ভুলিনি তোমায় পর্ব-১৭

0
3133

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :১৭

কী হলো,বলো এখন কীভাবে কথা বলেছো?এতক্ষণ তো চুপ ছিলে,তাহলে?

আমি কিছু বললাম না,,উনি নিজে নিজে বলতে লাগলেন,,,”আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাসর রাত আর আমি জ্বালাবো না,তা হয় নাকী?আমি তো যাচ্ছি,,তুমি যেতে চাইলে আসতে পারো..!!”

আমি ঘুমানো অবস্থা থেকে উঠে বসে উনার হাত ধরে ফেললাম,সাথে সাথে উনি থেমে গেলেন।পিছন ফিরে আমার দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকালেন।

উনি হাতের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,,”কি হলো,হাত ধরেছে কেনো?হাত ছাড়ো..!!”

উনি হাত টেনে ছাড়াতে চাচ্ছিল আর আমি টেনে ধরে রাখতে ছিলাম।আমাদের টানাটানির মাঝেই উনার ফোন বেজে ওঠলো।

আমি হাত ছেড়ে দিতেই উনি উঠে ফোনের কাছে গেলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই উনার মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।

উনি হেসে হেসে কল ধরে ফোন কানের কাছে নিয়ে বলতে লাগলেন,,”কী রে শালা,,এই রাতেও ফোন?ভয় পাচ্ছিস নাকী?”

ফোনের ওপাশ থেকে কী বললো সেটা শুনতে পেলাম না।তবে ওপাশের কথা শুনতেই উনার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে ওঠলো।
উনি চিন্তিত কন্ঠে বললেন,,”কী বলিস?দাড়া আমি আসছি..!!”

কথাটি বলেই উনি ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায়য় ফেলে দিলেন।আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন,,”রেদোয়ান ফোন দিয়েছে,,ওর রুমে যেতে বলেছে।রেশমির নাকী কী হয়েছে,,চলো..!! ” কথাটা শেষ করেই উনি গটগট করে হাটতে লাগলেন।আমিও দ্রুত উঠে উনার পিছন পিছন যেতে লাগলাম।

উনি দরজায় একটা টোকা দিতেই রেদোয়ান ভাইয়া দরজা খুলে দিলেন।উনাকে দেখে রেদোয়ান ভাইয়া কিছু বলতে নিচ্ছিলেন কিন্তু আমাকে দেখে চুপ করে গেলেন।উনি রেদোয়ান ভাইয়াকে সরিয়ে ভেতরে গেলেন আমিও উনার সাথে সাথে রুমে ডুকতে লাগলাম।

ভিতরে যেতেই দেখলাম রেশমি আপু বিছানার উপর মাথা নিচু করে মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন।উনার কাছে যেতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।তার মানে রেশমি আপু কান্না করতেছেন।

উনি রেদোয়ান ভাইয়াকে ইশারায় ফিসফিস করে প্রশ্ন করলেন,,”কী হয়েছে?কান্না করছে কেনো?”

রেদোয়ান ভাইয়া হতাশ সুরে বললেন,,”আর বলিস না।সেই তখন থেকে কান্না করতেছে,আমি ওকে তো বুঝাতে বুঝাতে শেষ তাও কান্না থামাচ্ছে না।”

উনি কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,,”ওহ্,তার মানে এতক্ষন তোদের ভেতর বোঝাবুঝির পর্ব চলছিলো। আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম।”

উনার কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,,আর রেদোয়ান ভাই অবুঝের মতো প্রশ্ন করলেন,,”অন্যকিছু,কী?”

উনি খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে নিচ্ছিলেন তখনই আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম,,,”কিছু না,কিছু না।হে,হে..তাই না!!”

উনি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ রাঙাই সাথে সাথে উনিও মাথা নেড়ে বললেন,,”হ্যা,হ্যা,কিছু না..!!”

রেদোয়ান ভাইয়া কিছু বলবেন তার আগেই উনি বললেন,,”আগে বল,,রেশমি কেনো কান্না করছে???”

রেদোয়ান ভাইয়া মন মরা হয়ে বললেন,,”বাসার সবার জন্য কান্না করছে..!!”

উনি রেশমি আপুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা রেগে বললেন,,,”ওহ্ এখন তাহলে ফ্যামিলির কথা মনে পড়েছে?কেনো আসার সময় মনে ছিলো না ফ্যামিলির কথা?তখন তো ঠিকই কারো কথা না ভেবে চলে এসেছে..!!”

রেশমি আপু মুখ তুলে রেগে চেঁচিয়ে বললেন,,”আমি না আসলে তো আপনার বউ আমার বয়ফ্রেন্ড থুক্কু জামাইকে বিয়ে করে ফেলতো..!!”

আপুর চেঁচানোতে আমি কিছুটা কেপে উঠলাম।তখনই উনি বিষয়টা খেয়াল করেছন..!!

উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,,”আস্তে কথা বলো রেশমি,,,না হলে তোমাদেরই সমস্যা হবে। আশেপাশের কেউ যদি একটু টের পায় যে তোমরা এখানে তাহলে তো বুঝতেই পারতেছো কী হবে?”

রেশমি আপু আবারো মাথা নিচু করে কান্না করতে লাগলেন..কান্নারত অবস্থায় নিজে নিজে বলতে লাগলেন,, “আমি জানি আমার বাবা, আমার আম্মুকে অনেক বকবে।বাবা কখনই মেনে নিবেন না..!!”

এবার রেদোয়ান ভাইয়াও বলতে লাগলেন,,”আমার আম্মু তো এখন জানেও না….আম্মু তো জীবনেও মেনে নিবে না আর আপু উনি তো শুনলেই দুলাভাইকে বলে দিবেন.. বাবা তো আমাকে ঘরেই জায়গা দিবে না..!! তাই বলে কী আমি কান্না করতেছি???”

রেশমি আপু, রেদোয়ান ভাইয়াকে ধমকের সুরে বলে উঠলেন,,,”তুমি কী মেয়ে নাকী যে কান্না করবে??আর তোমার কী, তুমি তো যে কোনো জায়গাতেই থাকতে পারবে..কিন্তুু আমার কী হবে??আমার এখনো পুরো ক্যারিয়ার রয়েছে,,তারউপর তোমার ফ্যামিলির মানুষগুলো,, উনাদের কথা তো বাদই দিলাম।”

রেদোয়ান ভাইয়া কিছুটা রেগে বললেন,,,”তো আমাকে বিয়ে করেছো কেনো?আমি কী বলেছি,আমাকে বিয়ে করো?তুমিই তো আমার বিয়ের কথা শুনে নিজে আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলে..!!”

এবার রেশমি আপু আরো রেগে বললেন,,”তাই,তো তোমার হাত, পা, মুখ ছিলো না,বিয়ে না করার জন্য?তুমিও রাজি ছিলে না হলে কী আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারতাম?”

এভাবে একের ওর একেক কথা বলে উনারা দুজন কথা কাটাকাটি করতে লাগলেন আর এদিকে আমি আর এহসান একবার আপুর দিকে তো একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উনাদের ঝগড়া দেখতেছি।উনারা থামছেন না দেখে এহসান গিয়ে উনাদের দুজনের সামনে দাড়ালেন এবং জোরে বলে উঠলেন,,”চুপপপ..!!”

এহসানের ধমক শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো..!!

এহসান রেগে বললেন,,”তোরা কী শুরু করেছিস?এখন কী ঝগড়া করার সময়?যা করে ফেলেছিস তা তো করেই ফেলেছিস এখন শুধু শুধু এসব নিয়ে কথা বলে লাভ আছে?বরং এটা চিন্তা কর কীভাবে ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করবি..!! ”

আপু আর ভাইয়া দুজনেই চুপ করে গেলেন।এহসান আমাকে ইশারায় রুম থেকে যেতে বললেন,,আমিও চুপচাপ বাহিরে চলে আসলাম।বের হওয়ার সময় দেখলাম এহসান উনাদের পাশে বসে শান্ত কন্ঠে বুঝাতে লাগলেন।

একটু পর উনি হাসি মুখে বের হলেন।আমাকে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি আমারর হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যেতে লাগলেন।

হুটহাট এমন কান্ডে আমি বেকুব বনে গেলাম।রুমে ঢুকে উনি দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন,,,”দেখেছো ওদের কান্ড, বাসর রাতে নাকী কেউ ঝগড়া করে, আমি তো বলেই দিয়েছি,,”

এটুকু বলেই আমাকে উনার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চুপ করে গেলেন।

কোনোরকম আমতা আমতা করে বলতে লাগলেন,,” কী এভাবে চেয়ে আছো কেনো?যাও ঘুমাও..!!”

কথাটা বলতে দেরী উনার বিছানায় যেতে দেরী হয় নাই।আমিও কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লাম। আমি যতই ওয়ালের দিকে চাপতেছি উনি ততই আমার দিকে চাপতেছেন। আমি ঠিকই বুঝলাম উনি ইচ্ছে করে এমন করছেন।রাগে, জিদ্দে আমি মাথার নিচের বালিশ টেনে বাহির করে আমাদের দুজনের মাঝখানে দিয়ে দিলাম। উনি বিষয়টা বুঝতে পেরে হাসতে লাগলেন।উনার হাসির আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই আমার রাগ বেড়ে গেলো..!! কোনো রকম রাগ টাকে কন্ট্রোল করে ঘুমাতে লাগলাম।কিন্তুু তা আর হলো কই উনি একটু পর পর নড়াচড়া করতে লাগলেন। কোনোরকম দাতমুখ খিঁচে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে লাগলাম..!!

মাঝরাতে,ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে ৩ টার মতো বাজে।ঠিক সে সময় ঘুমের ঘোরে আমার কান্নার আওয়াজে উনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উনি অস্থির হয়ে আমাকে ডাকতে লাগলেন।আমি তখনও ফুফিয়ে কান্না করতেছিলাম।

উনি বালিশ টা সরিয়ে আমাকে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বারবার বলতে লাগলেন,,”নায়লা কী হয়েছে?কান্না করছো কেনো?এই নায়লা,, ”

কান্না করতে করতে আমার হেঁচকি উঠে গেলো..!!আমি উনার শার্ট খামছে ধরে বললাম,,”ও, ও, আম,, আমাকে নি নি নিয়ে যা যা যাবে..!!ওও এদিকে আস আস আসতেছে,,!!”

উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,”কে নিয়ে যাবে?কে আসতেছে?”

আমি হিচকি দিয়ে বলতে লাগলাম,,”সোসোরররভভভ”

উনি বললেন,,”কে নিয়ে যাবে?স্পষ্ট বলো আমি বুঝতেছি না..!!”

চলবে???