ভালোবাসি তাই পর্ব-৪৯ এবং শেষ পর্ব

0
1940

#ভালোবাসি তাই
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana

গালে হাত দিয়ে ডাক্তারের সামনপ বসে আছে তানহা। শাশুড়ী ডাক্তারের সাথে হেসেহেসে কথা বলছে। ওটা কি কথা বলছে সেদিকে খেয়াল নেই তানহার। তানহা ভেবে যাচ্ছে যদি ডাক্তার নেগেটিভ বলে তাহলে ও কি করবে?
“তানহা
শাশুড়ীর ডাকে তানহা ছলছল চোখে তাকায় শাশুড়ীর দিকে।
” হুম
চোখ নামিয়ে বলে তানহা।
“মুড অফ কেনো?
তানহার কাঁধে হাত রেখে বলে।
” এমনি
“তুমি কি জানো আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আছে?
তানহা শাশুড়ীর দিকে না তাকিয়ে বলে।
” অনিক ভাইয়া বিয়ে করছে বুঝি?
“নাহহহ পিচ্চি আসছে।
” আপনি প্রেগন্যান্ট?
ফট করে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে বলে তানহা। শাশুড়ী ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
“আমি কেনো প্রেগন্যান্ট হবো? তুই প্রেগন্যান্ট।
” কিহহহহহহহ
তানহা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে।
“আরে আস্তে।
” এটা কি করে পসিবল? আমার তো বমি হয় না আমি তো দিব্যি খেতে পারি?
“অনেকেরই এরকম পবলেম হয় না।
” ডাক্তার আংকেল বললে আমি বিশ্বাস করবো। তুমি তো মিথ্যেও বলতে পারো।
ডাক্তার বলে
“তোমার শাশুড়ী সত্যি কথাই বলছে।
তানহা খুশিতে নাচতে থাকে। যাক বাবা অবশেষে জুনিয়র নেইমার আসছে।
শাশুড়ী তানহার হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
” কি করছিস ডাক্তারের সামনে।
ফিসফিস করে বলে। তানহা দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।
“সরি সরি

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে তানহা সবাইকে বলছে ও প্রেগন্যান্ট। শাশুড়ী বলে বলেও থামাতে পারছে না।

বাড়িতে এসে শুধু খেয়েই যাচ্ছে। যাতে বেবি গোলুমলু হয়। রোগা বেবি একদম ভালো লাগে না শাশুড়ীও এটা ওটা বানিয়ে দিচ্ছে। তানহা অভিকে ফোন করে বলে চটপটি ফুসকা চকলেট বার্গার স্যান্ডউইচ এসব আনতে তাও আবার বেশি করে। অভি বিষয়টা বুঝতে পারে না।

রাত দশটা বাজে তানহা এক নাগারে বমি করেই যাচ্ছে। এতো এতো খাওয়ার ফলে এমনটা হইছে। শাশুড়ী তানহার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। অনিক ডাক্তারের থেকে শুনে ঔষুধ আনতে গেছে।
অভি সবে বাসায় ফিরেছে তানহার বলা সব কিছু নিয়ে।
রুমে ঢুকে তানহাকে বিছানায় পরে থাকতে আর মাকে পাশে বসে থাকতে দেখে চিন্তায় পড়ে যায়।
” মা কি হয়োছে ওর?
তানহা মাথাটা একটু উঁচু করে দুর্বল সুরে বলে।
“মা বলবা না।
অভি চোখ পাকিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
” আর বলিস না। বিকেলে ওকে চেকআপ করাতে নিয়ে গেছিলাম তো ডাক্তার বললো ও প্রেগন্যান্ট। তারপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরে শুধু খেয়েই যাচ্ছে। তারপর বমি শুরু।
অভি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তানহার পাশে।
“খাবো না তো কি করবো? না খেলে বেশি গোলুমলু হবে কি করে?
অভি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি যাও রেস্ট নাও। আমি আছি।
“তুই তো সবে আসলি ফ্রেশ হবি না?
” হয়ে নিবো

মা চলে যায়। তানহার আবার বমি পেয়ে যায়। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গলগল করে বমি করে দেয়। অভি তানহার মুখ ধুয়িয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।
“আরো খাবে? কপাট রাগ দেখিয়ে বলে অভি।
” হুমম খাবো। ফুসকা এনেছেন?
“ইডিয়ট। মানুষ আর হইলা না।

ছয়বছর পরে
দুই গ্লাস করলার জুস বানাচ্ছে তানহা। একটা অভির জন্য আর একটা জুনিয়র নেইমারের জন্য। একদম বাবার মতো হয়েছে করলা পছন্দ। প্রতিদিন করলা রান্না করতে করতে তানহা শেষ। এই করলার মধ্যে কি আছে বোঝে না তানহা। এদের এটা কেনো পছন্দ? বাবার মতো হাঁটবে। বাবার মতো ইডিয়েট বলবে। তানহার কথা তো শোনেই না। তানহা পই পই করে বলে এখন থেকেই ছেলেকে ফুটবল খেলা শেখাতে কিন্তু অভি সে ছেলেকে গান শেখাচ্ছে। বাবার থেকেও বড় সিঙ্গার হবে। তানহাও কম যায় না অভি যখন ছেলেকে গান শেখায় তানহা তখন
দয়াল তোর লাইগা রে
গানটা জোরে সাউন্ড দিয়ে বাজায় যাতে ওরা ভালো মতো গান গাইতে না পারে। অভি তখন তানহাকে একটা রুমে লক করে রাখে। ওদের রেওয়াজ শেষ হলে তানহার রুমের দরজা খুলে দেয়। এ নিয়ে তানহা হাজারটা কথা বলে। অভি কানে তুলো গুঁজে অফিসের জন্য তৈরি হয়।
মাঝে মধ্যে তাহমিদ (তানহার ছেলে) বাবাকে বলে
“বাবা তুমি মাকে বকে দাও না কেনো?
অভি তখন ছেলের গাল টেনে দিয়ে বলে
” অনেক সাধনা করে পেয়েছি তোমার মাকে। তাই বকি না। সারাক্ষণ ভালোবেসে আগলে রাখি।
“তাহলে মা তোমায় বকে কেনো?
” ওটা ওর জন্মগত স্বভাব। চেচামেচি না করলে পেটেট ভাত হজম হয় না।
ছেলেটা তখন ফিলফিল করে হাসে।

আজ তাহমিদের ৬ষ্ঠ তম জন্মদিন। তানহা অভিকে আগে থেকেই বলে রেখেছে আজ যদি তাহমিদকে হলুদ ড্রেস না পড়াতে দেয় তাহলে ও জন্মদিনে থাকবে না।
“তানহা বোঝার চেষ্টা করো হলুদ ড্রেসে বাবাটাকে একদম ঝোকারের মতো লাগবে।
তানহা দ্বীগুন রেগে যায়।
” কি বললে তুমি?
“না মানে রেগে যাচ্ছো কেনো?
” আপনিও আজ হলুদ শার্ট পড়বেন। তানহা বলে দেয়।
“এ্যাঁ
অভি চমকে বলে।
” এ্যাঁ নয় হ্যাঁ
তানহা অভি আর ছেলের জন্য হলুদ শার্ট কিনছিলো। সেগুলো পড়ায় তানহা নিজেও হলুদ শাড়ি পড়ে।
তারপর কয়েকটা সেলফি তুলে।
“উফফফ পুরাই নেইমারের ফটোকপি
অভির গাল টেনে বলে। অভি অসহায়ের মতো হাসে।
” আর আমি জুনিয়র নেইমার এটা আমি জানি
তানহা ছেলের গাল টানতে গেলে ছেলে বলে। তানহা হেসে দেয়।
“এবার চলো
তানহা মাঝখানে দাুএক হাতে ছেলের হাত আরের হাত দিয়ে অভির হাত ধরে বলে।
” পুরাই জোকারের পরিবার
অভি বিরবির করে বলে।
“কিছু বললেন?
তানহা ভ্রু কুচকে বলে।
” না না কিছু বলি নি। অভি জোর করে হেসে বলে।

ভালোবাসি তাই তোমার মুখের তেতো কথাকেও মিষ্টি মনে হয়। ভালোবাসি তাই তোমার সাথে ঝগড়া করে ভালো লাগে। ভালোবাসি তাই হাজার হাজার বছর পরেও তোমাকেই চাই। ভালোবাসি তাই তোমার ইগনোর গুলোকে ভালোবাসা মনে হয়। ভালোবাসি তাই তোমার হাত ধরে মরতে চাই। ভালোবাসি তাই সারাক্ষণ তোমাকে দেখতে চাই।

সমাপ্ত।