#ভালোবাসি?
#পর্ব_০৫
#লেখাঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
?
অপা তোমার বাবা আদনান রহমান তোমার জন্মদাতা হলেও যাকে তুমি নিজের মা হিসেবে জানো সে তোমার জন্মদাত্রী মা নয়!
তোমার মা তোমার তিনবছর বয়সের সময় মারা গেছে ঠিকই কিন্তু যার ছবি তোমাদের বাড়িতে টাঙানো সে তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী!
অপা নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পলকের দিকে!
তোমার বাবা আমার হাতে খুন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাকে আমি খুন করতে চাই নি।আমি কারো কাছে ওয়াদা বদ্ধ ছিলাম!
তাহলে শোনো প্রথম থেকে..
তোমার বাবা মা প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো।
তাদের বিয়ের ৭ বছর পরই তোমার জন্ম!আন্টি যখন গর্ববতী ছিলো তখন আংকেল তার অফিসের এক স্টাফের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছিলো।বাবা আর তোমার বাবা শেয়ারে ব্যবসা করতো।রাজীব উনি আমার সৎ চাচা।বাবার সৎ ভাই!যখন ওই মহিলা তোমার বাবার থেকে খরচ নিতে শুরু করে তখনই ব্যবসায় লছ হতে থাকে।একদিকে আন্টি প্রেগন্যান্ট অন্য দিকে ওই মহিলা।বাবার সাথে তোমার বাবা বিশাল ঝগড়াঝাটি করে।আমার চাচা আগে থেকেই বাবার সম্পত্তি দখল করতে চাইতেন।তোমার বাবা আর আমার সৎ চাচা মিলে আমার বাবাকে খুন করে!হসপিটালে নেয়া হলে বাবা আমার হাত ধরে একটা কথাই বলেছিলেন..নিশান বাবাকে ওয়াদা কর ওই রাজীব আর আদনানকে তুই নিজে হাতে শাস্তি দিবি!ও তোকে ও তোকে বলতে বলতেই বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তখন আমার বয়স ১০ কি ১১…মাথায় একটা কথাই ঘুরছিলো ওয়াদা কর ওয়াদা কর।বাবা গাঁ ছুঁয়ে প্রতিঙা করেছিলাম বাবার কথা রাখবো!
ছলছল চোখে পলকের দিকে তাকিয়ে অপা বলল এজন্য বাবাকে আপনি মেরে দিলেন?
নাহ্ বিষয়টা এখানেই শেষ নয়!উনি আরো কয়েকটা খুন করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য..!
তোমার বাবা যখন তার সেই স্টাফকে বিয়ে করে ততখন আন্টি ৪মাসের প্রেগনেন্ট!উনি কিছুতেই তোমার বাবাকে তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে দেবেন না আবার তোমার বাবাও তোমার মাকে ছাড়বেন না কারণ তুমি তখন আন্টির গর্ভে আসো তখন তোমার নানু নিনু তোমার জন্য তোমার মাকে মেনে নেয়।খুশি হয়ে তোমার মাকে তারা চল্লিশ একর জমি দেন।তোমার বয়স আঠারো হলে তা তোমার নামে হয়ে যাবে।উইলে লেখা ছিলো আন্টির যে সন্তান হবে হোক ছেলে বা মেয়ে সে-ই জমি পাবে।তাই তোমার বাবা তোমার মাকে ছাড়তে চায়নি।আর বিয়ের ব্যাপারটাও লুকিয়ে রেখেছন।
কিন্তু যখন তোমার জন্ম হয় তখন থেকেই তোমার বাবা সে জমি চায় বলে ব্যবসা করবে।কিন্তু তিনি রাজি হন না।ঝামেলা হয়।তোমার মা রাগ করে তোমায় নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে যায়।প্রায় আট মাস পর তিনি ফিরে আসেন।কয়েকদিন ভালোই কাটে তারপর তোমার বাবার ২য় স্ত্রী বাড়ি এসে অনেক চেঁচামেচি করে।স্ত্রীর অধিকার চায়!
তোমার মা অনেক ভেঙে পড়ে।সব জানা জানি হয়ে যায়।তোমার মা কে আবার তোমার নানা নিনু এসে নিয়ে যায় তুমি সহ!
বছর খানিক পর তোমার বাবা সবার কাছে ক্ষমা চায়।জানায় তার সেই স্ত্রী তার সব নিয়ে পালিয়ে গেছেন।তোমার মা কিছু দিন পর ফিরে আসে।বেশ ভালোই চলছিলো সংসার।
হঠাৎ একদিন সবার কাছে খবর আসে তোমাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে আর তোমার মাকে খুন করে দিয়ে সব নিয়ে পালিয়েছে।কিন্তু মিথ্যা প্রমাণ করে তোমার নানু।তিনি তোমাদের বাসার ডোকার গলিতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলো যেদিন তোমার মা শেষ এবাড়িতে ফেরে।তাতে স্পষ্ট ছিলো কোনো ডাকাতই বাড়িতে ডোকে নি ওই মহিলা আর তোমার বাবা এক সাথে বাড়িতে ডুকে আর এক সাথে বেরোয়!
যাইহোক তোমার নানু এসব নিয়ে কেস করছিলো। টাকা আর ক্ষমতার জোড়ে তোমার নানু জিততে পারতো কিন্তু তাকেও তোমার বাবা গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলে।তিনি তিন দিন হসপিটালে ছিলো আর তোমার নিনুর কাছে সব খুলে বলেছিলো!তিনিও এক সময় প্যারালাইজড হয়ে যায়।কয়েকবছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।
এসব আমি কিভাবে জানি তাই ভাবছো?আমি তোমার নিনুর ডাইরী থেকে এসব পড়েছি।আর আমার মা তোমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। সব বিষয়ে তিনি জানতো!
আর তোমার বাবার এসব কর্মকান্ডের কথা তারই ম্যানেজার শহীদ সাহেব আমায় বলেছেন প্রমাণ ও আছে।তিনি এখন আমার কব্জায়!
আমার চাচা রাজীবের ছেলে রিয়াদের সাথে তোমার বাবা তোমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলো যার জন্য তিনি কাল চাচার কাছে গিয়েছিলো কিন্তু তিনিও সে সম্পত্তির অর্ধেক চেয়ে বসে আর তা নিয়ে কথাকাটা কাটি হলে তাকেও মেরে দেয় তোমার বাবা।ওরশু তোমার আঠারো হবে তাই তোমার বাবা চেয়েছিলো তোমাকে বিয়ে দিয়ে উইল তোমার থেকে তার নামে করে অন্য দেশে চলে যেতে আর তা ২য় স্ত্রীর সন্তানকে দিতে তাই উপায়ন্তর না পেয়ে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়।আর তোমাদের বাসায় যে ছবি টাঙানো তা তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর।তিনি ছোট থেকে তোমাকে এটাই বুঝিয়েছে যে এটাই তোমার মা।তুমি তিনবছর বয়সে মাকে হারিয়েছো বলে ততটা মনেও থাকবে না। তোমার কলেজে আমি শুধু তোমার জন্য নয় তোমার বাবার কাছে বিশ্বস্ত হতেও আমি কলেজ জয়েন করি।আর ওনার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছি।
উনি আমাকেও মারার চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকবার।তবে তা অনেক আগে।বিজনেস এ হাত লাগাই ২১ বছর বয়সে।তখন থেকে একটু একটু করে ভালো সম্পর্ক তৈরি করি তার আগে অবশ্য মারার চেষ্টা করিছিলেন কারন তিনি জেনে গিয়েছিলো আমার বাবাকে উনি মেরেছেন এটা আমি জানি।কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ হয় তখন
যখন তার সাথে বিজনেস ডিল করি আর তার লাভ হয়!
প্রমাণ ছাড়া আমি কিছুই বিশ্বাস করতে পারছি না।
অপার এ কথায় মুচকি হাসে পলক।এতদিনে হয়ত আমায় একটু হলেও চিনেছো!প্রমাণ সব আছে।
পলকের কথা শেষ হতে না হতেই পলকের মা ঘরে ডুকতে ডুকতে বলেন পলক সব সত্যি বলছে অপরাজিতা! আমি মা হয়ে ওকে সবটায় সাপোর্ট দিয়েছি।তার পর ও তোমায় সব পলক দেখাবে।
আচ্ছা পলক অনেক ভোরে যাবো আমি হয়ত দেখা হবে না।সাবধানে থাকিস আর বউমার খেয়াল রাখিস।
তারপর অপাকে বুকে টেনে নয় মাথায় হাত বুলিয়ে বলে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা মা।যা হওয়ার ছিলো তা হয়ে গেছে!
অপা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো!আমার ভাবতেও ভয় হচ্ছে আপনি কি আসলেই মা?ছিঃ যে কি না ছেলেকে খুন করতেও সাহায্য করে সাপোর্ট করে।আপনার মত মা পৃথিবিতে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো!ঘৃণা করছে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে আ…
পুরো কথা শেষ করার আগেই ঠাসস করে এক চড় পরে অপার গালে।
তুই কাকে কি বলছিস হ্যা? আমার মাকে তুই এসব বলার সাহস পাস কোথা থেকে? খুনি বাবার মত হয়েছে স্বভাব!
আমার বাবা একা খুনি?খুনি তো তুই ও… আর তোর মা ও খুনি.
অপা…বলে ঠাসস করে আরেক চড় বসায়।
অপা একটু ছিটকে পড়লো।পলকের মা আটকালো।দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো অপা।
দেখ বাবা ওর মনের অবস্থাটা একবার চিন্তা কর..
থাম!আমি জমিলাকে দিয়ে তোর রুম ক্লিন করিয়েছি।তুই ওকে খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে। আসছি বলেই নিজের ঘরে চলে গেলো তিশা বেগম।
মা কে নিয়ে কিছু বললে দুনিয়া উল্টে যায় পলকের!রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিজের ঘরে যেয়ে দেখে অপা নিচে বসে কাঁদছে! হাত ধরে টেনে উঠায়। চলো
আপনি ছোঁবেন না আমায় ছাড়ুন!
ছাড়বো তবে এক্ষুনি তুমি মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাবে!
আমি ওই মহিলার কাছে কখনো ক্ষমা চাইবো না উনিও আমার বাবার হত্যাকারী।
ঠাসস করে গালে চড় মেরে চুলের মুঠি ধরে বলে এক্ষনি ক্ষমা না চাইলে তোর এমন অবস্থা হবে যা তুই কল্পনাও করতে পারছিস না।চল
আমি ক্ষমা চাইবো না বলছি তো চাইবো না-ই
আরো বেশ কয়েকটা থাপ্পড় মারে পলক।ঠোঁট কেটে রক্ত বেরিয়ে গেলো।তবুও নাছোড়বান্দা অপা।তার কথা একটাই ক্ষমা সে চাইবে না।
ইচ্ছে মত অপাকে মারতে শুরু করলো পলক!একসময় চিৎকার করে বলল ক্ষমা চাইবো চাইবো আমি!হাত ধরে উঠিয়ে বলল পা ধরে ক্ষমা চাইবি।অপাকে মায়ের ঘরে নিয়ে গেলো পলক।
তিশা বেগম ইজি চেয়ারটায় বসে চোখের পানি ফেলছে। অপা পায়ে ধরে বলল আমায় মাফ করে দিন!
তিশা বেগম অপাকে টেনে বুকে শক্ত করে আগলে নিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলো। তোর দোষ নেই রে মা তোর দোষ নেই বলেই তিনি কাঁদতে লাগলো। আর শরীরের ব্যথায় কাঁদতে লাগলো অপা।
যাহ মা শুয়ে পড়!কিছু খায়িয়ে দে ওকে পলক।
বলল তিশা বেগম।
.
.
.
.
.
বিছানায় বসে আছে পলক অপাকে কোলে নিয়ে।মাথাটা বুকে চেপে ধরে এক হাতে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
সরি অপা।আসলে মাকে কিছু বললে আমার হুঁশ থাকে না।আমি তোমাকে এভাবে মারতে চাই নি।যদি তুমি প্রথমেই আমার কথা মেনে ক্ষমা চাইতে তাহলে এত কিছু হতোই না!এত জেদি কেনো তুমি বলো তো!
পলককে এখন বিষের মত লাগছে অপার কাছে। তবুও নড়ার বা কিছু বলার শক্তি নেই তার।আস্তে আস্তে চোখ বুজে আসছে।ভীষণ মাথ যন্ত্রণা হচ্ছে।
চলব_
বানান ভুল হলে কষ্ট করে ঠিকভাবে পড়ে নিবেন ?