#ভিনদেশি_তারা
#পর্ব-১০
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
২৭.
সেদিন রাতে ঝুপ করে বৃষ্টি নেমেছিলো। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে আমি রাতটা নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম। পাশের ঘর থেকে ধুপধাপ শব্দ হচ্ছিলো ভোরের দিকে। আমি আধবোজা চোখটা খোলে কান পাতলাম শব্দটা শোনার আশায়। এর আগেও একবার এমন হয়েছিলো কিন্তু তখন ক্লেভের দাদী ছিলো। কিন্তু এখন তো তিনি ভার্জিনিয়াতে নেই, তাহলে?
এখন আবার মিউজিকেরও শব্দ আসছে। ভোরবেলা আবার কিসের নাটক শুরু হলো এ বাড়িতে কে জানে? এমনিতেই ভয় লাগে বাড়িটাকে। মারোলা’র দিকে তাকিয়ে দেখি এর কোনো সাড়াশব্দ নেই। কিভাবে যে এতো ঘুমুতে পারে তা এক আল্লাহ জানে। একেবারে খাঁটি আমেরিকান কুম্ভকর্ণ। এর কপালে কোন ছেলে যে আছে, আল্লাহ তায়ালা জানেন।
আমি গায়ে চাদর জড়িয়ে দরজা খুলে করিডোরে এলাম। ক্লেভের রুম থেকেই এই শব্দ আসছে। আমি গেলাম ওর ঘরে। দরজা অল্প খোলা ছিলো, ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলাম। ক্লেভ রানিং মেশিনে দৌড়াচ্ছে তাও আবার খালি গায়ে, ট্রাউজারের বদলে টাওয়াল পরা। ফর্সা উদোম শরীর ভোরের আলোতে একদম অন্যরকম লাগছে। আমি ঢোক গিললাম। আমার আসার শব্দ ক্লেভ এখনো পায়নি কারণ মিউজিক বাজছে। মিউজিক অফ করে আমি চট করে ওর সামনে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘সকাল সকাল ঘুমাতেও দিবেনা নাকি?’
ক্লেভ অবাক হয়ে ‘হা’ করে তাকিয়ে রইলো। দৌঁড়ানো থামিয়ে এভাবেই তাকালে আমি ওর মুখের ভেতর গাজর ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলাম। ও ব্যায়াম করতে করতে গাজর খাচ্ছিলো। আমার দেওয়া গাজরের টুকরোটা চিবুতে চিবুতে বললো, ‘তোমরা যে বাড়ি আছো, মনেই নেই। আই এক্সট্রেমলি স্যরি। তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব হওয়ার জন্য।!’
‘ স্যরি বললে হবেনা।’
‘ তাহলে? কি করতে হবে?’
‘ উল্টো হয়ে ঝুলে থাকতে হবে।’
‘ এ আবার কেমন পানিশমেন্ট?’
‘ এটাই পাওয়ার যোগ্য তুমি। আমার ঘুম ভাঙানোর অপরাধে তোমাকে দন্ড দেওয়া হলো।’
আমি দুষ্টুমি করে বলছিলাম। ক্লেভ তাড়াতাড়ি করে বিছানার উপর মাথা দিয়ে পা দুটো দেয়ালে চেপে ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করতে লাগলো। আর যা হবার তা-ই হলো। টাল সামলাতে না পেরে খাটের কোণে বারি খেয়ে পড়ে গেলো ফ্লোরে। তাতে আচমকা ওর পরণের টাওয়াল খুলে খুলে গেলো। আমি হাসি থামিয়ে একটা আত্ম চিৎকার দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। নাউজুবিল্লাহ!
২৮.
বৃষ্টির কারণে ভোরের বাতাস খুব ঠান্ডা। বাতাসে আমার খোলা চুলগুলো অবাধ্য হয়ে উঠলো। আমি দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছি আর কাঁপছি। এর মাঝেই ক্লেভ নিজের টাওয়ালটা ঠিক করে নিয়ে আমার কাছে এসে অস্থির কন্ঠে বললো,
‘ তাকাও। এদিকে তাকাও চিটটরা!’
‘ তুমি যাও ক্লেভ। প্লিজ।’
‘ আমার দিকে না তাকালে আমিতো যাবোই না, উল্টো অন্যকিছু করে ফেলবো।’
আমি চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘মানে? ছি ছি।’
ক্লেভ হেসে দিলো। ‘তাকালে তো!’
আমি মুখ ভেঙালাম। আমাকে এসব বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে এই সাদা বাঁদর মজা নিচ্ছে। যদিও টাওয়ালের ব্যাপারটা অনিচ্ছাকৃত। ক্লেভ লজ্জ্বা লজ্জ্বা গলায় বললো, ‘ব্যাপারটা ভুলবশত। তবে তুমি কিছু দেখোনিতো?’
ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘কিছু দেখিনি মানে? আমি সব দেখেছি!’
ক্লেভ হতভম্ব হয়ে বললো, ‘মানে তুমি আমায় নেকেড দেখেছো?’
আমি “আসতাগফিরুল্লাহ” বলে জিব কাটলাম। কারণ এমন কিছুই আমি দেখিনি। ওর টাওয়াল খুলে যাবার আগেই আমি টের পেয়ে চিৎকার করে পেছনে ঘুরে ছিলাম। তাড়াহুড়ো করে বললাম, ‘না কিছু দেখিনি।’
‘তাহলে এতো লজ্জ্বা পাচ্ছো কেন?’
‘ জানিনা। আর তুমি এতো বেহায়া কেন?’
‘ আমি বেহায়া? কিভাবে?’
‘ তোমার বয়স কত ক্লেভ?’
ক্লেভ গুনে গুনে বললো, ‘ছাব্বিশ বছর এগারো মাস ঊনত্রিশদিন।’
আমি মাথা চক্কর দিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘ এতবড় হয়েছো তাও টাওয়াল পরে ঘুরাঘুরি করো, ছিহ।’
ক্লেভের মুখটা চুপসে গেলো। ওকে কৈ মাছের মতো হাবি খেতে দেখে আমি বেশ মজা পেলাম৷ ও আমতাআমতা করে কিছু বলতে চেয়েও বললো না। কাপড়চোপড় নিয়ে পরে ফেললো। আমি বললাম, ‘ কি হলো হঠাৎ?’
‘ কিছুনা। মানসম্মান বাঁচালাম।’
‘ পাগল তুমি।’ আমি হাসতে লাগলাম।
‘ তোমার বয়স কত চিটটরা?’
‘ পঁচিশে পড়বে!’
‘ আমার জুনিয়র!’ বেশ আনমনে বললো ক্লেভ।
‘ কি বললে?’
‘ কিছুনা। বাই দ্যা ওয়ে, আজ কিন্তু আমার বার্থডে পার্টি আছে।’
‘ তোমার জন্মদিন? আজ?’
‘ নাহ, আজ রাত মানে কাল বারোটা এ. এম এ।’
‘ তুমি বেশ ফাজিল ক্লেভ। আচ্ছা তোমার দাদী আসলে কোথায়?’
‘ দাদী মমে’র কাছে, নিউইয়র্কে। এখানে আমি ছিলাম না একা একা থাকতে হবে দেখে মমে’র কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম৷’
‘ বুঝেছি।’
‘ কি?’
‘ এইজন্যই বাড়িটা ভূতের আড্ডাখানার মতোন ভয়ংকর!’
‘ হুম। কেউ থাকেনা। কিন্তু আমার এখানেই ভাল্লাগে।’
‘ এতোদিন কোথায় কোথায় ঘুরে এলে?’
‘ কিছুমাস ব্রাজিলে। বাকি মাস ইজিপ্টে।’
‘ একাই? এতো দেশে?’
‘ নাহ। আমাদের সংগঠন আছে। দলের সবাই মিলে ঘুরেছি।’
‘ সংগঠন?’
‘ হুম। “বাটারফ্লাই লাইফ”।
‘ ঠিক তোমার মতো!’
‘ আচ্ছা আজ পার্টির ড্রেসকোড “ব্ল্যাক”! তুমিও এই রঙের জামা পরবে। একটা সারপ্রাইজ আছে সবার জন্য। বিশেষ করে তোমার জন্য। নিশ্চয়ই তুমি খুশি হবে। আসবে কিন্তু, ওকে?’
‘ তা না হয় হলো। কিন্তু পার্টি হবে কোথায়? এই ভুতুড়ে বাড়িতে?’
‘ নাহ। এবারের পার্টিটা বেশ স্পেশাল। তাই স্পেশাল পার্সনদের তো আর ভুতের বাড়িতে ইনভাইট করতে পারিনা।’
আমি খোঁচাটা বুঝতে পেরে চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালাম। ক্লেভ কান ধরে হাসতে লাগলো, পাগলের মতো। আমি চলে আসতে নিলেই পেছন থেকে ও হাত ধরে ফেললো। বললো, “রেইনবো বার্থডে জোনে” ঠিক রাত বারোটায়, ওকে?’
২৯.
মারোলা আর আমি দুজনের মনই বিরক্তিতে ছেয়ে আছে। রবার্ট, জেনিফার দুজন সেলফি নেওয়ায় ব্যস্ত, আলিয়া, প্যাটিসন চুপচাপ। আমরা সবাই এক টেবিলে বসে আছি। পুরো হলঘরটাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। শতশত আলো, বেলুনের খেলা। ওয়েটাররা এদিকওদিক গেস্টদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে তিন-চারশো গেস্ট তো হবেই। আসলেই ক্লেভের অনেক টাকা। আমরা ওর পার্টিতে অ্যাটেন্ড করেছি ঠিকই, কিন্তু বারোটা পার হয়ে সাড়ে বারোটা বেজে গেলেও ক্লেভের কোনো খোঁজ নেই। সবাই আনন্দ-উল্লাস করে হুইস্কির গ্লাসে মৃদু মৃদু চুমুক বসাচ্ছে আর ঝলমলে হলঘরে কেউ কেউ পেপার ড্যান্স করছে। এ নাচ এমন অদ্ভুত কেন বুঝলাম না। মেঝেতে পেপার বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দুজনকে এর উপরেই ড্যান্স করতে হবে, যাদের পা পেপারের বাইরে পড়বে তার দল বাদ। অদ্ভুত!
আমি কালো জিন্স, সাথে লম্বা ফতোয়া আর স্কার্ফ পরেছি। চুলগুলো খোলা। রেড লিপস্টিক, ব্ল্যাক আইলাইনার-আইশ্যাডো ইউজ করেছি। মারোলা লম্বা একটা কালো গাউন পরে এসেছে।সবাই-ই কালো কাপড়ে নিজেদের সাজিয়েছে। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও ক্লেভ আসলো না। আমি, মারোলা বিরক্ত হচ্ছি। বাড়ি যেতে হবেতো।
একটা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে হলঘরের বাতি নিভে গেলো। সবাই চমকে উঠলাম। স্টেজের মতো উঁচু জায়গায় একফালি আলো পড়লো, চাঁদের আলোর মতোন। আমাদের এ্যাটেনশন সিক করা হচ্ছে বুঝলাম। সবাই তাকালাম একসাথে। হলঘরের এতো এতো মানুষ সবাই হাততালি দিচ্ছে, কারণ ক্লেভ দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। ওর পাশে একটা মেয়ে। বিশ্বসুন্দরীর চেয়ে কিছু কম নয় মেয়েটা। ক্লেভ একবার উপস্থিত গেস্টদের দিকে নজর বুলালো। আমার দিকে চোখ পড়তেই ভদ্রতা সূচক হাসি দিলো। তারপর চোখ ফিরিয়ে নিলো।
মেয়েটাকে দেখে মোটেও আমার ভালো লাগলোনা। সে একহাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ক্লেভকে। কালো প্রিন্সেস ড্রেসটার পিঠটা খোলা, তাতে মেয়েটার ফর্সা পিঠটা দেখা যাচ্ছে। মাথায় ক্রাউন। দেখতে যদিও সুন্দর তবে কাপড়টাতে ওকে একদম মানাচ্ছেনা। আমার লজ্জ্বা লাগলো, যদিও আমেরিকানদের কাছে এটা বিশেষ চোখে পড়ার মতো নয়। কারণ এরা এসবেই অভ্যস্ত! ক্লেভ সবার সাথে মেয়েটাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। ওর নাম হেইলি ডোনা। আমাদের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর কেক কাটার সময় আমরা সব বন্ধুরা ক্লেভের পাশাপাশি দাঁড়ালাম, ডোনাও দাঁড়ালো। শত শত গেস্টদের উইশ, হাততালির মাঝেই ক্লেভ বিশাল রেড ভেলভেট কেকটা কাটলো। আমি ওর কাছাকাছিই ছিলাম খানিকটা। এর মাঝে ও বেশ আশ্চর্যজনক কাজ করলো। সবার প্রথমে কেক কেটে আচমকাই ক্লেভ আমাকে খাইয়ে দিলো এবং নাক-মুখে হালকা ক্রিম মাখিয়ে দিলো। শত শত মানুষের মাঝে আমি লজ্জ্বা পেয়ে গেলাম। আর কাউকে পেলোনা এই বাঁদরটা? ইশ! রবার্ট, আলিয়া, প্যাটিসন, জেনিফার এবং ডোনা ওরা হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দুজনের দিকে। ধীরে ধীরে ডোনার ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত হয়ে এলো, রাগে ওর চোখমুখ রক্তিম হয়ে উঠলো। কিন্তু কিছু বললো না।
পরমুহূর্তেই “রেইনবো বার্থডে জোনের হলঘরে” রামধনুর সাত রঙের আভা ছড়িয়ে পড়লো। আলোয় আলোয় ঝলমলিয়ে উঠলো সবকিছু। সবাই কেক খাওয়া সহ ডিনারে বিজি হয়ে পড়লো। আমরা বন্ধুরা এক টেবিলে বসে হাসাহাসি করে খাচ্ছি। ক্লেভ এদিকওদিক দৌড়াচ্ছে, এটাসেটা দেখছে। এর মাঝেই ও কালো ড্রেসআপ চেঞ্জ করে হাঁটু সমান শর্ট প্যান্ট আর একটা নরমাল টি-শার্ট পরে নিলো।
খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিলো ওকে, এতো সুন্দর কেন ও? আমি যেভাবে নজর দিচ্ছি তাতে তো মনে হচ্ছে আমার নজরে বেচারা দুদিনেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সুদর্শন পুরুষ ও, দেখলেই আমি হার্টবিট মিস করি।
৩০.
বার্থডে পার্টি প্রায় শেষ হয়ে এলেও দু-একজন গেস্ট যায় যায় করছে। ওরা চলে গেলে শুধু আছি আমরা ছয়বন্ধু। ক্লেভ হাতের কিছু কাজ সারতে আর বিল পেমেন্ট করতে “রেইনবো জোনের” ভেতরে আছে। আমরা বাইরে ওয়েটিং জোনে ওয়েট করছি, সময় লাগবে ওর। ক্লেভের সাথে একসাথে বাড়ি ফিরবো বলে দাঁড়িয়ে আছি, তাছাড়া ওর সারপ্রাইজটা দেখার বাকি আছে। ও ভেতরে যাওয়ার পরমুহূর্তেই ডোনা এসে আমার গালে একটা থাপ্পড় মেরে বললো, ‘ইউ ব্লাডি গার্ল! তোমার সাহস হয় কি করে তুমি এডওয়ার্ডের হাতের কেক খাও? হুয়াই?’ গালি দিতে লাগলো।
আমরা সবাই তো পুরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। বিশেষ করে আমি, কারণ থাপ্পড়টা ডোনা আমাকেই মেরেছে। আমি এক হাতে গাল চেপে ধরে চোখের পানি লুকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করে বললাম, ‘I don’t understand what you are saying?’
ডোনা চোখমুখ কুঁচকে বললো, ‘Don’t get mad. এডওয়ার্ডের থেকে দূরে থাকো।’
আমি বেশ রেগে বললাম, ‘কাম টু দ্যা পয়েন্ট। তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না।’
ডোনা রাগী গলায় বললো, ‘আমি ক্লেভের বেস্টফ্রেন্ড হওয়া স্বত্ত্বেও আমাকে না খাইয়ে আগে তোমাকে খাইয়ে দিলো। আমাকে এভাবে আন্ডারএস্টিমেট করলো ক্লেভ! শুধু তোমার জন্য।’
‘ তাতে আমার দোষ কোথায়?’
‘ তোমারই দোষ। তুমি কেন ওর আশেপাশে ছিলে? নাহলে আমি এতোটা অপমানিত হতাম না।’
রবার্ট এবার রেগে বললো, ‘এতে চিটের দোষ কোথায়? এডওয়ার্ড ওকে খাইয়ে দিয়েছে এটা ওর ব্যাপার। তুমি ওকে জিজ্ঞেস করছোনা কেন? রাবিশ!’
‘ হোয়াট ডু ইউ মিন?’ ডোনা রবার্টকে রেগে বললো।
‘ আই মিন টু সে আর ইউ ম্যাড। যাও পাগলের ক্লিনিকে এডমিট হও।’ রবার্ট বললো রেগে।
এভাবে দুজনে কথা কাটাকাটি করতে লাগলো। আমার বেশ খারাপ লাগলো। আমার জন্য ওরা একটা ঝামেলায় ফেঁসে গেলো। আর ক্লেভই বা কেমন? নিজের বেস্টফ্রেন্ড রেখে আমাকে খাইয়ে দেওয়ার দরকার কি ছিলো? মেয়েটার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ও ক্লেভের ফ্রেন্ড নয়, গার্লফ্রেন্ড। আসলেই কি তাই? আমার বুকটা মুচড়ে উঠলো।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে ডোনাকে বললাম, ‘তুমি কি আসলেই ওর ফ্রেন্ড নাকি অন্যকিছু?’
‘ অন্যকিছু মানে?’
‘ তোমার নিশ্চয়ই বোঝার কথা। তুমি যেভাবে ডেসপায়ার হয়ে গিয়েছো তাতে আমার মনে হচ্ছে তুমি ওর ফ্রেন্ড থেকেও বেশিকিছু।’
ডোনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর রাগী গলায় বললো, ‘খুব শ্রীঘ্রই আমাদের বাগদান সম্পন্ন হবে। বুঝলে?’
আমরা সবাই অবাক হয়ে ডোনার দিকে তাকালাম। কারণ ক্লেভ এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেনি। এতবড় একটা ব্যাপার কাউকে জানালো না? এইজন্যই যখন আজ ওরা একসাথে ভেতরে ঢুকলো সব গেস্টরা হাততালি দিচ্ছিলো আর কেউ কেউ বলছিলো বেস্ট কাপল। এটাই কি ক্লেভের সারপ্রাইজ ছিলো যেটা সকালে বলেছিলো?
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা! কোনোমতে বললাম,
‘Thank you very much indeed Dona Adward. কথাটা জানিয়ে তুমি খুবই উপকৃত করেছো। কংগ্রাচুলেশনস ডিয়ার।’
ডোনা বিরস গলায় বললো, ‘থ্যাংকস।’
জেনিফার ডোনার দিকে বিরক্তকর চোখে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ডোনার গলা টিপে দেয়। আমার দিকে তাকাতেই আমি ইশারায় না করলাম। ডোনাকে মিষ্টি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ তোমাদের বাগদান ভালোভাবে হোক। জীবন সুন্দর হোক!’
‘ উইশের জন্য ধন্যবাদ।’ ডোনা বিরক্ত গলায় বললো।
‘ The sooner, the Better. ‘
বলে আমরা বাড়ি চলে আসলাম। ক্লেভ যে কথাটা কাউকে বলেনি তা শুনে মারোলারাও অবাক হলো। এতবড় নিউজ আর কেউ জানেই না! আমি চুপচাপ, মুখে কথা নেই। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। নীল চোখের যুবকটা যে আমাকে এতোবড় একটা সারপ্রাইজ দিবে আমি ভাবতেই পারিনি। বুকের ভেতর হাজারো কষ্ট দল বেঁধে পাক খাচ্ছে। আমার দু’চোখ বেয়ে পানি উপচে পড়ছে। একটা ক্রিশ্চিয়ান যুবক, যে ভিনদেশি, যার বাবা-মায়ের সম্পর্ক নেই তার প্রতি আমি এতো টান অনুভব করছি মনে হতেই নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করলো। যে সম্পর্ক কখনো কেউ মানবেনা সেই সম্পর্ক নিয়ে এতো ভেবে ভেবে আমি মরছি কেন? নীল চোখের যুবকটা তো তাঁর জীবনটা সাজিয়ে নিচ্ছে, তাহলে আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি? ভুলে যেতে হবে সব, হুম ভুলতে হবে। “অথচ জীবন জানে, দূরে যাওয়া মানে কাছে আসার শপথ সঙ্গোপনে।”
আদৌ এমন হবে কি? নাকি ছেড়ে যেতে হবে সবকিছু!
_সাদাত হোসাইন
চলবে….ইনশাআল্লাহ! ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।