মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-০৪

0
471

#মনের_উঠোন_জুড়ে (১৮+ এলার্ট)

#পর্ব_০৪

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি শিক্ষা। কার সাথে কথা বলছিস?আর তোর হাতে কি ছিলো? দেখি তোর হাত দেখা।তোকে না আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। সত্যি করে বল তো কে তুই? তোর আসল উদ্দেশ্য কি?কে এমন আছে যার সাথে তোর লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতে হচ্ছে?

-” ক ক ক‌ই কারো সাথে না তো। আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন।এই যে দেখুন আমার হাতে কিছু নেই। আপনি সিআইডি অফিসার হয়েছেন তাই বলে সবাই কে সন্দেহ করতে পারেন না।”

-” আচ্ছা ঠিক আছে আমি ভুল শুনেছি। কিন্তু তোর চোখে মুখে তো অন্য কথা বলছে।তোর চোখে মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।”

-” ঐ আপনি হুট করে কথা বলেছেন তো।তাই একটু ভয় পেয়েছি।”

-“কিন্তু তুই তোতলাতে তোতলাতে কথা বলছিস কেন? এমন তোতলাতে তোতলাতে কারা কথা বলে জানিস? যারা ক্রিমিনাল ,যারা অপরাধ করে তারা। যাদের মধ্যে ধরা পড়ার ভয় থাকে।তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুই ও তাদের মধ্যে একজন।”

-” হা হা হা । আ আমি তো আগে থেকেই তোতলা। কিন্তু সবসময় তোতলায় না ঐ মাঝে মধ্যে হয়ে যায় এই আরকি। কিন্তু আপনি তো অফিসে চলে গিয়েছিলেন । তাহলে এইখানে কিভাবে?”

-” কেন আমি আসাতে তোর বুঝি অনেক সমস্যা হয়ে গেল?”

-” ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আমি তো আমার নিজের সাথে নিজেই কথা বলছিলাম। আগামীকাল আমার রেজাল্ট দিবে।আর বড় আব্বু বলেছে আমাকে ভার্সিটি তে ভর্তি করে দিবে।তো ভার্সিটি গেলে কতো হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম ছেলের দেখা পাবো। তাদের সামনে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবো তার‌ই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।”

-” তুই কি নিজেকে বাজারের পণ্য মনে করিস শিক্ষা?”

-” সাহিত্যের কথা শুনে শিক্ষা চোখ রাঙিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো সাহিত্য?”

-” কিপ ইউর ভয়েস ডাউন। ডোন্ট সো ইউর টেম্পার টু মি। উচিত কথা বললে শুনতে খারাপ লাগবে ,এটা স্বাভাবিক। তাছাড়া ভুল কিছু তো বলি নি আমি। তুই এটাই ডিজার্ভ করিস ।”

-” দেখুন সাহিত্য .….. বাকিটা বলার আগেই সাহিত্য শিক্ষার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে বললো, হুস নো মোর ওয়ার্ডস।তোকে একটা জিনিস দেখানোর আছে বলে সাহিত্য ফোন বের করতেই দেখে নির্জন কল করেছে । কিন্তু তার ফোন সাইলেন্ট থাকায় সাহিত্য ঠিক পায় নি। সাহিত্য মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে নির্জন বললো, কিরে শা’লা বিয়ে করে ব‌উয়ের সাথে রোমান্সে বিজি আছিস নাকি?কতো বার কল করেছি সে খেয়াল আছে তোর? ব‌উয়ের সাথে রোমান্সে বিজি থাকলে দিন দুনিয়ার কিছু খেয়াল থাকে না বুঝি?”

-” নির্জনের কথায় চমকে উঠলো সাহিত্য।সে বিয়ে করেছে মানে কি? সাহিত্য কথা ঘুরিয়ে বললো, তার আগে বল তুই আমার কোন বোন কে বিয়ে করেছিস?”

-” তোর তো দুই টা বোন। আবৃত্তি আর শিক্ষা।দুইটার মধ্যে একটা হলেই চলবে।”

-” তোর রুচি এতো নিচে আমি জানতাম না নির্জন। তুই খুব ভালো করে জানিস শিক্ষা আমার বোন না। ইনফ্যাক্ট আমাদের পরিবারের কেউ না।পাপা ওকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো।আর তুই তাকে বিয়ে করার কথা ভাবছিস ?”

-” জাস্ট কিডিং ইয়ার । ডোন্ট বি সিরিয়াস।”

-” শোন আমার একটু জরুরি কাজ আছে রাখছি আমি।আই উইল কল ইউ লেটার।”

-” এতো তাড়া কিসের ? আসল কথায় তো বলা হয় নি।”

-” এতো ভনিতা না করে বল তো কি বলবি?”

-” আরো দুইটা মেয়ে খু”ন হয়েছে ।”

-” হোয়াট রাবিশ আর ইউ টকিং এবাউট?”

-” আমি যা তা বকছি না সাহিত্য।এটাই সত্যি যে আরো দুই টা মেয়ে খু’ন হয়েছে।আর আশ্চর্য করা বিষয় হলো পূর্বের ন্যায় এদের ও বুক থেকে হৃৎপিণ্ড বের করে নেওয়া হয়েছে।অথচ এদের মধ্যেও পূর্বে খু’ন হয়ে যাওয়া মেয়েদের মতো না আছে কোন ধস্তাধস্তির চিহৃ ,আর না আছে ইন্টিমেন্ট হবার কোনো লক্ষণ। ঘটনাস্থলের আশেপাশে হৃৎপিণ্ড চিবানোর কয়েক টুকরো পাওয়া গেছে। ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে বমি আসছে। একটা মানুষ ঠিক কতোটা সাইকো হলে মানুষের হৃ‌ৎপিণ্ড কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারে।এই সাইকো টা ঠান্ডা মাথায় একটার পর একটা খু’ন করে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমার চাকরির জীবনে অনেক কেস সলভ করেছি কিন্তু এরকম রহস্যময় কেসের সাথে এই প্রথম ইনভলব হয়েছি। বুঝতে পারছি না এই কেসের ইনভেস্টিগেশন ঠিক কোথা থেকে শুরু করবো।”

-” আমার মনে হয় হয় এসিপি স্যার না ফেরা পর্যন্ত আমরা এই কেসের ইনভেস্টিগেশন শুরু করতে পারবো।এই কেস টা বেশ জটিল ও রহস্যময় । তাছাড়া ফরেনসিক ডক্টর শাফ‌ওয়ান মাহমুদ ও আমাদের কাঙ্ক্ষিত কোন তথ্য দেয় নি, যার ভিত্তিতে আমরা এই কেসের ইনভেস্টিগেশন শুরু করবো। এসিপি স্যার দুই একদিনের মধ্যে সুইজারল্যান্ড থেকে বিডি তে ফিরবেন।এর মধ্যেই আমাদের কোনো না কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে হবে।”‘

-“আমার কি মনে হয় জানিস? খু’নী নিশ্চয় কোন মেয়ে।”

-” কিসের ভিত্তিতে বলছিস খু’নী একজন মেয়ে?কোন প্রমাণ আছে তোর কাছে ?”

-“জাষ্ট কিউরিসিটি ! খু’নী যদি কোন পুরুষ হতো নিশ্চয় এতো সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের সাথে ইন্টিমেন্ট হ‌ওয়া ছাড়াই তাদের কে খু’ন করতো না।আর যদি পুরুষ হয়ে ও থাকে আমার মনে হয় সে তোর সহজাত ভাই।তোর মতোই রসকষহীন পুরুষ।যার মধ্যে ভালোবাসা মায়া মমতা কিছুই নেয়।যে নিজের কাজ ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না।”

-“তুই নিজের অবস্থানের কথা ভুলে যেতে পারিস নির্জন। কিন্তু আমি কখনোই আমার অবস্থানের কথা ভুলি না। যেইখানে আমার নিজের জীবনেরই কোন নিশ্চয়তা নেই।আজ আছি হয়তো কালকের নিউজ, প্রেস মিডিয়া সব জুড়ে সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের মৃত্যু সংবাদে জর্জরিত হয়ে থাকতে পারে। আমি চাই না আমার এই অনিশ্চিত জীবনে অন্য কাউকে জরিয়ে তার জীবন টা নষ্ট করে দিতে।ঐসব প্রেম ভালোবাসা মায়া মমতা আমাদের জন্য নয় নির্জন।”

-” তুই এমন ভাব করছিস যেন সারাজীবন তুই চিরকুমার থাকার পণ করেছিস।যখন নির্দিষ্ট কারোর মায়ায় পড়বি তখন দেখবি তোর এইসব নিতি কথা ফানুস হয়ে উড়ে যাবে।”

-” ও তার মানে তুই কোনো ললনার মায়ায় পড়েছিস তাই তো? অবশেষে তুই ও ফেঁসে গেলি ইয়ার?”

-” নির্জন মনে মনে বললো, ললনার মায়ায় অনেক আগেই পড়েছি। যেদিন আমি প্রথম তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম।সেই দিন টার কথা আমার আজ ও মনে আছে। সেদিন ছিলো মেঘলা আকাশ। কোনো একটা জরুরী কাজে তোদের বাসায় আমার যেতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি জানতাম না সেই দিন টা আমার জীবনে প্রেম বয়ে নিয়ে আসবে।চেনা না জানা না অপরিচিত একটা মেয়ে আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বসবাস করবে।তাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম মনে হয়েছিল কোনো সদ্য ফোঁটা গোলাপ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । যেন আস্ত একটা মায়ার খনি।কারো রুপ ,গুন, জাত , বংশ দেখে নয়, নির্দিষ্ট কারো মায়ায় আটকে যাওয়ার নাম ভালোবাসা। হ্যাঁ আমি তাকে ভালোবাসি।সে সবসময় আমার মনের উঠোন জুড়ে রয়েছে। হাজার চেষ্টা করেও তার ডাগর ডাগর চোখের চাহনি আমি ভুলতে পারি না। কেন জানি না ভুলতে চাইলে ও তার কথা বারবার মনে পড়ে।তাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারবো।আমি পুরো পৃথিবীর সাথে লড়তে পারবো তার জন্য। তবুও তাকে আমার থেকে দূরে সরে যেতে দিবো না। কখনোই না।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।