ভুলে যেতে ভালোবাসিনি পর্ব-২৩

0
3750

ভুলে যেতে ভালোবাসিনি
পর্ব-২৩
রোকসানা আক্তার

নীর সকালে নাস্তা সেরেই অফিসে চলে যায়।নাতাশা রুমে এসে বিছানার উপর আলতোভাবে বসে।বেখেয়ালি ঠোঁটের কোণে বিন্দু বিন্দু হাসি ফুটতে থাকে।আবার মুহূর্তে রক্তিম আভায় চেয়ে যায় সারা মুখ।নাতাশার মনে আজ কেনজানি হালকা অনুভূত হচ্ছে।ভালো লাগছে আজকের দিনটি।খুব সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে যে সুখে নিজেকে আজ এভাবে দেখতে পাবে ভাবেই নি কোনোদিন।কাল রাতে নীরের সেই আবেগ জড়ানো আদর,আর আজ বাহিরে বের হবার প্রতিশ্রুতি সবটাই যেন স্বপ্নের মতো।

-উফস এমনটা হয়ে যাবে কখনোই ভাবি না।।
বলেই নাতাশা মাথা ঝাড়া দেয়।টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠে।বালিশের নিচ থেকে নাতাশা মোবাইল টা হাতে নেয়।ম্যাসেজ অপশনে যায়।।

-প্রিয়,আজ তুমি গাঢ় খয়েরী কালার শাড়িটি পড়ে নিও।জানো কেন খয়েরী কালার সাজেস্ট করলাম?কারণ,কাল ঠোঁটে খয়েরীটা বেশ বানিয়েছে।মনে মনে ভাবলাম, খয়েরী লিপিস্টিকে তোমায় এতই দারুণ লাগছে না জানি খয়েরী শাড়িতে কেমন দেখায়।প্রিয় বিশ্বাস করো, এখন মেসেজটা করছি আর জিহবায় টুপটুপ পানি চলে আসছে,কতটা ঝোঁক হয়েছে তোমায় সেই খয়েরী শাড়িতে দেখার। মা যে শাড়িগুলো রেখেছেন তারমধ্যেই একটা খয়েরী শাড়ি আছে।খুঁজে নিও।রাখলাম।রেডি থেকো।খুব শীঘ্রই চলে আসবো।

নাতাশা নীরের ম্যাসেজটা পড়ে হাঁপিয়ে যায়।বুকের মূঝখান দিয়ে দৃঢ় একটা দম টেনে হা করো ছাড়ে।নাতাশার পুরো অস্তিত্ব এক মহূর্তের জন্যে বিলীন হয়ে যায়।কেন আজ এত আনন্দ আনন্দ লাগছে তার মনে,কোন সুখের আশায়?কোন আকাঙ্খায়?,কোন মায়ায়?কোন ভালোবাসায়?

নাতাশা নিজেই তার উওর করতে পারছে না।

আচ্ছা,এই সুখের লগন কি আমার কপালে চিরস্থায়ী সইবে?নাকি কোনো দুঃখের ছায়া আসার জন্যে যাএা করেছে!উফস আর কোনো মতে ভাবতে পারছি না।

ভাবনা গুলোকে মাথা থেকে সরিয়ে নিজেকে আবার স্বাভাবিক করে নাতাশা।

সকাল যায়। দুপুর দরজায় কড়া নাড়ে।নাতাশার মনে এক দমকা হাওয়া বয়।নাতাশা বাইরে দৃষ্টি দিয়ে উপন্যাসের বইটা পাশে রাখে।বেতের চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়।গাছের পাতায় পাতায়-শাখায় শাখায় ঝলমলে রৌদ্দুর,রাস্তার অলিগলি এবং দালানের ছাদে ছাদে বয়ে চলছে রোদের খেলা।সূর্যটা এখন প্রখর হয়ে পূর্ব-পশ্চিমের মাঝ বরাবর বসে আছে।বিকেল হলেই সে পশ্চিম আকাশে হানা দিবে।তখনই বিকেল।আর নীর এসে দরজার সামনে উপস্থিত হবে। টোকা দিবে বলবে,
-নাতাশা?এই নাতাশা?রেডি হয়েছ?
নাতাশা অপ্রস্তুত গেটআপে নীরের সামনে যাবে।মুখটা মলীন করে বলবে,
-আসলে ব্যস্ততার জন্যে রেডি হতে পারিনি।
নীর রাগ হয়ে যাবে।বিরবির করে বলবে,
-তোমাকে নিয়ে যাবোই না দাৎ।এত ভালোবেসে বললাম অন্তত মর্যাদা টুকু ত রাখতে।আর আসছো কি না অধিকারিনী হতে?যোগ্য তুমি?য়ু হু মোটেও না।তা আজই ক্লিয়ার হলো।

নাতাশা এমন ভাবনা থেকে চমকে উঠে।কপালের ভ্রু কুঁচকে নিজেকে নিজেই বলে,
-য়ু!এসব আমি ভাবছি টা কি!!
নাতাশা তর্জনী আঙ্গুলটা দিয়ে বাম গালে টেপে টেপে আবার বলে,
-য়ুম।ভাবনা টা মন্দ ছিল না বটে।আসলেই ত সাজুগুজু এখনই স্টার্ট করি।পরে,নীর বাসায় এসে যদি আমায় অপরিপাটি দেখে!

নাতাশা তড়িঘড়ি ওয়ারড্রব থেকে কোহিনুর বেগমের দিয়ে যাওয়া সবগুলো শাড়ি বের করে।তারপর খুঁজে খুঁজে গাঢ় খয়েরীটা বের করে।শাড়িটা দেখেই নাতাশা চোখ দু’টো কপালের দিকে উঁচায়।
ওয়াও!কালারটা আসলেই চমকপ্রদক,যে কারো দৃষ্টিগোচরে।

মাথা নেড়ল নাতাশা শাড়িটা বিছানার একপাশে রাখে। বাদবাকি শাড়িগুলো ওয়ারড্রবে রেখে দেয়।শাড়িটি নিয়ে বাথরুমে ঢোকে।গোসল সেরে আয়নার সামনে এসে দাড়ায়।মাথা থেকে প্যাঁচানো টাওয়াল খুলে চুলগুলো ঝাটতে থাকে।লম্বা চুলগুলো মুহূর্তে সরু হয়ে যায়।নাতাশা থমথমে মুখে নিজেকল শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখে। সুন্দর মানুষদের খয়েরীতে বেশ মানায়।আসলে,নাতাশাকেও তার কমতি লাগছে না,বরং সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো যখন নদীর পানির উপর পড়ে,তখন তা স্বচ্ছ চিকচিক রং ধারণ করে।ঠিক সেরকম নাতাশার দুধ আলতা শরীরে রূপের ঝিলিক বেয়ে বেয়ে পড়ছে।

নাতাশা বেলকনিতে গিয়ে টাওয়াল টা রোদে শুকাতে দেয়।তারপর কালকের পড়নের শাড়িটা ধুঁইয়ে ছাদের দিকে রওনা করে।ছাদে যেতেই রহিমা খাতুনকল দেখতে পায়।রহিমা খাতুন তখন দড়িতে জামাকাপড় মেলতেছে।সে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে,
-আউ আপা,আপনে আইছেন ক্যা!আমিই ত একটুপর আপনের রুমে যাইয়া শাড়িটা ধুইতাম এবং আমিই এইহানে নিয়া আইতাম।এহন খালাম্মা হুনলে ত আমারে বকা দিব
-আরেহ কিছু হবে নাহ, কিছু হবে না।আমি বুঝিয়ে বলল মা কিছু বলবেন না।তাছাড়া,আমি নিজের কাপড় নিজে ধুতে,শুকাতে পছন্দ করি।
-তাই।ওউউ আপা,এতক্ষণে ত খেয়াল করলাম না।বেপার কি আইজকা যে চকচকে শাড়ি পড়লেন?কোথায় বেড়াইতে যাইবেন নাকি?
নাতাশা লজ্জায় মাথা নিচু করে।আর মুঁচকি হেসে বলে,
-হু।
-ভাইজান সহ?
-হু
-আইচ্ছা, আইচ্ছা।শুইনা খুশি হইলাম
আইজ অনেকদিন পর দুইজন একসাথে বাহির হইবেন।
নাতাশা হাসে।
-যাইহোক আপা,ভাইজান আপনারে আইজকা দেখলে ত শক খাইবো!

নাতাশা আলবোলা হয়ে বলে,
-কেন?
-এইযে আপনের রূপের আগুনে।হিহিহিহি।
নাতাশার লজ্জা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।এই এরাও না মুখের বাঁধ সামলে রাখতে পারে না,যখন যা আসে তাই বলে।
-লজ্জা পাইসেন আপা?
নাতাশা সরু চোখে রহিমা খাতুনের দিকে তাকায়।
-আরেহ একটু মজা করলাম।বুজেন ক্যা আপা।
-বুঝছি ।
-আপা?শাড়িটা আমায় দেন ত। আমি বালিয়া দিতাছি।
-লাগবে না আপা।আমি করছি।আপনি স্বয়ং দাড়িয়ে থাকেন।তারপর দু’জন একসাথে নিচে যাবো।
-আইচ্ছা আপা।
তারপর নাতাশা শাড়িটা দড়িতে মেলে দিয়ে রহিমাকে নিয়ে নিচে আসে।কোহিনুর বেগমের রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দেয়।কোহিনুর বেগম সবে নামাজে দাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন নাতাশা দাড়িয়ে আছে।মুঁচকি হেসে বলেন,
-আরেহ এসো,এসো।আবার পারমিশন লাগে নাকি?
নাতাশা ভেতরে ঢোকে বিছানার উপর বসে।কোহিনুর বেগম বলেন,
-এবার বল কেন এসছো?
-মা ইয়ে মানে
-আরেহ বলোতো? এরকম অপ্রস্তত বোধ তোমার মাঝ থেকে এখনো যায়নি?
নাতাশা এবার ধীরস্থির হয়ে শান্ত গলায় বলে,
-মা আপনার ছেলে বলতেছেন আজ নাকি একটু বাহিরে যাবেন।তাই আমায় যেতে
-আরেহ বুঝছি,বুঝছি।আর বলা লাগবে না বউমা।নীর আজ বাইরে বের হবে,তাইতো?
-জ্বী,মা।
-ওকে যেও।শুনে আমি অনেক অনেক খুশি হলাম।আজ দুজন যে বাইরে ঘুরতে বের হবে।আচ্ছা এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাকো।নীর আবার কখন চলে আসতে পারে ঠিক নেই।
-আচ্ছা মা।
– আচ্ছা।

নাতাশা নিজ রুমে চলে আসে।তারপর যোহরের নামাজে শেষ করে।জায়নামাজ টা ওয়ারড্রবের উপরে রেখে আয়নার সামনে বসে।ড্রেসিং টেবিল থেকে সাজগোজের উপকরণগুলো বের করে।তারপর চোখ,ঠোঁট,গলা,কান,হাত,মুখ সুন্দর করে সাজায়।মাথার চুলগুলো একসাইডে ফেলে দেয়।।
সাজগোজের পরপরই দরজায় করাঘাত পড়ে।নাতাশা দেয়াল ঘড়িতে চোখ বুলায়।৩ টা ৪৫ বাজে।নাতাশা ভ্রু দু’টো কুঁচকে আনে!তার সাজতে যে এতসময় চলে গেল সে নিজেই বুঝে উঠতে পারলো না।বোধহয় অনেক পরিশ্রম নিজেকে সাজিয়েছে।

আসলেই তাইই।যেমন সাজ হয়েছে,তেমনি তাকে অপ্সরীর মতো লাগছে।আর বাকিটা নীর বলবে।

নাতাশা দরজা খুলে দেখে নীর।নাতাশা অবাক!নীর মুচকি হেসে কোটটা ডানহাত থেকে বামহাতে কোটটা নেয়।ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,
-সৌন্দর্যের তুলনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।তবে,যা হবে অন্তরালে!
বলেই নাতাশাকে ঘেষে ভেতরে ঢোকে।আর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।নাতাশা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে ঢোক গিলতে থাকে।নীর নাতাশার দিক ফিরেই ঠোঁটে ঠোঁট লাগায়।নাতাশাকে কিছুই আর না বলতে দিয়ে ঠোঁটের গাঢ় লিপিস্টিক খেতে থাকে।নাতাশা হাত দিয়ে সরাতল গেলেও নাতাশার দু’হাত আঁকড়ে ধরে।আর চাপ পড়ে নাতাশার পেঁটে।নাতাশার সারা শরীর শিরশির করে উঠে।কাঁপুনির কম্পন তোলে সারাদেহ।নীর সে আওয়াজ শুনতে পায়।আর নাতাশাকে আরো বেশি জড়িয়ে নেয়।নাতাশা এবার হাত দুটো আলবোলা করে নিজেকে নীরের মাঝে বিলিয়ে দেয়।নীর আস্তে আস্তে পেছনে এগিয়ে নাতাশাকে কাঁত করে বিছানায় শোয়ায়।সাথে সাথে নাতাশার সামনে থেকে আঁচলটা সরিয়ে নেয়।আর নাতাশাকে একহাত দিয়ে উল্টে নিয়ে কোমরে থাকা সেই কালো তিলটায় অগণিত চুম্বনের স্পর্শ দিতে থাকে।সেই চুম্বনে নাতাশা আরাম পায়।আর সর্ব অঙ্গে নীরকে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়।তবে নাতাশার মাথায় বিঁধা বাইরে বের হওয়ার টনক নড়ে উঠে।অসংযত ভাবে নীরকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয়।

-চলবে…