ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব-০৫

0
206

#ভালোবাসাটা_যেনো_বেরঙ্গিন
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অর্ণব নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল

— রাস্তার মেয়ে, তোমার অপছন্দের একটা মানুষ। যাকে আমি কয়েক দিন পর ডিভোর্স দিতে চলেছি। সেই মেয়েটা তোমার মিথ্যেকে সত্যি বলে আমায় বোঝাচ্ছে।

— মানে? কি বলতে চাইছিস তুই? তোর মা মিথ্যে বলছে? আমি তোর কাছে মিথ্যাবাদী হয়ে গেলাম?

— স্টপ ইট মা প্লিজ! চিৎকার করলেই তোমার মিথ্যাটা সত্যি হয়ে যাবে না। প্লিজ চিৎকার করো না। আমায় একটা কথা বলতে পারো মা! কেনো তুমি এমন করছো? ঐ মেয়েটা তোমায় নিজের মায়ের আসনে বসিয়েছে। আর তুমি কেনো পারছো না ঐ মেয়েটাকে নিজের মেয়ে মনে করতে? কেনো পারছো না?

অর্ণবের কথার বিপরীতে তার মা নিশ্চুপ হয়ে আছে। অপছন্দের জিনিস গুলোকে কখনও পছন্দ করা যায় না। অপছন্দের মানুষ গুলো ভালো কাজ ও আমাদের খারাপ লাগে। এটাই স্বাভাবিক। অর্ণব নিজের মাকে নিশ্চুপ দেখে তাচলছিল্যকর একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— আমি জানি মা আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর তোমার কাছে নেই। থাকার কথা ও নয়। কারন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে নবনী কখনও তোমার মেয়ে হয়ে উঠতে পারবে না। এবার ও যত প্রচেষ্টাই করুক না কেনো।

— তুই আজ একটা বাহিরের মেয়ের সামনে আমায় অপমান করে কথা বলছিস? নিজের মাকে ছোট করে কথা বলতে তোর একটুও বাঁধছে না?

— হাহাহাহা, তুমিও মা হাসাতে পারো খুব। যাকে বাহিরের মেয়ে বলছো সে আমার ভালোবাসার মানুষ। সে আমার স্ত্রী। আর বাহিরের মেয়ের সামনে তোমায় কিছু বলার কোনো ইচ্ছে ও আমার ছিলো না। আমি তোমার আচরণ দেখে বাধ্য হয়েছি বলতে।

অর্ণবের কথাটা শেষ হবার সাথে সাথে নবনী অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো

— দেখো আমি তো আর কয়েক দিন পর চলেই যাবো। আমার জন্য অযথা ঝামেলা করো না প্লিজ। মায়ের থেকে ক্ষমা চেয়ে নাও।

নবনীর কথাটা কানে আসতেই অর্ণব চরণ বিরক্ত হয়ে গেলো। নবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে অর্ণব শক্ত গলায় বলতে লাগলো

— তোমায় কথা বলতে কে বলেছে? আর হ্যাঁ এই বাড়িতে রান্না হোক, না হোক। সেটা তোমার দেখার বিষয় না। আজকের পর থেকে নিজের রুম থেকে এক পা বাহিরে তুমি রাখবে না। কেউ যদি মরেও যায় তবুও না। মাইন্ড ইট।

অর্ণব কথাটা বলতেই হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নবনী অর্ণবের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নবনী যদি রুম থেকে না বের হয় তবে সকলের খাবার কে রান্না করবে? তাছাড়া যতদিন নবনী আছে ততদিন তো একটু হলেও সংসারের কাজ তাকে করতেই হবে! অর্ণব চলে যেতেই অর্ণবের মা মুখ ঝামটা দিয়ে নবনীর সামনে থেকে চলে যায়। নবনী আর কি করবে? নিজের স্বামীর আদেশ তো সে অমান্য করার পাত্রী না। নবনী ও নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে নিজের ব্যাক্তিগত ডায়রীর পাতা খুলে প্রথম পাতা থেকে পড়তে শুরু করলো সে। অর্ণবের সাথে ভালো সময়, খারাপ সময় সব কিছু লিখা আছে এতে। অতীতের পাতার চোখ বুলিয়ে নিতে লাগলো নবনী। অর্ণব অফিসে এসে নিজের কেবিনে বসলো। মাথাটা এখনো হয়তো ঠান্ডা হয়নি তার। অর্ণব ভেবে পায় না এতোটা অবহেলা কেনো সহ্য করছে নবনী? মুখ ফুটে একটু ও কি সে প্রতিবাদ করতে পারে না? নিজের মায়ের কথা মনে পড়তেই অর্ণবের রাগ হলো। “মেয়েটা সকাল সকাল উঠে সকলের জন্য রান্না করে। সকলের কথা ভাবে এটাই তার অপরাধ! আজ থেকে আর কিছু করবে না। দেখি নবনী ছাড়া আর কে সবটা করে”। অর্ণব আপন মনে কথাটা বলল। অর্ণব কথা গুলো নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কাজে মন দিলো। কিছু সময় কাজ পরার পর হঠাৎ করে অর্ণবের কেবিনে একটা মেয়ে এসে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আসতে পারি স্যার!

অর্ণব মেয়েটার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখলো এই মেয়েটা তো এই অফিসের নয়! অর্ণব মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— জ্বি আসুন। কে আপনি? আর কাকে চাই?

— জ্বি আমি ঐশী। আপনাকে চাই।

— ওহহ আচ্ছা। বলুন কি সাহায্য করতে পারি?

— আমি আপনার সাথে কিছু প্রাইভেট কথা বলতে এসেছি। আপনার কি সময় হবে আমার সাথে আলাদা একটু কথা বলার!

— দেখুন এটা আমার অফিস টাইম। এই সময়ে আমি আলাদা কারোর সাথে কথা বলি না। আপনার কি কথা আছে সেটা এখানে বললেই ভালো হবে।

— সরি। আমার কথা বলার থেকেও ইমপ্রটেন্ট কিছু আপনাকে দেখাতে চাই। যেটা দেখা আপনার জন্য অতীব জরুরি।

— সরি আমার এতো জরুরী কিছু নেই যেটা দেখতে হবে।

— আপনার স্ত্রী গোপনে আপনার চোখের আড়ালে কি কি করেছে সেটা দেখার ইচ্ছা নেই আপনার!

মেয়েটার কথাটা শুনতেই অর্ণব অবাক হয়ে গেলো! এই মেয়েটা হঠাৎ করে এসে নবনীর সম্পর্কে কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছে! অর্ণব কিছুই বুঝতে পারছে না। অর্ণব মেয়েটার কথা শুনে চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল

— এই আপনার মাথা ঠিক আছে? আমার স্ত্রী সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। তাকে আমি ভালো করে জানি সে আমার গোপনে কি কি করতে পারে। আপনি দয়া করে এখন আমার কেবিন থেকে বেরিয়ে যান।

— জ্বি স্যার আমি তো বেরিয়ে যাবো তবে একটা কথা বলতে চাই। নারীদের বিশ্বাস করবেন। তবে অন্ধের মতো নয়। কারন নারী সুযোগ পেলেই পাল্টি খাবে। আপনার যখন সত্যি জানার ইচ্ছা নাই। তবে আর কি! বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের নিচতলায় আধ ঘন্টা পর। ইচ্ছে হলে চলে আসিয়েন।

মেয়েটা কথাটা বলতেই অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিলো। অর্ণব মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অর্ণবের সামনে দিয়ে চলে যাবার পর অর্ণব আর ঠাই বসে থাকতে পারলো না। নবনী তাকে ঠকাবে এমনটা হতেই পারে না। তবে নবনীর উপর সন্দেহটা তার পূর্বের। অর্ণব বুঝতে পারছে না এখন কি তার এই অচেনা মেয়ের কথা মতো বসুন্ধরায় যাওয়ার ঠিক হবে কি না? তাছাড়া এই মেয়েই বা নবনীর সম্পর্কে জানলো কেমন করে? অর্ণব আপন মনে ছাই পাস চিন্তা করতে লাগলো। কি করবে সেটা তার মাথায় আসছে না। অর্ণব ভাবতে ভাবতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নির্দিষ্ট সময় হয়ে গেছে। একবার দেখে আসলে কোনো পাপ হবে না। তাছাড়া এই মেয়ের কথা মতো যদি অর্ণব না যায় তবে সারা দিন এই কথাটা তার মাথায় ঘুরতে থাকবে! অর্ণব অফিস থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। বসুন্ধরা যেতে অর্ণবের বেশি সময় লাগবে না। কারন অর্ণবের অফিস থেকে বসুন্ধরা বেশি দূর নয়। অর্ণব গাড়ি দ্রুত ড্রাইভ করে ছুটে যায় বসুন্ধরা। বসুন্ধরা এসে অর্ণব নিজের গাড়ি খানেকটা দূরে পার্ক করে শপিং মলে প্রবেশ করলো। আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়ের পর ও অর্ণব কিছুই দেখতে পেলো না। ঘড়ির দিকে তাকি এ দেখে নেয় অর্ণব যে ঐ মেয়েটার বলা সময় তো হয়ে গেছে। তবে কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না! অর্ণব আরো কিছু সময় এদিক ওদিক তাকাতেই আচমকা অর্ণবের কাঁধের উপর কেউ এসে হাত রাখলো। অর্ণব এই হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠল। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো সেই মেয়েটা। অর্ণব মেয়েটিকে কিছু বলার আগেই মেয়েটি অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ঐ দিকে দেখুন স্যার। দেখুন তো মেয়েটাকে চিনতে পারছেন কি না!

অর্ণব মেয়েটির ইশারা অনুযায়ী সামনে দিকে তাকাতেই ভিশন চমকে উঠল। এসব কি দেখছে সে? নিজের চোখকেও যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না অর্ণব। অর্ণব নিজের চোখের সামনে দেখতে পেলো……………

#চলবে…………………..