ভিলেন পর্ব-২৩+২৪

0
843

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ২৩

———————–★★———————

শুভ: নাও খাও খাও….

___ আমি শুভ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ওয়াসরুমে গিয়ে বমি করে দিলাম….! ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সোঁজা হয়ে দাঁড়ালাম….

শুভ: কফির জন্য নিচে যাচ্ছিলাম তখন দেখি আপনি কফিটা হাতে নিয়ে মুখটা এত সুন্দর বানিয়েছিলেন আমি সিওর ছিলাম কিছু একটা গোলমাল করবেন “এখন বলেন কি করেছিলেন…!( গালে হাত দিয়ে ভাবতে ভাবতে)

আমি: কিছু করিনি….

শুভ: তাহলে কেনো খাচ্ছিলে না আর বমিটা করলে কেনো,,,

আমি: আমি কফি খাই না তাই…

শুভ: উহু…! কেসটা অন্য কিছু বলো,,,

আমি: জানি নননা…

রেগে আগুন হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম শুভ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো….

___ রুমে এসে ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আনমনে ভাবছি….

আমি: কি শয়তান ইচ্ছে করেই জেনে বুঝেই কফিটা খাইয়েছে ওকে ওকে ফাইন আমিও হাল ছাড়ছি না এমন কিছু করবো মিঃ শুভ বুঝবে কত ধানে কত চাল

___ দুলটা টক্কা দিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে নিচে চলে আসলাম……

বিকালের দিকে বর পক্ষ চলে আসলো….
আমি আর আশা গিয়ে আয়শাকে নিয়ে এসে বর কাছে বসিয়ে দিলাম….

হঠাৎ শুভ ইশারা করে ডাক দিলো পাত্তা না দিয়ে দাড়িয়ে সবার সাথে গল্প করতে লাগলাম

আহিরা: আপু জিজু ডাকছে,,,

আমি: গিয়ে বল যেতে পারবো না,,,

আহিরা: প্লিজজ চলো না যেতে বললো এক্ষনি…

আমি: উফফ আচ্ছা যাচ্ছি চল..!

আহিরা সাথে হাঁটা দিতেই আয়শা হাতটা টেনে ধরলো,,,

আমি: কি হলো আয়শা,,,

আয়শা: প্লিজ ভাবি আমার পাশে থাকো না….

আমি: কেনো কোন সমস্যা

আয়শা: না মানে একটু নার্ভাচ লাগছে,,,

আমি: হা হা,,,,আচ্ছা কোথাও যাচ্ছি আছি এখানেই,,,,

কোন ভাবে আহিরাকে পাঠিয়ে দিয়ে আয়শার পাশে দাড়িয়ে রয়লাম…. হঠাৎ পিছন থেকে হাতটা ধরে কেউ একজন টেনে নিয়ে ফাঁকে চলে আসলো,,,

আমি: আপনি… কি হচ্ছে এভাবে টানছেন কেনো,,,,

শুভ: তো কি করবো কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি,,,

আমি: দেখুন এমন করলে আমি কিন্তুু বাসা থেকে চলে যাবো… ( বিরক্ত নিয়ে)

___হঠাৎ শুভ আমার পিছনে গিয়ে চুলের সাথে বেলিফুলের মাালা লাগিয়ে দিয়ে আমার হাতের আগুলটা ধরে ঘুরিয়ে দিলো….

শুভ: খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে…!

শুভর কান্ড দেখে রাগবো নাকি হাসবো বুঝতেছিনা,,,ঠিক তখনি নদী আসলো,,,,

নদী: আদিবা তুমি এখানে ওখানে আয়শা খুঁজছে,,,,,

আমি: ওহহ আচ্ছা আমি এক্ষনি যাচ্ছি….!

শুভ: এইইই….

তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে আসলাম…..

আয়শা: কই গেছিলে হুট করে,,,

আমি: সরি সরি একটু দরকার ছিলো

আয়শা: ওহহ আচ্ছা,,,

আমি: হুমম…!

একটু বিয়ে শুরু হয়ে গেলো শুভকে কোথাও দেখতে পেলাম না…… ভাবলাম কোন কাজে ব্যস্ত হয়তো
সন্ধার পর বিয়ে সব কাজ সম্পূর্ন হলো আয়শাকে বিদায় জানানোর পালা….

মা: শুভটা কই গেলো কখন থেকে দেখি না…!

আশা: কই যে গেলো ভাইয়া,,,দ্বারাও দেখছি,,,

আমি: কি হয়ছে মা

মা: শুভ কই গেলো দেখছি না তো,,

আমি: ঠিকি তো কখন থেকে দেখছি পাচ্ছি না কই গেলো,,,( মনে মনে)
আচ্ছা মা আমি দেখছি কেমন

মা: আচ্ছা দেখো,,,

___ বাগানের চারপাশটা ঘুরলাম সাদে ও খুঁজে আসলাম কোথাও পেলাম না

আমি: আজব মানুষ তো হঠাৎ কই উদাও হলো। রুমে নেই তো একবার দেখে আছি,,,,,

তাড়াতাড়ি করে রুমে দিকে হাঁটা দিলাম বুকের ভিতর কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে….
উপরে এসে শুভর রুমে দরজা টা খুলে যা দেখার কখন কল্পনাও করিনি নিঃস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রয়লাম….
আমাকে দেখেই শুভ তাড়াতাড়ি করে নদীর উপর থেকে উঠে দাড়ালো নদীও উঠে দাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করতে লাগলো,,,,

শুভ: আদিবা…. ( ভয়ে ভয়ে)…

__একটা পাথরের মতো দাড়িয়ে শুভর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে হঠাৎ টপ করে চোখ দিয়ে পানি পড়তেই তাড়াতাড়ি মুছে ফেললাম….

শুভ: তুমি এখানে,,,( গলা টান টানতে)

আমি: নিচে আসলে আয়শার বিদায় হচ্ছে তাই মা খুঁজছিলো আপনাকে…! আমমমি বুঝতে পারিনি আপনাদের এভাবে ডিস্টার্ব করবো রিয়েলি সরি প্লিজ মাফ করবেন ( দু হাত দুলে)

শুভ: আদিবা যেমনটা ভাবছো তেমনটা নয়…

আমি: নিজে আসেন মা ডাকছে,,,

শুভ: আদিবা আমার কথাটা,,ও সিটট….

___চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে দেওয়াল ঘেষে দাড়িয়ে মুখটা চেঁপে কাঁদতে লাগলাম…. হঠাৎ মা এসে কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম

মা: শুভকে পাইছো,,,

আমি: মা… হ্যাঁ রুমে ছিলো আসছে,,,

মা: ওহহ আচ্ছা তুমি এখানে দাড়িয়ে যে এসো

আমি: হুমম যাচ্ছি যান আপনি

মা: তাড়াতাড়ি এসে…

আমি: হুম,,,

___মা চলে যেতে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম পিছন থেকে শুভ ডাকতেই আর এক মিনিট না দাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে এসে সবার সাথে মিশে গেলাম……
আয়শাকে সবাই মিলে বিদায় দিলাম… উপরে রুমে যাচ্ছি তখনি শুভ এসে হাতটা ধরে সোঁজা সাদে নিয়ে আসলো,,,

আমি: হাত ছাড়েন…( ঝ্যাঙ্গটা দিয়ে )

শুভ: আদিবা ট্রাস মি ওখানে যা দেখছো একদম ওমন নয়,,,

আমি: একবারও আমি আপনাকে কিছু বলছি এই বিষয়,,,,,

শুভ: বাট

আমি: ব্যসস ( হাত তুলে) আর কিছু শুনতে চাই না…. ওই যে সে দিন কথা মনে আছে আপনাদের খুব ঘনিষ্ট ভাবে দেখেছিলাম আজ তো আবার ( মাথা নিচু করে) যায় হক আপনারা একে অপরেকে ভালোবাসেন ভালো কথা আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা….!

শুভ: কে বুঝার চেষ্টা করো এটা যাস্ট একটা…..

আমি: থাক না আপনাকের পার্সনাল কথা থাক ( শুভর দিকে তাকিয়ে)

শুভ: প্লিজ আমার কথাটা শোন

___ শুভ আমার কাঁধে হাত রাখতেই ছিটকিয়ে ছড়িয়ে দিলাম

আমি: আপনার ওই নোংরা হাতে আমায় ট্রাস করবেন না…..

শুভ: আদিবা,,,,,

আমি: কাল ভোর হলেই চলে যাবো আমি আপনার এই জঘন্য মুখটা দেখতে চাই না…. ( রেগে)

শুভ: ঠাসসসস…!

আমি: শুভভভ ( গালে হাত দিয়ে)

শুভ: আর একটা আওয়াজ করলে এখান থেকে নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো….. খুব বার বেড়েছে তাই না বলছি তো নদীকে আমি ভালোবাসি না বাসি বাসি ও যাস্ট আমার একটা ভালো বন্ধু…..

আমি: বাহহ কেমন বন্ধু যার সাথে একি বিছানায়….

শুভ: ঠাসসসস…!

আমি: শুভভভ ( রাগান্বিত হয়ে)

শুভ: মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ….

আমি: হাত ছাড়ড় তুই….হাত ছাড়ড়( চিল্লিয়ে) ….

সাদ থেকে হাঁটা দিতেই শুভ আমার হাতটা ধরলো,,,

শুভ: আমার কথা না শুনে যেতে পারবে না,,,,

আমি: হাত ছাড় তুই…

শুভ: আমার সব কথা শুনতে হবে,,,

আমি: কি শুনবো তোর প্রেম কাহিনি এসব নোংরা কৃত্তি-কলা,,,,

শুভ: আদিবা…

আমি: আর কখন আমার সামনে আসার ভুল ও করবি না তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,,আমি তোকে ঘৃন্না করি ঘৃন্না…..

___শুভ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সাদ থেকে নেমে আসলাম শুভও পিছন পিছন হাঁটা দিলো… আমি সোঁজা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বেলকুনিতে দাড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম……

আমি: কেনো খুদা কেনো এমন টা করছো আমার সাথে যখন তার প্রতি ঘৃন্না জন্মিয়েছো তাহলে কেনো এমন পরিস্থিতে ফেলো যেখানে বার বার দূর্বল হয়ে পরছি…. পারছি না আর নিতে চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে দৃশ্যটা…….

___কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লাম…..

★★ সকালে চোখ মেলে দেখি বেলকুনিতে ফুলের টপ হেলান দিয়ে বসে আছি….

আমি: কখন যে ঘুমিয়েছি বুঝিনি…! উফফ মাথাটা যন্ত্রনা করছে…

___বসা থেকে উঠে কোন মতে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে সবটা গুছিয়ে নিলাম…

আমি: থাকবো না আর একটা মুহূর্ত এখানে এক সেকেন্ডও না…..

ব্যাগটা রুমে এক কোনে রেখে নিচে আব্বু আম্মু বলার জন্য বাইরে বের হতেই..

আশা: ভাবি… কাল রাতে এতো ডাকলাম কি করছিলা ভিতরে

আমি: সরি গো ঘুমিয়ে গেছিলাম….

আশা: ওহহ আচ্ছা,,,বাই দ্যা ওয়েহ সকাল সকাল এতো সাঁজুগুজু,,,,,

আমি: বাসায় যাবো,,,

আশা: ওয়াটট,,,,, পাগল নাকি,,,

আমি: হুমম পাগল….

___হাঁটা দিলাম আশা বক বক করতে পিছন পিছন আসতে লাগলো….

দু সিড়ি নামতেই হঠাৎ পা টা পিছলে গেলো….

আমি: আহহহহহহহহহ….

আশা: ভাববববি ( চিৎকার করে)

___সিড়ি গড়িয়ে নিচে নেমে পড়লাম…মাথা ফেঁটে রক্ত শরীর বয়ে বয়ে পড়তে লাগলো নিচ বসে থাকা সবাই দৌড়ে চলে আসলো….

মা: বউমা…..

আম্মু: আদিবা…এই সোনা…

___চারপাশে সবার চিল্লাচিল্লিতে শুভ রুম থেকে বের হয়ে দেখে নিচে ফ্লোরে রক্ত বন্যা বয়ে যাচ্ছে দৌড়ে নিচে নামতেই…..

আশা: ভাইয়া সাবধান ওখানে পিছলে….

শুভ দাড়িয়ে গেলো….

শুভ: তেল এখানে…! রহিমমমমমা

রহিমা: ভাইজান আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম দেখিনি….

শুভ: তোকে তো…..

রহিমা: ভাইজান মাফ করেন…..

মা: শুভ আগে আদিবাকে বাঁচা….

শুভ দৌড়ে এসে আমাকে কোলে নিতে….

শুভ: আদিবা তাকাও প্লিজজ…

নদী: এ আল্লাহ… এসব কি করে হলো…

মা: জানি না হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো দৌড়ে এসে দেখি এমন,,,,

নদী: ইসস কি অবস্থা মনে হচ্ছে তো বাঁচবে না মেয়েটা…

শুভ: নদদদদী ( ধমক দিয়ে)

আম্মু: এমন করে বলো না দোহায় ( কেঁদে)

নদী: সরি সরি প্লিজ এমন করে বলতে চাইনি যে অবস্থা… শুভ ওরে তো হসপিটালে নিতে হবে চল আমি যাচ্ছি….

শুভ: তোকে যেতে হবে না সর,,

নদী: আরে….

আশা: তুমিও আপু সত্যি এই পরিস্থিতে….

সবাই মিলে হসপিটালের দিকে রৌনা দিলো….

নদী: আরে…..হা হা হা যাও যাও নিয়ে যাও যেখানে খুশি নিয়ে যাও … আমিও দেখবো ৪৪ টা সিড়ি গড়িয়ে পড়ে একটা মেয়ে কেমনে বাঁচে….! ( বিড় বিড় করে)

রহিমা: নদী আপামনি কিছু বললে…

নদী: না না… যা কাজ কর….

হঠাৎ নদীর ফোন বেঁজে উঠলো রিসিভ করে,,,,

নদী: বেবি ডান……

নদী হাসতে হাসতে চলে গেলো,,,

রহিমা: উনি কি মানুষ একটা মেয়ে মরতে বসেছে আর উনি ছিঃ….( মুখ বাঁকা করে)……

_____ঘন্টাখানিক পড়….

আম্মু: আমার মেয়েটা বাঁচবে তো…( কেঁদে কেঁদে)

মা: কি যাতা বলছেন ভাবি….

আম্মু: কইদিন আগে বড় অর্পরেশন থেকে বাঁচলো এখন আবার এতো আঘাত নিতে পারবে না…..

বাবা: ভাবি টেনশন করেন না আল্লাহ ভরসা বউমার কিছু হবে না,,,,

মা: ওই তো শুভ… বাবা ওখানে কি খবর,,,

শুভ: নিশ্চপ,,,,

আশা: আম্মু ওখানে কিছুই জানা যাচ্ছে না নার্স বললে খুব খারাপ অবস্থা,,,,,

আম্মু: সিনহা কে একবার জিগাঞ্জা করো না আমার মেয়েটা কেমন আছে,,,

আয়শা: ভাইয়া,,,আম্মু ভাবি ঠিক আছে তো,,,

মা: কোন খোঁজ পাইনি এখন,,,

আয়শা: হঠাৎ কি হলো,,,

___আশা সবটা খুলে সবাইরে বলতে লাগলো তখনি ডক্টর আর সিনহা আসলো,,,,,,

শুভ: সিনহা আদিবা কি অবস্থা…

আব্বু: আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো,,,

সিনহা: কাকু আদিবার প্রানটা হয়তো বাঁচাতে পেরেছি বাট মাথায় যতটা না আঘাত পেয়ে তার থেকে পায়ে বেশি আঘাত পেয়েছে হাঁটতে পারবে কিনা সন্দেহ বাট আমরা চেষ্টা করি বাকিটা…( মাথা নিচু করে)

____ সিনহা কথা শুনে শুভ ধপাস করে বসে পড়লো…..!

নদী: উফফ সিটট….! আদিবা আদিবা আদিবা তোর কই মাছের প্রান নাকি…..পা ভেঙ্গে কি হবে প্রানটা কেনো গেলো না নিজের উপর যে রাগ হচ্ছে,,,,বাট আদিবা বাঁচলে তো চলবে না ওরে তো আমি বাঁচতে দিবো,,,,,
আদিবা ওয়েট এন্ড সি আমিও দেখবো তুই কি করে হসপিটাল থেকে প্রান নিয়ে বাসায় যাস…..

( চলবে)

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ২৪

——————–★★————————

আম্মু: এটা কি হলো আমার মেয়েটার সাথে…! কেনো কেনো হলো…?

আব্বু: কেনো আমার মেয়েটার সাথে অন্যায় হয়…

আম্মু: যদি আমরা ওই বাসায় না আসতাম… যদি মেয়েটাকে জোর না করতাম এমনটা হতো না ( কাঁদতে কাঁদতে)

মা: ভাবি এভাবে বলছেন কেনো….

আম্মু: মেয়েটাকে জোর করে ঠিক করিনি কেনো গেছিলাম। ওগো থাক না সমাজ আমাদের মেয়ে বেশি হয়নি আমাদের কাছেই আগলে রাখবো আর কোথাও যেতে জোর করবো না…

আব্বু: তুমি এমন পাগলামু কেনো করছো,,,

আম্মু: তুমি চুপ থাকো… আজ যা কিছু হয়ছে সবটা তোমার জন্য তোমার জিদের কারনে কেনো সেইদিন জোর করছিলে আজ যদি এই বাসায় না আসতাম এমন হতো না কখন…..

সিনহা: কাকিমা তুমি এমনটা ভাবছো কেনো প্লিজ নিজেকে শান্ত করো,,,

আম্মু: কি শান্ত করবো বল যেদিন থেকে এই ছেলেটার ( শুভ) বিয়ে হয়ে আমার মেয়েটা এক ফোঁটাও শান্তি পায়নি শুধু কষ্ট পেয়ে গেছে….

মা: ভাবি প্লিজ ভুল বুঝবেন না স্বামী স্ত্রী মাঝে তো মান অভিমান হয় ওদের একটু সময় তো দিতে হবে,,,

আম্মু: সময় দিতে গিয়ে আজ আমার মেয়ে এই অবস্থা আর কোথাও যাচ্ছে না আমার মেয়ে ও আমার কাছেই থাকবে যত্ন করে রাখবো আমার মেয়েটাকে….

আম্মু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেলো…..

আব্বু: আরে শুনো না…. এর মাথায় আবার কি হলো,,,,

মা: মায়ের মন তো থাক না ভাইজান একটু সময় দেন সব ঠিক হবে,,,

বাবা: হুমম ঠিক বলছ….

আব্বু: হুমমম…..!

★★ পরের দিন সন্ধার দিকে…! নার্স কে বের করে দিয়ে
নদী কেবিনে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে আমার গাল চেঁপে ধরলো…

নদী: কি কপাল তোর…. কিন্তুু এই কপাল পোড়ানোর জন্য আমিই আছি…..

___নদী সেলাইন পাওয়ার বেড়ে দিয়ে মুখ থেকে অক্সিজেন মাক্স খুলে দিতেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম…….

নদী: এখন দেখবো কেমনে বেঁচে ফিরিস নিজে দাড়িয়ে তোকে ওই উপরে পাঠিয়ে দিবো মাই সুইড ডার্লিং ( গাল চেঁপে ধরে)

___হঠাৎ তখনি কেবিনে শুভ ডুকলো…! শুভকে দেখি নদী ভেঁবাচেঁকা খেলো….

শুভ: নদী…

___ শুভ দৌড়ে গিয়ে অক্সিজেন মাক্সটা লাগিয়ে সেলাইন পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে নদীর দিকে তাকাতেই নদী মুখ ঘামতে শুরু করলো…….

শুভ: আমি বিশ্বাস করিনি যখন রহিমা তোর ফোনে কথা বলা শুনে আমায় বলেছিলো ট্রাস কর তুই এমন একটা ঘটনা ঘটাবি আমি কল্পনা করিনি….. কেনো করলি এমন বল তুই না আমার বেষ্টফ্রেন্ড….

নদী: আহহহ ( ঘাম মুছতে মুছতে) শুভ আমি করিনি বিশ্বাস কর….

শুভ: ঠাসসসসসসস…! এতোটা নিচে নেমে গেছিস তুই না একটা মেয়ে তাহলে আরেকটা মেয়েকে এভাবে শেষ করতে তোর বুঁকটা কাঁপলো না ছিঃ…. মেয়েটা হাঁটতে পারবে কি না তাও সন্দেহ আর তুই এই অবস্থায় তোকে আমি কি বলবো বুঝতেছি না…( কপালে হাত দিয়ে)

___শুভ একটা ধমকে নদী কেঁপে উঠলো তখনি কেবিনি সবাই ছুটে আসলো

মা: শুভ কি হয়ছে এমন করছিস কেনো,,,

সিনহা: ভাইয়া এটা কেবিন চিৎকার করছেন কেনো,,,,

শুভ: ওহহ সরি….

___শুভ নদীর হাতটা ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এসে ছুড়ে মারলো…..

বাবা: কি করছিস মেয়েটার সাথে…

মা: শুভ কি করছিস এটা ….

রহিমা: খাল্লাম্মা এই মেয়ে কোন মেয়ে নয় একটা ডাইনি…!

আয়শা: কি বলছিস….

রহিমা: ঠিকি বলছি এই মেয়ে বউমনিকে ইচ্ছে করে সিড়ি থেকে ফেলে দিছে….!

আম্মু: কিহহ…

মা: কি বলছিস তুই….

রহিমা: ঠিকি বলছি ইচ্ছে করছে তো জুতা খুলে পিটাই….

নদী: রহিমা ( চোখ পাকিয়ে)

শুভ: এইইইই আওয়াজ নিচে….

নদী: শুভ আমি করিনি এমনটা ট্রাস মি….

শুভ: কেনো করলি এমনটা বল….

নদী: করিনি করিনি করিনি হাজার বার বলছি….

শুভ: ঠাসসসস ঠাসসসস….!

নদী: শুভভ…

শুভ: নিজের চোখে দেখছি তুই আদিবার অক্সিজেন মাক্স খুলছিস মেয়েটা কতটা কষ্ট পাচ্ছি আর তুই মজা নিচ্ছিলি তুই কি ভাবিস তোর উপর নজর সব সময় ছিলো আমার…..

রহিমা: এই ডাইনি একা নয় ওই তুষার ও আছে আমি শুনেছি এদের কথা রাক্ষসি মেয়ে আমার বউমনি জীবনটা খেয়ে নিচ্ছিলো….

শুভ: বল কেনো করলি… আমার এত বড় ক্ষতি করে তোর তো লাভ নেই…

নদী: আছে লাভ…… আমি বড্ড ভালোবাসতাম তুষার কে কিন্তুু এই আদিবা জন্য কখন তুষারকে ভালোবাসার কথা বলতে পারিনি…. কষ্ট হতো খুব যখন তুষার বার বার আদিবাকে ভালোবাসার কথা বলতো…… যখন সবটা সামনে আসলো ভেবেছিলাম তুই অনন্ত তুষারকে ক্ষমা করবি আর আমি তুষারকে নিজের করে পাবো বাট তুই ক্ষমা করলিনি দিলি ওই অন্ধকার জেলে যেখানে তুষার রোজ কষ্টে মরছে…..আর তোরা এখানে প্রেম নিলায় মেতে উঠেছিস পারিনি নিতে যার জন্য এত কাহিনি তাকেই মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম…..!
আমি যদি আদিবাকে শেষ করতে পারি তাহলে তুষার খুব তাড়াতাড়ি জেল থেকে বের হয়ে আসতে পারবে তখন আমি বিয়ে করবো আর আমরা একটা নতুন সংসার শুরু করবো…..!

শুভ: কেনো রে একবার বলতে পারতি তুই..! তুই আমার জন্য যা করেছিস তোর জন্য এটুকু করতে পারতাম না এনে দিতাম তোর ভালোবাসা তোর কাছে বাট তোরা দুটো বাহ এই তোদের ফ্রেন্ডশিপ…. আমার সংসার আমার বউয়ের ক্ষতি করে তোরা সুখী হবি বাহহহ বাহহ জবাব নাই তোদের তোরা দুটোই বেইমান….

মা: ঠাসসসসস…! ছিঃ নদী এতটা নিচে নেমে গেছো….

বাবা: ছিঃ নদী….

আয়শা: নদী আপু আমি সব সময় তোমাকে সম্মান করতাম ভালোবাসতাম আর তুমি এটা কি করলো…!

নদী: বিশ্বাস করো শুধু নিজের ভালোবাসার জন্য এমন পাপ কাজ করেছি…..! শুভ প্লিজজ ক্ষমা করে দে…..

শুভ: ক্ষমা তোকে ,, তোকেও তুষার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি তোরা না হয় ওখানে গিয়ে সংসার করছিস…!

নদী: শুভভভ…..

শুভ: হুমমম….! তোর মুখও আমার আর যাস্ট সয্য হচ্ছে না…

নদী: প্লিজজ এমনটা করিস না আমি ওই অন্ধকারে একটা মুহুত থাকতে পারবো না তুই জানিস অন্ধকার আমার কতটা ভয় করে,,,

মা: তাহলে তোমার একবার ভাবা উচিত ছিলো এই কাজের ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে….

শুভ: একদমি তাই যখন অন্যায় করেছিস শাস্তি তো পাবি আর সত্যি বলতে তোকে আর আমি বিশ্বাস করিনা যদি আদিবার আবার কোন ক্ষতি করে দিস….

নদী: কসম আর কোন ক্ষতি করবো না প্লিজ ক্ষমা করে দে শুভ ( কেঁদে কেঁদে)

শুভ: সরি….!

____পুলিশ এনে নদীকে যেতে লাগলো…!

নদী: শুভ এটা ঠিক করলি খুব খারাপ করলি..আমি তোকে কখন আদিবার সাথে হ্যাপি হতে দিবো না কখন না…..!

___নদী কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো…! শুভ পাশের বেঞ্চ কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লো….

মা: শুভ….

শুভ: কেনো এমন হলো বলো না… যাদের নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম ভরসা করতাম সেই দুটো মানুষ এভাবে আমার বিশ্বাসে আঘাত করলো….

মা: হুমমম….

___মা শুভকে বুকে নিতেই শুভ কান্না করে দিলো….!

★★ পরের দিন ভোরে জ্ঞান ফিরে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করলাম চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শুভ বুকে মাথা রেখে হেলান দিয়ে সুয়ে আছে…… আসতে করে অক্সিজেন মাক্সটা খুলে ডাকতে লাগলাম আমার কথা শুনে শুভ নড়েচড়ে উঠলো,,,,

শুভ: আদিবা…!

আমি: হুমম,,,,

শুভ: ঠিক আছো তো….

সিনহা: আদিবা আর ইউ ওকে…

আমি: হ্যাঁ… আহহহ

শুভ: কি হলো….

আমি: খুব লাগছে একটু হেল্প কর উঠবো…হাতে আর পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা করছে

শুভ কিছু বলতে যাবে তখনি সিনহা ইশারা করে থামিয়ে দিলো…

সিনহা: পড়ে গেছিলি তো একটু ব্যাথা লাগছে আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে….!

শুভ: হুমম সব ঠিক হয়ে যাবে…

আম্মু: সোনা…! ওর জ্ঞান ফিরতে কেউ ডাকো নি তো… আমার মেয়েটা….. ( গালে মুখে চুমু খেয়ে)

আমি: আম্মু….

আস্মু: তুই ভালো আছিস তো সোনা..

আমি: হুমম কিন্তুু পায়ে আর মাথায় খুব লাগছে…..!

আম্মু: সিনহা বলছে সব ঠিক হয়ে যাবে একটু কষ্ট সয্য করে নি…..

আমি: হুমমম….

____ আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো….

___সিনহা বের হয়ে গেলো পিছন পিছন শুভও চলে গেলো….

শুভ: সিনহা….

সিনহা: সরি ভাইয়া আমার আর কিছু করার নায়….! সময় লাগবে এখন আর কোন সার্জারি করা যাচ্ছে না যেহেতু আদিবার কিছুদিন আগে বড় একটা অপরের্শন করা হয়েছে……!

___সিনহা চলে গেলো….
শুভ চোখ বয়ে পানি টপ টপ করে পড়তে লাগলো……!

( চলবে)