ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -০৯
#লিখা – নীলকন্ঠী
.
রাহেলা বেগমের রুমে এসে রাফান সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে। রাহেলা বেগম রাতের সব কাজ গুছিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখলো চিন্তিত ভংগীতে রাফান দাঁড়িয়ে। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করলো বাবা কি কিছু বলবি?
রাফান এসে রাহেলা বেগমের কাছে বসে বলল, ”
খালামনি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে?”
রাহেলা বেগমের ভিতর টা ভীষণ মোঁচড়াতে লাগলো! এই ছেলে টা কোন দিন ও আবদার করেনি ।
রাফান তার খালা মনির হাত ধরে বলতে লাগলো খালা মনি রুহি কে আমার চাই।
এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় রাহেলা বেগম। হাত দুই টা ছাড়াতে চাইলেও পারে না, রাফান আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে খালা মনি প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো। রুহি ছোটবেলা থেকে আমার সাথে বড় হয়েছে। আমি যত টুকু বুঝি ওকে আর কেউ ওকে এভাবে বুঝবে না। আমি খুব খুব সুখে রাখবো। শুধু তুমি হ্যা বলো। আমি ওকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবো। কেউ জানবে না। শুধু তুমি অনুমতি দাও। প্লিজ।
“রাফান “বলে চোখ মুখ শক্ত করে ধমকে উঠে রাহেলা বেগম। হাত ঝেড়ে সরিয়ে নিলেন।
–তুই আমার ছেলে রাফান। এসব বলার আগে একবার ও ভাবলি না, আমি কত টুকু কষ্ট পাবো। আর রুহির কথা একবার ভাব ওতো আদি কে ভালোবাসে, ভীষণ ভালো বাসে। প্রথম দিকে আমি ও ভেবেছিলাম কি করলাম এটা!!! কিন্তু এবার আদির চোখে আমি রুহির জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
রাফান জানালার দিকে স্থির দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। রাহেলা বেগম বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে। কিন্তু এসবের কিছুই রাফানের কানে ঢুকছে না। তার শুধুই মনে হচ্ছে এ জীবন টাই বৃথা, না বাবা মায়ের আদর পেলাম, জীবন থেকে রুহি কে হারালাম। আর এখন খালা মনি ও আমাকে বুঝলো না। কথা শেষ হওয়ার আগেই রাফান রুম ত্যাগ করলো। রাহেলা বেগম এক রাশ হতাশা বুকে নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
দিন যাচ্ছে, রুহিকে তুলে নেয়ার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাহেলা বেগমের হাত পা যেন অচল হয়ে আসছে। একা হাতে সব সামলাচ্ছে এই সংসার টাকে প্রায় ১৬ বছর। মেয়ে কে বিদায় দিয়ে এক দম একা হয়ে যাবে । আর রাফানের কথা ভাবতেই বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরোয়।
রুহি কলেজ থেকেই ফিরছিলো। মাঝ পথে রাফানের সাথে দেখা। রিকশায় উঠেই রুহি খেয়াল করলো বাসার পথে রিকশা যাচ্ছে না ।
–“কোথায় যাচ্ছি আমরা? “কোন আন্সার পাচ্ছিলো না রুহি
–আবার জিজ্ঞাসা করতেই রাফান স্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই বলল আমার সাথে যেতে তোর প্রব্লেম আছে?
–না না তা আমি বলিনি। মানে এখনো অনেক শপিং বাকি। আগামী কালকেই তো গায়ে হলুদ। আমরা এখন অন্য কোথাও গেলে শপিং এর টাইম পাবো না ।
জবাবে এবার ও রাফান কিচ্ছু বলল না।
–আম্মু কে বলেছো তুমি যে আমাকে নিতে এসেছো?
এবার ও রাফান নিশ্চুপ হয়ে রইলো।
রুহি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে যেই ডায়াল করার জন্য তৈরি হলো রাফান সাথে সাথে ই ফোন টা কেড়ে নিলো। ফোন টা সুইচ অফ করতে এক মুহুর্ত ও সময় নিলো না রাফান।
এবার রুহি বেশ ভয় পেলো। কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলো না। রিকশা এসে থামলো রাফানের বাবার পুরাতন ফ্ল্যাটের সামনে। এখানে কেউ থাকেনা। বাবা মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলে এটা বিক্রি বা ভাড়া দেয়ার চিন্তা করে না রাফান।
রুহি কে এক প্রকার টানতে টানতেই ভিতরে নিয়ে গেলো সে। একটা বড় রুমে এনে রুহি কে দাঁড় করালো।
–এসব কি ভাইয়া। আমরা এখানে কেন?
–এখন থেকে এখানেই থাকবি। আর এক কদম এখান থেকে নড়ার চিন্তা করবি না। করলে ফলাফল ভালো হবে না।
রুহি স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার সবচেয়ে ভরসার জায়গা যেখানে সেখানেই ভয় কাজ করছে ।
–তুমি এসব কেন করছো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
–কিছুই বুঝিস না? সত্যি কিছুই বুঝিস না? এতো ন্যাকা কিভাবে সাজিস? আমি যে তোকে ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসি তুই বুঝিস না? কথা গুলো বলতে বলতে রুহির দিকে এগুতে লাগলো রাফান। ভয় আর আতঙ্কে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। কি বলছে কি এসব!
–তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না ভাইয়া।
–কেন? কেন পারিনা। জিদ দেখিয়ে জোর করে যদি তুই আদি কে নিজের করতে পারিস, তাহলে আমি কেন জোর করে তোকে নিজের করতে পারবো না?
–এটা অন্যায়, আমি এখন আদির ওয়াইফ ভাইয়া। আর তুমি তো কখনো বলো নি যে আমাকে ভালোবাসো। তুমি তো বিদেশে চলে গেছো। খোঁজ ও নাও নি ঠিক ঠাক। আমি তোমার মনের খবর কিভাবে বুঝবো?? আর তোমাকে নিয়ে আমি কখনো এমন কল্পনাই করিনি।
লাথি মেরে সামনের চেয়ার টা ফেলে দিয়ে রুহির মুখ চেপে ধরলো রাফান ।
–আগে কি হয়েছে না হয়েছে সব ভুলে যা। আমি এখন তোকে বলছি আমি তোকে ভালবাসি। আর তোকে আমার চাই ই চাই। জীবন থেকে অনেক হারিয়েছি আর হারাতে চাইনা।
–তুমি আমাকে হারিয়েই ফেলেছো ভাইয়া, আজকের পর থেকে কখনো এই আশা ই রাখবে না যে আমি তোমার জীবনে না কাজিন হিসেবে না ভালো বন্ধু হিসেবে না ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তো না ই, কোন ভাবে থাকবো।
রাফান রুহিকে ছেড়ে দিয়ে সজোরে দরজা লাগিয়ে বের হয়ে এলো। একি হলো!! রাফানের এমন আচরণে রুহি কি করবে কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না। তার জীবনের মোড় কোন দিকে যাচ্ছে! আদি কি তাকে বুঝতে পারবে? আদি কি তাকে খুঁজবে? আর আম্মু? রাফান এর এই ক্রোধ সব গুলো মানুষ কে কষ্ট দিবে। হয়ত সারা জীবন এই কষ্টের বোঝা বইতে হবে।
চলবে…..