ভালোবাসি শেষ পর্ব

0
1630

ভালোবাসি?
লাস্ট_পার্ট
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

?
দিন সপ্তাহ মাস যেতে লাগল!অপার কলেজ!আর পলকের অফিস!দিনশেষে গল্প আড্ডা খুনসুটি
বেশ ভালোই কাটছে দিনগুলি!তবে কোথাও যেন অপার মন ভালো নেই!

ছাদে এলো-মেলো চুলে বসে আছে অপা!তিশা বেগম ছাদে গিয়েছিলো কাপড় তুলতে!এক কোণায় অপাকে বসে থাকতে দেখে তিনি উদগ্রীব হয়ে কাছে গেলেন!

অপা!কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলো অপা!শুকনো মুখে মুখ তুলে তাকালো..

কি হয়েছে মা তোর আদুরে কন্ঠে বললেন তিশা বেগম!
মুখ গোমড়া করে রেখেছে অপা।কিছু বলছে না..

কি হলো বল?

তোমার ছেলে আমাকে কেনো বিয়ে করছে মা?সে তো আমায় ভালোইবাসে না..

তিশা বেগম চুপ করে রইলেন!তারপর হাসার চেষ্টা করে বলল কে বলেছে? তোকে খুব ভালোবাসে

কচু তো!

তুই বোস আমি আসছি!তারপর তোর সব কথা শুনবো!

অপা আগের ন্যায় চুপ করে বসে রইলো।

কিছুক্ষন পর তিশা বেগম এক বয়াম আচার আর তেল চিরুনি আনে।
অপার পেছনে ছাদে পা মেলে বসে পরে।বিলি করে তেল দিতে দিতে বলল বল তো মা কি হয়েছে?
নে আচারটা খা!আর বল সবটা খুলে..

বয়াম খুলে অনেকটা আচার একসাথে মুখে পুরে নিলো অপা..
জানো কাল কলেজ গিয়েছি!তারপর ইনায়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর গত সপ্তাহে বিয়ে হয়েছে।ওর হাসবেন্ড ওকে নিয়ে হানিমুনে গেছে আর কত আদর করেছে জানো?

তিশা বেগমের খালি গলায় বিষম খেলো! ছেলের বউ কখনো শ্বাশুড়িকে এসব বলেছে বলে জানা নেই তিশা বেগমের!তিনি নিজেকে সামলে বলল পলক ও তো তোকে কত কেয়ার করে আদর করে!

কই? কই আদর করে?কেয়ার আর আদর কি এক হলো?তোমার ছেলে তো আমায় ছুঁতে ও চায় না!রাতে ঘুমালে যদিও তার কাছে ভুলে চলে যাই ধাক্কা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে বিছানার এক কোনায় রেখে দেয়!এটাকে বুঝি ভালোবাসা বলে বলো?

তিশা বেগম চুপ করে অপার চুলে বিনুনি করে দিলো।উঠতে উঠতে বললো জানি না বাপু!কোনটা ভালোবাসা কোনটা কি!বয়স হয়েছে কি না!আমি যাই।অনেক কাজ পরে আছে!
দ্রুত পা চালিয়ে নিচে চলে গেলো তিশা বেগম।

অপা বিষন্ন মনে বসে রইলো আচারের বয়ামটা দূরে সরিয়ে!মনে মনে কঠোর পন করে বসল!পলক তাকে ভালোবাসার না পর্যন্ত সে কোনো কথা বলবে না তার সাথে কোনো কথা ই না!

?
তিনদিন পার হয়ে গেলো!অপা পলকের সাথে কোনো কথা বলে না!হু হা করে শুধু!
পলক তার মাকে জিজ্ঞেস করলে সে ও কিছু বলে!!

খুব সকালে বাড়ির বাহিরে চলে গেছে পলক।অপা ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে পায় নি তাকে!

সারাদিন বিষন্ন মনে কলেজে বসে কাটায় অপা।একটা ক্লাস ও করে নি!
সামনে পরীক্ষা! সে খেয়াল নেই বললেই চলে!তার মাথায় রাজ্যের যতসব এলোমেলো চিন্তা ঘুরঘুর করছে!

বিকেল চারটায় বাড়ি ফিরে অপা!কিছুটা ভয় নিয়ে।যে ঠিক ১ টায় বাড়ি চলে যায় সে আজ চারটায় বাড়ি ফিরেছে!এটা নিয়ে নিশ্চয় পলক খুব রাগারাগি করবে।মা ও চিন্তা করবে!কি উত্তর দিবে অপা?
অযথা বসে থেকে দেরী করে ফিরেছে এটা বললে তো আরো বকা খাবে!

গুটিগুটি পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো অপা!কিন্তু পরিবেশ এত স্বাভাবিক দেখে নিজেই যেন অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।

তিশা বেগম অপাকে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল কি রে এত লেইট হলো কেন?ক্লাস ছিলো বুঝি

অপা দায়সারা ভাবে উত্তর দিলো ‘হু’

তিশা বেগম অপার উত্তর শুনে রান্নাঘরে চলে গেলো!
অপা নিজের রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো!
তারপর খাবার খেয়ে ছাদের দিকে রওনা হলো!পেছন থেকে পলক ডেকে বললো অপা ছাদে যেও না ঢালাইয়ের কাজ চলছে!

অপা চাইছিলো বলতে কই আমি তো কোনো ঢালাইয়ের কাজ দেখলাম না!ভাংগা ও দেখলাম না!
কিন্তু কথা বাড়াতে চায় না বলে চলে গেলো নিজের রুমে!

পলক অপার চলে যাওয়া দেখে মুচকি হাসলো!

?
রাত নয়টা…অপা বই রেখে নিচে এলো!মা মা বলে ডাকতে লাগলো! পলক ছাদ থেকে হুড়মুড় করে নেমে বললো মা একটু তৃষ্ণা আন্টিদের বাসায় গেছে!তুমি চিনোই তো!আজ ওখানেই থাকবে!তার শাশুড়ির প্রেশার উঠেছে তাই!

ওহ!ছোট করে উত্তর দিলো অপা!পলক আবার ছাদে চলে গেলো!

অপা নিজেই খাবার নিয়ে খেয়ে নিলো!পলককে ডাকলো না পর্যন্ত!তারপর সব ঘুছিয়ে ঘরে যেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই একটা এলার্ম বেজে উঠলো! ঠিক দশটা বাজে!এসময় কে এলার্ম দিলো?ঘড়িটা হাতে নিয়ে অফ করে রাখতে নিলেই দেখলো একটা চিরকুট!তাতে লিখা “পাশের ঘরে যাও”

অপা ভ্রু কুচকে সেটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো!কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে পাশের ঘরে গেলে!বিছনার কাছে যেতে যেতে চারদিকে চোখ বুলালো

বিছানার ঠিক মাঝখানে একটা প্যাকেট আর তারপাশে একটা চিরকুট!”শাড়িটা পড়ে নাও!ছাদে আসো”

প্যাকেট থেকে একটা গোল্ডেন লালে মিক্স শাড়ি বেরুলো!সাথে কিছু অর্নামেন্টস!অপার মাথায় কিছু একটা খেলে গেলো!মুহুর্তেই মন ভালো হয়ে গেলো তার!

প্রায় বিশ মিনিট সময় লাগলো অপার রেডি হতে!তবে শাড়িটা ঠিকভাবে পড়তে পারে নি!অভ্যেস নেই কিনা!কোনো রকম পেচিয়ে নিয়ে সেজে নিলো!কাঁচের চুড়িগুলো বেশ মন কাড়লো অপার!

গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে রওনা হলো অপা!
দরজায় আলতো করে ধাক্কা দিতে মড়মড় শব্দ করে দরজাটা খুলে গেলো!

ছাদে পা রাখতেই চমকে গেলো অপা!পুরো ছাদ জুড়ে হার্ট সেপ বেলুন!তাতে লিখা ভালোবাসি? ভালোবাসি? ভালোবাসি?। রেলিং জুড়ে মোম জ্বলছে!লাল নীল হলুদা সাদা নানা রংয়ের মোম!
বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে অপা!
পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে!

হঠাৎ কারো নিশ্বাস কানের কাছে এসে পড়লো!এ নিশ্বাস বড্ড চেনা অপার!বড্ড চেনা!ঘাড় ঘুরালো না অপা!একইরকম ভাবে সামনে তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে!

অপার চোখে হাত রেখে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে আসলো পলক!চোখ থেকে হাত সরাতেই আকাশের দিকে তাকাতে বলল

৩ ৪ টা বাজি ফুটলো! I Love You

দূরে লিখাটা দেখে
অপা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পলকের দিকে!
তোমার হাসবেন্ড টা কিন্তু আনরোমান্টিক নয় ফিসফিসয়ে বলল পলক!

অপাকে কোলে তুলে হাটা ধরলো নিচের দিকে!

রুমে এসে আরেকদফা অবাক হলো অপা!পুরো ঘর জুড়ে হার্ট শেপ বেলুন!তাতে লিখা ভালোবাসি?
বিস্ময়ে চোখ জোড়ায় পানি চলে এলো অপার!

পলকের এতক্ষণে খেয়াল এলো অপার শাড়ির দিকে! হো হো হো করে হেসে উঠলো পলক!ঘর কাঁপিয়ে হাসছে পলক!

হঠাৎ পলকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো অপা!খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো পলককে!হু হু কেঁদে উঠলো!
থমকে গেলো পলক!কপালে চুমু খেয়ে আলতো করে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় বেতের সোফায় বসালো!

পলকের কাঁধে মাথা রেখে অপা বসে আছে!

একটা কথা শুনবে অপরাজিতা?

হু বলুন!

তুমি যখন একদম ছোট ছিলে বয়স ১৩ কি ১৪..তখন থেকেই ভালোবাসি আমি তোমায়!তোমাকে তখন আমি কমকম দেখতাম!ততটা দেখতে পারতাম না!তবুও কেনো যেন মনে হতো তোমায় মিস করতাম!আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম বুঝলাম আমি তোমায় ভালোবাসি… বলে উঠতে পারি নি!জানি না কেনো!ভাবতাম তুমি আমায় মেনে নিবে?তুমি তো আমায় সহ্যই করতে পারো না!
কিন্তু কয়েকদিন তোমায় লক্ষ করছিলাম!তোমার মন খারাপ চুপচাপ থাকা একা বসে থাকা পড়ায় অমনোযোগ!তখনই তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করলাম!তোমার মন খারাপের কারন জানতে পারলাম না!তবে তোমাদের কথপোকথন শুনে আঁচ করতে পেরেছি!

অপা কখনো ছেড়ে যেও না!ভুল ও বুঝো না! ভালোবাসি তো….

অপা খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো পলককে! কানে ফিসফিস করে বললো ভালোবাসি? ভালোবাসি?
ভালোবাসি?

মুচকি হাসলো পলক!আলতো করে অপার ঠোঁট জোড়ায় বিচরণ শুরু করলো!
ছাড়তেই বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললো অপা…
লজ্জায় যেন একদম কুঁকড়ে গেলো..

পলক মুচকি হেসে তাকালো বাহিরে.. আবছা কুয়াশার আড়াল থেকে চাঁদ টাও যেন উঁকি দিয়ে হাসছে…

ভালো থাকুক সব ভালোবাসা গুলো….

সমাপ্ত__