ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-১৯+২০+২১

0
963

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(১৯)
লাবিবার কোনো পাত্তা নেই। লজ্জা পেয়ে এমন গুটিয়ে যাবে এইটা ভাবনাতে ছিলো না। আজ নাকিব এসে তানভীর কে জিজ্ঞেস করেছে লাবিবা কোথায়? উত্তর দিতে পারেনি তানভীর। বিষয়টা কতটা খাপ ছাড়া হয়ে গেছে বুঝতে বাকি নেই। লাবিবাতো কল ধরবেনা। ধরেওনি এতোদিন। তাই তানভীর বাড়ির নাম্বারে কল ঢুকালো। রিসিভ করলো ইসমাইল। সালাম জানিয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো,
‘ লাবিবা কোথায়?’
তানভীরের লজ্জাবোধ বরাবরই একটু কম। তাই বলে শ্বশুর হয়ে ইসমাইল তো জামাইয়ের সাথে সাথে লজ্জায় সেক্রিফাইস করতে পারেনা। ফোনটা ধরিয়ে দিলো সাবিনাকে ডেকে। সাবিনা জানালো তার মেয়ে পড়ছে। ঘরে বসে সারাদিন পড়ছে। বিয়ের টেনশনে কয়েকদিনের মধ্যে সব খেয়ে বসে আছে । গ্যাপ গুলো এখন ফুল করছে। তানভীর লাবিবাকে দিতে বলে। লাবিবার দিকে ফোন এগিয়ে দিলে লাবিবা বেশ বিরক্ত ই হয়। মুখটা খুলতে যাবে তখনি সাবিনা চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
‘ জামাই কল দিয়েছে। তাড়াতাড়ি ধর। ‘
তানভীরের কথা শুনে লাবিবা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। মেয়ের এভাবে মুড চেঞ্জ দেখে সাবিনা মুচকি হাসে।
‘ পাগল!’ বলে চলে যায়।‌ মনে মনে শান্তিও পায়। সুখে আছে তার মেয়েটা। এদিকে মেয়ের মনে যে লাড্ডু ফুটেছে! তাও আবার দুষ্টুমির লাড্ডু। সেটা তার অজানা।

‘ হ্যালো স্যার। আসসালামুয়ালাইকুম। ‘
‘ কোথায় তুমি?’
‘ আগে সালাম নিন। তারপর বলবো। ‘
‘ নিয়েছি। ‘
‘ মনে মনে না। প্রকাশ্যে নিন। বলুন ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি যেনো শুনি। ‘
‘ বাজে কথা রাখো। ক্লাস মিস দিচ্ছো কেনো? তোমার জন্য কি স্যার ম্যামরা আবার ক্লাস নিবে?’
‘ আপনি চাইলে সে নিতেই পারে। আফটার অল প্রিন্সিপাল বলে কথা!’
‘ সব কিছুর একটা রুলস আছে। কলেজে আসো। রেগুলার ক্লাস করো। ‘
‘ আমার কলেজ যেতে মন চায়না স্যার। ‘
‘ রিজন?’
‘ আপনি আছেন তো। কলেজে গেলেই আপনার সামনে পড়তে হবে। আমি পারবো না স্যার। আমার ভিষন লজ্জা লাগে। ‘
‘ ওকে আমাকে দেখতে হবেনা।সোজা ডিপার্টমেন্টে আসবে ক্লাস করবে আর চলে যাবে। ‘
‘ আমার বেহায়া চোখ যে আপনাকে ঠিকই দেখে ফেলে স্যার। আপনি যদি অফিসেও থাকেন থাই গ্লাসেই আমার চোখ আটকে থাকে। আমি যাবো না স্যার। আমার ভীষণ লজ্জা করে। ‘
লাবিবার কথায় তানভীর থামে। দুষ্টু মেয়েটা বউ হয়েছে কদিন এখনি দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে।
‘ উল্টাপাল্টা মুভি দেখে লজ্জা বেড়ে গেছে তাইনা? ওকে। রাতে আসছি। দেখবো তোমার কোথায় কোথায় লজ্জা করে। ‘
নিরব হুমকি পেয়ে লাবিবা চাঁপা হাসে।‌ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আয়েশ করে বলে,
‘ গতকাল রাতেও একটা মুভি শেষ করলাম। ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিট! ফ্রেন্ডস! নাকিব! ভাই লাগে আমার। হাজব্যান্ড উইথ বেনিফিটস হলেও তো হতো! ইসস একদমি মন সায় দিলো না আমার।’
‘ এই মেয়ে। সায়ের কথা কেনো আসছে? কি ঘুরে মাথায় তোমার? আজ থেকে তোমার ফোন ল্যাপটপ আমার কাছে থাকবে। আসছি দাঁড়াও রাতে। ‘
তানভীরের কন্ঠে দারুন তেজ! লাবিবা ভীষণ মজা পেলো। সেও দারুন তেজে বললো,
‘ আমার স্বাধীনতা। আমি উড়ছি। দুদিন যেতে না যেতেই আপনি আমার পাখা কাটার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কেনো? এই আপনার স্বাধীনতা? এই আপনার দায়িত্ব? শুধু মুখেই বড় বড় কথা। ‘
‘ লাবিবা তুমি তর্ক করছো আমার সাথে? এতোটা স্পর্ধা? ‘
‘ অবশ্যই। আমার স্পর্ধা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণাই নেই। জানেন আমি কে? দুই আসনের এমপি ফিরোজ খানের ছেলের বউ। মরহুম মাজহারুল ইসলামের নাতি বউ। আর আমার হাজব্যান্ড? একজন প্রিন্সিপাল। আমার মতো ঘাড়ত্যাড়া মেয়েকে যে আদা জল খাইয়ে ছাড়ছে। দ্বিধাদ্বন্দে ঢুবিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ছেড়েছে। একবার ভাবুন তাহলে তার কত ক্ষমতা। তারই ওয়াইফ আমি। আর আপনি আমার স্পর্ধা দেখতে চাইছেন? ‘
‘ তুমি অত্যন্ত অসভ্য একটা মেয়ে লাবিবা। ‘
‘ আমি এখনো ভালো আছি। প্লিজ আমাকে খারাপ করবেন না। ‘
তানভীর দমে যায়। ফোন টেবিলে ছুঁড়ে দিয়ে হা হুতাশ করে। যতটুকু সহজ সরল ভেবেছিলো এই মেয়ে আসলে ততটুকু না। তানভীর বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে একে হাতের মুঠোয় পুরে রাখতে হবে চব্বিশ ঘন্টা। কোন মতেই ছাড় দেওয়া যাবে না। এই পাখি একবার আকাশ ছুলে আর নিচে নামবে না। সুতো বেঁধেই ছাড়তে হবে এর আগে না।

সন্ধ্যার পরপরই তানভীর শ্বশুড়বাড়িতে হাজির। কিন্তু সেখানে গিয়ে লাবিবার টিকিটটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সাবিনা জামাইকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শরবত ফল চা সব নিয়ে হাজির। তানভীর শরবতটা শেষ করে জিজ্ঞেস করে,
‘ লাবিবা কোথায় আম্মু?’
‘ ওর ছোট কাকার বাসায় গেলো তো এইমাত্র। তুমি নাস্তা শেষ করো বাবা। আমি ডেকে আনছি। ‘
‘ আপনি ব্যস্ত হবেন না আম্মু। আমি আছি। ও আসুক। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
তানভীর নাস্তা করে রুমে আসে ফ্রেস হতে। সাবিনাও আসে হাতে কয়েক সেট শার্ট প্যান্ট নিয়ে। তানভীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ চেঞ্জ করে নাও বাবা। তোমার জন্য তোমার শ্বশুর আনিয়ে রেখেছে। দেখো সাইজ ঠিক আছে কিনা। ‘
‘ উমম.. আম্মু আমি তো থাকছি না। ‘
‘ এটা আবার কেমন কথা? কোথাও যাওয়া হবেনা। তুমি তো আসোই না। সপ্তাহে চারদিন ঐ বাড়িতে থাকলে তিন দিন ই এই বাড়িতে থাকতে হবে। এটা তো তোমার ই বাড়ি বাবা। আমাদের একমাত্র জামাই তুমি। নাও নাও। আমি আবার তোমার জন্য রান্না চাপিয়েছি। ‘
‘ আব্বু কোথায় আম্মু?’
‘ এখনো ফিরেনি বাবা। তুমি ফ্রেশ হতে থাকো আমি ফোন করে দিয়েছি লাবিবা চলে আসবে এখুনি। ‘
‘ ছোট কাকার বাসা কতদূর এখান থেকে?’
‘ মিনিট দশেক হাঁটার পথ। বেশি দূরে না। ‘
‘ ওহ! আচ্ছা। ‘

লাবিবা গোল চত্বর হয়ে বসে কাজিনদের সাথে লুডু খেলছে। তিন দান খেলা শেষ একবারো ফাস্ট হতে পারেনি। জেদ নিয়ে বসেছে ফাস্ট হয়েই ছাড়বে। ছোট কাকী ফোন হাতে ঘরে ঢুকেই তাড়া দেয়।
‘ লাবি মা উঠো উঠো। তাড়াতাড়ি চলো তোমাকে বাড়ি দিয়ে এসেছি। জামাই এসে বসে আছে। ‘
‘ যে মন চায় সে এসে বসে থাকুক। আগে আমি ফার্স্ট হবো তারপর উঠবো। ‘
‘ জামাই অনেকক্ষন থেকেই এসেছে। উঠ উঠ। ‘
‘ যাও তোমার জামাইকে বলছি। কাকা কাকা! তোমার বউকে নিয়ে যাও। আমি ও ঘরে একদমি উকি দিবোনা।’
লাবিবার জোরে ডেকে এমন ধরনের কথা বলায় পাশের ঘর থেকে ওর ছোট কাকা খুক খুক করে কেশে উঠে। কাজিনরা হো হো করে হেঁসে উঠে। বাচ্চা মেয়ে কাজিন দুইটা তো কিছু না বুঝেই হাসছে। কাকী চোখ রাঙায়।ধমকে উঠে।
‘ হপ! বোকা মেয়ে। তোমার কাকার কথা বলিনি। তানভীরের কথা বলছি। ‘
লাবিবা চোখ পিট পিট করে তাকায়।
‘ উনি আসছেন?’
‘ তোমার আম্মু কল দিয়েছিলো। ঘন্টা খানেক আগেই এসেছেন। তোমার জন্য ওয়েট করছে। উঠো উঠো পৌঁছে দিয়ে আসি। ‘
লাবিবা আরো পা মোড়ে শক্তপোক্ত ওয়ে বসে। বিরবির করে। ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লা !’
‘ আমি আর এখান থেকে কোথায়ও যাচ্ছিনা। কাকী আমার জন্য নুডুলস করে দাও। আজকে আমি এখানেই ঘুমাবো। বাড়ি যাচ্ছি না। ‘
‘ জামাই এসে বসে আছে। ‘
‘ উনার কাজ করে উনি চলে যাবেন। আমি আজ বাড়ি যাচ্ছি না। ‘
‘ এই শোনো লাবি মা কি বলে! জামাই এসেছে অথচ তোমার ভাতিজি যেতে চাইছে না। ‘ লাবিবার কাকাকে ডাকতে ডাকতেই কাকী চলে যায়।

রাত দশটা বেজে যাচ্ছে লাবিবার আসার নাম নেই। সাবিনা বার বার ফোন করছে। তানভীর ও বুঝে গেছে লাবিবা আজ আর আসবেনা। ওকে গিয়েই নিয়ে আসতে হবে। যেরকম ভাবা সেরকম কাজ। সাবিনা মেয়েকে আনতে যাবে তখন তানভীর বাঁধা দেয়।
‘ আম্মু আপনি থাকুন। আমিই গিয়ে নিয়ে আসছি। লোকেশনটা বলে দিন তাতেই হবে। ‘

তানভীর যখন পৌঁছালো তখন লাবিবা বিভোর ঘুম। তানভীরকে দেখেই একে একে সবাই লাবিবাকে ডাকতে লাগলো। লাবিবা মোটেই ঘুমায়নি। তানভীর এসে বাসায় বসে আছে তার কি এখন ঘুম হবে? কাকার বাসায় তো প্ল্যান করেই এসেছে। সকালের হুমকি টা যে তার দায়িত্ববান অ-স্বামী পালন করবেই সেটা খুব ভালো করেই জানে। কারো ডাকে লাবিবা সাড়া দিলো না। পাল খেয়ে পড়ে রইলো। একটু নড়লোও না। সবাই যখন তাকে তুলতে ব্যর্থ হলো তখন তানভীর এসে পাশে দাঁড়ালো। লাবিবাকে ভালো করে লক্ষ্য করলো। লাবিবার অবচেতন মন ঠিকই জানান দিলো তার সামনে স্বয়ং তার অ-স্বামীই দাঁড়িয়ে। লাবিবা কাকী যখন লাবিবার পা ধরে টান দিলো তখন তানভীর বললো, ‘ আমি দেখছি কাকী। ‘
‘ না উঠলে যাবে কিভাবে? তুমিও আজ এখানেই থেকে যাও বাবা। ‘
‘ না কাকী। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। ‘
তানভীর হাতের ফোনটা পকেটে ভরে লাবিবাকে পাজা কোলে তুলে নেয়।
‘ তুমি পারবে এতোটা পথ কোলে করে নিয়ে যেতে?’
‘ কোনো ব্যপার না। ‘

লাবিবাকে নিয়ে তানভীর হাটার রাস্তা ধরে। চারিদিকে শুনশান। রাতের গ্ৰামের রাস্তা। আশে পাশের ডোবা থেকে ঝিঝি পোকার ডাক আসছে। এরকম রোমাঞ্চকর পরিবেশে তানভীর জীবনের প্রথম হাঁটছে। খোলা ফসলের বন থেকে গা শিরশির হাওয়া আসছে। মটকা মেরে পড়ে থাকলেও লাবিবা এবার ঠান্ডায় নড়ে চড়ে উঠে। তানভীর নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে। ঘাড়ের উপর থুতনি ঠেকিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ খুব ঠান্ডা লাগছে? ‘
লাবিবা থর থর করে কেঁপে উঠে। তানভীর মৃদু হাসে।
‘ আমি জানি তুমি ঘুমাও নি। তোমার এক্টিং নিঃসন্দেহে নিখুঁত। কেউ ধরতে পারলো না। কিন্তু লাবি পাখি আমার চোখ তো তুমি এড়িয়ে যেতে পারবেনা। এটা পসিবল ই না। তোমার ভেতরের খবরটাও এখন আমার জানা। যেদিন থেকে তুমি আমার অর্ধাঙ্গীনি হলে সেদিন থেকেই তোমাকে পড়ে নিতে আমার সময় লাগে না।‌ ‘
লাবিবা উত্তর করলোনা। কোলের মাঝেই লেপ্টে থাকলো তানভীরের বুকে। মাঝপথে যেতেই বললো,
‘ অ-স্বামী নামান। আমার সুরসুরি লাগছে। ‘
‘ উমম! বাহানা নয়। আমি একদমি তোমাকে সুরসুরি দিচ্ছি না। ‘
‘ আপনার কষ্ট হচ্ছে তো। ‘
‘ সেটা তোমার ভাবতে হবেনা। ‘
‘ আরে সত্যি বলছি আমার শরীর শির শির করছে। ‘
‘ ঠান্ডা হাওয়ার জন্য। উড়নাটা দিয়ে ভালোভাবে বাহু দু’টো ঢেকে নাও। ‘
‘ হাওয়ার জন্য না। আপনার জন্য ই আমার গা শিরশির করছে। ‘
‘ করুক। নামাবোনা। ‘
‘ নামান না! আমি পারছিনা ‘
‘ জড়িয়ে রাখলেই শিরশির করে আর সারা রাত চোখে ধর্ষন করলে বুঝি শিরশির করে না?’
‘ আমি একটু তাকিয়ে ছিলাম। বেশিক্ষন না। ‘
‘ তাতে কি? আমিও তো একটুই কোলে নিয়েছি । বেশীক্ষণ না। ‘
‘ ঘাড় ত্যাড়ামি করছেন কেনো? ছেলেদেরও শিরশিরানি হয় জানতাম নাতো?’
তানভীর উত্তর দেয়না ‌। পুরোটা পথ শেষ করে বাড়ির দরজার সামনে এনে ছেড়ে দেয়। সাবিনা দরজা খুলে দেয়। লাবিবাকে দেখেই বকে দেয়। লাবিবা দৌড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ডাইনিং এ আগে থেকেই বসে আছে ইসমাইল। মেয়ে জামাইকে দেখে বসতে বলে। তানভীর বসতেই খাওয়া শুরু করে। সাথে টুকটাক গল্প। লাবিবা এক পিস মাংস খেয়েই বলে, ‘ আম্মু আমি খেয়ে এসেছি। এখন আর খাবো না। রুমে গেলাম। ‘
‘ তানভীর খাচ্ছে। দেখ কি লাগবে।’
‘ স্যার আপনার কিছু লাগবে? ‘
তানভীর মাথা তুলে তাকায়। ইশারা করে বলে,
‘ বসো। ‘

ইসমাইল লাবিবার দিকে মালাইয়ের বাটি এগিয়ে দেয়।
‘ খাও। আসার সময় তোমার জন্য নিয়ে এসেছি। ‘
‘ আম্মু আমি লুডুস খেয়ে এসেছি।’
বাটিটা হাত দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। সাবিনা বাটি হাতে নিয়ে বলে,
‘ এখন না খেলি পরে খেয়ে নিস ফ্রিজে তুলে রাখছি। ‘
‘ আমি এখন মলাই খাই না। বমি পায়। ‘
ইসমাইল টু শব্দ অব্দি করেনা। তানভীর খেয়াল করে এদের বাবা মেয়ের মাঝে এখনো মনমালিন্য চলছে। বেশ কয়েকবার ইগনোর করতে দেখেছে। লাবিবাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ আব্বুর সাথে তুমি কথা কেনো বলোনা লাবিবা?’
‘ আমার ইচ্ছা। ‘
‘ জেদ সব সময় ভালো না। আব্বুর সাথে মিটমাট করে নাও সব। আমি বারবার এরকম বেয়াদবি দেখতে পারবো না। আব্বুর মনে কষ্ট দিয়ে কখনোই সুখী হবেনা। ‘
‘ আমার সাথে এমন একটা ব্যবহার করতে যার বুক কাঁপে না তার কষ্টে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ‘
‘ কি করেছে তোমার সাথে? বিয়ে দিয়েছে। অন্যায় হয়েছে?’
জামাইয়ের হাইপার হয়ে যাওয়া দেখে ইসমাইল আটকাতে যায়।
‘ বাবা তুমি প্লিজ রাগা রাগি করোনা। আমার মেয়েটা ছোট। আমাকে অনেক ভালোবাসে তো তাই অভিমান করেছে। ‘
‘ তাহলে অভিমান ভাঙুক এবার। বলো বিয়ে দিয়ে অন্যায় করেছে? আমাকে তোমার পছন্দ না তাইনা?’
‘ পছন্দ অপছন্দের কথা উঠছে কেনো? আপনি শান্ত হন।’
‘ আচ্ছা আমার শ্বশুর যে ভুল করেছে সেই ভুলটা নাহয় আমিই শুধরে নিচ্ছি। বলো আমাকে তোমার পছন্দ না? চলে যাবো আমি? বলো। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি। ‘
‘ তোমার বাড়ি থেকে কোথায় যাবা তুমি ? রাগ করে না বাবা। ওদের বাবা মেয়ের অভিমান ওরা বুঝে নিবে। তুমি খাবার ছেড়ে উঠবেনা। ‘
‘ না আম্মু ও বলুক অন্যায় হয়েছে। আমাকে ওর পছন্দ না। আমি চলে যাচ্ছি। আর কোনদিন আসবো না। ‘
লাবিবা কেঁদে দিবে অবস্থা। তানভীরের বাহু ধরে বলে,
‘ আমি কখন বলেছি আপনাকে পছন্দ না? প্লিজ আপনি যাবেন না। আম্মু উনাকে যেতে না করো না। ‘
লাবিবা টেনে ধরে তানভীর কে। ইসমাইল ও খোশামত করতে থাকে। তানভীর রাগ নিয়েই গা ঝাড়া দিয়ে আবার চেয়ারে বসে। সাবিনা বোল থেকে তাড়াহুড়ো করে অর্ধখালি প্লেটে পোলাও বেড়ে দেয়। লাবিবাও কাঁদো কাঁদো মুখে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। ইসমাইল মাথায় রেখে বোঝাতে থাকে। নিচু হয়ে মুখে লুকমা তুলেই তানভীর বাঁকা চোখে লাবিবাকে দেখে। চোখে চোখ পড়তেই মন কাড়া একটুখানি লুকানো হাসি দেয়। লাবিবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এই হাসির অর্থ বুঝতে তাকে আরো বুদ্ধিমতী হতে হবে।

চলবে __

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২০)
কলেজে যাবার পথে ফাহাদ কে দেখে চুপসে গেছে লাবিবা। রিকসা করে উর্মিলার সাথে আসতেই রাস্তার পাশে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাবিবা দেখেও না দেখার ভাব ধরে চলে আসতে যায়। কিন্তু পারে না। ফাহাদ রিকশার পিছু ছুটে। রিকশা মামাকে দাঁড়াতে বলে। রিকশা মামা আগে থেকেই লাবিবার পরিচিত। লাবিবা বলে, ‘ মামা লোকটা আমাকে বিরক্ত করে। আপনি থামবেন না। ‘
রিকশা মামাও বুঝে জোরে টান দেয়।

কলেজে ঢুকে আনমনে হয়ে ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছিলো লাবিবা। উর্মিলা পা চালিয়ে আগেই হেঁটে যাচ্ছে। ডিপার্টমেন্টে পা রাখতেই ভয়ে পিছিয়ে যায় লাবিবা। সবাই দৌড়ে লাবিবার দিকেই তেড়ে আসছে। লাবিবাও উল্টা ঘুরে দৌড় দেয়। বন্ধু বান্ধব রাও ছুটে লাবিবার পেছনে।
‘ আমি কি করেছি। এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো?’
‘ পাষান! অপরাধী! না বলে এক একা বিয়ে করছোস! কি ভাবছোস? আমরা খবর জানবোনা? এসব কথা বাতাসের আগে আগে ঘুরে খালা! ক্ষতিপূরণ দে নয়তো আজ তোকে ছাড়ছিনা। ‘
‘ আরে দাঁড়া না। এরজন্য আমাকে প্যাক প্যাক ভাবলি? ইসস হাঁপিয়ে গেছি। পানি দে আগে। ‘
মুমুর ব্যাগ থেকে নিজেই নিয়ে ডকডক করে পানি খেয়ে নেয়।
‘ দোস্ত ট্রিট দে। ফুকচা খাবো। বিরিয়ানি তো আর আমাদের কপালে জুটলোনা। ‘
‘ টাকা নাই। আমি ফকিন্নি। আমার সাথে প্যাচাল পাড়তে আসিস না। ‘
‘ ট্রিট না দিলে এখন ছাড়ছিনা। ‘
‘ অন্যদিন। আজ পারবো না। ‘
‘ তাহলে টাকা তুলে নিয়ে আয়। আমরা জানি তোর বিকাশে সবসময় টাকা থাকে। একদম মিথ্যা বলবি না। ‘
‘ তাও তোরা ছাড়বিনা?’
‘ না। যা টাকা নিয়ে আয়। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
‘ ঐ ব্যাগ জমা দিয়ে যায়। তোকে আমরা কেউ বিশ্বাস করিনা। ‘
‘ আরে! ব্যাগ ছাড়া খালি খালি লাগে। প্লিজ ছাড়না!’
‘ পরে তুমি দৌড় লাগাও।কি মনে করো আমরা কিছু বুঝিনা? ‘
কেউই ব্যাগ সাথে দিতে চায়না। লাবিবা ফোনটা হাতে চলে আসে। তানভীরের কথা মনে পড়তেই উল্টো পথ ধরে । তানভীরের কেবিনের সামনে থাই গ্লাসের সামনে গিয়ে উকি দেয় তানভীর আছে কি না? তানভীর কে দেখে প্রসস্ত হাসে। এইতো হয়ে গেছে টাকার ব্যবস্থা।

‘ কি চাই তোমার?’
‘ এক হাজার টাকা। ‘
তানভীর ওয়ালেট বের করে টেবিলে রাখে। ‘ যত লাগবে নিয়ে যাও। ‘
‘ কেনো নিচ্ছি জিজ্ঞেস করবেন না?’
‘ সিগারেট খাও?’
‘ আপনি খান? কেমন খেতে? স্যার একদিন টেস্ট করে দেখবো কেমন খেতে। ‘
‘ গেট আউট। ‘
লাবিবা কথা বলতে বলতে ঝুঁকে পড়েছিলো। তানভীরের চোখ রাঙানো কথায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ওয়ালেট থেকে একটা হাজারের নোট বের করে কি মনে করে আরেকটা নোট ও টান দেয়। ওয়ালেটটা তানভীরের দিয়ে এগিয়ে দিয়ে কাশে।
‘ এহেম, এহেম! একটু বেশিই নিলাম স্যার। বান্ধবীরা জেনে গেছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সেজন্য ফুচকা ট্রিট দিতে হবে। যদি একটু বেশিই লাগে! আপনার তো টাকার অভাব নেই। ‘
‘ যত লাগে নিয়ে বের হও। আর শোনো প্রয়োজন ছাড়া আমার অফিসের দিকে আসবেনা। ‘
‘ টাকা লাগতো এটা কি প্রয়োজন না? অপমানস!’
‘ সেটা তো ফোনেও বলা যেতো বুদ্ধু। আমি পাঠিয়ে দিতাম কাউকে দিয়ে। এখানে কেউ জানেনা যে তুমি আমার বউ। পিয়নটাও দেখছি আজকাল তুমি এলেই উশখুশ করে। যা দরকার হবে ফোনে বলবে। পেয়ে যাবে। ‘
‘ ওকে স্যার! আমি যখন সময় পাবো তখন আমার ফ্রেন্ডসদের সঙ্গেই থাকবো। আপনার কাছে আসবো না। ফ্রেন্ডসদের আবার বেনিফিট বেশী কিনা! ‘
তানভীর কটমট করে তাকায়। লাবিবা ভ্যবলার মতো হেসে দৌড় দেয়। দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তানভীর বলে,
‘ আবার কি?’
‘ স্যার আমাদের বিয়েটা কি গোপন হয়েই থাকবে? ‘
‘ আপাতত কলেজটা ছাড়ো। তারপর বলবো। ‘
‘ এতো দিন তাহলে আমি ফ্রি? যা খুশি তাই করতে পারবো?’
‘ কি করতে চাও?’
লাবিবা ছোট্ট করে একটা চোখ টিপ মেরে দৌড়ে পালায়। তানভীর ডাকে,
‘ লাবিবা! দাঁড়াও। লাবিবা!’
কে শুনে কার কথা? এক দৌড়ে ক্লাসে। অপেক্ষাকৃত কয়েকজোড়া চোখ লাবিবার আশাতেই বসে ছিলো। লাবিবাকে পেয়েই হৈ হৈ করে উঠে।
‘ চল আজকে লাব্বুকে ঢালাবো। আনলিমিটেড ফুসকা। ‘
‘ এই লাব্বু দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দেনা। ‘
‘ তোদের দুলা খুবই ব্যস্ত। বউয়ের সাথে কথা বলার ই সময় পায়না। ‘
‘ কি বলিস? ছেলে মানুষ যত ব্যস্তই থাক বউয়ের জন্য ঠিকই সময় বের করে নেয়। এই আগে প্রেম টেম ছিলো নাকি? এখনো ভুলতে পারেনি। তোকে ভালো টালো বাসে নাকি?’
‘ কি আর বলবো? হেতি ভালোবাসা কি বুঝেই না। পটানোর চেষ্টায় আছি। ভালোবাসে কথা বলতে গেলে ধরিয়ে দেয় টাকা। ‘
‘ তাহলে তো অনেক সমস্যা। ‘
সবাই আফসোস করে লাবিবার জন্য। সাহস দেয়।
‘ দোস্ত যে কোনো হেল্প লাগলে বলবি। আমাদের সাথে অপেনলি শেয়ার কর। এমন এমন টিপস শেখাবো না? দুই দিনেই তোর কাছে দৌড়ে আসবে। ‘
‘ চল আগে ট্রিট দে। তারপর সব প্রব্লেম সলভ করবো ধীরে সুস্থে। ‘
‘ চল। ‘

তানভীর লাবিবা কি করে দেখার জন্য একবার বাইরে আসে। দুতলার পেছনের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে সরাসরি ফুচকার স্টল গুলো দেখা যায়। চেয়ার একটাও খালি নেই। লাবিবার এতোগুলো ফ্রেন্ডস আছে তানভীরের জানা ছিলো না। ফ্রেন্ডস নাকি ক্লাসমেট? অধিকাংশ ই ছেলে ফ্রেন্ড। এদের সাথে তো কখনো মিশতে দেখেনি। তানভীর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। লাবিবার মতি গতি নড়ন চড়ন লাফালাফি পর্যবেক্ষণ করে। কী উচ্ছাস! এতো হাসি কোথায় পায় মেয়েটা? লাবিবা হাসতে হাসতে একবার এর উপর আরেকবার ওর উপর চেয়ার ছেড়ে ঢলে পড়ছে। পাগলী বউটার কর্মকাণ্ড দেখে তানভীর ও হাসে। কে যেনো বলেছিলো প্রিয় মানুষটার হাসি মুখটা দেখলেই মন খুশি হয়ে যায়। সত্যিই তাই। হাসি খুশি মুখটা হুট করেই নিভে যায়। ব্যপারটা সহ্য হয়না যেনো একফোঁটা। মজা করতে করতে একটা ছেলে লাবিবার উড়নায় হাত মুছে দেয়। শুধু লাবিবার না বন্ধুরা সবাই কারো না কারো উড়নায় হাত মুছে। এটা নিছকই সাধারণ ব্যপার। কিন্তু তানভীরের ভালো লাগে না।

ক্লাস শেষে যে যার মতো বাসায় চলে যায়। ইসমাইল আসার কথা। লাবিবাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু লাবিবা অনেক ক্ষন ওয়েট করার পরেও ইসমাইলের দেখা মেলে না। তানভীরের কাছেও যাবেনা। কিভাবে তাড়িয়ে দিলো। ছিহ! জামগাছের নিচটায় বাঁধানো জায়গায় বসে রইলো। একমনে ফেসবুকে ক্রল করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মুখ তুলতেই তানভীরকে দেখতে পেলো। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। তানভীর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আব্বু আসবে না। চলো। ‘
‘ ওহ। আচ্ছা আপনি যান। আমি চলে যেতে পারবো। ‘
তানভীর এক ভ্রু উপরে তুলে মুখে হালকা স্পাউট করলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
‘ একা বাসায় ফিরেছিলে কোন দিন? ‘
‘ সমস্যা নেই। আমি কাউকে ঢেকে নিবো। ‘
‘ কাকে?’
‘ ফ্রেন্ড কে। ‘
‘ এতো ফ্রেন্ড কেনো তোমার? উর্মিলা আর নাকিব ছাড়া কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখবেনা। ফ্রেন্ড থাকতে হলে তারা দুজনেই যথেষ্ট। ‘
‘ আচ্ছা তাহলে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙে দিবো। যাকে ভালো লাগবে তার সাথে প্রেম করবো। ‘
‘ থাপড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো। ইউ আর ম্যারিড। ভুলে যেও না। ‘
‘ কোথায় লেখা আছে যে ম্যারিড হলে প্রেম করা যাবে না? আপনিও করেন। আমি বাঁধা দিবো না। দুজনেই ইকুয়েল ইকুয়েল। নাইস না? ‘
‘ আ’ম য়্যুর হাজব্যান্ড লাবিবা। ‘
‘ তো কি হয়েছে? হাজবেন্ড কোনদিন প্রেমিক হয় নাকি? হাজব্যান্ড হলো পার্সোনাল ব্যাংক। ঝাড়া দিবেন টাকা ঝড়বে। প্রেম ঝড়বে না। ‘
‘ প্রেম লাগবে তোমার? ‘
‘ লাগবেই তো। আমাকে কি আপনার যুবতি মনে হয়না? কোনদিক থেকে আমার খুঁত আছে বলেন তো? হায়! আর কতো রাত একা থাকবো ___
আর কতো রাত একা থাকবো __’
‘ লাবিবা স্টপ। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছো। রাস্তা এটা। ‘
‘ সরি স্যার মাইন্ড করবেন না। আপনিও তো সিঙ্গেল। করবেন প্রেম আমার সাথে? আমার বুকের ভেতর কিন্তু জমে আছে দীর্ঘ বাইশ বছরের ভালোবাসা। ‘
তানভীর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে লাবিবার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। ডোর খুলে দিয়েই বলে,
‘ উঠো। আর একটা বাজে কথা না। ‘
লাবিবাকে ঠেলে তুলে দেয়। লাবিবা মুখ বাকায়। পুরোটা রাস্তা নিরব থাকে। মুখ খুলতে গিয়েও খুলতে পারেনা। তানভীরের কড়া চাহনিতে চুপসে যায়। কপালে আঙুল ঠেকিয়ে ভাবে এতো রেগে গেলো কেনো? আজ মনে হয় একটু বেশি কথাই বলে ফেলেছে। থাক আর কিছু বলবেনা। পেটে যে কথাটা গুড়গুড় করছে সেটাও তো চেপে রাখতে পারেনা। পাশ ঘুরে বসে তানভীরের দিকে। তানভীর ড্রাইভ করার সময় কয়েকবার লাবিবার দিকে তাকায়। মেয়েটা এক মনে যে তাকিয়ে আছে আর চোখ নামায় না। কি যে ভাবে কে জানে? তানভীর বুঝতে পারেনা। এভাবে তাকিয়ে থাকলে ঠিকমত ড্রাইভ ও করা যায়না। তানভীর মাঝপথেই গাড়ি থাকায়। লাবিবার দিকে ঘুরে বসে ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,
‘ আফসোস আমি তোমাকে এখনো এইভাবে দেখার সুযোগ পেলাম না। ‘
লাবিবাও তাড়াহুড়ো করে তানভীরের দিকে এগিয়ে বসে। মুখের উপর মুখ এনে বলে,
‘ স্যার আপনি যদি আমার বয়ফ্রেন্ড হোন আমি কিন্তু মোটেও মাইন্ড করবোনা। ‘
‘ কি ভাবো নিজেকে?’
‘ ভাবতেই তো চাই। আপনার বউ নামক প্রেমিকা দ্যা ওয়ান এন্ড ওনলি লাবিবা!’

চলবে __

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(২১)
‘ প্রপোজ করুন। ‘
‘ মানে?’
‘ এই ঘাসফুল গুলো দিয়ে আমাকে প্রপোজ করুন। আগে হাটু মুড়ে বসুন। তারপর কিছু একটা বলে প্রপোজ করুন। সুন্দর কথা বলবেন। ‘
‘ পাগল তুমি? এই রাস্তার মাঝে?’
‘ হুম। রাস্তার মাঝে প্রেমিকাকে প্রপোজ! কেমন একটা পাগল প্রেম প্রেম ভাইভ আসে না? আমি হবো সেই পাগল প্রেমিকের পাগলী প্রেমিকা। ‘
‘ তুমি ভীষণ ফিল্মি লাবিবা। সারাদিন মাথায় এসব ই ঘুরে তাহলে পড়াশোনাটা হয় কখন? ‘
‘ একটা সত্যি কথা বলি স্যার?’
‘ বলো। ‘
‘ আমার না সত্যি পড়তে মন চাইছেনা। আই মিন পারছিনা। যখনি পড়তে যাই দুই লাইন পড়ার মাঝেই মনে পড়ে যায় আমি এখন বিবাহিতা। আমার একজন অস্বামী রয়েছে। নিরামিষ! যে প্রেম কি জিনিস বুঝেই না। ভীষণ দুঃখ লাগে। আর পড়তে পারিনা। প্লিজ স্যার আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে যান আমি প্রমিজ মন দিয়ে পড়াশুনা করবো। একদমি গাফিলতি করবো না। ‘
‘ আমি!আমি তোমার কি হই? অস্বামী! তাইনা?’
‘ আপনি যে আমার স্বামী এটা তো স্বীকার ই করেননা। তাহলে কি হলো? স্বামী নামের অস্বামী তাইনা?’
‘ আমি কখন স্বীকার করলাম না? ‘
‘ করেন?তাহলে চলেন আমি সবাইকে জানাবো আপনি আপনি আমার হাজব্যান্ড। আপনাকে কিছু করতে হবেনা। শুধু মাথাটা নাড়িয়ে যাবেন। কি পারবেন না?’
‘ তারপর তুমি কোথায় থাকবে একবার ভেবে দেখেছো ময়নার মা? ‘
‘ কোথায়?’
‘ ইসমাইল আব্বুর বাড়ির ভেতর। বাইরের আলো বাতাস আর দেখতে হবেনা। ‘
‘ আপনি আমায় বন্ধি করে রাখবেন? ‘
‘ না। তুমি নিজেই বন্ধি হয়ে যাবে। আমাকে কিছুই করতে হবেনা। ‘
‘ আচ্ছা সমাজ কেনো একজন টিচার স্টুডেন্টকে এক হতে দেওয়া পছন্দ করেনা? টিচারদের ও তো বিয়ে করতে হবে। নিজ কলেজের না হলেও অন্য কলেজের হলেও ওরাও তো স্টুডেন্ট ই থাকবে।’
‘ সেটা সমাজের প্রব্লেম। আমার দেখার বিষয় না। ‘
‘ তাহলে কেনো আমাকে আপনি মর্যাদা দিতে চান না? আমি হয়তো আজ আপনার যোগ্য না। কিন্তু একদিন কি হতে পারবোনা? আমি কি দেখতে একটুও ভালো না?’
বড্ড আবেগের সাথে বলেই লাবিবা হুটহাট কেঁদে দেয়। তানভীর লাবিবার কান্নায় থতমত খেয়ে যায়। হাত ধরে টেনে নিজের পাশে এনে দাঁড় করায়। মাথায় হাত বুলায়।‌ থুতনি উঁচিয়ে মুখোমুখি করে।
‘ তাকাও।দেখি তাকাও আমার দিকে। ‘
লাবিবা অশ্রু চোখে তাকায়। তানভীর মুচকি হেসে চোখ মুছে দেয়।
‘ বলেছিনা এভাবে কখনো কান্না কাটি করে মুখ ফুলাবেনা। তোমার বিদ্ধস্ত মুখ আমার একদমি দেখতে ভালো লাগে না। ‘
‘ আপনার কথাই কি চলবে?’
‘ তাহলে কার কথায় চলবে মেডাম? কার কথা শুনতে চান আপনি? ‘
‘ নিজের কথা। ‘
‘ আপনি আর আমি কি আলাদা?’
‘ একটু তো প্রেম ই করেন না। আবার মিষ্টি মিষ্টি ভুজুং ভাজুং কথা!’
‘ করতেই হবে?’
‘ হুম। ‘
‘ তার আগে মনে রেখো আমি কিন্তু তোমাদের বয়স অনেক আগেই পাস করে আসছি। আবেগী প্রেম টেম আমার কাছে এখন ফিকে হয়ে গেছে। আমি বাস্তববাদী। সম্পত্তির দলিল ও আমার হাতে। দু তিন বছর ছাড় দিতে চেয়েছিলাম সেটা তো আর হতে দিচ্ছো না। আমি তোমাদের জেনারেশনের মতো প্রেম করতে পারবোনা। তার উপর তোমার সামনে এলেই আমার মনে পড়বে আমি তোমার হাজব্যান্ড কোন প্রেমিক যুবক নই। ‘
‘ আমার মনে থাকবে। আপনি নাহয় আপনার মতোই প্রেম করবেন। ‘
‘ পা কিন্তু তুমিই প্রথম বাড়াচ্ছো। আমি কিন্তু ফোর্স করছি না। ‘
‘ এভাবেও কি আপনি আমাকে কখনো ভালোবাসবেন না? অভ্যাস থেকেও তো ভালোবাসা জম্মে। নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর কাছাকাছি আসা যাবে না। আপনিও তো পা বাড়াবেন না। ‘
‘ কাছাকাছি আসতে চাও আমার? ‘
‘ হুম। যতোটা কাছে এলে আর কখ্খোনো দূরে সরে যাওয়া যায় না। ‘
‘ ভালোবাসো?’
‘ আপনি কোনদিন বাসবেন ভালো আমায়? ‘
প্রশ্নের পৃষ্ঠে প্রশ্ন। উত্তরটা ভীষণ দিতে ইচ্ছে করছে তানভীরের। লাবিবাকে বিচক্ষন ই মনে হচ্ছে। এই মেয়ে পিছপা হবার না। তাই নির্ধিধায় উত্তর জানিয়ে দেয়।
‘ তোমাকে আমার ভালো লাগে লাবিবা । ভীষণ ভালো লাগে। ‘
‘ শূধু ভালো লাগায় ভালো থাকার মানুষ তো আপনি না। সত্যি করে বলুন না কেনো বিয়ে করেছেন আমায়? ‘
‘ এখন অব্দি ভালো লাগার উর্ধ্বে রয়েছো তুমি। বিয়ে যেহেতু করতেই হবে তাই বিয়ে করে নিলাম তোমায়। ‘
‘ এই ভালো লাগার পতন ঘটতে কতক্ষন?’
‘ যতক্ষন আমি না চাইছি ঠিক ততক্ষন। ‘
লাবিবার চোখ আবারো ভরে আসে। কিন্তু তানভীর তো দ্বিতীয় বার সেই মুখ অবলোকন করবেনা। দীর্ঘ শ্বাসের সাথে বলে,
‘ হাহ! কি আর করার? চলো । সোজা দাঁড়াও। প্রপোজ করি তোমাকে। ‘
লাবিবাকে নিয়ে ফাঁকা রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নেয় কোন গাড়ি আসছে কিনা। সাইড দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর দু একটা বাইক চলে যায়। তানভীর ভাবতে থাকে কি বলে প্রপোজ করা যায় । আর লাবিবা তাকিয়ে থাকে তানভীরের দিকে। জল গড়িয়ে পড়ে দু গালের উপরে। তানভীর লাবিবার হাত ছেড়ে হাঁটু গেড়ে বসে। ঘাসফুল গুলো বাম হাত থেকে ডান হাতের মুঠোয় পুরে। লাবিবার দিকে এগিয়ে দেয়। দম ছেড়ে বলে,
‘ আমি ভীষণ টিপটাপ গোছানো প্রাণহীন একটা জীবনের মানুষ। আমার জীবনটা অগোছালো করে প্রাণ ফিরিয়ে এনে দিবে কি তুমি? আমার হাতে হাত রেখে প্রিয় শ্বাস ফেলবে লাবি পাখি? 💙’

তানভীরের আবেগ মেশানো কাতর স্বরের বাক্য গুলো অন্তস্থ করে ফুল গুলো হাতে নিয়ে নেয় লাবিবা। তানভীরের হাতের উপর হাত রেখে ছোট্ট আওয়াজ করে, ‘ উঠুন ‌’। তানভীর মৃদু হাসে। উঠে দাঁড়ায় লাবিবার সামনে। লাবিবা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। থুতনি ধরে মুখ ঘুরিয়ে মুখোমুখি হয় তানভীর। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ নাউ য়্যা য়্যু হ্যাপি? ‘
লাবিবা মাথা নাড়ায়। সে হ্যাপি। তানভীর খানের জীবনে নিজের জায়গাটা যে বেশ নড়বড়ে সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। বুঝ হয়েছে থেকে যে মেয়েটা সব সময় ভাবতো তার জন্য এক রাজকুমার আসবে আর পৃথিবীর যে কোনো মূল্যে তাকে তুলে নিয়ে যাবে সমস্ত সুখ পায়ের কাছে এনে রাখবে আজ সেই মেয়েটাই ভীষণ ইনসিকিউর ফিল করছে। এভাবে সে কখনোই চায়নি। তানভীর খান তার কাছে রুপকথার ই এক রাজপুত্র। কিন্তু সেই রাজা তাকে ভালোবাসে বলেনি। একটা পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েছে বিয়ে করতে। সেই বিয়ের কোনো পরবর্তী পদক্ষেপ নেই। যে আছে যার মতো। যে কোনো মুহূর্তে দূরত্বটুকু আরো প্রসস্ত হতে পারে। সবটাই তানভীরের হাতে। তানভীরকে লাবিবা কিভাবে বাঁধবে? লাবিবা কি তানভীর কে চেয়েছিলো? চায়নি তো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাঁকে খুশি হয়ে এমন মূল্যবান উপহার টা দিয়ে দিলো। লাবিবা কি পারবে ভালোবেসে যত্নে উপহার টি ধরে রাখতে? নাকি কালিমা পড়বে নিজ গায়ে? আজ না চাক সময়ের অপেক্ষায় তো সকল দিওয়ানাকে পিছু হটিয়ে স্বামীর পথ পানেই চোখ রেখেছিলো। দিন শেষে সুপুরুষের বুকের ফুল হয়ে ফোঁটার অপেক্ষায় ছিলো। এখন যদি সেই সুপুরুষ কে পেয়েও কলির আকার ধারণ না করতে পারে ফুল হয়ে ফোঁটা সপ্ন তার এখানেই মরে যাবে। এই ধাক্কা সামলে উঠতে নাও পারে। চায়ও না ধাক্কা খেতে। তানভীর খানের প্রতি যে সে অতি মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ছে এটা সে বেশ বুঝতে পারছে। তিন কবুলের স্বামী তার! কিভাবে তাকে ছাড়া থাকবে? লাবিবার খুব বলতে ইচ্ছে করে। ‘ আপনার কি আমার প্রতি একটুও মায়া হয়না স্যার? দেখুন আমি আপনার চিন্তায় শুকিয়ে গেছি। আমার গাল দুটো যদি শুকিয়ে যায় তাহলে শত কাদলেও তো আর ফোলো ফোলো হবে না। তখন আমি শুনবো কিভাবে তোমার বিদ্ধস্ত মুখ আমার একদমি দেখতে ভালো লাগে না বাক্যটা!’ কতটা কেয়ার জমে থাকে বাক্যটায় তা কি লাবিবা বুঝেনা? এই কেয়ার টুকু লাবিবার ভীষণ প্রিয়। প্রিয় জিনিস কখনো হারাতে হয়না। কিন্তু লাবিবা বলবেনা। আত্মসম্মান বলতেও কিছু একটা আছে। এমনিতেই ছেচড়ার মতো অনেক ভাবেই নিজেকে ছোট করেছে। আর করতে ইচ্ছে হয়না।

এক পা দুই পা করে ফাহাদের দিকে এগিয়ে আসে লাবিবা। ছেলেটা কয়েকদিন থেকে ই কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু পেরে উঠছেনা। কেউ না কেউ লাবিবার সাথে থাকেই। আজ কেউ নেই। লাবিবাই একটু আগেই কলেজ থেকে বেরিয়েছে। ফাহাদের সাথেই কথা বলতে। লাবিবার মনে হয়েছে ফাহাদের সাথে কথা বলা উচিত। সে কি বলতে চায় শুনা উচিত। তার কথা শুনেই তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যেনো আর এভাবে না আসে। নয়তো দেখা যাবে আব্বু ভাইয়ের কারো চোখে পড়বে তারপর আরো একটা ঝামেলা সৃষ্টি হবে। এমনিতেই তাদের উপর রেগে বোম হয়ে আছে।

ফাহাদ লাবিবাকে দেখেই প্রানবন্ত হাসে। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
‘ কেমন আছো?’
‘ ক্যাম্পাসের বাইরে চলো। ‘
দুজনে বেরিয়ে দুটো বিশাল বিল্ডিং এর মাঝে গলিতে দাঁড়ায়। লাবিবা ঝাঁঝালো গলায় বলে,
‘ আপনি জানেন না আমার বিয়ে হয়ে গেছে? ছেচড়ার মতো এখনো কেনো পিছু লেগে আছেন?নাকি স্যারের হাতে সেদিনকার মতো আবার ঘাড় ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করছে?’
‘ আই লাভ য়্যু লাবিবা। ‘
ফাহাদের সোজা সাপ্টা উত্তর। লাবিবার রাগ হলেও চুপ থাকে। ভেবে পায়না এতো কিছুর পর কিভাবে এই কথাটা মুখ থেকে উচ্চারণ করতে পারে?
‘ আপনি আমাকে ভালোবাসলে কখনোই ঐভাবে চলে যেতে পারতেন না। ‘
‘ আমি ভুল ছিলাম লাবিবা। তুমি পবিত্র আমার মনে রাখা উচিত ছিলো। ওসব পিক তো ইডিট করেও আজকাল করা যায়। আমার মাথাতে ছিলোনা। ‘
‘ কিন্তু পিক গুলো তো এডিট না। সত্যি। ‘
‘ আমাকে আর বোকা বানিও না লাবিবা। আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা। খেতে পারিনা, ঘুমাতে পারিনা, কাজে মন বসাতে পারিনা। আমি তোমাকে ভালোবাসি লাবিবা। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। ‘
‘ মুখস্থ ডায়লগ। এসব কোনো ব্যপার না। বয়সের দোষ। একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেন। একটা রাত কাটতেই বলবেন লাবিবা কে? লাবিবাকে চিনিনা। ছেলে মানুষের ওসব আমার জানা আছে। আমি বিবাহিত। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। ‘
‘ আমি মানিনা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে চাই লাবিবা। সব কিছুর জন্য ক্ষমা করে দাও। আমার ফ্যামিলির কথা মনে রেখো না। প্লিজ। আমাকে ফিরিয়ে দিও না।’
‘ টাকা চান। টাকা দিতে পারবো। আমার হাজব্যান্ড এর অনেক টাকা। খালি হাতে ফেরত যাবেন না। আর আপনাদের কথা কিছু মনে রাখেনি। আপনারা যা করেছেন ঠিক করেছেন। আসলে আমি নিজেই আমার বিয়েটা ভেঙেছি। আপনাকে তো বলেছিলাম আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। ‘
‘ তাহলে তানভীর খানকে বিয়ে করলে কেনো? ‘
‘ উনিই আমার বয়ফ্রেন্ড। ‘
মিথ্যা কথাটা বলতে গলা আঁটকে যাচ্ছিলো লাবিবার। কোনো মতে বলে দিলো। পরক্ষনেই মনে পড়লো সত্যিই তো উনি বয়ফ্রেন্ড। প্রপোজ ও করেছে। আগে হোক বা পরে। তাহলে কিসের মিথ্যে? ঠোঁট এলিয়ে হাসলো লাবিবা। ফাহাদ মেনে নিতে পারলো না। শক্ত হয়ে বললো,
‘ আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। তানভীর খানের ফিটনেস দেখে এক মাইল দূর থেকেও বলে দেওয়া যায় আর পিকের লোকটা তানভীর খান মোটেও না। ‘
‘ পরকিয়া করছি। ‘
‘ কিহ?’
ফাহাদ হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলছে লাবিবা?
‘ হ্যা। পরকিয়া। ছিহ! দেখুন তো কতো খারাপ মেয়ে আমি! খবরদার আমার হাজব্যান্ড কে কিন্তু মোটেও বলবেন না। ইটস্ সিক্রেট! তাইনা?’
ফাহাদ কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। লাবিবার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে,
‘ প্লিজ ! আমার সাথে আর হেয়ালি করে না। লাবিবা প্লিজ তুমি আমার কাছে ফিরে আসো। আমি কথা দিচ্ছি পৃথিবীর সব সুখ আমি তোমাকে দেবো। কারো কথা মানবোনা। ‘
‘ কিন্তু তানভীর খান তো তার বউকে ছাড়বেনা। অনেক ভালোবাসে কিনা!’
‘ মিথ্যার আশ্রয় আর কতো নিবে বলোতো? আমি ভালো করেই জানি উনি তোমাকে বউ হিসেবে স্বীকার করে না। তোমাদের মধ্যে কোনো গাঢ় সম্পর্ক নেই। তুমি ফুললি আনটাচড। ‘
‘ বিশ্বাস করুন আমার কথা। আমাদের মধ্যে ভালো বাসা বাসি হয়ে গেছে। একটুও মিথ্যা না।’
‘ কিছুই হয়নি। তুমি এখনো আগের মতোই আছো। প্লিজ আমার কাছে চলে আসো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। ‘
‘ কিন্তু আমি যে তানভীর খান কে ছাড়া বাঁচবো না! আপনার কাছে গেলে পরকিয়া করতে দিবেন? তানভীর খানের সাথে পরকিয়া !’
‘ মাথা খারাপ তোমার? ঐরকম লো ক্যারেক্টারের ছেলে আমি না। আর তোমার ঐ তানভীর খান? তার কির্তী তো তুমি জানোই না। তাকে সপ্নে দেখা বাদ রাখো। সে তোমার যোগ্য না। নিজের ভাইয়ের বউ য়ের প্রতি যে খারাপ নজর ফেলে সে কখনোই তোমাকে ডিজার্ব করেনা। ‘
‘ কি বলছেন এসব আপনি?’
‘ বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো। তুমি তো দেখছি তোমার হাজব্যান্ড এর সম্পর্কে কিছুই জানো না। ‘
ফাহাদের কথা শুনে লাবিবার মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়। কালো ছায়া নেমে আসে মন আকাশে। সেটানেই বসে পড়ে মাথা নিচু করে। ফাহাদ ও দুঃখিত মুখ করে তাকায়। শান্তনা দেয়।
‘ দেখো লাবিবা তোমার হয়তো কষ্ট হচ্ছে কথাটা শুনে। কিন্তু এটা সত্যি। আমি মিথ্যা বলছিনা। ‘
লাবিবা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে। নাকে টেনে বলে,
‘ এর জন্যই উনি আমাকে ভালোবাসেন না। আমি এখন কি করবো? কিভাবে উনাকে ধরে রাখবো? ঐ ফাহাদের বাচ্চা ফাহাদ! আমার উনি কে ধরে রাখার উপায় বলে দে না! ‘
‘ লাবিবা প্লিজ তুমি কেঁদো না। ঐ শয়তান লোকটার কথা ভুলে যাও। ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমরা দুজনে নতুন সংসার পাতবো। আমার কাছে চলে আসো লাবিবা। ‘
‘ ঐ ফাহাইদ্দা যা তো তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা। আমার খান সাহেব কে কিভাবে আমার কাছে রাখবো উপায় বলে দে না!’
লাবিবা উঠে দৌড় দেয়। ফাহাদও পিছনে দৌড়ায়। লাবিবার নাগাল পায় না। লাবিবা কলেজে ঢুকেই তানভীর কে খুঁজতে থাকে। কোথাও পায়না। প্রায় দশমিনিট খোঁজার পর দেখতে পায়। তানভীর টুপি মাথায়। মসজিদ থেকে যুহর আদায় শেষে বেরিয়ে এসেছে। লাবিবা দিক বেদিক না ভেবেই দৌড়ে গিয়ে তানভীরের বুকে ঝাপায়। আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে কানের কাছে বিরবির করে,
‘ খান সাহেব! বউ ই তো হই। একটু জড়িয়ে ধরে থাকি। প্লিজ বকবেন না। ‘

চলবে ___