধ্য মেয়ের মতো আয়ানের কথা শুনে তার পাশে বসলো।
চলবে…