মনের উঠোন জুড়ে ২ পর্ব-০৪

0
302

#মনের_উঠোন_জুড়ে_২

#পর্ব_৪

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” শিক্ষা মনে মনে কিছু একটা ভেবে বললো, ঠিক আছে আমি আপনার শর্তে রাজি আছি। বলুন কি করতে হবে?”

-” বিয়ে করতে হবে আমাকে।”

-” হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ? বিয়ে করতে হবে মানে কি হ্যাঁ?”

-” বিয়ে করতে হবে মানে সাহিত্য শিকদার কে তোমার বর হিসেবে গ্ৰহন করতে হবে। এই সামান্য ব্যাপার টুকু ও বুঝতে পারছো না । মাথা মোটা কোথাকার। তাছাড়া তুমি তো বলে দিয়েছো তুমি আমার শর্তে রাজি আছো।আমি চাইলে তোমাকে আমার বেড পার্টনার হ‌বার প্রস্তাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করি নি। আমি সোজা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি ।হালাল একটা সম্পর্কে আবদ্ধ করতে চেয়েছি।”

-” অসম্ভব! বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বললেই হলো যে বিয়ে করতে হবে? মামা বাড়ির আবদার নাকি?”

-” আই হ্যাভ নো মামা। যদি মামা থাকতো আর তোমার মতো সুন্দরী মামাতো বোন থাকতো তাহলে আমি সোজা তার কাছে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে বলতাম , মামু শ্বশুর আব্বু আমি আমার বাচ্চার নানুভাই করতে চাই আপনাকে। যদি আপনি রাজি থাকেন সেচ্ছায় আমার বাচ্চার মা কে আমার হাতে তুলে দিন। অন্যথায় আমি আমার বাচ্চার মা কে তুলে নিয়ে বিয়ে করে বছর খানেক পরে আপনার নাতি নাতনিসহ আপনার মেয়েকে আপনার সামনে দাঁড় করাবো। আপনার বয়স তো আর কম হচ্ছে না শ্বশুর আব্বু। অলরেডি এক পা কবরে চলে গেছে।তাই আপনি আপনার মেয়েকে যতো দেরি করবেন আমার হাতে তুলে দিতে ততো দেরি হবে আপনার নানুভাই ডাক শুনতে ।তাই আমাদের দুজনের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি না হয়ে অতি দ্রুত নিজে নানুভাই হ‌বার ব্যবস্থা করুন।”

-” ছিঃ ছিঃ আপনি এতো নির্লজ্জ? মুখে যা আসছে তাই বলে দিচ্ছেন। নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ আপনি।”

-” লজ্জা নারীর ভুষন , পুরুষের নয় ওকে। তাছাড়া আমি কি তোমাকে চুমু দিয়েছি বা রোমান্টিক কোনো কথা বলেছি ? বলি নি তো তাই না? তাহলে এইখানে নির্লজ্জের কি দেখলে তুমি? অবশ্য তুমি যদি চাও আমি এক্ষুনি নির্লজ্জ হতে পারি? তুমি আমার হবু বউ বলে কথা।”

-” কে বিয়ে করবে আপনাকে?”

-” কেন তুমি?”

-“আমি আপনার মতো একটা খারাপ মানুষ কে কিছুতেই বিয়ে করবো না। কখনোই না।আর আপনার এই ভালো মানুষের মুখোশ ও আমি খুব শীঘ্রই সবার সামনে টেনে খুলে দিবো।সবাই জানে আপনি কতো ভালো মনের উদার মানুষ। অথচ কেউ জানে না আপনার ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে একটা অমানুষ লুকিয়ে রয়েছে।”

-” ভুলেও আমার সম্পর্কে জানতে এবং জানাতে এসো না মেয়ে।এর পরিনতি খুব বেশি ভালো হবে না।আর তাছাড়া সবাই জানে সাহিত্য শিকদার কেমন। তোমার এই সস্তা মুখের কথা তারা কখনো বিশ্বাস করবে না। তাই তোমার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে বরং তুমি বিয়ের প্রস্তুতি নাও। খুব শীঘ্রই উষ্ণতা মীর থেকে উষ্ণতা শিকদার হতে চলেছো তুমি। ডাবল বেডে আর একা একা কোলবালিশ নিয়ে কাটাতে ভালো লাগে না।”

-” তো একা একা কাটাতে কে বলেছে আপনাকে? বিয়ে করে নিন।প্রয়োজনে একটা নয় চারটা করুন। আপনি নেতা গুঁতা মানুষ। আপনার নিশ্চয় বিয়ের জন্য মেয়েদের অভাব হবে না।”

-” সাহিত্য শিকদারের জন্য হাজারো মেয়েরা পাগল।আমার একটা ইশারায় তাদের কে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।তারা তাদের সর্বত্র বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে।”

-” তাহলে আমাকেই কেন বেছে নিলেন আপনি? আপনি চায়লে অন্য মেয়েকে এর মধ্যে ইনভলব করতে পারতেন। কেন আমার জীবন টা নষ্ট করতে চায়ছেন সাহিত্য?’

-” কারণ টা না হয় অজানায় থাক।”

-“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন। জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।দুটো মানুষের মনের মিল। বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয় সাহিত্য।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনি আর যায় হোক আমাকে ভালোবেসে বিয়ে টা করতে চায়ছেন না।এই বিয়ের পেছনে আপনার বড় কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করি নি সাহিত্য।আর না আমি এর আগে আপনাকে কোথাও দেখেছি। শুধু মাত্র একটা ভুলের জন্য আপনি আমার সাথে এতো বড় অন্যায় করতে পারেন না সাহিত্য।”

-” সাহিত্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে লক্ষ্যে করে নম্রতা ফোন টিপতে টিপতে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করছে।যা দেখে সাহিত্য বললো, রাতে কল দিয়ে বাকি কথা বলবো বলে তৎক্ষণাৎ সাহিত্যে প্রস্থান করে। সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের চোখ মুছে নেয় শিক্ষা। ততক্ষণে নম্রতা এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,

-“সরি রে উষু। আমার জন্য তোর এতোক্ষণ বসে থাকতে হলো।ঐ বর্ণ কল করেছিলো।জানিস ই তো ছেলেটা কতো পাগল আমার জন্য। আমার আপন বলতে একমাত্র বর্ণ ই আছে এই পৃথিবীতে। আমি সত্যি অনেক ভাগ্য করে বর্ণের মতো একটা ভাই পেয়েছি। একবারের জন্যও মনে হয় না সে আমার সৎ ভাই।মনে হয় যেন আমি আর ও এক‌ই মায়ের সন্তান।যাই হোক বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।নে খাওয়া শুরু কর বলে নম্রতা খাবার খেতে শুরু করে। কিন্তু শিক্ষা না খেয়ে প্লেটের মধ্যে আঁকি ঝুঁকি করছে ।যা দেখে নম্রতা বললো, কি হলো উষু? খাচ্ছিস না কেন? তুই তো আমার মন ভালো করার জন্য এখানে আমাকে নিয়ে আসলি। কিন্তু এখন তো দেখছি তুই নিজেই মন খারাপ করে বসে রয়েছিস।হুট করে কি হলো তোর? কেউ কি কিছু বলেছে তোকে?”

-” ডোন্ট প্যানিক নিমু। কিছু হয় নি আমার। এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করছে না।”

-” খেতে ইচ্ছে করছে না বললে তো হবে না উষু। টাকা টা তো আমারি পেমেন্ট করতে হবে তাই না? এটা আমার বড়লোক বাপের টাকা নয় উষু। আমার হালাল পথে উপার্জন করা টাকা।সো তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর। অতঃপর শিক্ষা আর নম্রতা খাবার শেষ করে বিল পেমেন্ট করে যার যার গন্তব্যে ছুটে চললো। প্রায় ঘন্টা খানেক পরে শিক্ষা বাসায় ফিরে কলিং বেল দেওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার মম রায়হা এসে দরজা খুলে দিয়ে শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, কিরে মা কি হয়েছে তোর? মুখটা এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেনো?সব ঠিকঠাক আছে তো উষ্ণতা?

-” রায়হা মীরের কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার মধ্যে বিষাদের কালো ছায়া নেমে এলো।তার মম কে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করলো, আমি অনেক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি মম। কিন্তু এমন টা বলতে পারলো না শিক্ষা।সে মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বললো, তুমি আমাকে নিয়ে একটু
বেশি টেনশন করো মম। তুমি বুঝতে চাও না যে আমি আর ছোট্ট নেই মম।আমি এখন বড় হয়েছি।”

-” মায়ের মন তুই বুঝবি না।নিজে যখন মা হবি তখন বুঝতে পারবি।এখন যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

-” ঠিক আছে মম।”
_________________________________

-“শিক্ষার রোজকার অভ্যাস রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার তার পাপা কে দেখে যাওয়া। তার পাপার কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা।এতে তার সারাদিনের ক্লান্তি, দুঃখ ,কষ্ট সব দূর হয়ে যায়। শিক্ষা প্রতিদিনের মতো আজ ও ডিনার শেষ করে তার পাপার রুমে গিয়ে দেখে তিনি কোনো এক মহিলার ছবিতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, চোখে মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছেন।যা দেখে অনেক টা অবাক হয়ে যায় শিক্ষা।তার মাথায় একটা প্রশ্নেই ঘুরতে থাকে কে এই অজ্ঞাত মহিলা?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।