ভুলিনি তোমায় পর্ব-৩১

0
3471

#ভুলিনি_তোমায়?
#Nishat_Tasnim
#পর্ব :৩১

হ্যা,চিনি তো।”

বাবা ভ্রু কুচকে বললেন,,কীভাবে চিনো?

উনাদের কথোপকথন শুনে আমার গলা শুকিয়ে আসছিলো।ভয়ে কলিজা যায় যায় অবস্থা।
সৌরভ কিছু বলার আগেই এহসান এগিয়ে এসে বললেন,,”আরে বাবা,চিনবে না কেনো?আমাদের এলাকার আশরাফ কাকার মেয়েই তো নায়লা। হয়তো রাস্তায় দেখেছে তাই চিনে..!!আগে চলো খেয়ে নেই,পরে আলাপ-আলোচনা করবো।”

এ বলে উনি বাবাকে ধরে বসিয়ে দিলেন। আমি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।সৌরবের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

সৌরভ, এহসানের দিকে আঙ্গুল তুলে বললো,”উনি কে?”

সৌরভের কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম,পরিস্থিতি সামাল দিতে শাশুড়ি মা সৌরভকে টেনে আমাদের থেকে আড়ালে নিয়ে গেলেন।শাশুড়ী মা কে দেখলাম সৌরভকে কী যেনো বলছে আর বারবার হাত দিয়ে ইশারায় বলছে চুপ থাকতে। উনাদের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সৌরভ , এহসানের ব্যাপারে অবগত নয়।আজকেই হয়তো প্রথম শুনেছে,অবশ্য আগে সৌরভ বলেছিলো,,’বাবা-মার একমাত্র সন্তান সৌরভ।’

বিশ মিনিটের মতো খাবার টেবিলে বসে আছি,অথচ উনারা এখনও কথা বলছেন।এর মধ্যে বাবা দুবার ডেকেছেন।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি ভাবলেশহীন হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।উনার সাথে চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম। ইতোমধ্যে আমি সসবার প্লেট এ খাবার দিয়ে সাজিয়ে রাখলাম অনেকক্ষণ পর উনারা আসলেন। আমি আর উনাদের দিকে তাকাই নি, খাবার টেবিলে শশুরবাবা আমাকে নানান প্রশ্ন করেছেন, আমি নিচু সুরে সবকিছুর জবাব দিলাম,তবুও চোখ তুলে তাকাই নি। কেমন যেনো ভয় করছিলো। সবার খাওয়া প্রায় শেষ অথচ আমি ঠিক মতো খেতেই পারছি না। বাবা খাবার শেষ করে উঠে যেতেই শাশুড়ী মাও উনার পিছন পিছন গেলেন ঔষধ খাওয়াতে।খাবার টেবিলে শুধু আমি,উনি আর সৌরব বসে আছি। আমি খাবার নাড়াচাড়া করছিলাম তখনই উনি উঠে এসে আমার পাশের চেয়ার টেনে বসলেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার মুখের সামনে রুটি ধরলেন।আমি কিছু বলতে নিচ্ছিলাম তার আগেই উনি আমার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর উনি নিজেও খেতে লাগলেন।আমি আড়চোখে একবার সৌরভের দিকে তাকালাম,ওর রিয়েকশন দেখার জন্য। সৌরভকে দেখলাম আমাদের দিকে হা হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।সৌরভের রিয়েকশন দেখে আমি অনেক মজা মজা করে খেতে লাগলাম।এহসান আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,,”এভাবে খাচ্ছো কেনো?সবসময় তো খাবার মুখে দিলে পেঁচার মতো করে রাখো আর আজ এত খুশি খুশি কেনো?”

উনার কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেলো।উনি আমাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই আমি ঢক ঢক করে খেতে লাগলাম।উনার এ কথাটা বলা জরুরী ছিলো?সৌরভ নিশ্চই বুঝে গিয়েছে আমি ওকে দেখিয়ে এমন করেছি।ছিঃ কি লজ্জা! খবিশ ব্যাটা,আমি জানি তো উনি ইচ্ছে করেই এমন করেছে।মনে মনে হাজার কথা শুনিয়ে আমি কোনোরকম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,,”আসলে আজকে খেতে অন্যরকম লাগছিলো।অনেক মজা হয়েছে তো তাই এভাবে খাচ্ছিলাম।”

উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললেন,,”ওহ্,আচ্ছা।আমার তো অন্য কিছু মনে হয়েছিলো।”

আমি চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই উনি চুপ করে গেলেন।দেখেছো,আমি বলেছিলাম না উনি ইচ্ছে করেই এমন করেছে,আজকে খবর আছে।
.
রুমে আসে আছি পাঁচ মিনিট থেকে অথচ উনার আসার কোনো খবর নেই। পুরো রুম পায়চারী করছিলাম তখনই দরজা ঠেলে উনি প্রবেশ করলেন। উনাকে দেখেই আমি এলোপাথাড়ি উনার বুকে কিল ঘুষি দিতে লাগলাম। উনি খপ করে আমার হাত ধরে বললেন,,”আরে আরে কী করছো?”

আমি নাক ফুলিয়ে বললাম,,”দেখছেন না কী করছি?আপনি আমার ইজ্জতের ফালুদা বানালেন কেনো?”

উনি আমার দিকে দাত কেলিয়ে হেসে বললেন,,”আহারে, বয়ফ্রেন্ডের সামনে বেচারীর প্রেস্টিজ নষ্ট হয়ে গেলো।”

উনার কথা শুনে আমার মুখ কালো হয়ে গেলো।আমি উনার হাত থেকে নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে সরে আসলাম।

–“আই এম সরি।”

আমি কিছু বললাম না। উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন,আমি সরে যেতে নিতেই উনি আরো জোর করে জড়িয়ে ধরলেন।

–“বউ,রাগ করেছো?”

বউ,শব্দটা শুনতেই আমি থমকে গেলাম।উনি এর আগে কখনও এ নামে ডাকে নি।উনি আমার চুল থেকে কাঠি খুলে দিয়ে গাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন,,,”বউ”।আমি স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে আছি, আমার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।দাড়িয়ে থাকাটাও কষ্ট হচ্ছে।

তখনই শাশুড়ী মা আর সৌরভ রুমে প্রবেশ করলেন।উনারা আমাদের এভাবে দেখবে হয়তো সেটা ভাবতে পারেন নি। শাশুড়ী মা থতমত খেয়ে বললেন,,
–“সরি,সরি..!!”

সঙ্গে সঙ্গে আমি আর উনি ছিটকে সরে গেলাম। আমি লজ্জা পেয়ে সামনে পড়া চুলগুলো এক হাত দিয়ে কানের পিছনে গুজতে লাগলাম। শাশুড়ি মা সৌরভের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই আমি বললাম,,” আরে,কই যাচ্ছেন।আপনারা আসুন,বসুন না প্লিজ।”

উনিও বললেন,,”হ্যা,বসুন। সমস্যা নেই।”

এই মুহূর্তে সৌরভের রিয়েকশন দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তুু লজ্জার জন্য তো তাকাতেই পারছি না। আমাদের জোরাজুরিতে শাশুড়ি বিছানায় বসলেন,কিন্তুু সৌরভ ওখানেই ঠাই দাড়িয়ে আছে।

–“আসলে, তোমাদের একটা কথা বলতে এসেছিলাম।সাথে সৌরভকে তোমাদের সাথে পরিচয় করে দিতে এসেছি।আসলে ও তোমাদের কথা জানে না।সৌরভের জন্মের এক বছরের মাথায় তো আম্মা এহসানকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো। সৌরভের বয়স কম থাকায় ও ভুলেই গিয়েছিলো এহসানের কথা।তাই আর কি ও চিনতে পারে নাই। হঠাৎ তোমাদের দেখে ও তখন এমন করেছিলো। কিছু মনে করো না।”

–“স্বাভাবিক এত বছর পরে হঠাৎ নিজের ভাই আছে জানলে যে কেউ শকড হবেই।তারউপর ভাইয়ের বউ যদি,,

বলে উনি চুপ করে গেলেন।কথাটা ঘুরিয়ে আবারো বললেন,,”তারউপর ভাইয়ের বউও আছে।”
আন্টির মনে হয় উনার কথাটায় কিছুটা সন্দেহ হয়েছে।পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি হেসে বললাম,,
–“আরে কী বলেন মা,আমরা কিছু মনে করি নি। ”

শাশুড়ি মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,”ভারী মিষ্টি মেয়ে তো তুমি।আমার সৌরভের জন্যও তোমার মতো একটা মিষ্টি মেয়ে আনবো।”

আন্টির কথা শুনে আমার সাথে সাথে সবার মুখেও ঘন কালো মেঘ নেমে এলো। আমি উনাদের দিকে তাকাতেই দেখলাম দুজনে চোখ বড়বড় করে আমার দিকে চেয়ে আছে।

–“আরে,তোমাদের সবার আবার কী হলো?মেয়ে আনবো বলেছি, তো আমি নিয়ে এসেছি নাকী? সবাই সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো কেনো?এখনও দেরী আছে।”

আন্টির কথার প্রতিউত্তুরে আমি সৌজন্যমূলক হাসলাম।

–“দেখেছো আমি কী বলতে এসেছিলাম,আর কী বলছি।তোমাদের কথার চক্করে সেটা বলতেও পারি নি।আসলে তোমার বাবা চায় তোমার মা আর উনার মায়ের জন্য একটু দোয়া করাতে।সন্ধ্যাবেলা মসজিদের ইমাম আর এলাকার কয়েকজন মুরুব্বীকে দাওয়াত করবেন। ”

–“তো?”

আন্টি আমতা আমতা করতে লাগলেন।উনি মাথা নিচু করে এক নিশ্বাসে বলে ফেললেন,,
–“তোমরা সবাই ওখানে থাকবে আর কি..!!”

আন্টির কথা শুনে মনে হলো উনি অন্যকিছু বলতে চেয়েছিলেন।আমি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।

এহসান নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন,,
–“তো,এটা বলার কী আছে,আমরা থাকবো না কেনে?তাছাড়া আমরা তো এখন যাচ্ছি না।কালকেই না যাবো।”

আন্টি, ওহ বলে চলে যেতে লাগলেন। কী মনে করে যেনো আবার পিছনে ঘুরে বললেন,,”এহসান,তুমি একটু তোমার বাবার কাছে যাও তো উনি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

এহসান ভ্রু কপালে ভাজ ফেলে আন্টির দিকে তাকালো,তারপর আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,,আচ্ছা,চলেন।এ বলে উনি আন্টির পিছন পিছন যেতে লাগলেন।আমিও উনাদের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সৌরভ আমার সামনে চলে আসলো।আচমকা ও আমার সামনে আসায় আমি ভয় পেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে গেলাম।

বুকে থু থু দিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বললাম,, “এসব কী?”

সৌরভ দাত দাত চেপে বললো,,”আমিও তো সেটাই বলতেছি, এসব কী?”
.
.
.
চলবে?