#ভূল_করেছি
#Imran_khan
#পর্ব_3
আমরা যদি তোর পিতা-মাতা হই সেও তো একজন তোর মার মত তাকে কিভাবে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলিস । তুই এখনি ওই বাসায় চলে যাবি এবং জামাই বাবাজির কাছে ক্ষমা চাইবি ।
আমি কখনো আর ওই বাসায় যাব না । ক্ষমাও চাইতে পারবো না , আমি কোন ভুল করিনি ওই বুড়ি কে আমি আর সেবা যত্নও করতে পারবোনা।
বয়স হয়েছে দেখে তোর মার মতো এক বৃদ্ধ মহিলাকে বুড়ি বলতেছিস ।তুইও একদিন বুড়ি হবি শেষ হবে তোর রূপযৌবন ।
তুই যখন ওই বাসায় যাবি না, তাহলে এই বাসায় কোন স্থান হবে না তোর । যেভাবে আসছিস এই বাসায় সে ভাবে চলে যা এখনি ।
ঠিক আছে চলে যাচ্ছি কিন্তু আর কখনো আসবো না এই বাসায়।
তোকে আর কখনো আসতে হবে না , এই বাসায়। তোর মত বেহায়া মেয়ে যদি আর অন্য ঘরে জন্ম না নেয় এই দোয়াই করি আল্লাহর কাছে । আমাদের মান-সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিলি সব ।
চলে যাচ্ছি , কিন্তু আমিও ভুলে যাব আমার বাবা-মা পৃথিবীতে বেঁচে নেই তারা মারা গেছে ।
তোকে ভূলতে হবে না আমাদের, আমরা ভুলে যাব আমাদের মেয়ে মারা গেছে । তোর মত মেয়েকে আমি জন্ম দিয়েছি এটা ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে আমার ।
তিতলি তার ব্যাগটা নিয়ে বাসা থেকে বাহির হয়ে যায় । এ বাসায়ও তার থাই জুটলো না । তার রাগে পুরো শরীর জ্বলে উঠতেছে । ইমরানের বাচ্চা তোকে আমি খেয়ে ফেলবো । তোর জন্য আজকে এতকিছু হচ্ছে। আমার বাবা-মা আমাকে আজকে ভুল বুঝতেছে আমাকে । তোকে আমি দেখে নেব । বাসা থেকে বাহির হয়ে আশেপাশে রিক্সা না পেয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে কই যাবে নিজেও জানেনা ।
এদিকে ইমরানের তিতলীর কথা খুব মনে পড়তেছে । বাসাটা কেমন তার ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে। কোন কিছু ভালো লাগতেছে না । সত্যি কারের ভালোবাসা প্রতিদান এমনই হয় বুঝি । দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল ইমরানের পেটে ক্ষুধার জ্বালায় চোচো করতেছে । তিতলি কোন রান্না করে নি । ইমরান রান্নাঘরে গিয়ে হালকা কিছু রান্না করে খেয়ে আবার রুমে চলে আসে । রুমে এসে শুয়ে পড়ে , কিন্তু ইমরানের দুচোখে ঘুম নেই। এটা ভেবে যে তিতলি কিভাবে আমাকে ঠকিয়ে গেলো ? তাহলে কি তিতলি কখনও আমাকে ভালো বাসেনি সব ছিল সাজানো নাটক । দু’বছর সংসারে এক ছাদের নিচে থেকেও বুঝতে পারেনি সে আমার সাথে প্রতারণা করতেছে । এগুলো কথা ভাবতে ইমরানের দুচোখ দিয়ে নোনা পানি বাহির হচ্ছে । এগুলো কথা ভাবতে ভাবতে ইমরান ঘুমিয়ে পড়ে ।
অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তু তিতলি কই যাবে এখনো বুঝতে পারতেছে না । রাতের অন্ধকারে রাস্তা দিয়ে হেটে চলতেছে কোন রিক্সাসাও নেই যে চড়ে কোনো হোটেলে গিয়ে উঠবে। আশেপাশে কেউ নেই তার ভয় করতেছে।
পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ইমরানের ঘুম ভাঙ্গে । ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে দেখে প্রায় আটটা বেজে চলতেছে । তার অফিস ৯ টার দিকে , ইমরান তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে প্রথমে তার মার রুমে যায় । সেখানে গিয়ে দেখতে পায় তার মা বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে দিয়েছে । সে বিছানা কাপড় গুলো চেঞ্জ করে দেয় কিন্তু তার মার কাপড় কিভাবে চেঞ্জ করবে এটা নিয়ে টেনশনে পড়ে যায় ।তিতলি থাকলে ওই চেন্জ করে দিতো কিন্তু সেও তো নেই । ইমরানের মাথায় একটা আইডিয়া আসলো পাশের বাসার ভাবিকে আনলেই তো হয় । এমনিতেই ভাবির সঙ্গে ভালো পরিচিত রয়েছে সাহায্য করবে মনে হয় । এটা ভেবে ইমরান বাসা থেকে বাহিরে এসে ভাবির বাসায় সামনে চলে আসে । পাশাপাশি ফ্লাট হওয়ায় বেশি টাইম লাগে নি । ইমরান দরজার কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । একটু পরে ভাবি এসে দরজা খুলে দিলেন ।
আসসালামুয়ালাইকুম, ভাবি !
ওলাইকুম সালাম ,আরে ইমরান সাহেব যে। হঠাৎ করে কি মনে করে আমার বাসায় ,একবারো তো ভাবিকে দেখতে আসো না?ভিতরে আসো বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ।
ভিতরে বসার টাইম নেই আমার ভাবি ,অফিসের কাজের চাপ বেশি দেখে এখানে আসায় হয় না । আচ্ছা ভাবী আপনি কি ফাঁকা আছেন , আমার একটা হেল্প করতে পারবেন?
আপাতত এখন ফাঁকা তো আছি । কি হেল্প লাগবে বলো ?
একটু আমার বাসায় গিয়ে আমার মার কাপড় গুলো চেঞ্জ করে দিবে ।
কেন তোমার বউ কই গেছে , রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গেছে নাকি ।(হেসে হেসে বলতেছে )
তেমন কিছু না ভাবি এমনিতেই বেড়াতে গেছে । কাল পরশু চলে আসবে । আপনি একটু আমার সঙ্গে চলুন ।
ওকে চলো তাহলে ।
তারপর ইমরান তার ভাবিকে নিয়ে তার বাসায় চলে যায়।
ভাবী আপনি কাপড় টা চেঞ্জ করে দিন আমি একটু নাস্তা তৈরি করি এর ফাঁকে ।
সাড়ে আটটা বেজে চলেছে এখনো তুমি নাস্তা করো নি ।
বাসায় বউ না থাকলে যা হয় ভাবি ।(হেসে হেসে বলতেছী)
ইমরান রান্নাঘরে গিয়ে 10 মিনিটের ভিতরে খাওয়ার মত হাল্কা নাস্তা তৈরি করে ফেলে।নাস্তা তৈরি করে একটু নাস্তা প্লেটে করে নিয়ে তার মার রুমে চলে আসে । রুমে এসে দেখে ভাবি তার মার পাশে বসে রয়েছে ।ভাবিকে বসে থাকা দেখে ইমরান বলে ,
ভাবির চেঞ্জ করা হয়েছে ।
হ্যাঁ ,চেঞ্জ করে দিয়েছি।
ধন্যবাদ আপনাকে, আর একটু কষ্ট করে নাস্তা খাইয়ে দিন আমার মাকে । আমার অফিসের টাইম হয়ে গেছে আমি রেডি হয়ে নেই।
ঠিক আছে, তুমি তাহলে রেডি হয়ে আসো, আমি আন্টিকে নাস্তা খাওয়াচ্ছি ।
ইমরান তার রুমে গিয়ে রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। তার রেডি হতে বেশিক্ষণ টাইম লাগে নি । রেডি হয়ে আবারও সে তার মার রুমে চলে আসে ।
ভাবি নাস্তা খাওয়ানো হয়েছে মাকে ।
খাওয়া প্রায় শেষ আর একটু বাকি আছে । তুমি কি রেডি হয়ে এসেছো?
হ্যা ,ভাবি !আপনি না হয় রুমে তালা দিয়ে চলে যাইয়েন অফিসের টাইম হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে আমাকে ভাবি ।
ওকে তুমি যাও তাহলে ।
ভাবী আপনাকে মনে হয় কষ্ট দিয়ে ফেলাম।
আরে তেমন না , বড় বোনেরা যদি ভাইদের কাজে না লাগে তাহলে কেমন বোন আমরা । তুমি রাস্তায় দেখেশুনে যেও ।
ওকে ভাবি ।
ইমরান তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বাহির হয় কারন তার অফিসের টাইম প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কপাল ভালো দেখে বাসা থেকে বাহির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিক্সা পেয়ে যাই । রিক্সা তার নিজ গতিতে চলতেসে আর ইমরান শান্ত হয়ে বসে তিতলির কথা ভাবতেছে । ইমরানের বাসা থেকে অফিসে যেতে প্রায় 20 মিনিট লেগে যায় কিন্তু তার হাতে সময় খুবেই অল্প । বার বার হাতে থাকা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতেছে ইমরান ।মামা একটু জোরে চালান । হঠাৎ করে রিক্সা ব্রেক মারার কারণে ইমরান একটু ভয় পেয়ে যায়। কি হলো আবার এটা ভেবে ?
কি হলো মামা , হঠাৎ করে রিক্সা ব্রেক মারলেন কেন?
সামনে মনে হয় এক্সিডেন্ট হয়েছে আর যাওয়া যাবে না । তাই আপনি এখানে নেমে পড়ুন ।
কি এক জ্বালায় পড়ে গেলাম? রিক্সাওয়ালার সঙ্গে তর্ক করে কোন লাভ নেই রাস্তা জ্যাম থাকলে কিভাবে যাবে আমাকে নিয়ে সামনে । রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওখানে নেমে হাঁটা শুরু করলাম ।সামনে গিয়ে দেখি অনেক বড় মানুষের ভিড় সবাই গোল হয়ে কি যেনো দেখতেছে ? মানুষদের ধাক্কাধাক্কি করে ভিতরেঢুকে দেখি একটা মেয়ে নগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে আর সব মানুষ সেটা দেখে মজা নিচ্ছে । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হয়েও বিবেকহীন এর মত পরিচয় দেয় । একটা মানুষ রাস্তায় পড়ে রয়েছে সাহায্য করবে কি, তা না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই দেখতেছে ।
#চলবে ,,?
(কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। )