#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২২)
‘ এভাবে কই থেকে দৌড়ে এলে? লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিয়েছো? স্টুপিড! ‘
লাবিবা বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো। ছলছল নয়নে তাকিয়েই রইলো । তানভীর পেছন ফিরলো। খইরুল মামা আর সে একসাথে ই নামাজ আদায় করে বেরিয়েছিলো। মামা এখন কলেজ পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। লাবিবার কর্ম দেখেই সাইড পাস করতে বাধ্য হয়েছে। তানভীর লাবিবার হাত ধরে।
‘ এসো। ‘
পেছন গেট দিয়ে খালি রুম দেখে ভেতরে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দেয়। লাবিবার হাত ছেড়ে দিয়ে একটু খানি দু হাত বাড়িয়ে দেয়।
‘ নাও এবার জড়িয়ে ধরো। ‘
লাবিবা থায় দাঁড়িয়ে থাকে। না বকতে রিকুয়েস্ট করার পরও যখন ঝাড়ি দিলো তখন আর এগুনো পসিবল না। তানভীর লাবিবার জড়তা বুঝতে পারে।
‘ এসো। এখন আর বকবো না। ‘
লাবিবা মাথা নিচু করে আরেকটু। আর নড়াচড়া নেই। তানভীর নিজে থেকেই এগিয়ে আসে। সেই প্রথম দিনের মতো লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে তুলে ধরে। নিজ পায়ের উপর লাবিবার পা রেখে ব্যালেন্স রাখে। লাবিবা দু চোখ বন্ধ করে নেয়। ধীরে ধীরে গাঢ় হয় হাতের বন্ধন। তানভীর মিনিট দুয়েক সেভাবেই লাবিবাকে জড়িয়ে রাখে। কপালে ঠোঁট চেপে সময় নিয়ে গাঢ় চুমু খায়। একহাতে জড়িয়ে আরেক হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে? হুম? ঘামছো কেনো?’
‘ কিছু না। ‘
সময়ের পাল্লা দিয়ে গড়ায় আরো কিছুক্ষণ। লাবিবার চোখ দুটো বন্ধ। তানভীরের দৃষ্টি আধখোলা জানালা দিয়ে বাহির বরাবর। কেউই যেনো ছাড়তে চায়না। নিরবতা টুকু লাবিবাই ভাঙে। বিরবির করে।
‘ স্যার?’
‘ হুম?’
‘ আপনি আমার। ‘
‘ আমি সাবিনার মার। ‘
চট করে মাথা তুলে তাকায় লাবিবা। চোখে মুখে আতঙ্ক। ‘ কার?’
‘ সাবিনার মার। ‘
‘ না আপনি আমার। তিনবার কবুল বলে আমাকে বিয়ে করেছেন মনে নেই আপনার?’
‘ তবুও আমি সোহানার মার। ‘
‘ না আপনি আমার। ‘
‘ তাহলে আমি ফিরোজের মার। ‘
শ্বশুরের নাম কানে যেতেই টনক নড়ে লাবিবার। এতোক্ষণ কি কথা ধরে জেদ করছিলো বুঝতে পেরে হটাৎ লজ্জায় সিটিয়ে যায়। দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলতেই তানভীর হো হো করে হেসে উঠে। লজ্জানত আবৃত মুখটা টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ আমি আমার শ্বাশুড়ীর লাবি মার। ‘
খান বাড়িতে আড্ডা বসেছে। সোহানা ইসলামের বাপের বাড়ী থেকে সবাই এসেছে। লবিবার ফ্যামিলিকেও দাওয়াত করা হয়েছে। কুটুম বাড়িতে প্রথম দাওয়াত। না গেলে খারাপ দেখা যায়। সবাই এসেছে। শুধু আসেনি লাবিবা। তাকে নিয়ে আসা হয়নি। বাড়ির বউ যেদিন তুলে আনবে সেদিন ই শ্বশুরবাড়িতে পা রাখতে পারবে। ছোট ছোট কাজিন রা যখন সেজেগুজে দৌড়াদৌড়ি করেছে কখন বেরোবে সেই ফুর্তিতে তখন লাবিবার চোখ দুটো ছলছল করেছে। একেতো কোথাও নিয়ে যায়না। ফ্যামিলির সাথে তাও এদিক সেদিক জেদ ধরে যেতে পারে। আর আজ পুরো গোষ্টী সোদ্দা যাচ্ছে আর লাবিবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। জেদ ধরেও কাজ হবেনা। এমনিতেই মনটা খারাপ আবার ইসমাইলের মুখোমুখি হতেই মেজাজ টাও খারাপ হয়ে যায়। সব দোষ এই লোকটার। মেয়ে বেশী হয়েছিলো তাই দুই পাহাড়ের মাঝে ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঝুলছে তো ঝুলছেই কোন মাটিতেই পা আটকাতে পারছেনা। তার উপর একমাত্র জামাইটাকে কিভাবে বশ করবে সেই চিন্তা ! চিন্তায় চিন্তায় চুল সব উঠে গেলো। কোন কিছুতেই শান্তি পায়না। কি লাভ হলো তার বিয়েটা দিয়ে? সেইতো নিজের ঘরেই পালতে হচ্ছে। লাবিবা বকবক করতে করতে বেডরুমে গিয়ে দরজা দিলো। বই বের করে জোর করে পড়তে লাগলো। একদিন সেও বড় হবে। তারপর পুরো গোষ্টীর দায়িত্ব নিবে। তখন ডেকে ডেকে বলবে, ‘ আমি তোমাদের কাছে বেশী হলেও তোমরা কোনদিন আমার কাছে বেশী হবেনা। ‘ তখন তাদের মুখটা দেখার মতো হবে। লাবিবা পারলো না দরজা দিয়ে বেশিক্ষন থাকতে। উড়ু উড়ু মন নিয়ে চলে এলো ছাদে। কর্ণারে দাড়িয়ে দেখতে লাগলো তার বাপ চাচার গোষ্টী কি করে ! দুইটা হাইচ নেওয়া হয়েছে। এলাকার গণ্যমান্য লোক ও কিছু জন যাচ্ছে। লাবিবা গাড়ির পেছন দিকে তাকালো। ছোট কাকা ঝুড়ি ভর্তি ফল তুলছে গাড়িতে। মেজো কাকী মেজো কাকাকে গলা ফাটিয়ে ডাকছে, ‘ এই বোয়াল মাছ গুলো কোন গাড়িতে রাখবে?’ এলাহি কাণ্ড শুরু হয়েছে। লাবিবা দোলনায় বসে চুপচাপ দোল খেতে লাগলো। নীচে ওকে ডাকা হলেও গেলো না। অগত্যা বাড়ির চাবি গুলো এসে তাকে ছাদেই দিয়ে যেতে হলো।
খান বাড়িতে আপ্যায়নের ত্রুটি রাখছে না কেউ। ফিরোজ খান আজ দুপুর বেলায় বাড়িতে। নতুন আত্বীয়দের নিজে দাঁড়িয়ে খাওয়া দাওয়ার তদারকি করছে। তানভীর ছিলোনা বাড়িতে। এসেই ড্রয়িংরুমে সবাইকে দেখে মামার পাশে এসে বসে। সঙ্গ দেয় তাদের সাথে।ছোট ছোট শালা শালীকে হাজার টাকার নোট বের করে দেয় চকলেট খাওয়ার জন্য। মামী জানতে চায়,
‘ আমাদের বউমা কেমন তানভীর? ঠিকঠাক যোগাযোগ রাখছো তো?’
লাবিবার আলাপ উঠতেই তানভীর আড়চোখে মামার দিক তাকায়। খইরুল ইসলামের ঠোঁটে চাপা হাসি। তানভীর কি বলবে? উত্তর দিতে গিয়ে ‘ মামী ‘ বলে জিহ্বা গুটিয়ে ফেলে। তানভীরের অবস্থা দেখে খইরুল ইসলাম আর নিতু ইসলাম হো হো করে হেঁসে উঠে। ইতিমধ্যে খইরুল ইসলাম তার প্রিয় ভাগিনা আর ভাগিনা বউয়ের কান্ড সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেছে। সেই রেশ ধরতেই মামী প্রশ্নটা করে। একটু যদি লজ্জা দেওয়া যায় এবার তানভীর কে। তানভীর মাথা নাড়িয়ে ফিরোজ খানের চোখে চোখ রেখেই হেসে ফেলে। ফিরোজ খান ডেকে উঠে সোহানা ইসলাম কে। লজ্জাহীন তানভীর ও যেনো লজ্জা কি জিনিস তা একটু ফিল করে। মামী আবার জিজ্ঞেস করতেই রয়ে সয়ে মাথা নিচু করে উত্তর করে,
‘ এইতো মামী আল্লাহ তাআলা আমার জীবনে দিলো। ভালোই। আলহামদুলিল্লাহ। ‘
ফিরোজ খানের গর্বে বুক ফুলে উঠে। সোহানাকে পাশে বসিয়ে বলে,
‘ বুঝলে সোহানা! ছেলেরা যে আমার মান রাখবেনা সে আমার আগেই জানা ছিলো। ভাগ্য করে এইতো আল্লাহ তায়ালা আমার জীবনে দিলো এমন পুত্রবধূ। ভালোই আলহামদুলিল্লাহ। ‘
তানভীর মৃদু স্বরে রাগ দেখিয়ে বলে,’ পাপা!’
আর এক মুহূর্ত সেখানে নয়। এতো দিন যা পারেনি আজ বিয়ে করাতে তারা সেটাই পারছে। ভুল কথা। বিয়ে করার পরেও পারেনি। লাবিবার পাগলামিতে সম্ভব হয়েছে। মেয়েটা ভাঙ্গিয়ে দিলো তানভীর কে একেবারে।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটার ঘরে। এখনো ফেরার নাম নেই কারো। সাবিনা ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ডিনার সেরে তারপর আসবে। পুরো বাড়িতে লাবিবা একা খারাপ লাগছে। গেট লক করে লাবিবা চাদর গায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। পিচঢালা রাস্তায় পা চালিয়ে নিস্তব্দ রাতের গুণগুণ আওয়াজ ছড়ায় কোমল কন্ঠে। এক মনে গান গাইতে থাকে। এমন আজ প্রথম নয়। প্রায়ই লাবিবা বেরিয়ে পড়ে রাতের বেলায় সবার আড়ালে। ছাদ থেকে নামার উল্টো দিকে একটা মই লাগানো আছে। সেটাই লাবিবার কাজটা করে দেয়। কখন বেরোয় কখন ঢুকে কেউ জানেনা। সাথে ফোনটা শুধু এনেছে। এটাও আনতো না। সময় দেখার জন্য ই এনেছে। লাবিবা ইচ্ছে করেই আজ উত্তরের রাস্তায় বাঁক নিলো। এদিক দিয়ে এক কিলো গেলেই নদী। পানি কম বালু চর বেশী। নদীর উপর বাঁশ কাঠে তৈরী ব্রিজ। দুটো টোটো একসাথে যেতে পারে। সন্ধ্যার পর এদিকটায় লোকাল মানুষ জন ব্যতীত কারো আনাগুনা নেই। তবে লাবিবার পদচারণ ঠিক ই পরে।যে জায়গায় সবাই বাধ্য সেখানেই লাবিবা খেয়াল খুশি মতো অবাধ্য। হাঁটতে হাঁটতে লাবিবা সেই ব্রিজের দেখা পায়। এক হাত সমান বিদ্যুৎ এর লাইটগুলোর আলো পড়েছে নদীর পানির গায়। একপাশে ব্রিজ আরেকপাশে আলোর প্রতিবিম্ব সচ্ছ টলমল করছে জল। কী সুন্দর! লাবিবা ব্রিজের মাঝ বরাবর গিয়ে দাঁড়ায়। বাঁশের উপর হাত রেখে নদীর পানিতে দৃষ্টি ফেলে। জায়গাটা ভীষণ প্রিয়। লাবিবার এরকম বেপারোয়া স্বভাবের জন্য সে নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দেয়। সে যদি এমন না হতো রাতের সৌন্দর্য গুলো মিস করে যেতো না? সময়ের সাথে সাথে রাত গভীর হতে থাকে। লাবিবা ধরে নিয়েছে এগারোটা বারোটার আগে কেউ ফিরবে না। ততোক্ষন তো এখানে থাকা যাবে। কেউ এলে নিশ্চয় ফোন দিবে। তারপর একটা কিছু বলে ঠিকই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে। ফোন এলো এগারোটা নাগাদ। লাবিবা তখনো ব্রিজের উপরে। না। ফোনটা বাসার কেউ দেয়নি। দিয়েছে তানভীর খান। আচ্ছা তানভীর খান কি তার বাসার কেউ না?একটু ভাবে লাবিবা। উত্তর পায়না। বাসার মানুষ সব সময় থাকে। তানভীর খান কি আদৌ থাকবে? লাবিবা ফোন রিসিভ করে। তানভীরের অস্থির কন্ঠ কানে আসে।
‘ কোথায় তুমি? ‘
‘ আছি।’
‘ কোথায় আছো?’
‘ ব্রক্ষপুত্রে। ‘
ফোন কেটে যায়। লাবিবা উদাস মনে আবার নদীর জলে দৃষ্টিপাত করে। মুহুর্তেই দম বন্ধ হয়ে আসে। লাবিবা জোরে জোরে শ্বাস ফেলে। চেপে ধরে হাতের নিচের বাঁশ। বিরবির করে, ‘ তানভীর খান! ‘
তানভীর খানকে লাবিবার বেশ বোঝা বাকি আছে। বান্ধবীদের সাথে বিষয়টা আলোচনাও করেছে। বান্ধবীরা যে উপায় সাজেস্ট করেছে সেসব ট্রাই করতে লাবিবার আরো মনবল জোগাড় করতে হবে। নিজের সবটুকু দিয়ে হলেও তানভীরের মনে জায়গা করে নিতে হবে। তানভীর কি চায়? সেটাই তো জানে না। সব পুরুষের চাওয়া পাওয়া কে কি তানভীরের উপর বসানো ঠিক হবে? আগে প্রয়োজন সময় কাটানো। সেটা তো লাবিবা যথেষ্ট চেষ্টা করে। কিন্তু ধরতে কেনো পারে না তানভীরের দুর্বলতাকে? নির্ভীকচিত্তে রয় সদা। তার হৃদয়ে কিছুই কি নেই মন্দা? সেটাই তো জানতে চায় লাবিবা।
বলিষ্ঠ দুটো হাত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে লাবিবাকে। এতো বছর এখানে এসেছে কখনো চেনা মানুষের মুখটাও দেখেনি সেখানে আজ এমন ঘটনাতে আচমকা লাবিবা চিৎকার করে উঠে। কিন্তু সেখানে ই থেমে যায়। কারণ চিৎকারে লাবিবাকে পেছন থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে। লাবিবা হাত দুটোর দিকে তাকায়। অতি চেনা হাত দুটো দেখেই লাবিবা স্বস্থি পায়। এই হাত দুটো যদি হাজারটা হাতের মাঝেও রাখা হয় তবুও সে ঠিকই চিনে নিতে পারবে। তানভীরকে কিছু বলার আগেই লাবিবা বলে উঠে ‘ প্লিজ বকবেন না। ‘
তানভীর চোখ মুখ খিচিয়ে মাথা নাড়ায়। এই মেয়েটা কিভাবে বুঝে যায় ভেবে পায়না। নরম সুরে বলে,
‘ আমি নাহয় বকলাম না। কিন্তু তুমি যে এতোদূর একা একা চলে এসেছো এটাতো একদমি ঠিক না। ‘
‘ এখানে আসাটা আমার নতুন না। কিছুই হয় না। ‘
‘ হতে কতক্ষণ? বড় হয়েছো ছেলেমানুষী করো না। ‘
‘ আগে আব্বু কথাটা বলতো আজ আপনিও বললেন।’
‘ সকল গার্ডিয়ানদের একটা দায়িত্ব থাকে। আমার দায়িত্ব তোমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে আগলে রাখা। ‘
‘ সেটার জন্য তো কাউকে বেতনভুক্ত করে দিলেই হতো। বিয়ে দেবার কি প্রয়োজন ছিলো?’
‘ ছিলো না? আমার মতো আর কেউ আগলে রাখতো তোমায়?’
‘ জানিনা। ‘
কিছু সময় ধারাবাহিত হয় নিরবতা। তানভীর লাবিবার পিঠ নিজ বুকে ঠেকায়। হাতের মুঠোয় হাত নিয়ে দেখে প্রচুর ঠান্ডা। অনেকক্ষন থেকেই এখানে আছে বুঝতে পারে।
‘ তোমার হাত এতো ঠান্ডা! উষ্ণতা প্রয়োজন। বাসায় চলো। ‘
‘ আপনি আজ থাকবেন? ‘
‘ তুমি বল। ‘
লাবিবা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত হাসে। এই হাসির মানে তানভীর বুঝে। লাবিবাকে আরেকটু জড়িয়ে ধরে। নাকের উপর ছোট্ট একটা চুমু দেয়।
‘ আর্জি পেশ করা হোক। ‘
তানভীরের আস্কারায় লাবিবা দুষ্টু হাসে। মুখ বাড়িয়ে বলে,
‘ আমি তোমার সাথে এই রাত কাটাতে চাই
মধ্যরাতের গা হিম করা ঠান্ডায় জমতে চাই।
আলিঙ্গনে মন আকাশে ভাসতে চাই।
অপেক্ষা করুক ভোরের আলো।
সেই আলোতে তুমি আমি সকল আঁধার কাটাবো। ‘
‘ মনে তবে এই ছিলো?’
‘ আমি বহুবার এসেছি নদীর উপর সূর্যোদয় দেখার জন্য।
সুযোগ হয়নি সঙ্গীর জন্য।
আজ আমার সঙ্গী আমার সাথে।
তাই দেখাটা করেই যেতে চাই ভোরের সূর্যের সাথে। ‘
সায় পেয়েই লাবিবা ঘুরে তানভীরের গলা জড়িয়ে ধরলো। গভীর রাতে একে অন্যের আলিঙ্গনে শুধু শ্বাস প্রস্বাসের শব্দ। তানভীর কি ভুলটা করেছে এখন বুঝতে পেরেছে। বউয়ের ইচ্ছা পূরণে এখন বেশ ঠান্ডা লাগছে। পিঠের দিকে বরফের মতো হয়ে গেছে। বুকের উপর বউ উষ্ণতা ছড়াচ্ছে। তানভীর জ্যাকেটের চেইন খুলে লাবিবাকে ঢুকিয়ে নিয়েছে। একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে, ‘ তোমার কি ঠান্ডা লাগছে? ‘
লাবিবা হাসে। গলা আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে। তার বেশ ভালো লাগছে। ঠান্ডা একটুও লাগছে না। তানভীর তাকে দু পায়ের ভাজে নিয়ে পুরো চাদর দিয়ে ঢেকে নিয়েছে। রাত্রি শেষ প্রহরে তানভীর বলে,
‘ আরো অনেক সময় আছে। চলো এখন যাই বাসায়। ‘
‘ আর একটু। ধৈর্য্য ভাঙবেননা। ‘
‘ এগুলো কি ধরনের পাগলামি লাবিবা?’
‘ আমি যে পাগলী আপনি জানেন না?’
‘ এসবের মানে কি?’
‘ সহজ! আপনি আজ কোথাও যাচ্ছেন না। ‘
‘ লাবিবা!’
‘ একটু চুপ করুন না! শুক্রবার তো। আজ আপনি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না। ‘
তানভীর লাবিবাকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু লাবিবা তো ছাড়বে না। আরো চেপে গিয়ে মুখ ঢুবায় তানভীরের গলায়। তানভীর হুসিয়ার করে,
‘ লাবিবা! মুখ সরাও। আমি কিন্তু মোটেও পজিটিভ ফিল পাচ্ছি না। প্লিজ! নিজের সর্বনাশ ঢেকে এনো না।’
‘ সর্বনাশ কাকে বলে স্যার? আমিতো সর্বনাশ চিনি না। ‘
তানভীর শক্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে মুখ করে নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। লাবিবার উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। একেতো সারাটা রাত লেপ্টে ছিলো কোন মতে নিজেকে কন্ট্রোল করেছে আর এখন পুরো নিগেটিভ ফিল দিচ্ছে। এতোটা জ্বালায় কেনো মেয়েটা?
চলবে ___
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৩)
দেওয়ান বাড়ির বুড়ো মুরুব্বি জন এসেছে। বয়স নব্বই পার করেছে সেই কবে!সবাই তাকে দাদীমা বলেই ডাকে। লাবিবাকে খুব আদর করে। ছেলে বউ আর নাতির হাত ধরে এই বাড়িতে পা রেখেছে। হাতে লাঠি ভর করেই হাঁটতে পারে। তবে একটু দূরে গেলেই কারো সাহায্য লাগে। সাবিনা তাঁদের দেখেই বসতে বলেছে। সকাল সকাল অতিথিদের দেখে খোশ আলাপে চায়ের কাপের সাথে মজেছে। উনারা তানভীর লাবিবার কথা জিজ্ঞেস করে। দাদীমা বলে,
‘ সকালে উঠোনে একটু দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি তোমার জামাই তোমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। ওত সকালে ভাগ্যিস গ্ৰামের চার পাঁচ জন আর দেখেনাই! তাহলে তো কথা উঠতো পুরো গ্ৰামে। তা জামাই মেয়ে ভালোই আছে তো?’
‘ হ্যা। চাচী আম্মা। সবই আপনাদের দোয়ায়। মেয়ে ভালো আছে এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে বলুন!’
‘ তা গেছিলো কোই এতো সকালে?’
‘ আপনার নাতি কেমন জেদি জানেন ই তো। কাবিন করিয়ে রাখছি তুলে দেয় নাই। এর আগে কি শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারি? কাল আমরা সবাই গিয়েছিলাম দাওয়াতে ওকে নিই নাই তাই রাগ করে রাতের বেলা বাইরে কোথায় যেনো বসে ছিলো। জামাই গেলো রাগ ভাঙাতে ফিরলো রাত কাবার করে। ‘
দাদীমা হাসে।
‘ ওরা নতুন বিয়ে করছে। এখন কত সময় বাইরে ঘরে থাকবো! ঐসব বাদ দাও। ডাকো। নাত জামাইরে ডাকো। দোয়া দিয়ে যাই। ‘
‘ ঘুমিয়ে আছে চাচীমা। ‘
‘ জামাই ঘুমাক। লাবুরে ডাকো। দুই খান কথা কয়ে যাই। ‘
সাবিনা বাইরে থেকে লাবিবাকে ডাকে। লাবিবা ঘুমে কাতর। দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে চোখ মেলে। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে। একটা চিৎকার দেবার আগে দরজা ধাক্কানো বন্ধ হবে না।
‘ আসছি। ‘
‘ বাইরে আয়। তোর দাদীমা এসেছে। ডাকছে। ‘
দাদীমার কথা শুনে লাবিবা আড়মোড়া ভাঙ্গে। পাশ ঘুরতেই কম্বলে মোডানো এতো বড় কোলবালিশ দেখে চমকে উঠে। কোল বালিশ নয়। এটা মানুষ। লাবিবার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ। লাবিবা কম্বলটা অল্প একটু টেনে চোখ দুটো বের করে। ইসস! এই চোখেই তো লাবিবা দিনে হাজার বার মরে। গভীর ঘুম বুঝে পুরো মুখটা বের করে। ইসস! এতো সুন্দর কেনো লাগে? ছোট্ট ছোট্ট দাঁড়িগুলো আরো বেশি সুন্দর লাগে। ইসস! রাত টা কতো সুন্দর ছিলো তাদের! হিম ঠাণ্ডায় তানভীরের বুকে । ইসসস! এখান থেকে না উঠলে ইস ইস করতে করতে তার জান যাবে ।
লাবিবা ফ্রেস হয়ে আসে । জানালার পার্ট গুলো খুলে দিয়েই পর্দা মেলে দেয়। সে যা চেয়েছিলো তাই হলো। ভর দুপুর! অথচ তানভীর তার সাথে। এমন টা কখনো হয়েছিলো? রাত ফুরোতেই লোকটা দৌড়। কেনো আসে রাতে? এমন তো নয় বউকে আদর করতে আসে।ভালোই তো বাসে না। আবার আদর! লাবিবা ধপ ধপ পা ফেলে তানভীরের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে ভেংচি কাটে।
‘ ইসস! আসছে আমার সাধু পুরুষ!’
মাথায় চিরুনি করতে করতে গুনগুনিয়ে গান করে,
‘ আম বাগানে ইটের ভাটা, হচ্ছে আমার মিছেই হাঁটা
আম বাগানে ইটের ভাটা, হচ্ছে আমার মিছেই হাঁটা
বন্ধু তুমি ঝড়ের দিনে আমের মতো না__।
দমকা হাওয়া আসে বন্ধু তুমি আসোনা। ‘
লাবিবার গান শুনে তানভীর নড়ে চড়ে আবার ঘুমায়। বাইরে ঠিকই তার কন্ঠ চলে গেছে। দাদীমা গান শুনে ডাকে, ‘ ওরে লাবু। এদিকে আয়।’
‘ আসছি দাদীমা। ‘
গলায় উড়না জড়িয়ে লাবিবা বেরিয়ে আসে। লাবিবাকে দেখে দাদীমা তার ফোকলা দাঁতে হাসি দেয়।
‘ কিরে? নাত জামাই ছাড়লো তোরে? ‘
‘ উনি ঘুমায় দাদিমা। ‘
‘ ত গান শুনাইলি কারে?’
‘ কারে আবার? তোমারে। তুমিই তো শোনলা। ‘
‘ রাইগা আছস নাকি? কি কয়ছে জামাই য়ে?শোন বোইন। রাগা রাগি ভালা না। জামাই একটা কথা কয়লে চুপ করি শুনবি। রাগা রাগী করবিনা। পরে ভালোবাইসা বুঝায়া কবি এইটা তোমার ঠিক হয়নাই। পুরুষ মানুষের রাগ করে কিছু কয়লে হিতে বিপরীত হয়। ‘
‘ কখন আসছো দাদীমা?’
‘ আসছি অনেকক্ষন । সকালে দেখলাম জামাইয়ের কোলে উইঠা সুখ খাইতে খাইতে বাড়ি ফিরলি। আল্লার রহমতে জামাই পাইছোস মাশাআল্লাহ। ‘
‘ সুন্দর না?’
‘ হ। মেলা সুন্দর। ‘
লাবিবা খুশি মনে দাদীমার গা ঘেঁষে বসে।
‘ এতো সুন্দর পুরুষটারে কেমনে ধরে রাখি বলতো দাদীমা? আমার কাছে থাকতেই চায়না । শুধু কাজ কাজ করে বেড়ায়। ‘
‘ শ্বশুর বাড়ি তাই হয়তো আসতে লাজ পায়। একবার তুলে নিয়ে যাক দেখবি তোর ঘোর ছাড়বোনা। ঘরে জামাই এগলা কি পড়ছোস?’
‘ গাউন। কি সমস্যা?’
‘ ঐ ছেমড়ি তোর বিয়া হয়ছে না? শাড়ি কাপড় পরবি। শাড়ি কাপড় পড়ে জামাইরে আঁচলে বাধবি। সেজেগুজে থাকবি সব সময়। দেখবি তোরে দেখার লাইগা হলেও লাজ শরম ফেলে দিয়ে শ্বশুড় বাড়ি পরে থাকবো। জামাই কি কি পছন্দ করে রান্না বারা করে খাওয়াবি। ঘুরতে যাবি। প্রেমের কথা কবি। জামাই এমনিতেই পিছু ছাড়বো না। ‘
‘ আমি শাড়ী সামলাতে পারিনা দাদী। ‘
‘ পড়তে পড়তেই পারবি। কপালে টিপ দিবি। লিপিস্টিক দিবি। এরম বিধবার মতো হয়ে থাকস কে? সর। সর। তোর মত মেয়ে ছেলে কত পাং পুং করে আর তুই মরার মতো পড়ে থাকস। ‘
‘ শাড়ী পড়িয়ে দিবা দাদী?’
‘ আন পড়াইয়া দেই। ‘
‘ আম্মুর রুমে চলো। আমার রুমে উনি ঘুমায়। ‘
‘ দরদ তো দেখি মেলা!’
‘ হিংসা করো না বুড়ি। একমাত্র জামাই আমার। ভাগ হবেনা। ‘
বুড়ো থরথর হাতে শাড়ি প্যাচ লাগায় দাদীমা। লাবিবা দেখে বিরক্ত হয়।
‘ ভালো করে পড়াও। দেখো কেমন হয়ে আছে উচুম্ভা ভুচুম্ভা!’
‘ এমনেই পড়ে থাক। এলোমেলো শাড়ী পড়ে থাকলে জামাইগো চোখ লাগে। ঠোঁট ভর্তি লিপিস্টিক দে। জামাইয়ের কাছে গিয়ে ঘুম ভাঙা। আমি তোর মা চাচীর কাছে গিয়ে গপ্প করি।’
‘ আচ্ছা। ‘
সাজগোজের জিনিস সব নিজের রুমে। লাবিবা আয়নাতে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলে গা ঢেকে নেয়। তারপর এ রুম থেকে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। দরজা পেরোতেই শাড়ির সাথে পা বেজে খায় উষ্টা। ফ্লোরে ধুপ শব্দ হতেই কিচেন থেকে সাবিনা ঢেকে উঠে, ‘ কি হলো? লাবি মা?’
‘ কিছুনা আম্মু। লাফ দিলাম এই যা!’
মিথ্যা কথা বলেই দাতে ঠোঁট কাটে। উঠে দাঁড়ায়। না।তেমন ব্যথা লাগেনি। তয় শাড়ির একপাশ খুলে গেছে। বুড়ি যে কি পড়ালো! ওমনেই ধরে কোমড়ে গুঁজে দেয়। টিপ টিপ পা ফেলে রুমে আসে। এভাবে শাড়ি পড়ে আর দৌড়ানো যাবে না।
তানভীর উল্টো হয়ে ঘুমুচ্ছে। লাবিবা কম্বল সরিয়ে দেয় গা থেকে। সাথে সাথে উদোম গা দেখে আবার ঢেকে দেয়। উদোম গায়ে কেনো ঘুমুবে এতো গুলো টি শার্ট রেখে? ইসমাইল জামাইয়ের জন্য শার্ট প্যান্ট টি শার্ট, সর্টস সব কিছুই কিনে এনেছে। যাতে জামাইয়ের কোন অসুবিধা না হয় কোনভাবে। লাবিবা তানভীর কে ডাকে।
‘ এই উঠুন না! উঠুন। ‘
তানভীর বালিশে নাক ঘসে গোঙায়। ‘ উমম!’
লাবিবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। ভীষণ লজ্জা পায়। লজ্জাকেই তো জয় করতে হবে। নাহলে পাবে কিভাবে এই সুন্দর পুরুষ টাকে? এক হাতে চোখ ঢেকে আরেকহাতে কোমর অব্দি কম্বল সরায়। দু আঙুল ফাঁক করে একবার তাকিয়ে আবার লজ্জা পায়। লজ্জাটা একটু সয়ে আসলে চট করে উঠে ড্রেসিং টেবিলে যায়। বেছে বেছে লাল টকটকে ম্যাট লিপস্টিক টা নিয়ে আসে। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করছে। ফোনের ক্যামেরায় গাঢ় করে লিপস্টিক লাগায়। এক মিনিটের ভেতরেই লিপিস্টিক টা শুকিয়ে যায়। তাই আর সময় নষ্ট করে না। পটাপট তানভীরের ঘাড়ে ছোট ছোঁয়ায়। গাঢ় লাল ট্যাটু এঁকে যেনো আরো খায়েশ বেড়ে যায়। একে একে পুরো পিঠ ছোট ছোঁয়ায়। তানভীর বার বার আক্রমনে নড়ে উঠে। দুবার মোচড় দিয়েই চিত হয়ে ঘুরে শোয়। আবার ঘুমিয়ে পড়ে।আগলা খোলা বুকে চোখ পড়তেই লাবিবা অজান্তেই কাঁপতে থাকে। এক টাক পরিমাণ বুকটা এখন তার সামনে পুরোটাই খোলা। হাত বাড়িয়ে লোমশ বুকের উপর রাখে। লাবিবার কেমন যেনো পাগল পাগল লাগছে এই মুহূর্তে। মাথায় যেনো নেশা চেপে বসে। রাঙিয়ে দিতে থাকে তানভীর বুক পেট কোমল রাঙা ঠোঁটের ছোঁয়াতে। ঘুমটা বুঝি এবার হালকা হয়ে এলো। তানভীর হাত রাখে পেটের উপরে। তার আগেই লাবিবা সরে পড়ে। দৌড়ে যায় বাইরের দিকে। দরজা অব্দি গিয়েই আবার ফিরে আসে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে টিপের বক্স থেকে বড় লাল টিপ বের করে। কপালে লাগিয়ে নিয়ে নিজেকে আপাদমস্তক দেখে নিজেই কেঁপে উঠে। এ এক নতুন লাবিবা। সাংঘাতিক রুপ লাবণ্যে গড়া! লাবিবা ঘাড় ফিরিয়ে ঘুমন্ত মানুষটার দিকে তাকায়। চোখ বন্ধ করে বিরবির করে,
‘ খান সাহেব! আপনার প্রেমে আমি পাগল! আমি উম্মাদ! আপনি কবে আমার বাড়ির নিমন্ত্রন গ্ৰহন করবেন? ‘
আজকের ভোরের সূর্যোদয়টা ছিলো জীবনের শ্রেষ্ঠ তম সূর্যোদয়। সমুদ্রে সূর্যোদয় অনেক দেখেছে তানভীর। কিন্তু নদীর তীরে সূর্যোদয় কখনো দেখা হয়নি। চারপাশ টা যখন ডিমের কুসুমের মতো ছোবড়া ছোবড়া হয়ে উঠে পুরো আকাশে কী অভাবনীয় সৌন্দর্য! আর যদি বুকের সাথে মিশে যদি থাকে প্রিয় মানুষটা! লাবিবার জেদের জন্যই এতো সুন্দর একটা ভোর কাটলো। লাবিবা তো আসতেই চাইছিলো না। তানভীর জোর করে কোলে করে নিয়ে এসেছে। বাসায় এসে শোয়ার পর শুরু হয়েছে লাবিবার মাথা ব্যথা। তানভীর কপালে প্রেস করে দিয়েছে জন্যই লাবিবা ঘুমাতে পেরেছে। সেজন্যই তারভীরের ঘুম ভাঙতে দেড়ি হয়ে গেলো। উঠে লাবিবাকে পাশে পেলো না। ঘুমের মাঝে ঠিক ই টের পেয়েছে কেউ তার বুকের উপর হামাগুড়ি দিচ্ছে। এটা যে তার বউ নিশ্চিত বুঝে তানভীর হালকা হাসে। কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে মাথার চুল চুলকাতে চুলকাতে এসে বাথরুমে ঢুকে। আয়নাতে তাকাতেই তানভীরের চোখ উপরে! বুক পেট পুরোটাই লিপসের লাল ট্যাটু আঁকা। পেছনে ঘুরতে দেখে ঘাড়ে পিঠেও একি অবস্থা। তানভীর উঁচু গলায় হাকে,
‘ লাবিবা ,লাবিবা!’
লাবিবার কোনো সাড়া নেই। তানভীর বেরিয়ে এসে ওয়ার্ডোব থেকে একটা শার্ট বের করে বোতাম লাগাতে লাগাতেই বেরিয়ে আসে। পুরো বাড়িতে লাবিবাকে খুঁজে। লাবিবা নেই। রাস্তার পাশে দেখে শালা শালীরা বল খেলছে। তানভীর জিজ্ঞেস করে,
‘ এই রতন? তোমার আপু কোথায়?’
‘ আপু তো ছাদে। দোলনা খেলে। ‘
তানভীর তখনি ছুটে ছাদে। আজ বউয়ের একদিন কি তার যতদিন লাগে। খুব বড্ড বার বেড়েছে। ইমম্যাচিউর বউ বিয়ে করার এই একটা জ্বালা। শুধু প্রেম প্রেম আর ভালোবাসা! প্রেম ভালোবাসা যে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না সেটা তো আর বুঝবেনা। ঘুমের মাঝে পারবে হাজব্যান্ডের ইজ্জত লুটে নিতে। এতো কেনো জ্বালাচ্ছে বউটা?
চলবে __
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৪)
ছাদে উঠে লাবিবার দিকে চোখ পড়তেই তানভীরের রাগান্বিত চোখ শীতল হয়ে এলো। কিন্তু বুকের বা পাশে হৃদয় নামক যে যন্ত্রটা আছে তুলনামূলক যেনো একটু বেশিই বিট করতে লাগলো। এলোমেলো ভাবে পড়া লাল শাড়ি, খোলা চুল, লাল টিপ, লাল ঠোঁট! একি তানভীরের মরণ সাজ! এই টুকটুকে বউটা একটু আগে বুকের উপর লুটোপুটি খাচ্ছিলো দেখতে পেলে তানভীরের যত্নে গড়া এতো বছরের ধৈর্য্য তখনি ধ্বংস রুপ নিতো। তানভীর বরাবরই ধৈর্য্যশীল বোঝদার শক্তপোক্ত মানুষ। তার ভেতরের নরম যে মনটা আছে তার খোঁজ আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। এক দুই করে জীবনে কম নারী সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করে নি। খোলসে আবৃত মনটাকে হাজার চেষ্টা করেও ছুয়ে দিতে পারেনি। নিজেকে নিয়ে খুবই গর্ব! সেই গর্ব এবার যেনো সত্যি কেউ চূর্ণ করলো। তানভীর এক নারীতে আসক্ত একজন পুরুষ। তার টার্গেট ছিলো সেই নারীকে হারানো।নিজে থেকেই এসে শক্ত খোলস উম্মোচন করে প্রেয়সীর কাছে আত্মসমর্পন করবে ভেবেছিলো। তার আগেই যে প্রেয়সী তাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিবে সেটা কি কখনো ধারণা করেছিলো? তানভীর বড় শ্বাস ফেললো। নিজেকে শান্ত করতে চাইলো। তাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। আরো ধৈর্য্য শীল। সিদ্ধান্ত নিলো নিচে চলে যাবে। ছাদে আর এক মুহূর্ত নয় । কিন্তু তার আর নেমে আসা হলো না। তার মরণ সাজে বউয়ের মিষ্টি কন্ঠ কানে এলো। চোখ তুলে সাথে সাথে তাকালো। দোলনায় দোল খেতে খেতে লাবিবা গেয়ে উঠা গান তার সিদ্ধান্ত টাই পাল্টে দিলো।
লাবিবা বুঝতেও পারেনি ছাদে তার পেছনে তানভীর এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। লাবিবার ভাবনার আকাশ জুড়ে এখন শুধুই তানভীর। যখন নিজেকে দেখবে কি রিয়েকশন টাই না হবে! ভেবেই খিল খিল করে হেসে উঠে চিকন গলায় সুর টানে,
‘ ভাবনার আদরে তোকে খুঁজে ফিরে __
বড্ড ভীষণ করে আমার এ মন!
আকাশের নীলিমায়_ অনুভবে খুঁজে যাই
যখন খুজে না হারিয়ে ___
বৃষ্টি শেষে রোদ এলো, আমি আজো এলোমেলো _
বৃষ্টি শেষে রোদ এলো, আমি আজো এলোমেলো ~’
‘ লাবিবা।’
গানের মাঝেই তানভীরের গম্ভীর ডাকে বাঁধা পড়ে লাবিবা। পেছন ফিরতেই চোখাচোখি হয়। তানভীরের দৃষ্টি নেমে যায়। পতিত হয় ঐ লাল ঠোঁট জোড়ায়। তানভীর এগিয়ে যেতে যেতে বলে ,
‘ এদিকে তোমার হাজব্যন্ডের সর্বনাশ হয়ে গেলো আর তুমি ছাদে বসে আকাশ বাতাস কে গান শোনাচ্ছো ?’
তানভীরের কথায় লাবিবা ভীষণ চিন্তিত হয়ে উঠলো। দোলনা ছেড়ে শাড়ি উঁচিয়ে ধরে দৌড়ে তানভীরের সামনে এলো। সন্ধানু চোখে প্রশ্ন করলো,
‘ হায় আল্লাহ! কে কি করেছে আপনার?’
‘ ইজ্জতে হাত দিয়েছে। ‘
তানভীরের কথায় লাবিবা চোখ বড় বড় করে তাকালো। হাত এগিয়ে নিয়ে দাড়ী ছুলো। থমথমে গলায় প্রশ্ন করলো,
‘ খুলে বলুন। আমার বাড়িতে এতো সাহস কার এতো বড় একটা কাজ করার!’
তানভীর চটপট শার্টের দুটো বোতাম খুলে ফেললো। বুকের পাশে টেনে ধরে আঙুল তাক করে দেখালো।
‘ এই যে! এই কাজটা নিশ্চয় লাবিবার। ‘
লাবিবা ঝটপট মাথা নড়ালো।
‘ না। আমি কিছু করিনি। আমি ভালো মানুষ। ‘
‘ লিপস্টিক লাগাবে তুমি ছাড়া এ বাড়িতে কে? এই তোমার ভালো মানুষীর নমুনা?’
‘ না। আমি কিছু করিনি বললাম না?’
‘ কে কতটুকু করেছে দেখাচ্ছি। দাঁড়াও। ‘
‘এই না! না। একদম না। এগুবেন না। একদম এগুবে না।’
‘ দাঁড়াতে বলেছি। দাঁড়াও ঐখানে। ‘
‘ আম্মু….. বাঁচাও! ‘
‘ লাবিবা _ পড়ে যাবে। দৌড়াবেনা। দাঁড়াও বলছি। ‘
‘ না না। আম্মু! ধরে ফেললো। আহ!’
ছাদের দরজায় মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছিলো। ফ্লোরে দু হাত ঠেকিয়ে রক্ষা। লাবিবাকে পড়তে দেখে তানভীর তুলতে আসে কিন্তু লাবিবাকে ছুঁতে অব্দি পারে না। ব্যথা পেয়েও পেছনে তাকিয়ে তানভীরকে ধেয়ে আসতে দেখে উঠেই দৌড়। তানভীর ও পিছু ছুটে। লাবিবার শাড়ির আঁচল সিঁড়িতে ছড়িয়ে গেছে। মুঠো করে ধরেই প্রাণপণে ছুটলো। শেষ রক্ষা আর হলোনা। রুমে ঢুকে দরজা লাগানোর আগেই তানভীর আটকে দিলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো দেয়ালের দিকে। লাবিবার পিঠ ঠেকলো দেয়ালে। তানভীরের দিকে তাকিয়ে ই জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলো। তানভীর এগিয়ে আসতেই লাবিবা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মনে মনে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলো।
‘ শাড়ি কেনো পড়েছো?’
গম্ভীর গলায় অদ্ভুদ লাগলো প্রশ্নটা। লাবিবা চট করে তানভীরের দিকে তাকালো। মুখ খুলতে গিয়েও ঠোঁট চেপে গেলো। তানভীরের আবার প্রশ্ন।
‘ লাল শাড়ি কেনো পড়েছো?’
লাবিবার ইচ্ছে করলো এই মুহূর্তে মরে যেতে। লাল শাড়ী কেনো পড়েছে জানেনা? কেনো জানবেনা? বিয়ে করেনি লাবিবাকে? বউ কি লাল শাড়ি পড়বে না? এখন কি সাদা শাড়ি পড়ে থাকবে? লাবিবাকে অবাক করে দিয়ে তানভীর শাড়ির আঁচল চেপে ধরলো।
‘ তুমি আমার সামনে শাড়ি পড়বে না বুঝছো? প্রথম দিন ই না করে দেওয়া উচিত ছিলো। সরি। প্লিজ! আমার মাথা ঠিক থাকে না। ‘
‘ স্যার! ছাড়ুন। ‘
‘ শোনো। আমার একটা সম্মান আছে। আমি মোটেই শ্বশুড়বাড়ি তে পার্মানেন্ট হতে চাই না। খোলো। আমার সামনে শাড়ি পড়বে না। আচ্ছা আমিই খুলে দিচ্ছি।তোমাকে হাত লাগাতে হবে না। ‘
সত্যি সত্যি শাড়িটা খুলে বিছানায় ছুড়ে ফেলে। লাবিবা ভয় সংকোচে চিৎকার করে উঠে। লজ্জা ঢাকতে তানভীরের বুকে মুখ গুঁজে। তানভীর সাথে সাথেই লাবিবাকে ধাক্কা দেয়। লাবিবা হাত দুটো বুকের উপর ক্রস করে চেপে ধরে। তানভীর কে তার মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না। এতোটা রেগে যাবে বুঝতে পারলে লাবিবা মোটেও এমন ধরনের কাজ করতো না। কোই কত ভাবেই তো জ্বালিয়েছে কোনদিন তো রেগে যায়নি। আজ কেনো রেগে গেলো? গা ছুঁয়েছে জন্য ই কি? লাবিবার কি হলো সে যানে না। বিরবির করলো,
‘ আর কোনদিন বীণা অনুমতি তে আপনার কাছে ঘেসবো না। ‘
তানভীর কপালের টিপ টা খুলে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ এইখানে সৃষ্টিকর্তার নাম লেখা থাকে। খবরদার তিলক লাগাবে না। ‘ কপালে ঠোঁট লাগিয়ে শব্দ করে চুমু দিলো। শুষ্ক ঠোঁটের ছোঁয়ায় লাবিবা কেঁপে উঠলো। তানভীর সরে গেলো না। মুখ নামিয়ে গালে নাক চেপে ধরলো। রক্তিম ঠোঁট জোড়ার উপর দৃষ্টি রেখে জবাব চাইলো, ‘ লিপস্টিক দিয়েছো কেনো? লিপস্টিক __’ তানভীরের গলা ভেঙে এলো। একটু সময় নিলো । তানভীরের এসব অচেনা কর্মকান্ডে লাবিবার শরীরের সব শক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। তানভীর এবার জোর গলায় বললো, ‘ আমার সামনে লিপিস্টিক লাগাবেনা। কারো সামনেই লাগাবেনা। মুছে ফেলো। এক্ষুনি মুছে ফেলো। আচ্ছা যাও শুধু শুধু টিস্যু নষ্ট করতে হবে না। আমিই মুছে দিচ্ছি। ‘ বলতে বলতেই লাবিবার ঠোঁট জোড়া ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে নিলো। লাবিবা এই হটাৎ আক্রমণ এ মূর্ছা গেলো। শরীর ছেড়ে দিলো। তানভীর বুঝতে পেরেই লাবিবাকে দু হাতে আগলে নিলো। মিনিট কয়েক পরে ঠোঁট ছেড়ে দিলো। লিপস্টিক একটু মুছেনি দেখে বিভ্রান্ত হলো। তবে কি সে লিপস্টিক মুছতে অক্ষম? বিষটা মাথায় কেস করতেই আবারো ঠোঁটে ঠোঁট নিয়ে নিলো। লাবিবা শ্বাস নেবার সময়টাও পেলো না। এবার যেনো দম বন্ধ হয়ে এলো। বুকের উপর থেকে হাত নেমে গেলো। কোমড় খামচে ধরলো তানভীরের। ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো। বিশ্রি একটা গালি দিয়ে বলতে ইচ্ছে করলো
‘ দুই হাজার টাকার ম্যাট লিপস্টিক আমার সারাদিন চেষ্টা করলেও তুলতে পারবিনা। ব্যাটা এখন বউ আছে না? কসমেটিকস এর উপর পিএইচডি নিতে পারিস না?’
ততোক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তানভীর পুরোপুরি একটা ঘোরের মাঝে ঢুবে গেছে। হাতের বাঁধন গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। ফ্লোর থেকে তুলে নিয়েছে লাবিবাকে পায়ের পাতার উপরে।
ভালো সময় কাটতে বেশীক্ষন লাগে না। তানভীর লাবিবার এই মধুক্ষনে বাগড়া দিতে হাজির হয়ে যায় সব থেকে ক্ষুদে আড়াই বছরের ভাইটা। হাউমাউ করে কেঁদে ঢুকে লাবিবার ঘরে। লাবিবা ভাইয়ের কান্না শব্দ পেয়ে তানভীরকে ধাক্কাতে থাকে। তানভীরের ছাড়ার নাম নেই। বাচ্চার কান্নার শব্দে হুস ফিরে। চটপট ঠোঁট ছেড়ে থুতনিতে শক্ত পোক্ত একটা কামড় বসিয়েই ছেড়ে দেয়। লাবিবা ধপ করে নিচে বসে পড়ে। মুখ গুঁজে দেয় হাঁটুর ভাঁজে। তার ভাই কাঁদতে থাকে, ‘ মাম মাম মারচে আফুই মাম মাম মারচে ‘ বলে। তানভীর গিয়ে বাবুকে কোলে তুলে নেয়। ঝাঁকিয়ে শান্ত করে,
‘ কি হয়েছে? অন্তু সাহেবের কি হয়েছে?’
‘ মাম মাম মারচে। ‘
‘ মাম মাম কে বকে দিবো হে? চকলেট নিবা চকলেট?’
‘ চককেট?’
অন্তু কান্না থামিয়ে দেয়। তানভীর হাতের উল্টো পাশ দিয়ে গালের জল মুছে দেয়।
‘ হুম । চকলেট। তোমার আপুর কাজে অনেক মজার চকলেট আছে। আমি খাচ্ছিলাম। তুমি খাবে?’
অন্তু মাথা নাড়ায়। সে খাবে।
‘ না শালা সাহেব। আমারটা আমিই খাবো। তুমি বরং অন্য কোন চকলেট খাও। ‘
‘ হে। ‘
তানভীর আড়চোখে লাবিবার দিকে তাকায়। সে লজ্জায় আরো গুটিসুটি হয়ে যাচ্ছে। তানভীর বাঁকা হাসে। বিছানা থেকে শাড়িটা নিয়ে মেলে ধরে লাবিবার উপর ছুঁড়ে দেয়। লাবিবা আগা গোড়া শাড়িতে আবৃত হয়ে যায়। তানভীর অন্তুকে নিয়ে আলমারির কাছে যায়। সেখানে অনেক গুলো ইন্ডিয়ান চকলেট লুকানো আছে। তানভীর সকালে প্যান্ট চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখে ফেলেছে। সেখান থেকেই একটা অন্তুর হাতে ধরিয়ে দেয়। অন্তুকে নামিয়ে দিয়ে ফোন আর ওয়ালেট টা নিয়ে পকেটে ঢুকায়। লাবিবাকে শুনিয়ে বলে,
‘ অন্তু সাহেব । এলাম তবে। তোমার বোনকে একটু পাহারায় রেখো। তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেলাম। তুমি আমার চকলেট পাহারা দিবে আর আমি তোমাকে আলমারি থেকে চকলেট বকশিশ দিবো। ‘
অন্তু সাহেব হাসে। মাথা দুলিয়ে বলে,
‘ হে। ‘
তানভীর লাবিবার কোন হেলদোল পেলো না। চলে যাবার সময় আবার বললো,
‘ আমি এলাম তবে। ‘
লাবিবার কোনো সাড়া নেই। লজ্জায় একেবারে সিটিয়ে গেছে। তানভীর নিঃশব্দে হেসে আরেকটু লজ্জা দিতে বলে, ‘ জ্যেকেট, ফর্মাল ড্রেস রেখে গেলাম।আবার তো আসতেই হবে । ‘
এবার লাবিবার গলা পাওয়া গেলো। মিন মিন করা কন্ঠ। ‘ হট সাওয়ার নিয়ে যান। প্লিজ ও বাড়িতে গিয়ে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না। ‘
তানভীর মৃদু স্বরে বলল, ‘ আছে। থাকুক না! ‘
তানভীর বেরিয়ে গেলো। লাবিবার শাড়ি সরিয়ে শেষ বার তানভীরকে দেখার ক্ষমতাটুকু হলোনা। লজ্জায় সেখানেই পড়ে রইলো। আজ আর এখান থেকে উঠতে পারবে মনে হয়না। চোখ নামাতেই দেখে নিচ থেকে কেউ শাড়ি গুটিয়ে তুলছে। মি. অন্তু সাহেব। মাথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওর হাতে চকলেট। মুখের কোনাতেও লেগে আছে। লাবিবাকে পেয়েই ফোকলা হাসে। চিকন স্বরে ডাকে, ‘ বউ! আফু বউ! ‘ লাবিবার হাঁটুর মাঝে গিয়ে দাঁড়ায়। চকলেট মাখা হাত লাবিবার মুখে বুলায়।
‘ চুন্দল বউ! আমায় চুন্দর আফু বউ! ‘
লাবিবা লজ্জানত হাসে। অন্তুকে ধরে বলে,
‘ বল। খান সাহেবের বউ। ‘
‘ কান সাবেবের বউ। ‘
লাবিবা খিল খিল করে হেসে উঠে। লাবিবার হাসি দেখে অন্তুও খ্যা খ্যা করে মুখে ফ্যানা তুলে কাঁধ মুখ এক করে হাসে।
চলবে __