মনের উঠোন জুড়ে (সিজন-০২) পর্ব-০১

0
367

#মনের_উঠোন_জুড়ে
#সিজন_২
#সূচনা_পর্ব
#নুজাইফা_নূন

-” ক্যান আই কিস ইউ সুন্দরী?চায়লে একবার ট্রাই করতে পারো আমার টেস্ট এতোটাও খারাপ না।”

-“ভার্সিটির প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় পেছন থেকে কোনো পুরুষালী কণ্ঠে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শুনে থমকে যায় শিক্ষা। মূহুর্তের মধ্যে তার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের আভা ফুটে ওঠে। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে তার। শিক্ষা পেছন ফিরে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।লম্বাটে দেহ ,চ‌ওড়া বুক, ফর্সা মুখশ্রী , শক্ত চোয়ালদ্বয় ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর ব্লু কালারের পাঞ্জাবি তে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে ছেলেটাকে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে। কিন্তু মুখের ভাষা এতো বাজে ভাবতেই শিক্ষার গাঁ ঘিন ঘিন করে উঠে। ছেলেটা শিক্ষা কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিক্ষা ঠাস ঠাস করে ছেলেটার গালে থা’প্প’ড় মে’রে দিলো । মূহুর্তের মধ্যে যেন পুরো ভার্সিটি থমকে গেল। প্রত্যেক টা ছাত্র ছাত্রী চোখ বড়বড় করে মুখে হাত দিয়ে আহ্ শব্দ উচ্চারণ করলো।যেন শিক্ষা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে । কিন্তু শিক্ষার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে এক বুক সাহস সঞ্চার করে বললো, হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে এমন একটা বাজে কথা বলার? মেয়েদের দেখলেই জিহ্বা লকলক করে ওঠে তাই না? অথচ একটা মেয়ের পেট থেকেই আপনাদের মতো কু’লা’ঙ্গা’র’দের জন্ম হয়। মেয়েরা মায়ের জাত। তাদেরকে সম্মান করতে শিখুন।দেখে তো ভদ্র ফ্যামিলির মনে হচ্ছে। কিন্তু কথায় আছে না উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট।ভদ্র একটা মুখের আড়ালে মেয়েদের সাথে অ’স’ভ্য’তা নোং’রা’মি করে বেড়াচ্ছেন। আপনার বাবা মা এজন্য ভার্সিটি তে পাঠিয়েছে আপনাকে? যতোসব ফালতু লোকজন।নেক্সট টাইম যদি আর কোনো মেয়ের সাথে অ’স’ভ্য’তা করতে দেখেছি তাহলে কিন্তু খুব খারাপ কিছু হবে আপনার সাথে।মাইন্ড ইট।”

-” শিক্ষার কথা শুনে পাশ থেকে চার পাঁচ টা ছেলে শিক্ষার দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা হাত উঁচু করে তাদের কে সেখানেই দাঁড়িয়ে যেতে বললো।যা দেখে শিক্ষা বললো, বাহ্ আবার চ্যালা প্যালা সাথে রেখেছেন দেখছি। এমন ভাব করছেন যেন বড় কোনো বখাটে দলের নেতা আপনি।নেতা বলে মেয়েদের সাথে যা নয় তাই করতে পারেন না । শুনুন মিস্টার এই শিক্ষার সামনে কোনো নেতাগিরী দেখাতে আসবেন না। নেক্সট টাইম যদি আমার আশেপাশে আপনাকে দেখেছি তাহলে কিন্তু আপনার বাকি গালে ও থা’প্প’ড় দিতে আমার দু সেকেন্ড সময় লাগবে না বলে রাগে গজগজ করতে করতে শিক্ষা তার ডিপার্টমেন্টে চলে গেল। শিক্ষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছেলেগুলো এসে বললো, ভাই মেয়েটা আপনাকে সবার সামনে থা’প্প’ড় দিলো আর আপনি তাকে কিছু বললেন না? মেয়েটার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি ভাই। যেইখানে সাহিত্য শিকদারের চোখের দিকে তাকিয়ে কারো কথা বলার সাহস হয় না, সেইখানে এই মেয়েটা সোজা আপনার গালে থা’প্প’ড় মে’রে দিলো?হাও স্ট্রেঞ্জ?

-” মেয়েটা বোধহয় ভার্সিটি তে নতুন এসেছে। সাহিত্য শিকদার সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই।ওকে তো আমি পরে দেখে নিবো।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

___________________________________
-” শিক্ষা ক্লাস রুমে গিয়ে দেখে তার বান্ধবী নম্রতা মির্জা আগে থেকেই ক্লাস রুমে বসে রয়েছে। শিক্ষা কে দেখে নম্রতা এসে তাকে হাগ করে বললো, হেই কিউটিপাই ভার্সিটির প্রথম দিনেই কতো গুলো ছেলের রাতের ঘুম হারাম করে আসলে?”

-” কতো গুলো ছেলের রাতের ঘুম হারাম হবে এটা বলতে পারবো না।তবে তাদের রাতের ঘুম হারাম করতে এসেছি যাদের জন্য পাঁচ পাঁচ টা মেয়ের বাবা মায়ের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।”

-” হুম ।চল সবার সাথে পরিচিত হয়।না হলে আমাদের আসল উদ্দেশ্য সফল করতে পারবো না।”

-” শিক্ষা আর নম্রতা সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে এমন সময় পিয়ন এসে বললো, আপনাদের মধ্যে শিক্ষা আর নম্রতা কে আছেন? প্রিন্সিপাল স্যার আপনাদের ডেকেছেন।”

-” পিয়ন যেতেই নম্রতা শিক্ষা কে কলম দিয়ে খোঁচা মে’রে বললো, তুই ভার্সিটি তে এসে আবার মা’র’পি’ট করিস নি তো? প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের ডাকছেন কেন?”

-” মা’র’পি’ট করি নি নিমু জাস্ট একটা ছেলেকে থা’প্প’ড় দিয়েছি।ঐ বাজে কথা বলছিলো নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নি।”

-” নম্রতা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, বেশ ভালো কাজ করেছিস।তোকে কতোবার বলেছি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চেষ্টা কর। কিন্তু তুই তো ওয়ান পিস ই।অনলি ওয়ান ঘাওড়া মজিদের ব‌উ। নিজে যা ভালো বুঝিস তাই করিস।দেখ এখন তোর এই পাকনামির জন্য আমরা যে কাজে এসেছিলাম সেই কাজ সম্পূর্ণ হ‌ওয়ার আগেই আমাদের এই ভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে না দেয়।”

-” ডোন্ট টেক এ টেনশন নিমু।চল গিয়ে দেখি স্যার কি বলে।”

-” হ্যাঁ চল।”

-” শিক্ষা আর নম্রতা প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে এসে তাকে সালাম দিয়ে বললো, আমাদের ডেকেছেন স্যার?”

-” হ্যাঁ তুমি উষ্ণতা মীর রাইট?ডটার অফ এসিপি রায়হান মীর?”

-” ইয়েস স্যার।যদিও পাপা এখন অবসরপ্রাপ্ত।”

-” আই নো এবাউট ইউ।”

-” সিরিয়াসলি?”

-” হ্যাঁ। তোমরা না কোনো সাধারণ মেয়ে আর না এই কলেজের ছাত্রী।একটা কেসের ইনভেস্টিগেশন এর কাজে তোমাদের ছদ্মবেশে এইখানে আসতে হয়েছে।”

-” শিক্ষা নম্রতা দুজনেই অবাক হয়ে গেল প্রিন্সিপাল স্যারের কথায়।তারা যে সিআইডি অফিসার এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানে না। অথচ প্রিন্সিপাল স্যার কিভাবে তাদের ব্যাপারে জানতে পারলো?”

-” তোমরা হয়তো এটাই ভাবছো যে আমি তোমাদের ব্যাপারে কিভাবে জানতে পারলাম?এসিপি সাইফুজ্জামান আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা প্রাইমারীর গণ্ডি এক সাথে পার করেছি। সাইফুজ্জামান গতকাল আমাকে ফোন করে তোমাদের ব্যাপারে সব বলেছে। তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারো তোমাদের ব্যাপারে কেউ কিছু জানবে না।”

-” ধন্যবাদ স্যার।এই কেসের ইনভেস্টিগেশনে আমাদের আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।”

-” আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

-” ধন্যবাদ স্যার।”

-” ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যেহেতু এই কেসে আমরাও ইনভলব হয়ে গিয়েছি তাই আমিও চাই খুব শ্রীঘ্রই আসল অপরাধী সবার সামনে আসুক।”

-” হ্যাঁ স্যার। থানায় পাঁচ টা মেয়ের মিসিং ডায়রি করা হয়েছে।যার মধ্যে আমরা একজনের লা’শ পেয়েছি। কিন্তু ভিক্টিমের থেকে আমরা কিছুই জানতে পারি নি।আর বাকিদের ফোন নাম্বার ট্রেস করে এটা জানতে পেরেছি যে সবার লাস্ট লোকেশন এই ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছিলো। অথচ তারা কেউ এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট নয়।আমাদের ধারণা মেয়েগুলো কে পাচার করা হয়েছে।আর যে এই কাজে জড়িত তার নেক্সট টার্গেট এই ভার্সিটির মেয়েরা।তবে আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে সিআইডি তে জয়েন হয়েছি‌।আমরা বেঁচে থাকতে আর একটা মেয়ের ও ক্ষতি হতে দিবো না।আপনি শুধু মাত্র আমাদের দোয়া আর সমস্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।”

-” এটা তো অবশ্যই করবো মা।তবে এই ব্যাপারে তোমাদের আরো একজন সহযোগিতা করতে পারবে।”

-” কে?”

-” সাহিত্য শিকদার।এই কলেজের ভিপি। যে কিনা একজন মন্ত্রীর ছেলে। কিন্তু ছেলেটার পোশাক, আচার আচরণ দেখে কখনো মনে হয় না সে মন্ত্রীর ছেলে। সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করতে পছন্দ করে ছেলেটা। খুবই উদার মনের একটা মানুষ। আমি তোমাদের ব্যাপারে সাহিত্য কে বলবো।সে তোমাদের কে সহযোগিতা করবে।”

-” ঠিক আছে স্যার। ধন্যবাদ।”

-” এখন ক্লাসে যাও।ইনজয় ইউরসেল্ফ।”

-” শিক্ষা নম্রতা দুজনেই ক্লাস শেষ করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে ‌ক্যাম্পাসে ছোট খাটো একটা জটলার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা আর একটু সামনের দিকে এগিয়ে এসে দেখে সেই ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা একটা লোক কে বেদারম পে’টা’চ্ছে।আর আশ্চর্যের বিষয় কেউ কোনো প্রতিবাদ না করে উল্টো ছেলেটাকে সাপোর্ট করছে। ব্যাপার টা বেশ দৃষ্টিকটু লাগলো শিক্ষার। শিক্ষা এগিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার থেকে লোকটা কে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো তার গালে আবারো ঠাস ঠাস করে থা’প্প’ড় মে’রে দিলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।