#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana
একটা বড় মলের সামনে রিকশা থামে। ভার্সিটি থেকে খুব বেশি দুরে না মল টা। দশ মিনিটের পথ। রিকশা থামতেই নিশি নেমে যায় তানহাকে নামার ইশারা করে। নিশি নেমেই হাঁটা শুরু করে। তানহা একশ টাকার নোট বের করে রিকসাওয়ালাকে দেয়।
“আশিক ভাইজান ভাড়া দিয়ে দিছে
বলেই রিকশা নিয়ে চলে যায়।
” হায় রে ভালোবাসা। আজ একটা বফ নাই বলে
তানহা নিশিকে অনুসরণ করে যায়। তিন তালায় এসে ডান দিকে যায় ওরা। সেখানে বড় করে লেখা “কাজি ফাস্টফুড”
“এখানে কেনো আসলে?
তানহা হাঁটা থামিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” আশিক আসতে বললো
বলে তানহার হাত ধরে ভেতরে ঢোকে। ফাস্ট ফুটে কয়েকজন মানুষ। একদম কর্নারে অভি পায়েল ইরা বসে গল্প করছে আর কিছু খাচ্ছে। নিশি আর তানহা ওদের সামনে যায়।
“আরে নিশি যে বসো
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি। নিশি মিষ্টি হেসে বসে।
” এই মেয়েটা কে?
পায়েল জিজ্ঞেস করে।
“আমার ফ্রেন্ড।
” সিঙ্গেল না মিঙ্গেল? সিঙ্গেল হলে চান্স নিতাম। মাথা চুলকে বলে অভি। তানহা কটমট চোখ তাকায়। পায়েল অভির পিঠে একটা চাটি মারে
“একদম অন্য মেয়ের দিকে তাকাবি না।
” মারোস কেন?
পায়েলের হাত ধরে বলে অভি।
“তাহলে তুই বললি কেন চান্স নিবি
অভিমানের সুরে বলে পায়েল।
” আরে আপু রিলাক্স। চান্স নিতে চাইলেই কি তানহা চান্স দেবে না কি? এরকম ছ্যাচড়া লুচু টাইপের ছেলেদের তানহা ইসলাম পাত্তা দেয় না।
চুল ঠিক করে ভাব নিয়ে বলে তানহা। এতেও পায়েল রেগে যায়।
“তুমি আমার বফকে লুচু একদম বলবে না।
” ও মা এটা আপনার বফ
তানহা দাঁড়িয়ে গিয়ে জোরে বলে। অভি সহ সবাই কেঁপে ওঠে।
“কি হলো? নিশি জিজ্ঞেস করে। তানহা ঠোঁট মেলে হেসে বসে পড়ে। অভি তানহার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে।
” হুমম আমার বফ। অভির হাত ধরে বলে।
” ভেরি নাইস কাপল। তানহা বলে। পায়েল লাজুক হাসে। অভি কিছুই বলছে না।
“এতো কিউট বফ। আপু আপনি ওনাকে বোরকা পড়িয়ে রাইখেন।
” আমিই আমার বফের বোরকা। আমি সাথে থাকলে কেউ ওর দিকে তাকানোরও সাহস পায় না।
“ওহহহ গুড
আশিক চলে আসে। নিশিকে নিয়ে আলাদা জায়গায় বসে। তানহা অভিদের ওখানে থেকে উঠে অন্য ছিটে গিয়ে বসে। পায়েল অভির হাতের ভাজে হাত দিয়ে বসে ছিলো। তানহা চলে যেতেই অভি হাত সরিয়ে নেয়। অভি ওয়েটারকে ডেকে তানহাকে খাবার দিতে বলে। আর ওয়েটারকে বলতে বলে আশিক দিছে।
ওয়েটার তানহাকে চাওমিন এনে দেয়। আশিকের নাম বলাতে তানহা খেতে থাকে। এমনিতেই প্রচন্ড খিদে ছিলো তাই আর বিলম্ব না করেই খাওয়া শুরু করে।
“অভি
পায়েল ডাকে।
” হুমমম বল। তানহার দিকে তাকিয়েই বলে।
“ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ইরা চোখ পাকিয়ে বলে।
” কি বিশ্রী দেখতে মেয়েটা তাই দেখছি। তানহাকে শুনিয়ে বলে অভি। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে তানহা।
“তোর চোখ দুটো অলওয়েজ পায়ের দিকে রাখবি। আদেশের সুরে বলে ইরা।
” পায়েলকে হট হট দেখালে তো ওর দিকেই তাকিয়ে থাকতাম।
তানহার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলে অভি। তানহা হাত দিয়ে মার দেখায়।
“কি লুচু রে বাবা, গার্লফ্রেন্ডকে হট সাজতে বলছে। ছি আমাকে এরকম বললে মাথা ফাটিয়ে ফেলতাম। ধুর কি ভাবছি আমাকে কেনো বলবে?
নিজের মাথায় চাটি মেরে মনে মনে বলে তানহা।
” যা তা তুই অভি। রাগ দেখিয়ে বলে পায়েল।
“বেবি রাগ করো কেন?
আদুরি গলায় বলে অভি।
” ইসসসস ঢং দেখে বাঁচি না। বেবি
মুখ ভেংচি দিয়ে বলে তানহা।
“এই মেয়ে তুমি আমাকে কিস ছুঁড়ে দিলে কেনো?
অভির এরকম কথায় পায়েল ইরা সহ তানহাও ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
” কে তোকে কিস ছুঁড়ে দিলো? পায়েল এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে।
“ওই মেয়েটা
তানহার দিকে ইশারা করে বলে।
পায়েল চোখ পাকিয়ে তাকায়। তানহার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।
” এক্সকিউজমি আমি কখন আপনাকে কিস করলাম?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
অভি তানহার সামনে এসে বসে।
“এই তো এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ড আগে।
” আমি আপনাকে কিস করি নি।
চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে বলে তানহা।
“আমি নিজে চোখে দেখছি তুমি কিস ছুঁড়ে দিছো। একদম আমার ঠোঁটে এসে লাগছে। তোমার বিশ্রী ঠোঁটের কিস আমার একদম পছন্দ না। ইয়াক
” আমি কিস করি নি।ভেংচি দিছি
কিছুটা চেচিয়ে বলে তানহা।
“আমাকে তুমি ভেংচি আর কিসের মধ্যে পার্থক্য বোঝাও? আমি বুঝি। তুমি কিস করছো আমাকে।
জোর গলায় বলে অভি।
তানহা অভির কলার চেপে ধরে।
” আমি তোকে কিস করি নি। তোর মতো লুআু বদের হাড্ডি ছেলে কে কিস করতে আমার বইয়েই গেছে।
ধাক্কা দিয়ে অভিকে সরিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় তানহা। অভি প্রশান্তির হাসি হাসে।
“কুছ কুছ হতাহে
তানহা ফাস্টফুট থেকে বেরিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলছে। কোন দিন দিয়ে যাবে ভাবতে পারছে না। আসার সময় হাজারটা চিন্তা মাথায় নিয়ে এসেছে ঠিক মতো পথ খেয়াল করা হয় নি। এবার যাবে কি করে? ভেতরে ফিরে গেলে সবাই হাসাহাসি করবে তানহাকে নিয়ে। একদম সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। তখন এক ঝাঁক ছেলে মেলে ফাস্টফুডে ঢোকে। সবাই বলাবলি করছিলো অভির গান শুনবে। সিঁড়ির কাছ থেকে একদম ভেতরের সব কিছু স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। সিকিউরিটি গার্ড তানহাকে একটা চেয়ার এনে দেয়। কেনো দিলো জানে না তানহা। জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়েই চলে যায়। ভাড়ি অদ্ভুত।
সবাই অভিকে জোরাজোরি করছে গান গাওয়ার জন্য। একটা ছেলে দৌড়ে গিটার এনে দেয়। অভি ফাস্টফুডের দরজার কাছে এসে দেখে যায় তানহা চেয়ারে বসে আছে।
” এই গানটা আমার প্রতি মানুষকে ডেডিকেট করে গাওয়ার
” কি করে বলি
কতোটা ভালোবাসি আমি তোমাকে
এই দিন গুলি
কি করে থাকি বলো একা এভাবে
এ মুহুর্ত কাটে না
নিশ্ব তুমি হীনা
পেতে চায় তোমারই ছোঁয়া
ধোঁয়া এ শহরে
গিটার বাজাতে বাজাতে গান গায় অভি।
সবাই হাত তালিতে চারপাশ গম গম করছে। তানহাকে মন দিয়ে গান শুনছিলো।
“ও রে ভাব রে। এমন ভাব ধরছে মন হয় পুরো এটিটিউটেট বস্তা।
বিরবির করে বলে তানহা।
সবাই অভিকে বাহবা দিচ্ছে। জানতে চাইছে প্রিয় মানুষটা কে? অভি সিকরেট বলে চোখ চশমা পড়তে পড়তে বের হয়।
” তুমি এখানে?
চশমা খুলে বলে তানহাকে।
“এখানে দারোয়ানের চাকরি নিয়েছো না কি?
” তোর মাথা ফাটানোর জন্য বসে আছি
“এখানে আমার ফ্যানদের দেখছো? আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তোমার কি অবস্থা করবে ভাবতে পারছো?
এটিটিউট নিয়ে বলে অভি। তখনই কয়েকটা ছেলে বলে
” বড় ভাই কোনো পবলেম? এই মেয়ে কিছু বলেছে? এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না
অভি ওদের শান্ত করে বলে
“ইটস ওকে কিছু হয় নি। তোমরা যাও
ছেলে দুটো চলে যায়। অভি এটিটিউটের বস্তাকে দেখছে।
” দেখলে? ভাব দেখিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে
“দেখলাম। আল্লাহ আমারে তুইলা নাও এই ছেলেটার ভাব দেখতে দেখতে আমি প্রায় শেষ
বিরবির করে বলে তানহা।
” তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো। খালাতো বোন বলে কথা।
“তানহা ইসলাম কারো সাহায্য নেয় না😎
হাঁটা শুরু করে তানহা। যে গলি দিয়ে বেরোতে হবে তার উল্টো গলিতে যায়। অভি পেঋন পেছন যায় দেখার জন্য। হাঁটতে হাঁটছে মলের শেষ প্রান্তে চলে যায় কিন্তু বেরোনের রাস্তা খুঁজে পায় না। বিরক্ত হয়ে যায় তানহা।
” ধুর কেনো যে ওই মেয়েটার সাথে আসতে গেলাম
নিজের কপালে নিজে চড় মেরে বলে তানহা।
“এই যে মিস খালাতো বোন ওদিকে বেরেনোর রাস্তা।
সামনের সিঁড়ির দিকে ইশারা করে বলে অভি।
” আমি জানতাম আপনাকে বলতে বলি নি😏
“ভাঙবে তবুও মচকাবে না।
মলের বাইরে এসে তানহা জোরে শ্বাস নেয়। এতোখন টেনশনে ছিলো বেড়োতে পারবে কি না। একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে চলে যায়। অভি তানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
অভির ফোন বেজে ওঠে স্কিনে তানহার বাবার নামটা ভেসে ওঠে। রিসিভ করে কানে
” তুমি না কি আমার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছো?
গম্ভীর সুরে বলে।
“হুমম করেছি। কেনো? আমি কিন্তু আবিরের মতো না। আবির আপনার আশ্রিত তাই কায়দা করে আবিরের সাথে তানহার বিয়েটা ভেঙে দিয়েছেন। আমি সাকসেসফুল। আপনার তো আপত্তি থাকার কথা না।
” আপত্তি আছে। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তুমি ওকে বিয়ে করতে পারো না।
তেজে বলে তিনি।
“আমি কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে এসেছি। ফিরে গিয়ে তানহাকে নিয়ে আসবো।
“আমি আবির না যে আপনার কথায় উঠবো বসবো।
” তোমাকে উঠতে বসতে বলছি না। আমার মেয়েকে আমি নিয়ে আসবো। তুমি ওকে জোর করতে পারো না।
অভি ফোন কেটে দেয়। ওনার সাথে ফালতু কথা বলে লাভ নাই। প্রত্যেকটা বাবাই চায় তার মেয়ের তার সাথে বেশি উপার্জন করা ছেলের সাথে বিয়ে হবে। উনিও তাই স্বপ্ন দেখছো। তবুও অভির ওনাকে ভালো লাগে না।
তানহা বাসায় এসে সাওয়ার অন করে বসে। অনেকদিন বাবার সাথে কথা হয় না। মায়ের সাথেও তেমন কথা বলা হয় না। আজ তানহা ঠিক করে নেয় বাবার সাথে কথা বলবে। যাই করুক বাবা তো। পৃথিবীতে বাবা মায়ের থেকে কেউ বেশি ভালোবাসে না। সব থেকে বড় কথা হলো ভালোবাসলেই বিয়ে করতে হবে এমনটা নয়। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। এখন সময় সবটা ঠিক করার। ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহা।
সাওয়ার শেষে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে বাইরে এসে দেখে অভি মাথার চুল টানছে। তানহা ভ্রু কুচকে তাকায়।
“পায়েল ছ্যাকা দিছে না কি? জিজ্ঞেস করে তানহা।
“যা মনে করো।
তানহা এক গাল হাসে।
” এবার আপনি গান গান
“হাতে আমার নেশার বোতল চোহ্মু দুইটা লাল
কার ঠোঁটের আজ পরশ পাইয়া হয় প্রিয়ার সকাল
যদিও আপনার প্রিয়ার এখনো বিয়ে হয় নাই। তবে বিয়ের পরে এই গানটা গাইবেন। তাছাড়া গগন সাকিবের সাথে নেশার নৌকায় চরে চান্দের দেশেও যেতে পারেন।
” খুব মজা হচ্ছে না?
উঠে দাঁড়িয়ে বলে অভি।
“তানহা তুই পালা এবার
মনে মনে বলে তানহা দৌড় দিতে যায়।
চলবে।