ভুলিনি তোমায় পর্ব-১৪

0
3552

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :১৪

একজন মা যেমনই হোক কোনো সন্তানের অধিকার নেই তার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার।মা তো মা ই হয়।বিষয়টা আমি বুঝতে পেরেছি শুধুমাত্র আমার বাবার কারনে।একটু আগে উনি যখন আমাকে আবার মারতে এসেছিলেন তখন এহসান ভাইয়া উনাকে বলেছেন যে আমাকে যেনো বুঝিয়ে বলে তাহলে আমি বুঝবো।তাই বাবা আমাকে না মেরে বুঝিয়েছেন এবং আমি খুব ভালো করে বুঝিছি। বাবার শেষ কথা ছিলো,,”কখনো নিজের ভুল বুঝতে পারলে সেটাকে তেনা পেঁচিয়ো না, নিজের ভুল স্বীকার করে নিবে।”

বাবার কথামতো আমি বুঝলাম যে আমি সত্যিই ভুল করেছি তাই বাবার কাছে কানে ধরে সরি বলেছি।কিন্তুু বাবা বললেল ভুল কী তুমি আমার সাথে করেছো যে সরি বলেছো আর আমি ক্ষমা করে দিবো।যার সাথে বেয়াদপি করেছো তার কাছে ক্ষমা চাও।
(গল্পের নায়িকারে যে ভুল করবে না এমন তো কোনো কথা নেই,,আর যারা বলেছেন মায়ের সাথে বেয়াদপি করে ঠিক করেছে তাদের আমি মোটেও সাপোর্ট করি না,, মা যেমনই হোক মা তো মা।মায়ের সাথে বাজে ব্যবহার কোনো সন্তানই করতে পারবে না,, এই বিষয়টা বুঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তুু আপনাদের মন্তব্য দেখে আর এ বিষয়গুলো টানতে মন চাইছে না,, আপনারা যেমন চাচ্ছেন ওইভাবে লিখবো।দুঃখিত)

অতঃপর বাবার কথা শুনে পুনঃরায় মায়ের কাছে গেলাম।আমি একাই আসলাম, অনেক দ্বিধা-দ্বন্ধ নিয়ে ভেতরে গেলাম।
সোজা গিয়ে আম্মুর সামনে কান ধরে ক্ষমা চাইলাম।আম্মু অনেক কিছুই বলেছে আমি সব চুপচাপ হজম করেছি।
এরপর হুট করেই আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইলাম।এতে যেনো আম্মু কিছুটা দমে গেলো।উনি আমার চোখের পানি মুছে দিলেন।তারপর উকিঁঝুকি দিয়ে দেখলেন কেউ আছে কী না?কাউকে না দেখে উনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।আমাকে অনবরত কান্না জড়িত কন্ঠে অনেক প্রশ্ন করতে লাগলেন কিন্তুু আমি তো উনার জড়িয়ে ধরাতে ফ্রিজড হয়ে আছি।
হঠাৎ উনি এমন করায় আমার অবাক লাগতেছে,আমি কিছুই বুঝতেছি না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বললেন,,” আমাকে ক্ষমা করে দিস,,আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।কিন্তুু আমি নিরুপায় ছিলাম।তোর নানা-নানু আমাকে জোর করে তোর বাবার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো।আমি মোটেও বিয়েটা মানতে পারি নি।এমনকি বিয়ের চার বছর পরেও আমি তোর বাবাকে ঠিক মতো মানতে পারি নি।চার বছর পর হঠাৎ প্রিয়ার আব্বু বিদেশ থেকে আসার পর যখন জানতে পারে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তখন ও সুইসাইড করার চেষ্টা করে।এ খবর শুনতেই আমি ওকে লুকিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম তখন ও আমাকে নানারকম ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে,পরে আমিও আর না করতে পারি নি।আমি জানি বিষয়টা শুনতে খুব খারাপ লাগছে,আসলে কী ভালোবাসার মানুষ ছিলো তাই আমি ওর কথাতে গলে যায়। প্রিয়ার আব্বুর সাথে চলে আসার পর আমার রাতদিন তোদের কথা মনে পড়তো, এত বছর সংসারের ও তো একটা টান ছিলো। আমি মাঝে মাঝে খুব কাঁদতাম,অনেক ক্ষমা চাইতাম। নিজের সাথেই চোখ রাখতে পারতাম না সেখানে তোদের কাছে কীভাবে ক্ষমা চাইতে যেতাম।সেদিন তোকে দেখার পর তোর গলায় আমার দেওয়া সেই হারের কারনে চিনে ফেলেছিলাম।আমি ইচ্ছে করেই তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম যাতে তুই আর আমার খবর না নিস।তাই কয়েকদিন ওখানে যাই নি, আমি ভেবেছিলাম তোরা আমার খবর নিবি না কিন্তুু পরে দেখি তোরা দুজনই আমার পিছন এসেছিস।এরপর তো যা হলো তা দেখেছিস।
চেয়েছিলাম আমাকে ভুলে যেনো তোরা ভালোভাবে জীবনযাপন করিস,,কিন্তুু হলো উল্টো। ক্ষমা করে দিস রে আমি তোদের পাপী।আমার কারনে তোদের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”আমি বললাম,,মা আমরা তো তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”মা কান্নামাখা কন্ঠে বললেন,,”তোরা ক্ষমা করে দিলেও উপরওয়ালা আমাকে দেয় নি।”
আমি বললাম,,” মানে?”

তখন মা বললেন,,”আমি বেশি দিন বাঁচবো না,আমার ব্লাড ক্যান্সার।আমার কিছু হয়ে গেলে আমার সন্তানদের কী হবে,ওরা আমাকে ছাড়া কিছু করতেও পারে না।”এ কথা বলতেই মায়ের চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়তে লাগলো। উনি আরো অনেক কথা বললেন,,শেষে আমি উনার থেকে আবারো ক্ষমা চেয়ে চলে আসলাম।পথে হাটতেছি আর ভাবতেছি এসব কী ছিলো?আমি মায়ের সাথে কেনো এমন করলাম?খুব বড় ভুল করে ফেলেছি,, কিন্তুু আমি তো ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছি তাই না?আমাকে নিশ্চয় ক্ষমা করে দিবেন।কিন্তুু মায়ের জন্য খারাপ লাগতেছে,,দোয়া করি উনি যেনো সুস্থ হয়ে যায়।আমার সাথে যা হয়েছে উনার সন্তানের সাথে যেনো তা না হয়।
এসব ভাবতে হাটতে হাটতে মেইন রাস্তার পাশে আসতেই দেখলাম, রাস্তার পাশে অনেক ভীড়।আমি ওখানে যেতেই যা দেখলাম তা দেখে আমার হুশ উড়ার মতো অবস্থা।
দেখলাম, রাস্তার পাশে অনেক রক্ত আর পাশেই পড়ে আছে আমার বাবার নিথর দেহ।বাবা থেকে একটু দূরে এহসান ভাইয়া পড়ে রয়েছেন, উনার শরীরেও হালকা পাতলা জখমের দাগ।লোকজন বলাবলি করছে, রাস্তাপার হওয়ার সময় বেখেয়ালীভাবে হাটতেই নাকী উনারা এক্সিডেন্ট করেন।এদিকে এসব দেখতেই আমার পুরো শরীর শিউরে উঠলো।সারাদিনের ক্লান্তি আর একের পর এক শকিং খবর শুনতেই শরীর অবশ হয়ে এলো।তার উপর আগে থেকে প্রেশারের সমস্যা,আর নিতে পারলাম না ওখানে প্রেশার লো হয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলাম।
যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করলাম।আমার পাশে কেয়া আপু বসে আছেন,,দেখে মনে হচ্ছে কান্না করেছেন।আমি বাবার কথা বলতেই উনি বললেন,,”বাবা নাকী মারা গিয়েছেন।”এটা শুনতেই আমি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম।ডাক্তার এসে আমার চেক আপ করে আপুকে বললেন আমি নাকী মেন্টাল ট্রমাতে আছি।আমি কিছুই বুঝলাম না। ডাক্তারের নির্দেশে আমাকে বাবার লাশ দেখতে দেওয়া হয় নি। ফুফি আমাকে ফুফির বাসায় নিতে চেয়েছিলেন আমি যাই নি।জোর করে নিজের বাসায় চলে গিয়েছিলাম।প্রথমে অনেক কেঁদেছিলাম,, কয়েকদিন পর অস্বাভাবিক হয়ে যায়।এখন সবাই আমার এমন ব্যবহার দেখে বলে আমি নাকী পাগল। এরপর এসব হলো।”

বর্তমানে,,

উনারা সবাই এখনো আলোচনা করছেন।ফুফিদের আলোচনায় একেক জন একেক কথা বলতে লাগলেন।শেষমেষ উনারা সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে রেদোয়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিবেন।এটা শুনতেই আমি আর রেদোয়ান ভাইয়া দুজনেই চমকে গেলাম। রেদোয়ান ভাইয়া উনাদের অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তুু উনারা কেউ মানেন নি।এদিকে আমাকে কিছুই বলছে না উনারা সব নিজে নিজে ঠিক করতেছেন। রেদোয়ান ভাইয়া কেনো মানছেন না তা খুব ভালো করেই জানি।পাশের বিল্ডিং এর নিচতলার রেশমি আপুর সাথে উনার আট মাসের রিলেশন চলতেছে,,তাই উনি মানতেছে না।এটা ভাবতেই আমার আবার আমার হাসি পেলো।

চলবে???