মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-৩১+৩২

0
357

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_৩১

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” সে এইখানে আমাদের মধ্যেই উপস্থিত আছে।সে বাইরের কেউ নয় বরং সিআইডি অফিসারদের মধ্যেই একজন।এক কথায় যাকে বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ।”

-” সিআইডি অফিসারের মধ্যে একজন বলতে কাকে বুঝাতে চায়ছো তুমি?”

-” শিক্ষা নম্রতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, মিস নম্রতা মির্জা সত্যি কথা টা কি আমি বলবো নাকি আপনি নিজের মুখে সবটা স্বীকার করবেন?”

-” নম্রতা কপালের ঘাম মুছে আমতা আমতা করে বললো, হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস হয় কি করে আমার দিকে আঙ্গুল তোলার? তুমি জানো কাকে কি বলছো তুমি?”

-” হ্যাঁ জানি তো। বর্তমানে আপনার পরিচয় আপনি একজন ক্রি’মি’না’ল। আমার মা খালার মতো আপনি ও একজন অপরাধী।”

-” তুমি কিসের ভিত্তিতে বলছো আমি একজন অপরাধী? কোনো প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

-” আপনি আসলে একটা কাঁচা খেলোয়াড়। কিন্তু আমি আপনার মতো কাঁচা খেলোয়াড় ন‌ই।তো মিস নম্রতা মির্জা আপনি সবসময় হাতে একটা রিং পরে থাকতেন তাই না।”

-” হ্যাঁ রিং টা ডায়মন্ডের। আমার অনেক পছন্দের রিং। আমার আঠারো তম জন্মদিনে পাপা আমাকে গিফট করেছিলো।”

-” আমি যেদিন প্রথম আপনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম সেদিন রিং টা আপনার হাতে দেখেছিলাম। আবার যখন অফিসে গিয়েছিলাম তখন ও আপনার হাতে দেখেছিলাম। কিন্তু রিং টা এই মুহূর্তে আপনার হাতে দেখতে পাচ্ছি না। কেন বলুন তো?”

-” ঐ দামি রিং তো! কেউ হয়তো চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। যদিও রিং টা হারিয়ে যাওয়ার খারাপ লাগছে, তবু ও ব্যাপার না।পাপা বলছে আমাকে সেম ডিজাইনের আর একটা রিং কিনে দিবে।”

-” আপনি আসলে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি। ঠিক মতো সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথাটা ও বলতে পারেন না।”

-” তুমি এসব বলে কি প্রমাণ করতে চায়ছো? আমি এসবে জড়িত রয়েছি? আমার রিং হারিয়ে যাওয়ার সাথে এই কেসের কি সম্পর্ক?”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ তার জিন্সের পকেট থেকে একটা রিং বের করে নম্রতার সামনে ধরে বললো,কারণ রিং টা চুরি হয় নি ‌।এটা আমার কাছে? রিং টা আমি কোথায় পেয়েছি জানতে চায়বেন না?”

-” কোথায়?”

-” স্মৃতিনগরে যে কারখানায় আমাকে আটকে রাখা হয়েছিলো সেইখানে।আমি ঐ কারখানায় আপনার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম।এটাও শুনতে পেয়েছিলাম কেউ একজন আপনার কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করছিলো।আর যখন আপনি তাকে টাকা দিতে নারাজ হন তখন সে আপনার মুখোশ খুলে দেওয়ার হু’ম’কি দেয়।যা শুনে আপনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না। আপনি তাকে থা’প্প’ড় মে’রে দেন। শুরু হয় আপনাদের মধ্যে হাতাহাতি।আর এক পর্যায়ে এই রিং টা আপনার হাত থেকে খুলে পড়ে যায়।কি আমি ঠিক বলছি তো?”

-” সবটা যখন জেনে গিয়েছো তখন আর বাকিটা লুকিয়ে রেখে কি লাভ? হ্যাঁ আমি গিয়েছিলাম স্মৃতিনগরে।আর তোমাকে মা’রা’র জন্য তোমার খালামনি কে সাহায্য করেছি। নম্রতার কথা শুনে এসিপি সাইফুজ্জামান এসে ঠাস করে নম্রতার গা’লে থাপ্পড় দিয়ে বললো, ছিঃ !আমি ভাবতেও তুমি এরকম একটা নিচ কাজ করতে পারো। আইনের লোক হয়েও অপরাধী কে অপরাধ করতে সাহায্য করেছো? কিন্তু কেন?আবার রাবিহার মতো এটা বলো না যে তুমি ও যা করছো ভালোবাসার জন্য করেছো।”

-“হ্যাঁ স্যার ভালোবাসার জন্যেই করেছি।আমি সাহিত্য স্যার কে ভালোবাসতাম। ইনফ্যাক্ট সাহিত্য স্যারের জন্য ই আমার সিআইডি তে আসা। নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসতাম সাহিত্য স্যার কে। আমার মনের উঠোন জুড়ে তার ছবি এঁকেছিলাম।তাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে বর্ণের থেকে জানতে পারি সাহিত্য স্যার বিবাহিত।আর এই শিক্ষা স্যারের বিবাহিত স্ত্রী। শিক্ষা কে আগে থেকেই আমার সহ্য হতো না। তারপর যখন আবার জানতে পারলাম ও আমার আর সাহিত্য স্যারের মাঝে একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে,তখন আমার মনে হচ্ছিল ওকে শুট করে দেই। কিন্তু আইনের কাছে আমার হাত বাঁধা ছিলো।পরে ভাবলাম শিক্ষা কে যেহেতু কেউ মা’র’তে চায় , আমি যদি তাকে সাহায্য করি তাহলে আমার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ব্যাস আমার পাপার ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমি পৌঁছে গেলাম আসল খু’নী পর্যন্ত।আর তোর ব্যাপারে ও সবটা যেনে গিয়েছিলাম যে তুই আসল উষ্ণতা।তোর খালামনি কে আমি তোর ব্যাপারে সবটা জানিয়েছিলাম।যার কারণে সে আজ তোর অব্দি পৌঁছাতে পেরেছে।”

-” এর‌ই মধ্যে সাইফুজ্জামান বললো, তুমি ভেবেছিলে এই কাজে তুমি যদি তাকে সাহায্য করো , তাহলে তোমাকে কেউ সন্দেহ করবে না।কারণ তুমি একজন সিআইডি অফিসার।”

-“হ্যাঁ স্যার।আমি চেয়েছিলাম যাতে সাপ ও ম’রে আর লাঠি ও না ভাঙ্গে।”

-“বাহ্ দারুন প্ল্যান করছিলে তুমি নম্রতা। কিন্তু সফল হতে পারলে না। তুমি একজন সিআইডি অফিসার , একটা মন্ত্রীর মেয়ে ও জঘন্য একটা কাজ করছো।এই কথাটা যখন মিডিয়ার লোকেরা জানতে পারবে তখন কি হবে বলো তো? লোকে ছিঃ ছিঃ করবে। তুমি যে সিআইডি ডিপার্টমেন্টের একজন ভাবতেই আমার ঘৃণা লাগছে।তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো। তোমার ব্যাজ , তোমার বন্দুক দিয়ে দাও আমার কাছে।”

-” সরি স্যার আমার ভুল হয়েছে। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

-” ঠিক ভুলের বিচার আগে করা উচিত ছিলো তোমার।এখন তোমার সাথে ও সেটা হবে যেটা অন্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে হয়।”

___________________________________

-“স্যার আমরা মিডিয়ার লোকেরা জানতে পেরেছি যে এসিপি রায়হান মীরের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তার প্রাক্তনের হাত রয়েছে? আর যে চার টা মেয়ে খু’ন হয়েছে সেগুলোও নাকি স্যারের প্রাক্তন করছে। এগুলো কি সত্যি স্যার?”

-” হ্যাঁ সত্যি। তোমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছো। এবার দয়া করে যাও অফিস থেকে। আমাদের কে আমাদের কাজ করতে দাও।”

-” স্যার স্যার আমরা এটাও জেনেছি যে মন্ত্রীর মেয়ে ,যে কিনা নিজে একজন সিআইডি অফিসার ,সেও নাকি এই কেসের সাথে যুক্ত আছে।আপনারা তার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিয়েছেন কি? নাকি সে সিআইডি অফিসার বলে তার করা অপরাধের কোনো শাস্তি হবে না?”

-” অবশ্যই হবে।আইন কোনো মন্ত্রীর মেয়ে, এসিপির প্রাক্তন চিনে না। আইনের চোখে সব অপরাধী সমান , পেছন থেকে বললেন মন্ত্রী মশায়। মন্ত্রী কে সিআইডির অফিসে পেয়ে যেন মিডিয়ার লোকেরা আকাশের চাঁদ হাতে পেল।তারা মন্ত্রী কে জিজ্ঞেস করলো, স্যার আপনি নিশ্চয় জানতে পেরেছেন আপনার মেয়ে একজন অপরাধী।তো এখন আপনার মেয়ের ব্যাপারে কি বলবেন?”

-” আমার কোনো মেয়ে নেই। আমার একটা ছেলে,বর্ণ মির্জা ।আশা করি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছো বলে মন্ত্রী অফিস থেকে প্রস্থান করলেন।”

___________________________________

-” শিকদার ভিলায় যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। বাড়িটা কয়েক টা দিন যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিলো। সাদ্দাম শিকদার নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বাড়ি ফিরে আসাতে সকলের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে।অন্তরা শিকদার বারবার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তাকে ভুল বোঝার জন্য। সাদ্দাম শিকদার ও তার সহধর্মিণী কে ক্ষমা করে দিয়েছেন।কারণ তিনি জানেন তার স্ত্রী তাকে কতোটা ভালোবাসে। সাদ্দাম আর অন্তরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। কাজের মেয়ে সাথী গিয়ে দরজা খুলে দেখে স্বয়ং মন্ত্রী মহোদয় এসেছেন তাদের বাড়িতে।আর তার সাথে রয়েছে নানা ধরনের ফলমূল, মিষ্টি। মন্ত্রী কে দেখে সাদ্দাম এগিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মন্ত্রী মহোদয় বলেন, তোমার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি সাদ্দাম ‌।”

-” আপনি যে আমার বাড়িতে এসেছেন এটা আমার পরম সৌভাগ্য । এইভাবে বলবেন না প্লিজ।”

-” দেখো সাদ্দাম ! আমি আমার মেয়েটাকে অনেক আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছিলাম। কখনো কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখি নি। আমার এতো টাকা পয়সা ধন দৌলত থাকার পরেও শুধুমাত্র ওর কথায় ওকে সিআইডি তে পাঠিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো ও দেশের জন্য কাজ করতে চায়। কিন্তু কখনো ভাবিনি ও আবেগের বশে এমন একটা নিকৃষ্ট কাজ করে বসবে। আমার মেয়েটাকে তো হারিয়ে ফেলেছি।বুকটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এখন আমার এই শূন্যতা পূরণ করার জন্য তোমার মেয়েটা কে আমার চাই সাদ্দাম।ও আমার বউমা নয়, আমার নম্রতা হয়ে থাকবে।”

-” সাদ্দাম শিকদারের যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে মন্ত্রী তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। তিনি কিছু টা ভেবে বললেন, আপনার মতো একজন বড়ো মনের মানুষের থেকে এমন প্রস্তাব আমি সত্যিই আশা করি নি। কিন্তু আমি ততোক্ষণে আপনাকে এই ব্যাপারে কথা দিতে পারছি না যতক্ষণ না আবৃত্তি চায়ছে। আবৃত্তি যদি চায় তাহলে অবশ্যই এই বিয়ে টা হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_৩২

#নূন_মাহবুব

-” আমি আপনার আর একটা কথাও শুনতে চাই না রায়হান শ্বশুর স্যার। আপনার মেয়ের বাড়ি কি আপনার বাড়ি নয়? আপনি হসপিটাল থেকে সোজা আমাদের বাড়িতে যাবেন। ব্যাস এটাই ফাইনাল।বাবা হসপিটালের সব ফর্মালিটি পূরণ করতে গিয়েছে।বাবা আসলে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো। আপনি আমাদের সাথে শিকদার ভিলায় যাচ্ছেন। আপনার মেয়ে অধীর আগ্রহে আপনার পথ চেয়ে বসে আছে।”

-” এমনটা হয় না সাহিত্য। আমি আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পড়ে থাকবো এটা ভালো দেখায় না। সমাজের লোকেরা ছিঃ ছিঃ করবে। নানা রকমের কথা উঠবে‌।”

-” সমাজ আমাদের খেতে পড়তে দেয় না রায়হান শ্বশুর স্যার। আপনি তাদের টা খাবেন না পড়বেন যে তাদের কথায় কান দিবেন? তাছাড়া আপনি অসুস্থ্য একটা মানুষ।এই অবস্থায় আমরা আপনাকে একা ছাড়তে পারি না।”

-” তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা করছো সাহিত্য। আমি একদম ঠিক আছি।”

-” কি ঠিক আছি ঠিক আছি বলছিস রায়হান? কেবিনে প্রবেশ করতে করতে বললো সাদ্দাম শিকদার। তোর শরীর কখনো দূর্বল রয়েছে। ডক্টর বলেছে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে।”

-” তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছো ভালো হয়েছে বাবা।দেখ না শ্বশুর স্যার কি বলছেন? তিনি নাকি শিক্ষা কে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যাবেন।”

-” তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে রায়হান? এসব তুই কি বলছিস দোস্ত ? তুই শিক্ষা কে নিয়ে যাবি মানে কি? শিক্ষা ‌সাহিত্যের বিবাহিত স্ত্রী।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তুই ওদের কে আলাদা করতে পারিস না।”

-” ডোন্ট প্যানিক সাদ্দাম।আগে আমার পুরো কথা টা শুনবি তো। তুই এই চিনেছিস আমাকে? তুই ভাবলি কি করে আমি উষ্ণতা কে তোদের থেকে আলাদা করে দিবো? শুধু মাত্র জন্ম দিলেই বাবা মা হ‌ওয়া যায় না। আমি শুধু নাম মাত্র উষ্ণতার বাবা। কিন্তু ওর প্রকৃত বাবা তুই।যে আদর ভালোবাসা আমি মেয়েটাকে দিতে পারি নি। তুই কোনো স্বার্থ ছাড়া সেই ভালোবাসা দিয়েছিস আমার মেয়েটাকে।কখনো বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দিস নি।তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছিস।একটা যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিয়েছিস।আমি এতোটাও অকৃতজ্ঞ ন‌ই যে সব কিছু ভুলে যাবো।”

-” তাহলে মনি কে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চায়ছিস কেন?”

-” প্রত্যেক টা বাবা চায় তার মেয়েটা কে একটা যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিতে।তু‌ই আমার হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করেছিস। কিন্তু আমি বাবা হয়েও সেই দায়িত্ব টা পালন করতে পারি নি।তাই আমি চাচ্ছি সাহিত্য আর উষ্ণতার মহা ধুমধাম করে আবার বিয়ে দিতে।পুরো শহরের মানুষ কে জানাতে যে রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।”

-” তো এতে তোর আলাদা বাড়িতে যাওয়ার কি আছে? আমরা নিজেদের বাড়িতে থেকেই ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিতে পারি।”

-” কিন্তু!”

-” কোনো কিন্তু নয়।আসলে মনি আর সাহিত্যের বিয়ে হয়েছিলো হসপিটালে।আমরা কেউ বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।মনি কে যবে থেকে শিকদার ভিলায় নিয়ে আসি ,তবে থেকে ও সবার চোখের মণি হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আমার আম্মার।আম্মা মনি কে অনেক ভালোবাসতো‌। আম্মা সবসময় বলতো,এই মায়ায় খনি কে আমি কোথাও যেতে দিবো না। আমার দাদু ভাইয়ের ব‌উ করে আমার কাছে সারাজীবন রেখে দিবো। হঠাৎ করে আম্মা একদিন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। আম্মা কে হসপিটালে এডমিট করা হয়। আম্মা অসুস্থ্য অবস্থায় বারবার বলছিলো আমি বোধহয় আর বাঁচব না রে সাদ্দাম। শিক্ষা কে দাদু ভাইয়ের ব‌উ হিসেবে দেখার সাধ আমার থেকেই গেল।মনি , সাহিত্য দুজনেই আম্মাকে অনেক ভালোবাসতো। আম্মার এই অবস্থা দেখে দুজনেই রাজী হয় বিয়ে করতে। একদম অপ্রস্তুত ভাবে হসপিটালে দুজনের বিয়ে টা হয়ে যায়। আমি চেয়েছিলাম বড়ো একটা পার্টি দিতে মনি আর সাহিত্যের বিয়ের ব্যাপারে সবাইকে জানাতে। কিন্তু একটার পর একটা সমস্যার জন্য সেটা আর সম্ভব হয় নি। এখন তুই এসে গিয়েছিস আমরা দুই দোস্ত মিলে মহা ধুমধাম করে আমার ছেলেমেয়ের বিয়ে দিবো।এখন আর কথা না বাড়িয়ে চল তো।”

-” হুম চল।”

-” সাহিত্য দুজনকে আসতে দেখে হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে এমন সময় নির্জনের সাথে দেখা হয়। সাহিত্যে কে দেখে নির্জন ফোড়ন কেটে বলে,কিরে শা’লা তোর শ্বশুরের কি অবস্থা? ”

-” এখন মোটামুটি ভালো। তুই বোধহয় স্যার কে দেখতে এসেছিলি?”

-” হ্যাঁ এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম , ভাবলাম আঙ্কেলের সাথে দেখা করে যাই।আর তুই তো আছিস ই ।তার একটা মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা।”

-” আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস নির্জন। আমি জানি তুই শিক্ষা কে ভালোবাসিস। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর শিক্ষা যদি আমার বিবাহিত স্ত্রী না হতো, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের বিয়ে দিতাম।”

-” ভালোবাসলেয় সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। তেমনি আমার ভালোবাসা ও পূর্ণতা পাই নি। বিশ্বাস কর এতে আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আমার কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে তুই এতো বড় একটা সত্যি কথা আমার থেকে লুকিয়েছিস। হ্যাঁ আমি শিক্ষা কে ভালোবাসি। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে শিক্ষার ছবি আঁকা।তার মানে এটা নয় যে ভালোবাসার জন্য আমি আমার বন্ধুত্ব বিসর্জন দিবো। এরকম একটা শিক্ষা গেলে হাজার টা শিক্ষা পাবো। কিন্তু তোর মতো একটা বন্ধু হারিয়ে গেলে আমি তাকে ফিরে পাবো না।তাই আমার কাছে ভালোবাসা নয়, বন্ধুত্বের মূল্য অনেক বেশি।”

-” নির্জনের কথা শুনে সাহিত্য তৎক্ষণাৎ নির্জন কে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি অনেক লাকি রে আমার জীবনে তোর মতো একটা বন্ধু পেয়েছি।”

-” যা কিছু হয়ে যাক না কেন আমাদের বন্ধুত্ব সারাজীবন এমনি অটুট থেকে যাবে বলে রহস্যময় হাসি হাসলো নির্জন।”

___________________________________

-” রাত বারোটা। শিক্ষা নিজের রুমে ঘুমিয়ে রয়েছে। বাড়ির সবাই মিলে শুক্রবার তাদের বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করছে। আর ততোদিন তাদের আলাদা আলাদা থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সবার কথা রাখতে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে না গিয়ে নিজের মতো করে ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন তার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে।তার পাপা কে ফিরে পাওয়ার আনন্দে নিজে হাতে রায়হান মীরের জন্য রান্না করেছে।পাপা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ যাবত বিড়াল ছানার মতো তার বুকে লেপ্টে পড়ে ছিলো।পাপার বুকে মাথা রেখে অনেক ক্ষণ ধরে সুখের কান্না ও করছে। অনেকক্ষণ ধরে কান্না আর সারাদিনের ক্লান্তি তে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে শিক্ষা। এমন সময় মনে হলো কেউ তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে।তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা চেষ্টা করেও দর্শনেন্দ্রিয় খুলতে পারছে না। একে একে শরীরে লোকটার বিচরণ ক্রমশ বাড়তে থাকে ।এক পর্যায়ে শিক্ষা লোকটার বুকে লা’থি মে’রে তাকে নিচে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেয়।”

-” লোকটা মেঝেতে পড়ে গিয়ে বলে, তুই আসলে একটা রাক্ষসী।বরের বুকে কেউ এইভাবে লা’থি মা’রে?”

-” বরের খেতায় আগুন।এতো রাতে কেন এসেছেন আপনি? আমি কতোটা ভয় পেয়েছি জানেন আপনি? কেন এসেছেন আমার রুমে?”

-” ভালোবাসতে ,আদর করতে।”

-” হঠাৎ দেখছি আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা উৎলে উঠেছে । চোরের মতো লুকিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন।”

-” এতো কথা বাদ দে।চল আমার সাথে। তুই আমার সাথে ঘুমোবি।”

-” সবাই কি বলেছে শুনতে পান নি? বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আলাদা থাকতে বলেছে।”

-” হুস! মামা বাড়ির আবদার নাকি? আমার বউ । আমার সম্পদ। আমি আমার সম্পদ কোথায় রাখবো কি রাখবো না সেটা অন্য কেউ বলে দিবে নাকি? আর বললেও আমি শুনবো কেন? বর্তমানে আমি প্রচুর পরিমাণে বর বর ফিল পাচ্ছি।তাই আমার বউ নামক অস্পর্শনীয় সম্পদ নিতে এসেছি । অবশ্য আমি তোর কাছে স্থায়ী সম্পদ হলেও তুই আমার কাছে অস্পর্শনীয় সম্পদ। যা একদম ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ছুঁয়ে দিতে গেলেই ছ্যাত করে উঠিস।”

-“শুনুন আমি হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী।তাই এসব চলতি সম্পদ , স্থায়ী সম্পদের জ্ঞান আমাকে না দিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে দিন।কি হলো আপনি কি যাবেন নাকি আমি চিৎকার করে ডাকবো সবাইকে?”

-” ডাক”

-” শিক্ষা সবে বড়ো আম্মু বলতে যাবে তার আগেই সাহিত্যে একটা বিষ্ময়কর কাজ করে বসলো।যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না শিক্ষা। সাহিত্য শিক্ষা কে ছাড়তেই শিক্ষা ওড়না দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে সাহিত্য কে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো, অ’স’ভ্য লোক এই মাত্র বললেন আমি আপনার কাছে অস্পর্শনীয় সম্পত্তি। ছুঁতে গেলেই আমি ছ্যাত করে উঠি। তাহলে এইমাত্র যেটা করলেন সেটা কি ছিলো‌।”

-” বলতেই পারিস ব্যাপার টা তোর ভালো লেগেছে।আরো লাগবে। শুধু শুধু আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন সেটা কি ছিলো।যদি তুই অনুমতি দিস কি ছিলো আবারো দেখিয়ে দেই।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্য কে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, এবার বোধহয় আপনি আমাকে ভালোবাসার আগুন পু’ড়ি’য়ে মে’রে ফেলবেন সাহিত্য।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।