ভালোবাসি পর্বঃ০৬

0
1417

ভালোবাসি?
পর্ব_০৬
লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

?
ঘুম ভাঙতেই পলক অপাকে খুঁজতে থাকে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৬ টা ৯..!
পুরো বাড়ি খুঁজেও না পেয়ে বাগানে যায়।নাহ সেখানেও নেই!এক সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় অপাকে সে ছাদে যেতে দেখেছে।
পলক দৌড়ে ছাদে এলো।

রেলিংয়ের উপর হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে অপা।
পলক গলা খাকাঁরি দিয়ে জিজ্ঞেস করল এত সকালে এখানে এসেছে কেনো তুমি?

মুখ তুলে পলকের দিকে তাকালো অপা।কিছুই বলল না শুধু অপলক তাকিয়ে রইলো।

অপার মুখপানে চেয়ে অবাক হলো পলক!ঠোঁটে কোণা কেটে বের হওয়া রক্ত শুকিয়ে আছে। কপালের গালের পাশে নিল হয়ে আছে।চুলগুলে সম্পুর্ণ এলোমেলো।শুকনো ঠোঁটজোড়া।মলিন মুখ।
একদম অসুস্থ লাগছে অপাকে।
এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো।

ঘরে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলো। সরি অপা..
আমি সত্যিই সরি..আসলে মাকে নিয়ে বাজে কথা আমার একেবারে সহ্য হয় না।তাই তোমার গায়ে হাত তুলেছিলাম।আসলে আমার এটা করা ঠিক হয় নি।

কেনো বাবাকে মারলেন?

তুমি আবারও এসব জিজ্ঞেস করছো?অপা তুমি তার হাত থেকে বেঁচে গেছো!শুকরিয়া করো।
আর আমি মনে করে তাকে মেরে আমি ভুল করি নি।

আমার সামনে মারলেন কেনো তবে?

এটা করা আমার ঠিক হয়নি।আমার তোমার সামনে গুলি চালানো ঠিক হয়নি।কিন্তু আমি তো তোমাকে নিতে চাই নি।তুমিই তো জেদ ধরলে।আর সেদিনটাই শেষ সময় ছিলো।ছেড়ে দিলে হয়ত পরদিন..

পরদিন কি?সব সম্পত্তি নিয়ে নিতো?দেশ থেকে পালিয়ে যেতো?আমি তো সম্পত্তি চাই নি আপনি কেন সম্পত্তির জন্য..

সম্পত্তির জন্য নয় অপা।পরদিন চলে গেলে আমার তার উপর প্রতিশোধ নেয়া কঠিন হয়ে যেতো।

আমার উপর কিসের প্রতিশোধ নিতে চাইছেন শুনি?আমি কি আপনার কোনো ক্ষতি করেছি?

কি বলছো এসব?

আমায় বিয়ে করলেন কেনো তবে?

অপা..

বাদ দিন।সম্পত্তির উইল এতিম খানার নামে করে দিন।আর আমায় মুক্তি দিন..

অপা..

জ্বি শুনছি!

কি বলছো এসব?

আপনি তো আমাকে বাঁচাতেই বিয়ে করেছেন তাই না
।এখন তো বেঁচে গেছি!তাহলে এবার মুক্ত করে দিন।

হোয়াট ননসেন্স! কি উল্টোপাল্টা কথা বলছো।আমি তোমায় ছেড়ে দিবো বলে বিয়ে করেছি?

তাহলে কেনো করেছেন?

কারন আমি তোমাকে…

আপনি আমাকে…

কিছু না!ফ্রেস হও!একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।আলমারিতে তোমার সব ড্রেস আছে।পলক বেরিয়ে যেতে নিলেই অপা ডেকে বললো..

স্যার!আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।আমি একটু ঘুমাবো।

ধমকে উঠলো পলক।এখন ঘুমানোর সময়?যাও খেয়ে নিয়ে তারপর ঘুমাবে।উঠো

স্যার!

উঠো বলছি!

অপা উঠে দাঁড়ালো।পলক বেরিয়ে যেতে নিলেই অপা পড়ে গেলো ফ্লোরে!
পলক পিছু ফিরে অপা বলে চিৎকার দিয়ে ছুটে এসে কোলে তুলে নিলো।
বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে মুখে চোখে পানি ছিটা দিলো।
প্রায় ২০-৩০ মিনিট পরও অপার সেন্স না এলে ডক্টরকে কল করে পলক!

পাশের বিল্ডিংয়ে থাকায় ড.নাসরিন খুব দ্রুতই এলো পলকের ফ্ল্যাটে।অপাকে চেকআপ করে একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল জ্বর আসতে পারে।শরীরে ব্যাথা বাড়তে পারে।মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় পেশার লো হয়ে গেছে।ডিম দুধ আর ঔষধ যেনো খায়িয়ে দেয়।

তিনি চলে যেতেই পলক অপার মাথার কাছে এসে বসল।
কিছুক্ষণ পরই সেন্স ফিরলো অপার।উঠে বসার চেষ্টা করতেই পলক সাহায্য করলো উঠে বসতে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অপার মাথাটা বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
সরি অপা ভেরি সরি!আই সয়্যার আর কোনোদিন ও তোমার গায়ে হাত তুলবো না কোনদিন ও না।

অপা কিছু বললো না।পলক ওকে বুক থেকে তুলতেই অপা আবারও এলিয়ে পড়লো পলকের গায়ে।বসো একটু।বলেই হেলান দিয়ে শুয়িয়ে দিলো।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ব্যস্ত হয়ে।
.
.
.
.
.
খাবার এনে পাশে বসলো অপার।নিজে ভাত মাখিয়ে খায়িয়ে দিলো।ঘরে থাকা নাপা খায়িয়ে দিতেই গরগর করে বমি করে দিলো অপা।
পানি এনে মুখ ধুয়ে অপাকে আবারও কোলে তুলে নিলো পলক।বেরিয়ে গেলো পাশের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

অপা মিটিমিটি হেসে বলল আপনি আমাকে সিরিয়ালের হিরোদের মত বারবার কোলে তুলে নিচ্ছেন কেনো স্যার!

পলক ভ্রু কুচকে বলল লাইক সিরিয়াসলি অপা?তুমি হাসছো?

হ্যা!এভাবে কোলে তুলে নিলে যে কারো হাসি পাবে।

পলক আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পর এলো জামা হাতে।একটা ফ্লাজো আর টপস অপার হাতে দিয়ে বলল চেঞ্জ করে নাও।আমি আসছি।
.
.
.
.
সার্ভেন্টকে ঘর পরিষ্কার করতে বলে দুপুরে কি রান্না হবে তা বলে অফিসে ফোন করলো পলক।সব তার পিএ আর ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে মিটিং নেক্সট উইকে রাখতে বলল।ফোন কেটে দিয়ে মায়ের কাছে ফোন করলো পলক।মা ঠিকভাবে গিয়েছে কিনা কখন রওনা হয়েছে সব কথাবার্তা বলে ফোন সাইলেন্ট করে ডাইনীং থেকে গরম দুধ ডিম নিয়ে রুমে চলে এলো পলক।
ততক্ষণে অপা চেঞ্জ করে বসে আছে।কিছুটা জোড় করে ডিম খায়িয়ে ঔষধ খায়িয়ে দিলো।দুধটা কিছুতেই মুখে দিলো না।আলমিরা থেকে কম্বল বের করে সব জানালার পর্দা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে অপাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো পলক।

অপা একটু সরে এলো পলকের থেকে।স্যার রুম এরকম অন্ধকার করেছেন কেনো?

তোমার রাতে ঘুম হয় নি।তার উপর শরীর খুব দুর্বল।মেডিসিন নিয়েছো এখন অনেক ঘুমের প্রয়োজন।আর ঘুমের একটা পরিবেশ প্রয়োজন।সেই পরিবেশটাই তৈরি করে দিলাম।

তাহলে আপনি?আপনি কি অফিস যাবেন না?

নাহ।তোমার সাথে ঘুমাবো।

কিন্তু..

চুপ করো অপা!ঘুমাও।আসো কাছে এসে শোও!

না!আপনি আমার স্যার আপনি আমার এত কাছে এলে আমার একদম ভালো লাগে না।

সবকিছুর আগে আমি তোমার স্বামী।তারপর অন্য সব।বুঝলে…!আর আমি আমার বউয়ের সাথে শুয়েছি।তোমার ভালো না লাগলে আমি কি করবো..

আমিই তো আপনার বউ..

তা বউ এত কথা না বলে ঘুমাও। প্লিজ…

অপার কথায় অপা নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে ফেললো পাশ ফিরে।
অপার কোমড় ধরে কাছে টেনে আনলো পলক।চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো অপা।
গরম নিশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই কেঁপে উঠল অপা।দম বন্ধকর এক পরিস্থিতি। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করতে একটু নড়েচড়ে উঠলো!
.
.
.
.
.
পলকের ঘহম ভেঙে গেলো কারো চাপা আর্তনাদে।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।পাশে তাকিয়ে অপাকে কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো পলক।টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে উঠে ঘরের লাইট অন করে অপার কাছে এসে বসল।

বেশ জ্বর এসে গেছে অপার!ডক্টরকে কল করতে ফোন হাতে নিলে দেখে ফোন অফ!কি করবে না করবে ভেবে দরজা খুলে সার্ভেন্টকে ডাকলো পলক।দুজনই এসে হাজির!

শিলা আপা দেখো না ওর কত জ্বর!তুমি বরং ডক্টরকে ডেকে আনো।

পলক জলপট্টি দাও।আমি করিম চাচাকে বলছি ম্যাডামকে ডেকে আনতে।

না না ওর অনেক জ্বর।চাচা ডাকতে গেলে দেরী হবে বেশি।তুমি বরং ডেকে আনো।রহিমা আপা পানি আর একটা রুমাল দাও।আর আমার ঘর থেকে থার্মোমিটারটা এনে দাও!
উত্তেজিত কন্ঠে বলল পলক।তারপর বিছানায় বসে অপার মাথাটা কোলে নিয়ে চুলে হাত বুলাতে লাগলো!

চলবে_