#ভালোবাসাটা_যেনো_বেরঙ্গিন
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
দীর্ঘ তিনটি বছর ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পর। হাজারটা বাধা অতিক্রম করে নিজের ভালোবাসার মান রাখতে গিয়ে, নিজের পরিবারকে ছেড়ে দিয়ে যেই মানুষটিকে বিয়ে করলাম। সেই মানুষটি আজ হঠাৎ করেই বদলে গেলো। নিজের বাবা মায়ের কথা মতো আমায় ছেড়ে দিতেও দুবার ভাবার প্রয়োজন বোধ করলো না আমার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটি। আমার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটির নাম অর্ণব। আর আমার নাম হলো নবনী। অর্ণবের সাথেই আজ আমি কোর্টে এসেছি। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য। অর্ণব গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে শান্ত কন্ঠে বলল
— আমরা তো চলে এসেছি। এবার গাড়ি থেকে নেমে আমার সাথে চলো।
— হুম, নামছি। আজ পথটা মনে হচ্ছে কেনো জানি খুব ছোট। তোমার পাশে বসার সাথে সাথেই যেনো গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।
— পথ ঠিক আছে। তুমি হয়তো কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা করছো। তাই তোমার কাছে পথটা ছোট মনে হচ্ছে।
— হুম হয়তো! আচ্ছা আমার মতোই কি তোমার মনের মধ্যে ও ঠিক একটাই ভাবনা কাজ করছে? নাকি তুমিও মন থেকে চাইছো আমার থেকে মুক্তি?
— এই সব কথা থাক না। কোর্টে এসেছি তো আর মজা করার জন্য নয়। মুক্তির প্রয়োজন বলেই এসেছি।
— ওহহ! হ্যাঁ, সেটাই তো। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। সরি।
— এখন এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকলে কোর্টের টাইম ওভারে হয়ে যাবে। দ্রুত চলো কাজটা শেষ করতে হবে তো।
— হুম।
নবনী মাথাটা নিচু করে মলিন কন্ঠে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে অর্ণবের সাথে চলতে লাগলো। বুকের মাঝে নবনীর তীব্র ব্যাথা করছে। ভালোবাসার প্রিয়জন তার থেকে চিরতরে অনেক দূরে চলে যাবে। কথাটা ভাবতেই নবনীর কলিজাটা দুমরে মুচড়ে উঠল। নবনী অর্ণবের সাথে তো ঠিক হাঁটছে। তবে নবনীর পা যেনো চলছে না। কোনো এক বাধা যেনো এসে নবনীর পা জোড়াকে আটকে ধরছে বারংবার। একটুও ইচ্ছে করছে না নিজের অধিকারটা ছেড়ে দিতে। গতকাল সারা রাত নবনী কান্না করেছে। রাতে এক মিনিটের জন্য ও ঘুমাতে পারেনি সে। কি করেই বা ঘুমাবে! বুকের মাঝে শান্তি না থাকলে কেউ কি ঘুমাতে পারে? নবনী তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে অর্ণবের মন পড়ার চেষ্টা করছে। আপন মনে ভাবছে নবনী “অর্ণবের কি তার জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছে না! তার কি বুকের ভিতর অসহ্যকর দহন হচ্ছে না? সে কি করে পারছে নিজের ভালোবাসাকে এমন করে ছেড়ে দিতে! ভালোবাসা কি তবে তার মনকে কখনও রাঙায়নি”! কথা গুলো অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ভাবছে নবনী। ভাবতে ভাবতে কখন যে নবনী ডিভোর্স লয়ারের চেম্বারের সামনে চলে এলো! সঠিক বলতে পারবে না সে। অর্ণব উকিলের চেম্বারের সামনে এসে নবনীকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— তুমি ভিতরে গিয়ে বসো। আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি। ( অর্ণব)
অর্ণব কথাটা বলতেই নবনীর পাশ থেকে সরে যেতে নিতেই নবনী অর্ণবের হাত ধরে ফেলল। নবনী অর্ণবের হাত ধরে ফেলতেই অর্ণব নবনীর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো। নবনী অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমি একা এখানে বসবো! আমার ভয় করছে। তুমি আমার সাথে থাকো না প্লিজ!
নবনীর কথাটা শুনে অর্ণব একটা বাকা হাসি দিলো। নবনী অর্ণবের ঠোঁটের কোনে এই রহস্যময় হাসি টা দেখে কিছুই বুঝতে পারলো না। অর্ণব নবনীকে উদ্দেশ্য করে তাচলছিল্যকর কন্ঠে বলে উঠল
— যেখানে বাকি জীবনটা একা কাটাতে হবে। সেখানে এক মিনিট থাকতে ভয় পেলে কেমন করে চলবে বলো!
— হুম সেটা আমি জানি কিন্তু আমি তোমায় ছাড়া এখানে বসতে পারবো না। তুমিও আমার সাথেই বসো। এই শেষ অনুরোধটা রাখো আমার।
নবনীর কথার বিপরীতে অর্ণব কোনো কথা বলল না। নবনী অর্ণবের হাত ধরে আছে। অর্ণব নবনীর হাতটার দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে নবনীকে নিয়ে চেম্বারে প্রবেশ করলো। চেম্বারে এসে দুজন উকিলের সামনে বসতেই উকিল ভারী কন্ঠে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— মিস্টার অর্ণব চৌধুরী। ডিভোর্স আবেদন করেছিলেন আপনি তাই তো!
— জ্বি।
— আপনাদের সমস্যা বুঝি না। বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার সময় আপনাদের মনে হয় সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারবেন। অথচ মাস দুয়েক যেতে না যেতে সম্পর্কে মাঝে তিক্ততা চলে আসে। আর শেষ পরিনতি ডিভোর্স। ডিভোর্স দেয়াটা যেনো একটা ফ্যাসেন হয়ে গেছে এই জেনারেশনের।
উকিলের কথায় অর্ণব কোনো প্রতি উত্তর করলো না। মাথাটা নিচু করে আছে অর্ণব। নবনী উকিলের দিক থেকে নিজের মুখ অন্যদিকে আড়াল করে নিয়ে নিরবে নিজের ভিতরে ভিতরে কাঁদছে। চোখের জল অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে তার। উকিল অর্ণবের দিকে একটা কাগজ আর পেন এগিয়ে দিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই নিশ এখানটায় সাইন করুন। আর ছয় মাস পরে আসুন। দেখেন যদি আপনাদের মন মানসিকতা চেঞ্জ হয়!
— জ্বি।
অর্ণব কাগজটা হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে সাইন করে দিলো। অর্ণব সাইন করতেই কাগজটা নবনীর দিকে এগিয়ে দিলো। নবনী কাগজ হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে আছে। অর্ণব নবনীকে এক ভাবে বসে থাকতে দেখে নবনীর হাতে পেন এগিয়ে দিলো। আর বলল সাইন করে দিতে। নবনী নিজের স্বামীর আদেশ মতো কাগজে সাইন করে দিলো। নবনী অর্ণবের কাজ গুলো দেখে বারংবার অবাক হয়ে যাচ্ছে। কারন অর্ণব এতোটা সহজ আচরন করছে যে মনে হচ্ছে অর্ণবের কাছে এটা কোনো ব্যাপার না। আসলেই তো ব্যাপার না। কারন অর্ণব নিজের ইচ্ছায় মুক্তি পেতে চাইছে। ঐ দিকে নবনীর অর্ণবকে ভালোবেসে নিজের পরিবারের কথা উপেক্ষা করে নিজের বাড়ি ছেড়েছে। অর্ণব ছাড়া তার আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। কাগজে সাইন করার পর অর্ণব নবনীকে নিয়ে গাড়ি করে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। নবনী অর্ণবের পাশের সিটে বসে আছে। জানলা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য গুলো পরখ করে দেখছে। সে। মাথায় শুধু মাত্র একটাই কথা ঘুরছে তার। অর্ণব এতোটা বদলে গেলো কেমন করে? নবনীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার দাম এমন করেই দিলো! একটিবার ভাবলো না সে আমায় ছেড়ে দেয়ার পর আমি কোথায় যাবো? একটা মেয়ে হয়ে এই সমাজে বাঁচা যায়। তবে ডিভোর্সি নারী হয়ে এই সমাজে বেঁচে থাকাটা চাট্টে খানি কথা নয়। বিচ্ছেদ নামক যন্ত্রনাটা অর্ণব তাকে না দিলেও পারতো। অর্ণব আপন মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে। সেও নিরব। কেউ কারোর সাথে একটা কথাও বলছে না। কিছু সময় এমন ভাবে কেটে যাবার পর অর্ণব নবনীকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তুমি কি কিছু খাবে? দুপুর হয়ে এসেছে। হালকা কিছু খেয়ে নিলে ভালো লাগবে। গাড়ি কি সাইডে রাখবো?
— থাক না। আমার ভালো থাকাটা নিয়ে যদি তোমার চিন্তা হতে তবে আজ আমরা এখানে থাকতাম না। আর নাই বা দয়া করলে। চলো বাড়ি যাবো আমি।
— হুম।
অর্ণব নবনীর সাথে তর্ক করলো না। কোনো একটা কারন তো অবশ্যই আছে। যেই কারনটা তাদের মনের সম্পর্কে তিক্ততা নিয়ে এসেছে। অর্ণব নবনীর বাড়ি চলে আসতেই এক সাথে বাড়িতে প্রবেশ করলো। নবনী আর অর্ণবকে এক সাথে বাড়িতে আসতে দেখে অর্ণবের মা অর্ণব আর নবনীকে এক সাথে দেখে চমকে উঠলেন। তার চেহারার রং উবে গেলো। উনি হয়তো এটা চাননি। অর্ণবের মা অর্ণবের দিকে এগিয়ে এসে খানেকটা বিরক্তি মাখা কন্ঠে যা বলল তা শুনে নবনীর মাথাটা ঘুরে গেলো। নবনী অর্ণবের দিকে অবাক চোখে তাকালো। অর্ণবের মা অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে………….
#চলবে………………….