ভূল করেছি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
498

#ভূল_করেছি
#Imran_Khan
#Iast_part

রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা মেয়েটি কাছে গিয়ে দেখি আর কেউ নয় ও হচ্ছে তিতলি আমার স্ত্রী। তাকে নগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলাম । বুঝতে পারলাম না , কিভাবে হল এর এই অবস্থা ? বাসায় তো খুব জোর গলায় বলল ওর বাবার বাসায় যাবে কিন্তু কিভাবে এমন হলো ওর? পরনের কাপড়ে অবস্থা একদমই খারাপ যেখানে সেখানে ছেরা । তিতলিকে এই অবস্থা দেখে ভাবলাম একে এভাবে রেখে চলে যাব । কিন্তু মন এই কথায় সায় দিচ্ছে না । আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি । এখনো এটাই জানি না যে , বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে । এই কথা ভেবে বুকটা ধুক করে উঠতেছে।দাঁড়িয়ে না থেকে তিতলির হাতের পালস চেক করে এটা দেখতেছি যে এখনো বেঁচে আছি কি , মারা গেছে ? পালস চেক করে বুঝতে পারলাম ও এখনো বেঁচে আছে । যতই ও আমার সঙ্গে বেইমানি করুক কিন্তু আমার ভালোবাসায় কোনো বেইমানি ছিলনা। তাই এখনকার কিছু লোকেদের সাহায্য নিয়ে তিতলিকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই । হাসপাতালে সব ফর্মালিটিজ পূরণ করে তাকে ভর্তি করানো হলো। ভর্তি করানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে ওটিতে চলে গেল ডাক্তারেরা।আমি ওটির বাহিরে দাড়ীয়ে আছি আর চিন্তা করতেছি এটা কিভাবে হলো ওর ? তাহলে কি ওর বাবার বাসায় না গিয়ে কারো সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এমন হয়েছে ?
অফিসে যাওয়া হলো না এই অবস্থায় । ওটির বাহিরে দাড়ি এগুলো কথা ভাবতেছি ।

আপনি কি রোগীর গার্জিয়ান ?

হঠাৎ এমন কথা শুনে আতঙ্কেউঠি। পাশে থেকে একটা নার্স এই কথা বলতেছে ।

জ্বি,,আমি রোগীর গার্জিয়ান ।

আপনি ওষুধ গুলো নিয়ে আসেন এবং রোগীর এক ব্যাগ ( a+ ) রক্ত লাগবে এগুলো ম্যানেজ করুন তাড়াতাড়ি । রোগীর অবস্থা তেমন একটা ভাল না ।

রোগীর অবস্থা তেমন ভালো না এই কথা শুনে আমি প্রায় ভয় পেয়ে গেলাম তাহলে কি তিতলি আর বাজবে না ? ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে এগুলো ভাবতেছি ।

কি হলো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন, জলদি নিয়ে আসেন ?

আমি যাচ্ছি ঔষধগুলো আনতে আর আমার a+ রক্তের গ্রুপ আমি রক্ত দিব সমস্যা নেই । আমার আর তিতলি রক্তের গ্রুপ সেম। তিতলি এই কথাটা বারবার বলছিলো যে , যদি কখনো তোমার রক্ত দরকার পড়ে তাহলে আমি তোমাকে রক্ত দিব আর যদি আমার রক্তের দরকার পরে তাহলে তুমি দিবে তাহলে আমাদের রক্ত নিয়ে কোন টেনশন হবে না । সেটা আজকে সত্য হলো ।

আমি জলদি করে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে ওষুধ গুলো নিয়ে আসলাম। তারপর সেগুলো একটা নার্সকে দিলাম । আমাকে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে নার্স আমার শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত বাহির করে নিলেন । জীবনে প্রথম রক্ত দেওয়ায় মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করতেছে ।

আপনি কিছুক্ষন রেস্ট করুন তাহলে আপনি ঠিক হয়ে যাবে ।

নার্সের কথা মতো আমি প্রায় বিশ মিনিট ধরে রেস্ট করলাম। তারপর একটু বেটার ফিল হচ্ছে । তারপর আমি আবারও ওটির সামনে গেলাম এখনো লাল বাতি জ্বলে আছে তারমানে এখনো অপারেশন চলতেছে। আমার খুবেই টেনশন হচ্ছে । আমি যদি কালকে তাকে জোর করে বাসায় রাখতাম তাহলে আজকে এই দিনটা দেখতে হতো না । প্রায় আধাঘণ্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে এলো ওটির ভিতর থেকে। আমি ডাক্তারকে বাইর হতে দেখি বলতেছি ,

ডাক্তার আমার রোগীর কি অবস্থা ?

উনি এখন মোটামুটি সুস্থ । এক ঘন্টা পরে উনাকে বেডে দেওয়া হবে তখন আপনি দেখা করতে পারবেন সমস্যা নেই ।

আলহামদুলিল্লাহ , ধন্যবাদ আপনাকে ।

ধন্যবাদ আমাকে দিয়ে লাভ নেই বাঁচানোর মালিক আল্লাহ আমরা তো শুধু উসিলা ।

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন। আমি অপেক্ষায় আছি কখন তিতলিকে বেডে শিপ্ট করবে । এক ঘন্টা পরে তিতলিকে বেডডে দিলেন নার্সেরা । তিতলিকে বেডে দিয়ে নার্সেরা যে যার মতো কাজে চলে গেলেন । আমি ও নার্সেরগুলোর যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছিলাম । আমি রুমের ভিতরে গিয়ে পাশে একটা চেয়ারে টেনে তিতলির কাছে বসলাম । কালকে কেমন ছিল আর আজকে কেমন হয়ে গেছে অনেকটা চেঞ্জ । তিতলি হালকা নড়াচড়া করতেছে। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে এক নয়নে তাকিয়ে রয়েছে ‌আবার চোখ দিয়ে তার পানি বাহির হচ্ছে ।

কি হলো আপনি কান্না করতেছেন কেন ? আপনার তো হাসার কথা কান্না করেন কেন !

আমার দিকে তাকিয়ে কান্না করতেছে ।

আমিও তার কান্না দেখে চুপ করে রয়েছি ।

আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না ইমরান ? আমি ভুল করেছি তোমার কথা অবাধ্য হয়ে ক্ষনিকের মায়ায় পরে আমার আজকে এই অবস্থা । আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে । তুমি আমাকে একটি বার ক্ষমা করে দাও তুমি যা বলবে আমি তাই করবো ।

তিতলি শোনো, ক্ষমা জিনিসটা তোমার মুখে মানায় না । তুমি চেয়েছিলে মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে। আমি তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছি । কিন্তু তিতলি একটা কথা মনে রাখবে খাঁচার পাখি বন্ধ খাঁচায় শোভা পায় যদি সেই পাখি খাঁচার বাইরে এসে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে চায় ঠিকই একদিন সে মুখ থুবড়ে নিচে পড়ে যাবে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা ।আর আমি কখনও তোমাকে ক্ষমা করতে পারবোনা ।

এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও। কখনো এমন ভুল আর করব না আমি । মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। আমি তো ফেরেশতা না, যে কখনো ভুল হবে না কিন্তু আমি তো মানুষ শয়তানের পাল্লায় পড়ে ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।

ঠিক আছে ক্ষমা করে দেব এক শর্তে ।

আমি তোমার হাজার শর্ত মানতে রাজি আছি ,তুমি শুধু বলো !

এটা বলো যে এই অবস্থা করলো কে তোমার ?

আবার কান্না করতে শুরু করে তিতলি।

আমি তোমাকে কান্না করার কথা বলতেছি কি ? আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে কিভাবে হলো এই অবস্থা তোমার ?

ঠিক আছে বলতেছি , আমি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করে সোজা আমার বাবার বাসায় চলে যাই। কিন্তু মা আমাকে থাকতে দেয়নি বাসায় ।বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। বাসা থেকে বের করে দেওয়ায় কোথায় যাবো কি করবো এটা ভেবে আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকি কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখি চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে । আমার ভিতরে ভয় লাগতেছে । আশেপাশে কোন লোক নেই । ভয় ভয় করে হাঁটতেছি হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন মাথায় আমার আঘাত করে তারপর থেকে কিছু মনে নেই আমার ।আমি এখানে আসলাম কেমন করে ।

আমি নিয়ে এসেছি এখানে ।

আচ্ছা আমাকে কি সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছো তুমি ?

হুম সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছি ।

আমি আর জীবনেও এমন ভূল করবো না ।পাঠক বন্ধুরা তিতলির মতো এমন কাজ করিযেন না ।আর একটা কথা ক্ষমা করা মহত্ গুন আল্লাহ তাআলা ক্ষমা কারিকে অনেক পছন্দ করেন ।এই কথা ভেবে গল্পের দুইজনকে মিল করে দিলাম ।

(কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)